পঞ্চম অধায়
সাইকোসিস
Sycosis
প্রশ্ন- সাইকোসিস কাহাকে বলে?
উত্তর: সাইকোটিক মায়াজম হইতে উদ্ভূত, সুস্থদেহে রোগপ্রবণতা সৃষ্টিকারী একটি ধাতুগত দোষ বা মায়াজমেটিক অবস্থাকে সাইকোসিস বলে। কুচিকিৎসায় গনোরিয়া স্রাব চাপা পড়িলে যে ধাতুদোষ সৃষ্টি হয় এবং রোগীদেহে নানাপ্রকার আভ্যন্তরীক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ঐ ধাতুগত দোষ বা মায়াজমেটিক অবস্থাকে সাইকোসিস বলে।
প্রশ্ন- গনোরিয়া ও সাইকোসিসের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: গনোরিয়া ও সাইকোসিসের মধ্যে পার্থক্য ছক আকারে নিরূপণ করা হইল।
গনোরিয়া
ক) গনোকক্কাস নামক একপ্রকার জীবাণুর তরুণ আক্রমণে জননেন্দ্রিয়ে যে দূষিত স্রাব সৃষ্টি হয় তাহাকে গনোরিয়া বলে।
খ) ইহা একটি সংক্রামক যৌনরোগ।
গ) ইহা শুধুমাত্র অর্জিতরূপেই রোগী দেহে আসিয়া থাকে।
ঘ) ইহাতে জননেন্দ্রিয় পথে একটি জ্বালাকর স্রাব ও ক্ষয়ের লক্ষণ বিদ্যমান থাকে।
ঙ) ইহাতে প্রস্রাবে কষ্ট ও জ্বালা যন্ত্রণা বিদ্যমান থাকে।
সাইকোসিস
ক) গনোরিয়া স্রাবকে কুচিকিৎসায় চাপা দেওয়া হইলে বাহির হইতে ভিতরের দিকে পরিচালিত হইয়া যে ধাতুগত দোষ সৃষ্টি হয় সাইকোসিস বলে। তাহাকে
খ) ইহা একটি ধাতুগত দোষ বা মায়াজমেটিক অবস্থা।
গ) ইহা রোগীদেহে অর্জিত ও বংশানুক্রমিক আসিয়া থাকে। উভয়রূপেই
ঘ) ইহাতে জননেন্দ্রিয় পথে জ্বালাকর স্রাব ও ক্ষয়ের কোন লক্ষণই বিদ্যমান থাকে না।
ঙ) ইহাতে প্রস্রাবে কোনপ্রকার কষ্ট বা জ্বালা যন্ত্রণা বিদ্যমান থাকে না।
প্রশ্ন- গনোরিয়া কাহাকে বলে?
উত্তর: নারী ও পুরুষের অনৈতিক যৌনমিলনের ফলে গনোকক্কাস নামক এক প্রকার জীবাণুর তরুণ আক্রমণে দূষিত স্রাব হইতে সৃষ্ট সংক্রামক যৌন রোগ যাহা পুরুষ হইতে নারীতে, নারী হইতে পুরুষে অর্জিত আকারে বিস্তার লাভ করিয়া শুধুমাত্র পুরুষ ও স্ত্রী জননেন্দ্রিয় পথে একটি জ্বালাকর স্রাব এবং ক্ষত বা ক্ষয় লক্ষণের সৃষ্টি করে তাহাকে গনোরিয়া বলে।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের উৎপত্তি কিরূপে হয়?
উত্তর: সাইকোসিস মানব শরীরযন্ত্রের একটি অবস্থা। দূষিত সংসর্গের ফলে গনোকক্কাস নামক একপ্রকার জীবাণুর তরুণ সংক্রমণে জননেন্দ্রিয় পথে যে জ্বালাযুক্ত দূষিত স্রাব দেখা দেয় উহা যদি আদর্শ চিকিৎসক দ্বারা সুচিকিৎসিত হয় তবে কোন প্রকার ধাতুদোষ সৃষ্টি না হইয়াই নিরাময় হয়। কিন্তু কুচিকিৎসার ফলে বা এলোপ্যাথিক ইনজেকশনাদির দ্বারা অবৈধ উপায়ে বাহ্য স্রাবটি লুপ্ত হইলে বা চাপা পড়িলে রোগশক্তি অন্তর্মুখী হইয়া যে ধাতুদোষ সৃষ্টি হয় এবং অন্যান্য যন্ত্রাদি আক্রান্ত হয় তখনই সাইকোসিস দোষের ভিত্তি পত্তন হয় এবং সাইকোসিস দোষের উৎপত্তি হয়।
প্রশ্ন- সুপ্ত সাইকোসিসের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: নিম্নে সুপ্ত সাইকোসিসের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগীর মনটি গোপনতায় সমাচ্ছন্ন, সর্ববিষয়ে গোপন করার প্রবৃত্তি।
খ) রোগীদেহে যে কোন প্রকার রোগই বিকাশ লাভ করুক না কেন তাহার আরোগ্য গতিটি অতিশয় ধীর ও বিলম্বিত। একটি পর আর একটি রোগলক্ষণ চলিতেই থাকে। তাহার পশ্চাতে কোন কারণ খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। যে কোন প্রকার তরুণ রোগ খুবই মন্থর গতিতে আরোগ্য লাভ করে।
গ) রোগীর মনটি রোগের উপর পড়িয়া থাকে। দ্রুত আরোগ্যের জন্য ঘনঘন চিকিৎসক পরিবর্তন করে।
ঘ) রোগী অস্বাভাবিক স্রাবপ্রবণ, যে কোন রোগে অস্বাভাবিক স্রাবে উপশম বোধ করে।
ঙ) রোগীর স্বভাব-সন্দিগ্ধ চিত্ততা, হিংসাপ্রবণ ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির।
চ) রোগীর স্মরণশক্তি প্রায় হ্রাস পায়, এমনকি ইদানিংকালের ঘটনাবলীও বিস্মৃত হয় কিন্তু দীর্ঘদিন পূর্বের ঘটনাও তাহার পুংখানুপুংখ স্মরণ থাকে।
ছ) রোগীর দেহের কোন স্থান হইতে কেশগুচ্ছ উঠিয়া গিয়া বৃত্তাকারে টাক পড়ে।
জ) রোগী বর্ষাকালে বা আর্দ্র আবহাওয়ায় অতি সহজেই রোগাক্রান্ত হয়।
ঝ) রোগী পদচারণা করিলে বা হাল্কা পরিশ্রম করিলে রোগ লক্ষণের উপশবোধ করে।
প্রশ্ন- বিকশিত সাইকোসিসের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: নিম্নে বিকশিত সাইকোসিসের লক্ষণাবলীর বর্ণনা প্রদান করা হইল।
ক) নির্মমতা বা কঠোরতা, ক্রোধান্ধতা, অপরাধপ্রবণতা ও নীচতাপূর্ণ মনোভাব।
খ) সন্দিগ্ধচিত্ততা, ভীরুতা, অসন্তোষ বা চিত্তচাঞ্চল্যসহ স্মৃতিশক্তির বিপর্যয়, বুদ্ধিবৃত্তির বিশৃঙ্খলা ও আত্মহননের অভিলাষ দৃষ্ট হয়।
গ) দৈহিক গঠনগত অস্বাভাবিকতা। যথা-হস্তপদের অঙ্গুলি সংখ্যায় কম-.. বেশী, হৃদপিণ্ডের কপাটিকার ক্ষয় ও অস্বাভাবিকতা।
ঘ) যে কোন কলার অত্যধিক স্ফীতি বা বৃদ্ধির ফলে আঁচিল, টিউমার প্রভৃতি সৃষ্টি হওয়া।
৬) মৎস্য গন্ধযুক্ত ক্ষতহীন নাসিকাস্রাব দৃষ্ট হয় এবং নাসিকার ঘ্রাণশক্তি বিনষ্ট হইয়া যায়।
চ) স্থানীয় বা সামগ্রিকরূপে দেহের নানা স্থানে পানিসঞ্চয় জনিত স্ফীতি দৃষ্ট হয়।
ছ) মস্তক, ললাট ও ব্রহ্মতালুর ব্যথা রাত্রিতে বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের ধাতুগত লক্ষণ লিখ।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের ধাতুগত লক্ষণাবলীর বর্ণনা প্রদান করা হইল।
ক) রোগী গোপনপ্রিয়-স্বীয় কার্যকলাপ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক, যে কোন বিষয়ই গোপন রাখিতে বদ্ধপরিকর।
খ) রোগীর মনটি সদাসর্বদা রোগের প্রতি বা রোগলক্ষণের প্রতি নিবদ্ধ থাকে। দ্রুত আরোগ্যের জন্য ঘনঘন চিকিৎসক পরিবর্তন করে।
গ) রোগীর নির্মমতা বা কঠোরতা, ক্রোধান্ধতা, অপরাধ প্রবণতা, নীচতাপূর্ণ মনোভাব পরিলক্ষিত হয়।
ঘ) রোগী সন্দিগ্ধচিত্ত, ভীরু, অসন্তুষ্ট বা চিত্তচাঞ্চল্যযুক্ত এবং স্মৃতিশক্তির বিপর্যয়, বুদ্ধিবৃত্তির বিশৃঙ্খলা ও আত্মহননের অভিলাষী।
ঙ) রোগীর যে কোন কলার অত্যধিক স্ফীতি বা বৃদ্ধির ফলে আঁচিল, অর্বুদ, স্লিপদ প্রভৃতি দৃষ্ট হয়।
চ) দৈহিক গঠনগত অস্বাভাবিকতা, যথা-হস্তপদের অঙ্গুলি সংখ্যায় কম বা বেশী, হৃদপিণ্ডের কপাটিকাসমূহের ক্ষয় বা অস্বাভাবিকতা।
ছ) মৎস্যগন্ধযুক্ত ক্ষতহীন নাসিকাস্রাব দৃষ্ট হয় এবং নাসিকার ঘ্রানেন্দ্রিয়ের শক্তি লোপ পায়।
জ) অণ্ডকোষ প্রদাহ, মূত্রযন্ত্রের রোগ, ক্যান্সার, জরায়ুর অর্বুদ, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি দৃষ্ট হয়।
ঝ) যে কোন দ্বার দিয়া অস্বাভাবিক স্রাব নির্গত হইলে, পদাচারণা করিলে কিংবা হাল্কা পরিশ্রম করিলে সুস্থতা অনুভব করে।
ঞ) ঝড় বাদলের সময় বা অব্যবহিত পূর্বে রোগীর বার বার, প্রস্রাবের বেগ হয়।
ট) বর্ষাকালে, আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় রোগীর রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায়।
ঠ) দিনে রোগীর সকল প্রকার রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায় বলিয়া রাত্রিতে রোগ উপশমের জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের মানসিক লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের মানসিক লক্ষণের বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) সন্দেহপ্রবণতা, অসন্তোষ, মানসিক চঞ্চলতা ও ধৈর্যশীলতার অভাবহেতু ছোটখাট রোগেও বারবার চিকিৎসক পরিবর্তন করে। রোগীর মন সদাসর্বদা রোগের প্রতি বা রোগলক্ষণের প্রতি নিবদ্ধ থাকে।
খ) অস্থিরতা ও অন্যমনষ্কতা- অস্থিরতার জন্য মনোযোগ সহকারে কোনকিছু কাহাকেও বলা বা কাহারো নিকট হইতে স্থির হইয়া কোন কিছু শ্রবণ করা রোগীর পক্ষে অসম্ভব।
গ) ভ্রান্ত ধারণা-ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হইয়া মনে করে তাহার দেহ কাঁচ বা কাঠ দ্বারা নির্মিত। সে পুরুষ হইলেও মনে করে যেন তাহার গর্ভ হইয়াছে এবং সন্তান পেটের মধ্যে নড়াচড়া করিতেছে।
গ) হিংসাপরায়ন- রোগীর নিজের নিকটাত্মীয়, স্বজন, বন্ধুবান্ধব সকলের প্রতিই অহেতুক একটি হিংসাত্মক মনোভাব বর্তমান থাকে।
ঙ) নিজের প্রতি বা নিজের কাজকর্মের প্রতি সন্দেহপ্রবণ-রোগী মনে করে আমি যাহা করিলাম তাহাও বোধহয় যথার্থ হইল না। ঘরের দরজার কড়ায় তালা দিয়া বার বার ফিরিয়া আসিয়া টানিয়া দেখে, ঠিক মত তালা দেওয়া হইল কিনা।
চ) আত্মবিশ্বাসের অভাববোধ- রোগীর নিজের প্রতি বা অপরের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকে না। কাহাকেও কাজে পাঠাইলে ভাবে কাজটি সে ঠিকমত করিতে পারিবে কি?
ছ) আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি-রোগী ইদানিংকালের ঘটনাবলী বিস্তৃত হয় কিন্তু দীর্ঘদিন পূর্বের ঘটনা পুংখানুপুংখরূপে স্মরণ থাকে।
জ) স্মৃতিশক্তিহীনতা-রোগীর স্মৃতিশক্তি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হইবার ফলে কাহারো সহিত কথা বলিতে বলিতে খেই হারাইয়া ফেলিয়া পুনরায় জিজ্ঞাসা করে কি বলিতেছিলাম।
ঝ) মানসিক উৎকণ্ঠা- গোপনতার আশ্রয় লইয়া নিজের জীবনে সাইকোসিস দোষটি দুষ্ট যোনীতে উপগমন ও চাপা দেওয়া চিকিৎসার ফলরূপে প্রাপ্ত হওয়ায় নিজের মনটিতে সর্বক্ষণের জন্যই একটি সংগোপনভাব পোষণ করে। পাছে কেহ তাহার এই পাপ কর্মের সংবাদ জানিতে পারে এই ভয়ে সদাসর্বদা উৎকণ্ঠিত থাকে কিন্তু নীচতাপূর্ণ চিন্তাটি মন হইতে কোন মতেই ত্যাগ করিতে পারে না।
ঞ) পরছিদ্রান্বেষী-রোগী অন্যের কাজকর্মের সদাসর্বদা ছিদ্রান্বেষণ করে কিন্তু নিজের চলাচলের প্রতি অন্যের কোনপ্রকার কটাক্ষপাত সহ্য করিতে পারে না।
ট) ক্রোধান্ধতা ও অসন্তোষ- রোগীর মেজাজ ক্রোধে পরিপূর্ণ যাহা ঝড়বৃষ্টির সময় ও ঋতু পরিবর্তনের সময় আরও বৃদ্ধি পায়। বিনাকারণে বা সামান্য কারনে মনোমধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয় যাহা পরবর্তীতে মানসিক চাঞ্চল্যের রূপ পরিগ্রহ করে। ফলে অনুতাপের কষাঘাতে মনটি জর্জরিত হইয়া যায় এবং তখন রোগীর মনে আত্মহননের চিন্তাটি উদয় হয়।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা কর।
উত্তর: মহাত্মা ডাঃ হ্যানিমানের মতে সাইকোসিসগ্রস্ত রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুপ্ত অথবা বিকশিত এই উভয় অবস্থার যে কোন অবস্থায়ই রোগ ও রোগীর অতীত ইতিহাস, রোগীর বংশগত ইতিহাস এবং ব্যক্তিগত ইতিহাস সংগ্রহ করিয়া লক্ষণসমষ্টির সামগ্রিক চিত্রের ভিত্তিতে একটি সদৃশ এন্টিসাইকোটিক ঔষধ দ্বারা দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসা করিলে অতি সহজেই রোগ আরোগ্য হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখিতে হইবে নির্বাচিত ঔষধটি যেন রোগীর ধাতুগত লক্ষণের পরিবর্তন ঘটাইতে সক্ষম হয়। ইহার পরে এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা সমাপ্ত করিতে হইবে।
আবার সাইকোসিস যদি বিকশিত সোরার সহিত প্রকাশ পায় তাহা হইলে প্রথমেই এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা সোরা প্রশমন করিয়া পরে এন্টিসাইকোটিক ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করিতে হইবে এবং সাইকোসিস আরোগ্য হইলে অবশেষে এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা সমাপ্ত করিতে হইবে।
আর যদি সুপ্ত সোরা এবং বিকশিত সিফিলিসের সহিত সাইকোসিস প্রকাশ পায়, তাহা হইলে সিফিলিস ও সাইকোসিসের মধ্যে যেটি প্রকটরূপে বিরাজমান প্রথমেই সেটির চিকিৎসা করিতে হইবে এবং পরে দ্বিতীয়টির চিকিৎসা করিয়া সবশেষে এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করিতে হইবে।
কিন্তু যদি বিকশিত সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস একই রোগীর দেহে, একই সময়ে প্রকাশ পায় তাহা হইলে প্রথমে এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা সোরাকে প্রশমিত করিয়া পরে সিফিলিস ও সাইকোসিসের মধ্যে যে দোষটি প্রকটরূপে দৃষ্ট হইবে সে দোষটির চিকিৎসা করিতে হইবে। এইরূপে রোগের প্রাবল্যের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এন্টিমায়াজমেটিক চিকিৎসা করিয়া সবশেষে এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা রোগীর চিকিৎসাকার্য সম্পন্ন করিতে হইবে।
প্রশ্ন-সাইকোসিসের মস্তকের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের মস্তকের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) সাইকোসিসের বৃদ্ধি দিবাভাগে হইলেও সাইকোসিসের সহিত সোরার প্রাধান্যহেতু মস্তকের শীর্ষদেশে বা অগ্রভাগে ব্যথা, যাহা মধ্যরাত্রিতে বৃদ্ধি পায়।
খ) জ্বরভাবসহ শিররোগ, শুইয়া থাকিলে এবং মধ্যরাত্রির পরে বৃদ্ধি পায় কিন্তু সঞ্চালন করিলে হ্রাস পায় বলিয়া রোগী উহা করিতে চায়।
গ) শিরোঘূর্ণন মস্তকের ভূমিদেশ হইতে শুরু হয়।
ঘ) বৃত্তাকারে মস্তকের কেশপটন হইয়া টাক পড়ে।
ঙ) মস্তকের তালুতে ঘর্মসহ শুদ্ধ জাতীয় একপ্রকার চর্মরোগ দৃষ্ট হয়।
চ) মস্তকে সাইকোসিস দুষ্ট আঁচিল বা অর্বুদ উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন-সাইকোসিসের চক্ষুর লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।
উত্তর: সাইকোসিসগ্রস্ত রোগীর চক্ষুতে নানা প্রকার রোগ দৃষ্ট হয় যাহা ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে ও বর্ষার দিনে বৃদ্ধি পায়। চক্ষুতে ঘনপুঁজ জন্মায় এবং পুঁজ বাহির হয়।
সাইকোসিসে কর্ণিয়ার ক্ষত আছে। যুবকদিগের কর্ণিয়ার ক্ষত। শিশুদের দীর্ঘদিনের কর্ণিয়ার ক্ষত (যদি মূলে সিফিলিস ইতিহাস না থাকে)। বাতের সহিত চক্ষুর বিভিন্ন উপসর্গ। চক্ষু বেদনা প্রধানতঃ আর্দ্র আবহাওয়ায় ও বর্ষাকালে বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের নাসিকার লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।
উত্তরঃ নিম্নে সাইকোসিসের নাসিকার লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগীর নাসিকার ঘ্রাণশক্তি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হইয়া যায়।
খ) সর্দিজনিত কারণে নাসিকা সুড়সুড় করিবার সহিত ক্ষতবিহীন মৎস্য গন্ধযুক্ত স্রাব নির্গত হয়।
গ) নাসিকা হইতে সবুজাভ হলুদ বর্ণের স্রাবও অনেক সময় ইহাতে দৃষ্ট হয়।
ঘ) নাসিকা অভ্যন্তরস্থিত পাতলা অস্থিযুগলের প্রদাহজনিত নাসিকা বন্ধ হইয়া যায়।
ঙ) শরীরস্থ বিভিন্ন ঝিল্লীপথের অস্বাভাবিক স্রাবে যেমন নাসিকা হইতে প্রচুর জলবৎ সর্দিস্রাব বা স্ত্রীলোকদের শ্বেতপ্রদর স্রাব প্রভৃতি লক্ষণের মাধ্যমে নাসিকার রোগলক্ষণের উপশম সাধিত হয়।
চ) ধাতু বিশেষে সর্দির সহিত অসংখ্য হাঁচি থাকিতে পারে।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের মুখমণ্ডল ও মুখগহ্বরের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।
উত্তর: সাইকোসিস রোগীর মুখমণ্ডল দেখিতে শোথগ্রস্ত, মৃত ব্যক্তির ন্যায় পাংশু এবং নীলাভ। মুখাস্বাদ মাছের আঁইশের গন্ধযুক্ত অথবা বিস্বাদ।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের উদর বা পাকাশয়ের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের উদ্দ্র বা পাকাশয়ের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগী উদর বা পাকাশয়ে নানাপ্রকার রোগ যন্ত্রণায় ধনুকের ন্যায় সম্মুখ দিকে উপুড় বা নত হইয়া বাঁকিয়া যায় যাহা সজোরে চাপ দিলে উপশম বোধ করে।
খ) শিশু রোগী পানাহারের পরে একটি কষ্ট অনুভব করে এবং উপুড় হইয়া শুইলে, দ্রুত সঞ্চালনে বা চড়াচড়ায় উহা উপশম বোধ করে।
গ) মদ্যপায়ী মাত্রেই সাইকোসিস দোষে দুষ্ট। রোগীর মদ্যপানের এবং প্রচুর পরিমাণে কাঁচা লবণ খাইবার অভিলাষ থাকে। রোগী লবণাক্ত, ঝাল খাদ্যদ্রব্য, ঠাণ্ডা-গরম উভয় প্রকার খাদ্য বা পানীয় পছন্দ করে।
ঘ) উদরাময়ে অতিশয় বেগের সহিত মল নির্গত হওয়া এবং তলপেটে মোচড়ানি ও খামচানি বেদনাসহ নিম্নউদরের নানাপ্রকার পীড়া যথা-অর্শ ইত্যাদির প্রাধান্য থাকে।
ঙ) উদরের যে কোন রোগের সহিত রোগীর বিরক্তিভাব বিশেষভাবে পরিস্ফুট হইতে দেখা যায়।
প্রশ্ন- সাইকোসিস রোগীর খাদ্যপানীয়ে ইচ্ছা অনিচ্ছা লিখ। ইহার রোগীর পানাহারের বিধিনিষেধসমূহ কি কি?
উত্তর: সাইকোটিক রোগীতে মদ্যপানের এবং কাঁচা লবণ সেবনের দারুন স্পৃহা দেখিতে পাওয়া যায়। লবণাক্ত ঝাল খাদ্যদ্রব্য, ঠাণ্ডা গরম উভয় প্রকার খাদ্য বা পানীয় বিশেষ করিয়া গরম খাদ্য ও পানীয়, চর্বিযুক্ত মাংস, নারিকেল, সুপারী, সীম প্রভৃতি খাদ্যে অভিরুচি থাকে।
বিধিনিষেধ- মাংস পুরাতন ও সুপ্ত সাইকোসিসকে জাগাইয়া তোলে। তাই সাইকোসিস দোষদুষ্ট রোগীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। এই দোষের রোগীকে পথ্যাপথ্য বিষয়ে উপদেশ দেওয়ার সময় বলিয়া দিতে হয় যে, যে সকল খাদ্যে রোগযন্ত্রণা হ্রাস পায় তাহাই ভক্ষণযোগ্য।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিস রোগীর শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত যাবতীয় রোগ, যেমন নিউমোনিয়া, হাঁপানী, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি, কাশি প্রভৃতি সকল রোগ সামান্যতম আবহাওয়া পরিবর্তনে, মেঘবৃষ্টির দিনে, আর্দ্র আবহাওয়ায় বৃদ্ধি পায়।
খ) প্রচুর পরিমাণে শ্লেষ্মা নিঃসরণকারী হাঁপানী রোগে শেষ রাত্রিতে রোগী স্থিরভাবে শুইয়া বা বসিয়া থাকিতে পারে না।
গ) রোগী রাত্রিতে স্বাসকষ্টের অবস্থাতেই পায়চারী করিয়া বেড়াইতে বাধ্য হয়। আবার কখনও বা উপুড় হইয়া শুইলে শ্বাসকষ্টের সামান্য উপশম হয়।
ঘ) রোগীর উপর্যুপরি সর্দি হয় এবং সর্দি সহজে পাকিতে চায় না।
৩) মলত্যাগে হাঁপানীর কষ্ট সামান্য উপশম হয়।
চ) রোগী বক্ষস্থলে সূঁচ ফোটানো ব্যথা এবং নানাপ্রকার কনকনানিযুক্ত ও টাটানিপূর্ণ ব্যথা অনুভব করে এবং তাহা চাপনের বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের হৃদযন্ত্রের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।
উত্তর : নিম্নে সাইকোসিসের হৃদযন্ত্রের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) চাপা দেওয়া অপচিকিৎসায় বাতরোগ চাপা পড়িলে হৃদপিও আক্রান্ত হইয়া পড়ে এবং রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়।
খ) হৃদযন্ত্রের রোগে স্কন্ধদেশ হইতে হৃদপিণ্ড স্থান পর্যন্ত বা হৃদপিণ্ড হইতে ত্রিকোণাস্থি (স্ক্যাপুলা) পর্যন্ত একটি বেদনা অনুভব করে।
গ) হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত শ্বাসকষ্টে রোগী লাগাতার ভাবে কষ্ট পাইতে থাকা সত্বেও একপ্রকার শোথের কারণে দেহ জীর্ণশীর্ণ না হইয়া বরং স্কুল হইতে থাকে।
ঘ) রোগীর জন্মগত হৃদরোগ বা হৃদযন্ত্রের গঠনের অস্বাভাবিকতা দৃষ্ট হয়।
ঙ) আভ্যন্তরীক যান্ত্রিক পরিবর্তনের ফলে হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত শ্বাসকষ্টে হঠাৎ করিয়া হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইবার সম্ভাবনা থাকে।
চ) রোগীর হৃদপিণ্ডটি বড় হয় এবং স্কুল হয়।
ছ) তড়িৎ শক্তি প্রবাহের অনুভূতি বিশিষ্ট নানা প্রকার যন্ত্রণা হঠাৎ আসাযাওয়া করে।
প্রশ্ন- সাইকোসিস দোষদুষ্ট দেহে অস্বাভাবিক স্রাব কিসের ইংগিত বহন করে।
উত্তর : সাইকোসিস দোষদুষ্ট দেহে কোনও প্রকার মারাত্মক রোগ ভোগকালে যদি অস্বাভাবিক স্রাব যেমন-সর্দিস্রাব, কাশির শহিত প্রচুর পরিমাণে শ্লেস্মা নির্গমন, স্ত্রীলোকদের শ্বেতপ্রদর প্রভৃতি স্রাবের উদয় হয়, তাহা হইলে উহা নিরাপত্তার লক্ষণ এবং বুঝিতে হইবে উহা শুভলক্ষণ। আর যদি ঐ স্রাব চলিতে চলিতে হঠাৎ বন্ধ হইয়া যায় তাহা অশুভ পরিণতির পূর্বাভাষ জানিতে হইবে।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের গুহ্যদ্বার বা মলদ্বারের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের গুহ্যদ্বার বা মলদ্বারের লক্ষণাবলীর বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগীর পর্যায়ক্রমে উদরাময় ও আমাশয় দেখা দেয় এবং উহার সহিত গুহ্যপথে একটি শূলব্যথায় রোগী এত কষ্ট পায় যে ব্যথার চোটে রোগী ক্রন্দন করিতে বাধ্য হয়।
খ) রোগীর অস্ত্র সংক্রান্ত যাবতীয় রোগলক্ষণে ভীষণতা ও তীব্রতা সুনিশ্চিত ভাবেই বর্তমান থাকে।
গ) উদরাময়ের মল ক্যামোমিলা ও ক্রোটন টিগের ন্যায় তীব্রবেগে নির্গত হইয়া অনেক দূরে ছিটকাইয়া পড়ে।
ঘ) শিশু রোগী প্রায়ই উদরাময়ে বিশেষ কষ্ট পায়, যাহা তলপেটে চাপ দিলে উপশমবোধ করে বা রোগী উপুড় হইয়া শয়ন করিতে চায়।
ঙ) রোগী তাড়াতাড়ি পায়খানায় ছুটিয়া যাইতে বাধ্য হয়। নতুনা বেগ ধারণ করা অসহ্য।
চ) মলের রং পরিবর্তনশীল, সময়ে সময়ে, সবুজাভ, হলদে, তরল, টকগন্ধযুক্ত ও ক্ষতকারী হইবার ফলে রোগীর মলদ্বার হাজিয়া যায়।
ছ) মলদ্বারের অর্শ, ভগন্দর যে কোন রোগেই তীব্রতা ও ভীষণতার জন্য রোগীর দারুন ব্যাকুলতা এবং একটা বিরক্তিকর ভাব বিদ্যমান থাকে।
খ) রোগীর অস্ত্র সংক্রান্ত যাবতীয় রোগলক্ষণে ভীষণতা ও তীব্রতা সুনিশ্চিত ভাবেই বর্তমান থাকে।
গ) উদরাময়ের মল ক্যামোমিলা ও ক্রোটন টিগের ন্যায় তীব্রবেগে নির্গত হইয়া অনেক দূরে ছিটকাইয়া পড়ে।
ঘ) শিশু রোগী প্রায়ই উদরাময়ে বিশেষ কষ্ট পায়, যাহা তলপেটে চাপ দিলে উপশমবোধ করে বা রোগী উপুড় হইয়া শয়ন করিতে চায়।
ঙ) রোগী তাড়াতাড়ি পায়খানায় ছুটিয়া যাইতে বাধ্য হয়। নতুনা বেগ ধারণ করা অসহ্য।
চ) মলের রং পরিবর্তনশীল, সময়ে সময়ে, সবুজাভ, হলদে, তরল, টকগন্ধযুক্ত ও ক্ষতকারী হইবার ফলে রোগীর মলদ্বার হাজিয়া যায়।
ছ) মলদ্বারের অর্শ, ভগন্দর যে কোন রোগেই তীব্রতা ও ভীষণতার জন্য রোগীর দারুন ব্যাকুলতা এবং একটা বিরক্তিকর ভাব বিদ্যমান থাকে।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের মূত্রযন্ত্রের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের মূত্রযন্ত্রের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) প্রস্রাব ত্যাগকালে তীব্র যন্ত্রণা, শিশু রোগী যন্ত্রণায় চীৎকার করে।
খ) মূত্রনালী সংকুচিত হয় এবং মূত্রযন্ত্রে নানা প্রকার আঁচিলের আবির্ভাব ঘটে।
গ) মূত্রকৃচ্ছতা লক্ষণ ইহাতে যথেষ্ট বর্তমান থাকিলেও বর্ষার দিনে প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব নির্গত হওয়া এই দোষের একটি অদ্ভূত লক্ষণ।
ঘ) ইহার শিশু রোগী ঘুমের ঘোরে মূত্রত্যাগকালে একপ্রকার অস্বস্তি ও যন্ত্রণায় ঘুম ভাঙ্গিয়া যায়।
ঙ) শর্করা মিশ্রিত বহুমূত্র এবং মূত্রের সহিত এলবুমেন নির্গত হওয়া টিউবারকুলার দোষজ হইলেও যে ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা মারাত্মক হয় সেখানে টিউবারকুলার দোষটি সাইকোসিসের প্রাধান্যযুক্ত থাকে।
চ) হাইড্রোসিল বা হাইড্রোসিল জনিত লক্ষণসমূহ দেখা দেয়।
ছ) মূত্রথলীতে পাথুরী, মূত্রকোষের নানাপ্রকার কষ্টসহ অন্যান্য রোগলক্ষণ কিছুদিনের জন্য আরাম হইয়া পুনরায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় বা মারাত্মক আকার ধারণ করে।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের চর্ম বা ত্বকের লক্ষণাবলীর বর্ণনা করা।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের চর্ম বা ত্বকের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) ক্ষুদ্র ও চ্যাপ্টা আকৃতির লালবর্ণের নানা প্রকার উদ্ভেদ যাহা সহজে পাকিতে চায় না, বিশেষতঃ স্ত্রীলোকদের ঋতুস্রাবের সময় প্রায়ই এইগুলি দৃষ্ট হয়।
খ) দেহের বিভিন্ন স্থানে ডুমুর বা ফুলকপির ন্যায় আঁচিল বিশেষতঃ জননেন্দ্রিয় প্রদেশের ত্বকে দৃষ্ট হয়।
গ) বসন্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বা বসন্ত রোগের গুটি বাহির হওয়া।
ঘ) হার্পিস, বিসর্প জাতীয় চর্মরোগ হওয়া। দাড়ির দাদ, মস্তক ত্বকের দাদ, বিশেষতঃ দাদের ফলে মাথায় চুল পড়িয়া যায়।
ঙ) কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে অস্ত্রোপচার করিলে ক্ষতটি নিরাময় হয়, কিন্তু ক্ষতের সংযোগস্থলে একটি মাংসবৃদ্ধির প্রবণতা বিদ্যমান থাকে।
চ) টিকা লইবার ফলে কোন প্রকার উদ্ভেদের উদ্ভব হওয়া।
ছ) নাপিতের ক্ষুরের বিষজনিত উদ্ভেদ ও যে কোন প্রকার মাংস বৃদ্ধি সাইকোসিসের চর্মরোগের পরিচায়ক লক্ষণ।
জ) চর্ম চকচকে ও মসৃন। মুখের চর্ম তৈলাক্ত, কড়া, গাত্রচর্মের বর্ণের নানা বিকৃতি স্থানে স্থানে বা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়িয়া দৃষ্ট হয়।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের নখের লক্ষণাবলী লিখ।
উত্তর: নখের উপর সাইকোসিসের বিশেষ ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। যেমন নখগুলি ভঙ্গুর, অসম, পুরু বা বিবর্ণ হইয়া যায়। লম্বালম্বি উঁচু রেখাযুক্ত, ভারী বিকৃত ও কুগঠিত নখ সাইকোসিসে দৃষ্ট হয়। নখের মধ্যে সূঁচ ফোটানো ব্যথা ও স্পর্শকাতরতা বিদ্যমান থাকে এবং নখকুনি সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন- সাইকোসিসগ্রস্ত রোগীর স্মৃতিশক্তি সংক্রান্ত লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসগ্রস্ত রোগীর স্মৃতিশক্তি সংক্রান্ত লক্ষণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) রোগী স্মৃতিশক্তিহীন বা রোগীর স্মৃতিশক্তি বিষয়ক একপ্রকার আশ্চর্য রকমের দুর্বলতা বিদ্যমান থাকে।
খ) রোগী সাম্প্রতিক কালের ঘটনাবলী বিস্মৃত হয় কিন্তু বহুদিন পূর্বেকার ঘটনাবলী যথার্থ মনে রাখিতে পারে।
গ) আত্মীয় পরিজনের বা পরিচিতজনের নাম ঠিকানা, কোন গুরুত্বপূর্ণ ঠিকানা কিংবা কোন গুরুত্বপূর্ণ কার্যের তারিখ বিস্মৃত হয়।
ঘ) কাহারও সহিত কথা বলিতে বলিতে কথার সূত্র বা খেই হারাইয়া ফেলে এবং শ্রোতাকে জিজ্ঞাসা করে কি বলিতেছিলাম যেন।
ঙ) রোগীর বিস্মৃত ঘটনা একটু স্মরণ করাইয়া দিলেই পুনরায় নিজের মন হইতেই যথার্থ বর্ণনা করিতে পারে।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের প্রান্তদেশীয় লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
বা, সাইকোসিসের হস্তপদের বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের প্রান্তদেশের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগীর নানা প্রকারের বাত বা বাতজাতীয় রোগ দৃষ্ট হয়।
গ) রোগী হস্তপদের প্রান্তদেশসমূহের অসাড়তা বা শক্তিহীনতা অনুভব করে।
গ) অস্থি আবরণে বা দীর্ঘাস্থিতে বেদনা বিশ্রামে, ঝড়ের পূর্বে, বর্ষায়, ভিজা আবহাওয়ায় বৃদ্ধি এবং নড়াচড়ায়, টিপিয়া দিলে ও শুষ্ক আবহাওয়ায় উপশম।
ঘ) হস্তপদের প্রান্তদেশীয় পেশীসমূহ সামান্য রকমের পরিশ্রমও সহ্য করিতে পারে না। হস্তপদদ্বয়ে সামান্য পরিশ্রমে অতিশয় ক্লান্তি অনুভব করে।
ঙ) রোগী পদ চালনা করিতে করিতে বা লিখিতে লিখিতে হস্তপদ মোঁচড়াইয়া বা আড়ষ্ট হইয়া যায়।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের পুংজননেন্দ্রিয়ের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের পুংজননেন্দ্রিয়ের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগীর মনটি সর্বদাই জননেন্দ্রিয়ের উপর পড়িয়া থাকে এবং সর্ব সময়েই রোগী ঐ যন্ত্রটি পরীক্ষা করিতে থাকে।
খ) রোগীর অণ্ডকোষে প্রদাহ, হাইড্রোসিল প্রভৃতি দৃষ্ট হয়।
গ) মূত্রকোষে বা মূত্রথলীতে পাথুরী জন্মে।
ঘ) বিনাকারণে লিঙ্গোচ্ছাস ঘটে।
ঙ) হস্তমৈথুনের অদ্যম অভিলাষ হয়।
উল্লেখ্য যে, পুংজননেন্দ্রিয়ের যে কোন রোগলক্ষণের সহিত সাইকোসিসের মানসিক লক্ষণ যথা-গোপনপ্রিয়তা, সন্দিগ্ধ চিত্ততা, অন্যমনস্কতা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, প্রতিহিংসাপরায়নতা, ক্রোধান্ধতা এবং বিরক্তিরভাব অবশ্যই বিদ্যমান থাকে।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
বা, সাইকোসিস ধাতুযুক্ত স্ত্রীলোকদের ঋতুস্রাবের গোলযোগ সংক্রান্ত লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিসের স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগী সর্বদাই তাহার মনটিকে জননেন্দ্রিয়ের প্রতি নিবন্ধ রাখে এবং সময় পাইলেই প্রতিদিন সে বেশ কয়েকবার যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করিয়া দেখে।
খ) জরায়ু, ডিম্বাধার ও ডিম্বনালীর প্রদাহ।
গ) ইহার স্রাব তীব্র, হাজাজনক ও ক্ষতকারী, যে কারণে রোগিনী অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়ে।
ঘ) ঋতুকালীন আক্ষেপিক ধরনের ও শূল বেদনার ন্যায় বেদনা। ঋতুকালীন বাতজ বেদনাও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
৬) ঋতুস্রাবের সময় ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ হয় এবং স্তনে ব্যথা হয়।
চ) সাইকোসিসের স্রাব বড় বড় ক্লট বা বড় সাইজের ডেলাযুক্ত, মৎস্যপচা গন্ধযুক্ত জমাট বাঁধা। স্রাব টানিলে তারের ন্যায় লম্বা হয় এবং উহা কালচে বর্ণের। ইহার সহিত সার্বদৈহিক দুর্বলতা ও মানসিক নৈরাশ্য বিদ্যমান থাকে।
ছ) ঋতুস্রাব কাপড়ে লাগিলে ধুইলেও দাগ সহজে উঠিতে চায় না, কিছু থাকিয়া যায়।
জ) নানা প্রকার ঋতু বিশৃঙ্খলার সহিত যোনীপথে চুলকানি ও বন্ধ্যাত্ব দোষ দৃষ্ট হয়।
উল্লেখ্য স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের যে কোন লক্ষণের সহিত সাইকোসিসের মানসিক লক্ষণসমূহ যথা-গোপনপ্রিয়তা, সন্দিগ্ধচিত্ততা, অন্যমনস্কতা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, প্রতিহিংসাপরায়নতা, ক্রোধান্ধতা এবং বিরক্তির ভাব অবশ্যই বিদ্যমান থাকে।
প্রশ্ন- সাইকোসিস জনিত শ্বেতপ্রদরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তর: সাইকোসিসের শ্বেতপ্রদরের স্রাব পাতলা, তীব্র, যে সমস্ত স্থান দিয়া নিঃসৃত হয় উহা জ্বালা উৎপাদন করে। ময়লা জলের ন্যায়, সবুজাভ হরিদ্রাবর্নের স্বল্প, আঁটসে গন্ধযুক্ত বা.পচা মাছের গন্ধযুক্ত। যোনীপথে চুলকানি দেখা দেয়। সাইকোসিস দোষজনিত প্রদর স্রাবে সার্বদৈহিক দুর্বলতা, এবং মানসিক দুর্বলতা ও নৈরাশ্য প্রবলভাবে দেখা দেয়। ইহার সহিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গোপনতা, সন্দিগ্ধচিত্ততা, অন্যমনস্কতা, স্মৃতিশক্তির অভাব, হিংসার ভাব ও ক্রোধ বা বিরক্তি অবশ্যই বর্তমান থাকা চাই।
প্রশ্ন- সাইকোসিস দোষজনিত কোনও অস্বাভাবিক স্রাব চাপা দিলে বা লুপ্ত হইলে কি কি কুফল দেখা দেয়।
উত্তর: সাইকোসিস দোষের ফলস্বরূপ শরীরের কোন অস্বাভাবিক স্রাব লুপ্ত করিলে বা চাপা দিলে এই দোষটি রোগের সূচনাকালে যে শক্তিতে শরীরে ক্রিয়াশীল ছিল তাহা অপেক্ষা শতগুণ শক্তি সম্পন্ন হইয়া উঠে। সাইকোসিস দোষদুষ্ট দেহে সাধারণ সর্দিস্রাব বন্ধ করিলে নিউমোনিয়া, স্ত্রীলোকদের প্রদরস্রাব বন্ধ করার ফলে জরায়ুর আবরক চর্মের প্রদাহ, আবার ভগন্দর বা অর্শপীড়া অস্ত্রোপচার করিলে বা বাত রোগ চাপা দিলে হৃদপিণ্ড বা ফুসফুস আক্রান্ত হইতে পারে এবং ঐ প্রকার চাপা দেওয়া চিকিৎসার ফলে পরবর্তী বংশরধরদের দেহে এই দোষটি অতি সূক্ষ্ম শক্তিতে ক্রিয়াশীল থাকিয়া জরায়ুর ক্যান্সার, মূত্রকোষের পীড়া এবং শ্লৈষ্মিক বিল্লিীসমূহের প্রদাহ তাহাদের মধ্যে বিকাশ লাভ হইতে দেখা যায়।
প্রশ্ন- সাইকোসিস অর্জনকারী পিতামাতার সন্তান সম্ভতিদের শারীরিক ও মানসিক বিকৃতিগুলি কি কি?
বা, সাইকোসিস দুষ্ট শিশু রোগীর রোগলক্ষণগুলির বর্ণনা দাও।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিস অর্জনকারী পিতামাতার সন্তানদের রোগলক্ষণ তথা শারীরিক ও মানসিক বিকৃতিগুলি বর্ণনা করা হইল।
ক) পুত্রকন্যাদের শরীরে সাইকোসিস বিষ প্রবাহিত থাকিলে তাহাদের নিউমোনিয়া, রক্তশূণ্যতা এবং শিশু কলেরার লক্ষণসমূহ বিকাশ লাভ করে।
খ) সাইকোটিকের সর্বক্ষেত্রেই অসমন্বয়, অনভিপ্রেত অঙ্গবৃদ্ধি দেখা দেয়। দেহের বিভিন্ন অংশে কলার শুষ্কতা ঘটাইয়া শিশু খর্বাকৃতি, অণ্ডকোষ প্রদাহ, গেঁটে বাত, নেফ্রাইটিস, প্রভৃতি দেখা দেয়।
গ) শিশু জন্মের প্রথম বা দ্বিতীয় বৎসরের গ্রীষ্মকালে ম্যারাসমাস বা ক্ষয়রোগগ্রস্ত হইয়া পড়ে। কিংবা জীর্ণশীর্ণ বা রিকেট রোগে কষ্ট পাইতে থাকে।
ঘ) শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে না, স্থূলবুদ্ধি বা হাবাগোবা প্রকৃতির হয়।
ঙ) শিশুর মুখমণ্ডল দেখিতে বৃদ্ধের ন্যায়, মুখে ক্ষত ও দুর্গন্ধ, লালাস্রাব হয়।
চ) গাল ও গলার গ্ল্যাণ্ডগুলি স্ফীত ও শক্ত হয়।
ছ) শিশু রক্তশূণ্য হইয়া মোমের ন্যায় দেখায়।
জ) মূত্রযন্ত্রের নানা রোগে রোগী প্রস্রাব করিবার সময় তীব্র যন্ত্রণায় চীৎকার দিয়া কাঁদে।
ঝ) হজমশক্তির নানাপ্রকার গোলযোগ উপস্থিত হয়। পর্যায়ক্রমে অজীর্ণ উদরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতা দেখা দেয়। মলদ্বারের শূল ব্যথার যন্ত্রণায় রোগী কান্না করে।
প্রশ্ন- সাইকোসিস ধাতুযুক্ত শিশুদের অস্ত্র সংক্রান্ত লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিস ধাতুযুক্ত শিশুদের অস্ত্র সংক্রান্ত লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) শিশু রোগী অস্ত্রসংক্রান্ত নানাপ্রকার রোগযন্ত্রণায় ধনুকের ন্যায় সামনের দিকে উপুড় বা নত হইয়া বাঁকিয়া যায়, যাহা সজোরে চাপ দিলে উপশমবোধ করে।
খ) রোগী পানাহারের পরে একপ্রকার কষ্ট অনুভব করে, যাহা উপুড় হইয়া শুইলে, দ্রুত সঞ্চালনে বা দ্রুত নড়াচড়ায় উপশম বোধ করে।
গ) উদরাময়ে অত্যন্ত বেগের সহিত মল নির্গত হয়। এই সময়ে নিম্নোদরে খামচানী ও মোচড়ানির ন্যায় ব্যথা হইতে থাকে। কিছুক্ষণ অন্তর ঐ ব্যথা আসা যাওয়া করে এবং সজোরে প্রচাপনে উহা উপশম বোধ করে।
ঘ) অস্ত্রের যে কোন রোগের সহিত রোগীর মুখমণ্ডলে একপ্রকার বিরক্তির ভাব বিশেষরূপে পরিস্ফুটিত থাকে।
ঙ) অস্ত্রের নানা প্রকার রোগলক্ষণের সহিত রোগী প্রচুর পরিমাণে
কাঁচালবণ, লবণাক্ত খাদ্য-পানীয়, ঝালখাদ্যদ্রব্য এবং ঠাণ্ডা গরম উভয় প্রকার খাদ্য বা পানীয় পছন্দ করে।
প্রশ্ন- 'সাইকোসিস দুষ্ট রোগী রাতের পূজারী'-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সাইকোসিস মায়াজম দুষ্ট রোগী রাতের অন্ধকারে বা রাতের প্রকৃতিতে তাহার সকল প্রকার রোগলক্ষণের উপশম বোধ করে। কিন্তু দিনের আলোয় বা দিনের প্রকৃতিতে তাহার সকল রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পর হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সাইকোসিস দুষ্ট রোগীর সকল প্রকার রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায় বলিয়া সে রোগ যন্ত্রণা উপশমের অধীর আগ্রহে রাতের জন্য অপেক্ষা করে বলিয়াই তাহাকে রাতের পূজারী বলা হয়।
প্রশ্ন- সাইকোসিস দুষ্ট রোগী সনাক্ত করিবার উপায়সমূহ উল্লেখ কর।
উত্তর: নিম্নে সাইকোসিস দুষ্ট রোগী সনাক্ত করিবার উপায়সমূহ উল্লেখ করা হইল।
ক) রোগী রক্তশূন্যতায় ভুগিবার ফলে মুখমণ্ডল মলিন ও মোমের ন্যায় ফ্যাকাশে বর্ণের দেখায়।
খ) রোগীর ঠোঁট মলিন ও কর্ণের লতি স্বচ্ছ।
গ) নাসিকা রক্তিম বর্ণের, তাহাতে কৈশিক নালী সুস্পষ্ট দেখা যায়।
ঘ) নাসিকার পর্দা পুরু হইয়া যায় এবং ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পায়।
ঙ) নাসিকার অস্থিবৃদ্ধি পাইবার ফলে প্রায়ই নাসিকা বন্ধ হইয়া যায়।
চ) দেহে অতিরিক্ত কেশ থাকে এবং তাহা অকালে পাকে।
ছ) দেহের বিভিন্নস্থানে আঁচিল বা অর্বুদ দেখা দেয় এবং ত্বকে লালচে দাগ পড়ে।
জ) গাল, গলা ও ঘাড়ের গ্লান্ড স্ফীত ও শক্ত হয়।
ঝ) ঋতুস্রাব আসটে বা মিষ্টি গন্ধ থাকে।
ঞ) রোগীর প্রধান যন্ত্রসমূহ, যেমন-লিভার, কিডনী ও হৃদপিণ্ড ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়।
প্রশ্ন- সাইকোসিসের হ্রাস বৃদ্ধি লিখ।
উত্তর: সাইকোসিসগ্রস্ত রোগীর সর্বপ্রকার রোগলক্ষণ বা কষ্টসমূহ বিশ্রামে, ভিজা ঠাণ্ডায়, বর্ষাকালে ও সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে বৃদ্ধি পায় এবং সঞ্চালনে, শীতকালে, শুষ্ক আবহাওয়ায় ও সূর্যাস্ত হইতে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ে হ্রাস পায়।
প্রশ্ন- কি কি লক্ষণের ভিত্তিতে স্বামী ও স্ত্রীদেহে সাইকোসিস দোষ নির্ণয় করা যায়?
বা, নির্দোষ স্ত্রীদেহে স্বামী হইতে প্রাপ্ত সাইকোসিস দোষের বর্ণনা দাও।
উত্তর: কোন স্ত্রীলোকের রোগীলিপি সংগ্রহ করিয়া যদি দেখিতে পাওয়া যায় যে বিবাহের পূর্বপর্যন্ত তাহার স্বাস্থ্য বেশ ভালই ছিল, উল্লেখযোগ্য কোনপ্রকার রোগলক্ষণ বর্তমান ছিল না, এমনকি তাহার বংশগত ইতিহাসও নির্মল। কিন্তু বিবাহের এক দেড় বৎসর পর হইতেই তাহার স্বাস্থ্যভঙ্গ শুরু হইল, আজ ঋতুস্রাবের অল্পতা, কাল অত্যধিক স্রাব বা স্রাবের অল্পতাজনিত নানাপ্রকার কষ্ট। আবার কোন কোন সময়ে শ্বেতপ্রদর, সর্দি কাশি, সারা দেহে ব্যথা, এইভাবে দিনের পর দিন, একটির পর একটি উপসর্গ চলিতেই থাকে। এই অবস্থায় বুঝিতে হইবে যে তাহার স্বামীদেহে সাইকোসিস দোষ বিদ্যমান রহিয়াছে এবং তাহার দেহে স্বামীদেহ হইতে সাইকোসিস দোষ সংক্রামিত হইয়াছে।
প্রশ্ন-২০০। সিফিলিস ও গনোরিয়াকে যৌনরোগ বলা হয় কেন?
উত্তর: যৌনমিলনের ছাড়া বা যৌনমিলনের ইতিহাস না থাকিলে সিফিলিস ও গনোরিয়া সৃষ্টি হইতে পারে না। সিফিলিস ও গনোরিয়া রোগ যৌন মিলনের দ্বারা একদেহ হইতে অন্য দেহে সংক্রামিত হয় বলিয়া সিফিলিস ও গনোরিয়াকে যৌনরোগ বলা হয়।
প্রশ্ন- যদিও গনোরিয়া সাইকোসিস নয়, তবুও উহা চাপা দিলে রোগীকে সাইকোসিসে রূপান্তরিত করিতে পারে-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নারী ও পুরুষের অনৈতিক যৌন মিলনের ফলে গনোকক্কাস নামক একপ্রকার জীবাণুর দূষিত স্রাব হইতে সৃষ্ট সংক্রামক যৌনরোগ যাহা পুরুষ হইতে নারীতে, নারী হইতে পুরুষে অর্জিত আকারে বিস্তার লাভ করিয়া শুধুমাত্র পুরুষ ও স্ত্রীজননেন্দ্রিয় পথে একটি জ্বালাজনক স্রাব এবং ক্ষত বা ক্ষয় লক্ষণের সৃষ্টি করে তাহাকে গনোরিয়া বলে। অর্থাৎ ইহা পাপ কার্যের ফল এবং দূষিত যৌন সংসর্গের ফলরূপেই আসিয়া থাকে। সোরা দোষজনিত দূষিত সংসর্গ করিবার আকাংখা এবং উক্ত আকাংখা চরিতার্থ করিবার জন্য দূষিত সংসর্গ গমনহেতুই এই গনোরিয়া নামক দূষিত রোগের সৃষ্টি হয়।
প্রকৃতির মতে পাপকার্য মাত্রেরই প্রায়শ্চিত্তের বিধান রহিয়াছে। এই প্রায়শ্চিত্ত সাধারণত কষ্টভোগের মধ্য দিয়াই আসিয়া থাকে। কিন্তু ব্যক্তি যদি পাপকার্য করিলাম অথচ প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করিব না এই আশা, পোষন করিয়া পুনরায় পাপকার্যের মাত্রাটি বৃদ্ধি করিবার জন্য গোপনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হইয়া দুই চারটি পেনিসিলিন ইনজেকশান লইয়া দূষিত স্রাবটিকে সত্বর বন্ধ করিয়া দেয় তাহা হইলে গনোরিয়া রোগটি আরোগ্যের পরিবর্তে নিশ্চিতরূপে চাপা পড়ে। তখন আরোগ্যের স্বাভাবিক গতি পথটি কৃত্রিম উপায়ে বন্ধ হইয়া যায়।
এই প্রকার কার্য ও চিন্তা হইতে গোপনতা নামক আর এক প্রকার মানসিক পঙ্কিলতার সৃষ্টি হয়। এই গোপন করিবার অভিলাষটিই সাইকোসিস দুষ্ট রোগীর মনের প্রথম প্রতিচ্ছবি এবং তখন হইতেই উক্ত দেহে সাইকোসিস দোষের সূচনা হইল জানিতে হইবে। অর্থাৎ এই গোপনতার পশ্চাতে নীচতাপূর্ণ সংসর্গের ইতিহাস থাকায় সর্বক্ষণের জন্য সাইকোসিসদুষ্ট রোগীর মনে ভীতি ও সন্দেহের ভাব বর্তমান থাকে। রোগী ভাবে যে তাহার এই অন্যায় কাজটি এই বুঝি লোকে জানিয়া গেল। ঠিক এইভাবেই গনোরিয়া চাপা দেওয়ার ফলে তাহা সাইকোসিস ধাতুযুক্ত দোষের রূপ পরিগ্রহ করে।
উপরোক্ত ব্যাখ্যায় ইহাই নিঃসন্দেহে প্রতীয়মান হয় যদিও গনোরিয়া সাইকোসিস নয় তবুও উহা চাপা দিলে রোগীকে সাইকোসিসে রূপান্তরিত করিতে পারে বা সাইকোসিসে রূপ নিতে পারে।
প্রশ্ন- 'চির উপবিষসমূহের মধ্যে সাইকোসিস সর্বাপেক্ষা মারাত্মক'-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: চিরউপবিষ সমূহকে ডাঃ হ্যানিমান তিনভাগে ভাগ করিয়াছেন-সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস উপবিষ। ইহাদের মধ্যে অযৌন চিররোগ সোরা দোষ হইতে উৎপন্ন হয়। সোরা কুমননের ফল। কুচিন্তা হইতে কুকার্যের প্রবৃত্তি জাগে। এই কুকার্যের ফল হইল সিফিলিস ও সাইকোসিস। সিফিলিস ও সাইকোসিস যৌনব্যাধি। তন্মধ্যে সাইকোসিস হইল সর্বাপেক্ষা মারাত্মক। কারণ সাইকোসিস বিষ রোগীর ধাতুতে নিবিড়ভাবে মিলিয়া যায়। এই বিষ যে স্তরে রোগীতে বর্তমান থাকে সেই স্তরেই পরবর্তী ব্যক্তিতে সংক্রামিত হয়।
সাইকোসিস মায়াজম মানুষের মনকে খুব নীচু স্তরে নামাইয়া নিয়া আসে। হিংসা, সন্দেহপ্রবণ, ঝগড়া বিবাদের প্রবৃত্তি সৃষ্টি করে। এই মায়াজমই অতি ভয়ংকর রকমের নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন মানুষ সৃষ্টি করে এবং মানুষকে একটি অধঃপতিত জীবে পরিণত করে। সাইকোসিস মনুষ্যত্বকে নষ্ট করে, বুদ্ধিবৃত্তি বদলাইয়া দেয়, চিন্তা ও বিচার শক্তির বিকৃতি ঘটাইয়া তাহাকে উন্মাদ করার চেষ্টা করে। মানুষ মিথ্যাবাদী, দুষ্ট ও পাপীতে পরিণত হয়। ইহা ছাড়া সাইকোসিস দেহের আভ্যন্তরীণ যন্ত্রসমূহ বিশেষতঃ যৌনাঙ্গ কিডনী লিভার হৃদপিণ্ড প্রভৃতির বিকৃতি ঘটায় ও গঠনগত পরিবর্তন সাধন করে, রক্ত কণিকা ধ্বংস করিয়া দেয়।
তিনটি উপবিষের মধ্যে সাইকোসিসই রোগীর সত্ত্বার সাথে এমনভাবে মিলিয়া যায় যে, এই দোষটি আরোগ্যের গতিকে খুবই মন্থর করিয়া দেয়, যেন ক্রমশঃ আরোগ্যাতীত অবস্থার দিকেই তার গতি। মায়াজমের এই ধ্বংসমূলক প্রকৃতি দ্বারাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সকল উপবিষসমূহের মধ্যে সাইকোসিস সর্বাপেক্ষা মারাত্মক।
প্রশ্ন- সাইকোসিস দোষ হইতে কি কি রোগ লক্ষণের আবির্ভাব হয়?
বা, সাইকোসিস দোষ হইতে উৎপন্ন কয়েকটি রোগের নাম উল্লেখ কর।
উত্তর: সাইকোসিস দোষ হইতে রোগীদেহের যাবতীয় ছিদ্র পথ হইতে যন্ত্রণাদায়ক স্রাব, স্রাব সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা ও ব্যথা, যন্ত্রণাদায়ক স্বরভঙ্গ, কাশি, হৃদপিণ্ডের দুর্বলতাজনিত শ্বাসকষ্ট, হৃদপিণ্ডের যাতনা ও স্নায়বিক দুর্বলতা, শুষ্কজাতীয় হাঁপানী, হুপিং কাশি, মেরুমজ্জায় যন্ত্রণাযুক্ত স্থায়ী প্রদাহ, মস্তিষ্ক আবরক ঝিল্লী প্রদাহ, বাত, বসন্ত, স্নায়ুশূল, উদর শূল, হার্পিস, ছোট ছোট পূঁজহীন ব্রণ, অকারণে লিঙ্গোচ্ছাস, যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব, গর্ভস্রাব, গর্ভাবস্থায় বা প্রসবকালীন মূর্ছা ও খিচুনী, ভ্যাদাল ব্যথা, ইত্যাদি রোগলক্ষণের আবির্ভাব হয়।
প্রশ্ন- এন্টি সাইকোটিক ঔষধ কাহাকে বলে? দশটি এন্টিসাইকোটিক ঔষধের নাম লিখ।
উত্তর: যে সকল ঔষধ সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রয়োগ করিলে সাইকোসিসের রোগলক্ষণসমূহের প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করিতে পারে এবং সাইকোটিক মায়াজম দুষ্ট ব্যক্তির দেহে প্রয়োগ করিলে উহা সমূলে নিরাময় করিতে পারে সে সকল ঔষধসমূহকে এন্টি সাইকোটিক ঔষধ বলে। যেমন-আর্সেনিক এলবাম, কষ্টিকাম, কেলি সালফ, টিউবারকুলিনাম, থুজা, নেট্রাম মিউর, পাইরোজেনিয়াম, মেজেরিয়াম, মেডোরিনাম এবং লাইকোপোডিয়াম।
প্রশ্ন- মায়াজম সনাক্ত করিবার নিয়ম কি?
উত্তর: রোগী লিপির প্রেক্ষিতে রোগী যদি নিশ্চিতরূপে সাইকোসিস মায়াজম দুষ্ট হয় তাহা হইলে তাহার আভ্যন্তরীন যন্ত্রসমূহের ক্রিয়া কলাপে একটি নিষ্ক্রিয় অবস্থা দৃষ্ট হয়। রোগীর খাদ্য খাবারে অরুচি থাকে, বয়স অনুসারে দেহের ক্ষয়পূরণ ও পুষ্টিসাধন হয় না। রোগী দিন দিন রক্তহীন ও দুর্বল হইতে থাকে। চিকিৎসকের শত আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও রোগারোগ্য ক্রিয়া বারবার পশ্চাৎদিকে মোড় নেয় এবং শীঘ্রই রোগীর লিভার, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, কিডনী ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রসমূহ রোগাক্রান্ত হয়।
আবার যদি রোগী সিফিলিস মায়াজম দুষ্ট হয় তাহা হইলে তাহার মস্তকের অল্প পরিসর স্থান হইতে গোছায় গোছায় কেশপতন ঘটিয়া গোলাকৃতির টাক পড়িবে। রোগীর বৃদ্ধির নিষ্প্রভ হইয়া আসিবে, যান্ত্রিক ক্ষয়ক্ষতি এবং আলসার দেখা দিবে।
কিন্তু যদি এই সকল লক্ষণসমূহ সুষ্পষ্ট না হয় এবং রোগী হৃতস্বাস্থ্য পুনরায় ফিরিয়া না পায় তাহা হইলে বুঝিতে হইবে যে, উক্ত রোগীর দেহে সোরা বিষ ক্রিয়াশীল রহিয়াছে।
উপরিউক্ত পন্থায় ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে মায়াজম সনাক্ত করিয়া চিকিৎসা না করিলে যেমন রোগারোগ্য সম্ভব নহে, ঠিক তেমনি আদর্শ চিকিৎসকের ব্যক্তিত্ব এবং হোমিওপ্যাথির পূর্ণমর্যাদা রক্ষা করাও সম্ভব নয়।
0 মন্তব্যসমূহ