সিফিলিস - ‍Syphilis, ক্রনিক ডিজিজ, চতুর্থ অধ্যায় - চতুর্থ বর্ষ


সিফিলিস - ‍Syphilis

চতুর্থ অধ্যায়








 






প্রশ্ন-  সিফিলিস দোষ বা সিফিলিস মায়াজম কাহাকে বলে?

উত্তর: মহাত্মা হ্যানিমান আবিষ্কৃত তিনটি চির উপবিষের একটি হইল সিফিলিস। ইহার অপর নাম উপদংশ বিষ। দূষিত সংগমের মাধ্যমে সংক্রামিত হইয়া এই মারাত্মক যৌন কলংক যখন উপদংশিক ক্ষতরূপে জননেন্দ্রিয়ে প্রকাশিত হয়, অসমবিধান মতে ঐ ক্ষত বা রোগ চাপা দিলে রোগটি আর রোগাবস্থায় না থাকিয়া দোষের আকারে পরিগ্রহ হইয়া যে বিষ সৃষ্টি করে তাহাকে সিফিলিস মায়াজম বলে মূলত ইহা সুস্থদেহে রোগ প্রবণতা সৃষ্টিকারী একটি মায়াজমেটিক অবস্থা।



প্রশ্ন-  সিফিলিস দোষের সূচনা বা প্রাথমিক রূপ কি?

উত্তর: দূষিত সংগমের ফলে পুরুষদিগের লিঙ্গমুণ্ডে এবং স্ত্রীলোকদের বৃহৎ ও ক্ষুদ্র যোনি কপাটে ক্ষত লক্ষণ সিফিলিস দোষের সূচনা বা প্রাথমিক রূপ।



প্রশ্ন- সিফিসিল দোষ কোন্ কোন্ অঙ্গে প্রথম সংক্রামিত হয়?

উত্তর: জননেন্দ্রিয়, গুহাপথ, মুখগহ্বর, স্তনবৃন্ত এবং শৈস্মিক ঝিল্লী বিশিষ্ট স্থানসমূহে সিফিলিস দোষ প্রথম সংক্রামিত হয়।



প্রশ্ন-  সিফিলিস দোষ লব্ধ আকারে সংক্রমণের স্থান ও উপকরণসমূহ কি কি?

উত্তর: সিফিলিস দোষ সিফিলিস ক্ষত বা স্যাংকারযুক্ত রোগীর শুশ্রূষায়, রোগাক্রান্ত মাতার বা সেবিকার স্তন্যপানে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে চুম্বনে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত থালা, গ্লাস, চামচ, টুথব্রাস, ধূমপানের পাইপ, ইনজেশানের সিরিঞ্জ এবং অস্ত্র চিকিৎসার যন্ত্রপাতির মাধ্যমে লব্ধ আকারে সংক্রামিত হয়।
 


প্রশ্ন-  সিফিলিস দোষের ভীষণতাপূর্ণ রূপ কোন প্রকৃতির ব্যক্তিগণের দেহের অতি সহজেই বিকশিত হয়?

উত্তর: যে সকল ব্যক্তি তামাক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য যেমন-চা, কফি, মদ্য সুরা গাঁজা, চড়শ, হেরোইন, মরফিন, প্যাথেড্রিন, কোকেন, ফেনিসিডিল, ইয়াবা বেশী মাত্রায় সেবন করে এবং জান্তব খাদ্য অধিক ভক্ষণ করে সে সকল ব্যক্তির দেহে সিফিলিস দোষের ভীষণতাপূর্ণ রূপ অতি সহজেই বিকশিত হয়।



প্রশ্ন- মানব শরীরে কি কি দোষ বর্তমান থাকিলে সিফিলিস রোগ অতি সহজেই সংক্রামিত হইয়া ভীষণতর অবস্থার সৃষ্টি করে?

উত্তর: মানব শরীরে যদি প্রাপ্ত আকারে স্ক্রফিউলা (সোরার সহিত সিফিলিস দোষের সংমিশ্রণে উৎপাদিত দোষ) বা টিউবারকুলার (দুই বা ততোধিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্টি হইয়া রোগপ্রবণতার সৃষ্টি করে) দোষ বর্তমান থাকে তাহা হইলে সিফিলিস রোগ অতি সহজেই উক্ত দেহে সংক্রমিত হইয়া ভীষণতর অবস্থার সৃষ্টি করে।



প্রশ্ন- কোন অবস্থায় রোগীর দেহে তরুণ সিফিলিস সুষ্পষ্টরূপে পরিস্ফুটিত হইতে পারে না?

উত্তর: পূর্ব হইতে ভিন্ন প্রকৃতির যদি কোন শক্তিশালী তরুণ দোষ বা রোগ, বিশেষ করিয়া টিউবারকুলোসিস কোন ব্যক্তির দেহে বিদ্যমান থাকে, তাহা হইলে ঐরূপ ক্ষেত্রে তরুণ সিফিলিস সুস্পষ্টরূপে পরিস্ফুটিত হইতে পারে না।



প্রশ্ন- কোন অবস্থা হইতে সিফিলিসের মনোলক্ষণ বিকশিত হয়?

উত্তর: সিফিলিস রোগটি দোষ আকারে শরীরে বদ্ধমূল না হইলে ইহার মানসিক লক্ষণ বিকাশ পায় না। বিষ সংক্রমণের দ্বিতীয় অবস্থা হইতেই ইহার মনোলক্ষণের বিকাশ সূচিত হইতে দেখা যায়। মনের বুদ্ধি বৃত্তিটিকে বিকৃত করাই সিফিলিসের প্রকৃষ্ট ও প্রথম পরিচয়।
 


প্রশ্ন-  সিফিলিস উপবিষ (মায়াজম) ও সিফিলিস রোগের পার্থক্য বর্ণনা কর।

উত্তর: সিফিলিস উপবিষ ও সিফিলিস রোগ এক কথা নয়। দূষিত সংগমের ফলে পুরুষের লিঙ্গমুণ্ডে এবং স্ত্রীলেকাদের যৌনাঙ্গে যে ক্ষত ও প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তাহা সিফিলিস রোগ নামে পরিচিত। এই দূষিত ক্ষত যদি অসম চিকিৎসা বা অপচিকিৎসার নামে ইনজেকশান দ্বারা চাপা দেওয়া হয় তাহা হইলে রোগটি রোগাবস্থায় না থাকিয়া উপবিষের ভিত্তি সূচনা করে এবং দোষের আকার পরিগ্রহ হইয়া যে বিষ সৃষ্টি করে তাহাকে সিফিলিস উপবিষ বলা হয়, যার ফলে মানবদেহ যন্ত্রের অবস্থা বিকৃত করিয়া ফেলে এবং মানুষকে বহুসংখ্যক পীড়ার অধীন করে। ইহাই সিফিলিস উপবিষ ও সিফিলিস রোগের মধ্যে পার্থক্য।



প্রশ্ন-  অর্জিত ও লব্ধ সিফিলিস কি?

উত্তর: অর্জিত সিফিলিস- যখন দুষ্ট প্রবৃত্তিজাত নিজ কুকর্মের ফলে তথা দূষিত সংগমের মাধ্যমে যৌনাঙ্গে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, ইহা একটি স্থানীয় লক্ষণ। দেহে সিফিলিস বিষের সংক্রমণ ঘটিলে লিঙ্গমুণ্ডের ক্ষতটি সদৃশ বিধানে চাপা দেওয়া হইলে দোষে পর্যবসিত হয়। ইহাই অর্জিত সিফিলিস দোষ। লব্ধ সিফিলিস- যৌনমিলন ব্যতীত সিফিলিস রোগীর ক্ষত বা স্যাংকারর শুশ্রূষায়, রোগাক্রান্ত মাতার বা সেবিকার স্তন্যপানে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে চুম্বনে, রোগীর ব্যবহৃত থালা, গ্লাস, চামচ, টুথ ব্রাস, ব্যবহারে বা অস্ত্র চিকিৎসার যন্ত্রপাতির মাধ্যমে যখন এই রোগটি সংক্রমিত হয় এবং দোষ' সৃষ্টি করে তখন তাহাকে লব্ধ সিফিলিস বলে।



প্রশ্ন- সিফিলিস ধর্ম কি?

উত্তর: স্ত্রী বা পুত্রকণ্যাগণ স্বামী বা পিতামাতার নিকট হইতে যে অবস্থাটি প্রাপ্ত হয়, তাহারা উহার পূর্ণ চিত্রটি নিজনিজ দেহে বহন করিয়া চলিতে থাকে। এই প্রকার প্রাপ্ত দোষে ধাতু প্রকৃতি লইয়া যে সকল সন্তান সন্ততি জন্মগ্রহণ করে তাহারা যদি পরবর্তী জীবনে তরুণ সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হয় তাহা হইলে তাহাদের এই দোষটি হইতে পচন ও রক্তস্রাবের প্রকৃতি বিশিষ্ট লক্ষণসমূহ বিকশিত করে। উল্লেখ্য এই প্রকার সিফিলিস রোগ ব্যক্তিদেহে একটি ভীষণ অবস্থা জানিতে হইবে।
 


প্রশ্ন- সুপ্ত সিফিলিসের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।

উত্তর: সুপ্ত সিফিলিসের লক্ষণাবলী নিম্নে বর্ণনা করা হইল।
ক) আত্মহননের অদম্য অভিলাষ, অহর্নিশি আত্মহননের সুযোগ সন্ধান করে।
খ) অহর্নিশি বিষণ্ণ ও মনমরাভাব, একা থাকিতে অভিলাষ, সঙ্গসাথী পছন্দ করে না। রোগী নির্বোধ, জড়বুদ্ধির, একগুঁয়ে এবং বিষণ্ণ প্রকৃতির।
গ) সূর্যাস্তের পর হইতে সারারাত্রি সকল যন্ত্রণার বৃদ্ধি ঘটে বলিয়া সূর্যোদয়ের জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে।
ঘ) দেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের তুলনায় মস্তক ও কর্ণ বৃহদাকৃতির দৃষ্ট হয়।
ঙ) স্মরণশক্তি অকল্পনীয় ও মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
চ) অতি সহজেই পচন প্রবণতা সৃষ্টি হয়।
ছ) হাত পায়ের নখগুলি কাগজের ন্যায় হাল্কা ও ভঙ্গুর।
জ) মস্তকের উভয় পার্শ্বের ও মস্তক শীর্ষের চুল পড়িয়া যায়।



প্রশ্ন- বিকশিত সিফিলিসের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
বা, সিফিলিস মায়াজমের প্রধান নিদর্শনসমূহ কি কি?

উত্তর: বিকশিত সিফিলিসের লক্ষণাবলী বা প্রধান নিদর্শনসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা গেল।
ক) রোগী মানসিক ভারসাম্যহীন, নির্বোধ, জড়বুদ্ধিসম্পন্ন এবং আত্মহত্যাপ্রবণ।
খ) রোগলক্ষণ তাপে ও রাত্রে বৃদ্ধি পায় ও ঠাণ্ডায় উপশম হয়।
গ) বিভিন্ন প্রকার বিকলাঙ্গ, আবার অনেক দেহযন্ত্র শুকাইয়া যায়।
ঘ) অস্থিসমূহ ক্ষয়প্রবণ, অস্থিআবরণে বা দীর্ঘাস্থিতে সূচীবিদ্ধবৎ বা তীর বিদ্ধবৎ বেদনা, অস্থিবেদনা রাত্রিতে বৃদ্ধি।
ঙ) কোন প্রকারের স্রাবেই রোগীর রোগলক্ষণের উপশম হয় না।
চ) প্রচুর ঘর্ম হয় এবং সকল প্রকার স্রাবই দুর্গন্ধযুক্ত। ঘর্মে বৃদ্ধি।
ছ) দুষ্ট জাতীয় ফোঁড়া, বাগী, গ্লাণ্ডসমূহের স্ফীতি, চুলকানিবিহীন চর্মরোগ এবং চুলকানিবিহীন তাম্রবর্ণের উদ্ভেদ নির্গমন।
জ) জিহ্বার শ্বেতবর্ণের লেপাবৃত এবং উহাতে দন্তাকৃতির ছাপ পড়ে।
ঝ) ইহার রোগীর মাংসে অনিচ্ছা।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের মানসিক লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের মানসিক লক্ষণাবলীর বর্ণনা করা হইল।
ক) মানসিক বিকৃতি- স্বীয় জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা, হতাশা, নৈরাশ্য, হটকারিতা, অজ্ঞতা, বিষণ্ণতা, মুর্খতা ও আত্মহননের অদম্য অভিলাষ প্রকাশ পায়। অর্থাৎ মস্তিষ্কের স্থূলত্বপ্রাপ্তি, নৈরাশ্য ও উৎকণ্ঠার বিভীষিকাময় অবস্থার পরিণতিতে আত্মহত্যার সিফিলিসদুষ্ট মনের প্রক্ট পরিচয় বহন করে।
খ) মানসিক জড়তা- অসুস্থাবস্থার লক্ষণসমূহের ভালভাবে অনুভব করিতে পারে না এবং চিকিৎসকের নিকট তাহা যথার্থরূপে ব্যক্ত করিতে পারে না।
গ) স্মরণশক্তি ও ধারণশক্তি অকল্পনীয়রূপে হ্রাস পায়। কোন কিছু বুঝিয়া পড়িয়া আয়ত্ব করিতে পারে না, যেহেতু তাহার চিন্তা প্রবাহটি বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে। কথা বলিতে গিয়া কথার সূত্র হারাইয়া ফেলে এবং শ্রোতাকে কথায় সূত্র. জিজ্ঞাসা করে।
ঘ) বিষণ্ণতার কারণে একা থাকিতে চায় তাই সে লোকসঙ্গ পছন্দ করে না।
ঙ) খাদ্য-পানীয় কোনটি ভালো কোনটি মন্দ তাহা সূক্ষ্মরূপে বাছবিচার করিতে পারে না। তবুও দুগ্ধ ও মাখন খাইতে পছন্দ করে এবং মাংস খাইতে অপছন্দ করে।
ছ) অগ্নিকাণ্ড, হত্যাকাণ্ড, ইত্যাদি বিভীষিকাময় কল্পনা করে বা স্বপ্ন দেখে।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের রোগীর ধাতুগত লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের রোগীর ধাতুগত লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) মুর্খতা, অজ্ঞতা, বোকামি ও একগুঁয়ে ভাব। এই অবস্থার সাথে সন্দেহ, বিমর্ষ ও নৈরাশ্যভাব, বিতৃষ্ণা দেখা দেয়, রোগী নির্জনতা পছন্দ করে এবং এই নির্জনতাজনিত নৈরাশ্য ও উৎকণ্ঠার ভাবটি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাইলে আত্মহত্যার একটি ইচ্ছা জাগ্রত হয়।
খ) মানসিক জড়তা বা ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
গ) স্মরণশক্তি ও ধারণশক্তি অকল্পনীয়রূপে হ্রাস পায়।
ঘ) নানারূপ বিকলাঙ্গতা এবং অনেক দেহ যন্ত্র শুকাইয়া যায়।
ঙ) অস্থিসমূহ ক্ষয়প্রবণ, দীর্ঘাস্থিতে বেদনা, রাত্রে এই বেদনার বৃদ্ধি হয়।
চ) সূর্যাস্তের পর হইতে সারারাত্রি রোগযন্ত্রণার বৃদ্ধি ঘটে বলিয়া সূর্যোদয়ের জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে।
ছ) দুষ্ট জাতীয় ফোঁড়া, বাগী, গ্রন্থিবৃদ্ধি এবং চুলকানিবিহীন চর্মরোগ দৃষ্ট হয় যাহা পচনপ্রবণ।
জ) অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম কোনটিই সহ্য হয় না।
ঝ) মাংসে অরুচি, কিন্তু মাখন ও দুগ্ধ পানের অভিলাষ।
ঞ) অগ্নিকাণ্ড, আত্মহত্যা ইত্যাদি বিভীষিকাময় স্বপ্ন দেখে।
ট) জিহ্বা শ্বেতবর্ণের লেপাবৃত এবং উহাতে দন্তাকৃতির ছাপ পড়ে।
ঠ) ঘর্মসহ সর্বপ্রকার স্রাবের প্রচুরতা। সকল স্রাবই দুর্গন্ধযুক্ত এবং কোন প্রকার স্রাবে রোগলক্ষণের উপশম না হওয়া ইহার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের শিশু চিত্র অংকন কর।

উত্তর: উত্তরাধিকার সূত্রে বা সুপ্ত সিফিলিটিক শিশু রোগী নির্বোধ, জড়বুদ্ধির একগুঁয়ে বা মাথা পাগলা গোছের বিষণ্ণপ্রকৃতির। ইহারা কোন বিষয় সহজে উপলব্ধি করিতে পারে না। কি বলিতে যাইতেছিল তাহা ভুলিয়া যায়। রাত্রে খুবই অস্থির হইয়া পড়ে, শয্যায় বেশীক্ষণ শয়ন করিয়া থাকিতে পারে না। বিদ্যালয়ের শিশুরা কিছুই মনে রাখিতে পারে না, কাহারও সহিত মিশিতে পারে না। কয়েক লাইন পড়িয়া উহার অর্থ হৃদয়ঙ্গম করার জন্য পুনরায় পূর্বে লাইনগুলি পড়িতে হয়। এই সকল শিশুদের নিয়া বিদালয়ে সমস্যায় পড়িতে হয়ণ সিফিলিসের শিশুর মাথা বৃহদাকারের। মস্তকের মধ্যস্থলের জোড়াটি যথাসময়ে জোড়া লাগিতে চায় না। শিশুর মাথায় সব সময় ঘাম হয়।



প্রশ্ন- সিফিলিসের মস্তকের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের মস্তকের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) শিশুদের মস্তকটি বৃহদাকার, দেখিলে মনে হয় যেন মস্তিষ্কে পানি জমিয়াছে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাহা নহে, মূলত ইহা সিফিলিস দোষের একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
খ) চক্ষুর পাতা, ভ্রূ ইত্যাদি স্থানের চুলগুলি উঠিয়া যায় (বিশেষতঃ তরুণ রোগ ভোগের পর)।
গ) মাথায় মরামাস জন্মে ও দুর্গন্ধ পূজ স্রাবকারী চর্মপীড়া পানি লাগিলে বৃদ্ধি পায়।
ঘ) শিশুদের মাথার মধ্যস্থলের জোড়াটি সহজে জোড় যায় না। বেশী বয়স পর্যন্ত ফাঁক থাকিয়া যায়। অস্থি বর্ধিত হয় না ও মাথায় প্রচুর ঘাম হয়।
ঙ) মস্তিষ্কের পশ্চাৎ দিকের বা পার্শ্বের বেদনায় রোগী রাত্রিকালে বিশেষ কাতর হয় ও প্রাতঃকালে উহার অবসান ঘটে।
চ) মাথার যাতনার সহিত বিমর্ষভাবটি আরও বৃদ্ধি পায় এবং সর্বশরীরে ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। ঠাণ্ডা প্রয়োগে মাথাব্যথার উপশম হয়।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের রোগীর শিরঃপীড়ার লক্ষণ বর্ণনা কর।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের রোগীর শিরঃপীড়ার লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল। ইহার শিরঃপীড়া মাথার পিছনদিকে বা একপাশে দৃষ্ট হয়। রাত্রিকালে, শয়নে, মধ্যরাত্রে, সঞ্চালনে, উত্তাপে শিরঃপীড়ার বৃদ্ধি ঘটে। মাথার যাতনার সহিত বিমর্ষভাবটি আরও বৃদ্ধি পায়, সর্বশরীরটি ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। শিরঃপীড়ায় বালক বালিকারা যন্ত্রণার প্রাবল্যে হাত বা অন্য কোন বস্তু দ্বারা মস্তকে আঘাত করে। ঠাণ্ডা প্রয়োগে শিরঃপীড়ার উপশম হয়।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের চক্ষুর লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: সিফিলিসে চক্ষুর গঠনগত পরিবর্তন আনয়ন করে। চক্ষুর উপরে সিফিলিস সাংঘাতিকভাবে আক্রমণ করিয়া থাকে। চক্ষুর যাবতীয় ক্ষত, আলোকভীতি, চক্ষুপাতার পক্ষাঘাত, চক্ষুর স্নায়বিক যাতনা ও চক্ষুরোগজনিত জ্বর সিফিলিস দোষজ। চক্ষুর আলোকরশ্মির দিক পরিবর্তন, লেন্সের পরিবর্তন প্রভৃতির পেছনে সুপ্ত সিফিলিস বর্তমান থাকে। সিফিলিসের চক্ষুবেদনা এবং সমস্ত লক্ষণ রাত্রিকালে এবং গরমে বৃদ্ধি পায়। ঠাণ্ডা প্রয়োগে লক্ষণাবলীর উপশম ঘটে।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের কর্ণের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: সিফিলিসে কর্ণের যন্ত্রগত পরিবর্তন সাধিত হয়। দীর্ঘাকৃতি বেখাপ্পা কর্ণ। কান পাকে, তাহাতে দুর্গন্ধ রস বা পূজ স্রাব হয়। সামান্য ঠাণ্ডায় রোগীর সর্দি লাগে বা কোন প্রকার উদ্ভেদ জাতীয় পীড়া যেমন-হাম, বসন্ত, ইত্যাদির সহিত যদি কানে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ জন্মে তবে তাহা সিফিলিস দোষজ। কর্ণের যাবতীয় স্রাব ও লক্ষণাদি রাত্রে এবং উত্তাপে বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য কোন প্রকার উদ্ভেদের সহিত কর্ণে পূজ সঞ্চয়ের লক্ষণ থাকিলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগীর জন্য উহা একটি শুভ লক্ষণ। যন্ত্রণা ও পূজস্রাব অসমলক্ষণ মতে কোন মতেই চাপা দেওয়া উচিত নয়।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের নাসিকার লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: প্রায়ই সর্দি লাগে ও সেজন্য নাকে সুড়সুড় করে, নাসিকা গহ্বরে ক্ষত হয়। মামড়ি পড়ে। চটা জমে ও দুর্গন্ধ নিঃশ্বাস বাহির হয়। ইহা সবই সিফিলিস দোষজ লক্ষণ। নাসিকা গহ্বরে বার বার স্ফোটক হয় যাহার সুচিকিৎসা না হইলে ঐ স্ফোটক হইতে ঘ্রাণ শক্তিটি এবং নাসিকার নরম হাড়টি পর্যন্ত বিনষ্ট হইবার সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়। জোরে জোরে নিঃশ্বাস গ্রহণ ইহার আর একটি লক্ষণ। নাসিকার সকল প্রকার পীড়া রাত্রে ও ঘর্মে বৃদ্ধি এবং তৎসহ দুর্গন্ধভাব পরিস্ফুট থাকে।



প্রশ্ন- সিফিলিসের মুখমণ্ডলের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।

উত্তর: সিফিলিস দুষ্ট রোগীর সমগ্র মুখমণ্ডলটিতে যেন তৈল মাখানো আছে মনে হয়। তাই মুখমণ্ডল দেখিতে তেলতেলে ও উজ্জ্বল দেখায়। সমগ্র মুখমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে ঘর্ম হয়।



প্রশ্ন- সিলিলিসের মুখগহ্বরের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের মুখগহ্বরের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) সিফিলিস মায়াজমগ্রস্ত রোগীর মুখগহ্বরে যাবতীয় ক্ষতলক্ষণ দৃষ্ট হয়।
খ) ইহার রোগীর দাঁতগুলি অসম, ক্ষয়প্রাপ্ত, দন্তের প্রান্তভাগ করাতের ন্যায় খাঁজ কাটা ও দন্তমূল আলগা।
গ) দন্তের মাড়িতে স্ফোটক ও পুঁজ সঞ্চয় হয় এবং দুর্গন্ধযুক্ত লীলাস্রাব হয়।
ঘ) জিহ্বার ধারগুলি দন্তের ছাপযুক্ত ও জিহ্বা সরস অথচ রোগীর প্রচুর পরিমাণে পানির পিপাসা হয়।
৩) রোগীর গলক্ষত দেখা দেয়, গলার গ্লান্ডগুলি স্ফীতিযুক্ত এবং টনসিল বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
চ) সূতার ন্যায় লম্বা চটচটে লালাস্রাব হয়।
ছ) টাইফয়েড রোগের শেষদিকে মুখগহ্বর ও মাড়ি হইতে রক্ত নির্গত হয়।
জ) মুখে ধাতবদ্রব্যের স্বাদ পাওয়া যায়, বিশেষ করিয়া তাম্রধাতুর ন্যায় স্বাদ পাওয়া যায়।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের দন্ড ও দন্তমাড়ির লক্ষণ বর্ণনা কর।

উত্তর: সিফিলিসের দন্তমাড়িতে স্ফোটক ও পূজ সঞ্চয় হয়। ইহার দাঁতগুলি অসম, ক্ষয়প্রাপ্ত, দন্তের প্রান্তভাগ করাতের ন্যায় খাঁজকাটা ও দন্তমূল আলগা।



প্রশ্ন- সিফিলিসের গললক্ষণ বর্ণনা কর।

উত্তর: সিফিলিস রোগীর গলক্ষত দেখা দেয়, গলার গ্লাণ্ডগুলি স্ফীতিযুক্ত ও টনসিল বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। সুতার ন্যায় লম্বা চটচটে লালাস্রাব হয়।



প্রশ্ন-  সিফিলিস দোষহেতু নখের কিরূপ পরিবর্তন ঘটে?

উত্তর: সিফিলিস দোষ হেতু রোগীর নখ কাগজের মত পাতলা এবং দেখিতে ঠিক চামচের মত হয়, সহজেই বাঁকিয়া যায়।



প্রশ্ন- সিফিলিসের উদর বা পাকাশয়ের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের উদর বা পাকাশয়ের লক্ষণাবলীর বর্ণনা প্রদান করা হইল।
ক) সুপ্ত সিফিলিসগ্রস্ত রোগী কোন্ খাদ্য ভাল লাগে, কোন্ খাদ্য খারাপ লাগে তাহা সম্পূর্ণরূপে বুঝাইয়া বলিতে পারে না।
খ) যে সকল বস্তুতে শরীর সহজে উত্তেজিত হয়, সেই সকল বস্তু যেমন-চা, কফি, তামাকজাত দ্রব্য ইত্যাদি পানের প্রবল স্পৃহা থাকে। তাহা ছাড়া বংশগতভাবে মদ্য পানের একটি প্রবৃত্তিও লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখ্য সিফিলিসদুষ্ট রোগী দেহে একটি স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দেয় এবং ঐ দুর্বলতাজনিত রোগী ঐ প্রকার উত্তেজক দ্রব্য আকাংখা করে।
গ) অল্প মসলাযুক্ত মাংসে বিতৃষ্ণা এবং অত্যধিক - মশলাযুক্ত খাদ্যে অভিলাষ।
ঘ) অনুভূতিশক্তি হ্রাসের কারণে ক্ষুধা স্বল্পতা বা আধিক্য কোনটিই সিফিলিস দুষ্ট রোগীর মধ্যে প্রকটভাবে দেখা দেয় না।
ঙ) ঠাণ্ডা দ্রব্য খাওয়ার আকাংখা থাকে।
চ) উদর মধ্যে ক্ষত, উদরশূল, পাকস্থলীর প্রদাহ, উদরে ক্যান্সার প্রভৃতি দৃষ্ট হয়। তবে ঐ সমস্ত লক্ষণের সহিত সিফিলিস দোষের বৈশিষ্ট্যজনক লক্ষণ পচন, দুর্গন্ধ ঘর্মের আধিক্য অথচ তাহাতে উপশমের অভাব, রাত্রে বৃদ্ধি ও মানসিক নৈরাশ্য এগুলি অবশ্যই বর্তমান থাকা আবশ্যক।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের খাদ্যদ্রব্যে ইচ্ছা ও অনিচ্ছা কি কি?

উত্তর: সিফিলিসদুষ্ট রোগীর' ইচ্ছা শক্তিটি একেবারেই বিকৃত হইয়া যাইবার ফলে কোন্ খাদ্যটি খাইতে ইচ্ছা করে, কোনটি অনিচ্ছা তাহা স্পষ্টরূপে প্রকাশ করিতে পারে না। ইহার রোগীর দেহে একটি স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দেয় এবং ঐ দুর্বলতা কাটাইবার জন্য রোগী চা, কফি, তামাক জাতীয় দ্রব্য পান করিতে চায়। বংশগত কারণে রোগীর মদ্যপানেরও প্রবৃত্তি থাকে। কারণ উহাতে সে সাময়িকভাবে উত্তেজনা লাভ করিয়া আরামবোধ করে। অত্যধিক মশলাযুক্ত খাদ্য খাইতে ইচ্ছা করে এবং অল্প মশলাযুক্ত মাংস খাইতে অনিচ্ছা। তবে অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাদ্য অপছন্দ, স্বাভাবিক ঠাণ্ডা খাদ্যের পানীয়ের আকাংখাও ইহাতে আছে। মৎস্য ও দুগ্ধ পান ভালবাসে।



প্রশ্ন- সিফিলিসের শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের বক্ষ ও শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) সিফিলিসের স্বভাবজাত ক্ষত উৎপাদন শক্তি আছে। তাই উহা সোরার সহিত সংমিশ্রনে ফুসফুসের ক্ষত উৎপাদন করে। রোগীর শ্বাসনালীতে ক্ষত হইযার ফলে কণ্ঠস্বর লোপ পায়।
খ) শ্বাস গ্রহণের সময় হাঁপানি বা শ্বাসরূদ্ধকর কাশি হয়। কাশি অনেক সময় কুকুরের ডাকের ন্যায় আওয়াজ।
গ) বিনা কারণে বা সামান্য কারণে শ্বাসযন্ত্রের সর্দি দেখা দেয়।
ঘ) স্বাদহীন, সবুজ, হলুদ বা স্বচ্ছে শ্বেতবর্ণের চটচটে বা সুতার ন্যায় শ্লেষ্মা নির্গমন বিশেষরূপে পরিস্ফুট হয়।
৬) স্ত্রীলোকদের ঋতুস্রাবের পূর্বে কণ্ঠস্বর ভঙ্গ হইতে দেখা যায়।
চ) বক্ষস্থলে জল জমাতে সিফিলিস দোষের প্রভাবই বেশী।



প্রশ্ন-  সিফিলিস আক্রান্ত রোগীর অস্থি লক্ষণ বর্ণনা কর।
বা, 'অস্থির উপর সিফিলিসের ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়াগুলি মারাত্মক' আলোচনা কর।

উত্তর: অস্থির উপর সিফিলিসের ক্রিয়া ধ্বংসাত্মক। এই বিষ কোমল ও কঠিন উভয় প্রকার দেহকোষকে বিধ্বস্ত করে। বৃহৎ অস্থির উপর ইহার ক্রিয়া গভীর। ইহা রোগীর দেহাঙ্গের বিকৃতি ঘটায়। দাঁত ও অস্থির ক্ষয় ও বিকৃতি - ঘটে। রিকেট প্রভৃতি ধাতুগত ব্যাধির উৎপত্তি ঘটায়। দেহের হাড়ের কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটাইয়া মারাত্মক ধ্বংস সাধন করে। অস্থি পীড়ায় অস্থির ক্ষয় ও পচন এবং যাবতীয় যন্ত্রগত বিশৃঙ্খলার মূলে সিফিলিস। সেজন্য সিফিলিসের রোগীর - বক্ষঃস্থল ও পাঁজরার হাড়গুলি সংকুচিত থাকে। হাত ও পায়ের অস্থির আবরণে বা দীর্ঘাস্থিতে সূচীবিদ্ধকর বেদনা। এই বেদনা বাত্রে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। অস্থির পুষ্টির অভাব। অস্থিসমূহের জোড়গুলিতে বেদনা। নখের নানা প্রকার রূপান্তর। নখ কাগাজের ন্যায় পাতলা। নাসিকার নরম হাড়ের নষ্ট হইয়া যাওয়ার সম্ভাবনা। দন্তক্ষয়, দন্তের প্রান্তভাগ করাতের ন্যায় খাঁজকাটা।



প্রশ্ন- সিফিলিসের বক্ষঃস্থলের লক্ষণাবলী কি কি?

উত্তর: যেহেতু সিফিলিস দোষটি একটি ধ্বংসাত্মক দোষ, সেহেতু ইহা বক্ষস্থলের অস্থি, মাংসপেশী ইত্যাদির ক্ষয়, পচন এবং বক্ষস্থলে পানিজমাসহ যাবতীয় যন্ত্রগত বিশৃঙ্খলা আনয়ন করিতে সক্ষম। এই সকল দোষেই বক্ষস্থল ও পাঁজরার হাড়গুলি রোগগ্রস্ত হয়, সংকুচিত থাকে। বক্ষস্থল সজোরে সংকোচন ও প্রসারণ করা যায় না।



প্রশ্ন- সিফিলিসের হৃদপিণ্ডের লক্ষণাবলী লিখ।

উত্তর: সিলিফিস দুষ্ট রোগী হৃদপিণ্ডের উপসর্গ বহু বৎসর যাবত থাকিলেও এবং হৃদপিণ্ডের অবস্থা আশংকাজনক হইলেও মানসিক উদ্বেগ প্রায়শঃ দেখা যায় না। তবে এই সকল রোগীতে শ্বাসকষ্ট ও হৃদপিণ্ডে বেদনা বোধ থাকে। হৃদপিণ্ডের এনজাইনা পেক্টোরিস, হৃদপিণ্ডের উপর স্ফোটক, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। রোগলক্ষণ রাত্রিতে বৃদ্ধি পায়, সে সাথে প্রচুর পরিমাণে ঘর্ম ও মানসিক' নৈরাশ্যের ভাব বিদ্যমান থাকে। এই সকল রোগীরা হঠাৎ মৃত্যু মূর্খে পতিত হয় এবং মৃত্যুর কিছু সময় পূর্বেও ইহাদের মৃত্যুর কথা অবগত হওয়া যায় না।


 
 
প্রশ্ন-  সিফিলিসের গুহ্যদ্বার বা মলদ্বারের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: সিফিলিস দোষের কারণে হজমশক্তি একেবারেই বিনষ্ট হইয়া যায়। ফলে উদরাময়, আমাশয়, অজীর্ণ ইত্যাদি রোগ প্রায়ই দেখা যায়। বিশেষ করিয়া ছোট ছোট শিশুগণ দন্তোদ্দামের সময়ে একটির পরে একটি রোগে আক্রান্ত হইতে থাকে। যেমন- আজ সর্দি কাশি, কাল পেটের রোগ, পরশু গাল-গলার গ্ল‍্যান্ড ফোলা, পরদিন টনসিল প্রদাহ ইত্যাদি। দিনের পর দিন এই সকল রোগে ভুগিতে ভুগিতে শিশুগণ জীর্ণশীর্ণ হইয়া যায়, আর চলিতে পারে না, হাত পায়ের জোর থাকে না, হাত হইতে অতি সহজেই দ্রব্যসামগ্রী পড়িয়া যায় এবং পরিশেষে পানির ন্যায় পাতলা উদরাময় আসিয়া দেহের অবশিষ্ট জীবনীশক্তি বা জীবনীয় পদার্থসমূহ নিঃশেষ করিয়া দেয়। ফলে শিশু মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তখন অনেকেই বলিয়া থাকেন যে শিশুটির 'শিশু কলেরা' হইয়াছিল।
সমুদ্র তীরে অবস্থানের কারণে উদরাময়, মলদ্বারে ক্ষত, দীর্ঘদিন যাবত কোষ্ঠবদ্ধতা ও কোষ্ঠবদ্ধতাজনিত শিররোগ এবং তৎসহ নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বিদ্যমান থাকে। কৃষ্ণবর্ণের অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত মলসহ পেটে ব্যথা ইত্যাদি সকল রোগলক্ষণই রাত্রিকালে বৃদ্ধি পায়।



প্রশ্ন- সিফিলিসের মূত্রযন্ত্রের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: যদিও মূত্রযন্ত্রের অধিকাংশ পীড়া সাইকোসিস দোষজ, কিন্তু উহার সহিত সিফিলিসের সংমিশ্রণ ঘটিলে যন্ত্রণাবিহীন মূত্রকৃচ্ছতা অর্থাৎ মূত্রের ধারা ক্ষীণ, প্রস্রাব ত্যাগ কালে কোন জ্বালা যন্ত্রণা নাই অথচ বার বার বেগের তীব্রতা, ইত্যাদি নানা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। দেহের কোন স্থানে প্রস্রাব লাগিলে সে স্থানে একটি জ্বালা অনুভব হয়, ইহা সিফিলিসের দোষেই দেখা যায়। লিঙ্গমুণ্ডে শক্ত বা নরম 'স্যাংকার' বা ক্ষত।



প্রশ্ন- সিফিলিসের স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের লক্ষণাবলীর বর্ণন দাও।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) সিফিলিস দোষ হেতু রোগীর সঙ্গম শক্তির অক্ষমতা প্রকাশ পায়।
খ) রোগীর জরায়ু ও স্তনে ক্যান্সার হয়।
গ) রোগীর যোনি কপাটে ক্ষত হয়। যোনিদ্বার হইতে যে কোন স্রাব ক্ষতকারী, দুর্গন্ধযুক্ত ও সুতার ন্যায় লম্বা হইয়া নির্গত হয়।
ঘ) যে কোন অবস্থায় যোনীপথ স্পর্শকাতর ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকে।
৩) ঋতুস্রাবকালে মলদ্বারে ব্যথা, নৈরাশ্য ও ভয়ের উদ্রেক হয় এবং ঋতু শেষে মূর্ছার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
চ) মানসিক নৈরাশ্য, জীবনের প্রতি বীতস্পৃহা ও আত্মহত্যার অভিলাষসহ প্রচুর পরিমাণে ঋতুস্রাব হয়।
ছ) গর্ভস্রাবসহ যাবতীয় লক্ষণাবলী রাত্রিকালে বৃদ্ধি পায়।



প্রশ্ন- সিফিলিসের ক্ষত, দুর্গন্ধ ও পচনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: সর্বপ্রকার স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক পথের স্রাব যথা-নাসিকার স্রাব, লালাস্রাব, কর্ণের পূজস্রাব, চক্ষুর পিচুটি স্রাব, যাবতীয় স্রাবেই দুর্গন্ধ বিশেষরূপে পরিস্ফুটিত থাকাই সিফিলিসের প্রকৃতি। এই দুর্গন্ধ হইতে নিজেকে মুক্ত করিবার জন্য রোগী নানা প্রকার চেষ্টা করে, শরীরটি বার বার ধৌত করে, সাবান মাখে, সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করে কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। মনে রাখিতে হইবে না পঁচিলে কোন প্রকার দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় না।
সুতরাং সিফিলিসদুষ্ট রোগীর শরীরে একটি ক্ষত বা পচনপ্রবৃত্তি বর্তমান থাকে বলিয়াই ঐ প্রকার গন্ধের ভাব আসিয়া থাকে। শরীরের অভ্যন্তরে ও বাহিরে একটি পচন প্রবৃত্তি বিশেষরূপে বিকশিত থাকে। এই জন্য সামান্যমাত্র আঘাতে যে ক্ষতের সূচনা হয় তাহাও সহজে নিরাময় হইতে চায় না। ক্রমেই ক্ষতটি বিস্তৃত হইয়া পড়ে এবং তাহা হইতে দুর্গন্ধ পূজ ও রস বাহির হইতে থাকে। অর্থাৎ পচনের একটি সহজ প্রবণতা উৎপাদনই সিফিলিস দোষের অতি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।
ঐ প্রকার পচন ক্রিয়াটি সর্বপ্রথম শরীরের বিভিন্ন গ্ল্যাণ্ডসমূহে বিকশিত হয়। প্রথম প্রথম গ্ল্যাণ্ডসমূহ স্ফীত হয়, তাহাতে স্পর্শকাতরতা থাকে এবং অতি অল্পদিনের ব্যবধানে ঐ স্ফীতি আসা যাওয়া করিতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত উহা আর কোন কিছুতেই হ্রাস পাইতে চাহে না। উহা রস ও পূজে পরিপূর্ণ হইয়া উঠে, ফাটিয়া ক্ষত লক্ষণে রূপ নেয়। সবশেষে পচনলক্ষণ আসিয়া দেখা দিলে তখন দুর্গন্ধ বাহির হইতে থাকে। এই অবস্থায় মাতা তাহার সন্তানকে দুর্গন্ধমুক্ত করার জন্য বার বার গোসল করান, তথাপি যে দুর্গন্ধ সে দুর্গন্ধই থাকিয়া যায়।
যাহা হোক ঐভাবে পচন, দুর্গন্ধ পূজস্রাব ও রস নিঃসরণ চলিতে চলিতে রোগীর দেহ ধ্বংসের পথে পরিচালিত হয়, 'যেন গঠনের কোন চিহ্নই নাই, কোন চেষ্টাই নাই-ক্ষতলক্ষণ, পচনলক্ষণ ও দুর্গন্ধ সিফিলিস দোষের প্রকৃত মর্মবানী।



প্রশ্ন-  সিফিলিস রোগীর ক্ষতের বর্ণনা দাও।

উত্তর: সিফিলিস দুষ্ট রোগীর শরীরে একটি ক্ষত বা পচন প্রবৃত্তি বর্তমান থাকে। সেজন্য সামান্য আঘাতে যে ক্ষতের সূচনা হয় তাহাও সহজে নিরাময় হয় না। ক্রমেই ক্ষতটি বিস্তৃত হইয়া পড়ে এবং তাহা হইতে দুর্গন্ধ পূজ ও রস বাহির হইতে থাকে। শরীরের অভ্যন্তর ভাগে বিভিন্ন গ্ল্যান্ডে প্রথমে পচন ক্রিয়া ও ক্ষত লক্ষণ বিকশিত হয়। বিভিন্ন গ্লান্ডসমূহের স্ফীতি অল্পদিনের ব্যবধানে আসাযাওয়া করিতে থাকিলে উহা রস ও পূজে পরিপূর্ণ হইয়া পরে ফাটিয়া ক্ষত লক্ষণে রূপ নেয় এবং পচন লক্ষণ আসিয়া দেখা দিলে তখন দুর্গন্ধ বাহির হইতে থাকে। এইভাবে ক্ষত, পচন ও দুর্গন্ধ পূজস্রাব চলিতে চলিতে রোগীর দেহ ধ্বংসের পথে পরিচালিত হয়।
সিফিলিসের বাহ্যিক ক্ষতসমূহ অগভীর, নানা আকারের ক্ষত, কার্বংকল, দুষ্ট ফোঁড়া, বাগী, অস্থিক্ষয়, দন্তক্ষয়, চক্ষুর স্বচ্ছত্বকে ঘা, নাসিকা ও জিহ্বায় ঘা প্রভৃতি। যৌনাঙ্গে ফুস্কুড়ির মত উদ্ভেদ ও ক্ষতের আবির্ভাব সিফিলিস লক্ষণের প্রথম পর্যায়। সর্বপ্রকার ক্ষতে পচন ও দুর্গন্ধ সিফিলিস দোষের মর্মবানী।



প্রশ্ন- সিফিলিসের প্রান্তদেশীয় বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের প্রান্তদেশের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) হাত পায়ের লম্বা অস্থিসমূহে তীব্র বেদনা, যাতনা যাহা রাত্রিকালে বৃদ্ধি পায়।
খ) তরুণ জাতীয় বাতরোগ, অস্থিমজ্জায় ক্ষত ও ক্ষতজনিত যন্ত্রণা রাত্রিকালে, বাটিকা আবহাওয়ায় এবং আবহাওয়া পরিবর্তনে বৃদ্ধি পায়।
গ) অস্থিসমূহের পুষ্টির অভাব ও অস্থির জোড়াগুলিতে ব্যথা হয়।
ঘ) হাত পায়ের নখ ঢেউ খেলানো বা নানা প্রকারের রূপান্তর ঘটিতে দেখা যায়।
৬) সব সময় হাত দুইটি দুইবার ইচ্ছা সিফিলিস দোষ হেতুই পরিস্ফুট হয়।
 


প্রশ্ন- সিফিলিসের জিহ্বার লক্ষণসমূহ কি কি?

উত্তর : সিফিলিস মায়াজমগ্রস্ত ব্যক্তির জিহ্বার ধারগুলি দন্তছাপযুক্ত। জিহ্বা সরস বা রসালো অথচ প্রচুর পানি পানের পিপাসা থাকে।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের চর্মের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে সিফিলিসের চর্মের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দেওয়া গেল।
ক) সিফিলিসের গাত্রচর্ম তৈলাক্ত, সিক্ত ও চকচকে।
খ) চর্ম অতিরিক্ত দুর্গন্ধযুক্ত ও ঘর্মপ্রবণ।
গ) চর্মের যাবতীয় ক্ষত, ফোঁড়া ইত্যাদি সহজে নিরাময় হইতে চায় না।
উহারা ক্রমান্বয়ে গভীরতা ও বিস্তার লাভ করে এবং উহাতে দুর্গন্ধযুক্ত রস ও পুঁজ নিঃসৃত হয়।
ঘ) চর্মরোগ তাম্রবর্ণের হয়, যাহা সহজে নিরাময় হইতে চায় না ও ক্ষতে পরিণত হয়।
ঙ) পচনপ্রবণ চুলকানিবিহীন চর্মোদ্ভেদ।
চ) সকল প্রকার চর্মরোগের লক্ষণ রাত্রিতে ও উত্তাপে বৃদ্ধি পায়। ফলে রোগী শয্যাগ্রহণ না করিয়া অহর্নিশি অস্থিরতার মধ্য দিয়া অতিবাহিত করে।



প্রশ্ন- সিফিলিসের স্মৃতিসংক্রান্ত লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: সিফিলিস মায়াজমগ্রস্ত ব্যক্তির স্মরণশক্তির অত্যন্ত দুর্বল। যতদিন অতিবাহিত হইতে থাকে ততই ইহার রোগীর স্মরণশক্তি ও মস্তিষ্কের ধারণশক্তি অকল্পনীয়রূপে লোপ পাইতে থাকে। স্মরণশক্তি এতই লোপ পায় যে, পঠিত বিষয় স্মরণ রাখিতে পারে না বা স্মরণ রাখিলেও এলোমেলো ভাবে স্মরণ রাখে। কাহারও সহিত কথা বলিতে বলিতে অনেক সময় কথার সূত্র হারাইয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করে কি বলিতেছিল। অতঃপর মনে করাইয়া দিলে পুনরায় এলোমেলো ভাবে বলিতে থাকে কিন্তু সাজাইয়া গুছাইয়া বলিতে পারে না। কোন বিষয়ে সামগ্রিকরূপে স্থির চিন্তা করিতে পারে না। স্মরণশক্তি এতই ক্ষীণ যে ইহার ছাত্র সূত্র অনুরূপ অংক কষিতে না পারিয়া পরীক্ষায় ফেল করে।
 


প্রশ্ন- সিফিলিস রোগীর স্বপ্নের বর্ণনা দাও।

উত্তর: সিফিলিস মায়াজমগ্রস্ত রোগী সাধারণতঃ অগ্নিকাণ্ড, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি বিভীষিকাময় স্বপ্ন দেখে।



প্রশ্ন- সিফিলিস দোষ হইতে কি কি রোগ লক্ষণের আবির্ভাব ঘটে।

উত্তর: সিফিলিষ দোষ হইতে নিম্নলিখিত রোগলক্ষণের আবির্ভাব হইতে. পারে। দারুন উৎকণ্ঠাজনিত কারণে আত্মহত্যার ইচ্ছা, পচনশীল যে কোন রোগ, দুর্গন্ধ পূজ ও রস নিঃসরণকারী চর্মপীড়া, দুর্গন্ধ ঋতু ও প্রদর স্রাব, কর্ণ, নাসিকা, ইত্যাদিতে ক্ষত ও দুর্গন্ধ স্রাব, প্রস্রাব যন্ত্রের ক্ষত, গলক্ষত, মেরুমজ্জার ক্ষত, লম্বা অস্থিসমূহের বাত, অস্থিক্ষয়, মুখে ক্ষত ও দুর্গন্ধ লালাস্রাব, হাতে পায়ে ও আঙ্গুলে হাজা ঘা, ধমণীতে স্ফোটক, হৃদপিণ্ডের দুর্বলতাহেতু রক্ত চলাচলে বিশৃঙ্খলাজনিত নানা প্রকার রোগ, গ্লাও স্ফীতি ও পচন, উদরে ক্ষত, নাসিকায় ক্ষত, অন্ধত্ব, নৈরাশ্য ও উৎকণ্ঠা হেতু উন্মাদ অবস্থা প্রভৃতি।



প্রশ্ন-  সিফিলিস দোষ হেতু উৎপন্ন বাগী লক্ষণের বর্ণনা দাও।

উত্তর: যে স্থানে প্রথমে উপদংশের ক্ষত দেখা দেয় তাহার নিকটবর্তী গ্রন্থি বা গ্লান্ডসমূহ প্রদাহান্বিত হইয়া উঠে। পুং বা স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ে ক্ষত হইলে উহার নিকটবর্তী স্থান কুঁচকীর গ্লান্ডই প্রদাহিত ও স্ফীত হয়। ইহার নাম বাগী। সিফিলিস বিষের প্রভাবে শরীরের অন্য কোন স্থানের লিম্ফাটিক গ্লান্ড প্রদাহান্বিত হইলে তাহাকেও বাগী বলে। সিফিলিস জনিত বাগী কুঁচকীর উভয় দিকে হয় বা এক সঙ্গে বহু সংখ্যক গ্লান্ড একত্রে প্রদাহান্বিত হয়। অন্য কারণে বাগী হইলে উহা একদিকে হয় এবং একটি মাত্র গ্লান্ডই প্রদাহান্বিত হয়। গণোরিয়া বিষের প্রভাবে বাগী উৎপত্তি হইলে তাহাতে পাকিয়া পুঁজ হয়।



প্রশ্ন- সিফিলিস দোষের শেষ পরিণতি কি এবং কোন কোন যন্ত্র আক্রান্ত হয়?

উত্তর: সিফিলিস দোষের শেষ পরিণতি হইল পচনশীল দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষত ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষয়সাধন করা। ইতাতে সাধারণতঃ মস্তিষ্কঝিল্লী, স্বরযন্ত্র, গলা, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, অস্থি ও অস্থি আবরক ঝিল্লী, মূত্রযন্ত্র, প্রজনন যন্ত্র, উদর, ধমনী, হৃদপিণ্ড প্রভৃতি যন্ত্রসমূহ আক্রান্ত হয়।
 


প্রশ্ন-  সিফিলিস প্রাধান্যযুক্ত সোরিক রোগীতে সালফার সাবধানতার সহিত প্রয়োগ করা উচিত কেন?

উত্তর: সিফিলিস প্রাধান্যযুক্ত সোরিক রোগীতে অত্যন্ত সাবধানতার সহিত সালফার প্রয়োগ করিতে হয়। বিশেষ করিয়া সিফিলিস দোষের লক্ষণসমূহ যে শরীরে সুপ্ত অবস্থায় বর্তমান, সে ক্ষেত্রে সালফার একেবারে আদি দোষ সোরার উপর গিয়া আঘাত করে। তখন একটি অস্বাভাবিক কষ্টকর বৃদ্ধি লক্ষণ দেখা দেয় এবং রোগী সাধারণতঃ অধৈর্য হইয়া অন্য চিকিৎসকের আশ্রয় গ্রহন করে ও অন্য চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে। যার ফলে রোগী অপচিকিৎসার শিকার হয়।



প্রশ্ন-  সিফিলিসের ঘর্মের প্রকৃতির বর্ণনা দাও।

উত্তর: সিফিলিসের ঘর্ম অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত। ঘর্ম হইলে যে কোন রোগ লক্ষণ বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ রোগ অবস্থায় ঘর্ম যত বৃদ্ধি পাইবে, রোগ লক্ষণও তত বৃদ্ধি পাইবে। যেমন-জ্বর অবস্থায় সাধারণতঃ ঘর্ম হইলে জ্বর হ্রাস পাইবার কথা, কিন্তু সিফিলিসদুষ্ট রোগীর ঘর্ম যত বৃদ্ধি পাইতে থাকে জ্বরও তত বৃদ্ধি পাইতে থাকে। ঘর্মে এই প্রকারের রোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বমন উদ্রেককারী এইরূপ তীব্র গন্ধ হইতে থাকে যে রোগী নিজেই অস্বস্তিবোধ করে।



প্রশ্ন- 'সিফিলিসদুষ্ট রোগী দিনের পূজারী'-ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: সিফিলিস মায়াজমে দুষ্ট রোগী দিনের আলোয় তাহার সকল প্রকার রোগলক্ষণের উপশম বোধ করে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে তাহার সকলপ্রকার রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর হইতে সূর্যোদয় পর্যন্ত সিফিলিস দুষ্ট রোগীর সকল প্রকার রোগ যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায় বলিয়া সে রোগ যন্ত্রণা উপশমের জন্য অধির আগ্রহে দিনের জন্য অপেক্ষা করে বলিয়াই তাহাকে দিনের পূজারী বলা হয়।



প্রশ্ন-  সিফিলিস দুষ্ট রোগীর চিকিৎসাপ্রণালী লিখ।

উত্তর: সিফিলিস একটি যৌন চিররোগ। উপদংশ রোগ চাপা দিলে সিফিলিস বিষের সৃষ্টি হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সোরা বা সাইকোসিসের সহিত সিফিলিস না মিশে ততক্ষণ তাহাকে একক মনে করিতে হইবে এবং সেইভাবে তাহার চিকিৎসা করিতে হইবে। যদি সিফিলিস এককভাবে থাকে এবং তাহার স্থানীয় লক্ষণ যেমন প্রাথমিক ক্ষত বা বাগী বা উভয়ই বর্তমান আছে এই অবস্থায় এন্টিসিফিলিটিক ঔষধ প্রয়োগ করিলে রোগী আরোগ্য লাভকরিবে। সিফিলিসজনিত লক্ষণ দূরীভূত হইলে রোগীর ধাতুগত লক্ষণ সংগ্রহ করিয়া সুপ্ত সোরার জন্য এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ না করিলে শীঘ্রই সুপ্ত সোরা জাগ্রত হওয়ার এবং দ্বিতীয় দশার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাধারণতঃ অসদৃশ চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার দ্বারা স্থানীয় লক্ষণের বিলুপ্তি ঘটিলে দ্বিতীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় স্থানীয় লক্ষণ থাকে না। সিফিলিসের একক অবস্থান অর্থাৎ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সোরা বা সাইকোসিসের সাথে মিশে নাই, এই অবস্থায় শুধুমাত্র এন্টিসিফিলিটিক ঔষধে রোগী সিফিলিস দোষমুক্ত হইবে।
যদি সিফিলিস ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সোরা একই সময়ে একত্রে বর্তমান থাকে তবে স্থানীয় লক্ষণ থাক বা না থাক এন্টিসোরিক ঔষধ দিয়া সোরা, প্রাধান্য কমাইয়া পরে এন্টি সিফিলিটিক ঔষধ দিতে হইবে। এই অবস্থায় যদি চিকিৎসা অসমাপ্ত থাকে তবে সিফিলিস সুপ্তাবস্থা প্রাপ্ত হইবে এবং পুনরায় দ্বিতীয় দশার লক্ষণ প্রকাশ পাইবে। সিফিলিসের সাথে যদি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সাইকোসিস বর্তমান থাকে তবে প্রথমে এন্টি সাইকোটিক ঔষধ দিয়া সাইকোসিসের প্রাধান্য কমাইয়া পরে এন্টি সিফিলিটিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। এইভাবে পর্যায়ক্রমে এন্টিসাইকোটিক ও এন্টিসিফিলিটিক ঔষধ দিয়া চিকিৎসা করিতে হইবে যতক্ষণ না ক্ষত স্থানের স্বাভাবিক বর্ণ ফিরিয়া আসে।
বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সোরা ও সাইকোসিসের সহিত যদি সিফিলিস একযোগে বর্তমান থাকে তবে প্রথমে এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করিয়া পরে সিফিলিস ও সাইকোসিসের মধ্যে যাহার প্রাধান্য থাকিবে তাহার ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। সবশেষে তৃতীয়টির ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। পর্যায়ক্রমে অবস্থানুসারে এইভাবে কয়েকবার মায়াজমেটিক পরিবর্তন করিলে আরোগ্য কাজ সমাধা হইবে।
স্থানীয় লক্ষণ যে কোন অবস্থায় অত্যন্ত মূল্যবান লক্ষণ। যতদিন স্থানীয় লক্ষণ বর্তমান থাকে ততদিন এন্টিসিফিলিটিক চিকিৎসা চালাইয়া যাইতে হইবে। স্থানীয় লক্ষণ বিলুপ্তির পর এন্টি সিফিলিটিক চিকিৎসা আরম্ভ করা হইলে পূর্বের ক্ষত অবশ্যই ফিরিয়া আসিবে।



প্রশ্ন-  সিফিলিসদুষ্ট রোগীর রোগলক্ষণের হ্রাসবৃদ্ধি লিখ।

উত্তর: বৃদ্ধি-সূর্যাস্তের পর রাত্রির প্রারম্ভ হইতে সূর্যোদয় পর্যন্ত সিফিলিসদুষ্ট রোগীর যাবতীয় রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায়। কি শারীরিক, কি মানসিক, সর্ব বিষয়েই রাত্রিকালটি ইহার 'রোগীর নিকট বিভীষিকাময় সময়। যদিও প্রকৃতির নিয়ম রাত্রিতে শয্যায় বিশ্রাম গ্রহণ করা তবুও ইহার রোগী মানসিক নৈরাশ্য, উৎকণ্ঠা ও শারিরীক যন্ত্রণা কষ্টের কারণে এক মুহূর্তও শয্যায় শয়ন করিয়া বিশ্রাম লইতে পারে না। ইহা ব্যতীতও অত্যধিক গরম, অত্যধিক ঠাণ্ডা, সমুদ্র বা লবণাক্ত জলাভূমির তীর, সঞ্চালন, ঘর্ম, অস্বাভাবিক স্রাব, সমুদ্র ভ্রমণ এবং মেঘবিদ্যুৎসহ ঝড় হইবার সময় রোগীর রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায়।
হ্রাস-সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত নাতিশীতোষ্ণ অবস্থায় এবং পুনঃ পুনঃ স্থান পরিবর্তনে সিফিলিসদুষ্ট রোগীর রোগলক্ষণ হ্রাস পায়।



প্রশ্ন-  এন্টিসিফিলিটিক ঔষধ কাহাকে বলে? দশটি এন্টিসিফিলিটিক ঔষধের নাম লিখ।

উত্তর : যে সকল ঔষধ সুস্থব্যক্তির দেহে প্রয়োগ করিলে সিফিলিসের রোগলক্ষণের প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করিতে পারে এবং সিফিলিটিক মায়াজম দুষ্ট ব্যক্তির দেহে প্রয়োগ করিলে উহা সমূলে নিরাময় করিতে পারে সে সকল ঔষধসমূহকে এন্টিসিফিলিটিক ঔষধ বলে।
যেমন-অরাম মেট, এসিড নাইট্রিক, কেলি কার্ব, মার্কিউরিয়াস সল, সিফিলিনাম, হিপার সালফার, ল্যাকেসিস, টিউবারকুলিনাম, অরাম মিউর, কেলি আয়োড প্রভৃতি।



প্রশ্ন- সিউডো কথাটির অর্থ কি? 'সিউডো সোর।' কাহাকে বলে?

উত্তর : 'সিউডো' কথাটির অর্থ হইল অপ্রকৃত বা নকল। ইহার অভিধানগত অর্থ হইল 'কৃত্রিম সাদৃশ্য'। অর্থাৎ রূপগত সাদৃশ্য কিন্তু গুণগত বৈসাদৃশ্য।
'সিউডো সোরা' সম্পর্কে বলা যায় যে, ইহাতে সোরাজনিত লক্ষণ বলিয়া মনে হইতে পারে, কিন্তু ইহা হইল সিফিলিসের সঙ্গে সোরার সংমিশ্রিত লক্ষণ। ভ্রমাত্মক সোরার লক্ষণসমূহকে সিউডো সোরা বলা হয়। অর্জিত সিফিলিস সোরার সঙ্গে একসাথে মিলিত হইলে সেই সিফিলিসকে বাহ্যিকভাবে চাপা দিয়া অন্তঃপ্রবিষ্ট করিলে তাহার পরিনতিতে যে গভীর দোষের সৃষ্টি হয় তাহাকে সিউডো সোরা বলা হয়।



প্রশ্ন-  ব্রুফিউলা কাহাকে বলে?

উত্তর: সোরার সহিত সিফিলিসের সংমিশ্রন ঘটিয়া যে দোষের উৎপত্তি হয় তাহার নাম সিউডো সোরা এবং এই সিউডো সোরা যখন রোগীর সন্তানাদির ক্ষেত্রে প্রাপ্তদোষ আকারে বর্তায় তখন তাহা স্ক্রফিউলাতে পর্যবসিত হয়। সোরা ও সিফিলিসের সংমিশ্রণজাত দোষ স্কুল ঔষধ প্রয়োগে চাপা দেওয়া হইলে বিভিন্ন পরিবেশ ও অবস্থায় যখন রোগীর দেহের গ্রন্থিসমূহকে, বিশেষ করিয়া লসিকাগ্রন্থি আক্রমণ করে তখন তাহাকে স্ক্রফিউলা বলে। ইহাকে টিউবারকুলোসিসের পূর্বাবস্থা বলা চলে।



প্রশ্ন-  শ্রুফিউলা 'সিউডো সোরা' হইতে মারাত্মক কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: যে শরীরে সিফিলিস দোষ অর্জিত হইয়া বিসূদশ বিধানে চাপা পড়ে শুধুমাত্র সেই শরীরেই সিউডোসোরা বর্তমান থেকে। সদৃশ বিধানমতে চিকিৎসা করিলে চাপা দেওয়া রোগলক্ষণসমূহের পুনরাবির্ভাব সম্ভব। কিন্তু তাহা না হইলে ঐ ব্যক্তির সন্তানদের দেহে দোষটি অর্জিত অবস্থায় না আসিয়া প্রাপ্ত দোষ আকারেই আসিয়া থাকে এবং স্ক্রফিউলায় পর্যবসিত হয়। তখন সন্তানদের মধ্যে পিতৃদেহের চাপা দেওয়া অবস্থাসমূহের পূনর্বিকাশ আর সম্ভব হয় না, কিন্তু সিউডো সোরার ক্ষেত্রে পূণর্বিকাশ সম্ভব হয়। তাই এই কারণেই স্ক্রফিউলা সিউডোসোরা হইতে মারাত্মক।



প্রশ্ন- কনজামসন বা সাইকো-সোরা কাহাকে বলে?

উত্তর: সোরার সহিত সাইকোসিসের প্রাধান্যযুক্ত সংমিশ্রণজাত টিউবারকুলার অবস্থা যখন বয়স্কদিগের শুষ্কতা ও শীর্ণতাযুক্ত ক্ষয় উৎপাদন করে তখন তাহাকে কনজামশান বা সাইকো-সোরা বলে। কনজামশান অবস্থায় ক্ষত ও পচনের পরিবর্তে একটি ক্রমিক শীর্ণতা দেখা দেয়।



প্রশ্ন- স্ট্রমা কাহাকে বলে?
বা, কনজামশানকে কখন স্ট্রমা বলে?

উত্তর: সোরার সহিত সাইকোসিসের প্রাধান্যযুক্ত সংমিশ্রণজাত টিউবারকুলার অবস্থাটি যখন শুষ্কতা ও শীর্ণতাযুক্ত ক্ষয় উৎপাদন করে তখন তাহাকে কনজামশান বলে এই শীর্ণতা বা শুষ্কতাজনিত ক্ষয় যদি শিশু দেহে দৃষ্ট হয় এবং রিকেটের ন্যায় অবস্থা সৃষ্টি করে তাহাকে স্ট্রমা বলে।



প্রশ্ন- টিউবারকুলোসিস ও কনজামশানের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলোসিস ও কমজানশানের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হইল।
টিউবারকুলোসিস
ক) ইহার বৈশিষ্ট্য ক্ষত ও পচন উৎপাদন করা।
খ) সোরার সহিত সিফিলিসের সংমিশ্রণজাত টিউবারকুলার দোষ হইতে ইহার উৎপত্তি হয়।
গ) ইহা সংক্রামক রোগ।
কনজামশান
ক) ইহার বৈশিষ্ট্য ক্ষত ও পচনের পরিবর্তে ক্রমিক শুষ্কতা ও শীর্ণতাযুক্ত ক্ষয় করা। উৎপাদন
খ) সোরার সহিত সাইকোসিসের সংমিশ্রনজাত টিউবারকুলার দোষ হইতে কনজামশানের উৎপত্তি হয়
গ) ইহা সংক্রামক রোগ নয়।



প্রশ্ন-  ফিউলা ও সিউডোসোরার ফলাফল বর্ণনা কর।

উত্তর: সোরা ও সিফিলিসের সংমিশ্রনজাত একটি বিশেষ অবস্থা হইল ফিউলা ও সিউডো সোরা যাহা তরুণ সিফিলিস রোগ চাপা দেওয়ার ফলে আসিয়া থাকে। ক্রুফিউলা ও সিউডো সোরার অবস্থাটি যে শরীরে সিফিলিস অর্জিত হইয়া বিসূদশ বিধানে চাপা পড়ে শুধু সেই শরীরেই বর্তমান থাকে।
সদৃশ বিধান মতে ইহার চিকিৎসা করিলে চাপা দেওয়া লক্ষণসমূহের পুনরাবির্ভাব সম্ভব এবং সুচিকিৎসিত হইলে আরোগ্য হওয়াও সম্ভব। কিন্তু তাহা না হইলে ঐ ব্যক্তির সন্তানাদির দেহে ব্রুফিউলা ও সিউডো সোরা দোষটি অর্জিত অবস্থায় না আসিয়া প্রাপ্ত দোষ আকারে আসিয়া থাকে। তখন তাহাদের মধ্যে পিতৃদেহের চাপা দেওয়া অবস্থাসমূহের পুণর্বিকাশ আদৌ আর সম্ভব হয় না। ফলে পিতৃদেহের স্ক্রফিউলা ও সিউডো সোরাই সন্তানাদির দেহে টিউবারকুলোসিসের কারণ হইয়া দাঁড়ায়। অর্থাৎ বংশানুক্রমিক ব্রুফিউলা ও সিউডো সোরার প্রবাহটির পরিণাম ফলই হইল টিউবারকুলোসিস।



সমাপ্ত


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ