ক্যালকেরিয়া ফসফোরিকাম - Calcarea Phosphoricum, দ্বিতীয় বর্ষ

ক্যালকেরিয়া ফসফোরিকাম
Calcarea Phosphoricum







সাধারণ নাম:- ফসফেট অব লাইম।

প্রতিশব্দ:- ক্যালসি ফসফাস প্রিসিপিটাস, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ক্যালকেরিয়া, ফসফেট ক্যালসিয়াম ফসফোরিকাম।

সংক্ষিপ্ত নাম:-
ক্যাল্কফস (C.P)

রাসায়নিক প্রতীক:- [Ca, (PO₁) 21

উৎস ও বর্ণনা:- এমোনিয়ার সহিত সোডিমাম ফসফেট এবং ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের অন্তঃক্রিয়ার ফলে ক্যালসিয়াম ফসফেট প্রস্তুত হইয়া থাকে। ইহাতে ৮৫% ভাগের সমান ক্যালসিয়াম বর্তমান থাকে। ইহার কোন স্বাদ ও গন্ধ নাই, বর্ণ নাই। জলে ইহা কদাচিৎ দ্রবীভূত হয় কিন্তু সুরাসারে দ্রবীভূত হয় না। প্রচণ্ড লাল উত্তাপে ইহা গলিয়া যায়।

রাসায়নিক তত্ত্ব:- পানি বা এলকোহালে ফসফেট অব লাইম দ্রবীভূত হয় না। নাইট্রিক এসিড, কার্বলিক এসিড প্রভৃতি এসিডে ইহা দ্রবীভূত হয়।

প্রস্তুতের ফরমূলা:- এফ-৭।

ধাতু:- ইহা এন্টিসোরিক, এন্টিসাইকোটিক ও এন্টি টিউবারকুলার ঔষধ।

প্রভার:- ডাঃ সুসলার ও ডাঃ হেরিং ইহা প্রুভ করেন।

ক্রিয়ার স্থান:- মানব দেহের বৃদ্ধি বলাধান ও পোষণের জন্য ক্যালকেরিয়া ফস অবশ্যই প্রয়োজন। অস্থির উপর ইহার ক্রিয়া অধিক। ইহা দ্বারা অস্থি সকলের কাঠিন্য প্রাপ্তি ঘটে। ইহার ব্যবহারে স্নায়ু সমূহের ধ্বংস নিবারিত হয়। শিশুদের বিলম্বে দাঁত উঠিলে ইহা ব্যবহারে সত্বর দন্তোদাম ঘটে। রক্তের শ্বেত কণিকাগুলিকে তৈরী করিতে ও উহাদিগকে বলিষ্ঠ করিতে ইহা কার্যকরী।

মানসিক লক্ষণ:- ইহার মনটি অসন্তুষ্টিতে পরিপূর্ণ, খিটখিটে ও ক্রোধী। পরিবর্তনশীল মেজাজ। এইজন্য ইহার শিশুরোগী একস্থান হইতে অন্য স্থানে যাইতে চায়। একটি দ্রব্য পাইলে তাহা ফেলিয়া দিয়া আর একটি চায়। রোগীর স্মরণশক্তি কম। ভবিষ্যতের জন্য উৎকণ্ঠিত, ভীত ও উৎসাহহীন। কোন ব্যাপার সহজে বোধগম্য হয় না। কোন বিষয়েই মনঃ সংযোগ করিতে পারে না। শোক দুঃখ, হতাশ ও বিরক্তি ভাব। বয়স্ক রোগী হইলে রোগের কথা চিন্তা করিলেই রোগটি আরও বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

চরিত্রগত লক্ষণ:-
১। শিশুদের বিলম্বে দাঁত উঠে।
২। হাড় পুষ্ট হয় না ও ব্রহ্মরন্ধ্র অনেকদিন পর্যন্ত জোড়া লাগে না।
৩। শীর্ণতা, বিশেষ করিয়া অপরিপুষ্ট অস্থি। দারুণ ক্ষুধা, দুগ্ধ, লবণাক্ত ও ভাজা দ্রব্যে অভিলাষ।
৪। শীতকাতরতা, মাথায় ঘাম এবং আহারের পরেই পেটে বায়ু সঞ্চয়, যাতনা ও মলত্যাগ।
৫। যুবক যুবতীরা দ্রুত লম্বা হইয়া উঠে কিন্তু সেই অনুযায়ী পুষ্ট হয় না।
৬। শোক, দুঃখ, হতাশপ্রেম প্রভৃতি হেতু পীড়া।
৭। আহারের পর উদরাময় লক্ষণ দেখা দেয় এবং মলে অতিশয় দুর্গন্ধ ও সশব্দে নিঃসারিত হয়।
৮। হাসিলে ও আহারের পর কাশির বৃদ্ধি হয় এবং বিদ্যালয়গামী বালক-বালিকাদের শিরঃপীড়া ঠাণ্ডা জলে স্নান করিলে, হাঁচিলে উপশম হয়। কিন্তু ঠাণ্ডা বিশেষ করিয়া ভিজা ঠাণ্ডায় ইহাতে সাধারণ বৃদ্ধি।
৯। বালিকাদের প্রথম ঋতু দর্শনকালে নানাপ্রকার উপসর্গ ও তৎসহ বিরক্তি পূর্ণ পরিবর্তনশীল মেজাজ।
১০। আঘাত জনিত হাড় ভাঙ্গিয়া বা বাঁকিয়া যায়।
১১। অনিচ্ছাক্রমে দীর্ঘশ্বাস, বক্ষঃস্থলে স্পর্শাধিক্য। শ্বাসরুদ্ধকর কাশি শয়নে উপশম।
১২। অস্থি ভগ্ন হইয়া জোড়া লাগে না। মেরুদণ্ডের বক্রতা ও দুর্বলতা।
১৩। অনিচ্ছায় শুক্র নির্গমন, রক্তহীনতা।
১৪। গণ্ডমালা ধাতুগস্ত ব্যাক্তিদের আক্ষেপ, খেঁচুনী, উদরাময় ও শিশু কলেরা।
১৫। বয়ঃব্রণ-কালব্রণে মুখ পূর্ণ।
১৬। বাতাক্রান্ত স্থান শীতল ও অসাড় বোধ।

শিশুচিত্র বা রোগীচিত্র বা ফসের ধাতুগত লক্ষণ:-
যে সকল শিশু অত্যন্ত জরাজীর্ণ, শরীরের গঠন রুগ্ন, বয়স অনুযায়ী যাহাদের শরীরের সেরূপ পুষ্টি বা বৃদ্ধি হয় না। অস্থি আর পেটটি যেন খাল পড়া খুব উঁচু, মাথাটি দেহ অপেক্ষা বড়, হাত পা শীর্ণ, পাঁজরা যেন জির জির করে, মাথার হাড় পাতলা থাকে যেন একটু চাপ দিলেই ভাঙ্গিয়া যাইবে, কাগজের মত পাতলা হাড়, ঘাড়ে ও শরীরের অন্য স্থানে বীচির মত গ্রন্থি ফোলা থাকে, দাঁত অনেক দেরীতে উঠে, মেরুদণ্ডের দুর্বলতার জন্য হাঁটিতে পারে না, সেই সকল রুগ্ন শিশুদের ধাতুতে ক্যালকেরিয়া ফস উপযোগী।
ঘাড়ে এত কমজোর যে মাথার ভার শিশু যেন বহিতে পারে না ও তাহার মাথা ঢলিয়া পড়ে, সেজন্য প্রায়ই কাঁদে। স্তনদুগ্ধ বা প্রস্তুত দুগ্ধ পান করিলেই শিশু বমি করিয়া ফেলে, দুগ্ধ পানের পর শিশুর প্রায়ই পেট কামড়ায়। পেটের দোষে হুড় হুড় করিয়া বাহ্য হয় এবং উহা জলবৎ ও গরম। অনেক সময় সবুজ ও লাল হড়হড়ে বাহ্য হয়, ভুক্ত দ্রব্য বাহ্যের সহিত নির্গত হয়।
এই সকল শিশুর বয়সের সঙ্গে গড়ন বিশেষ বাড়ে না, সামান্য মাত্র ঠাণ্ডা লাগিলেই তাহাদের অসুখ হয়। এইরূপ ধাতুতে একটু সামান্য মাত্র ঠাণ্ডা লাগিলে সমস্ত শরীরে জ্বরের মত একটা গরম ভাব হয় ও অস্থি সমূহের পেরিয়ষ্টিয়ম ও সন্ধি স্থানে প্রদাহ হয় এবং সেই জন্য নড়িলে চড়িলে শিশুর বেদনার বৃদ্ধি হয়। দুগ্ধ, লবণাক্ত ও ভাজা খাদ্য বস্তুতে এই ধাতুর শিশুদের প্রথম হইতেই একটি আগ্রহ দেখা যায় এবং আইসক্রীম ঠাণ্ডা পানীয় ও ফল ভক্ষণে তাহাদের পেটটি প্রায়ই খারাপ হইয়া উঠে। তবে ক্ষুধা অত্যধিক এবং সেজন্য সব সময়ই ইহার শিশু স্তনদুগ্ধ পান করিতে চায়, অথচ আহারের পরেই পেটে একটি বেদনার আবির্ভাব হওয়াতে শিশু তখন কাঁদিতে থাকে। মাতা ভাবে শিশুর ক্ষুধা বুঝি মিটে নাই তাই আরও খাওয়ান, ফলে উদরাময় দেখা দেয়। এই সকল শিশু বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেই গুহ্যদ্বারে ভগন্দর পীড়ায় আক্রান্ত হয় এবং উহা হইতে প্রায়ই পুঁজ নির্গত হয়। ক্যালকেরিয়া ফস সাইকোটিক দোষযুক্ত মাতাপিতার সন্তান যাহারা হাইড্রোজেনয়েড ধাতুতে পরিণত হয় তাহাদের ক্ষেত্রেই অধিক প্রয়োগযোগ্য।

দারুন ক্ষুধা অথচ খাইলেই বৃদ্ধি, ক্যালকেরিয়া ফসের এই বিশিষ্ট লক্ষণটি ব্যাখ্যা:-
ক্যালকেরিয়া ফসের শিশুর ক্ষুধা খুবই প্রবল এবং সেজন্য সব সময়ই ইহার শিশু স্তনদুগ্ধ পান করিতে চায়, অথচ আহারের পরই পেটে একটি বেদনার আবির্ভাব হয় এবং শিশু তখন কাঁদিতে থাকে। মাতা ভাবেন শিশুর বুঝি ক্ষুধা এখনও মিটেনাই তাই আরও খাওয়ান ফলে উদরাময় দেখা দেয়। এই লক্ষণটি টিউবারকুলার দোষের পরিচায়ক। কেননা দারুন ক্ষুধা অথচ খাইলেই বৃদ্ধি হয়।

অস্থিপীড়ায়:- শরীরের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য ইহা অতি প্রয়োজনীয়। ক্যালকেরিয়া ফসে শিশুর হাড় পুষ্ট হয় না ও ব্রহ্মরন্ধ্র অনেকদিন পর্যন্ত জোড়ে না। শীর্ণতা, বিশেষ করিয়া • অপরিপুষ্ট অস্থি। হাত পা শীর্ণ। শরীরের কোনও স্থানের অস্থি ভাঙ্গিয়া যাইয়া যদি শীঘ্র শীঘ্র না জোড়ে তাহা হইলে সিফাইটম উপযোগী। কিন্তু যখণ সিম্ফাইটমে উপকার না হইবে তখন ক্যালকেরিয়া ফস-৬x হইতে ১২০ প্রযোজ্য। অস্থি কোমল, দুর্বল ও শুষ্ক হইলে ইহা প্রয়োগে অস্থি দৃঢ় বলবান ও পুষ্ট হইবে। বালকদের পা বাঁকা হইলে ইহা দ্বারা উপকার হয়। হিন্জয়েন্ট পীড়ায় ইহা অতীব উপকারী, সেজন্যই ক্যাল-ফসকে হাড়ের ঔষধ বলা হয়।

প্রথম ঋতুদর্শনকালের ক্লোরোসিস পীড়া:- প্রথম ঋতুদর্শনকালের পীড়ায় ক্যালফস উপকারী। ঋতুদর্শনকালে বালিকারা অত্যন্ত রোগা, রক্তহীন, ভীতু, উত্তেজিত ও চঞ্চল অথবা উদ্বিগ্ন হইলে অর্থাৎ রোগী এই এক স্থানে রহিয়াছে কিন্তু তখনই বাড়ী যাইতে চায়, আবার বাড়ীতে পৌছিলে বাড়ী হইতে অন্য স্থান যাইতে জিদ ধরে এবং সেই সঙ্গে এক প্রকার মাথা ব্যথা থাকিলে এই ঔষধ উপকারী। এইজন্যই স্কুলের মেয়েদের মাথা ব্যথায় ইহা উপকারী।

স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের পীড়া:- তরুণীদের ঋতুস্রাব অতি শীঘ্র আরম্ভ হয়। ঋতুস্রাব পরিমাণে প্রচুর এবং টকটকে লাল। যদি বিলম্ব হয় তাহা হইলে স্রাব কালচে হয়। কখন কখন প্রথমে উজ্জল লালবর্ণ এবং পরে কালচে এবং তৎসহ ভীষণ পৃষ্ঠবেদনা। বালিকাদের ঋতুস্রাবে ১৫ দিন অন্তরও হইতে পারে কিন্তু বয়স্কদিগের ঋতুস্রাব প্রায়ই অনেক বিলম্বে হয়, ঋতুর সময় প্রসব বেদনার মত বেদনা থাকে। প্রতি ঋতু পরিবর্তন কালে স্ত্রীলোকদের সন্ধিস্থানে যদি ব্যথা ও কামড়ানি থাকে ও বাহ্য প্রস্রাবের পর নীচের পেটে ব্যথা ও ইউট্রাসের স্থানচ্যুতি বাড়ে, কোমরের সেক্রম অস্থিতে কাটিয়া ফেলার ন্যায় বেদনা হয় তাহা হইলে ইহা উপকারী। শিশু যতদিন স্তন্যপান করে, তন্মধ্যে ঋতুস্রাব, তৎসহ কামোত্তেজনা।
ডিমের শ্বেতাংশের ন্যায় প্রদরস্রাব, সেইহেতু যোনীতে জ্বালা। সেই সঙ্গে ইউট্রাসে ও মূত্রথলীতে ব্যথা এবং এই সকল লক্ষণের সহিত বুকে আগুনের মত জ্বালা, সর্বশরীরে উত্তাপোচ্ছাস, দৌর্বল্য, সহজে ঘাম হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ ক্যালফসে নির্দিষ্ট। স্ত্রীলোক রোগা ও যক্ষ্মাগ্রস্ত হইলেও যদি তাহার অধিক পরিমাণে রক্তস্রাব হয় ও মধ্যে মধ্যে অত্যন্ত ঘর্ম হয় তাহা হইলে ইহা উপকারী।

শিশু কলেরা:- জীর্ণ শীর্ণ অস্থিসার পেটটি খাল পড়া খুব উঁচু মাথাটি দেহ অপেক্ষা বড়, রুগ্ন, বয়স অনুযায়ী দেহের বৃদ্ধি বা পুষ্টি হয় না এমন শিশুদের অর্থাৎ ক্যালকেরিয়া ধাতুর শিশুদের উদরাময় বা কলেরায় যখন পেটে দুধ আদৌ সহ্য হয় না, খাইলেই বমি করে, অনবরত বাহ্য হয়, বাহ্য অত্যন্ত জলবৎ, পরিমাণে প্রচুর ও অত্যন্ত গরম, মলের রঙ প্রায় সবুজ হড়হড়ে, যাহা খায় বাহ্যের সঙ্গে বহির্গত হয়। ইহা ব্যতীত ঐ জলবৎ বাহ্যেতে সাদা সাদা পর্দা বা আঁশের মত ক্ষুদ্র অংশ ভাসে, ইহাতে পুঁজের মত পদার্থও মিশ্রিত থাকে। বাহ্যের সময় সশব্দে বায়ু নির্গত হয়। শিশুর ২/৪ বার বাহ্যের পর মুখ চোখ বসিয়া যায়, এত দুর্বল হয় যে নড়িতে পারে না, শরীর শীতল হয় এবং মরার মত পড়িয়া থাকে, মুখ রক্তহীন প্রভৃতি লক্ষণে ইহা উপযোগী।

দন্তপীড়ায়:- শিশুদের দাঁত উঠিতে বিলম্ব হয়। আবার নষ্ট হওয়ার সময় খুব তাড়াতাড়ি হয়। পূর্ণ বয়স্ক দিগের দাঁত নরম বোধ হয়, প্রায়ই দাঁতে নতুন ছিদ্র দেখা যায়। পুরাতন দাঁত স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছু বড় এবং গোড়া আলগা হয় ও পড়িয়া যায়। ক্যালকেরিয়া ফস নিয়মিতরূপে কিছুদিন ব্যবহার করিলে দাঁত নষ্ট হইবার বা দাঁতের পীড়া হইবার সম্ভাবনা থাকে না।

কর্ণপীড়ায়:- প্রুফুলা শিশুদের কর্ণশূল, কর্ণের অস্থিতে বেদনা। স্পর্শে বাহ্যকর্ণ শীতলবোধ হয়। কর্ণের মধ্যে পুরাতন সর্দিসহ গলা বেদনা। সাদা চর্বির মত স্রাবসহ শ্রবণ পথের ত্বকের প্রদাহ। কান যেন বন্ধ হইয়া রহিয়াছে, কিছু শোনা যায় না। কানের চতুর্দিকে ক্ষত, কানে সংগীতের ন্যায় শব্দ, কানে বেদনা। কর্ণকুহর স্ফীত ও উত্তপ্ত, জ্বালা ও চুলকানি প্রভৃতি সহ যখন কোনরোগী দিনদিন শীর্ণ ক্ষয় প্রাপ্ত হইতে থাকে তখন ইহা প্রযোজ্য

হাইড্রোকেফালস পীড়া:- শিশু কলেরায় শিশুর বাহ্য বমি হইয়া যখন নড়াচড়ায় শক্তি রহিত হইয়া নিঝুম ভাবে পড়িয়া থাকে তখন চায়নাই উত্তম ঔষধ। চায়না সেবনে প্রথমতঃ রোগীর শরীরে কিছুটা নুতন বল সঞ্চিত হয় তাহার পর ক্যালকেরিয়া ফসে বিশেষ উপকার হয়। যদি তাহা না হইয়া শিশু অজ্ঞান ও অচৈতন্য ভাবে পড়িয়া থাকে এবং এপাশ ওপাশ করে মাথাটি নাড়িতে থাকে, মধ্যে মধ্যে দাঁত কড়মড় করে, শরীরের স্বাভাবিক তেজ কিছু মাত্রায় থাকে না, হাত, পা, নাক, কান সবই শীতল হয়, পা দুইটি নাড়ে তাহা হইলে ক্যাল ফস অপেক্ষা জিঙ্ক মেট অধিক উপকারী।
যদি কোনও স্ত্রীলোকের সন্তান সন্ততিগণ প্রায়ই রিকেট, স্কুফুলা ধাতুগ্রস্ত কিংবা হাইড্রোকেফালস পীড়ায় আক্রান্ত হয় তাহা হইলে সেই স্ত্রীলোক গর্ভধারণ কালীন একদিন ক্যাল-ফস, পরদিন সালফার, এই নিয়মে মধ্যে মধ্যে বন্ধ দিয়া কিছুদিন ঔষধ সেবন করিলে তাহার সন্তান সন্ততিদের উক্ত প্রকার পীড়া হইবার আর আশংকা থাকিবেনা। সালফার দ্বারা ভ্রুনের টিসুসমূহে পুষ্টি সাধন হইবে এবং ক্যালফসে হাড় পরিপুষ্ট হইবে (ক্রম-৩০ শক্তি)।

র‍্যাচাইটিস ও বাত:- শিশুর অস্থি বিকৃতি পীড়া। শিশুদের এই পীড়ার সূত্রপাত হইবার পূর্বে তাহাদের ঠাণ্ডা আদৌ সহ্য হয় না, একটু ঠাণ্ডা পড়িলে তাহা বর্ষায়ই হোক বা শীতেই হোক, কিংবা প্রতি ঋতু পরিবর্তনের সময়ই হোক, শিশুর হাত-পা প্রতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ব্যথা হয়, এই ব্যথা বেদনা নড়াচড়ায় বাড়ে, ঘাড় আড়ষ্ট হইয়া যায়, শরীরের একস্থান হইতে অন্যস্থানে বেদনার সঞ্চালন, বিশেষতঃ এইরূপ বেদনা সেক্রম অস্থির উপরিভাগস্থ প্রদেশ ও পায়ের নীচের দিকে যেন চালিত হয়। ব্রায়োনিয়াতেও এই লক্ষণ আছে। কিন্তু ব‍্যাচইটিসের পূর্ব লক্ষণ বলিয়া এখানে ক্যালকেরিয়া ফসই ব্যবহার করা উচিত, ব্রায়োনিয়া নহে।

সন্ধিস্থানের পীড়া:- প্রতিঋতু পরিবর্তনে সন্ধিস্থানে ব্যথা ও কামড়ানি হয়। এক অঙ্গ হইতে অন্য অঙ্গে বেদনা সঞ্চালিত হয়।

শ্বাসযন্ত্রের পীড়া:- শ্বাসরুদ্ধকর কাশি, অনিচ্ছা সত্ত্বেও দীর্ঘশ্বাস। বাম ফুসফুসের নিম্নভাগের মধ্যদিয়া বেদনা। যক্ষ্মা পীড়ায় কেহ কেহ ইহার বিশেষ প্রশংসা করেন। থাবা থাবা সর্দি জমিয়া থাকিলে এই ঔষধ অধিকতর উপযোগী।

বয়োব্রণে:- যৌবনে অনেকেরই মুখে একপ্রকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ফোটক বাহির হয়। ইহাকে ব্রায়োব্রণ বলে। বালিকাদিগের এই প্রকার কালব্রণে মুখ পূর্ণ হইলে ক্যালকেরিয়া ফস এবং বালকদের হইলে ক্যালকেরিয়া পিক্রেটা উপযোগী।

চর্ম লক্ষণ:- চর্মে অতিশয় চুলকানি থাকে। বার্ধক্য জনিত বৃদ্ধদের শরীরে চুলকানি। বৃদ্ধা স্ত্রীলোকদের যোনীদ্বারে কণ্ডুয়ন বা চুলকানি। গাত্রচর্ম শীতল, শুষ্ক ও কুঞ্চিত। স্নান করার পর অতিশয় চুলকায় ও লালবর্ণ হয়। উর্ধাঙ্গে তাম্রবর্ণ ও দানাযুক্ত। কোন প্রকার ক্ষত আরোগ্য হওয়ার পরও দাগ থাকিয়া যায় এবং পুনরায় ক্ষত হয়। চর্ম ফাটিয়া যায়। রক্তহীন ও স্ক্রফুলা ধাতুগ্রস্ত ব্যক্তিদের একজিমার সাদা বর্ণের মামড়ি। মুখমণ্ডলে রক্তবর্ণ ব্রণ, চর্মের উপর গুটিকা।

পুং জননেন্দ্রিয়ের পীড়া:- গনোরিয়া, প্রমেহজনিত বাত পীড়া। ঠাণ্ডায় বা ঋতুপরিবর্তনে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। রক্তহীন ব্যক্তিদের পুরাতন প্রমেহ পীড়ায় মূত্রনালী ও মূত্রনালীর মুখাশয়ী গ্রন্থিতে প্রবল বেদনা, টাটানি ব্যথা ও চুলকানি থাকে। অণ্ডকোষের স্ফীতি। রোগীর কামেচ্ছা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং কষ্টকর লিঙ্গোচ্ছাস।
বৃদ্ধি: আবহাওয়া পরিবর্তনে, পূর্ব বায়ুতে, ভিজা ঠাণ্ডায়, রসালো ফল ভক্ষণে, সঞ্চালনে, দাঁত উঠিবার ও প্রথম ঋতুদর্শনের সময়, প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যায়।

হ্রাস:- গ্রীষ্মের দিনে, গরমে, শুষ্কদিনে ও শয়ণে।

পরবর্তী ঔষধ:- সোরিনাম, স্যানিকিউলা, আয়োডিয়াম, সালফার, রাসটক্স।

সম্বন্ধ:- সালফার, জিঙ্কাম, রুটা, চায়না।

ক্রিয়াস্থিতিকাল:- ৬০ দিন।

ক্রম:- ৩০, ৬x, হইতে ২০০ শক্তি। ডাঃ সুসলার ৬x শক্তি ব্যবহার করিতেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ