প্যারাপ্লিজিয়া
বা
নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত
Paraplegia
প্যারাপ্লিজিয়া বা নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাতের সংজ্ঞা:-
কোমর হইতে পা পর্যন্ত নিচের অংশের সম্পূর্ণ কিংবা অসম্পূর্ণ পক্ষাঘাতকে প্যারাপ্লিজিয়া বা নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত বলে।
পক্ষাঘাতের শ্রেণীবিভাগ:-
প্রধানতঃ ৩ প্রকারের হইয়া থাকে।
১) রিফ্লেক্স প্যারাপিজিয়া- অন্ত্রে ক্রিমি হওয়া, ইউরেটার ও ব্লাডারে কোন পীড়া হেতু জরায়ুর স্থানচ্যুতি, ক্যানসার, স্পাইনাল কর্ডের টিউমার, মেরুমজ্জার প্রদাহ প্রভৃতি পীড়া হেতু যে প্যারাপ্লিজিয়া হয় তাহাকে রিফ্লেক্স প্যারাপ্লিজিয়া বলে।
২) স্প্যাসটিক প্যারাপ্লিজিয়া- আক্রান্ত পেশীসমূই যখন শক্ত হইয়া যায় এবং স্প্যাজম হয় তাহাকে স্প্যাসটিক প্যারাপ্লিজিয়া বলে।
৩) ডাইভারস্ পলসি- ডুবুরিগণ অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়া কাজ করিলে স্প্যাইনাল কর্ডের রক্ত হীনতার জন্য যে পক্ষাঘাত হয় তাহার নাম ডাইভাস্ পলসি।
কারণতত্ত্ব:-
কারণতত্ত্বঃ-
১) মেরুমজ্জার প্রদাহ বা মাইলাটিস পীড়া। মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙিয়া যাওয়া বা কম্প্রেশন ফ্রাকচার অব স্পাইনাল বোন।
২) মেরুমজ্জা ও তাহাদের আবরক ঝিল্লী অথবা কশেরুকাদের পীড়া হেতু।
৩) মেরুমজ্জার উপর কোনও বস্তুর চাপ পড়িলে।
৪) পুরাতন মস্তিষ্ক পীড়া হেতু।
৫) অন্য কোনও পীড়ার কারণে সেনসরি নার্ভের উত্তেজনা হেতু মেরুমজ্জার উত্তেজনা হইলে।
৬) মেরুদণ্ডের ভিতর টিউমার গুটি, সিফিলিটিক গামা প্রভৃতি হেতু। ৭) সারকোমা, ক্যান্সার, স্পাইনাল কর্ডের টিউমার, পট্স ডিজিজ, স্পাইন্যাল কেরিজ প্রভৃতি।
৮) গর্ভাবস্থা, স্নায়ুর ক্ষত বা দুর্বলতা, কৃমি বা দস্তোদ্গমকালীন উত্তেজনাবশতঃ মূত্রযন্ত্রাদির পীড়া; প্রভৃতির ফলে।
৯) জরায়ুর পীড়া, জরায়ুর স্থানচ্যুতি, আঘাতাদির কারণে।
১০) মস্তিষ্কের ভিতর রক্তপাত ঘটিলে।
পক্ষাঘাতের লক্ষণাবলী:-
লক্ষণাবলী-
১) পীড়ার প্রাথমিক অবস্থায় পায়ের দুর্বলতা, সামান্য সামান্য জ্বরভাব, পায়ের অসাড়তা, চিড়িকমারা বেদনা প্রভৃতি উপস্থিত হয়।
২) নিম্নাঙ্গের (পদদ্বয়ের) সঞ্চালনক্রিয়া রহিত হয়। স্পর্শ, তাপ, ব্যথা প্রভৃতি অনুভূতিগুলি আংশিক বা সম্পূর্ণ লোপ পায়। আক্রান্ত অঙ্গে চিমটি কাটিলে কোন বোধ শক্তি থাকে না। দুই পা অবশ হইয়া যায়।
৩) রোগী শয্যায় চিৎ হইয়া শুইয়া থাকে। তাহাতে পায়ের গোড়ালি ও কোমরের নিম্নে পাছায় শয্যাক্ষত হয়। এইভাবে নিদ্রার ব্যাঘাত হয় এবং ক্রমে সমস্ত স্নায়ুমণ্ডলী বিকৃত ও দুর্বল হয়।
৪) গুহ্যদ্বার ও মূত্রথলী আক্রান্ত হইয়া পায়খানা ও প্রস্রাব বন্ধ হইয়া যায় বা খুব কষ্ট হয়। মুত্রথলীতে প্রস্রাব পচিয়া যায়। প্রস্রাব দুর্গন্ধযুক্ত ও সূত্রবৎ হয়।
৫) নিম্নাঙ্গের পেশীগুলি ধীরে ধীরে শুকাইয়া যায়।
৬) পীড়া কঠিন হইলে প্রবল জ্বর হয়, বিকার দেখা দেয়।
৭) স্প্যাসটিক প্যারাপ্লিসিয়ায় গর্মী পীড়াগ্রস্ত ব্যক্তিরা অধিক আক্রান্ত হয়। ইহাতে পায়ের ডিমে ও পিঠে প্রথমে বেদনা হইয়া পায়ের ডিম শক্ত বোধ হয়, রোগী ক্রমে চলাফেরার শক্তি হারাইয়া ফেলে। রোগী পা দুইটি ফাঁক করিতে পারে না। পায়ে পায়ে জড়াইয়া চলে।
পক্ষাঘাতের ভাবীফল:-
ভাবীফল- এই পীড়ার ভাবীফল শুভ নয়। যদি নিম্নাঙ্গের অল্পাধিক বিকৃতি ঘটে তবে হোমিওপ্যাথিক মতে সুচিকিৎসায় উপকার হয়। সাংঘাতিক প্রকারের এবং আড়ষ্টতা উপস্থিত হইলে রোগী ৮/১০ বৎসরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে।
৫টি ঔষধের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা:-
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা-আক্রান্ত অঙ্গ ভালভাবে মর্দন ও চালনা করা কর্তব্য। প্রস্রাব, পায়খানা ও শয্যাক্ষতের উপর সর্বদা নজর রাখিতে হইবে। আভ্যন্ত রীণ ঔষধের সাহায্যে প্রস্রাব নিঃসরণ না হইলে ক্যাথিটার প্রয়োগে মূত্রনালী পরিষ্কার করিতে হইবে। ভুস ও এনিমা প্রয়োগ করিয়া রেকটামের কঠিন মল নিঃসরণ করাইতে হইবে। বেডসোর বা শয্যাক্ষত যাহাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে। ঘৃতাদি পুষ্টিকর দ্রব্য সেবন করা ভাল।
ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের ও লক্ষণ:-
জেলসিমিয়াম- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চালনা শক্তি লোপ পায়। কিন্তু স্পর্শ শক্তির লোপ হয় না। মূত্রথলী গ্রীবার পক্ষাঘাত, সেজন্য প্রস্রাব নিঃসরণ বন্ধ হয় ও মুত্রথলী ফুলিয়া উঠে, কখনও আংশিক পক্ষাঘাতের কারণে খামিয়া থামিয়া প্রস্রাব নিঃসরণ হয়। অসাড়ে মল নির্গত হয়।
ল্যাথাইরাস- স্প্যাসটিক প্যারাপ্লিজিয়া। হঠাৎ নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত উপস্থিত হয়। চলার সময় শরীর টলমল করে, পায়ে পায়ে যেন জড়াইয়া যায়ণ বাতজনিত পক্ষাঘাত, পায়ের আংশিক পক্ষাঘাত। রোগী শুইয়া হাত পা গুটাইতে ও ছড়াইতে পারে কিন্তু বসিয়া থাকিয়া ছড়াইতে ও গুটাইতে পারে না। পায়ের আঙ্গুল মাটি হইতে উঠাইতে এবং গোড়ালি মাটিতে ঠেকাইতে পারে না। নিতম্বের পেশী এবং নিম্ন প্রত্যঙ্গের শীর্ণতা।
কুপ্রাম মেট- নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত, তাহা উপর দিকে ধাবিত হয়। এপোপ্লেক্সির পর পক্ষাঘাত, বুকে রক্তাধিক্য, প্রবল বুক ধড়ফড়ানি, চোখের পাতা সর্বদা বুজিয়া থাকে। তাকাইলে চোখের তারা ঘোরে।
রাসটক্স- ভিজা ঠাণ্ডা লাগা, অতিরিক্ত পরিশ্রম করা বা টাইফয়েড কিংবা বাত রোগের পর প্যারাপ্লিজিয়া। তৎসহ অস্থিরতা, সর্বদেহে কামড়ানি, ছিড়িয়া ফেলার মত বেদনা, পেশী শক্ত, আক্রান্ত অঙ্গে ঝিনঝিনে বেদনা, অসাড়তা। শক্ত বিছানায় শয়নে উপশম।
এগারিকাস- নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত। লাম্বার প্রদেশেস্থ মেরুমজ্জার রক্তাধিক্যতা বশতঃ পক্ষাঘাত এবং সে সাথে আক্রান্ত অঙ্গে তীব্র বেদনা। লাম্বার ও সেক্রাম প্রদেশে বেদনা। স্থির থাকিলে বৃদ্ধি। হাতে পায়ে, পিঠে ঝিনঝিনি ধরে। রোগলক্ষণ কোণাকুণি ভাবে অর্থাৎ এক পার্শ্বের হাত অপর পার্শ্বের পায়ের পক্ষাঘাত। চলিতে গেলে কাঁপে, পা ঠিক মত পড়ে না।
ইহা ছাড়া লক্ষণানুযায়ী এই পীড়ায় নাক্স ভমিকা, ভিরেট্রাম এলবাম, এসিড পিক্লিক, ইস্কিউলাস হিপ, আর্ণিকা মন্ট, সাইলিসিয়া, কলচিকাম, আর্জেন্ট' নাইট, ম্যাঙ্গেনাম প্রভৃতি ঔষধও ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ খাবেন না।
ডাঃ মহি উদ্দিন
01814319033
0 মন্তব্যসমূহ