প্রশ্ন - লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর ঃ লক্ষণ স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক অবস্থার বিকৃত পরিবর্তন বা পীড়ার অস্তি ত্বের প্রমাণ । ইহা এমন একটি অবস্থা যাহা রোগী স্বয়ং , তাহার নিকট আত্মীয় ও পাশ্ববর্তী লোকজন এবং চিকিৎসক প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন । লক্ষণ শুধুমাত্র রুগ্নাবস্থার বহিপ্রকাশ বা রোগের ' নিদর্শনই নয় , ইহা প্রতিকারক সদৃশ ঔষধ নির্বাচনেরও চাবিকাঠি ।
প্রশ্ন - লক্ষণ কত প্রকার ও কি কি ?
উত্তর ঃ মানব দেহে দুই ধরণের রোগলক্ষণ প্রকাশ পায় । যথা
ক ) ব্যক্তিনিষ্ট লক্ষণ ( Subjective Symptoms )
খ ) বস্তুনিষ্ট লক্ষণ ( Objective Symptoms )
ক ) ব্যক্তিনিষ্ট লক্ষণ- রোগের যে সকল লক্ষণ শুধুমাত্র রোগী নিজে অনুভব করিতে পারেন এবং রোগী না বলিলে চিকিৎসক বা অন্য কেহ তাহা বুঝিতে পারে না , উহাদিগকে ব্যক্তিনিষ্ট লক্ষণ বলে । যেমন- মাথাব্যথা , পিপাসা , ক্ষুধা , ব্যথাবেদনা প্রভৃতি ।
খ ) বস্তুনিষ্ট লক্ষণ- রোগের যে সকল লক্ষণ রোগী নিজে না বলিলেও চিকিৎসক তাহার জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ও যান্ত্রিক পরীক্ষার দ্বারা বা পার্শ্ববর্তী লোকজন প্রত্যক্ষ করেন উহাদিগকে বস্তুনিষ্ট লক্ষণ বলে । যথা- জ্বর , প্রলাপ , পক্ষাঘাত , কাশি প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - পূর্ণাঙ্গ রোগলক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর ঃ যে লক্ষণের অবস্থান , অনুভূতি , হ্রাসবৃদ্ধি ও আনুষাঙ্গিক অবস্থা আছে , জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সহজেই বোধগম্য হয় তাহাকে পূর্ণাঙ্গ রোগলক্ষণ বলে ।
প্রশ্ন - প্রকৃত রোগলক্ষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি ?
উত্তর : প্রকৃত রোগলক্ষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ
ক ) প্রকৃত রোগলক্ষণ রোগীর স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিকৃত অবস্থা প্রকাশ করে ।
খ ) প্রকৃত রোগলক্ষণ জ্ঞান ইন্দ্রিয় দ্বারা সহজেই বোধগম্য হইবে ।
গ ) প্রকৃত রোগলক্ষণে অবস্থান , অনুভূতি , হ্রাসবৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক অবস্থা স্পষ্টভাবে বুঝা যাইবে ।
প্রশ্ন ঃ- লক্ষণ ও চিহ্নের মধ্যে পার্থক্য কি ?
উত্তর : লক্ষণ- চিকিৎসকের নিকট যখন রোগী নিজে রোগ সম্পর্কে বা কষ্টকর উপসর্গ সম্বন্ধে বর্ণনা দেয় তখন রোগীর বর্ণিত কষ্টকর উপসর্গগুলিকে লক্ষণ বলে । চিহ্ন অপরদিকে চিকিৎসক রোগী পর্যবেক্ষণ করিয়া এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা রোগ সম্পর্কে যাহা জানিতে পারেন তাহাকে চিহ্ন বলে । সুতরাং লক্ষণ হইল রোগ সম্পর্কে রোগীর নিজের বর্ণনা । আর চিহ্ন হইল পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ দ্বারা রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকের ধারণা । অনেক সময় লক্ষণও চিহ্ন হইতে পারে । যেমন একজন রোগী বলিল আমার বমির সহিত রক্ত বাহির হয় । এখানে রক্তবমি একটি লক্ষণ । আবার যদি রোগী চিকিৎসকের সামনে রক্তবমি করে বা চিকিৎসককে রক্তবমি আনিয়া দেখায় তাহা হইলে এখানে রক্তবমি চিহ্ন ।
প্রশ্ন - লক্ষণের সাহায্যে কি কি জানা যায় ?
উত্তর : লক্ষণের দ্বারা আমরা ব্যাধি সম্বন্ধে জানিতে পারি এবং রোগীর প্রয়োজনীয় ঔষধ সম্বন্ধে জানিতে পারি । লক্ষণ ছাড়া কোন রোগ সম্বন্ধে জানা যায় না , একজন চিকিৎসকের শরীর তত্ত্ব সম্বন্ধে যতই জ্ঞান থাকুক না কেন রোগ পরীক্ষাকালীন তিনি রোগীর কতকগুলি শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পান না । কেবলমাত্র ইন্দ্রিয় সমষ্টির সহায়তায় তিনি সেইগুলি উপলব্ধি করিতে পারেন । চিকিৎসক রোগী পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করিয়া , রোগীকে জিজ্ঞাসা করিয়া রোগীর আত্মীয় স্বজনকে জিজ্ঞাসা করিয়া ও সেবক সেবিকাকে জিজ্ঞাসা করিয়া যে লক্ষণ পান , সেই লক্ষণসমষ্টি দিয়াই রোগচিত্র অংকিত হয় । এই রোগচিত্র পরীক্ষিত যে ঔষধের সদৃশ হয় , তাহাই উক্ত রোগের আরোগ্যকর ঔষধ । এইভাবে লক্ষণের সাহায্যে আমরা ব্যাধি সম্বন্ধে জানিতে পারি এবং রোগীর প্রয়োজনীয় ঔষধ সম্বন্ধে জানিতে পারি ।
প্রশ্ন - লক্ষণসমষ্টি কাহাকে বলে ?
উত্তর : লক্ষণসমষ্টি হইল ঔষধ নির্বাচনের একমাত্র পথপ্রদর্শক । সম্পূর্ণ মানুষই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার লক্ষ্য । মানুষ যখন পীড়িত হয় তখন সমগ্র মানুষটিই পীড়িত হয় , তাহার কোন বিশেষ অঙ্গ পীড়িত হয় না । ব্যক্তি মানুষের তখনকার অবস্থার পরিচয় জানা যায় সেই অবস্থায় প্রকাশিত লক্ষণাবলীর সামগ্রিক রূপের মধ্যে । রোগলক্ষণ রুগ্ন প্রকৃতির নিজের অবস্থা জানানোর এবং সাহায্য প্রার্থনা করার স্বাভাবিক ভাষা । যে সমস্ত চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমে আমরা পীড়িত দেহীর অবস্থা জানিতে পারি তাহাদের সমষ্টিগত রূপকে আমরা লক্ষণসমষ্টি বলিয়া অভিহিত করি । লক্ষণসমষ্টি হইল আভ্যন্তরিক ব্যাধির যথার্থ ও বোধগম্য বহিঃপ্রকাশিত প্রতিচ্ছবি । কেবলমাত্র একটি লক্ষণ দ্বারা একটি রোগীর প্রকৃতি ও স্বরূপ উদ্ঘাটন করা যায় না । অজ্ঞাত পীড়াকে জানিতে হইলে উহার প্রকাশিত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যাবতীয় লক্ষণের সমন্বয় সাধন করা একান্ত প্রয়োজন । অতএব চিকিৎসার নিমিত্ত লক্ষণসমষ্টিই কার্যত রোগ ।
প্রশ্ন - লক্ষণসমষ্টির তাৎপর্য কি ?
উত্তর ঃ লক্ষণসমষ্টি বলিতে শুধু অনেকগুলি রোগলক্ষণ একত্রিত করাকে বুঝায় না বরং প্রতিটি লক্ষণের বিভিন্ন অংশকে বুঝায় । হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণসমষ্টি ব্যাপক অর্থেই বুঝায় । একটি লক্ষণের বিভিন্ন অংশ এমন হইতে হইবে যাহাতে উহাদের সমন্বয়ে একটি সুগঠিত লক্ষণের আকারে আসে । লক্ষণসমষ্টি হইল পীড়িত দেহীর অবস্থার সমষ্টিগত রূপ । একটি রোগীর নিকট হইতে গৃহীত প্রত্যেকটি লক্ষণ এমনি সঠিক ও পরিপূর্ণ হইতে হইবে যাহাতে উহাদের সমষ্টিতে রোগের প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান থাকে । প্রতিটি পূর্ণাঙ্গ লক্ষণের তিনটি গঠনমূলক উপাদান থাকে । যথা
ক ) অবস্থান ( Location ) : অবস্থান বলিতে দেহ ও মনের সেই অংশ , তন্ত্র প্রভৃতিকে বুঝায় যেখানে লক্ষণ প্রকাশিত হয় ।
খ ) সংবেদন ( Sensation ) : সচেতনতার অপর নাম সংবেদন । দেহ ও মনের উপর বস্তুটির উদ্দীপনের যে প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি হয় তাহার নাম সংবেদন । উদ্দীপনার চাপ অনুভূতি স্নায়ু দ্বারা মস্তিষ্কের স্নায়ুকেন্দ্রে নীত হইলে আমরা সচেতন হই । পরিচালক স্নায়ু দ্বারা আমরা উদ্দীপনের প্রতি সাড়া দিই ।
গ ) হ্রাসবৃদ্ধি ( Modality ) : পরিবর্তিত অবস্থা ও শর্তসাপেক্ষে লক্ষণের যে পরিবর্তন ঘটে তার নাম Modality । ইহার ২ টি অবস্থা , যথা— হ্রাস ও বৃদ্ধি । ঠাণ্ডা , গরম , টক , ঝাল , মিষ্টি , চুপ থাকিলে , চলিয়া বেড়াইলে লক্ষণের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে ।
প্রশ্ন - প্রকৃত রোগলক্ষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি ?
উত্তর : প্রকৃত রোগলক্ষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ ক ) প্রকৃত রোগলক্ষণ রোগীর স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিকৃত অবস্থা প্রকাশ খ ) প্রকৃত রোগলক্ষণ জ্ঞান ইন্দ্রিয় দ্বারা সহজেই বোধগম্য হইবে । গ ) প্রকৃত রোগলক্ষণে অবস্থান , অনুভূতি , হ্রাসবৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক অবস্থা স্পষ্টভাবে বুঝা যাইবে ।
প্রশ্ন - গুরুত্ব অনুসারে লক্ষণের মান বা গ্রেড অনুসারে শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর : লক্ষণের গুরুত্ব অনুসারে লক্ষণকে ৩ টি স্তরে বা গ্রেডে ভাগ করা যায় ।
ক ) প্রথম শ্রেণী— ঔষধ পরীক্ষাকালীন যদি অধিকাংশ পরীক্ষক তাহাদের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে কোন লক্ষণ বর্ণনা করে , তবে তাহা প্রথম শ্রেণীর ব্যাপক লক্ষণ । এই সকল লক্ষণ অধিকাংশ প্রুভার পরীক্ষান্তে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন এবং পরবর্তী পরীক্ষান্তেও প্রমাণিত হইয়াছে এবং উহাদের যথার্থতা রুগ্ন ব্যক্তির উপর সমলক্ষণ মতে পরীক্ষা করিয়া যাচাই করা হইয়াছে । যেমন নাক্স ভমিকা সেবনে যদি অধিকাংশ পরীক্ষরে পুনঃ পুনঃ মলত্যাগ লক্ষণ দেখা দেয় তবে তাহা আঙ্গিকের প্রথম শ্রেণীর লক্ষণ ।
খ ) দ্বিতীয় শ্রেণী- যে সকল লক্ষণ অধিকাংশ পরীক্ষক দ্বারা পরীক্ষিত না । হইয়া কেবলমাত্র কিছু সংখ্যক পরীক্ষক দ্বারা সমর্থিত উহারা দ্বিতীয় শ্রেণীর লক্ষণ ।
গ ) তৃতীয় শ্রেণী- শুধুমাত্র দুই একজন পরীক্ষক দ্বারা যদি কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় কিন্তু পুনরায় পরীক্ষা দ্বারা আর সমর্থিত হয় নাই , কিন্তু প্রবলভাবে প্রকাশিত হওয়ায় উহাদিগকে তৃতীয় শ্রেণীর লক্ষণ হিসাবে স্থান দেওয়া হইয়াছে । ভেষজ পরীক্ষার সময় কোন লক্ষণ প্রকাশিত না হইলেও যদি ব্যক্তি ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ কর্তৃক আরোগ্য সাধনের দ্বারা প্রমাণিত হয় তবে তাহাও তৃতীয় শ্রেণীর লক্ষণ ।
আবার লক্ষণের মূল্য হিসাবে মানসিক লক্ষণের মূল্য সর্বাধিক । সার্বদৈহিক লক্ষণের মূল্য দ্বিতীয় ও স্থানীয় লক্ষণের মূল্য তৃতীয় ।
আবার তিন শ্রেণীর লক্ষণের মধ্যে ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক ) বিশেষ , খ ) অসাধারণ , গ ) বিরল ও ঘ ) অদ্ভূত লক্ষণের স্থান সর্বাগ্রে ।
প্রশ্ন — প্রকৃতি অনুসারে লক্ষণের শ্রেণীবিভাগ কর ।
উত্তর ঃ প্রকৃতি অনুসারে লক্ষণকে ৩ ভাগে ভাগ করা হইয়াছে । যথা—
ক ) ব্যাপক লক্ষণ ( General Symptoms )
খ ) আঙ্গিক লক্ষণ ( Particular Symptoms )
গ ) সাধারণ লক্ষণ ( Common Symptoms )
প্রশ্ন - লক্ষণের মূল্য বলিতে কি বুঝায় ? ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণের মূল্য আলোচনা কর ।
বা , লক্ষণের মূল্য হিসাবে লক্ষণের শ্রেণী বিভাগ কর ।
উত্তর : লক্ষণের মূল্য বলিতে লক্ষণের গুরুত্ব নির্দেশ করে । হোমিওপ্যাথি একটি লাক্ষণিক চিকিৎসা ব্যবস্থা । তাই নির্ভুল ও সঠিক ঔষধ নির্বাচনের জন্য সর্বপ্রথম লক্ষণের গুরুত্ব নির্ধারণ করা প্রয়োজন । লক্ষণের মূল্যের তারতম্যের অনুসারে উহার শ্রেণী বিভাগ করিতে হইবে । লক্ষণসমষ্টির মধ্যে প্রত্যেক লক্ষণের মূল্য সমান নহে । কিছু কিছু লক্ষণ আছে খুবই মূল্যবান , আবার অনেক লক্ষণ আছে ঔষধ নির্বাচনে তাহাদের কোন ভূমিকা থাকে না । লক্ষণের মূল্য হিসাবে লক্ষণগুলিকে তিনটি শ্রেনীতে ভাগ করা যায় ।
১ ) মানসিক লক্ষণ ঃ
ক ) স্নেহ , মমতা , ভালবাসা - একের প্রতি অন্যের আকর্ষণ ।
খ ) বিচার বুদ্ধি ।
গ ) স্মৃতিশক্তি প্রভৃতি ।
২ ) সার্বদৈহিক লক্ষণ ঃ
১ ) মুক্ত বায়ু না বদ্ধ বায়ুতে থাকিতে রোগী পছন্দ করে ।
২ ) ঠাণ্ডা , গরম , বর্ষা প্রভৃতির রোগীর উপর প্রভাব ।
৩ ) রোগী চুপচাপ নাকি স্থান পরিবর্তন ও নড়াচড়া করিতে পছন্দ করে ।
৪ ) আহারে পূর্বে ও পরে রোগীর অবস্থা কেমন ?
৫ ) ঋতুস্রাবের আগে , সময়ে ও পরে রোগিনীর দৈহিক ও মানসিক অবস্থা ।
৩ ) স্থানীয় লক্ষণ ঃ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপসর্গাদি । লক্ষণের মূল্য হিসাবে মানসিক লক্ষণের মূল্য সর্বাধিক , সার্বদৈহিক লক্ষণের মূল্য দ্বিতীয় ও স্থানীয় লক্ষণের মূল্য তৃতীয় । আবার তিন শ্রেণীর লক্ষণের মধ্যে ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে
১ ) বিশেষ ,
২ ) অসাধারণ ,
৩ ) বিরল এবং
৪ ) অদ্ভূত লক্ষণের স্থান সর্বাগ্রে ।
প্রশ্ন - রোগ চিকিৎসায় লক্ষণসমষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি ?
বা , চিকিৎসা কার্যে রোগলক্ষণের ভূমিকা বা গুরুত্ব বর্ণনা কর ।
উত্তর : চিকিৎসার জন্য লক্ষণ সমষ্টিই হইল রোগ । আভ্যন্তরীণ রোগের পরিচয় জানিবার একমাত্র বিশ্বস্ত উপায় হইল লক্ষণসমষ্টি । ঔষধ নির্বাচনে তথা সদৃশ বিধানের চিকিৎসার লক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও মূল্য অপরিসীম ।
১ ) লক্ষণসমষ্টি রোগেরই নিদর্শন এবং রুগ্ন প্রকৃতির নিজের অবস্থা জানাইবার ও সাহায্য প্রার্থনা করিবার স্বাভাবিক ভাষা ।
২ ) লক্ষণসমষ্টির সাহায্যে আমরা আভ্যন্তরীণ ব্যাধি সম্বন্ধে জানিতে পারি এবং রোগীর প্রয়োজনীয় ঔষধ সম্বন্ধে জানিতে পারি ।
৩ ) লক্ষণসমষ্টি রোগাক্রান্ত জীবনীশক্তির স্বরূপ প্রকাশ করে ।
৪ ) রোগী চিকিৎসায় ঔষধ নির্বাচনের জন্য একমাত্র লক্ষণসষ্টিই আমাদের চালক ও পথ প্রদর্শক ।
৫ ) লক্ষণসমষ্টি ব্যাধির পরিচয় বহন করে এবং তাহার বিশ্লেষণ করিয়া রোগীর আরোগ্যকর ঔষধ নির্বাচন করা যায় ।
৬ ) লক্ষণসমষ্টি দ্বারা ব্যাধির গতিবিধি সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায় ।
৭ ) লক্ষণ ঠিকভাবে চিহ্নিত না হইলে চিকিৎসা কর্ম ব্যর্থ হইয়া যায় ।
৮ ) ঔষধ পরীক্ষা , রোগী পরীক্ষা , মেটিরিয়া মেডিকা অধ্যয়ন , ঔষধ নির্বাচন ও প্রয়োগ চিকিৎসা কার্যের প্রতিটি স্তরেই লক্ষণসমষ্টি এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়া আছে ।
প্রশ্ন - ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণসমষ্টির গুরুত্ব বর্ণনা কর ।
বা , লক্ষণসমষ্টিই ঔষধ নির্বাচনের একমাত্র পথ প্রদর্শক - উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ কর ।
বা , ' লক্ষণ সমষ্টি সংগ্রহ ব্যতীত ঔষধ নির্বাচন সম্ভব নয়'- আলোচনা কর ।
বা , লক্ষণসমষ্টি ঔষধের প্রতিচ্ছবি- ব্যাখ্যা কর ।
বা , লক্ষণসমষ্টি রোগের একমাত্র নিদর্শন এবং ঔষধ নির্বাচনের একমাত্র নির্দেশক আলোচনা কর ।
উত্তর : লক্ষণসমষ্টি ভিন্ন রোগ নির্ণয়ের ও ঔষধ নির্বাচনের অন্য কোন উপায় নাই । রোগের নিদর্শন ইহার লক্ষণসমষ্টি । যে সকল চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমে আমরা পীড়িত দেহীর অবস্থা জানিতে পারি তাহাদের সমষ্টিগত রূপকে আমরা লক্ষণসমষ্টি বলি । জীবনীশক্তির অসুস্থ অবস্থার চিত্র লক্ষণসমষ্টি দ্বারা প্রকাশিত হয় । জীবনীশক্তির সাহায্যের ভাষা এই লক্ষণসমষ্টি । লক্ষণসমষ্টি দ্বারাই জীবনীশক্তি প্রতিকারক উপযুক্ত ঔষধটি প্রত্যাশা করে । প্রকৃতির অমোঘ বিধানে রোগের চিত্রের সাহায্যে ঔষধের চিত্র মিলাইয়া চিকিৎসা করিতে হয় । ভেষজ পরীক্ষায় জানা গিয়াছে যে , প্রতিটি ঔষধ সুস্থ দেহে কতকগুলি লক্ষণ সৃষ্টি করে । এই সকল লক্ষণের মাধ্যমেই আমরা প্রকৃত ঔষধের পরিচয় জানিতে পারি । যে ঔষধ যে রোগ সৃষ্টি করিতে পারে , সেই ঔষধই আবার সেই রোগ আরোগ্য করিতে পারে । যে সমস্ত চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমে আমরা কোন ঔষধের রোগোৎপাদিকা শক্তি তথা আরোগ্যদায়িনী শক্তির পরিচয় পাই তাহাদের সমষ্টিগত রূপকেই আমরা সেই ঔষধের লক্ষণসমষ্টি বলি । লক্ষণসমষ্টি রোগের প্রতিচ্ছবি , আবার লক্ষণ সমষ্টি ঔষধেরও প্রতিচ্ছবি । তাই ঔষধ নির্বাচনের ভিত্তি এই লক্ষণসমষ্টি । অর্থাৎ রোগগ্রস্ত জীবনীশক্তি প্রতিকারের জন্য লক্ষণসমষ্টি প্রকাশের মাধ্যমে যে আবেদন জানায় , চিকিৎসক এই লক্ষণসমসষ্টি প্রত্যক্ষ করিলেই ঔষধের চিত্রটি তাহার মানসপটে উদিত হয় । এই লক্ষণসমষ্টির উপর ভিত্তি করিয়াই সদৃশ বিধান অনুসারে সদৃশ লক্ষণ সম্পন্ন ঔষধটি নির্বাচন ও প্রয়োগ করেন । যদি রোগীতে লক্ষণরাজির প্রকাশ না ঘটে তাহা হইলে ঔষধ নির্বাচন অসম্ভব হইয়া পড়িত । প্রকাশিত লক্ষণরাজির দ্বারা গঠিত প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম রোগের সদৃশ চিত্রই প্রতিকারক ঔষধ নির্বাচনের অদ্বিতীয় উপায় এবং প্রকৃতির মধ্যে এই পথটিই সকল বিভাগে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পরীক্ষিত । তাই বলা যায় লক্ষণ সমষ্টি ছাড়া প্রতিকারক ঔষধ নির্বাচনের অন্য কোন পথ নাই এবং লক্ষণসমষ্টিই ঔষধের প্রতিচ্ছবি ।
প্রশ্ন - রোগলক্ষণসমূহ লিখিয়া লইবার প্রয়োজনীয়তা কি ?
উত্তর ঃ রোগলক্ষণসমূহই রোগের শ্রেষ্ঠতম প্রতিচ্ছবি হিসাবে চিকিৎসকের চিত্তে উদ্ভাসিত করিবার একমাত্র উপায় । রোগের নাম যাহাই হউক না কেন উহার বিশেষত্বজ্ঞাপক ও পরিচায়ক লক্ষণাবলী লিখিয়া লইলেই অন্যান্য রোগলক্ষণ হইতে উহার পার্থক্য নির্ণয় করা অতি সহজ হইয়া পড়ে এবং ইহা দ্বারা রোগী চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক সর্বাপেক্ষা সাহায্য পাইয়া থাকেন । কারণ ঔষধ নির্বাচনের জন্য একমাত্র লক্ষণসমষ্টিই আমাদের চালক ও পথ প্রদর্শক । আবার লক্ষণসমষ্টিকে দূর করিতে পারিলেই পীড়া দূর হয় । কাজেই চিকিৎসক রোগীর রোগ লক্ষণসমূহ লিখিয়া উহাদের অনুসন্ধান করিয়া তাহা হইতে পরিচায়ক লক্ষণগুলি বাছিয়া লইয়া মেটিরিয়া মেডিকা হইতে অধিকতর সদৃশ লক্ষণযুক্ত ঔষধটি অতি সহজে বাহির করিয়া লইতে পারেন । ঔষধ প্রয়োগের পর তাহাতে কি উপকার হইল দেখিতে হইলে তিনি যে লক্ষণগুলি লিখিয়া লইয়াছিলেন , সেগুলির মধ্যে যেগুলি ঔষধ সেবনের পর দূরীভূত হইয়াছে তাহা কাটিয়া দিবেন , আর যেগুলি বর্তমান আছে সেগুলি লিখিয়া লইবেন । কিন্তু প্রথমে যদি রোগ লক্ষণসমূহ লিখিয়া না লইয়া থাকেন তবে তিনি এই সুবিধাটি পাইবেন না । বরং চিকিৎসায় নানা বাধা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে । সুতরাং চিকিৎসা কার্যে রোগ লক্ষণসমূহ লিখিয়া লওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন ।
প্রশ্ন - লক্ষণসমষ্টিকে রোগীর জীবন্ত প্যাথলজি বলা হয় কেন ?
বা , প্রতিটি লক্ষণগুচ্ছ এক একটি রোগের পূর্ণ চিত্র - ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর : মানুষের কোন এক অঙ্গকে বা তার সমস্ত অঙ্গসমস্তিকে যেমন মানুষ বলা চলে না , মানুষ তার চাইতে বেশী কিছু । তেমনি দুই একটি রোগ লক্ষণকে কিংবা সমস্ত রোগ লক্ষণের যোগফলকে লক্ষণসমষ্টি বা রোগের প্রতিচ্ছবি বলা চলে না । লক্ষণসমষ্টি শুধুমাত্র কতগুলি চিহ্ন ও লক্ষণের সমষ্টি নয় , লক্ষণসমষ্টির মাধ্যমে একটি আইডিয়া মূর্ত হইয়া ফুটিয়া উঠে । সেই মূর্তি পীড়িত প্রাণসত্বার মূর্তি । লক্ষণসমষ্টি তাই নিজেই এক পূর্ণাঙ্গ লক্ষণ , যাহা রোগীরই লক্ষণ , রোগীর চিত্র । এই দিক হইতে বিচার করিলে লক্ষণসমষ্টিকে রোগীর জীবন্ত প্যাথলজি বলা চলে । সেই মূর্তির মধ্যে একাধারে থাকে রোগের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত কতকগুলি লক্ষণ ও চিহ্ন যাহা রোগের প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদিগকে পরিচয় করাইয়া দেয় । এই সকল লক্ষণ দ্বারা আমরা এক রোগীকে অন্য রোগী হইতে আলাদা করিয়া নিতে পারি । তাই প্রতিটি লক্ষণসমষ্টি এক একটি রোগের পূর্ণ চিত্র ।
প্রশ্ন - লক্ষণসমষ্টি রোগের সূচনা হইতে পরিণাম পর্যন্ত এমন এক কাহিনী যাহার মধ্যে রোগ বিনাশের পথের নির্দেশ থাকে - আলোচনা কর ।
বা , লক্ষণসমষ্টি দূর হওয়ার পরও রোগ থাকে কি ?
বা , রোগলক্ষণ দূরীভূত হইলে রোগ দূর হয় প্রমাণ কর ।
উত্তরঃ- লক্ষণসমষ্টি কথাটির ব্যঞ্জনা ব্যাপক ও গভীর । লক্ষণসমষ্টি বলিতে আমরা বুঝি কোন বিশেষ পটভূমিকায় ( ব্যক্তি বিশেষের ধাতুপ্রকৃতি প্রভৃতি ) পরিচায়ক লক্ষণসহ অন্যান্য লক্ষণসমূহের এমন এক সমাবেশ যাহা রোগের সার্বিক পরিচয় বহন করে এবং এই সমস্ত লক্ষণ সমন্বিত একটিমাত্র ঔষধের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে । অর্থাৎ রোগের সঠিক পরিচয় জানার জন্য যাহা কিছু প্রয়োজন লক্ষণসমষ্টি আমাদিগকে তাহা জানাইয়া দেয় । একদিকে লক্ষণসমষ্টি রোগের প্রতিচ্ছবি , অন্যদিকে ইহা ঔষধেরও প্রতিচ্ছবি । তাই সদৃশ লক্ষণ মতে ঔষধ প্রয়োগে রোগলক্ষণ দূরীভূত হওয়ার পর রোগ আর থাকে না । রোগ লক্ষণই রোগের অস্তিত্বের পরিচয় বহন করে । সদৃশ ঔষধ প্রয়োগে একে একে রোগীর সকল লক্ষণই দূরীভূত হয় এবং রোগের উপশম আরম্ভ হয় । দেহের অভ্যন্তরে যদি রোগ শক্তির বিন্দুমাত্রও বিদ্যমান থাকিত , তাহা হইলে ইহার কোন না কোন লক্ষণ রোগীর দেহে , মনে , অনুভূতিতে প্রকাশিত হইবেই । লক্ষণের অবসানে রোগের অবসান অবশ্যম্ভাবী । তাই লক্ষণ অবসানের পরও রোগ থাকে এইরূপ ধারণা করা অসংগত ও অবৈজ্ঞানিক । লক্ষণসমষ্টির মধ্যেই রোগের বিনাশের পথের নির্দেশ থাকে ।
প্রশ্ন - রোগের সামগ্রিক প্রতিনিধি স্বরূপ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রত্যক্ষণীয় লক্ষণাবলী কি এবং কিরূপে ঐ লক্ষণসমূহ সংগৃহীত হয় ?
উত্তর : রোগলক্ষণ দেহীর রুগ্নাবস্থার বহিঃপ্রকাশ । প্রত্যেক ব্যক্তিগত রোগীক্ষেত্রে রোগীর দেহ ও মনের এবং স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটে । জীবনীশক্তির এই বিকৃতি বা লক্ষণসমষ্টি পরিদৃশ্যমান এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য । রোগ অজড় এবং ইহাকে চোখে দেখা যায় না । কিন্তু রোগ দেখিতে না পাওয়া গেলেও প্রকাশিত বাহ্যিক লক্ষণাবলী আমরা স্পষ্ট দেখিতে পাই এবং ঐ লক্ষণসমষ্টিই রোগের পরিচয় বহন করে । একজন সংস্কারমুক্ত নিরপেক্ষ চিকিৎসক এই রোগলক্ষণসমূহ প্রত্যক্ষ করেন । রোগীর পূর্ববর্তী স্বাস্থ্যের বিকৃতি বা অসুস্থ অবস্থাগুলি তিনি লক্ষ্য করেন । রোগজ এই সব লক্ষণ রোগী স্বয়ং অনুভব করে , আত্মীয় স্বজন বা সেবাকারীরা সেগুলি সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ করিয়া মন্তব্য করেন এবং চিকিৎসক স্বয়ং পর্যবেক্ষণ করেন । সকল লক্ষণ মিলিয়াই লক্ষণসমষ্টি সৃষ্টি হয় । এই সব লক্ষণসমষ্টির মধ্যে কিছু আছে ব্যক্তিনিষ্ঠ এবং কিছু বস্তুনিষ্ঠ । ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ হিসাবে রোগী নিজে তাহার ব্যথা বেদনা , অসুবিধা , অস্বস্তি , অস্থিরতা , তৃষ্ণা বা মানসিক অবস্থা চিকিৎসককে জানায় । বস্তুনিষ্ঠ লক্ষন হিসাবে রোগীর আত্মীয় স্বজন ও সেবাকারীরা রোগীর প্রলাপ বকা , দাঁতে দাঁত ঘষা প্রভৃতি সম্পর্কে মন্তব্য করেন । চিকিৎসক উল্লেখিত ব্যক্তিনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ সংগ্ৰহনান্তে স্বয়ং পর্যবেক্ষণ করতঃ অতিরিক্ত লক্ষণ সংগ্রহ করিয়া লক্ষণের সমন্বয় সাধন করেন ।
প্রশ্ন - কখন স্পষ্ট রোগলক্ষণ পাওয়া যায় না ?
উত্তর : যখন আস্তর প্রকৃতি কোন রোগলক্ষণ সৃষ্টি করে না বা করিতে পারে না তখন বুঝিতে হইবে প্রকৃতি কোন সাহায্য চায় না । অর্থাৎ হয় কোন প্রকৃত রোগ হয় নাই অথবা রোগ অসাধ্য স্তরে পৌছিয়া গিয়াছে । এই অবস্থা দেখা দেয় রোগের একেবারে প্রথম এবং শেষ অবস্থায় । রোগের প্রথম অবস্থায় দেহী আপন বলেই প্রতিকুল শক্তির মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকে । রোগী তখন সামান্য অসুস্থতা বোধ করে । সময় পাইলে দেহী স্বীয় শক্তিতেই সেই অবস্থা কাটিয়া উঠিতে পারে । তখন আর বাহিরের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না । রোগীর একেবারে অন্তিম অবস্থার যখন রোগ শক্তির আক্রমণে দেহী সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত তখন সে বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করে । এই অবস্থায় স্পষ্ট রোগলক্ষণ পাওয়া যায় না ।
প্রশ্ন - রোগীর ব্যক্তিগত রোগলক্ষণ পরীক্ষা করা হয় কেন ?
উত্তর : চিকিৎসার জন্য লক্ষণসমষ্টিই হইল রোগ । আভ্যন্তরীণ রোগের পরিচয় জানিবার জন্য একমাত্র বিশ্বস্ত উপায় হইল লক্ষণসমষ্টি । লক্ষণের মধ্যেই রোগের পরিচয় থাকে । রোগীর দেহ ও মনে প্রকাশিত অস্বাভাবিক লক্ষণাবলীই রোগের পরিচায়ক । ব্যক্তি ভেদে একই রোগীকে আলাদাভাবে তাহার রোগলক্ষণের পরীক্ষা করিতে হইবে । অসমলক্ষণ চিকিৎসায় সকলেই রোগের নাম ধরিয়া চিকিৎসা করিতে অভ্যস্ত । এইসব প্রচলিত নামের নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট ঔষধও জানা থাকে । কিন্তু তাহাতে আকাংখিত আরোগ্য সম্ভব নয় । কারণ বিভিন্ন রোগীর দৈহিক , মানসিক , ধাতুগত বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির পার্থক্যের ফলে একই নামের রোগের লক্ষণাবলী সকলের মধ্যে একরকম ভাবে প্রকাশিত হয় না । তাই বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা করিয়া আদর্শ আরোগ্য লাভের প্রয়োজন রোগীর ব্যক্তিগত রোগ লক্ষণের পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন ।
প্রশ্ন - লক্ষণসমূহের উপশম সত্বেও রোগী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করিলে কি করিতে হইবে ?
উত্তর ঃ লক্ষণসমূহ একদিকে যেমন রোগের প্রতিচ্ছবি , অন্যদিকে ইহা ঔষধেরও প্রতিচ্ছবি । লক্ষণ দূরীভূত হইলে রোগের অবসান অবশ্যাম্ভাৰী । ঔষধ প্রয়োগের পর লক্ষণের উপশম সত্ত্বেও অনেক সময় রোগী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না । এমতাবস্থায় বুঝিতে হইবে যে এই জাতীয় রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্যের অযোগ্য । কারণ তাহার কোন প্রধান অঙ্গ যেমন লিভার , হৃদপিণ্ড , কিডনী প্রভৃতি অকেজো হইয়াছে । তাই এইরূপ ক্ষেত্রে উপশমদায়ক ঔষধ প্রদান করা ছাড়া অন্য কোন পথ নাই ।
প্রশ্ন - কোন প্রকারের লক্ষণ ঔষধ প্রয়োগের জন্য সহায়ক ?
বা , কোন্ কোন্ লক্ষণগুলি ঔষধ নির্বাচনের জন্য সর্বাপেক্ষা সাহায্য করিয়া থাকে ?
উত্তর : লক্ষণসমষ্টি শুধুমাত্র রুগ্নাবস্থার বহিঃপ্রকাশ বা রোগের নিদর্শনই নয় , প্রতিকারক সদৃশ ঔষধ নির্বাচনেরও চাবিকাঠি । লক্ষণসমূহের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করিয়া লক্ষণসমষ্টিকে ২ ভাগে ভাগ করা হইয়াছে ।
ক ) ব্যক্তিনিষ্ঠ ও
খ ) বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ ।
রোগের ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণগুলি রোগের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের ইঙ্গিত বহন করে । রোগ সংক্রমণে ব্যক্তি মানুষের আস্তর প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া , বিশেষ করিয়া তাহার মানসিক ও ভাবাবেগের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত অবস্থা এই লক্ষণের মাধ্যমে ফুটিয়া উঠে । এগুলির মাধ্যমে রোগীর আস্তর প্রকৃতির অবস্থা ও রোগের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায় বলিয়া ঔষধ প্রয়োগের জন্য ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণগুলি সবচেয়ে সহায়ক । তাহা ছাড়া পরিচায়ক লক্ষণসমূহের মধ্যে যেসব লক্ষণ রোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অপেক্ষা ব্যতিক্রমধর্মী বা অদ্ভুত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক , সুস্পষ্ট , যেখানে একটিমাত্র লক্ষণ একটিমাত্র ঔষধকে নির্দেশ করে এই জাতীয় অসাধারণ লক্ষণ ঔষধ প্রয়োগের জন্য সবচেয়ে বেশী সহায়ক ।
প্রশ্ন - মানসিক লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর ঃ যে সকল লক্ষণ দ্বারা রোগীর মনোবৃত্তি অর্থাৎ মানসিক অবস্থা এবং আচরণের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় উহাদিগকে মানসিক লক্ষণ বলে । যাহা কিছু রোগীর মনের অবস্থা , মনের ভাব , আবেগ , ভালবাসা , আকাংখা , ইচ্ছা অনিচ্ছা , ভয়ভীতি প্রভৃতি প্রকাশ করে সে সকল লক্ষণকে মানসিক লক্ষণ বলে ।
প্রশ্ন - মানসিক লক্ষণের শ্রেণীবিভাগ কর ।
উত্তর : মানসিক লক্ষণসমূহকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় । যথা
ক ) ইচ্ছার ক্ষেত্র ( The will )
খ ) বোধশক্তির ক্ষেত্র ( The understanding )
গ ) স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্র ( The memory )
ক ) ইচ্ছার ক্ষেত্র ঃ ঘৃণা , ভয় , ভালবাসা প্রভৃতি মনের বিচিত্র ক্রিয়া প্রকাশক লক্ষণসমূহ এই শ্রেণীর অন্তর্গত । যেমন - সন্তানের প্রতি উদাসীনতা , আত্মহত্যার বাসনা , মৃত্যুভয় প্রভৃতি ।
খ ) বোধশক্তির ক্ষেত্র : মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির অবস্থাজ্ঞাপক লক্ষণসমূহ এই শ্রেণীর অন্তর্গত । যেমন - দৃষ্টিভ্রম প্রলাপ , কোন কিছু সম্বন্ধে ভুল ধারণা প্রভৃতি ।
গ ) স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্র ঃ মানুষের স্মৃতিশক্তির অবস্থাজ্ঞাপক লক্ষণসমূহ এই শ্ৰেণী অন্তর্গত ।
যেমন - নিকট আত্মীয় বা অতি পরিচিত লোকের নাম ভুলিয়া যাওয়া , স্মৃতিশক্তি লোপ , সাম্প্রতিক ঘটনা বিস্মৃত হওয়া প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
উত্তর : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব সর্বাধিক । কারণ রোগের কষ্ট ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সকল প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি মানসের উপর প্রতিফলিত হয় এবং তাহাই মানসিক লক্ষণরূপে প্রকাশ পায় । মানসিক লক্ষণের মাধ্যমে আমরা রোগীর অন্তর প্রকৃতিকে জানিতে পারি । দেহ ও মন সম্পূর্ণরূপে পৃথক করা কখনও সম্ভব নয় । উহারা একই জীবনীশক্তির অধীন । প্রকৃত পক্ষে
মনই হইল সম্পূর্ণ মানুষ । যে সব লক্ষণ দ্বারা আমরা রোগীর ভিতরের মানুষটিকে জানিতে পারি , যাহা কিছু রোগীর হৃদয়ের কাছের জিনিষ , যাহা মনকে সহজেই আন্দোলিত ও প্রভাবিত করে সেসব কিছুই মানসিক লক্ষণের অন্তর্গত । রোগীর মনের ভাব , অবস্থা , অনীহা , ইচ্ছা অনিচ্ছা , ভয় , ভালবাসা সবছুিই মানসিক লক্ষণের অন্তর্গত । মানসিক লক্ষণ দ্বারা মন , স্বভাব প্রকৃতি , বুদ্ধি প্রভৃতির প্রত্যক্ষ পরিবর্তন দেখা যায় । কাজেই মানসিক লক্ষণসমূহ মানব সত্ত্বার অভিব্যক্তি । এই সকল লক্ষণের মাধ্যমেই শুধুমাত্র ব্যক্তি মানুষের পরিচয় জানা সম্ভব । হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যক্তি মানুষের প্রকাশিত লক্ষণের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল । তাই মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব সর্বাধিক ।
প্রশ্ন - মানসিক ব্যাধি কাহাকে বলে ? ইহার প্রকারভেদ লিখ এবং চিকিৎসার বর্ণনা দাও ।
উত্তর : মানসিক ব্যাধি- কিছু কিছু একদৈশিক পীড়া আছে , যাহা মানুষের মনোবৃত্তি ও আচরণের মধ্যে অধিকাংশ উপসর্গ প্রদর্শন করে উহাদিগকে মানসিক ব্যাধি বলে । মনের সহিত দেহের সম্পর্ক নিবিড় । দেহ ও মন একই জীবনীশক্তির অধীন । মানসিক ব্যাধিতে মানুষের মন , প্রকৃতি , স্বভাব ও বুদ্ধিবৃত্তি প্রভৃতির প্রত্যক্ষ পরিবর্তন দৃষ্ট হয় । মানসিক ব্যাধির প্রকারভেদ : উৎস অনুসারে মানসিক ব্যাধি ৪ প্রকারের । যথা
১ ) দৈহিক ব্যাধিজনিত মানসিক ব্যাধি ।
২ ) আবেগময় মানসিক ব্যাধি ।
৩ ) অপ্রত্যাশিত মানসিক ব্যাধি ।
৪ ) কুঅভ্যাসজনিত মানসিক ব্যাধি ।
১ ) দৈহিক ব্যাধিজনিত মাসসিক ব্যাধির চিকিৎসা - দীর্ঘকাল স্থায়ী কষ্টদায়ক দৈহিক ব্যাধি দ্বারা যেমন ফুসফুসে পূঁজোৎপত্তি , নালীক্ষত প্রভৃতি ব্যাধি দ্বারা মন ও প্রকৃতির ব্যাধিজনিত মানসিক ব্যাধি বলে । ইহাতে শারীরিক উপসর্গের হ্রাসপ্রাপ্তির সাথে সাথে মানসিক উপসর্গসমূহের বৃদ্ধি ঘটে । এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা এইরূপ ব্যাধির চিকিৎসা করা উচিত । রোগীকে কোন দৈহিক বা মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া উচিত নয় । রোগীর সহিত স্বাভাবিক আচরণ করা উচিত যাহাতে রোগীর মনে এমন ধারণা না হয় যে তাহাকে মস্তিষ্ক বিকার বলিয়া গণ্য করা হইতেছে ।
২ ) আবেগময় মানসিক ব্যাধির চিকিৎসা- অতিরিক্ত আবেগ যেমন অবিরত অশান্তি , বিরক্তি , অত্যাচার , বারবার আতংকের সংগটন , দীর্ঘস্থায়ী উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ প্রভৃতি হইতে উৎপন্ন মানসিক ব্যাধিকে আবেগময় মানসিক ব্যাধি বলে । এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা এইরূপ ব্যাধির চিকিৎসা করা উচিত । যুক্তিপূর্ণ উপদেশ ও বন্ধু বান্ধবদের পরামর্শ দান এবং প্রয়োজনে প্রচ্ছন্ন প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া উচিত ।
৩) অপ্রত্যাশিত মানসিক ব্যাধির চিকিৎসা- শোক , দুঃখ , আনন্দ প্রভৃতি মানসিক ব্যাধিকে অপ্রত্যাশিত মানসিক ব্যাধি বলে । এইক্ষেত্রে প্রথমে স্বল্প ক্রিয়াশীল কোন তীব্র ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা শুরু করিতে হইবে । ব্যাধির প্রকোপ হ্রাস পাওয়ার পরে কোন গভীর ক্রিয়াশীল এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে ।
৪ ) কু - অভ্যাসজনিক মানসিক ব্যাধির চিকিৎসা- কুঅভ্যাস , চরিত্রদোষ , অবহেলা , কদাচার , মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার প্রভৃতি হইতে সৃষ্ট মানসিক ব্যাধিকে কুঅভ্যাসজনিত মানসিক ব্যাধি বলে । এই ধরণের মানসিক ব্যাধিতে প্রথমে যুক্তিপূর্ণ উপদেশ দিতে হইবে । ইহাতে ফল হইলে এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে ।
প্রশ্ন - কি কি কারণে মানসিক রোগের উৎপত্তি হইয়া থাকে ?
উত্তর : মানসিক ব্যাধির মূল কারণ হইল আভ্যন্তরীণ সোরাবিষ । সোরা ব্যতীত মানসিক ব্যাধির সহযোগী কারণগুলি নিম্নরূপ
ক ) দৈহিক ব্যাধিজনিত কারণ- মানসিক ব্যাধি প্রায়ই শারীরিক ব্যাধি । হইতে উৎপন্ন হয় । শারীরিক ব্যাধির লক্ষণগুলি ক্রমশঃ বিলীন হইয়া প্রায় অস্পষ্ট হইয়া যাইতে থাকে । আর দেহ প্রকৃতির পরিবর্তন সেই পরিমাণে বৃদ্ধি পাইয়া ক্রমে তাহা এক তরফা রোগে পরিণত হয় । শরীরের কোনও মারাত্মক রোগ , যেমন ফুসফুসে পূঁজ সঞ্চয় , হৃদপিণ্ডের ক্ষয় , কিংবা প্রসবান্তে উৎপন্ন কোন তরুণ প্রকৃতির বিশিষ্ট রোগ পরিবর্তিত হইয়া উন্মাদ , মানসিক অবসাদ প্রভৃতি রোগেপরিণত হয় ।
খ ) আবেগময় কারণ- যেমন , দীর্ঘস্থায়ী উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ , অবিরত অশান্তি বিরক্তি , অত্যাচার এবং পুনঃপুনঃ আতঙ্ক প্রভৃতি কারণে মানসিক রোগ উৎপন্ন হইতে পারে ।
গ ) অভ্যাসগত কারণ- যেমন কু অভ্যাস , কুশিক্ষা , চরিত্র দোষ , অবহেলা , মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার প্রভৃতি কারণেও মানসিক পীড়া সৃষ্টি হয় ।
ঘ ) অপ্রত্যাশিত কারণ- যেমন , শোক , দুঃখ , আনন্দ , নিরাশ , প্রেম , শুভ বা অশুভ সংবাদ , আতঙ্কের আকস্মিক সংঘাত , প্রভৃতি কারণেও মানসিক ব্যাধির উদ্ভব হয় ।
প্রশ্ন - মানসিক রোগে হোমিও চিকিৎসা উৎকৃষ্টতর কেন ?
বা , মানসিক লক্ষণ বাদ দিয়া রোগীর ক্ষেত্রে সাদৃশ্যবাহী ঔষধ নির্বাচন সম্ভবপর কি না ?
উত্তর : মানসিক রোগে হোমিও চিকিৎসা উৎকৃষ্টতর । মানসিক লক্ষণ বাদ দিয়া রোগীর ক্ষেত্রে সাদৃশ্যবাহী ঔষধ নির্বাচন সম্ভবপর নয় । তরুণ বা পুরাতন প্রত্যেক রোগের ক্ষেত্রেই অন্যান্য লক্ষণের সাথে সাথে রোগীর মানসিক অবস্থা ও প্রবৃত্তির পরিবর্তন লক্ষ্য না করিলে এবং সেই মতে রোগীর শারীরিক , মানসিক ও প্রবৃত্তির লক্ষণের সাদৃশ্যবাহী ঔষধ নির্বাচন না করিলে কিছুতেই সদৃশ বিধানমতে আরোগ্য সম্পাদনে কৃতকার্য হওয়া যায় না । অর্থাৎ নির্বাচিত ঔষধটি রোগীর অন্যান্য শারীরিক লক্ষণের সাথে সর্বাধিক মিল থাকা সত্ত্বেও যদি রোগীর মানসিক লক্ষণের মিল না থাকে তবে রোগীর দ্রুত ও স্থায়ী আরোগ্য সাধিত হয় না । মানসিক রোগে রোগীর শারীরিক লক্ষণগুলি প্রচ্ছন্ন থাকিলেও বিদ্যমান থাকে । সকল মানসিক রোগে মানসিক লক্ষণগুলিই প্রধান লক্ষণ , অন্যান্যগুলি সাধারণ লক্ষণ । তাই ঔষধের মনোলক্ষণের উপর নির্ভর করিয়া সদৃশ মতে ঔষধ প্রয়োগ করিলে মানসিক রোগ আরোগ্যক্রমে শারীরিক লক্ষণগুলিও দূরীভূত হয় । তাই মানসিক রোগে হোমিও চিকিৎসা উৎকৃষ্টতর ।
প্রশ্ন - মানসিক ব্যাধি শারীরিক ব্যাধিরই অংশ বিশেষ বা মানসিক ব্যাধি শারীরিক ব্যাধির সহিত সম্পর্ক যুক্ত - ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর : তথাকথিত মানসিক ব্যাধি এবং ভাববিহ্বলতা জনিত রোগগুলি প্রকৃতপক্ষে শারীরিক ব্যাধিরই অংশ এবং শারীরিক ব্যাধির অতিরিক্ত কিছু নয় । মানসিক পীড়াগুলির দৈহিক বা বাহ্যিক লক্ষণও থাকে । স্থানীয় বা একদৈশিক পীড়াগুলিরও আভ্যন্তরীণ কারণ থাকে । বিকারগ্রস্ত উন্মাদ , বায়ুরোগ প্রভৃতি মানসিক রোগ নামে অভিহিত হইলেও তাহাদের দৈহিক লক্ষণ প্রথম দৃষ্টিতে উপলব্ধি করা না গেলেও একেবারে যে তাহারা শারীরিক কোন প্রকার স্থূল বিকৃতির সহিত সম্পর্কশূন্য এইরূপ মনে করা ভুল । প্রকৃত পক্ষে এই প্রকার মানসিক ব্যাধি ক্ষেত্রে মানসিক লক্ষণের সাথে শারীরিক লক্ষণগুলি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাইয়া শেষ পর্যন্ত একদেশীয় লক্ষণে পরিণত হয় । তখন ইহা মন ও প্রবৃত্তির সূক্ষ্ম ইন্দ্রিয় অধিষ্ঠিত স্থানীয় ব্যাধিরূপে আত্মপ্রকাশ করে অর্থাৎ মানসিক ব্যাধি বলিয়া পরিচিত হয় । তাই মানসিক ব্যাধি শারীরিক ব্যাধির সাথে গভীর সম্পর্কযুক্ত ।
প্রশ্ন - মানসিক রোগ চিকিৎসার নিয়ম কি ?
উত্তর ঃ মানসিক রোগ চিররোগ শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত । সোরা , সিফিলিস ও সাইকোসিস নামক চির উপবিষ হইতে উদ্ভূত মানসিক রোগকে উপবিষ সঞ্জাত বলা হয় । মানসিক রোগের বিভিন্ন উত্তেজক কারণ থাকিতে পারে । যেমন ভাবাবেগ , কামাবেগ , মৈথুন , মদ গাঁজার নেশা প্রভৃতি । হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা মানসিক রোগের চিকিৎসা অপরাপর রোগের চিকিৎসার মতই সদৃশ লাক্ষণিক নীতিতেই করিতে হয় । মানসিক রোগের ইতিহাস নিয়া পূর্ণচিত্র প্রাপ্তির পর সদৃশনীতিতেই রোগের চিকিৎসা করিতে হইবে । অর্থাৎ যে ঔষধের দ্বারা সুস্থ দেহে অনুরূপ লক্ষণ বিশিষ্ট মানসিক রোগ উৎপন্ন হইবে সেই ঔষধই প্রয়োগের উপযুক্ত সময় । উন্মত্ততার কারণ অনুসারে প্রতিকারের প্রাথমিক ব্যবস্থা করা আবশ্যক । মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারজনিত হইলে তাহা বন্ধ না করিয়া মানসিক রোগের চিকিৎসা করিতে যাওয়া নিরর্থক । শোক , ভয় ও নৈরাশ্যজনিত বিকৃতি বিদূরীত করিতে হইলে শোক , ভয় , নৈরাশ্য প্রভৃতির কারণ নির্মূল করিতে হইবে । যাবতীয় কারণ দূর করার সাথে সাথে হোমিও ঔষধ ব্যবস্থা করিতে হইবে । বর্ণিত কারণগুলি মানসিক রোগের মূল কারণ নয় , ঐগুলি উত্তেজক কারণমাত্র । মূল কারণ একমাত্র সোরা । মানসিক রোগীর মূল কারণ সোরা উপবিয়ের চিকিৎসা না করিলেই নয় । উপযুক্ত এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ না করিলে উত্তেজক কারণ বন্ধ করার পর রোগ আপাততঃ উপশমিত হইলেও পুনঃপুনঃ ফিরিয়া আসিতে পারে । অসহ্য অস্ত্র চিকিৎসা ও অসদৃশ স্থুল ঔষধের দ্বারা প্রচাপন জনিত যেসব মানসিক রোগ উৎপন্ন হয় সে সব রোগের চিকিৎসার প্রারম্ভে উক্ত কুফল দূর করার ব্যবস্থা করা উচিত । তৎপর সদৃশ লক্ষণ ভিত্তিতে হোমিওপ্যাথিক প্রতিকারক ঔষধ ব্যবস্থা করা বিধেয় । ১৫ প্রচণ্ড উন্মত্ততার সম্মুখে শান্তভাবে , ভয় শূন্যতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হইবে । বাচালতার প্রলাপে খানিকটা মনোযোগ প্রদর্শন করিয়া নীরবে শুনিতে হইবে । অশোভন আচরণ ও অশ্লীল কথায় সম্পূর্ণ অমনোযোগী থাকিতে হইবে । রোগীর দুষ্কর্মের জন্য তিরষ্কার করা উচিত নয় । চিকিৎসককে এইরূপ ডান দেখাইতে হইবে যাহাতে রোগীর কাণ্ডজ্ঞান আছে এইরূপ ভাব প্রকাশ পায় । সকল উন্নত দেশেই মানসিক রোগী চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতালের ব্যবস্থা আছে । তবে মনে রাখিতে হইবে রোগীর প্রতি অত্যাচার করিয়া এই রোগের প্রতিকার করা যায় না । অনুকূল পরিবেশ , সহৃদয় ও সহানুভূতির অনুকুল আবেগে আবিষ্ট করিয়া এইরূপ রোগীর চিকিৎসা করা উচিত ।
প্রশ্ন - আবেগময় মানসিক ব্যাধির বর্ণনা দাও ও উহার চিকিৎসা লিখ ।
বা , মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা কখন প্রয়োগ করিবে ?
উত্তর ঃ এমন কতকগুলি ভাববিহ্বল মানসিক ব্যাধি আছে যাহা শারীরিক রোগের পরিণতি হিসাবে উৎপন্ন হয় নাই । ইহারা নানারূপ আবেগময় কারণ হইতে যেমন - অবিরত উদ্বেগ , অশান্তি , বিরক্তি , অত্যাচার , বারংবার শংকা ও ভীতি প্রভৃতি আবেগময় অবস্থা হইতে সৃষ্ট । এই সকল ব্যাধিসমূহকে আবেগময় মানসিক ব্যাধি বলে । আবেগময় কারণ হইতে সৃষ্ট মানসিক ব্যাধি দৈহিক স্বাস্থ্যকে অধিক নষ্ট করিবার পূর্বে মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা প্রয়োগ করিতে হয় । রোগীর প্রতি বিশ্বাস প্রদর্শন , নির্ভয় দান , বন্দুভাবে উপদেশ দান , বিপদে ভরসা দান প্রভৃতি মানসিক চিকিৎসার মাধ্যমে এবং উপযুক্ত পথ্য ও পরিচর্যা দ্বারা মানসিক স্বাস্থ্য পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয় । সাথে সোরা বিনাশক উপযুক্ত ঔষধ অবশ্যই প্রয়োগ করিতে হইবে ।
প্রশ্ন - অপ্রত্যাশিত মানসিক ব্যাধির বর্ণনা দাও ও উহার চিকিৎসা লিখ।
উত্তর : শোক , দুঃখ , আনন্দ প্রভৃতি শুভ বা অশুভ সংবাদ , আতঙ্কের আকস্মিক সংঘাত প্রভৃতি দ্বারা উদ্ভূত মানসিক ব্যাধিকে অপ্রত্যাশিত মানসিক ব্যাধি বলে । এইরূপ ব্যাধির চিকিৎসা প্রথমে স্বল্পক্রিয়াশীল কোন তীব্র ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা উচিত । ব্যাধির প্রকোপ হ্রাস পাওয়ার পর কোন গভীর ক্রিয়াশীল এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত ।
প্রশ্ন - উগ্র ও ক্ষিপ্ত প্রকৃতির মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও সেবাকারীদের আচরণ কি প্রকার হইবে ?
উত্তর : উগ্র ও ক্ষিপ্ত প্রকৃতির মানসিক রোগীরা প্রচণ্ড উন্মত্ত থাকে , তাহাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না । রোগীর প্রচণ্ড উন্মত্ততার সামনে চিকিৎসক ও সেবাকারীদের শান্তভাবে ভয়শূন্যতা ও মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হইবে । কোন অবস্থাতেই রোগীকে দৈহিক বা মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া , মারধর করা বা শৃঙ্খলাবদ্ধ করা উচিত নয় ।
প্রশ্ন - পর্যায়ক্রমিক মানসিক ব্যাধি কাহাকে বলে ?
উত্তরঃ যে সকল মানসিক ব্যাধির এক প্রকারের লক্ষণের সহিত আর এক প্রকারের লক্ষণ বার বার পর্যায়ক্রমে দেখা দেয় , উহাদিগকে পর্যায়ক্রমিক মানসিক ব্যাধি বলে ।
প্রশ্ন - অপ্রকৃত মানসিক রোগ কাহাকে বলে ? অপকৃত মানসিক রোগের কারণ লিখ ।
উত্তর : ত্রুটিপূর্ণ জীবন ধারার জন্য অনেক সময় মনোজগতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । এই অবস্থা দীর্ঘকাল চলিতে থাকিলে নানা প্রকারের মনোরোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় । তখন তাহাকে অপ্রকৃত মানসিক রোগ বলে ? অপকৃত মানসিক রোগের কারণ- কুঅভ্যাস , কুশিক্ষা , অসংযম , কুসংস্কার , দুর্নীতি , চরিত্রদোষ , অজ্ঞতা প্রভৃতি কারণে অপ্রকৃত মানসিক রোগের সৃষ্টি হয় ।
প্রশ্ন - প্রকৃত মানসিক ব্যাধি ও অপ্রকৃত মানসিক ব্যাধির পার্থক্য কিভাবে করা যায় ?
উত্তর : মানসিক রোগীকে যদি বন্ধুভাবে সান্ত্বনাপূর্ণ যুক্তিসঙ্গত পরামর্শ , হৃদয়গ্রাহী আবেদন , অনুরোধ , সদুপদেশ প্রভৃতি প্রদান করিলে রোগ কমিয়া যায় তবে বুঝিতে হইবে ইহা অপ্রকৃত মানসিক ব্যাধি । আর যদি এই সকল ব্যবস্থায় রোগ বৃদ্ধি পায় , যেমন - বিষাদগ্রস্ত রোগী অধিকতর বিষণ্ণ , অসন্তুষ্ট ও অপ্রবোধনীয় হয় , বিদ্বেষপরায়ন উন্মাদ আরও ক্ষিপ্ত হয় , বাচাল নির্বোধের নির্বুদ্ধিতা আরও বেশী প্রকাশ পায় তাহা হইলে বুঝিতে হইবে যে ইহা প্রকৃত মানসিক রোগ ।
প্রশ্ন -মানসিক রোগে কখন এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ ঠিক নহে ?
উত্তর : মানসিক রোগটি হঠাৎ করিয়া প্রকাশ পাইলে প্রথমেই এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ ঠিক নহে । যদি কোনও শান্ত প্রকৃতির লোক হঠাৎ করিয়া উন্মাদ হইয়া যায় বা মানসিক বিকারগ্রস্ত হয় ( আভ্যন্তরীন সোরা উপবিষ থাকিলে ভয় পাইয়া , অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া , মদ্যপান করিয়া এই প্রকার তরুণ মানসিক রোগ হইতে পারে ) তবে যদিও সকল ক্ষেত্রেই আভ্যন্তরীণ সোরা উপবিষ হইতেই ইহা বিকশিত হয় , তথাপি এই প্রকার তরুণ মানসিক রোগের চিকিৎসা তখনই সোরা দোষ ঔষধ দ্বারা করা উচিত নয় । এই ক্ষেত্রে রোগলক্ষণের সাথে সর্বাধিক মিল সম্পন্ন অথচ সোরাম নয় এমন একটি ঔষধ নির্বাচন করিতে হইবে । নির্বাচিত ঔষধের শক্তি সমন্বিত সূক্ষ্মমাত্রা প্রয়োগ করিতে হইবে যাহাতে আভ্যন্ত • রীণ সোরা উপবিষটি সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ফিরিয়া যায় এবং রোগী সুস্থবোধ করে ।
প্রশ্ন - মানসিক রোগে কখন এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয় ?
উত্তর : তরুণ মানসিক রোগটি হঠাৎ করিয়া প্রকাশ পাইলে প্রথমে এন্টিসোরিক নয় এমন ঔষধ প্রয়োগ দ্বারা মানসিক ব্যাধির উপশম হইলে তারপর এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে । আর দীর্ঘকাল ব্যাপী মানসিক ব্যাধিতে রোগীর একটি পূর্ণাঙ্গ রোগচিত্র অংকন করিয়া পূর্ণাঙ্গ রোগচিত্রের সাদৃশ্যবাহী ভেষজচিত্র সম্বলিত একটি হোমিও ঔষধ নির্বাচন করিতে পারিলেই সদৃশ বিধান মতে আরোগ্য সাধিত হইবে । দীর্ঘকালের মানসিক ব্যাধিতে অন্যান্য মানসিক লক্ষণের সহিত মিল সম্পন্ন একটি সোরাদোষ নাশক ঔষধ নির্বাচন করিতে হইবে ।
প্রশ্ন - মানসিক রোগীর পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি কিভাবে প্রস্তুত করিতে
বা , মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত রোগীর ক্ষেত্রে রোগীলিপি প্রস্তুত করণে কোন বিশেষ কৌশল আছে কি ?
উত্তর ঃ মানসিক রোগীর পূর্ববর্তী ইতিহাসে শারীরিক ব্যাধির ইতিহাস অবশ্যই দেখিতে পাওয়া যায় । সেই শারীরিক ব্যাধির পরিণতি হিসাবেই মানসিক রোগের প্রকাশ দেখা দেয় । তাই মানসিক রোগের লক্ষণ সংগ্রহে শারীরিক ব্যাধির ইতিহাস লওয়া প্রয়োজন । রোগীর বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজন হইতে রোগের পূর্ব ইতিহাস ও বিবরণ পাওয়া যাইতে পারে । মানসিক ব্যাধির প্রকোপ বেশী দেখা দিলে ঐ সময় শারীরিক ব্যাধির লক্ষণ অস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় , তবুও মানসিক ব্যাধির যখন সাময়িক প্রশমন ঘটে তখন লক্ষ্য করিলে কিছু না কিছু লক্ষণ বুঝা যায় । রোগীর আত স্বজন , বন্ধু বান্ধব ও সেবাকারীদের নিকট হইতে রোগীর দৈহিক ও মানসিক বিভিন্ন অস্বাভাবিকতার কথা জানিয়া লইয়া পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি প্রস্তুত করিতে হইবে । তাহা ছাড়া মানসিক রোগী যখন যাহা করে বা বলে সে মনে করে যে তাহা স্বাভাবিক এবং সে ঠিকই করিতেছে । তাই তাহার মুখ হইতে অসুস্থতার সম্বন্ধে বেশ একটা কিছু জানা যায় না । তবে এই সকল রোগীক্ষেত্রে রোগীর লক্ষণসমষ্টি সুস্পষ্ট ও অভ্রান্তরূপে প্রকাশিত হয় , চিকিৎসক একটু বিচক্ষণতার সহিত পরিশ্রম করিয়া অনুসন্ধান করিলেই রোগচিত্র অংকন করিতে পারেন । অনেক সময় রোগীর সহিত চিকিৎসক সতর্কতভাবে গুপ্ত প্রবঞ্চনা করিয়া কিছু কিছু লক্ষণ সংগ্রহ করিয়া রোগীলিপি প্রস্তুত করিতে পারেন ।
প্রশ্ন - মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে কোন সময় শারীরিক লক্ষণ প্রবণ থাকে এবং মানসিক লক্ষণ গোপন থাকে , আবার কোন ক্ষেত্রে ইহার বিপরীত অবস্থা হয় , সেইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি কিরূপ হইবে ?
উত্তর ঃ প্রত্যেক মানসিক পীড়ার পূর্ববর্তী ইতিহাস সংগ্রহ করিলেই দেখা যাইবে যে , সর্বপ্রথমে শারীরিক লক্ষণগুলিই প্রকাশ পাইয়াছিল । শারীরিক লক্ষণগুলি পরে ক্রমশ বিলুপ্ত হইয়া পীড়া মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হইয়াছে । মানসিক রোগের ক্ষণিক উপশম হইলেই পূর্ববর্তী শারীরিক লক্ষণগুলি সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় । দৈহিক ব্যাধিজনিত মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় । যে , ফুসফুসে পূজ সঞ্চয় , হৃদপিণ্ডের ক্ষয় বা প্রসবান্তে উৎপন্ন কোন তরুণ প্রকৃতির রোগ পরিবর্তিত হইয়া উন্মাদ , মানসিক অবসাদ প্রভৃতি রোগে পরিণত হয় । ইহার পর রোগীর শারীরিক রোগলক্ষণগুলি ধীরে ধীরে অপসারিত হইয়া যায় বা ক্ষীণ হইয়া যায় । এইভাবে যে মানসিক বিকার পূর্বে সামান্য পরিমাণে ছিল তাহাই এখন শারীরিক লক্ষণগুলিকে পরাভূত করিয়া প্রধান লক্ষণরূপে আত্মপ্রকাশ করে । ইহাতে বুঝা যায় যে , মানসিক পীড়ায় শারীরিক লক্ষণগুলি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকিলেও বিদ্যমান থাকে । এই সকল মানসিক রোগে অপরাপর চিকিৎসার মত সদৃশ বিধান মতে চিকিৎসা করিতে হইবে । এই সকল রোগে মানসিক লক্ষণগুলিই প্রধান লক্ষণ ও অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ । কাজেই চিকিৎসক যত্ন সহকারে পর্যবেক্ষণ করিয়া অনন্য সাধারণ মানসিক ও প্রকৃতিগত লক্ষণগুলি নির্ধারণের সাথে শারীরিক লক্ষণগুলি যোগ করিয়া এমন একটি পরীক্ষিত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন করিবেন যাহার সহিত চিকিৎসাধীন রোগের অনন্য সাধারণ মানসিক ও শারীরিক লক্ষণের সর্বাধিক মিল বহিয়াছে ।
প্রশ্ন - মানসিক রোগীর চিকিৎসায় সোরা বিনাশক ঔষধ প্রয়োগ না করিবার পরিণতি কি ?
বা , মানসিক রোগীর চিকিৎসায় সোরা দোষনাশক ঔষধের প্রয়োজনীয়তা ক ?
উত্তর : কোন তরুণ মানসিক ব্যাধির সামরিক আরোগ্য প্রাপ্তির পর সোরা বিনাশক চিকিৎসা যদি না করা হয় তাহা হইলে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই প্রথমে যে কারণে উন্মাদ যোগ দেখা দিয়াছিল , দ্বিতীয়বার তাহার চাইতে হালকা বা সাধারণ কারণেই প্রথম বারের অপেক্ষা অধিক তীব্রভাবে উন্মাদ রোগ দেখা দিবে এবং অধিক স্থায়ী হইবে । সোরা উপবিষ পূর্ণাঙ্গরূপে পরিস্ফুট হইলেও বিরামহীনভাব ধারণ করিলে সোরা নাশক চিকিৎসা দ্বারা আরোগ্য সম্পাদনও কঠিন হইয়া পড়ে । তাই তরুণ সিক ব্যাধির সাময়িক আরোগ্যের পর সোরা দোষ নাশক ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত ।
প্রশ্ন - মানসিক ব্যাধি চিকিৎসাকালে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ?
উত্তর ঃ মানসিক ব্যাধির চিকিৎসা কালে নিম্নলিখিত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ।
ক ) রোগীকে কোনরূপ শারীরিক বা মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া বা শৃঙ্খলাবদ্ধ করা অনুচিত ।
খ ) রোগীর কোন বাহ্যিক বিশৃঙ্খলা থাকা অনুচিত ।
গ ) কখনও রোগীর কথাবার্তার বিরুদ্ধে যাওয়া অথবা সংশোধনের চেষ্টা করা উচিত নয় । কারণ ইহাতে উপসর্গের বৃদ্ধি ঘটে ।
ঘ ) রোগীর কথাবার্তায় সম্পূর্ণ মনোযোগী হওয়া উচিত ।
ঙ ) কুবাক্য ও নিন্দনীয় আচরণ করিলে ঐ আচরণের প্রতি অমনোযোগী ও অবহেলা প্রদর্শন করিতে হইবে ।
চ ) রোগী উন্মাদ নয় , প্রকৃতিস্থ ও বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন - চিকিৎসক ও পরিচায়কগণকে এই কৃত্রিম বিশ্বাস ও ভাব প্রদর্শন করিতে হইবে ।
প্রশ্ন - মানসিক রোগ চিকিৎসা ক্ষেত্রে কি কি বিশেষ ব্যবস্থা ও যত্ন অবলম্বন করিতে হয় ?
বা , মানসিক ব্যাধির চিকিৎসায় ঔষধ ছাড়াও কি প্রকার আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ?
বা , মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত রোগী চিকিৎসাকালে চিকিৎসক ও সেবাকারীর করণীয় কি আলোচনা কর ।
উত্তর : যে সকল মানসিক ব্যাধি ও ভাববিহহ্বলতা ব্যাধি শারীরিক ব্যাধি হইতে সৃষ্টি হইয়াছে সেই সকল ব্যাধির সর্বাধিক সাদৃশ্যবাহী সোরা বিনাশক ঔষধ প্রয়োগ ও তৎসহ উপযুক্ত পথ্য ও পরিচর্যা দ্বারা আরোগ্য হয় । কিন্তু এই প্রকার রোগীর চিকিৎসা কালে ঔষধ ছাড়াও নিম্নলিখিত ভাবমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাত্মা হ্যানিমান উপদেশ দিয়াছেন । রোগীর প্রচণ্ড উন্মত্ততায় চিকিৎসক ও পার্শ্বচরগণের বিরক্তিহীন সাহস ও ধীর সংকল্প প্রদর্শন করিতে হইবে । রোগীর করুণ অনুযোগের প্রতি পরিজন ও চিকিৎসকের দৃষ্টি ও ভঙ্গিমায় নির্বাক সহানুভূতি প্রদর্শন করিতে হইবে । রোগীর নিন্দনীয় আচরণ ও অশ্লীল বাক্যের প্রতি সম্পূর্ণ অমনোযোগীতা প্রদর্শন করিতে হইবে । রোগীর অর্থহীন প্রলাপ ও বাচালতার প্রতি নিরুত্তর অথচ মনোযোগী ভাব প্রদর্শন করিতে হইবে । রোগী কোন বস্তু নষ্ট করিয়া ফেলিলে কখনও তিরস্কার করা উচিত নয় । ঘরের জিনিষপত্রগুলি এমনভাবে রাখিতে হইবে যেন রোগীর কোন প্রকার বিরক্তি উৎপন্ন না হয় । কোন অবস্থাতেই রোগীর উপর অত্যাচার করা উচিত হইবে না । প্রতিবাদ , বারবার অপযুক্তি এবং রূঢ় আচরণের দ্বারা রোগীর দোষ সংশোধনের চেষ্টা করা উচিত নয় । যদি প্রয়োজন হয় তবে শুধু ঔষধ খাওয়ানোর সময় বল প্রয়োগ করা যাইতে পারে । তবে যেহেতু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বিস্বাদ নয় এবং অতি লঘু মাত্রায় দেওয়া হয় তাই যে কোন পানীয়ের সাথে মিশাইয়া দিলেই চলে , বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না ।
প্রশ্ন - ব্যাপক , আঙ্গিক ও সাধারণ লক্ষণ কাহাকে বলে আলোচনা কর ।
উত্তর : ব্যাপক লক্ষণ বা সর্বাঙ্গীণ লক্ষণ- যে লক্ষণগুলি রোগীর সম্বন্ধে সর্বতোভাবে প্রযোজ্য এবং যেগুলি বর্ণনাকালে রোগী ' আমি ' শব্দটি ব্যবহার করেন সেগুলিকে ব্যাপক লক্ষণ বলে । যেমন আমি দুর্বল , আমি বাঁচিব না , আমার মাথাটি যেন বড় হইয়া যাইতেছে ইত্যাদি । রোগীর ব্যক্তি মানুষের পরিচয় তুলিয়া ধরে বলিয়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই ধরনের লক্ষণের গুরুত্ব সর্বাধিক । ব্যাপক লক্ষণের মধ্যে মানসিক লক্ষণের মূল্যই সর্বাধিক এবং কেবলমাত্র সুস্পষ্ট মানসিক লক্ষণ দ্বারাই রোগীর জন্য ঔষধ নির্বাচিত হইতে পারে । আঙ্গিক লক্ষণ বা স্থানিক লক্ষণ- যে লক্ষণের দ্বারা ঔষধের বা রোগীর কোন একটি বা একাধিক অঙ্গের বা অংশের সংশ্লিষ্ট লক্ষণকে বুঝায় কিন্তু সামগ্রিক ব্যক্তি সত্ত্বাকে বুঝায় না সেগুলিকে স্থানিক বা আঙ্গিক লক্ষণ বলে । যেমন জিহ্বার লাল ত্রিকোণ , ওষ্ঠ , কান , নাক ইত্যাদি রক্তিমবর্ণ প্রভৃতি । সাধারণ লক্ষণ- যে সকল লক্ষণ প্রায় সকল ঔষধে দেখা যায় বা কোন নির্দিষ্ট রোগের সকল শ্রেণীর মধ্যে দেখা যায় , যাহা অস্পষ্ট , অনির্দিষ্ট ও বৈশিষ্ট্যহীন , সে সকল লক্ষণকে সাধারণ লক্ষণ বলে । যেমন- রক্ত আমাশয় , আঁচিল , শিরঃপীড়া প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - কখন আঙ্গিক লক্ষণ ব্যাপক লক্ষণে পরিণত হয় ? উদাহরণ দ্বারা বুঝাইয়া দাও ।
উত্তর : যখন আঙ্গিক লক্ষণ রোগীর বিশেষ অঙ্গে সীমাবদ্ধ না থাকিয়া সামগ্রিকভাবে রোগীতে প্রযোজ্য হয় তখন আঙ্গিক লক্ষণ ব্যাপক লক্ষণে পরিণত হয় । যেমন- প্রদাহিত স্থানে অল্প চাপে বেদনার বৃদ্ধি , জোরে চাপিলে উপশম । আবার ঠাণ্ডায় প্রদাহের জ্বালার বৃদ্ধি , উষ্ণ সেঁকে প্রদাহের জ্বালার উপশম প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - কখন সাধারণ লক্ষণ ব্যাপক লক্ষণে পরিণত হয় ? উদাহরণ দ্বারা বুঝাইয়া দাও ।
উত্তর : সাধারণ লক্ষণ যখন অবস্থান , অনুভূতি , হ্রাসবৃদ্ধি ও সহযোগী লক্ষণ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে নির্দেশিত হয় তখন সাধারণ লক্ষণ ব্যাপক লক্ষণে পরিণত হয় । যেমন জ্বরে জল পিপাসার আগ্রহ অথচ জল পেটে গিয়া গরম হইলেই বমি । ঠাণ্ডা জল পানের আগ্রহ , অত্যন্ত পরিতৃপ্তির সঙ্গে জলপান করে , এমনকি জলপানের সময় চামচটি পর্যন্ত কামড়াইয়া ধরে প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - কিভাবে সাধারণ লক্ষণ হইতেও অসাধারণ বৈশিষ্ট্য জ্ঞাপক ও ঔষধ নির্দেশক লক্ষণে উপনীত হওয়া যায় তা ডাঃ কেন্টের উক্তির আলোকে আলোচনা কর ।
উত্তর : সাধারণ লক্ষণ হইতে অসাধারণ বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক ও ঔষধ নির্দেশক লক্ষণে উপনীত হওয়া যায় তাহা ডাঃ কেন্ট নিম্নলিখিত দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝাইয়া দিয়াছেন । স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে জরায়ুর বহির্গমন একটি সাধারণ লক্ষণ । যাহাদেরই এই লক্ষণ বর্তমান আছে তাহারা প্রায়ই বলেন যে পেটের নাড়িভূড়ি যেন যোনিপথ দিয়া বাহির হইয়া আসিতেছে । এই সাধারণ লক্ষণকে ভিত্তি করিয়া নির্দিষ্ট রীতি অনুসরণ করিয়া অগ্রসর হইলে আমরা স্থানিক বা ব্যাপক লক্ষণের সন্ধান পাইব । পরীক্ষা করিয়া দেখা গেল যে রোগিনী শীতকাতর , তাহার পুরাতন সর্দি রহিয়াছে , সর্দিতে নাক সাঁটিয়া ধরে , খিটখিটে কোপন স্বভাব বিশিষ্ট , আপনজনকে হত্যা করিবার দুর্দান্ত প্রবৃত্তি প্রায়ই তাহাকে পাইয়া বসে । রোগিনীর কোষ্ঠবদ্ধতা আছে , পুনঃপুনঃ মলত্যাগের নিষ্ফল প্রয়াস বিদ্যমান । এখানে স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে যে রোগিনীর একটি ব্যাপক লক্ষণ রহিয়াছে এবং তাহার যাহা কিছু স্থানীয় লক্ষণ বর্তমান সে সবই ব্যাপক লক্ষণের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ । আমরা জানি রোগিনী নাক্স ভমিকার জীবন্ত দৃষ্টান্ত । রোগিনী যদি সিপিয়ার হইত তাহা হইলে তাহার জরায়ুর বহিনিঃসরণ থাকিত । সেই সাথে পায়ের উপর পা রাখিয়া বসিলে কিছুটা উপশম বোধ , উদরে এক প্রকার শূন্যতাবোধ , মলদ্বারে ভারবোধ , যার জন্য দিনের পর দিন পায়খানায় যাইতে হয় , কিন্তু মলত্যাগের কোন বেগ থাকে না , সন্তানদের প্রতি উদাসীনতা , স্বামীর প্রতি ভালবাসা ও মমত্ববোধের অভাব সেজন্য দুঃখবোধ প্রভৃতি বিদ্যমান থাকিত । এক্ষেত্রে রোগী তাহার নিজের সম্পর্কে যাহা কিছু বলে তাহা ব্যাপক লক্ষণ । পাকস্থলী বা মলদ্বার সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছে তাহা স্থানিক লক্ষণ এবং তবুও তাহা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ । এইভাবে সাধারণ লক্ষণ হইতেও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক ও ঔষধ নির্দেশক লক্ষণে উপনীত হওয়া যায় ।
প্রশ্ন - পরিচায়ক বা চরিত্রগত লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর : যে সকল লক্ষণ কোন ঔষধের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে তাহাকে পরিচালক লক্ষণ বলে । পরিচায়ক বা চরিত্রগত লক্ষণসমূহ রোগের ও রোগীর বৈশিষ্ট্যসমূহকে অন্যান্য রোগ ও রোগী হইতে স্বতন্ত্র করিয়া তোলে এবং কোন বিশেষ ঔষধকে বিশেষভাবে নির্দেশ করে ।
প্রশ্ন - পরিচায়ক লক্ষণের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
উত্তর : চিকিৎসার জন্য আমাদের সেই ধরনের লক্ষণসমূহের প্রয়োজন সেগুলি রোগের একটি পূর্ণ প্রতিকৃতি আমাদের নিকট তুলিয়া ধরে । এই ধরণের লক্ষণকে রোগের পরিচায়ক লক্ষণ বলে । পরিচায়ক লক্ষণ বলিতে আমরা সেই সমস্ত লক্ষণ বুঝি যেগুলি রোগের ও রোগীর বৈশিষ্ট্যগুলিকে অন্য রোগ ও রোগী হইতে অনন্য করিয়া তুলিয়া ধরে । রোগীকে ব্যক্তিগত পরীক্ষার দ্বারা যেসকল লক্ষণ সংগ্রহ করা হয় তন্মধ্যে যেগুলি অদ্ভূত , অসাধারণ , দৃষ্টি আকর্ষক , পার্থক্যসূচক বা বিরল প্রকৃতির সেগুলিই এই শ্রেণীভূক্ত । রোগের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক লক্ষণগুলির অভাব রোগীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যতা নির্দেশ করে বলিয়া এই ধরণের লক্ষণগুলিও পরিচায়ক লক্ষণ । ডাঃ কেন্টের মতে রোগের যে সমস্ত লক্ষণ সাধারণ বুদ্ধিতে ব্যাখ্যা করা যায় না সেগুলি সমস্তই পরিচায়ক লক্ষণ । যেমন - প্রবল জ্বরে পিপাসাহীনতা , জিহ্বার শুষ্কতা সত্ত্বেও জলপানে অনিচ্ছা , মুখে প্রচুর লালাস্রাব সত্ত্বেও প্রচুর জল পিপাসা , দেহে তীব্র জ্বালাবোধ থাকা সত্ত্বেও গাত্রাবরণ চাওয়া , উত্তাপে জ্বালাবোধের উপশম , চর্বনে দাঁতে ব্যথার উপশম প্রভৃতি । চিকিৎসাক্ষেত্রে এ ধরনের লক্ষণের মূল্য অপরিসীম । কারণ এই লক্ষণগুলির প্রত্যেকটি এক একটি নির্দিষ্ট ঔষধকে নির্দেশ করে । তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিচায়ক লক্ষণের বিশেষ গুরুত্ব রহিয়াছে ।
প্রশ্ন - চরিত্রগত লক্ষণের শ্রেণীবিভাগ কর ।
উত্তর : চরিত্রগত লক্ষণসমূহকে নিম্নলিখিত পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করা হইয়াছে । যথা
ক ) মানসিক লক্ষণ ,
খ ) আঙ্গিক লক্ষণ ,
৩ ) সাধারণ লক্ষণ ,
৪ ) সার্বদৈহিক লক্ষণ ,
৫ ) মোডালিটি ( হ্রাস - বৃদ্ধি ) ।
উক্ত পাঁচ প্রকার চরিত্রগত লক্ষণের মধ্যে সাধারণ লক্ষণ ছাড়া অন্য লক্ষণগুলিকে আবার ৪ ভাগে ভাগ করা হইয়াছে । যথা
ক ) অসাধারণ ,
গ ) দৃষ্টি আকর্ষক ,
ঘ ) পার্থক্যসূচক বা বিরল ।
প্রশ্ন - ডাঃ হ্যানিমান কেন চরিত্রগত লক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করিয়াছেন ?
উত্তর : মহাত্মা হ্যানিমান অর্গানন গ্রন্থের ষষ্ঠ সংস্করণের ১৫৩ নং সূত্রে উপদেশ দিয়াছেন যে , ঔষধ নির্বাচনকালে রোগের অপেক্ষাকৃত সাধারণ ও অস্পষ্ট লক্ষণসমূহ বাদ দিয়া কেবলমাত্র অসাধারণ , অদ্ভূত ও বিশেষ ধরণের পার্থক্যসূচক বা বিরল লক্ষণাবলীর দিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে । কারণ চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগীর সমস্ত লক্ষণই সমান গুরুত্বপূর্ণ নয় । চিকিৎসার জন্য আমাদের সেই ধরণের লক্ষণসমূহেরই প্রয়োজন যেগুলি রোগ এবং রোগীর বৈশিষ্ট্যসূচক একটি পূর্ণ প্রকৃতি আমাদের নিকট তুলিয়া ধরে । যেমন উদ্ভেদবিহীন হাম , প্রবল জ্বরে পিপাসাহীনতা , উত্তাপে জ্বালাবোধের উপশম হওয়া , জিহ্বার শুষ্কতা সত্ত্বেও জলপানের অনিচ্ছা প্রভৃতি । চিকিৎসাক্ষেত্রে এই ধরনের লক্ষণের গুরুত্ব সর্বাধিক । কারণ এই ধরণের লক্ষণ রোগ ও রোগীর বৈশিষ্ট্যসূচক এবং কোন ঔষধের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাক । কোন রোগীকে কোন চরিত্রগত লক্ষণ না পাওয়া গেলে সেই রোগীকে আরোগ্য করিবার চেষ্টা বৃথা । তাই ডাঃ হ্যানিমান চরিত্রগত লক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করিয়াছেন ।
প্রশ্ন - সঠিক ব্যবস্থাপত্রের জন্য কোন লক্ষণগুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কর ।
উত্তর : সঠিক ব্যবস্থাপত্রের জন্য নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।
ক ) অদ্ভূত লক্ষণ ( Peculiar )
খ ) অসাধারণ ( Uncommon )
গ ) দৃষ্টি আকর্ষণ ( Stiking )
ঘ ) পার্থক্যসূচক বা বিরল ( Distinctive or rare )
প্রশ্ন - অদ্ভূত লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর ঃ যে সকল লক্ষণ দ্বারা রোগের অদ্ভূত প্রকৃতি প্রকাশ পায় উহাদিগকে অদ্ভূত লক্ষণ বলে । যেমন — পক্ষাঘাতগ্রস্ত অঙ্গে জ্বর ও তাপ আছে কিন্তু অন্য অংশে জ্বর নাই । ইহা একটি অদ্ভূত লক্ষণ । কারণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত অংশে শৈত্যভাব থাকাই স্বাভাবিক । কিন্তু এই ক্ষেত্রে ইহার ব্যতিক্রম ।
প্রশ্ন — আনুষঙ্গিক বা সহযোগী বা কনকমিট্যান্ট লক্ষণ বলিতে কি বুঝায় ?
উত্তর : যে সকল লক্ষণ মূল লক্ষণের সহযোগী হিসাবে উদয় হয় , যাহা রোগের মেয়াদের মধ্যে দেখা যায় না , এই সকল লক্ষণ আপাত দৃষ্টিতে মূল রোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বলিয়া মনে হয় অথচ মূল লক্ষণের সহিত উদয় হয় এবং অন্তর্হিত হয় । মূল রোগের প্রকাশ স্থান ছাড়া ইহারা দেহের অন্যত্র দেখা যায় । ঔষধের এই ধরণের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ অথচ মূল রোগের সহিত যাহাদের সম্বন্ধযুক্ত অবস্থা খুবই কম ইহাদিগকে আনুষঙ্গিক বা সহযোগী লক্ষণ বলে । যেমন— ঋতুস্রাবের সময় স্তনে দুগ্ধসঞ্চয় , জরায়ু পীড়ার সহিত চর্মরোগ প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - পরীক্ষালব্ধ বা প্যাথজিনিটিক লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর : সুস্থদেহে ঔষধ পরীক্ষা করিয়া কিংবা ঔষধের বিষক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করিয়া যে সকল লক্ষণ পাওয়া যায় তাহাদিগকে পরীক্ষালব্ধ বা প্যাথজিনিটিক লক্ষণ বলে ।
প্রশ্ন - আরোগ্যপ্রাপ্ত বা ক্লিনিক্যাল লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর : চিকিৎসাধীন কোন রোগীকে কোন কোন অবস্থার জন্য কোন ঔষধ প্রদান করিলে সেই ঔষধের পরীক্ষালব্ধ লক্ষণে নাই এমন কোন সুষ্পষ্ট লক্ষণ যদি বিদূরীত হয় তবে উহাকেই ঔষধের ক্রিয়ায় দুরীভূত হইয়াছে বলিয়া গণ্য করা হয় , এই লক্ষণকে আরোগ্যপ্রাপ্ত বা ক্লিনিক্যাল লক্ষণ বলে ।
প্রশ্ন - প্যাথলজিক্যাল বা নিদানগত বা নৈদানিক লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর : সুস্থদেহের ক্রিয়া ধারার বিশৃঙ্খলার জন্য দেহাঙ্গে অবকাঠামোর পরিবর্তন , অনুভূতির পরিবর্তন ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয় । ইহাদিগকে নৈদানিক লক্ষণ বলে । যেমন - দড়ির মত লম্বা ও আঠাল শ্লেষ্মাস্রাব , কালবর্ণের রক্তস্রাব প্রভৃতি । এই লক্ষণগুলি রোগের পরিণত অবস্থার ফল প্রকাশ করে । এই লক্ষণ দ্বারা বুঝা যায় রোগ কোন স্তরে পৌছিয়াছে । ঔষধ নির্বাচন , মাত্রা ও শক্তি নির্ধারণ এবং আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপত্র প্রদানে এই লক্ষণসমূহ চিকিৎসককে সাহায্য করে । এমনকি সার্জারীর প্রয়োজন আছে কিনা তাহারও ইঙ্গিত দেয় ।
প্রশ্ন - অসাধারণ লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর : যে সকল লক্ষণ রোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অপেক্ষা ব্যাতিক্রমধর্মী বা যাহা অদ্ভূত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক , সুষ্পষ্ট , যেখানে একটিমাত্র লক্ষণ একটিমাত্র ঔষধকে নির্দেশ করে এই জাতীয় লক্ষণকে অসাধারণ লক্ষণ বলে । যেমন - জলপানের ইচ্ছাসহ পিপাসাহীনতা ( আর্স , ক্যালেডি ) , বুক ধড়ফড়ানিতে তাড়াতাড়ি হাঁটিলে উপশম ( আর্জ নাইট ) প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - প্রেসকাইবিং লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তরঃ যে সকল লক্ষণ ঔষধ নির্বাচনে সর্বোত্তম পথপ্রদর্শক উহাদিগকে প্রেসকাইবিং লক্ষণ বলে । জিহ্বার শুষ্কতা সত্ত্বেও জলপানে অনিচ্ছা ইহা পালসেটিলাকে নির্দেশ করে । উত্তাপে জ্বালা বোধের উপশম ইহা আর্সেনিক নির্দেশ করে । মুখে প্রচুর লালাগ্রাব সত্ত্বেও প্রচুল জল পিপাপা - মার্কসলকে নির্দেশ করে । বিরল , অসাধারণ ও অদ্ভূত লক্ষণ প্রেসকাইবিং লক্ষণের অন্তর্ভূক্ত ।
প্রশ্ন - ধাতুগত লক্ষণ কাহাকে বলে ?
উত্তর : যে লক্ষণগুলি রোগীর বিশেষ ধাতুপ্রকৃতির পরিচয় দেয় সেগুলিকে ধাতুগত লক্ষণ বলে । চিররোগের ক্ষেত্রে এ ধরনের লক্ষণের গুরুত্ব অনেক বেশী । যাহাদের আপাত দৃষ্টিতে বিশেষ কোন রোগ বলিয়া মনে হয় না , অথচ সামান্য কারণেই অসুস্থ হইয়া পড়ে , এই ধরণের লক্ষণ তাহাদের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যেমন প্রায়ই সর্দি কাশিতে ভোগা , আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তনেই অসুস্থবোধ করা প্রভৃতি ।
প্রশ্ন - রোগের সহকারী উপসর্গ কাহাকে বলে ?
উত্তর : রোগী দীর্ঘদিন যাবত কোন কোন উপসর্গের যন্ত্রণা ভোগ করিয়া অবশেষে মনে করে এই লক্ষণগুলি তাহার স্বাভাবিক অভ্যাস বা তাহার দৈনন্দিন জীবনের অংশ । ইহাদিগকে রোগের সহকারী উপসর্গ বলে । যেমন- কোন লোক আহারের পরেই পায়খানায় যায় বা পায়খানায় গিয়া বহুক্ষণ অবস্থান করে । এইগুলি দীর্ঘদিনের অভ্যাসে পরিণত হয় । অথচ রোগী এগুলিকে রোগের উপসর্গ মনে করে না ।
প্রশ্ন - ধাতুগত বৈশিষ্ট্য বলিতে কি বুঝ ? ঔষধ নির্বাচনের জন্য ইহা কতটুকু প্রয়োগযোগ্য ?
উত্তর : ব্যক্তিগত অসাধারণ বিশেষত্বকেই ধাতুগত বলা হয় । সুস্থ শরীরে ঔষধ পরীক্ষাকালীন দেখা গিয়াছে যে , কতকগুলি লক্ষণ বহু ব্যক্তিতে প্রকাশ পাইয়াছে , কতকগুলি লক্ষণ কয়েকজন ব্যাক্তিতে প্রকাশ পাইয়াছে , আবার কতকগুলি লক্ষণ অতি অল্প ব্যক্তিতে প্রকাশ পাইয়াছে । অদ্ভূত দৈহিক গঠন বা ব্যক্তিগত অসাধারণ বিশেষত্বই ইহার কারণ । কখন কখনও এমন দেখা যায় যে কোন একটি বিশেষ দ্রব্য দ্বারা কতক ব্যক্তি অতি সহজেই অসুস্থ হইয়া পড়ে । আবার ঐ দ্রব্য দ্বারা অনেকেরই কিছু হয় না । যেমন গোলাফ ফুলের গন্ধে অনেকে মুর্ছিত হইয়া পড়ে , অথচ গোলাপের গন্ধে মুগ্ধ হওয়ার কথা । আবার দুগ্ধে রুচি থাকা স্বাভাবিক । কিন্তু অনেকের দুধে অরুচি , দুধ দেখিলে বমি ভাব হয় । ব্যক্তিগত অসাধারণ বিশেষত্বই ইহার কারণ । এই ব্যক্তিগত অসাধারণ বিশেষত্বকেই ধাতুগত বৈশিষ্ট্য বলে । হোমিওপ্যাথি মতে চিকিৎসা করিতে হইলে প্রত্যেক রোগীর ধাতুগত বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করিয়া চিকিৎসা করিতে হইবে । নতুবা সম্পূর্ণ আরোগ্যের আশা করা যায় না । ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধাতুগত বৈশিষ্ট্যসমূহ একান্তই প্রয়োগযোগ্য । ফলের উৎপাদন নির্ভর করে ক্ষেত্রের অবস্থার উপর । মানবদেহ রোগের ক্ষেত্র , আর রোগলক্ষণসমূহ হইল ঐ রোগের ফল । বিভিন্ন ক্ষেত্রের ফলের আকার বিভিন্ন হওয়ারই কথা এবং এই ক্ষেত্রসমূহকেই হোমিওপ্যাথিতে মানবপ্রকৃতি বলা হয় মানব প্রকৃতির উপর নির্ভর করিয়াই সদৃশ লক্ষণে চিকিৎসা করিতে হয় । এই কারণেই হোমিওপ্যাথিতে প্রকৃতিগত বা ধাতুগত চিকিৎসা করা হইয়া থাকে ।
প্রশ্ন - ধাতু প্রকৃতি বলিতে কি বুঝ ?
উত্তরঃ প্রত্যেক মানুষেরই জন্মসূত্রে আকৃতিগত ও প্রকৃতিগত কিছু বিশিষ্টতা রহিয়াছে । এই সকল বৈশিষ্ট্যাবলী তাহার দৈহিক ও মানসিক গড়ন , দেহযন্ত্রের ক্রিয়াধারা এবং পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সার্বদৈহিক প্রতিক্রিয়ার ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে । জন্মসূত্রে লব্ধ ব্যক্তিবিশেষের এই সকল বৈশিষ্ট্যের সমষ্টিকে সাধারণভাবে ধাতুপ্রকৃতি বলে । অর্থাৎ ধাতু প্রকৃতি বলিতে রোগীর দেহযন্ত্রের এমন এক অবস্থা বুঝায় যাহার উপর তার দৈহিক ও মানসিক গড়ন ও পারিপার্শ্বিক প্রভাবের প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতি বহুলাংশে নির্ভর করে ।
প্রশ্ন — ধাতুপ্রকৃতি কত প্রকার ও কি কি ?
উত্তর : ধাতুপ্রকৃতি প্রধানত চার প্রকারের । যথা
ক ) পিত্ত প্রধান ( Bilious )
খ ) শ্লেষ্মা প্রধান ( Phlegmatic )
গ ) রক্ত প্রধান ( Sanguinous )
ঘ ) স্নায়ু প্রধান ( Nervous )
ক ) পিত্ত প্রধান- পিত্ত প্রধান ধাতুতে লিভারের ক্রিয়ার বিশৃঙ্খলা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয় ।
খ ) শ্লেষ্মা প্রধান শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুতে প্রতিক্রিয়া শক্তি খুবই অভাব দেখা দেয় ।
গ ) রক্ত প্রধান- রক্ত প্রধান ধাতুতে প্রতিক্রিয়া শক্তি অত্যন্ত প্রবল থাকে ।
ঘ ) স্নায়ু প্রধান- স্নায়ু প্রধান ধাতু প্রধানতঃ উত্তেজনা প্রবণ হয় এবং দেহের যাবতীয় ক্রিয়া অতি দ্রুত চলে ।
প্রশ্ন - ধাতু প্রকৃতির সঙ্গে রোগ ও ঔষধের সম্পর্ক আলোচনা কর।
উত্তর : সাধারণতঃ বিশেষ বিশেষ ধাতু প্রকৃতির বিশেষ বিশেষ রোগ ও ঔষধের প্রতি প্রবণতা থাকে । সেজন্য ধাতুপ্রকৃতি অনেক সময় ঔষধ নির্বাচনে সুস্পষ্ট ইংগিত প্রদান করে । তবে রোগের প্রকাশ অনেক সময় ধাতু প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হইতেও পারে , নাও পারে । অনেক সময় এমন কিছু কিছু লোক দেখা যায় যাহারা জন্ম হইতেই সর্দি কাশিতে ভোগে । কেউ শীতকাতর আবার কেউ গরম কাতর হয় । অনেকে নিয়ত পেটের পীড়ার ভোগে । আবার অনেকের ক্ষেত্রে সামান্য পীড়াও অল্প সময়ের মধ্যে ভয়ানক আকার ধারণ করে । রোগ প্রভাবের প্রতি মানুষের এই প্রবণতা প্রাকৃতিক রোগ ও ঔষধজাত কৃত্রিমরোগ উভয় প্রকারের প্রতি থাকিতে পারে । এইজন্য বিশেষ ধাতুবিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিশেষ রোগ ও বিশেষ ঔষধের প্রতি অদ্ভূত রকমের প্রবণতা দেখা যায় । সেজন্যই দেহ ও মনে খর্বাকৃতি , অপরিনত বুদ্ধি শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুর শিশুর জন্য ব্যারাইটা কার্ব ভাল কাজ করে । রক্ত প্রধান ও শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুতে বেলেডোনা এবং অপ্রস্ত বক্ষবিশিষ্ট শীর্ণ চেহারার স্নায়ু ও পিত্তপ্রধান ব্যক্তিতে ফসফোরাস সুন্দর কাজ করে ।
প্রশ্ন - রোগ নির্ণয় ও ঔষধ নির্বাচনে ধাতুপ্রকৃতির ভূমিকা কি ?
উত্তর : লক্ষণসমষ্টিই হইল রোগ নির্ণয় ও ঔষধ নির্বাচনের একমাত্র পথ প্রদর্শক । তাই ধাতুপ্রকৃতি লক্ষণসমষ্টির সাথে সংগতিপূর্ণ হইলে তাহা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য , নতুবা নয় । চিকিৎসক যদি ধাতুপ্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত থাকেন তবে রোগী চিকিৎসার সহজ ইঙ্গিত অনেক সময় পাইতে পারেন । শুধু ঔষধ নির্বাচন নয় , আনুষঙ্গিক চিকিৎসা , রোগ নির্ণয় , পথ্যাপথ্য ও খাদ্য বিচার প্রভৃতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে জ্ঞান লাভ করিয়া চিকিৎসক চিকিৎসাকে সহজতর করিতে পারেন ।
প্রশ্ন - ধাতু প্রকৃতির সঙ্গে মায়াজমের সম্পর্ক কি ?
উত্তর ঃ ডাঃ ক্লার্ক ও গ্রাভোগেল ধাতু প্রকৃতির সঙ্গে মায়াজমের নিম্নলিখিত সম্পর্ক দেখাইয়াছেন । স্নায়ুপ্রধান ও রক্ত প্রধান ধাতু প্রকৃতিকে মহাত্মা হ্যানিমান সোরা মায়াজমের সহিত তুলনা করিয়াছেন । এই জাতীয় ধাতু প্রকৃতিতে রোগীর দেহে কার্বন এবং নাইট্রোজেনের আধিক্য দেখা যায় । শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুর অপর নাম হাইড্রেজেনয়েড ধাতু । ইহা হ্যানিমানের সাইকোসিস মায়াজমের সাথে তুলনীয় । এমন ধাতু প্রকৃতির রোগীর দেহে হাইড্রোেজনের আধিক্য হেতু রক্ত এবং টিসুর মধ্যে পানির পরিমাণ বেশী থাকে । পিত্ত প্রধান ধাতুর অপর নাম অক্সিজেনয়েড ধাতু । ইহা হ্যানিমানের সিফিলিস মায়াজমের সঙ্গে তুলনীয় । অপর দিকে একই রোগীতে বিভিন্ন ধাতু প্রকৃতির উপস্থিতিতে মিশ্র মায়াজমের সৃষ্টি হইতে পারে । স্নায়ু প্রধান ও রক্ত প্রধান ধাতুর উপস্থিতির ফলে মিশ্র মায়াজম টিউবারকুলারের সৃষ্টি হইতে পারে । যেমন স্নায়ু প্রধান ও রক্ত প্রধান ধাতুর সঙ্গে শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুর মিলনে ক্যান্সার এবং স্নায়ু প্রধান ও রক্ত প্রধান ধাতুর সঙ্গে পিত্ত প্রধান ধাতুর মিলনে টিউবারকুলোসিসের উৎপত্তি হয় ।
0 মন্তব্যসমূহ