ককুলাস ইণ্ডিকাস - Cocculus indicus, দ্বিতীয় বর্ষ


ককুলাস ইণ্ডিকাস 
Cocculus indicus





প্রাকৃতিক অবস্থা:- মেনিসপারম্যাসিয়াই।

প্রতিশব্দ:- ভারতীয় আগাছা, ককিউলাস সুচারোসাস, কাকমারি, কাকফল, কাকামারি।

উৎস ও বর্ণনা:- ইহা একজাতীয় বড় আরোহনকারী গাছড়া বিশেষ। বাকল ছাইবর্ণের এবং গভীরভাবে ঢেউ তোলা, কিন্তু কচি অংশগুলি খুবই মসৃন। পাতাগুলি বিস্তৃতভাবে অণ্ডাকার অথবা লম্বা বোঁটার মতো রজ্জু আকারে থাকে। ফুলগুলি আকারেও ছোট হয়। এইসব গাছে বাদামী কালবর্ণের ফল জন্মিয়া থাকে। ফলের বাহিরের আবরণ কোঁচকানো এবং ভিতরের অংশ সাদা বর্ণের পাতলা খোল দ্বারা আবৃত থাকে। আবৃত অংশ বা বীজ সাধারণতঃ তৈলাক্ত সাদা হলুদ বর্ণের হয়। ইহার কোন গন্ধ থাকে না। কিন্তু স্বাদ খুবই তিক্ত। ফলের বীজ ঔষধে ব্যবহৃত হয়।

প্রভার:- মহাত্মা হ্যানিম্যান স্বয়ং ইহা প্রুভ করেন।

প্রস্তুত প্রণালী:- বীজ চূর্ণ তীব্র সুরাসারের সহিত ফার্মাকোপীয়ার নিয়মানুসারে মিশ্রিত করিয়া ইহার মূল অরিষ্ট প্রস্তুত হয়। ২০ এবং উচ্চ শক্তি পরিশ্রুত সুরাসারের সহিত প্রয়োগ হয়।

প্রাপ্তিস্থান:- বাংলাদেশ, মালয়দ্বীপ ও সিংহলে ইহা পাওয়া যায়।

ক্রিয়াস্থান:- জরায়ু, অস্ত্র, পাকস্থলী, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুসমূহের উপর ইহা শীঘ্র ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া থাকে। ভলান্টারী বা ঐচ্ছিক মাংসপেশী মণ্ডলে ক্রিয়া করিয়া পরে জ্ঞান স্থানে ইহা ক্রিয়া করে। পাকাশয়িক স্নায়ুতে ক্রিয়া করিয়া বমন ও 'জরায়ুতে ক্রিয়া করিয়া বিশেষ উপসর্গ আনয়ন করে।

রোগী চিত্র:- ককুলাসের রোগিনী হালকারঙ্গের কেশ বিশিষ্টা। সাধারণতঃ গর্ভবতী যাহাদের অত্যন্ত গা বমি বমি করে, মাথা ঘোরে, কোমরে বেদনা, অবিবাহিতা ও অপুত্রবতী স্ত্রী, নৌকায়, জাহাজে বা গাড়ীতে চড়িলেই যাহারা অসুস্থ হয় ও গা বমি করে, মাথাঘোরে, সর্বদাই বিবাদিতা, অধৈর্যশীলা, ব্যাভিচারিনী, সহজেই ক্রুদ্ধ হয়, প্রতিবাদ সহ্য হয় না, অনিয়মিত ঋতু ও ঋতুর সময় কষ্ট, রাত্রি জাগরণের জন্য বিভিন্ন সৃষ্টি প্রভৃতি ককুলাস রোগীর জ্বলন্ত চিত্র।

চরিত্রগত লক্ষণ:-
১। গা বমি বমি, বিশেষতঃ গাড়ীতে বা নৌকায় যাইলে গা বমির বৃদ্ধি, জাহাজে সমুদ্রযাত্রাকালীন গা বমি, চলতি নৌকার দিকে তাকাইলে গা বমির বৃদ্ধি হয়।
২। গর্ভাবস্থায় গা বমি বমি।
৩। বিছানায় উঠিয়া বসিলে কিংবা গাড়ীতে চড়িলে মাথাঘোরা বাড়ে।
৪। গর্ভাবস্থায় অথবা ঋতুকালে নিম্নাঙ্গের অতিশয় দুর্বলতা।
৫। বাধক বেদনায় পেটে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক বেদনা যেন মনে হয় দুইখানা ধারাল পাথর দিয়া ঘষিতেছে।
৬। সমস্ত শরীরে অবসাদ ও দুর্বলতা, অতি কষ্টে দাঁড়াইয়া থাকে। জোরে কথা কহিতে দুর্বলতা বোধ।
৭। পশ্চাৎ মস্তকে বেদনা, উহা ঘাড় হইতে আরম্ভ হইয়া নিম্নে মেরুদণ্ড পর্যন্ত পরিচালিত হয়, তৎসহ গা বমি।
৮।' কোনরূপ প্রতিবাদ অসহ্য, একটুতেই দোষী বিবেচনা করে ও রাগিয়া যায়, * তাড়াতাড়ি কথা বলে।
৯। দুই ঋতুকালের মধ্যে মাংসধোয়া জলের' মত রক্তস্রাব। ঋতু স্রাবের পরিবর্তে শ্বেত প্রদরস্রাব।
১০। মানসিক উত্তেজনা, রাত্রি জাগরণ কিংবা অন্য কারণ জনিত অনিদ্রাহেতু পীড়া।
১১। প্রত্যেক নড়াচড়ায় পেটে বেদনা।
১২। অতিরিক্ত অধ্যয়ন, পরিশ্রম কিংবা, উচ্চ আশায় নিরাশ হইয়া পীড়া।

মানসিক লক্ষণ:-
রোগী কোন প্রতিবাদ সহ্য করিতে পারেনা। অতি তাড়াতাড়ি কথা বলে। রোগী খেয়ালী এবং বোকাটে। সময় যেন তাড়াতাড়ি কাটিয়া যায়। বিগত বিষয়ের উপর চিন্তা করে এবং চিন্তায় ডুবিয়া থাকে। রোগী গানকরার প্রবৃত্তি চাপিয়া রাখিতে পারে না। মন যেন অসাড়। কোন কথা সহজে বুঝে না। রোগী গভীরভাবে বিষাদিত। অপরের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে বিশেষ চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন থাকে।
প্রয়োগক্ষেত্র: গা বমি বমি, শিরঃপীড়া ও শিরোঘুর্ণন। বাধক বেদনা, সবিরাম জ্বর, পক্ষাঘাত, টাইফয়েড, অনিদ্রা, কলিক বা অস্ত্রশূল বেদনা, হিষ্টরিয়া, তড়কা, সেরিব্রো স্পাইন্যাল মেনিনজাইটিস প্রভৃতি পীড়ায় এই ঔষধটি প্রয়োগ হয়।

বমি ও গা বমি বমি লক্ষণে:- কোন চলতি নৌকা বা জলযান দেখিলেই যদি বমি, গা বমি বমি বাড়ে অথবা গাড়ী, নৌকা প্রভৃতিতে চড়িলে যদি বমি ও গা বমি বাড়ে তাহা হইলে ককুলাসই নির্দিষ্ট। ইহাতে খাদ্য দ্রব্যের দুর্গন্ধে, পানাহারে, নড়াচড়ায় এবং ঠান্ডায় গা বমি বমি ভাব বৃদ্ধি পায়। পেটে সবসময়ই এক জাতীয় অশান্তি থাকে। মুখেন হাদ তিক্ত বা ধাতুর কলংক আস্বাদ কিংবা পঁচা গন্ধ হয়। গর্ভাবস্থায় গা বমি ও বমিতে ইহা উপকারী। কোনও স্থানে যাত্রা করিবার দুই দিন পূর্ব হইতে ককুলাস সেবন করিলে উক্ত উপসর্গের আর আশংকা থাকে না।'

শিরঃপীড়া ও শিরোঘূর্ণন লক্ষণ:- ইহাতে শিরঃপীড়ার সহিত গা বমি বমি ও বমি করিবার ইচ্ছা। মাথার গোলমাল ও স্তম্ভিত ভাবে এবং পানাহারে উহার বৃদ্ধি। শিরোঘুর্ণন সেই সঙ্গে যেন নেশার ভাব ও মনের জড়তা। বিছানায় উঠিয়া বসিতে গেলে যেন মাথা ঘুরাইয়া ফেলিয়া দেয় এবং সেই জন্য পুনরায় শুইতে বাধ্য হয়। এই সকল লক্ষণ গাড়ী চড়িলে বা নৌকা আরোহন করিলে বৃদ্ধি পায়। ককুলাসের মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা ব্রায়োনিয়ার মত নহে। যদিও বিছানায় উঠিয়া বসিলে রোগ বৃদ্ধি দুই ঔষধেই আছে। ব্রায়োতে প্রথমে পেট ফুলিয়া বা গুলাইয়া গা বমি ভাব আসে, পরে মাথাব্যথা করে এবং সর্বশেষে গা বমি বমি বা পেটের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। দুর্বলতার সহিত মাথার ভিতর খালিবোধ ককুলাসে নির্দিষ্ট। ককুলাসের মাথাব্যাথার সহিত গা বমি বমি অনেকটা কলচিকামের ন্যায় এমন কি খাওয়ার গন্ধ নাকে গেলেই গা বমি বমি করে। ককুলাসের মাথা ব্যথা সাধারণতঃ মাথার পশ্চাৎ ভাগেই অধিক এবং তথা হইতে পিঠের দাঁড়ায় পরিচালিত হয়, বেদুনা পানাহারে, ঠাণ্ডা বাতাসে, চাপ প্রয়োগে ও নিদ্রার পর বৃদ্ধি পায়।

বাধক বেদনায় ও স্ত্রীরোগ লক্ষণঃ- বাধক, তৎসহ ঘোরাল এবং প্রচুর ঋতুস্রাব। বাধক বেদনার সহিত কোমরে অত্যন্ত বেদনা। এই বেদনাই এই পীড়ার ককুলাস নির্বাচনের প্রথম সোপান রোগিনী মনে করে যেন কোমরে আদৌ বল শক্তি নাই, মনে হয় কোমর আড়ষ্ট হইয়া আছে। সেই সঙ্গে রোগিনী এত দুর্বল যে চলিতে গেলে হাত পা কাঁপে। বুক, মাথা ও পেটে খালি বোধ যেন কিছুই নাই। ঋতুস্রাব কাল অল্প পরিমাণে অত্যন্ত বেদনার সহিত দেরীতে ঋতু প্রকাশিত হয় এবং প্রতিমাসে স্রাব ক্রমশঃ কমিয়া আসে ও ঋতু স্রাবের পরিবর্তে শ্বেত প্রদর দেখা দেয়। দুঃখ, উদ্বেগ, দীর্ঘদিন স্থায়ী নিদ্রাশূন্যতার জন্য অবসন্না নারীদের অতি সত্বর ঋতুস্রাব হয়, উহা অধিক পরিমাণে নির্গত হয় এবং অনেক দিন স্থায়ী হয়। বাধক বেদনার সহিত পেটে বায়ু সঞ্চয় হইয়া পেট ফুলিয়া উঠে, ঢেকুর উঠিলে পেট বেদনা ও ফোলা সামান্য কমে।

পক্ষাঘাত লক্ষণ:- যে কোন কারণে পক্ষাঘাত হউক না কেন যদি পীড়ার প্রথমাবস্থায় ককুলাস ব্যবহার করা যায় তবে আর পীড়া বৃদ্ধি হইতে পারে না। কোমরে পক্ষাঘাতের মত দুর্বলতা সেইজন্য বেড়াইবার সময় হাঁটু ভাঙ্গিয়া আসে লক্ষণে ইহা ব্যবহার্য। দুর্বলতা, সেই সঙ্গে পায়ে যেন আদৌ বল নাই। পায়ের তলা অসাড়। উরু যেন থেঁতো। মুখের, জিহ্বার ও ফ্যারিংসের পক্ষাঘাতে ধীরে কথা বলে। গিলিতে কষ্ট হয়। হিষ্টিরিয়া ও গুল্মবায়ু পক্ষাঘাতেই ইহা অধিক উপযোগী।

সবিরাম জ্বরে লক্ষণ:- সবিরাম জ্বরে শীতাবস্থায় পেটে বায়ু সঞ্চয় হেতু শূল বেদনা, বমনোদ্বেগ শিরোঘূর্ণন, নিম্ন প্রত্যঙ্গাদির শীতলতা এবং মস্তকে উত্তাপ। সমস্ত খাদ্যে ঘৃণা, একবার শীত আবার উত্তাপ। শীত শরীরের সব স্থানে হয় না। নিম্নাঙ্গ শীতল ও মাথা গরম থাকে। উত্তাপাবস্থায় ও শীত থাকে, স্পষ্ট উত্তাপ প্রকাশিত হয় না। শীত গরমেও উপশম হয় না। উত্তাপাবস্থায় ঠাণ্ডা বা গরম বাতাস কিছুই সহ্য হয় না। ঘর্মাবস্থায় সর্বাঙ্গীন ঘর্ম। মুখে ঠাণ্ডা ভাব থাকে, দুর্বলতা।

টাইফয়েড জ্বরে লক্ষণ:- টাইফয়েড পীড়ায় অত্যন্ত মাথা ঘোরা। বসিলে বা শুইয়া থাকিবার পর উঠিয়া বসিলে মাথা ঘোরার বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে প্রায় গা বমি বমি ও বমন এমনকি মূর্ছা পর্যন্ত হয়। মনের, ও মাথার জড়তা ও স্তম্ভিত ভাব, সেইজন্য স্পষ্ট কথা বলিতে পারে না। চক্ষুর পাতা ভারী, যেন খোলা যায় না। মাথা সাঁটিয়া ধরা, বিশেষত মাথার পশ্চাৎভাগে ও ঘাড়ের উপর যেন সাঁটিয়া ধরা ভাব। সেই সাথে মাথা খালি বোধ ও কলিক বেদনা। রোগী মনে করে পেটে যেন ধারালো পাথর বা কাঠ রহিয়াছে।

রাত্রি জাগরণ হেতু (অনিদ্রা) পীড়ায়:- অনেকদিন যাবত রাত্রি জাগরণ হেতু নানাবিধ পীড়া দেখা দিলে ইহা উপকারী। যাতারা রাত্রি জাগরণ করিয়া রোগীর সেবা শুশ্রূষা বা অন্য কোন কার্য করিতে হয়, তাহাদের পীড়ায় ককুলাস উপকারী।

কলিক বা অস্ত্রশূল বেদনায় লক্ষণ:- সাধারণতঃ রাত্রি দ্বিপ্রহরের পর উক্ত প্রকার বেদনা আরম্ভ হয়, তাহার সঙ্গে গা বমি বমি থাকে কিংবা বমি হয়। গর্ভাবস্থায় বায়ুশূল বেদনা কিংবা ঋতুস্রাব বন্ধ হইয়া উক্ত প্রকার শূলবেদনা হইলেও ককুলাস উপকারী। পেটে অত্যন্ত বায়ু জমে তাহাতে নাড়ীভুঁড়ি যেন পাক দেয়, মোচড়ায়, পেটে অত্যন্ত বেদনা ধরে, বায়ু নিঃসৃত হইলে কেবল মাত্র বেদনার একটু উপশম হয়।

হিষ্টিরিয়া লক্ষণ:- ফটের সময় রোগীর শ্বাসকষ্ট অধিক হয়। মনে হয় যেন গলা, বুক, পাকস্থলী চাপিয়া ধরিয়াছে। ঋতুস্রাব বন্ধ হইয়া মানসিক বিকার। ঋতুর গোলযোগ বশতঃ পীড়া, রোগিনী অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দুর্বল ও অসাড় বোধ করে।

তড়কা লক্ষণ:- ইহার বিশেষ লক্ষণ এই যে, তড়কার ফিটের সময় চক্ষু বুজাইয়া আসে কিন্তু তাহার ভিতর চক্ষুর তারা একবার এদিক ওদিক ঘুরিতে থাকে। অনেকদিন পর্যন্ত না ঘুমাইয়া তড়কা।

সেরিব্রো স্পাইন্যাল মেনিনজাইটিসে লক্ষণ:- এই জ্বরের সহিত মাথার অক্সিপিটাল অংশে অর্থাৎ মাথার পশ্চাৎভাগের নিম্নাংশে এবং ঘাড়ে ভয়ানক ব্যথা হয়-যে সময়ে শিশু বিকারে অজ্ঞান। তখনও মাথাটা পিঠের দিকে বাঁকায় যেন ঐরূপ করিলে মাথায় মেমব্রেনের টানের উপশম হয়। যখন বেশ জ্ঞান থাকে, তখনও কেবল ঘাড়ে হাত দেয় ও টেপে। অনেকের মনে হয় মাথায়। পশ্চাৎ ভাগ যেন একবার খুলিতেছে আবার বন্ধ হইতেছে এই সব লক্ষণে ইহা উপকারী।

প্রান্তদেশে ককুলাসের লক্ষণাবলী:- অঙ্গপ্রত্যঙ্গে কম্পনশীলতা এবং বেদনা। বাহুদ্বয় অসাড় হইয়া যায়। একাঙ্গিক পক্ষাঘাত, নিদ্রার পর বৃদ্ধি। একবার একহাত ঠাণ্ডা, অপর হাত গরম। পরক্ষণে একহাত গরম অপর হাত ঠাণ্ডা। একবার এক হাতের, পরক্ষণে অপর হাতের অসাড়তা ও ঘর্ম। চলিতে গেলে হাঁটু কটকট করে। নিম্নশাখা অত্যন্ত দুর্বল। হাঁটুর স্ফীতি ও প্রদাহ। অত্যন্ত কষ্টদায়ক পক্ষাঘাতিক টানিয়া ধরা। সোজা হইয়া আছে এইরূপ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মুড়িতে গেলে কষ্ট।

বৃদ্ধি:- পানাহার ও নিদ্রান্তে, কথা বলিলে, ধুমপানে, গর্ভাবস্থায়, যানবাহনে। আরোহনে

হ্রাস:- গরম ঘরে, শান্ত নিদ্রায়।

পরবর্তী ঔষধ:- নাক্স, বেলেডোনা, আর্সেনিক, হিপার, পালসেটিলা, সালফার।

সম্বন্ধ:- পক্ষাঘাতে ও তাণ্ডব রোগে নাক্স ও ইগ্নেশিয়া তূল্য।

ক্রিয়াস্থিতিকাল:- ৩০ দিন।

ক্রম:- ৩০ হইতে ২০০ শক্তি (সচরাচর ৩০ শক্তিই ব্যবহৃত হয়। গর্ভাবস্থায় উচ্চ শক্তি)।



ককুলাস ইণ্ডিকার প্রধান লক্ষণসমূহ:

1. মাথা ঘোরা (Vertigo):

  • চলন্ত যানবাহনে উঠলে মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব।

  • চোখ বন্ধ করলে বা শুয়ে পড়লে মাথা ঘোরা বাড়ে।

  • পড়ে যাওয়ার মতো অনুভব হয়।

2. যাত্রাজনিত অসুস্থতা (Motion sickness):

  • গাড়ি, নৌকা বা ট্রেনে উঠলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা।

  • এটি ট্র্যাভেল সিকনেসের জন্য অন্যতম কার্যকর ঔষধ।

3. মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা:

  • দীর্ঘসময় রাতজেগে সেবা করা বা পড়ালেখা করার পর ক্লান্তি।

  • রোগীর মনে হয় যেন সে আর কিছুই সহ্য করতে পারছে না – মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

4. বিষণ্ণতা ও উত্তেজনা:

  • অতিরিক্ত মানসিক চিন্তা ও ক্লান্তিতে মানসিক ভারসাম্য হারানো।

  • কিছু মনে না থাকা বা ধ্যান ভেঙে যাওয়া।

5. পেট ও বমি সংক্রান্ত উপসর্গ:

  • ক্ষুধা না থাকা, পেটের গ্যাস, হজমে সমস্যা।

  • মুখে তেতো ভাব, খাবার খেলেই বমি বমি লাগে।

6. মহিলাদের মাসিক সমস্যায়:

  • মাসিকের সময় মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, স্নায়বিক অস্থিরতা।

  • মাসিকের আগে প্রচণ্ড দুর্বলতা বা মাথাব্যথা।





পরামর্শ:-

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রেও রুগীর উচিত একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। কারণ:

  1. ব্যক্তিভেদে রোগ ভিন্ন হতে পারে: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগ নয়, রুগীর সামগ্রিক লক্ষণ, মানসিক অবস্থা, শারীরিক গঠন, জীবনধারা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঔষধ নির্বাচন করা হয়।

  2. সঠিক ঔষধ নির্বাচন জরুরি: একই রোগের জন্য একাধিক হোমিও ঔষধ থাকতে পারে, কিন্তু কোনটি রুগীর উপযোগী তা নির্ধারণ করতে একজন বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।

  3. মাত্রা ও সময়জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ: কখন, কী পরিমাণে, কতদিন ঔষধ খেতে হবে—তা ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী হওয়া উচিত।

  4. নিজে নিজে ঔষধ গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে: ভুল ঔষধ বা মাত্রা রুগীর সমস্যাকে জটিল করে তুলতে পারে, কিংবা উপসর্গ লুকিয়ে রেখে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তাই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ