জীবনীশক্তি- অর্গানন অব মেডিসিন, তৃতীয় বর্ষ - দ্বিতীয় অধ্যায়

 

অর্গানন অব মেডিসিন 
তৃতীয় বর্ষ
দ্বিতীয় অধ্যায়

জীবনীশক্তি 
Vital Force or vital principle





প্রশ্ন:- জীবনীশক্তি কি? বা জীবনীশক্তি কাকে বলে?    

উত্তর:- জীবনীশক্তির সংজ্ঞাঃ
ডাঃ হ্যানিম্যান জীবনীশক্তি সম্বন্ধে 'অর্গানন অব মেডিসিন' গ্রন্থের ৯ ও ১০নং অনুচ্ছেদে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, মানবের সুস্থ অবস্থায় আত্মস্বরূপ জীবনীশক্তি, যে শক্তি স্থূল মানবদেহকে জীবিত রাখে, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে অপ্রতিহত শক্তিকে শাসন করে এবং দেহতন্ত্রের সকল অংশকেই পরস্পরের সাথে জীবনকার্য পরিচালনায় রত রাখে যে মানুষের অন্তর্হিত বিচারশক্তিসম্পন্ন মন, অবাধে এ সচেতন ও সুস্থ দেহতন্ত্রকে জীবনের মহত্তর উদ্দেশ্য সাধনে নিযুক্ত করতে সমর্থ হয়।
জীবনীশক্তি ব্যতীত মানুষের জড় শরীর অনুভব করতে পারে না, নিজ কার্যাবলী করতে অক্ষম এবং আত্মরক্ষা বিষয়ে অপারগ হয়। যে শক্তির প্রভাবে মানবের জড় দেহ জীবিত থাকে, তাকেই জীবনীশক্তি বলে। ডাঃ হ্যানিম্যান অর্গানন অব মেডিসিনের ষষ্ঠ সংস্করণে জীবনীশক্তিকে ভাইটাল প্রিন্সিপল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।



প্রশ্ন:- জীবনীশক্তির বিশৃংখলাই রোগ- ব্যাখা কর।

উত্তর:- জীবনীশক্তির বিশৃংখলাই রোগ:
ডাঃ হ্যানিম্যান জীবনীশক্তি বিশৃংখলাই রোগ এ সম্বন্ধে 'অর্গানন অব মেডিসিন' গ্রন্থের ১১ থেকে ১৬নং অনুচ্ছেদে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।
- জীবনীশক্তি সূক্ষ্মশক্তি, এটি আমাদের ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারা অনুভূত হয়। এ কারণে আমরা এটিকে দেখতে পাই, ধরতে পারি না কেবল মাত্র অনুভব করতে পারি। জীবনীশক্তি সম্পর্কে ধারণা সর্বপ্রথম প্রকাশ পায় ১৮২৯ খ্রিঃ। অর্গানন অব মেডিসিনের ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশিত হবার কয়েক বছর পূর্বে ডাঃ হ্যানিম্যান যখন কোখেন নামক স্থানে নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করছিলেন সে সময় তাঁর চিন্তায় জীবনীশক্তির বিষয় উদয় হয়।
ডাঃ হ্যানিম্যান তাঁর বর্ণনা জীবনীশক্তিকে Vital Force, vital principle, spirital force বলেছেন। এটি একটি শুভ শক্তি যার প্রভাবে দেহ সজীব থাকে সুশৃংখলভাবে পরিচালিত হয়। জীবনীশক্তি সূক্ষ্মশক্তি বিশেষ। জীবনীশক্তি সূক্ষ্ম রোগশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে রোগের আবির্ভাব হয়। প্রাকৃতিক রোগ দ্বারা আক্রান্ত জীবনীশক্তিকে রোগমুক্ত করার উদ্দেশ্য ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
অতএব অদৃশ্য জীবনীশক্তির সাথে মানবদেহের সম্পর্ক সুদৃঢ়। জীবনীশক্তি মানব দেহকে সতেজ ও রোগমুক্ত রাখে এবং কর্ম উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে।



প্রশ্ন:- কিভাবে রোগাক্রান্ত জীবনীশক্তি রোগশক্তির প্রভাবমুক্ত হয়ে সুস্থভাবে দেহ পরিচালনা করে?  

উত্তর:- রোগাক্রান্ত জীবনীশক্তি রোগশক্তির প্রভাবমুক্ত হয়ে সুস্থভাবে দেহ পরিচালনা করে:
হোমিওপ্যাথি মতে প্রত্যেক আরোগ্য, প্রাকৃতিক রোগ দ্বারা আক্রান্ত জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খলাজনিত সমলক্ষণ মতে নির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগে কিছু উগ্রতর সদৃশ কৃত্রিম রোগ সৃষ্টির মাধ্যমে হয়। এটি দ্বারা দুর্বলতর প্রাকৃতিক রোগটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং লক্ষণাবলী অপসারিত হয় বলে জীবনীশক্তিতে আর কোনো রোগানুভূতি থাকে না। এটি কেবল উগ্রতর কৃত্রিম রোগ কর্তৃক অধিকৃত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এ কৃত্রিম রোগশক্তি দ্রুত ক্ষয় প্রাপ্ত হয় বলে রোগী রোগ মুক্ত হয়।



 
প্রশ্ন:- অদৃশ্য জীবনীশক্তির সহিত মানবদেহের সম্পর্ক আলোচনা কর।

উত্তর:-  অদৃশ্য জীবনীশক্তির সহিত মানবদেহের সম্পর্ক:
জীবনীশক্তি সূক্ষ্মশক্তি এটি আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করা যায়। তাই আমরা তা দেখতে পাই না, ধরতে পারি না কেবল মাত্র অনুভব করতে পারি। জীবনীশক্তি সম্পর্কে ধারণা সর্বপ্রথম প্রকাশ পায় ১৮২৯ খ্রিঃ। অর্গানন অব মেডিসিনের ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার কয়েক বছর পূর্বে ডাঃ হ্যানিম্যান যখন কোথেন নামক স্থানে নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করছিলেন সে সময় তাঁর চিন্তায় জীবনীশক্তির বিষয় উদয় হয়। ডাঃ হ্যানিম্যান তাঁর বর্ণনায় জীবনীশক্তিকে Vital Force, vital principle, spirital force বলেছেন। এটি একটি শুভ শক্তি যার প্রভাবে দেহ সজীব থাকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়। জীবনীশক্তি সূক্ষ্ম শক্তি বিশেষ। জীবনীশক্তি সূক্ষ্ম রোগশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে রোগের আবির্ভাব হয়। প্রাকৃতিক রোগ দ্বারা আক্রান্ত জীবনীশক্তিকে রোগমুক্ত করার উদ্দেশ্য ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
অতএব অদৃশ্য জীবনীশক্তির সহিত মানবদেহের সম্পর্ক সুদৃঢ়। জীবনীশক্তি মানবদেহকে সতেজ ও রোগমুক্ত রাখে এবং কর্ম উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে।



প্রশ্ন:- রোগ ও আরোগ্যে জীবনী শক্তির ভূমিকা লিখ।  
বা সুস্থ ও অসুস্থ অবস্থায় জীবনীশক্তির কাজ আলোচনা কর। 
বা, অসুস্থ অবস্থায় জীবনীশক্তির কাজ কি?  

উত্তর:- রোগ ও আরোগ্যে জীবনীশক্তির ভূমিকা:
ডাঃ হ্যানিম্যান রোগ ও আরোগ্যে জীবনীশক্তির ভূমিকা সম্বন্ধে 'অর্গানন অব মেডিসিন' গ্রন্থের ১১ থেকে ১৬নং অনুচ্ছেদে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।
মানবের সুস্থ অবস্থায় আত্মস্বরূপ জীবনীশক্তি, যে শক্তি স্থূল মানবদেহকে জীবিত রাখে, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে অপ্রতিহত শক্তিকে শাসন করে এবং দেহতন্ত্রের সকল অংশকেই পরস্পরের সাথে জীবনকার্য পরিচালনায় রত রাখে যে মানুষের অন্তর্হিত বিচার শক্তিসম্পন্ন মন, অবাধে এ সচেতন ও সুস্থ দেহতন্ত্রকে জীবনের মহত্তর উদ্দেশ্য সাধনে নিযুক্ত করতে সমর্থ হয়।
অশরীরী জীবনীশক্তি সমস্ত দেহ ব্যাপিয়া অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থিত। অশরীরী জীবনীশক্তি এর বিরোধী অশরীরী রোগ শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়। রোগ শক্তিটি যদি জীবনীশক্তি অপেক্ষা প্রবল হয় তবে জীবনীশক্তির সুশৃংখল কর্মকান্ডে বিশৃংখলা দেখা দেয়। জীবনীশক্তি বিশৃংখলা হেতু দেহ ও মনে প্রকাশিত লক্ষণের মাধ্যমে রোগ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত জীবনীশক্তি রোগ শক্তি হতে মুক্তি পাবার জন্য প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জীবনীশক্তি প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে রোগ শক্তি দেহকে গ্রাস করে। এখন জীবনীশক্তি বিশৃংখলা হতে মুক্তি পাওয়া লক্ষ্যে ঔষধ শক্তির সাহায্য কামনা করে।



 প্রশ্ন:- রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য কি?
বা, একজন প্রকৃত চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা কর।
বা, চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য সম্বন্ধে যাহা জান লিখ।  

উত্তর:- চিকিৎসকের তৃতীয় প্রতিপাদ্য বিষয় (Third business of the physicians)/রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য:
অর্গানন অব মেডিসিনের ১৪৬ নং অনুচ্ছেদে প্রকৃত চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিম্যান বর্ণনা করেছেন।
প্রকৃত চিকিৎসকের কাজের তৃতীয় প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে বিশুদ্ধ ক্রিয়া নির্ণয় করার জন্য যেগুলোর সুস্থ ব্যক্তিদের শরীরে পরীক্ষা করা হয়েছে, সে সকল কৃত্রিম রোগ উৎপাদক শক্তির বা ঔষধসমূহের সদৃশ বিধান মতে প্রাকৃতিক রোগ নিরাময়কল্পে বিবেচনা পূর্বক প্রয়োগ সম্পর্কিত জ্ঞান।
 


 প্রশ্ন:- জীবনীশক্তি সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিম্যানের মতামত কি?

উত্তর:- জীবনীশক্তি সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিম্যানের মতামত:
ডাঃ হ্যানিম্যান জীবনীশক্তিকে বলেছেন Immaterial being. the vital principle অর্থাৎ ইহা একটি অভৌতিক (অজড় অর্থাৎ জীবিত) সত্বা বা অভৌতিক প্রাণ সম্পদ। জীবনী শক্তি অদৃশ্য, অতিন্দ্রীয়। একে আমরা চোখে দেখি না কিন্তু প্রতি মূহুর্তে অনুভব করি। ইহা জড়দেহে অবস্থান করে ঠিক কিন্তু ইহার অস্তিত্ব স্বতন্ত্র। জীবের সমস্ত কার্যকলাপ, অনুভূতি প্রভৃতি দেহে জীবনীশক্তি আছে বলেই সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
জীবনীশক্তি ব্যতিত বস্তুগত দেহ অনুভব করতে, কাজ করতে বা আত্মরক্ষা করতে পারে না। একমাত্র এই অশরীরী সত্বা হতেই জীবনের সর্বপ্রকার অনুভূতি ও কার্যকলাপ উদ্ভুত হয়। সুস্থ এবং অসুস্থ-উভয় অবস্থাতে ইহাই এই বস্তুগত শরীরতন্ত্রকে সঞ্জীবিত রাখে।



 প্রশ্ন:- প্রকৃত আরোগ্য শক্তি বলতে কি বুঝ?  

উত্তর:-প্রকৃত আরোগ্য শক্তি:
ডাঃ হ্যানিম্যান ঘোষণা করেছেন যে, আরোগ্য সাধন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবেই নির্দিষ্ট নিয়মের উপর নির্ভর করে। এটি সদৃশ নিয়ম অর্থাৎ সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার নিয়মের দ্বারা অনুশাসিত। এ যাবৎ যত আরোগ্য সাধিত হয়েছে তা এ সদৃশ্য বিধান অনুযায়ী হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক স্থলেই যে ঔষধ আরোগ্য সম্পাদন করেছে তা ঐ আরোগ্য সাধিত লক্ষণরাজি উৎপাদন করতেও সক্ষম। এ যাবৎ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির দ্বারা যে আরোগ্য সাধন হয়নি এমন নয়। তবে যা হয়েছে তা জ্ঞাতে হোক বা অজ্ঞাতে হোক এ সদৃশ বিধান' মতেই হয়েছে। যেমন- কুইনাইন খেয়ে যদি কোনও প্রকার জ্বর বাস্তবিকই আরোগ্য হয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে সুস্থ শরীরে কুইনাইন সেবন করলে ঐ প্রকারের জ্বর নিশ্চয়ই উৎপন্ন হয়। কুইনাইনের যে কুইনাইন দ্বারা আরোগ্য প্রাপ্ত হয়, তা প্রমাণিত সত্য। সদৃশ বিধানে চিকিৎসা বলতে রোগীর শারীরিক ও মানসিক অস্বাচ্ছন্দতার সদৃশ ধর্মী ঔষুধ প্রয়োগ বুঝায়।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায়, আরোগ্য বিশ্বজনীন নীতিটি হচ্ছে সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার। এটি সার্বজনীন এবং আরোগ্য বিশ্বজনীন নিয়ম।



 প্রশ্ন:- রোগ আরোগ্যের পথে বাঁধাসমূহ আলোচনা কর।   

উত্তর:- রোগ আরোগ্যের পথে বাঁধাসমূহ আলোচনা:
যখন সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগের পরও রোগী আরোগ্য হয় না, তখন চিকিৎসক ব্যর্থ হন। এটির কারণ আরোগ্যের পথে কিছু বাঁধা কাজ করে। ঔষধের সাথে খাদ্যের ও কিছু পারিপার্শ্বিক অবস্থার সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- যে উৎস থেকে ঔষধ প্রস্তুত হয়, তা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে আরোগ্যের পথে বাঁধার সৃষ্টি হয়। থুজা ঔষধের ক্রিয়া নষ্ট করে চা ও পেঁয়াজ, ঠান্ডা গরমে অত্যানুভূতি রোগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নিষেধ না দিলে ইত্যাদি।



  প্রশ্ন:- রোগের সুপ্তিকাল ও সংক্রমণ কাল বলতে কি বুঝ? 

উত্তর:- রোগের উপ্তিকাল/সুপ্তিকাল (Incubation period):
দেহে রোগ জীবাণু প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার পর হতে দেহে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার মধ্যবর্তী সময়কে রোগের উপ্তিকাল বা সুপ্তিকাল বলা হয়।
রোগ সংক্রমণ কাল: রোগ জীবাণু রোগীর দেহে প্রবেশ করার পর যে সময় পর্যন্ত ঐ দেহে অবস্থান করে অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে, সে সময়কে রোগ সংক্রমণ কাল বলে।  
 


প্রশ্ন:- স্পেসিফিক রিমেডি কাকে বলে?  
বা, অঘোম ঔষধ বলতে কি বুঝায়?
বা, অব্যর্থ ঔষধ কিভাবে নির্বাচন করবে?

উত্তর:- স্পেসিফিক রিমেডির সংজ্ঞা:
ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান "অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থের ১৪৭নং অনুচ্ছেদে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় স্পেসিফিক রিমেডি ব্যবহার সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
তাঁর মতে "মানব স্বাস্থ্য পরিবর্তন করার শক্তি সম্বন্ধে যে সকল ঔষধ অনুসন্ধান করা হয়েছে এদের মধ্যে যে ঔষধটির লক্ষণাবলীর সহিত কোন প্রাকৃতিক রোগের লক্ষণসমষ্টির সর্বাধিক সাদৃশ্য হবে সে ঔষধটিই ঐ রোগের সর্বাপেক্ষা উপযোগী ও সুনিশ্চিত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। এ রোগের জন্যই ইহা অমোঘ (Specific) ঔষধরূপে পরিগণিত হবে।"
কোন রোগীর জন্য নির্বাচিত ঔষধ যদি ঐ রোগীর অধিক সংখ্যক রোগলক্ষণ পাওয়া যায় বা ঐ রোগীর অধিক সাদৃশ্য হয়, তবে ঐ ঔষধটি ঐ নির্দিষ্ট রোগীর জন্য সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত যাকে ডাঃ হ্যানিম্যানের উক্তি অনুযায়ী স্পেসিফিক রেমিডি বলা হয়। তবে কোন রোগীর অদ্ভূত, বিশেষ অসাধারণ বা একক লক্ষণের সাথে ঐ ঔষধের লক্ষণ সাদৃশ হলেও তাকে অমোঘ ঔষধ হিসাবে বিবেচনা করা যায়। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এখানে লক্ষণের গুরুত্ব সর্বাধিক। অতএব, সুস্থ মানুষের দেহে পরীক্ষিত ঔষধের লক্ষণের সাথে যদি রোগীর রোগ লক্ষণের সাথে মিলে যায়, তবে তাই ঐ রোগীর জন্য স্পেসিফিক রিমেডি।
 


প্রশ্ন:- প্রাচীনপন্থী চিকিৎসকগণের কিরূপ কাজকে ডাঃ হ্যানিম্যান একদিকে অসংগত অন্যদিকে তেমনি ক্ষতিকর বলেছেন?  
 
উত্তর:- প্রাচীনপন্থী চিকিৎসকগণের নিম্নরূপ কাজকে ডাঃ হ্যানিম্যান একদিকে অসংগত অন্যদিকে তেমনি ক্ষতিকর বলেছেন:
ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান "অর্গানন অব মেডিসিন" গ্রন্থের ৫২ নং অনুচ্ছেদে মিশ্র প্যাথির চিকিৎসাকে সদৃশ বিধানের বিরুদ্ধে দন্ডযোগ্য বিদ্রোহ বলে আখ্যায়িত করে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
চিকিৎসা শাস্ত্রের মধ্যে আরোগ্য সাধনের জন্য শুধুমাত্র দুইটি প্রধান পদ্ধতি বর্তমান রয়েছে। প্রথমটি- হোমিওপ্যাথি। প্রকৃতির ধারাকে সঠিক পর্যবেক্ষণ, সযত্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যথাযর্থ অভিজ্ঞতার উপরই একমাত্র ইহার মূল ভিত্তি। দ্বিতীয়টি- হেটারোপ্যাথি (Heteropathic) বা এলোপ্যাথি-তাতেই এই ধরণের কিছু করা হয় না। একটি অন্যটির বিপরীত। যিনি কোনটিই জানেন না একমাত্র তার পক্ষেই ভুল ধারণা পোষণ করা সম্ভব যে এরা পরস্পরের দিকে অগ্রসর হতে বা মিলে যেতে পারে। অথবা রোগীর ইচ্ছানুযায়ী তিনি কখনও হোমিওপ্যাথি, কখনও বা এলোপ্যাথি প্রথায় চিকিৎসা করে নিজেকে উপহাসের পাত্রে পরিণত করতে পারেন। এই মিশ্র পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাকে হিতকারী 'সদৃশ বিধানের বিরুদ্ধে দন্ডযোগ্য বলে অবিহিত করা যেতে পারে।



সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ