ক্যালকেরিয়া কার্বনিকা
Calcaria Carbonica
রাসায়নিক চিহ্ন:- Ca COs
প্রতিশব্দ:- ক্যালকেরিয়া অষ্ট্রিয়েরাম, ক্যালসিয়াম কার্বনেট অব হ্যানিম্যান, অস্ট্রিয়া এডুলিস, তেসতা অস্ট্রিয়া, অয়ষ্টার শেল্স, ইমপিউর কার্বনেট অব লাইম।
উৎসঃ- (কার্বনেট অব লাইম) ঝিনুকের মধ্যস্তর ভাগ হইতে এই ঔষধের চূর্ণ প্রস্তুত হইয়া থাকে।
বর্ণনা ও ঔষধ প্রস্তুত প্রণালী:- খোলা শামুক ও ঝিনুকের মধ্যস্তর ভাগ হইতে ইহা পাওয়া যায়। পরিষ্কার পুরু অয়স্টার শামুক ভাঙ্গিয়া টুকরা করিয়া ভিতরে যে সাদা ধবধবে অংশ পাওয়া যায় তাহা অধাতব যন্ত্রে পিশিয়া বিচূর্ণ প্রস্তুত করা হয়।
প্রভার:- মহাত্মা হ্যানিম্যান ইহা প্রুভ করেন।
প্রস্তুতের ফরমূলা:- এফ ৭।
ক্রিয়াস্থান:- শরীরের পরিপোষণ ক্রিয়া, শোষণ ক্রিয়া, ক্ষরণ ক্রিয়া ও রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়ার উপর ইহার কার্য অধিক দেখিতে পাওয়া যায়। এই ঔষধটির ক্রিয়ার সর্বপ্রধান কেন্দ্রস্থল শরীর বর্ধনকারী যন্ত্রমণ্ডলী। রক্ত, চর্ম, ফুসফুস, জিহ্বা, দাঁত, মস্তিষ্ক প্রভৃতির উপর ইহা ক্রিয়া প্রকাশ করে। গণ্ডমালা বা স্কুফুলা ধাতুগস্ত ব্যক্তিদের পক্ষে ইহা খুবই উপকারী। ইহা একটি উৎকৃষ্ট সোরা দোষ নিবারক ও ধাতুগত রোগের মহৌষধ।
ধাতুগত লক্ষণ:- ঔষধ প্রয়োগের সময় পীড়া অপেক্ষা ধাতুগত লক্ষণের উপর লক্ষ্য রাখিয়া-ক্যালকেরিয়া কার্ব ঔষধটি প্রয়োগ করিতে হয়। ধাতুগত দোষ নিবারণ করিতে ক্যালকেরিয়া কার্ব অসীম ক্ষমতা রাখে। ইহার ধাতুর রোগী চেহারা বিশেষ করিয়া শিশু ও পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি খলখলে, মোটা, মেদপূর্ণ, ধীর স্থির, চলাফেরা ও কাজ কর্ম ধীরে। ধীরে করার স্বভাব অর্থাৎ আলস্যা পরায়ণ। পরোগীর শীতলতা ভাব তাকে। ইহার রোগী শীতকাতর ও 'হাইড্রোজেনয়েড' ধাতুযুক্ত। ক্যালকেরিয়া কার্বের শিশুর হাড়সমূহ নরম এবং মেদের অংশ বেশী। মেদ শিখিল। গণ্ডমালা ও স্কুফুলা ধাতুগ্রস্ত-গ্রীবার গ্রন্থিসমূহ ফোলা। হাত পা সরু, শরীরের আয়তন অপেক্ষা মাথাটি বড়। পেটটি আরও বড়। রোগীর মাথায় ঘাম হয়, ঘুমাইলে মাথার ঘামে বালিশ ভিজিয়া যায়। বহুদিন পর্যন্ত অপুষ্টি থাকে মেরুদন্ডের অস্থি, হাতের, পায়ের ও অন্য স্থানের লম্বা অস্থিসমূহ বাঁকা, হাড় অসমান ও বিকলাঙ্গ দেখায়। অস্থি পুষ্ট না হওয়ার ফলে শিশু সহজে চলিতে শিখে না। পায়ে ঘাম হইয়া পায়ের তলায় ঘা, হাজিয়া যায়। খোলা বাতাসে রোগী বেড়াইতে ভয় পায়। ডিম খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা রোগী প্রকাশ করে। সামান্য মানসিক উত্তেজনায় রোগিনীর অত্যধিক স্রাব হয়। চুল কটাবর্ণ এবং দেহ গৌর বর্ণের। ইহার রোগী বোকা ও জড়।উপরোক্ত ধাতুগত লক্ষণকে গুরুত্ব দিয়া ঔষধ প্রয়োগ না করিলে ইন্দিত লক্ষ্য অর্জিত হইবে না। তাই ধাতুগত লক্ষণের উপর লক্ষ্য রাখিয়াই ক্যালকেরিয়া কার্ব ঔষধটির প্রয়োগ করিতে হয়।
মানসিক লক্ষণ:-১। রোগী মনে করে তাহার বুদ্ধি নাশ হইবে বা ভবিষ্যতে বিপদ ঘটিবে।২। রোগী ভবিষ্যত অমঙ্গল সম্বন্ধ আশাংকিত। সন্ধ্যার দিকে এইভাব বাড়ে।৩। কোনও সংক্রামক পীড়ার আশংকায় ভীত।৪। মনের বিশৃংখল অবস্থা, ভুলোমন, অবসাদ।৫। মানসিক উৎকণ্ঠার সহিত হৃদস্পন্দন।৬। সানাম্য মানসিক পরিশ্রমে মাথাগরম হইয়া উঠে। রোগী একগুঁয়ে।৭। কোন কার্জ কর্মে বা পরিশ্রম করিতে ইচ্ছা নাই।
চরিত্রগত লক্ষণ:-১। রোগী দেখিতে মোটাসোটা, মেদপূর্ণ, শিশুগণ যেন জড়পিণ্ডের ন্যায়, শীঘ্র নড়িতে পারে না। চর্মলাল ও শুল্ক, সমস্ত হাড় নরম। শিশু চলিতে না শিখা।২। হাত পা সরু, শরীরের আয়তন অপেক্ষা মাথাটি বড়, পেটটি আরও মোটা, বড় ও শক্ত দেখায়।৩। মাথায় ঘাম হয়, ঘুমাইলে মাথার ঘামে বালিশ ভিজিয়া যায়। মাথা, ঘাড়, পিঠ, বুক ও উপরের সমস্ত অংশে ঘাম হয়।৪। রোগী দেহাভ্যন্তরে সর্বদাই ঠাণ্ডা বোধ করে। সামান্যতেই রোগীর ঠাণ্ডা লাগে।৫। মেরুদণ্ডের অস্থি, হাতের পায়ের ও অন্যস্থানের লম্বা অস্থিগুলি বাঁকা। হাড় অসমানও বাঁকা ভাবে বৃদ্ধি হয়, বিকলাঙ্গ দেখায়।৬। পীড়া ভোগকালীন বা আরোগ্যাবস্থায় ডিম খাইবার প্রবল ইচ্ছা, গুরুপাক ও মন্দ জিনিস খাইবার ইচ্ছা, মাংসে ঘৃণা।৭। টক বাহ্য, টক বমি, টক ঢেকুর; সমস্ত শরীরে টক গন্ধ।৮। স্ত্রীলোকদের শীঘ্র শীঘ্র ও অধিক পরিমাণে ঋতুস্রাব, স্রাব অনেকদিন পর্যন্ত থাকে, শেষে রক্তহীন হইয়া পড়ে।৯। নাকে, কানে কিম্বা মূত্রথলি অথবা জরায়ুতে পলিপস বা এক প্রকার মাংস পিণ্ডময় গ্যাজের উৎপত্তি।১০। শ্বেত প্রদর স্রাব দুগ্ধের মত। যাহাদের গলায়, বগল ও কর্ণমূলের বীচি সর্বদা আওরায়, এইরূপ স্ত্রীলোকদের প্রদরে ইহা উপযোগী।১১। ঝাপসাদৃষ্টি-যাহা দেখে সবই যেন কুজঝটিকাবৃত।১২। যোনী কপাটে স্ফীতি ও প্রদাহ। প্রসূতির স্তনে স্বল্পদুগ্ধ, অথচ শক্ত ও ফোলা।
প্রয়োগক্ষেত্র:- শিশুদের দন্ত নির্গমন কালীন পীড়া, শিশু কলেরা ও উদরাময়, পাকস্থলীর পীড়া, রজঃকৃচ্ছতা, জরায়ুর পীড়া, বাধক বেদনা, অসাড়ে মূত্রত্যাগ, পাথরী, টাইফয়েড জ্বর, সবিরাম জ্বর, প্রস্রাবের পীড়া, আমবাত, রেতঃপাত জনিত পীড়া, এপিলেন্সী, একজিমা, শিরঃপীড়া, হাইড্রোকেফালস, চক্ষু ও নাসিকার পীড়া, কর্ণের পাড়া, থাইসিস প্রভৃতি পীড়ায় ইহা প্রয়োগ হয়।
প্রান্তদেশ:-প্রান্তদেশ বলিতে মাথা, হাত, পা প্রভৃতি বুঝাইয়া থাকে। ইহার রোগীর হাত পা সরু, শরীরের আয়তন অপেক্ষা মাথাটি বড়। শিশুর ব্রহ্মতালু অনেকদিন পর্যন্ত অপুষ্ট থাকে। রোগীর হাত পা প্রান্তদেশসমূহে অতিশয় ঠাণ্ডা অনুভূত হয়, পায়ের তালু অতিশয় ঠাণ্ডা। অনেক সময় মন হয় তাহাদের পায়ে বুঝি ভিজা মোজা পরানো আছে।
শিশুরোগ:- যে সকল শিশুর পরবর্তী জীবনে ক্ষয় পীড়ায় আক্রান্ত হইবার সম্ভাবনা পূর্বাভাষ রূপে দেখা দেয় তাহারাই সামান্য ঠাণ্ডায় সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয় এবং অতিশয় শীত কাতর হইয়া পড়ে। ব্রঙ্কাইটিস, ক্যালকেরিয়ার শিশু মেদপূর্ণ, শিশুগণ যেন জড়পিণ্ড, শীঘ্র নড়িতে চড়িতে পারে না, চর্ম লাল ও শুষ্ক। সমস্ত হাড় নরম, অতি ধীরে পুষ্ট হয়। শিশুর ব্রহ্মতালু অনেকদিন পর্যন্ত অপুষ্ট থাকে। উহার সহিত লিম্ফ্যাটিক গ্ল্যান্ডের স্ফীতি। হাত, পা সরু মাথাটি বড়, পেটটি আরও বড় এবং শক্ত। দন্ত নির্গমন বিলম্ব হেতু পীড়ায় রোগী ক্রমশঃ স্থূলতা প্রাপ্ত হয় কিন্তু ঐ স্কুলতা ভাবটি শরীরস্থ অস্থি সমূহের পরিপুষ্টি না ঘটাইয়া শুধু মাংস গুলিকেই অস্বাভাবিক ভাবে বর্ধিত করিতে থাকে। সেজন্যই ক্যালকেরিয়ার শিশুর দাঁত উঠিতে বিলম্ব হওয়ায় প্রায়ই জ্বর ও পেটের পীড়া এবং তড়কা হয়। শিশু উদরাময়ে রোগীর দুগ্ধ সহ্য হয় না, যেমন দুধ খায় দধির ন্যায় চাপ চাপ টকগন্ধযুক্ত বমি করে। কিম্বা বাহ্যের সহিত দুগ্ধ জমিয়া ঐরূপ দধির ন্যায় চাপ চাপ হইয়া নির্গত হয়। শিশু সর্বদাই ক্ষুধায় ও পিপাসায় হাঁই পাঁই করে। উদরাম বিকালে ও সন্ধ্যায় বেশী হয়। ক্যালকেরিয়ায় বাহ্য সাদা, সবুজ, খড়ির মত, জলবৎ এবং এত অধিক পরিমাণে হয় যে, বিছানার চাদরে কেবল অল্প ফিকে হলদে ছোপ ধরে। মল পঁচা ডিমের ন্যায় গন্ধ বিশিষ্ট।
পাকস্থলীর পীড়া:- রোগীর মাংসে, চর্বিযুক্ত খাদ্যে ও সিদ্ধ দ্রব্যে ঘৃণা, চা খড়ি কয়লা, ডিম লবন, মিষ্টি দ্রব্য এবং যাহা সহজে হজম হয় না তাহাই খাইতে আগ্রহ প্রকাশ করে। আহারের পরেই বুৎ জ্বালা আরম্ভ হয়, সশব্দে ঢেকুর উঠে, সর্বদাই টক ঢেকুর উঠে, টক বমি হয়। পেটে এক প্রকার ব্যথা হয় উহা চাপ দিলে বাড়ে। পেট যেন জুতা দিয়া চাপাইয়া মাড়িতেছে। সময়ে সময়ে রাক্ষুসে ক্ষুধা, গরম দ্রব্যে অনিচ্ছা, ঠাণ্ডা দ্রব্য সহ্য হয় না। কিন্তু ঠান্ডা দ্রব্য পানের আগ্রহ। উপর পেটে বেদনা, স্পর্শে বাড়ে। মধ্যাহ্নের পর হইতে উদরাময় বৃদ্ধি হয়। শিশুদের দুধ সহ্য হয় না, খাইলেই দধির ন্যায় চাপ চাপ গন্ধযুক্ত কাট বমি করে। মলের সঙ্গেও জমা জমা অজীর্ণ দুগ্ধ নির্গত হয়।
শিশুদের দন্তোদামকালীন উদরাময়ের:-শিশুদের দাঁত উঠিতে বিলম্ব হওয়ায় প্রায়ই জ্বর, পেটের পীড়া ও তড়কা হয় 'শশু উদরাময়ে রোগীর দুগ্ধ সহ্য হয় না। যেমন দুধ খায় দধির ন্যায় চাপ চাপ টকগদাযুক্ত বমি করে। অথবা বাহ্যের সহিত দুগ্ধ জমিয়া ঐরূপ দধির মত চাপচাপ হইয়া নিগত হয়। শিশু সর্বদাই ক্ষুধায় ও পিপাসায় হাঁই ফাঁই করে। উদরাময় বিকাশে ও সন্ধ্যায় বেশী হয়। ক্যালকেরিয়ার বাহ্য সাদা, সবুজ, খড়ির মত, জলবৎ এবং এত অধিক পরিমাণে হয় যে, বিছনার চাদরে কেবল অল্প ফিকের ছোপ ধরে। মল পঁচা ডিমের ন্যায় গন্ধ বিশিষ্ট।
স্ত্রীপীড়া:-ক) রজঃকৃষ্ণতায়- যে সকল বালিকা মোটা, মস্তকে ও বক্ষে যাহাদের প্রায়ই রক্তাধিক্য হয়, দেখিতে মোটা ও হৃষ্টপুষ্ট কিন্তু রক্তে লাল কণিকার ভাগ কম অথচ সাদা কণিকার ভাগ বেশী তাহাদের ঋতুর সময় উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াও যদি ঋতু প্রকাশিত না হয় এবং মধ্যে মধ্যে হৃৎকম্প বা বুক ধড়ফড়ানি, শ্বাসকৃষ্ণতা ও মাথাধরা থাকে। সিঁড়িতে উঠিতে গেলে ঐ সকল কষ্টের বৃদ্ধি হয়, এই সকল লক্ষণের সহিত রজঃকৃস্তুতা থাকিলে ক্যালকেরিয়া কার্ব উপকারী।খ) শ্বেত প্রদরে- ছোট ছোট বালিকাদের এবং শ্লেষ্মা প্রধান ও গণ্ডমালা ধাতু বিশিষ্ট স্ত্রীলোকদের শ্বেত প্রদরে ইহা উপযোগী। ইহার স্রাব দুধের মত সাদা। পরিমাণে অধিক, দমকা ও রজঃস্রাবের সহিত অধিক নির্গত হয়। অনেক সময় স্রাবের সহিত যোনী প্রদেশে জ্বালা ও চুলকানী থাকে।গ) জরায়ুর পীড়ায়- তলপেট ভারী বোধ হয়, প্রসব বেদনার মত ঠেলামারা ব্যথা, দাঁড়াইলে উহার বৃদ্ধি, জরায়ুতে সূচ ফোটান ব্যথা, ঋতু নিয়মিত সময়ের পূর্বে এবং অধিক পরিমাণে স্রাব হয়। এই সকল লক্ষণে ক্যালকেরিয়া কার্ব উপযোগী।
পাথরী পীড়া:-পিত্ত পাথরী এবং মূত্র এই উভয় প্রকারের পীড়াতেই ক্যালকেরিয়া কার্ব উপকারী। ডাঃ হিউজেস বলেন ভয়ানক বেদনার সময় ইহার ৩০ বা ২০০ শক্তি ২/১ মাত্রা সেবনে এত শীঘ্র উপকার হয় যে ক্লোরোফরম, মর্ফিয়া ইত্যাদিও প্রয়োজন হয় না। ক্যালকেরিয়া পাথরী পীড়ায় একটি প্রতিষেধক ঔষধ। বেদনার সময় রোগীর ঘর্ম হয়।
অনিদ্রায়:-যেখানে অনিদ্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলিয়া যাইতেছে, এমনকি সারা রাত্রিও ঘুম হয় না, সেখানে ইহা উপকারী। কিছুদিন এই অনিদ্রা থাকিলে ক্রমে ক্রমে কোন না কোন পীড়া প্রায়ই আসিয়া পড়ে। প্রসবান্তে প্রসূতির যদি কিছুতেই নিদ্রা না আসে (আঁতুড় ঘরে এই লক্ষণ থাকিলে), শুইয়া চক্ষু মুদিলে যেন ভীতিকর পদার্থ দেখে, সামান্য গোলমালে চমকিয়া উঠে রোগীর জিহ্বা শুষ্ক হইয়া আসে এমনকি ক্রমে উন্মত্তবৎ হইয়া পড়ে-এই লক্ষণে ৩০ শক্তির ক্যালকেরিয়া তিন ঘণ্টা অন্তর সেবনে আশাতীত ফল পাওয়া যায়।
জ্বর পীড়া:- জ্বর আসার সময় বেলা ১১টা কিম্বা ২টা, সন্ধ্যা ৬টা, একদিন বেলা ১১টা পরদিন ৪টা, এইরূপ পর্যায়ক্রমে জ্বর আসে। শীতাবস্থায় পাকস্থলী হইতে শীত আরম্ভ হয়, পিপাসা যুক্ত বা পিপাপা শূন্য। উত্তাপাবস্থায় পিপাসাশূন্য, মাথা গরম, গায়ের কাপড় ফেলিয়া দিতে চায়। জ্বরের সহিত ঘাম হয়। কখনও শরীরের একাংশে ও রাত্রিতে হয়, শিশুদের মাথায় অধিক ঘাম হয়। নাড়ী মোটা ও দ্রুত। টাইফয়েড র্যাশ (মশার কামড়ের ন্যায় দাগ) গাত্রে বহির্গত হইবার পূর্বে রোগী চক্ষু বুজাইলে কিছু ভীতিজনক খেয়াল দেখিলে, তাহাতে ভয় পায় ও অজ্ঞান ভাবে ছটফট করে। ক্যালকেরিয়া প্রয়োগে র্যাশগুলি বাহির হইয়া যায় ও রোগীর ভারী বিপদের আশঙ্কা দূর হয়।
প্রস্রাবের পীড়া:- রাত্রে বিছানায় অসাড়ে মূত্রত্যাগ করা অনেক ছেলেরই একটা রোগ। ধাতুগত লক্ষণ মিলাইয়া ইহা প্রয়োগ করিলে উপকার দর্শে। প্রস্রাবে অতি দুর্গন্ধ, তাহাতে সাদা ডিপজিট পড়ে, কিন্তু তাহা ঘোলা নহে, মূত্রাশয় উত্তেজিত।
রেতঃপাত জনিত পীড়ায়:- পুনঃ পুনঃ রেতস্খলন, বর্ধিত কামোত্তেজনা। শুক্র অতি শীঘ্র শীঘ্র বাহির হইয়া যায়। সঙ্গমের পর দুর্বলতা ও মানসিক উত্তেজন। হস্ত মৈথুন, স্বপ্নদোষ কিম্বা অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় সেবা জনিত কোনও পীড়ায় ক্যালকেরিয়া কার্ব, লাইকো, সালফার ও নাক্সভম উপযোগী।
এপিলেন্সিতে (ফিট হইয়া যাওয়া):- এই পীড়ায় ধাতুগত লক্ষণের উপর ক্যালকেরিয়ার নির্বাচন সম্পূর্ণ নির্ভর করে। রোগী মনে করে যেন তার হাতের উপর ইঁদুর চলে এবং তার পরই ফিট হয়। ভয় পাইবার পর কোন বহুদিন স্থায়ী ইরাপসান বন্ধ হইবার পর অথবা অত্যন্ত কামবৃত্তি পরিচালনা হেতু ঐ রোগ হইলে ক্যালকেরিয়া ও সালফার উপযোগী। তবে ফিটের সময় সালফার ব্যবহারেও যদি আরোগ্য না হয় তাহা হইলে ক্যালকেরিয়া উপকারী।
একজিমা বা চর্ম পীড়া:- ক্যালকেরিয়া ধাতুর শিশুগণের প্রায়ই গাত্রত্বকে কোনরূপ ইরাপসান বিশেষতঃ একজিমা রোগ হয়। ইহার একজিমার বিশেষত্ব এই যে, উহা মাথা হইতে আরম্ভহইয়া ক্রমশঃ-নীচের দিকে এমনকি মুখ পর্যন্ত ছড়াইয়া পড়ে। ইহাতে প্রচুর দুর্গন্ধ থাকে। এই চর্ম পীড়ার উপর খুব মামড়ী পড়ে এবং ঐ মামড়িগুলি প্রায় সাদাখড়ির মত। ইহার একজিমার আর একটি লক্ষণ এই যে, ছেলে ঘুম হইতে উঠিয়াই আক্রান্ত স্থানে চুলকাইতে থাকে।
বাত ও গেঁটে বাত:- ক্যালকেরিয়া কার্বে গেঁটে বাত ও বাতের সহিত অতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হয়। সেই প্রস্রাবে সাদা তলানি পড়ে, অথচ ঘোলা নহে। পুরাতন বাতে ক্যালকেরিয়া কার্ব উত্তম ঔষধ।
শিরঃপীড়া:- ক্যালকেরিয়া কার্বে গেঁটে বাত ও বাতের সহিত অতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হয়। সেই প্রস্রাবে সাদা, তলানি পড়ে, অথচ ঘোলা নহে। পুরাতন বাতে ক্যালকেরিয়া কার্ব ঔষধ।
শিরঃপীড়া:- মস্তকের উপরিভাগে ভারী অনুভূতি। শিরঃপীড়ার সহিত হাত ও পা শীতল। উপরে উঠিবার সময়, মাথা ঘুরাইবার সময় শিরোঘূর্ণন। সামর্থের অতিরিক্ত ওজন উঠাইবার সময় অথবা মানসিক শ্রমের ফলে শিরঃপীড়া তৎসহ বমনোদ্বেগ। মস্তক উত্তপ্ত এবং ভারী বোধ হয়, তৎসহ মলিন মুখমণ্ডল। মস্তকের মধ্যে অথবা চারিধারে বরফের ন্যায় শীতলতা। বিশেষতঃ দক্ষিণ দিকে।
নাসিকার পীড়া:- শুষ্ক নাসারন্ধ্র ক্ষতযুক্ত স্পর্শ সহিষ্ণু। নাক বন্ধ, তৎসহ দুর্গন্ধময়, হলদেটে স্রাবও থাকিতে পারে। নাকের মধ্যে দুর্গন্ধ, কোমল মাংসপিণ্ড সমূহ, নাসিকার মূলদেশে স্ফীতি। নাসিকা হইতে রক্তস্রাব। বিশেষতঃ মোটা শিশুদের পক্ষে উপকারী।
চক্ষু পীড়া:- চক্ষুর স্বচ্ছ ত্বকে ক্ষত, চক্ষুতে সূর্যের অথবা বাতির আলোক আদৌ সহ্য হয় না। স্বচ্ছত্বক সর্বদাই অপরিষ্কার ও চক্ষুর পাতায় যেন জমাট পূজ থাকে। স্বচ্ছত্বকের অস্বচ্ছতা অর্থাৎ সাদা সাদা দাগ পড়া ইত্যাদি আরোগ্য করিতে ক্যালকেরিয়া বিশেষ উপযোগী। কিন্তু যদি ক্ষত বাড়িয়া ক্রমশঃ স্বচ্ছ ত্বককে বিনষ্ট করিবার উদ্যোগ করে, স্বচ্ছ ত্বক ছিদ্র হয়, তাহা হইলে এসিড নাইট্রিক উপকারী। কর্ণপীড়া:-কর্ণের প্রদাহ, কর্ণের ভিতরে ও বাহিরে ব্যথা, কর্ণের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ। কর্ণের পুঁজ চর্বির মত অথবা কাগজ চিবাইলে যেমন দেখায় সেই রকম পুঁজও সময়ে। সামায়ে পড়ে। এই নিঃসৃত পূজ পরিষ্কার করিবার পর দেখা যায় যে পূর্ব প্রদাহ হেতু কর্ণ পাটহ ছিদ্র হইয়া গিয়াছে এবং সেই ছিদ্রের ধারগুলি মোটা হইয়া পড়িয়াছে এবং সেখানে যেনা গেজের মত জন্মাইয়াছে সে জন্য ব্যথা বেদনা থাকে। স্নান করিয়া, জলে ভিজিয়া, ঠাণ্ডা লাগাইয়া কালা হইলে ও কানের ভিতর নানারূপ শব্দ করিলে ক্যালকেরিয়া উপকার হয়। কাণের ভিতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ফোটক হইলে ক্যালকেরিয়া পিক্রেটায় উপকার হয়।
অর্বুদ:-নাক, কান এবং জরায়ুর অর্বুদে রক্তস্রাব হইতে থাকিলে ফসফোরাস, নাচেৎ ক্যালকেরিয়া কার্ব উপযোগী। ক্যালকেরিয়ায় নাসিকার অর্কুদে রক্তস্রাব থাকে।
বৃদ্ধি:- শয়নে, মুক্ত বাতাসে, ঠাণ্ডা ও জলীয় বায়ুতে, প্রাতে, শীতল জলে, উর্দ্ধপথে উঠিলে, পূর্ণিমায়, শারীরিক পরিশ্রমে, আহাবের পর মানসিক পরিশ্রমে, আলোকে, দুগ্ধপানে, দন্তোদ্দামকালে, ভ্যারোত্তোলনে, সঙ্গমের পর, ঘাম চাপা পড়িলে, ঋতুস্রাবের পূর্বে।
হ্রাস:- শুক ব্যয়ুতে, অন্ধকারে, আক্রান্ত পার্শ্বে শয়নে, চুলা ক্যাটলে, চিৎ হইয়্যা শুইলে, কোষ্ঠবদ্ধ অবস্থায়, ঢিলা পোষ্যক ব্যবহারে, মর্যানো।
সম্বন্ধ:- ক্যালকেরিয়ার পর-লাইকো, নাক্স, ফসফোরাস, সাইলিসিয়া উপকারী।
ক্রিয়ানাশক:- ব্রায়োনিয়া, ক্যাম্ফর, চায়না, ইপিকাক, হিপার, নাট্রিক এসিড, নাক্স, সালফার, সিপিয়া।
অনুপূরক:- বেলেডোনা, রাসটক্স, সাইলিসিয়া, লাইকোপোডিয়াম।
ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ৬০ দিন।
ক্রম:- ৬ হইতে ২০০ বা তদুর্দ্ধ শক্তি।
পরামর্শ:-হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রেও রুগীর উচিত একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। কারণ:
ব্যক্তিভেদে রোগ ভিন্ন হতে পারে: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগ নয়, রুগীর সামগ্রিক লক্ষণ, মানসিক অবস্থা, শারীরিক গঠন, জীবনধারা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঔষধ নির্বাচন করা হয়।
সঠিক ঔষধ নির্বাচন জরুরি: একই রোগের জন্য একাধিক হোমিও ঔষধ থাকতে পারে, কিন্তু কোনটি রুগীর উপযোগী তা নির্ধারণ করতে একজন বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
মাত্রা ও সময়জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ: কখন, কী পরিমাণে, কতদিন ঔষধ খেতে হবে—তা ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী হওয়া উচিত।
নিজে নিজে ঔষধ গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে: ভুল ঔষধ বা মাত্রা রুগীর সমস্যাকে জটিল করে তুলতে পারে, কিংবা উপসর্গ লুকিয়ে রেখে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রেও রুগীর উচিত একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। কারণ:
ব্যক্তিভেদে রোগ ভিন্ন হতে পারে: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগ নয়, রুগীর সামগ্রিক লক্ষণ, মানসিক অবস্থা, শারীরিক গঠন, জীবনধারা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঔষধ নির্বাচন করা হয়।
সঠিক ঔষধ নির্বাচন জরুরি: একই রোগের জন্য একাধিক হোমিও ঔষধ থাকতে পারে, কিন্তু কোনটি রুগীর উপযোগী তা নির্ধারণ করতে একজন বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
মাত্রা ও সময়জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ: কখন, কী পরিমাণে, কতদিন ঔষধ খেতে হবে—তা ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী হওয়া উচিত।
নিজে নিজে ঔষধ গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে: ভুল ঔষধ বা মাত্রা রুগীর সমস্যাকে জটিল করে তুলতে পারে, কিংবা উপসর্গ লুকিয়ে রেখে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ