তৃতীয় বর্ষ
তৃতীয় অধ্যায়
একদৈশিক চির রোগসমূহ- স্থানীয় রোগসমূহ: অনুচ্ছেদ নং ১৭২-১৮৪
অনুচ্ছেদ নং-১৭২
রোগের লক্ষণ অত্যন্ত কম হলে আরোগ্যের পথে সেরূপ অসুবিধা হয়। এরূপ ক্ষেত্রে আমাদের যত্নের সাথে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ এই বাঁধা অপসারণ করা হলে সম্ভাব্য সকল প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ এই চিকিৎসা পদ্ধতির অন্যান্য সকল বাঁধা দূরীভূত হবে।
রোগের লক্ষণ অত্যন্ত কম হলে আরোগ্যের পথে সেরূপ অসুবিধা হয়। এরূপ ক্ষেত্রে আমাদের যত্নের সাথে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ এই বাঁধা অপসারণ করা হলে সম্ভাব্য সকল প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ এই চিকিৎসা পদ্ধতির অন্যান্য সকল বাঁধা দূরীভূত হবে।
অনুচ্ছেদ নং- ১৭৩
অত্যন্ত কম লক্ষণ বিশিষ্ট রোগের আরোগ্য দুঃসাধ্য, তাদেরকে একদৈশিক (One sided) রোগ বলা হয়। এই সকল রোগের কেবল মাত্র দুই একটি লক্ষণ প্রকাশিত হলেও বাকী লক্ষণ সমূহ অস্পষ্ট থাকে। প্রধানতঃ সেই রোগগুলো চিররোগের অর্ন্তগত।
অনুচ্ছেদ নং- ১৭৪-
'যে সব রোগের প্রধান লক্ষণ একদিকে- (১) একটি অভ্যন্তরীণ উপসর্গ যথা- বহুদিনের মাথাধরা, উদরাময়, হৃদপিন্ডের পুরাতন স্নায়ুশূল ইত্যাদি। আবার অন্য দিকে (২) অধিকতর বাহ্যিক ধরনের রোগ। বাহ্যিক ধরনের প্রকৃতিগত রোগসমূহকে স্থানীয় রোগ (Local maladies) বলে।
অনুচ্ছেদ নং – ১৭৫৪ চামচ
প্রথমোক্ত প্রকৃতির একদৈশিক রোগসমূহের জন্য অনেক সময় পর্যবেক্ষকের অন্তর্দৃষ্টির অভাবই দায়ী। যেসব লক্ষণ বাস্তবিক পক্ষে বর্তমান আছে ও যেগুলোর সাহায্যে রোগের সম্পূর্ণ প্রতিকৃতি অংকন করা যায় তিনি সেগুলোকে সর্বোত্তভাবে উদ্ভাবন করতে সমর্থ হন নাই।
অনুচ্ছেদ নং- ১৭৬
অবশ্য এমন কিছু সংখ্যক রোগ আছে যেগুলো খুব সতর্কতার সাথে প্রথমবার পরীক্ষা করার পরও মাত্র দু একটি প্রচন্ড এবং গুরুতর লক্ষণ প্রদান করে। অন্যান্য লক্ষণগুলো কেবল অস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
অনুচ্ছেদ নং-১৭৭
এরূপ ক্ষেত্র অত্যন্ত বিরল। এ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রথমতঃ আমাদের সে দুই একটি প্রচন্ড গুরুতর লক্ষণ ধরেই সদৃশ বিধান মতে সর্বাপেক্ষা উপযোগী ঔষধটি নির্বাচন করতে হবে।
অনুচ্ছেদ নং- ১৭৮
কোন কোন সময় প্রকৃতপক্ষে এরূপ হয় যে যথার্থ সদৃশ বিধান মতে সুনির্বাচিত ঔষধ বর্তমান রোগকে ধ্বংস করার উপযোগী সদৃশ কৃত্রিম রোগ সৃষ্টি করে থাকে, বিশেষতঃ যে ক্ষেত্রে এরূপ অল্প কয়েকটি রোগ লক্ষণ অত্যন্ত আকর্ষণীয়, সুস্পষ্ট, অসাধারণ ও বিশেষভাবে পরিচায়ক হয় সেরূপ ক্ষেত্রে ইহা ঘটা অধিকতর স্বাভাবিক।
অনুচ্ছেদ নং- ১৭৯
তথাপি অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম নির্বাচিত ঔষধ এরূপ রোগে সর্বোতভাবে উপযোগী না হয়ে আংশিকভাবেই উপযোগী হয়। কারণ যথার্থ ঔষধ নির্বাচন করার পথ প্রদর্শক অনেক লক্ষণ সেরূপ ক্ষেত্রে বর্তমান থাকে না।
অনুচ্ছেদ নং- ১৮০
এরূপ ক্ষেত্রে যথার্থ সুনির্বাচিত ঔষধও উপরোক্ত কারণে শুধু আংশিকভাবে সদৃশ হয় (Imperfectly Homoeopathy) এবং আংশিক সদৃশ (partially analogous) রোগের উপর ক্রিয়া প্রকাশ করার সময় অতিরিক্ত লক্ষণ সৃষ্টি করে এবং ঔষধের নিজস্ব লক্ষণ শ্রেণী হতে আরো অনেক লক্ষণ রোগীর অবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করে। কারণ ১৬২নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ঔষধের সংখ্যা সীমিত বলে নির্বাচন সঠিক না হলে যেমন ঘটে ঠিক তেমনভাবেই ইহা ঘটে। যদিও ইতিপূর্বে সেগুলো কদাচিৎ পরিলক্ষিত হয়েছে বা একেবারেই পরিলক্ষিত হয় নাই, সেগুলি কিন্তু ঔষধের নিজস্ব লক্ষণ। কতগুলি এমন লক্ষণ দেখা যায় যেগুলো রোগী কখনও অনুভব করেন নাই অথবা অপর কতগুলি লক্ষণ যা কেবল মাত্র অস্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছিল সেগুলো অধিকতর স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়।
-
অনুচ্ছেদ নং ১৮১
রোগের বাড়তি ও নতুন লক্ষণগুলো এই সদ্য প্রদত্ত ঔষধেরই যে ফল সে সম্বন্ধে মতভেদের কোন কারণ নাই। সেগুলো নিশ্চিতভাবেই ঔষধ সঞ্জাত। কিন্তু এ সকল লক্ষণ সাধারণতঃ এই রোগীর শরীরতন্ত্রে স্বভাবতই উৎপন্ন হতে পারে। এ সদৃশ লক্ষণসমূহ সৃষ্টি করার শক্তি এই নির্দিষ্ট ঔষধে আছে বলেই তা সেসব লক্ষণের সৃষ্টি করে ও প্রকাশ করে। এক কথায়, আজকাল অনুভূত লক্ষণসমষ্টিকে বর্তমান বাস্তব অবস্থায় রোগেরই প্রতিচ্ছবি বলে গন্য করে আমাদের পরবর্তী চিকিৎসা পরিচালনা করতে হবে।
অনুচ্ছেদ নং ১৮২
সুতরাং স্বল্প সংখ্যক লক্ষণ বর্তমান আছে বলে যথার্থ নয় এমন ঔষধ নির্বাচন করা অনিবার্য হলেও রোগ লক্ষণসমূহকে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তা সহায়তা করে। এভাবেই যথার্থ উপযোগী দ্বিতীয় ঔষধ নির্বাচন করা সহজসাধ্য হয়ে উঠে।
অনুচ্ছেদ নং- ১৮৩
সেজন্যই প্রথম প্রদত্ত ঔষধের কার্যকারীতা যখন সমাপ্ত হয় তখন নতুনভাবে রোগী পরীক্ষা করে রোগীর বর্তমান অবস্থা অবশ্যই লিপিবদ্ধ করতে হবে। যদি নতুন প্রকাশিত লক্ষণসমূহের গুরুত্বের জন্য অচিরে সাহায্যের প্রয়োজন উপস্থিত না হয় তবেই রোগীর বর্তমান অবস্থা লিপিবদ্ধ করতে হবে। তবে সদৃশ ঔষধের মাত্রার ক্ষুদ্রতার জন্য প্রায়ই নতুন প্রকাশিত লক্ষণগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠে না এবং চিররোগের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত কম। প্রয়োজন মত নতুনভাবে রোগী পরীক্ষা করে তখনকার অবস্থা বিবেচনা করে যথার্থ উপযোগী একটি দ্বিতীয় সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। কারণ তখন লক্ষণসমূহের সংখ্যা বেশি থাকায় রোগের চিত্র অধিকতর পূর্ণাঙ্গ হয়। কাজেই অধিকতর উপযোগী ঔষধ নির্বাচন করার পক্ষে সুবিধা হয়।
অনুচ্ছেদ নং- ১৮৪
এভাবে ঔষধের প্রত্যেকটি নতুন মাত্রার ক্রিয়া শেষ হলে যখনই ইহা আর উপযোগী ও উপকারী হয় না তখন রুগ্নাবস্থার অবশিষ্ট অংশগুলো সম্বন্ধে নতুন করে রোগ-চিত্র লিপিবদ্ধ করতে হবে। সে অবস্থার লক্ষণসমষ্টির যথাসম্ভব উপযোগী আর একটি ঔষধ আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে। সম্পূর্ণ আরোগ্য না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করতে হবে।
১। প্রশ্ন: একদৈশিক রোগের সংজ্ঞা লিখ। ইহার প্রকারভেদ আলোচনা কর। ০৮, ১২
বা একদৈশিক রোগের শ্রেণীবিভাগ লিখ।
একদৈশিক রোগের সংজ্ঞা:
মহাত্মা ডাঃ হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা আইন গ্রন্থ "অর্গানন অব মেডিসিন" এর ১৭২-১৭৩ নং অনুচ্ছেদে একদৈশিক রোগের সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
যে সকল রোগে একটি বা দুইটি লক্ষণ প্রকাশিত হয় এবং অন্যান্য লক্ষণ অপ্রকাশিত থাকে, তাকে একদৈশিক রোগ বা এক তরফা এক পার্শ্বিক রোগ বলে। এ সকল রোগ চিররোগের অন্তর্ভুক্ত। অত্যন্ত কম লক্ষণ প্রকাশ করে তাই এ ধরনের রোগ আরোগ্য দুঃসাধ্য।.
একদৈশিক রোগের প্রকারভেদ:
১.। আভ্যন্তরীণ রোগ। ইহা দুই প্রকার। যথা ফিজিক্যাল ও মানসিক আভ্যন্তরীণ রোগ।
২। স্থানীয় রোগ। ইহা ২ প্রকার। যথা-
ক) ডায়নামিক বাহ্যিক রোগ
খ) এক্সিডেন্টাল বাহ্যিক রোগ।
এক্সিডেন্টাল বাহ্যিক রোগ:
এক্সিডেন্টাল বাহ্যিক রোগ তিন প্রকার। যথা- মেকানিক্যাল, কেমিক্যাল, শক/সার্জিক্যাল।
২। প্রশ্ন: একদৈশিক রোগ বলতে কি বুঝ? ইহার চিকিৎসা পদ্ধতি আলোচনা কর। ০৮, ১০, ১৬
বা একদৈশিক রোগের চিকিৎসা বর্ণনা কর।
বা রোগের লক্ষণ অতি অল্প হলে কিভাবে চিকিৎসা করতে হবে?
একদৈশিক রোগের সংজ্ঞা: যে সকল রোগে একটি বা দুইটি লক্ষণ প্রকাশিত হয় এবং অন্যান লক্ষণ অপ্রকাশিত থাকে, তাকে একদৈশিক রোগ বা এক তরফা এক পার্শ্বিক রোগ বলে। এ সকল রোগ চিররোগের অন্তর্ভুক্ত। অত্যন্ত কম লক্ষণ প্রকাশ করে তাই এ ধরনের রোগ আরোগ্য দুঃসাধ্য।
একদৈশিক রোগ চিকিৎসা পদ্ধতি আলোচনা:
(i) একদৈশিক রোগের অত্যন্ত কম লক্ষণ প্রকাশিত হয়।
(ii) দুই-একটি লক্ষণ প্রকাশ করে অবশিষ্ট লক্ষণসমূহ অস্পষ্টভাবে থাকে।
(iii) এই প্রকাশিত দুই-একটি লক্ষণ নিয়ে আংশিক সদৃশ একটি ঔষধ নিবার্চন করে রোগীকে সেবন করতে দিতে হবে।
(iv) আংশিক সদৃশ ঔষধ প্রয়োগের পর প্রকাশিত লক্ষণ সমূহ সংগ্রহ করে পরবর্তী ঔষধ নির্বাচন করতে হবে।
(v) এভাবে লুকায়িত লক্ষণ প্রকাশিত হলে তার সদৃশ ঔষধ প্রয়োগ করে রোগীকে আরোগ্য করতে হবে।
(vi) সর্বশেষ একটি এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
৩। প্রশ্ন: অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক একদৈশিক ব্যাধির উদাহরণসহ সংজ্ঞা লিখ। ১৬
অভ্যন্তরীণ একদৈশিক ব্যাধির উদাহরণসহ সংজ্ঞা: যে রোগে শুধুমাত্র রোগী কষ্ট অনুভব করে রোগী প্রকাশ না করলে চিকিৎসকদের জানার উপায় থাকে না এবং যে সকল একদৈশিক রোগ লক্ষণ দেহের অভ্যন্তরে প্রকাশ পায়, তাকে অভ্যন্তরীণ একদৈশিক ব্যাধি বলে। যেমন- বহু বছরের মাথাব্যথা, উদরাময় ও হৃদপিন্ডের পুরাতন স্নায়ুশূল ইত্যাদি।
বাহ্যিক একদৈশিক ব্যাধির উদাহরণসহ সংজ্ঞাঃ
যে সকল একদৈশিক রোগ লক্ষণ দেহের বাহিরের অংশে প্রকাশ পায়, তাকে বাহ্যিক একদৈশিক ব্যাধি বলে। যেমন- চর্মরোগ, দূর্ঘটনাজনিত অঙ্গ বিকৃতি ইত্যাদি।
৪। প্রশ্ন: একদৈশিক রোগ ও স্থানীয় রোগের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ১১, ১৬ একদৈশিক রোগ ও স্থানীয় রোগের মধ্যে পার্থক্য:
৫। প্রশ্ন: একদৈশিক রোগের লক্ষণ সংগ্রহের অসুবিধাগুলি কি কি? ০৮, ১০, ১১, ১৬
একদৈশিক রোগের লক্ষণ সংগ্রহের অসুবিধাগুলি:
মহাত্মা ডাঃ হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা আইন গ্রন্থ "অর্গানন অব মেডিসিন" এর ১৭২-১৭৩নং অনুচ্ছেদে একদৈশিক রোগের সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
(i) একদৈশিক রোগের অত্যন্ত কম লক্ষণ প্রকাশিত হয়।
(ii) দুই-একটি লক্ষণ প্রকাশ করে অবশিষ্ট লক্ষণসমূহ অস্পষ্টভাবে থাকে।
(iii) রোগ লক্ষণ সংগ্রহে রোগী সকল রোগ লক্ষণাবলী বলতে ব্যর্থ হয়, রোগী দুই-একটি লক্ষণ ছাড়া আর কোন অসুবিধা নাই বলে।
(iv) রোগীর আত্মীয়-স্বজন, পরিচর্যাকারী, বন্ধু-বান্ধবরাও রোগীর রোগ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারে না।
(v) রোগ লক্ষণ প্রকাশে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সমূহের কারণে প্রকৃত লক্ষণ অপ্রকাশিত থাকে।
(vi) রোগ সম্বন্ধে রোগী অজ্ঞতা ও উদাসিনতা।
(vii) লক্ষণাবলী সংগ্রহে চিকিৎসকের এরূপ মনোযোগীতার অভাব।
সুতরাং যেহেতু একদৈশিক রোগ চির রোগের অর্ন্তগত সেহেতু উপরোক্ত কারণসমূহের জন্য একদৈশিক রোগের লক্ষণ সংগ্রহে অসুবিধা হয়।
৬। প্রশ্ন: একদৈশিক আভ্যন্তরীণ রোগ লক্ষণ সংগ্রহ পদ্ধতি বর্ণনা কর। একদৈশিক আভ্যন্তরীণ রোগ লক্ষণ সংগ্রহ পদ্ধতি বর্ণনা:
মহাত্মা ডাঃ হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা আইন গ্রন্থ "অর্গানন অব মেডিসিন" এর ১৭৫-১৮৪ নং অনুচ্ছেদে একদৈশিক রোগের আভ্যন্তরীণ রোগ লক্ষণ সংগ্রহ পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন।
(i) এমন কিছু সংখ্যক রোগ আছে যেগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রথমবার পরীক্ষা করার পর মাত্র দুই একটি ভয়ংকর এবং গুরুতর লক্ষণ প্রদান করে। অন্যান্য লক্ষণগুলো কেবল অস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
(ii). এরূপ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রথম চিকিৎসককে সেই দুই একটি ভয়ংকর গুরুতর লক্ষণ ধরেই সদৃশ বিধান মতে সর্বাপেক্ষা উপযোগী ঔষধটি নির্বাচন করতে হবে।
(iii) কোন কোন সময় প্রকৃতপক্ষে এরূপ হয় যে যথার্থ সদৃশ বিধান মতে সুনির্বাচিত ঔষধ বর্তমান রোগকে ধ্বংস করার উপযোগী সদৃশ কৃত্রিম রোগ সৃষ্টি করে থাকে, বিশেষত যে ক্ষেত্রে এরূপ অল্প কয়েকটি রোগ লক্ষণ অত্যন্ত আকর্ষণীয়, সুস্পষ্ট, অসাধারণ ও বিশেষভাবে চরিত্রগত পরিচায়ক হয় সেরূপ ক্ষেত্রে ইহা ঘটা অধিকতর স্বাভাবিক।
(iv) অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম নির্বাচিত ঔষধ এরূপ রোগে সর্বতোভাবে উপযোগী না হয়ে আংশিকভাবেই উপযোগী হয়। কারণ যথার্থ ঔষধ নির্বাচন করার পথ প্রদর্শক অনেক লক্ষণ সেরূপ ক্ষেত্রে বর্তমান থাকে না।
(v) এই জন্য প্রথম প্রদত্ত ঔষধের কার্যকারীতা যখন সমাপ্ত হয় তখন নতুনভাবে রোগী পরীক্ষা করে রোগীর বর্তমান অবস্থা অবশ্যই লিপিবদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজন মত নতুনভাবে রোগী পরীক্ষা করে তখনকার অবস্থা বিবেচনা করে যথার্থ উপযোগী একটি দ্বিতীয় সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করতে হবে।
(vi) এভাবে ঔষধের প্রত্যেকটি নতুন মাত্রার ক্রিয়া শেষ হলে তখন রুগ্নাবস্থার অবশিষ্ট অংশগুলো সম্বন্ধে নতুন করে রোগ চিত্র লিপিবদ্ধ করতে হবে। সে অবস্থায় লক্ষণ সমষ্টির যথাসম্ভব 'উপযোগী আর একটি ঔষধ চিকিৎসককে অনুসন্ধান করতে হবে। সম্পূর্ণ আরোগ্য না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করতে হবে।
৭। প্রশ্নঃ আংশিক সদৃশ ঔষধ দ্বারা কিভাবে সম্পূর্ণ আরোগ্য করা যায় তা বর্ণনা কর।
আংশিক সাদৃশ্যবাহী ঔষধ:
প্রয়োজনের তুলনায় অল্পসংখ্যক ঔষধের বিশুদ্ধ ভেষজ লক্ষণ জানা থাকলে অর্থাৎ অধিক সংখ্যক ঔষধ সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণভাবে উপযুক্ত অর্থাৎ সম্পূর্ণ লক্ষণ না মিললেও প্রয়োগ করতে হয়।
আংশিক সাদৃশ্যবাহী ঔষধ প্রয়োগের ফল:
অসম্পূর্ণভাবে উপযুক্ত তথা আংশিক সদৃশবাহী ঔষধ প্রয়োগ করে আমরা সম্পূর্ণ উপদ্রববিহীন আরোগ্যের আশা করতে পারি না, কারণ এই আংশিক সাদৃশ্যবাহী ঔষধের ব্যবহারকালে এমন কতগুলি লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে যা ইতিপূর্বে অনুরূপ ক্ষেত্রে কখনও প্রকাশিত হয় নাই। যে লক্ষণগুলি নতুনভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলি প্রয়োগকৃত ঔষধের অতিরিক্ত লক্ষণ। অবশ্য অতিরিক্ত লক্ষণ প্রকাশিত হলেও এই ঔষধের দ্বারাই রোগ লক্ষণগুলি দুরীভূত হয়। প্রয়োগকৃত আংশিক সদৃশ্যবাহী ঔষধের মাত্রা উপযুক্তরূপে অল্প হয়, তবে অতিরিক্ত লক্ষণও অল্প প্রকাশিত হয়।
৮। প্রশ্নঃ আভ্যন্তরীণ রোগ বলতে কি বুঝায়? ১০
আভ্যন্তরীণ রোগের সংজ্ঞা:
শীতায় যে সকল কষ্টকর অবস্থা রোগী দীর্ঘদিন অনুভব করে এবং রোগী প্রকাশ না করলে জানা যায় না, তাকে আভ্যন্তরীণ রোগ বলে।
যেমন- দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, নিম্নাংগের স্নায়ুবিক ব্যথা। রোগের লক্ষণ অত্যন্ত কম হলে আরোগ্যের পথে সেরূপ অসুবিধা হয়। এরূপ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের যত্নের সহিত মনোযোগ দিতে হবে। কারণ এই বাঁধা অপসারণ করতে পারলে সম্ভাব্য চিকিৎসার মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ কাজ সম্পন্ন হবে। এই সকল রোগের কেবল মাত্র দুই একটি লক্ষণ প্রকাশিত হলেও বাকি লক্ষণসমূহ অস্পষ্ট থাকে। প্রধাণতঃ সেই রোগগুলো চির রোগের অন্তর্গত। আভ্যন্তরীণ উপসর্গ যথা- বহুদিনের মাথাধরা, উদরাময়, হৃদপিন্ডের পুরাতন স্নায়ুশূল ইত্যাদি।
৯। প্রশ্নঃ কম লক্ষণ বিশিষ্ট ঔষধ নির্বাচন কষ্টকর কেন? ১৩ কম লক্ষণ বিশিষ্ট ঔষধ নির্বাচন কষ্টকর:
স্বল্প সংখ্যক লক্ষণ বর্তমান আছে বলে যথার্থ নয় এমন ঔষধ নির্বাচন করা অনিবার্য হলেও রোগ লক্ষণসমূহকে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তা সহায়তা করে। সে জন্যই প্রথম প্রদত্ত ঔষধের কার্যকারীতা যখন সমাপ্ত হয় তখন নতুনভাবে রোগী পরীক্ষা করে রোগীর বর্তমান অবস্থা অবশ্যই লিপিবদ্ধ করতে হবে। যদি নতুন প্রকাশিত লক্ষণসমূহের গুরুত্বের জন্য সত্বর সাহায্যের প্রয়োজন উপস্থিত না হয় তবেই রোগীর বর্তমান অবস্থা লিপিবদ্ধ করতে হবে। চিররোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কম লক্ষণ প্রকাশিত হয়। তাই প্রয়োজন মত নতুনভাবে রোগী পরীক্ষা করে তখনকার অবস্থা বিবেচনা করে যথার্থ উপযোগী একটি দ্বিতীয় সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। কারণ তখন লক্ষণসমূহের সংখ্যা বেশি থাকায় রোগের চিত্র অধিকতর পূর্ণাংগ হয়। কাজেই অধিকতর উপযোগী ঔষধ নির্বাচন করার পক্ষে সুবিধা হয়।
১০। প্রশ্ন: শরীরের বর্হিভাগে একটি স্থানীয় রোগ সৃষ্টি করার অভিসন্ধি জীবনীশক্তি গ্রহণ করে ব্যাখ্যা কর। ১৫
শরীরের বর্হিভাগে একটি স্থানীয় রোগ সৃষ্টি করার অভিসন্ধি জীবনীশক্তি গ্রহণ করে ব্যাখ্যাঃ
জীবনীশক্তি ব্যতিত বস্তুগত দেহ অনুভব করতে, কাজ করতে বা আত্মরক্ষা করতে পারে না। একমাত্র এই অশরীরী সত্তা হতেই জীবনের সর্বপ্রকার অনুভুতি ও কার্যকলাপ উদ্ভুত হয়। সুস্থ এবং অসুস্থ-উভয় অবস্থাতে ইহাই এই বস্তুগত শরীরতন্ত্রকে সঞ্জীবিত রাখে। মানুষের সুস্থাবস্থায় এই বস্তুগত দেহকে (শরীরতন্ত্রকে) যে শক্তি বাঁচিয়ে রাখে, তাকেই ভৌতিক জীবনীশক্তি বলে। তা অসীম প্রভাবে দেহকে পরিচালিত করে। এর অনুভূতি ও কার্যকারিতায় দেহতন্ত্রের যাবতীয় অংশকে সুন্দররূপে ও সুশৃংঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রিত করে তার ফলেই অনুসন্ধিৎসু যুক্তিবাদী মানুষ এই জীবন্ত, সুস্থ শরীরতন্ত্রকে মানব জীবনের মহত্তর উদ্দেশ্য-সাধনে স্বাধীনভাবে নিযুক্ত করতে সমর্থ হয়।
0 মন্তব্যসমূহ