টিউবারকুলার - ‍Tubercular, ক্রনিক ডিজিজ, ৬ষ্ঠ অধ্যায় - চতুর্থ বর্ষ


৬ষ্ঠ অধ্যায়

টিউবারকুলার
Tubercular





প্রশ্ন-  টিউবারকুলার কাহাকে বলে?

উত্তর: দুই বা ততোধিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্ট অর্থাৎ সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিসের সংমিশ্রণজাত দোষ হইতে রোগপ্রবণতা সৃষ্টিকারী মিশ্র মায়াজমেটিক অবস্থাকে টিউবারকুলার বলে। ইহার কোন নিজস্ব সত্বা নাই।



প্রশ্ন-  টিউবারকুলার দোষের বা মায়াজমের উৎপত্তি কিরূপে হয়?

উত্তর: সোরার সহিত সাইকোসিস কিংবা সিফিলিসের সংমিশ্রনে টিউবারকুলার দোষ উৎপত্তি হয়। পিতা-মাতার দেহে সোরা ও সিফিলিসের মিলন ঘটিলে সন্তানের দেহে বংশগতভাবে প্রাপ্ত দোষের ভিত্তিতে ঐ সংমিশ্রিত অবস্থাটি টিউবারকুলার দোষে রূপান্তরিত হয়।



প্রশ্ন-  কিভাবে টিউবারকুলার ও টিউবারকুলোসিস রোগপ্রবণতা সৃষ্টি হয়।

উত্তর: পিতা কিংবা মাতার দেহে সোরা ও সিফিলিসের সংমিশ্রণ ঘটিবার ফলে সন্তানদের দেহে প্রাপ্তদোষের ভিত্তিতে উক্ত সংমিশ্রনের অবস্থাটি টিউবারকুলার দোষে রূপান্তরিত হয়। টিউবারকুলার অবস্থাটি সুপ্ত অবস্থাতেও থাকিতে পারে। যদি টিউবারকুলার দোষজনিত কোন বহিঃপ্রকাশকে অসদৃশ বিধান মতে চিকিৎসার নামে চাপা দেওয়া হয়, তাহা হইলে অচিরেই টিউবারকুলোসিস রোগ প্রবণতা সৃষ্টি করে।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার ও টিউবারকুলোসিসের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: টিউবারকুলার ও টিউবারকুলোসিসের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে নিরূপণ করা হইল।
 
টিউবারকুলার দোষ
ক) সোরার সহিত সাইকোসিস কিংবা সিফিলিসের সংমিশ্রণের অবস্থা বিশেষকেই টিউবারকুলার দোষ বলা হয়। এই দোষটি নিজ জীবনে অর্জিত হয় না। ইহা অর্জিত আকারে পূর্বপুরুষ হইতে আসিয়া থাকে।
খ) ইহা এক প্রকার ধাতুদোষ বা অবস্থা যাহা উত্তেজক কারণের সংস্পর্শে আসিলে সৃষ্টি হয়।
গ) ইহা বংশানুক্রমিক রূপে প্রসারতা লাভ করিতে পারে কিন্তু কোন অবস্থাতেই সংক্রামক রূপ লাভকরে না।

টিউবারকুলোসিস
ক) টিউবারকুলার দোষের বিকশিত অবস্থাটি যদি অসদৃশ বিধানে চাপা দেওয়া হয় তখনই টিউবারকুলোসিস পীড়া বা ক্ষয়রোগ আসিয়া থাকে।
খ) ইহা টিউবারকুলার ধাতুগত দোষ বা অবস্থার শেষ ফল।
গ) ইহা বংশানুক্রমিক রূপে প্রসারতা লাভ করিতে পারে এবং এক ব্যক্তি হইতে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রামিত হয়।



প্রশ্ন-  একজন বংশগত টিউবারকুলার দোষজ শিশুর বৈশিষ্ট্য কি?
বা, টিউবারকুলার দোষে আক্রান্ত শিশুর লক্ষণ বর্ণনা কর।

উত্তর: বংশগত টিউবারকুলার শিশুর বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হইল।
ক) টিউবারকুলার দোষের শিশুদের জন্মের পর হইতেই নানপ্রকার কষ্টকর লক্ষণে ভুগিতে থাকে। শিশুদের মধ্যে শীর্ণতা ও মাংসপেশীর শুষ্কতা দৃষ্ট হয়।
খ) শিশুর মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও অসন্তুষ্টিরভাব, চঞ্চলতা ও পরিবর্তনশীতা সুস্পষ্টরূপে দেখা যায়। মানসিক ও দৈহিক পরিবর্তনশীলতা ইহার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। নিত্যনূতন বস্তু পাওয়ার আকাংখা, অথচ কোন কিছুতেই পরিতৃপ্তি ঘটে না।
গ) সামান্যতম ঠাণ্ডাও সহ্য হয় না। বারবার ঠাণ্ডা ও সর্দি লাগার প্রবৃত্তি,
ঘনঘন যন্ত্রনাদায়ক শিরঃপীড়া।
ঘ) বার বার ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রমণ।
 ঙ) শিশুর মুখমণ্ডল মলিন কিন্তু গাল দুইটি ঈষৎ আরক্তিম।
চ) দাঁতগুলি শিশুকালেই পচিয়া যায়, শিশুদের দাঁত উঠার সময় নানা জাতীয় রোগে ভোগে।
ছ) যাহাতে পীড়ার বৃদ্ধির ঘটিবে, শিশুর সেইদিকেই ঝোঁক বেশী।
জ) শিশুদের দুধ সহ্য হয় না। টক মিষ্টি, চকখড়ি, পেন্সিল, মাটি ইত্যাদি অপাচ্য দ্রব্য আহার করিতে চায়। শিশুকাল হইতে মৎস্যাদি জান্তব্য খাদ্যে অত্যধিক রুচি থাকে।
ঝ) শিশুর অত্যধিক কৃমির ধাত।
ঞ) শিশুদের চোখের তারা খুব প্রসারিত। প্রায়ই কানে পুঁজ হইতে দেখা যায়। সেসাথে গলা ব্যথাও দেখা দিতে পারে। বার বার গ্লান্ড স্ফীতি ঘটে।
ট) শিশু নিদ্রাকালে চিৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠে।
ঠ) শিশু রোগীর বুকটি অপ্রশস্ত ও সরু। বুকের উপর দিকটা সামান্য উঁচু থাকে, ঠিক যেন পায়রার বুক।
ড) শিশু রোগীর অস্থিসমূহ সহজে পুষ্ট হয় না, মাংসপেশী দৃঢ় ও সবল হয় না। শিশুরা অনেক দেরীতে হাঁটিতে শিখে।
ঢ) সন্ধ্যার দিকে অল্প অল্প জ্বরসহ শুষ্ক কাশি।
ণ) প্রচুর পানাহার সত্বেও ক্ষুধা থাকে এবং ক্রমিক দুর্বলতা ও শীর্ণতা প্রকাশ পায়।
ত) রোগী কুকুর দেখিলে অত্যন্ত ভীত হয়।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার দোষের মানসিক লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর মানসিক লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগীর মানসিক অসন্তোষ, অসহিষ্ণুতা, চিন্তাশূন্যতা, চঞ্চলতা ও পরিবর্তনশীলতা বিশেষরূপে দৃষ্ট হয়।
খ) রোগীর নিত্যনূতন আকাংখা, নিত্যনূতন অভিরুচি, একটি পর আর একটি চায়, পাইলে পুনরায় আর একটি পাইবার অভিলাষ, যেন চাওয়া পাওয়ার শেষ নাই, কিছুতেই যেন শান্তি হয় না।
গ) যে কাজ কর্ম ও আচরণে রোগীর মনে অশান্তির সৃষ্টি হয় রোগী সেই কাজকর্ম ও আচরণ বেশী করে।
ঘ) যাহা পানাহার করিলে রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায় রোগীর তাহাই পানাহার করিতে অদম্য অভিলাষ থাকে।
ঙ) কঠিন প্রকৃতির রোগলক্ষণকেও রোগী উপেক্ষা করে, 'যে কোন অবস্থাতেই উৎকণ্ঠিত হয় না, রোগী সর্ববিষয়ে উদাসীন।
চ) অত্যধিক কামস্পৃহার প্রবৃত্তির 'ফলে রোগী হস্তমৈথুন করিয়া কিংবা অন্য কোনও অবৈধ উপায়ে শুক্রক্ষয় করে।
ছ) রোগী মাটি, খড়িমাড়ি, কয়লা, কাঠ কয়লা, চুন, চা, দোক্তা ইত্যাদি অস্বাভাবিক বস্তু খাইতে চায়।
জ) রোগী কুকুরকে খুব বেশী ভয় করে।



প্রশ্ন-  টিউবারকুলার রোগীর ধাতুগত ও চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর ধাতুগত ও চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগী ক্রোধপরায়ন, অসহিষ্ণু, অসন্তুষ্ট, চঞ্চল ও পরিবর্তনশীল মেজাজের।
খ) সর্ববিষয়ে চিন্তাশূণ্যতা ও উদাসীনতা।
গ) সকল বয়সের রোগীরই নিত্যনূতন আকাংখা, নিত্যনূতন অভিরুচি, একটির পর আর একটি পাইতে চায়, পাইলে তাহা ত্যাগ করিয়া আর একটি পাইবার অভিলাষ, যেন কিছুতেই শান্তি নাই।
ঘ) চিকিৎসা সত্ত্বেও বারবার একই রোগলক্ষণ আসা যাওয়া করে। আর না হয় বার বার বিভিন্ন যন্ত্রে রোগলক্ষণের ঘুরিয়া ফিরিয়া আবির্ভাব হয়।
ঙ) বার বার ঠাণ্ডা ও সর্দি লাগার প্রবণতা দৃষ্ট হয়। বার বার ব্রঙ্কাইটিস ও নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা।
চ) যথেষ্ট পানাহার সত্বেও কোন কারণ ছাড়াই ক্রমিক শীর্ণতা, শুদ্ধতা ও দুর্বলতা প্রকাশ পায়। খাদ্যবস্তু হইতে সারাংশ গ্রহণ করিবার কোন শক্তি থাকে না।
ছ) দেহের যাবতীয় গ্লান্ডসমূহের স্ফীতি দৃষ্ট হয়। গালগলার নিচে বা কুচকীস্থানে বা উদরের গ্লান্ড স্ফীতি।
জ) রোগীর মনে অত্যধিক কামস্পৃহার প্রবৃত্তি সদা জাগ্রত থাকিবার ফলে রোগী হস্তমৈথুন করিয়া কিংবা কোন অবৈধ পন্থায় শুক্রক্ষয় করে।
ঝ) রোগী কুকুর দেখিলে ভয়ে ভীত হয়।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর মস্তকের রোগলক্ষণসমূহের বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার দুষ্ট রোগীর মস্তকের রোগলক্ষণসমূহের বর্ণনা প্রদান করা হইল।
ক) অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শিররোগ, সাধারণতঃ প্রত্যেক ছুটির দিনে ডান চক্ষু হইতে বাম কর্ণ পর্যন্ত একটি সরল রেখার ন্যায় ধাবিত হয়।
খ) যানবাহনে চড়িলে কিংবা অপরিচিত ব্যক্তির নিকট গমন করিলে শিররোগ দৃষ্ট হয়। ক্ষুধাজনিত শিরঃপীড়া।
গ) শিররোগের সহিত অত্যন্ত দুর্বলতা ও হস্তপদ শীতল হইতে থাকে যাহা নাসিকা পথে রক্তস্রাব হইলে উপশম হয়।
ঘ) মস্তকের কেশগুচ্ছ রুক্ষ, কর্কশ, জটাবাঁধা এবং অগ্রভাগ ফাটা ফাটা।
ঙ) দদ্র জাতীয় চর্মরোগ- স্নান করিলে, মস্তকে জল ঢালিলে এবং উন্মুক্ত বাতাসে বৃদ্ধি পায়।
চ) মস্তকে দুর্গন্ধযুক্ত ঘর্ম দেখা দেয়।
ছ) মাথায় জল জমা দরুন যন্ত্রণা হয়। শিশু হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করে।



প্রশ্ন-  টিউবারকুলার রোগীর চক্ষু রোগ লক্ষণের বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর চক্ষুর রোগলক্ষণের বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) অঞ্জনী জাতীয় যাবতীয় চক্ষুরোগ সৃষ্টি হইতে পারে।
খ) পুরাতন জাতীয় চক্ষুক্ষত, আলোকভীতি, এমনকি কৃত্রিম আলো একেবারেই অসহ্য বোধ।
গ) চক্ষুর যাবতীয় স্রাব, চক্ষুর স্নায়বিক যাতনা, এই যাতনা উত্তাপে উপশমিত হয়।
ঘ) অধ্যয়ন করিতে করিতে চক্ষুর পাতা মুদিয়া আসে। চক্ষুতে ব্যথা বোধ হয়। চক্ষু বন্ধ করিলে চোখ ব্যথার উপশম হয়।
ঙ) শিরঃপীড়ার পূর্বে দৃষ্টিশক্তি কমিতে থাকে এবং মাথাঘোরার সহিত দৃষ্টিশক্তি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।
চ) চক্ষুর পাতা ফোলা, লালবর্ণ।



প্রশ্ন-  টিউবারকুলার রোগীর কর্ণের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর কর্ণের রোগ লক্ষণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) শিশুকালে হাম, বসন্ত, স্কার্লেট ফিভার প্রভৃতি কঠিন রোগে ভুগিয়া কর্ণদ্বয় হইতে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজস্রাব হইতে থাকে। মেনিনজাইটিস রোগ ভোগকালে কর্ণে ফোঁড়া।।
খ) কর্ণে শুষ্কজাতীয় চর্মপীড়ার আবির্ভাব এবং বার বার কর্ণমূল গ্রন্থি, গ্লাণ্ডের স্ফীতি ও তৎসহ টনসিলের প্রদাহ দেখা দেয়।
গ) সামান্য ঠাণ্ডাতে কানের যন্ত্রণা, পূজ, সে সাথে জ্বর হয়।
ঘ) দীর্ঘদিন যাবত যে কোন প্রকার কর্ণস্রাবের ফলে শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
ঙ) কর্ণের যাবতীয় রোগকষ্ট দিবাভাগে হ্রাস পায় এবং রাত্রিকালে বৃদ্ধি পায়।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর নাসিকার রোগলক্ষণের বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর নাসিকার রোগলক্ষণের বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রছাত্রীদের বিনাকারণে বা সামান্য কারণেই রক্তোচ্ছাসের ফলে নাসিকা হইতে রক্তস্রাব হয়।
খ) নাসিকার পলিপাস হইতে প্রচুর পরিমাণে রক্তস্রাব হয়।
গ) জ্বর অবস্থায় নাসিকা পথে রক্তস্রাব। চক্ষু, নাসিকা ও সমগ্র মুখমণ্ডলে রক্তোচ্ছাসের অনুভূতি দেখা দেয়।
ঘ) সামান্য কারণে, ঠাণ্ডা লাগার ফলে বার বার সর্দি লক্ষণ দেখা দেয়, সর্দি স্রাবে আঁস্ট গন্ধ।
ঙ) সর্দি স্রাবের রং হলুদবর্ণের এবং পুরাতন মাখন বা গন্ধকের গন্ধযুক্ত।
চ) সামান্য কারণে নাক বন্ধ হইয়া যায়, সেজন্য রোগী মুখ দিয়া শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর মুখমণ্ডলের রোগলক্ষণের বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর মুখমণ্ডলের রোগলক্ষণের বর্ণনা করা হইল।
ক) রোগীর মুখটি বিবর্ণ ও মলিন কিন্তু গাল দুইটি ঈষৎ আরক্তিম এবং এই আরক্তিমতা সাধারণতঃ শিশুদের দন্তোদামনের সময় কিংবা কৃমি লক্ষণের সহিত বিশেষরূপে বিকশিত হয়।
খ) রোগীর ঠোঁট দুইটি লালবর্ণ ধারণ করে এবং কখনও কখনও ঐ লালবর্ণের সহিত শুষ্ক হইতেও দেখা যায়।
গ) প্রাতঃকালে নিদ্রা ভঙ্গের পর সমগ্র মুখমণ্ডলটি অর্থাৎ নাসিকা, চক্ষু, ঠোঁট সর্বত্রই একটি স্ফীতভাব বিদ্যমান থাকে।
ঘ) রোগী একটি গাল গরম কিন্তু অন্য গাল ঠাণ্ডা বোধ করে।
ঙ) রোগীর মুখমণ্ডলে ক্ষুদ্রাকৃতির যন্ত্রণাদায়ক স্ফোটক বা বয়ঃব্রণ হয়।
চ) রোগীর চক্ষুদ্বয় কোটরাগত, মুখমণ্ডল ফুটফুটে অথচ দেহের অন্যান্য অঙ্গ শুষ্ক ও শীর্ণ।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর মুখগহ্বরের রোগলক্ষণ-সমূহের বর্ণনা দাও।

উত্তর : নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর মুখগহ্বরের রোগলক্ষণসমূহের বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) রোগীর দন্তমাড়ি ও মুখগহ্বর হইতে প্রচুর পরিমাণে উজ্জ্বল লালবর্ণের তাজা রক্ত স্রাব হয়।
খ) দাঁত মাজিবার সময়ও দাঁতের মাড়ি হইতে প্রচুর পরিমাণে তাজা রক্তস্রাব হয়।
গ) রোগীর দাঁতগুলি অসম এবং সারিবদ্ধ নহে।
ঘ) শিশুদের দন্ডোদাম হইতে না হইতেই দাঁতগুলি পঁচিয়া যায়।'
ঙ) দন্তোদামের সময় জ্বর, উদরাময়, আমাশয়, মেনিনজাইটিস প্রভৃতি রোগ দৃষ্ট হয়।
চ) গাল-গলার গ্লাণ্ড ফোলে, বার বার টনসিল প্রদাহ এবং মুখ হইতে লালাস্রাব নিঃসরণ।
ছ) জিহ্বায় শ্বেতবর্ণের বা হলুদ বর্ণের ময়লা জমে।
জ) জিহ্বার অগ্রভাগে শ্বেতবর্ণের ক্ষতসহ প্রদাহ হয়, যাহা দুই এর বর্ণ বিশিষ্ট।
ঝ) মুখে দুর্গন্ধ, পূজ ও রক্তের স্বাদ, কফস্রাব মিষ্টি, সময়ে সময়ে লবণাক্ত বা ডিম পঁচার ন্যায় স্বাদযুক্ত কিংবা একেবারেই স্বাদহীন।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর উদর বা পাকাশয়ের রোগলক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর উদর বা পাকাশয়ের রোগ লক্ষণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) যে সকল খাদ্য ও পানীয় পানাহার করিলে রোগ লক্ষণ বৃদ্ধি পায়, রোগী সে সকল খাদ্য পানীয়ের প্রতি অদম্য আকর্ষণ বোধ করে এবং পানাহার করে।
খ) চিকিৎসকের নিষেধ সত্বেও রোগী ঐ সকল খাদ্য পানীয় লুকাইয়া পানাহার করে।
গ) অত্যধিক ক্ষুধা ও আহার সত্বেও রোগী জীর্ণশীর্ণ হইয়া যায়।
ঘ) চর্বিজাতীয় ও লবণাক্ত খাদ্য পানীয় বেশী পছন্দ করে। মাংস খাইবার অদম্য অভিলাষ ও মদ্যপানের অভিলাষ থাকে কিন্তু শিশুদের গো দুগ্ধ অপছন্দ।
ঙ) নিম্নোদরে অত্যন্ত শূলব্যথা। উদরে বায়ু সঞ্চয়জনিত কারণে নানা প্রকার শব্দের অনুভূতি, তৎসহ প্রাতঃকালীন' উদরাময় ও পানাহারের পরে উদরাময়ে দেখা দেয়। নিম্নোদরের পেশীগুলি শ্লথভাব।
চ) দন্তোদামের সময়ে পিত্তহীন, ছাইবর্ণবিশিষ্ট, পরিবর্তনশীল এবং সময়ে সময়ে রক্তবর্ণ মলত্যাগ করিতে দেখা যায়।
ছ) মল পিচ্ছিল, রক্তযুক্ত, ভ্যাপসা বা ডিমপচার ন্যায় দুর্গন্ধ বিশিষ্ট।
জ) টিউবারকুলার দোষে উদ্ভূত উদরের শূলব্যথায় রোগী জীর্ণশীর্ণ হইয়া পড়ে।
ঝ) গুহ্যপথ হইতে যে কোন কারণে প্রচুর রক্তস্রাব এবং কৃমিলক্ষণ দেখা দেয়।
ঞ) মলত্যাগের পূর্বে বমনোদ্রেক এবং মলত্যাগের পরে অতিশয় দুর্বলতা প্রকাশ পায়। রোগী নির্জনতা পছন্দ করে।
ট) পোড়ামাটি, খড়িমাটি, কাঠকয়লা, চা, দোক্তা, চুন ইত্যাদি অখাদ্য খাইবার আকাংখা।
ঠ) উদরের যাবতীয় গ্লান্ড বৃদ্ধি পায়।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর খাদ্যে ইচ্ছা অনিচ্ছা লিখ।

উত্তর : যে সকল খাদ্যপানীয়ে রোগলক্ষণের বৃদ্ধি হয় রোগী তাহাই আকাংখা করে এবং ঐ সকল খাদ্য পানীয় লুকাইয়া পানাহার করে। চর্বিযুক্ত ও লবণাক্ত খাদ্য পানীয় বেশী পছন্দ করে, মাংস খাইবার অদম্য অভিলাষ ও মদপানের অভিলাষ থাকে। অখাদ্য কুখাদ্য বিশেষ করিয়া চা, দোক্তা, মাটি, চুন, কয়লা প্রভৃতি বস্তু খাইতে চায়। শিশুদের গোদুগ্ধ পান অপছন্দ।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর মলদ্বার ও বা গুহ্যপথের লক্ষণাবলীর বর্ণনা কর।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর গুহ্যপথের লক্ষণাবলীর বর্ণনা করা হইল।
ক) স্থায়ী উদরাময় হেতু দৈহিক রসরক্তের ক্ষয়। দন্তোদামের সময় পিত্তহীন, ছাইবর্ণবিশিষ্ট, পরিবর্তনশীল এবং সময়ে সময়ে রক্তবর্ণ মলত্যাগ করিতে দেখা যায়।
খ) গুহ্যপথ হইতে যে কোন কারণে প্রচুর রক্তস্রাব হয় এবং যাবতীয় কৃমি লক্ষণ দেখা দেয়।
গ) অর্শ ও ভগন্দর জাতীয় গুহ্যপথের পীড়ার সহিত পর্যায়ক্রমে হৃদলক্ষণ হৃদযন্ত্রে যাওয়া আসা করে। ভগন্দর চাপা পড়িলে হৃদলক্ষণ বা অর্শপীড়া অস্ত্রোপচারের পর হাঁপানী লক্ষণ দেখা দেয়।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর হৃদযন্ত্রের রোগলক্ষণের বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর হৃদযন্ত্রের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) হৃদযন্ত্রের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের রোগলক্ষণ রোগীর মনে কোনপ্রকার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা আশংকার সৃষ্টি করিতে পারে না।
খ) এই বিষয়ে চিকিৎসক ও রোগীর আত্মীয় স্বজন সকলেই অত্যন্ত চিন্তান্বিত কিন্তু রোগী এইরূপ ভাব প্রকাশ করে যেন তাহার কিছুই হয় নাই।
গ) হৃদযন্ত্রের রোগ লক্ষণের সহিত সাময়িক সংজ্ঞা লোপের ভাব, দৃষ্টিহীনতা, কর্ণে নানা প্রকার শব্দ এবং অতিশয় দুর্বলতা দৃষ্ট হয়।
খ) বসিয়া থাকিলে উক্ত লক্ষণগুলির বৃদ্ধি এবং শয়নে উপশম হয়।
ঙ) হৃদযন্ত্রের রোগলক্ষণসমূহ অর্শ ও ভগন্দরের সহিত পর্যায়ক্রমে
আসাযাওয়া করে অর্থাৎ অর্শ ও ভগন্দর চাপা পড়িলে কিংবা উপশমিত হইলে হৃদযন্ত্রের রোগলক্ষণ দেখা দেয়।
চ) রোগীর নাড়ী সূতার ন্যায় ক্ষীণ কিন্তু অতিশয় দ্রুত চলে।



প্রশ্ন-  টিউবারকুলার রোগীর বক্ষস্থল দেখিতে কিরূপ?

উত্তর: টিউবারকুলার দুষ্ট রোগীর বক্ষস্থলটি শীর্ণ, শুষ্ক প্রায় ও অপ্রশস্ত,
বক্ষস্থলের উর্ধাংশ সামান্য উঁচু-ঠিক যেন একটি পায়রার বক্ষস্থলের অনুরূপ। রোগী বক্ষস্থলটি সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত ও সংকুচিত করিতে পারে না।



প্রশ্ন-  টিউবারকুলার রোগীর শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।
উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) রোগীর বক্ষস্থলটি শীর্ণ, শুষ্ক প্রায় ও অপ্রশস্ত বলিয়া রোগী বক্ষদেশটি সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত ও সংকুচিত করিতে পারে না।
খ) ফুসফুসের দুর্বলতা, সংকোচন প্রসারণের অক্ষমতার ফলে রোগী প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করিতে পারে না।
গ) উক্ত কারণে পেশী ও তন্তসমূহ অপুষ্ট থাকে, শরীরস্থ রক্ত কণিকাগুলি দুর্বল হইয়া পড়ে, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিনষ্ট হইবার কারণে শ্বাসযন্ত্রে জীবাণুঘটিত রোগ দেখা দেয়।
ঘ) ঠাণ্ডা লাগার ভয়ে রোগী সব সময়েই বুকটি ঢাকিয়া রাখিতে বাধ্য হয়।
ঙ) রক্তের সহিত অক্সিজেন উত্তমরূপে সংমিশ্রিত না হইবার ফলে রোগী ঘন ঘন শ্বাস লইতে বাধ্য হয়।
চ) খুসখুসে কাশি হইলে শ্বাসযন্ত্রের দুর্বলতার কারণে রোগী বক্ষ সম্প্রসারিত করিয়া কাশিতে পারে না। কাশির সহিত পূজের ন্যায় ও চটচটে দুর্গন্ধযুক্ত, মিষ্টি ও লবণাক্ত স্বাদযুক্ত শ্লেষ্মা উঠে।
ছ) কাশির সহিত রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা বা শুধু রক্ত নির্গত হইতেও দেখা যায়, অন্যান্য কাশির শ্লেষ্মার ন্যায় ইহার কাশির শ্লেষ্মা পানিতে না ডুবিয়া ভাসিয়া উঠে।
জ) সর্দি কাশির সহিত রোগীর টনসিল, গলদেশের গ্লান্ড স্ফীত হইতে দেখা যায়।
ঝ) বক্ষক্ষলে স্নায়বিক যাতনার অনুভূতি পরিস্ফুট থাকে। সিঁড়ি দিয়া উঠিবার সময় দারুণ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
ঞ) গুহ্যপথের পীড়া, অর্শ, শিরঃপীড়া প্রভৃতি পীড়ার সহিত পর্যায়ক্রমে শ্বাসযন্ত্রের পীড়া লক্ষণ দেখা দেয়।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর মূত্রযন্ত্রের রোগ লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর মৃত্রযন্ত্রের রোগলক্ষণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হইল।
মূত্রযন্ত্রে টিউবারকুলার দোষহেতু যে সকল লক্ষণ দেখা যায় তাহা সোরার সহিত সাইকোসিসের প্রাধান্যজনিত অবস্থা হইতে বিশেষভাবে আসিয়া থাকে।
ক) মূত্রত্যাগের পরে একটি অস্থিরতা ও দুর্বলতার অনুভূতি। অবিরত মূত্রত্যাগহেতু স্থায়ীভাবে সঞ্জীবনী রসের ক্ষয়ক্ষতি।
খ) মূত্রত্যাগকালে রোগী দারুন কষ্ট অনুভব করে।
গ) স্বচ্ছ পানির ন্যায় বর্ণহীন প্রচুর পরিমাণে মূত্রত্যাগ করে।
ঘ) মূত্রে ফসফেট, শর্করা অথবা প্রোটিনে পূর্ণ থাকে। ডায়াবেটিস রোগগ্রস্ত ব্যক্তির সূত্রে প্রায়ই এলবুমেন বিদ্যমান থাকে।
ঙ) মূত্র পচা ও ভ্যাপসা গন্ধযুক্ত।
চ) বিছানায় শুইবার সঙ্গে সঙ্গে শিশু অসাড়ে মূত্রত্যাগ করে।
ছ) প্রস্রাব দ্বার দিয়া রক্তস্রাব হয়। নিদ্রাঘোরে বিনাস্বপ্নে বীর্যপাত হয়।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর পুংজননেন্দ্রিয়ের লক্ষণা-বলীর বর্ণনা কর।

উত্তর : নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর পুংজননেন্দ্রিয়ের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) জননেন্দ্রিয় পথে রক্তস্রাব হয়।
খ) ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন না দেখিয়াই বীর্যপাত ঘটে।
গ) প্রায়শই অনৈতিক পন্থায় শুক্রক্ষয় হয়।
ঘ) মন সব সময়েই উৎসাহশূণ্য ও বিষণ্ণ থাকে।
ঙ) যতই বীর্যক্ষয় হয় ততই স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়।
চ) প্রস্রাব ও মলত্যাগ করার সময় কিংবা সামান্য মানসিক উত্তেজনা ও অবসাদে অনিচ্ছা সত্বেও আপনা হইতে বীর্য বাহির হইয়া যায়।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার রোগীর স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের রোগলক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) দীর্ঘদিন ধরিয়া প্রচুর অবসাদক মাসিক ঋতুস্রাব দেখা দেয়। নিয়মিত মাসিক স্রাবের অনেক পূর্বে এমনকি ২/৩ সপ্তাহ অন্তর হয়।
খ) স্রাব তরল, প্রচুর ও ফ্যাকাশে লালবর্ণের। স্রাবের সহিত রোগী অত্যধিক দুর্বলতা বোধ করে।
গ) ঋতুস্রাবের আধিক্যের ফলে মাথাঘোরা, মাথাধরা, মাথাব্যথা, কোমর ব্যথা, অত্যন্ত দুর্বলতা, সংজ্ঞা লোপ ও হজম শক্তির গোলযোগ কিছুকাল চলিবার পরে, কিছুদিন বিরতি দিয়া পুনরায় আবির্ভূত হয়।
ঘ) প্রায়ই স্রাবের সহিত উদরাময় দেখা দেয়। সে সাথে বমি বমি ভাব, বমি, ললাটে শীতলঘর্ম, নাসিকা হইতে রক্তস্রাব, জ্বর, ক্ষুধাহীনতা, চোখে নানাপ্রকার বর্ণ দেখা, কানে নানাপ্রকার শব্দ শোনার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
ঙ) ঋতুস্রাবের অবসান হইলে মুখের চেহারা বিবর্ণ, চক্ষু কোটরাগত হয়, চোখের চারিদিকে কালিমা পড়াসহ রোগী একেবারে রক্তশূণ্য ও অবসন্ন হইয়া পড়ে।
চ) ঋতুস্রাবের পূর্বে ও পরে তরল, ক্ষতকর প্রদরস্রাব দৃষ্ট হয় এবং যেখানে লাগে সেখানেই চুলকায় ও সুড়সুড় করে।
ছ) ডিম্বাধার ও তৎসংক্রান্ত নানা প্রকার রোগলক্ষণ অত্যন্ত বিভীষিকাময় যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা লইয়া আবির্ভূত হয়। জরায়ুর গঠন বিকৃ…
ক) জরায়ু, ডিম্বাধার ও তৎসংক্রান্ত জটিলতাসহ দুর্বলকর ঋতুস্রাবের অবসান হইলে রোগীর চক্ষু কোটরাগত হয়, চোখের চারিদিকে কালিমা পড়ে। রোগী একেবারে রক্তশূণ্য ও অবসন্ন হইয়া কিছুদিন চলিতে চলিতে শেষাবধি গর্ভধারণ করে।
খ) দিনের পর দিন জটিলতাপূর্ণ প্রসব ব্যথা চলিতে থাকে কিন্তু অত্যন্ত দুর্বলতার কারণে প্রসব করিবার শক্তি থাকে না।
গ) যদিও বা. কোন মতে প্রসব কার্যটি সম্পন্ন হয় তবুও সন্তান পালনের সামর্থটুকু ফিরিয়া পাইতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। এই কারণেই ঐ প্রকার মাতার সন্তানেরা প্রসবাগার হইতেই শুষ্কজাতীয় ক্ষয়পীড়ায় ভুগিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
ঘ) ২/১টি সন্তান প্রসবের পর জরায়ুর নানা জাতীয় স্থানচ্যুতি বা রহিনির্গমন লক্ষণ প্রকাশ পাইয়া রোগিনীর জীবনকে দুর্বিসহ করিয়া তোলে।
ঙ) কাহারও বলক্ষয়কারী, সুড়সুড়ানিযুক্ত ও হাজাজনক প্রদরস্রাব মাসিকের আগে ও পরে হইতে দেখা যায়।



প্রশ্ন-  টিউবারকুলার রোগীর চর্মের রোগ লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর চর্মের রোগলক্ষণাবলীর বর্ণনা প্রদান করা হইল।
ক) দাদ, একজিমা ও হার্পিস জাতীয় চর্মরোগ দৃষ্ট হয়। প্রায় সব ধরনের দাদ সাইকোসিস। দাদ চাপা দেওয়ার ফলে টিউবারকুলার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
খ) একের পর এক ফোঁড়ার বিকাশ সাধন এবং উহাতে প্রচুর পরিমাণে পুঁজস্রাবসহ জ্বর হয়। দুষ্ট জাতীয় ফোঁড়া।
গ) মশা, মাছি ছারপোকার দংশিত স্থানটি পাকিয়া যায় কিংবা সামান্য আঘাতজনিত ক্ষতস্থানটি শুকাইতে বিলম্ব হয়।
ঘ) কুষ্ঠ পীড়া, গলিত কুষ্ঠ ও শ্বেতকুষ্ঠ দেখা দেয়।
ঙ) গর্ভাবস্থায় স্ত্রীলোকদের যোনীপথে যন্ত্রণাদায়ক উদ্ভেদ, চুলকানি পূর্ণ উদ্ভেদ।
চ) চর্মরোগ রাত্রিকালে, জামা কাপড় ছাড়িলে, শয্যাতাপে, স্পর্শে, চুলকাইলে, রোগের বিষয়ে চিন্তা করিলে বৃদ্ধি পায় এবং ঠাণ্ডায় উপশমিত হয়।
 


প্রশ্ন-  টিউবারকুলার রোগীর নখের রোগ লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর নখের রোগ লক্ষণের বর্ণনা দেওয়া হইল।
ক) নখের মধ্যে তীব্র সূচ ফোটানোর ন্যায় ব্যথার অনুভূতি।
খ) নখগুলি নানা প্রকার দাগযুক্ত ও ভঙ্গুর।
গ) নখগুলি দেখিতে অসম, ফাটাফাটা এবং ঢেউ খেলানো।
ঘ) নখ ও মাংসের সংযোগস্থলে পুঁজ জমে।
ঙ) নখগুলি মাংস হইতে সহজেই পৃথক হইয়া যায়।
চ) রোগীর নখের অগ্রভাগ সরু না হইয়া বরং আগাগোড়া একহারা গড়নের হয়।



প্রশ্ন- সুপ্ত টিউবারকুলার দোষের লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে সুপ্ত টিউবারকুলার দোষের লক্ষণাবলীর বর্ণনা প্রদান করা হইল।
ক) শিশুকাল হইতেই ঘনঘন সর্দি লাগে, আজ এ রোগ, কাল সে রোগ হয়। আজ এক যন্ত্র, কাল অন্য যন্ত্র রোগাক্রান্ত হয়, 'ফলে রোগী দিনদিন জীর্ণশীর্ণ ও দুর্বল হইয়া পড়ে।
খ) রোগীর মানসিক অসন্তোষ, অসহিষ্ণুতা, চিন্তাশূণ্যতা, চঞ্চলতা ও পরিবর্তনশীলতা বিশেষরূপে দৃষ্ট হয়।
গ) শিশুর মন পরিবর্তনশীল। নিত্যনতুন আকাংখা, নিত্যনূতন অভিরুচি, আজ যে খেলনা চায় কাল সে খেলনা ত্যাগ করিয়া অন্য খেলনা বা অন্য কিছু চায়। যেন চাওয়া পাওয়ার শেষ নাই।
ঘ) ছাত্র হইলে কিছুদিন এক বিষয়ে লেখাপড়া করিয়া পুনরায় অন্য কোন বিষয়ে লেখাপড়া করিতে চায়।
ঙ) নিজের ক্ষতি হইতে পারে বা যাহাতে রোগ বৃদ্ধি হয় রোগী বার বার তাহাই করে এবং তাহাতেই সে মনে তৃপ্তি পায়।
চ) বার বার সর্দি আক্রমণ করে, সর্দিজনিত নাসিকা সুড়সুড়ানির সহিত নাসিকা পথে রক্তস্রাব দেখা দেয়।
ছ) রোগীর মনে অত্যধিক কামস্পৃহার প্রবৃত্তি সদাজাগ্রত থাকিবার ফলে রোগী হস্তমৈথুন করিয়া কিংবা কোন অবৈধ পন্থায় শুক্রক্ষয় করে।
জ) নখগুলি ভঙ্গুর হয়, নানাপ্রকার দাগযুক্ত, ফাটফাটা, ঢেউ খেলানো, নখের আগাগোড়া একহারা ধরনের।



প্রশ্ন- টিউবারকুলার দোষের আরোগ্যের প্রকৃত সময় কখন?

উত্তর: টিউবারকুলার দোষটি যতক্ষণ পর্যন্ত টিউবারকুলোসিসে রূপান্তরিত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ইহা আরোগ্যের উপযুক্ত সময়। বিশেষ করিয়া টিউবারকুলার দোষটি বিকশিত হওয়ার পূর্বে সুপ্ত অবস্থায় থাকাকালীন চিকিৎসা করা উচিত। টিউবারকুলার দোষ একজাতীয় ধাতুদোষ বা অবস্থা যাহা পিতামাতার কাছ হইতে বংশগতভাবে প্রাপ্ত দোষের ভিত্তিতে গড়িয়া উঠে। বংশগত সোরা সিফিলিসের ধারাটিই টিউবারকুলোসিস, তাই রোগীর বংশগত ইতিহাস সংগ্রহ করিয়া ধাতুদোষ অনুসারে সুপ্তাবস্থাতেই সদৃশ বিধানমতে এই দোষ আরোগ্যের প্রকৃত সময়।



প্রশ্ন-  টিউবারকুলার রোগীর প্রান্তদেশের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।

উত্তর: নিম্নে টিউবারকুলার রোগীর প্রান্তদেশের লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) ইহার রোগীর অস্থিসমূহ সহজে শক্ত হইতে চায় না। বিশেষ করিয়া শিশু রোগী অনেক দেরীতে চলিতে শিখে। বয়স্ক রোগী সবল পদক্ষেপে বা দ্রুত গতিতে চলিতে পারে না। বৃদ্ধরোগী প্রায়ই পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী হইয়া পড়ে।
খ) শিশুদের পোলিও রোগ। কোন অংগ শীর্ণ হইয়া যায়।
গ) অস্থিতে অব্যক্ত যন্ত্রণা, অস্থির ক্ষয়রোগ।
ঘ) প্রান্তদেশ সমূহের বিশেষতঃ হাত পায়ের অতিশয় শীতলতা, অসাড়ভাব এবং শুষ্কতা।
ঙ) হাত ও পায়ের তলায় ঘাম দেখা দেয়।
চ) নখের মধ্যে তীব্র সূচ ফোটান বেদনার অনুভূতি। নখগুলি ভংগুর ফাটাফাটা, ঢেউ খেলানো মত ও অসম হয়।
ছ) রোগীর আঙ্গুলগুলি আগাগোড়া সমান-অগ্রভাগ সরু নয়।
 


প্রশ্ন-  টিউবারকুলার দোষ হইতে কি কি রোগ লক্ষণাবলীর আবির্ভাব হইতে পারে।

উত্তর: টিউবারকুলার দোষ হইতে নিম্নলিখিত রোগলক্ষণাবলীর আবির্ভাব হইতে পারে-
শুষ্কজাতীয় হাঁপানি, দাদ, একজিমা, উন্মাদ, কৃমি, উদরী, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, যন্ত্রণাবিহীন স্বরভঙ্গ ও অন্ধত্ব, দৈহিক শুষ্কতা, মেরুমজ্জার ক্ষয়, অস্ত্রাবরোধ, কার্বংকল জাতীয় ফোঁড়া, শৈশবকালীন শয্যামূত্র, প্রস্রাবের সহিত যে কোন প্রকার পদার্থ বা অসাড়ে ধাতু নির্গমন, নিউমোনিয়া, গালগলা ও স্তনের মধ্যে স্থায়ীভাবে গ্রন্থিস্ফীতি, শয্যাক্ষত, পাকস্থলী ও অস্ত্রের ক্ষত, যে কোন স্থানের ক্যান্সার, প্রসবকালীন মূর্ছা ও প্রসবান্তিক উন্মাদ রোগ প্রভৃতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ