STANNUM METALLICUM - ষ্ট্যানাম মেটালিকাম
(অত্যাধিক দুর্ব্বলতাই এই ঔষধের প্রধান লক্ষণ)
ষ্ট্যানাম মেটের রাসায়নিক চিহৃ - Sn
ষ্ট্যানাম মেটের অন্য নাম - টিন , মেটালিক টিন ।
ষ্ট্যানাম মেটের উৎস ও বণনা :-
মেটালিক টিন নামক
একটি ধাতব পদার্থ এটি খনিতে পাওয়া
যায় । খনিতে ডাইসালফিড , ডায়- অক্সাইড
প্রভৃতি আকারে পাওয়া যায় । যাহা হইতে টিন নিষ্কাশন করিয়া লওয়া হয় । ২৩০
ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ইহা গলিয়া যায় । হাইড্রোক্লোরিক এসিড এবং উক্স
সালফিউরিক এসিডে ইহা দ্রবীভূত হয় ।
ষ্ট্যানাম মেটের প্রস্তুতের ফরমূলা :-
এফ -৭ বিচূর্ণ ।
ষ্ট্যানাম মেটের আবিষ্কারক:-
মহাত্মা
হ্যানিমান স্বয়ং ইহা আবিষ্কার করেন ।
মায়াজম:-
ষ্ট্যানাম একটি গভীর কার্যকরী ও ধীরগতি সম্পন্ন টিউবারকুলার ঔষধ ।
মস্তিষ্ক, মেরুদন্ডের, স্নায়ুমন্ডলীতে
এবং শ্বাসযন্ত্রের উপর প্রধান ক্রিয়া দেখা যায় । অন্ত্ৰমধ্যস্থ কৃমির উপর বিশেষ
ক্রিয়া করিয়া কৃমি বাহির করিতে সাহায্য করে ।
ষ্ট্যানাম মেটের চরিত্রগত লক্ষণ:-
১। বক্ষদেশে অত্যান্ত দুর্বলতা, সেই জন্য কথা বলিতে কষ্ট হয় ।
২। শারীরিক ও
মানসিক অত্যধিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি । পক্ষাঘাতের ন্যায় দুর্বলতা , হাসিতে ও জোরে পাঠ করিতে কষ্ট হয় ।
৩। উপর হইতে নীচে নামিতে হইলে যেন মূচ্ছার মত হয় , কিন্তু উপরে উঠিতে এত কষ্টবোধ হয় না।
৪। বেদনা অত্যন্ত
কষ্টদায়ক, বেদনা ক্রমশঃ
ধীরে ধীরে বাড়িয়া চরম সীমায় উঠিয়া শেষে ধীরে ধীরে হ্রাস পায় । কলিক বেদনা খুব
জোরে চাপিলে কম হয় ।
৫। কাশি, রাত্রিকালে বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও অত্যান্ত দুর্বলতা এবং
প্রচুর পরিমানে ঘর্ম নিঃসরণ, গয়ার
মিষ্টস্বাদযুক্ত এবং তাহার রং হরিদ্রাভণ বা লেবুর রং এর
মত ।
৬। ক্ষুদ্র
ক্ষুদ্র কৃমি মলদ্বারে সুড় সুড় করে ।
৭। শীর্ণকায়া
স্ত্রীলোকদিগের শ্বেত প্রদর কিংবা
ইউট্রাসের বিচ্যুতির সহিত ভয়ানক দুর্বলতা । প্রথমে যেন বুক হইতেই আরম্ভ হয় ।
৮। পাকস্থলী যেন
শূণ্য ও খালি ।
৯। থাইসিস কিংবা
অন্য কোনও প্রকার ফুসফুসের পীড়ায় রাশি রাশি পূজ মিশ্রিত শ্লেষ্ম বা গয়ার নিঃসরণ
১০। চুকা ঢেকুর
উঠে ।
ষ্ট্যানাম মেটের মানসিক লক্ষণঃ-
১। রোগী বিষন্ন ও উদ্বিগ্ন।
২। সকল কাজে নিরাৎসাহ ভাব।
৩। লোকজন দেলিলে ভয় হয়, কাছে যাইতে চায় না।
৪। রোগী উত্তেজিত ও ক্রোধান্বিত।
ষ্ট্যানাম মেটের প্রয়ােগক্ষেত্র :-
বিষন্নতা ও
ক্রনপ্রিয়তা , শ্বাসযন্ত্রের
পীড়া , পুরিসি , স্ত্রীপীড়া , বেদনা , শিরঃপীড়া , যক্ষ্মারােগ , অজীর্ণ কৃমি , জননেন্দ্রিয় পীড়া , জ্বর , কম্পন পক্ষাঘাত প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা প্রয়ােগ হয় ।
বিষন্নতা ও ক্রন্দনপ্রিয়তায় স্ট্যানাম রোগীর লক্ষণঃ-
ফুসফুসের পীড়ায় ষ্ট্যানমের লক্ষণ :-
যক্ষ্মাকাশি হউক নিউমোনিয়া কিংবা ব্রঙ্কাইটিস হউক, সব ধরনের শ্বাসযন্ত্রের পীড়াতেই কাশির সহিত রাশি রাশি
গয়ার বা শ্লেষ্ম উঠিলে এবং সেই শ্লেমার স্বাদ মিষ্টি বা লোনা হইলে
স্ট্যানাম একটি মূল্যবান ঔষধ । লবনাক্ত স্বাদযুক্ত
গয়ারে সিপিয়া ও কেলি হাইড্রো অত্যন্ত উপকারী ।
জরাযু ষ্ট্যানমের লক্ষণ :-
জরায়ু , পেশীর দুর্বলতা হেতু জরায়ুর বহিনির্গমন ও শ্বেত প্রদরে উপকারী । শ্বেত প্রদর স্রাব ঈষৎ হরিদ্রাভব অথবা কেবল মিউকাসের মত , সেই সঙ্গে রোগিনীর ভয়ানক দুর্বলতা , এমনকি কথা বলিতে অসমর্থ । ইহাতে ঋতুস্রাবের পরিমাণ প্রচুর । জরায়ু , পেশীর দুর্বলতাহেতু জরায়ুর বাহির হইলে সিপিয়া হইতে ইহা অধিক উপয়োগী । বাহ্যের সময় কোঁথ দিতে হয় এবং বাহ্যের বেগে জরায়ুর বাহির হয়। কোষ্ঠ বদ্ধতা সহ হইলে আরও বেশী উপকারী ।
মুখমন্ডলের স্নায়বিক বেদনা , উদর বা অম্লশূল অথবা শিরঃপীড়া যাহাই হউক ধীরে ধীরে বেদনাটি বৃদ্ধি পাইয়া তীব্র আকার ধারণ করিয়া পুণরায় ধীর গতিতে উপশম হয়।ঐ প্রকার হ্রাস বৃদ্ধি ব্যতীত ইহার শিরঃপীড়া সূৰ্য্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশেষভাবে বৃদ্ধি পাইয়া সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। ষ্ট্যানামের কলিক বেদনা খুব জোরে চাপিয়া ধরিলে উপশম হয়।বেদনা অনেক দিনের পুরাতন হইলে ইহা অধিকতর উপযোগী ।
অজীর্ণে ষ্ট্যানাম লক্ষণ :-
সকাল বেলায় বমন ও গা বমি
বমি এবং রান্না করা খাদ্য
দ্রব্যের গন্ধে রোগীর বমি বৃদ্ধি
হইয়া পেটে খালি খালি ভাব প্রভৃতি লক্ষণ থাকিলে উপকারী । মলের রং
সবুজ , ইহার সহিত পেটে
ষ্ট্যানামের নির্দিষ্ট বেদনা লক্ষণ থাকে ।
অজীর্ণ রোগের সহিত কৃমি লক্ষণ থাকিলে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
কৃমিতেও উপযোগী ।
কামোেত্তজনায়
ট্যানামের লক্ষণ :-
ইহার স্ত্রী ও
পুরুষ উভয় রােগীরই কামােত্তেজনা প্রবল , এমনকি শরীরের কোন অংশ চুলকাইবার ফলে কামভাব জাগ্রত হয় । বীর্যপাতের পর ইহার
পুরুষ রোগী অতিশয় দুর্বলতা বােধ করে ।
জ্বরপীড়ায়
ট্যানামের লক্ষণ :-
ইহার জ্বরের একটি
অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান । সবিরাম প্রকৃতির জ্বর লইয়া আরম্ভ হইয়া ইহা
ধীরগতিযুক্ত টিউবারকুলার প্রকৃতিতে ঘুষঘুষে জ্বরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রত্যহ
বৈকালে বা সন্ধ্যার দিকে বৃদ্ধি পায় । প্রথমাহায় সকাল ১০ টার দিকে পিপাসা ও সর্ব
শরীরে বেভাব লইয়া জ্বর আরম্ভ হয় । অনেক সময় জ্বর । সহ শিরঃপীড়া ধীরে ধীরে
বৃদ্ধি ও হ্রাস পায় । কিছুদিন ধরিয়া এইভাবে বক্ষদেশে একটি অদ্ভুত প্রকৃতির
দুর্বলতা ও শুস্ক কারি আবির্ভাব ঘটায় এবং ব্রোগী কথাবর্তা বলিতে ও ডান পার্শ্বে
শুইতে অক্ষম হইয়া পড়ে । সন্ধ্যাকালে উত্তাপ অবসাদকর , নৈশঘর্ম , বিশেষতঃ ভােরের দিকে । কপালে ও গ্রীবাদেশে ঘর্ম
। ঘর্ম দুর্বলকর , ছাতাপড়া গন্ধ
এবং দুর্গন্ধযুক্ত ।
কম্পন ও
পক্ষাঘাতে ষ্ট্যানামের লক্ষণ :-
পক্ষাঘাতের মত
দুর্বলতা , দ্রব্যাদি
পড়িয়া যায় , বসিবার চেষ্টা
করিলেই প্রত্যাঙ্গাদি সরিয়া যায় । সমুখ বাহু ও হাতের আক্ষেপিক কম্পন । রাইটার্স
ক্র্যাম্প , লিখিতে গেলে আঙ্গুল ধাক্কা মারিয়া সরিয়া যায়
। টাইপ রাইটার্সের আঙ্গুলের পক্ষাঘাত ।
প্রান্তদেশে
ট্যানামের কার্যকারিতা :-
পক্ষাঘাতিক
দুর্বলতা , জিনিষপত্র হাত
হইতে পড়িয়া যায় । বসিবার চেষ্টায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হঠাৎ অবশ হইয়া পড়ে । বাহর
সম্মুখাংশে ও হস্তপেশীর আক্ষেপিক কম্পন । কলম ধরিতে গেলে আঙ্গুলগুলি ঝাঁকি দিয়া
উঠে । টাইপিষ্টদের আঙ্গুলের
ষ্ট্যানামের বৃদ্ধি :-
বৃদ্ধি - হাসিলে , গান গাহিলে , কথা বলিলে , দেহ সঞ্চালনে , বক্তৃতা করিলে , নীচে নামিলে , ডানদিকে শয়নে , গৰমপানীয়ে ।
ষ্ট্যানামের হ্রাস :-
হ্রাস - কাশিবার সময় অথবা শ্লেমা উঠাইবার সময়ে জোরে চাপ দিলে , দেহ বাঁকা করিলে ।
ষ্ট্যানমের সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ:-
কস্টিকাম ও হিপার
এবং পরে ক্যাল - ফস , সাইলিসিয়া ,
সালফার ও টিউবারকুলিনামের
পূর্বে উৎকৃষ্ট ফলদায়ক ।
ষ্ট্যানামের অনুপূরক ঔষধ :-
পালসেটিলা ।
ষ্ট্যানামের ক্রিয়ানাশক ঔষধ :-
পালসেটিলা ।
ষ্ট্যানামের মেট
ব্যবহারের :- ৩০-২০০ এবং উচ্চশক্তি
ডাঃ মহি উদ্দিন
0 মন্তব্যসমূহ