টিউবারকুলার - ‍Tubercular, ক্রনিক ডিজিজ, সপ্তম অধ্যয় - চতুর্থ বর্ষ

সপ্তম অধ্যয়

মায়াজমের তুলনা ও মিশ্র মায়াজম
Comparisin of Miasm and Mixed Miasms



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের মনের প্রধান পরিচায়ক লক্ষণের তুলনা করা।

উত্তর: সোরার মন: সোরা মানুষের মনকে কলুষিত করে কিন্তু ইহার বুদ্ধি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ, অনুভূতিশীল, নানা কল্পনায় পূর্ণ কিন্তু তা কাজে পরিণত করার প্রবণতা নাই। ভ্রান্ত দার্শনিক, সামান্য পরিশ্রমে মানসিক ও দৈহিক ক্লান্তি আসে, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ, একাকীত্ব ও ব্যর্থতার ভয়।

সিফিলিসের মন: সিফিলিস মনকে বোকাটে ও মেদাটে করে। স্থূলবুদ্ধি, একগুঁয়ে, বিষণ্ণ, বদ্ধমূল ধারণা, নিজেকে ধ্বংস করিতে চায়, আত্মহত্যার প্রবণতা। ঠাণ্ডা মাথায় মূল্যবাণ বস্তু ধ্বংস করে।

সাইকোসিসের মন: সাইকোসিসের মন অত্যন্ত সন্দেহপূর্ণ, গোপনপ্রিয় ও অসহিষ্ণু। মনোস্তরে নানা অসমন্বয়, বিস্মৃতি, ভুলোমন, অমনোযোগী, ধীরে কথা বলে, দ্রুত উত্তর দিতে অক্ষম, সত্য কথা বলে না, হিংসুটে, রাগী, রুক্ষ ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির।

টিউবারকুলারের মন : টিউবারকুলারের মন চঞ্চল ও সদা সর্বদা পরিবর্তনশীল, প্রায় পরস্পর বিরোধী। নিজের রোগের গুরুত্ব সম্বন্ধে উদাসীন, আরোগ্য সম্বন্ধে সর্বদাই আশান্বিত। দ্রুত অভ্যাস পরিবর্তন করে, 'বাসস্থানের পরিবর্তন চায়। এক কাজে বেশীক্ষণ মন দিতে চায় না।



প্রশ্ন-  সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলো-সিসের আক্রমণের সর্বশেষ লক্ষ্যস্থল কি কি?

উত্তর : সোরার আক্রমণের সর্বশেষ লক্ষ্যস্থল স্নায়ুমণ্ডলী, সাইকোসিসের আক্রমণের সর্বশেষ লক্ষ্যস্থল হৃদপিণ্ড, কটিদেশ ও তৎসংলগ্ন স্ত্রী-পুং জননেন্দ্রিয়ের যন্ত্রসমূহ, সিফিলিসের সর্বশেষ আক্রমণের লক্ষ্যস্থল অস্থি, পেশী ও তন্ত্রসমূহের পচন এবং টিউবারকুলারের সর্বশেষ আক্রমণের লক্ষ্যস্থল শ্বাসযন্ত্র। অর্থাৎ সোরা সর্বপ্রথম মানসিক অধঃপতনের সূচনা করে, সিফিলিস ও সাইকোসিস তাহাকে পূর্ণাঙ্গরূপ দান করে এবং টিউবারকুলোসিস ঐগুলির সমষ্টিকে লইয়া নিজের ধ্বংস সাধন করে।



প্রশ্ন-  সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের মস্তক বা শিরঃপীড়ার লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।

উত্তর: সোরার শিরঃপীড়া- সাধারণতঃ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পার এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে হ্রাস, পায়। বিশ্রামে, নিদ্রায় ও চুপচাপ থাকিলে, উত্তাপ প্রয়োগে শিরঃপীড়ার হ্রাস ঘটে। ইহার শিরঃপীড়া মস্তকের সম্মুখভাগে।

সিফিলিসের শিরঃপীড়া- নিদ্রা যাওয়ার উপক্রমে, বিশ্রামে, রাত্রে এবং উত্তাপে বৃদ্ধি পায়। ইহার শিরঃপীড়া পশ্চাৎ মস্তকে। ঠাণ্ডা প্রয়োগে, সঞ্চালনে পীড়ার উপশম হয়।

সাইকোসিসের শিরঃপীড়া- নড়াচড়ায় উপশম হয় এবং রাত্রিতে জ্বর ও অস্থিরতাসহ প্রকাশ পায়। ইহাও শয়নে, রাত্রিতে, মধ্যরাত্রিতে বৃদ্ধি পায়। ইহার শিরঃপীড়া সম্মুখভাগে, মস্তক শীর্ষে দেখা দেয়।

টিউবারকুলার শিরঃপীড়া- মস্তকের গোড়া হইতে শিরঃপীড়া আরম্ভ হয়। 'প্রতি সপ্তাহে বা ছুটির দিনে পীড়া দেখা দেয়। শিরঃপীড়ার পূর্বে অত্যধিক ক্ষুধাবোধ। মাথাব্যথায় শিশুরা হাত দিয়া বা অন্য কিছু দিয়া মাথায় আঘাত করিতে চায়। উত্তাপে বৃদ্ধি এবং নাসিকা হইতে রক্তস্রাব হইলে পীড়ার উপশম হয়।




প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের আস্বাদ বা মুখাস্বাদের বর্ণনা দাও।

উত্তর: সোরার আস্বাদ- সোরিক রোগীর স্বাদ টক, মিষ্ট, বিস্বাদ বা তিক্ত। আস্বাদের পরিবর্তন হয়। হরিদ্রাবর্ণের জিহ্বার সহিত তিক্তাস্বাদ নিশ্চিত সোরিক। যে জিনিসের স্বাদ, সেই স্বাদের স্থলে অন্য স্বাদ বোধ ইহাতে দেখা যায়।

সিফিলিসের আস্বাদ- সমস্ত প্রকার ধাতুর আস্বাদ সিফিলিটিক। ইহার লালা দড়ির ন্যায়, তামাটে, চটচটে ও তুলার ন্যায়।

সাইকোসিসের আস্বাদ- সাইকোসিসের আস্বাদ মাছের আস্বাদের ন্যায় অথবা বিস্বাদ।

টিউবারকুলারের আস্বাদ- ইহার আস্বাদ পঁচামত, পুঁজের মত, রক্তের মত, ধাতুর মত বোধ হয়। নিঃসৃত গয়ারের স্বাদ অত্যন্ত মিষ্ট বোধ, অনেক সময় লবণাক্ত স্বাদও বোধ হয়।



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের খাদ্যে ইচ্ছা-অনিচ্ছার বর্ণনা দাও।

উত্তর: সোরা- মিষ্টি, টক, ভাজা জিনিষ মসলাযুক্ত খাদ্য খাওয়ার ইচ্ছা। স্নায়ুমণ্ডলীকে সতেজ করার জন্য চা, কফি, তামাক প্রভৃতির আকাংখা। গরম খাদ্য ও মাংস খাওয়ার আকাংখা। জ্বরে সোরিক রোগী ঘোল, টকদ্রব্য, বাঁধাকপি এবং অজীর্ণকর খাদ্য দ্রব্য যাহা খাওয়া উচিৎ নয় তাহাই খাইতে ইচ্ছা করে। মাংস ভক্ষণে সুপ্ত সোরার লক্ষণ বৃদ্ধি পায়। সিদ্ধ করা খাদ্য খাইতে চায় না।

সিফিলিস- ইহার রোগী মাংস খাইতে চায় না। প্রায়ই শীতল পানীয় ও শীতল খাদ্য খাওয়া পছন্দ করে।

সাইকোসিস- ইহার রোগী খাদ্যদ্রব্যাদি খুব গরম বা ঈষদুষ্ণ হইলে উপশম বোধ করে। রোগী চর্বিযুক্ত মাংস পছন্দ করে, বিয়ার বা মদ চায়। মাংস পুরাতন ও সুপ্ত সাইকোসিসকে জাগাইয়া তোলে।

টিউবারকুলার- ইহার রোগী কখনও গরম, কখনও শীতল উভয় খাদ্যই পছন্দ করে। খড়িমাজি, মাটি, পেন্সিল প্রভৃতি অখাদ্য এবং লবণ, আলু ও সমস্ত প্রকারের মাংস খাইতে ইচ্ছা করে। ইহার রোগী বাল্যকাল হইতে মাংসের ভক্ত। ইহার শিশু গোদুগ্ধ কিছুতেই, হজম করিতে পারে না। উত্তেজক খাদ্য ও মদ্যাদি. পানীয়ের ইচ্ছা আছে।
 


প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের শূল ব্যথার প্রকৃতি বর্ণনা কর।

উত্তর: সোরার শূল ব্যথা উত্তাপে ও মৃদু চাপে ও সঞ্চালনে উপশম হয়। সাইকোসিসের শূলব্যথা সজোরে চাপ প্রয়োগ করিলে, ঘুরিয়া বেড়াইলে উপশম হয়। সিফিলিসের শূলব্যথার সহিত প্রচুর পরিমাণে ঘর্ম হয় ও রাত্রিতে ব্যথার বৃদ্ধি হয়। টিউবারকুলারের শূলব্যথায় রোগী জীর্ণ শীর্ণ হইয়া পড়ে।



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজমের ক্রিয়াধারা ও প্রকৃতির তুলনামূলক আলোচনা কর।

উত্তর: নিম্নে সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজমত্রয়ের তুলনামূলক আলোচনা করা হইল।
ক) সোরা স্নায়ুতন্ত্রের উপর অত্যধিক ক্রিয়াশীল। সিফিলিস মস্তিষ্কঝিল্লী, ল্যারিংস, গলা, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, অস্থি ও অস্থি আবরক ঝিল্লীর উপর অত্যধিক ক্রিয়াশীল। সাইকোসিস যৌনাঙ্গ, কিডনী, লিভার ও হৃদপিণ্ডের উপর অত্যধিক ক্রিয়াশীল।
খ) সোরা দৈহিক গঠনগত কোন পরিবর্তন সাধন না করিয়া বরং ক্রিয়াগত পরিবর্তন করে। সিফিলিস ক্রিয়াগত কোন পরিবর্তন সাধন না করিয়া বরং সকল প্রকার কোষকে ধ্বংসপূর্বক গঠনগত পরিবর্তন সাধন করে। সাইকোসিস রক্ত কণিকাকে ধ্বংসপূর্বক কোষের অসম বৃদ্ধি ঘটাইয়া আঁচিল, অর্বুদ ও স্লীপদের দ্বারা গঠনগত পরিবর্তন সাধন করে।
গ) সোরার প্রাথমিক বিকাশ ঘটে চুলকানিযুক্ত জ্বালাকর চর্মোদ্ভেদের দ্বারা। সিফিলিসের প্রাথমিক বিকাশ ঘটে যৌনাঙ্গের ক্ষতের দ্বারা এবং সাইকোসিসের প্রাথমিক বিকাশ ঘটে ডুমুরাকৃতির অর্বুদের দ্বারা।
ঘ) সোরিক রোগী সাধারণতঃ সর্ববিষয়েই আত্মরক্ষামূলক মনোভাব গ্রহণ করে। সিফিলিটিক রোগী সাধারণতঃ ধ্বংসাত্মক মনোভাব গ্রহণ করে এবং সাইকোটিক রোগী সাধারণতঃ আক্রমণাত্মক মনোভাব গ্রহণ করে।
ঙ) সোরিক রোগীর অস্বাভাবিক ক্ষুধা অস্বাভাবিক খাদ্যদ্রব্যের আকাংখা থাকে এবং গরম খাদ্য পছন্দ করে। সিফিলিটিক রোগীর খাদ্য পানীয়ে অমিতাচার স্বভাব পরিলক্ষিত হয় ও মাদকদ্রব্যে আসক্তি থাকে এবং ঠাণ্ডা খাদ্য পছন্দ করে। সাইকোটিক রোগী অত্যন্ত গরম ও ঠাণ্ডা উভয় খাদ্যই পছন্দ করে।
চ) সোরিক রোগী সাধারণত শুষ্ক এবং তাহার কোন একটা স্রাব বিশেষ একটা থাকে না। সিফিলিটিক রোগীর নানা প্রকার দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বর্তমান থাকে। সাইকোটিক রোগীর আঁসটে বা মিষ্টিগন্ধযুক্ত হাজাকর স্রাব বিদ্যমান থাকে।
ছ) সোরিক রোগী শীতকাতর, শীতকালে তাই তাহার রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায় এবং গ্রীষ্মকালে উপশম হয়। সিফিলিটিক রোগী গরম কাতর, গরমে ও গ্রীষ্মকালে রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায়, শৈত্যে ও শীতকালে রোগলক্ষণের উপশম হয়। কিন্তু রাত্রিকালে সকল প্রকার রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায়। সাইকোটিক রোগীর রোগলক্ষণ ঠাণ্ডায়, বর্ষাকালে, আর্দ্র আবহাওয়ায়, ঝড়ের পূর্বে ও ঋতু পরিবর্তনে বৃদ্ধি পায় এবং শুষ্ক ও পরিষ্কার আবহাওয়ায় রোগলক্ষণ উপশম হয়, কিন্তু যে কোন রোগ যন্ত্রণা দিবাভাগে বৃদ্ধি পায়।
জ) সোরার রোগীর কেশ শুষ্ক ও রুক্ষ, রোগের পরে কেশপতন ঘটে, মাথায় মামড়ি পড়ে। সিফিলিসের রোগীর কেশ তৈলাক্ত ও সিক্ত, থোকায় থোকায় কেশ উঠে। সাইকোসিসের কেশ অত্যধিক এবং অপরিণত বয়সে পাকে।
ঝ) সোরার রোগীর নখ দেখিতে স্বাভাবিক। সিফিলিসের রোগীর নখ কাগজের ন্যায় পাতলা ও ক্ষণভঙ্গুর। সাইকোসিসের রোগীর নখ পুরু, শির তোলা বা ঢেউ তোলার ন্যায় দেখিতে।
ঞ) সোরিক রোগীর গাত্রত্বক দেখিতে শুষ্ক, রুক্ষ ও নোংরা। সিফিলিটিক রোগীর গাত্রত্বক তৈলাক্ত ও সিক্ত। সাইকোটিক রোগীর গাত্রত্বক আঁচিল, অর্বুদ ও জড়ল যুক্ত দেখিতে।



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলার কি রূপে চর্মের উপর আত্মপ্রকাশ করে?

উত্তর: সোরা দুর্দমনীয় চুলকানি ও খোস পাঁচড়া রূপে চর্মের উপর আত্মপ্রকাশ করে। ইহার মামড়ি বা কণ্ডুত্বক পাতলা, সরু, সূক্ষ্ম ও ক্ষুদ্র। চর্ম অতিশয় তুষ্ক।
সিফিলিস চুলকানিবিহীন চর্মোদ্ভেদ ও পচনের প্রবণতা রূপে চর্মের উপর আত্মপ্রকাশ করে। ইহার মামড়ি ও আঁইশ বা শল্ক সর্বদাই পুরু ও ভারী থাকে। চর্মে সামান্য টাটানি থাকে। গ্লান্ডের বৃদ্ধি দৃষ্ট হয়।
সাইকোসিস আঁচিল, জড়ুল, টিউমার, স্লীপদ ইত্যাদি রূপে চর্মের উপর আত্মপ্রকাশ করে। ইহার চর্ম চকচকে ও মসৃন। সাইকোটিকের বয়ঃব্রণ বড় আকারের, লালচে, টাটানি ব্যথা, পুঁজহীন ও বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত। মস্তকের ত্বকের দাদ, নাপিতের ক্ষুরে মুখমণ্ডলের চর্মরোগ প্রভৃতি সবই সাইকোসিস।
টিউবারকুলার দোষ দাদ ও একজিমা সৃষ্টি করে। ইহা ছাড়া আমবাত ও হার্পিস জাতীয় চর্মপীড়া মিশ্রিত দোষ অর্থাৎ টিউবারকুলারের সৃষ্টি। একের পর এক ফোঁড়ার বিকাশ সাধন এবং তাহাতে প্রচুর স্রাব এবং অসহ্য জ্বর টিউমারকুলার দোষজ। তাহা ছাড়া কুষ্ঠপীড়া, গলিত কুষ্ঠ ও শ্বেত কুষ্ঠ, স্ত্রীলোকের যোনীপথে যন্ত্রণাদায়ক উদ্ভেদ, চুলকানিযুক্ত উদ্ভেদ, যাহা গর্ভাবস্থাতেই বেশী দেখা যায় তাহার মূলেও টিউবারকুলার দোষ বর্তমান।



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের পাকাশয় ও অস্ত্র সম্পর্কিত লক্ষণ বর্ণনা কর।

উত্তর: নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের পাকাশয় ও অস্ত্র সম্পর্কিত লক্ষণাবলী বর্ণনা করা হইল।
ক) সোরা- সর্বদাই ক্ষুধার্ত- এমনকি পেট ভর্তি থাকা সত্বেও অসময়ে ক্ষুধা, খাওয়ার পরে পেটের বায়ু এবং অজীর্ণতা বৃদ্ধি পায়। আহারের পর যাবতীয় যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়। সোরার লক্ষণ হইল পেট ফাঁপা, পেট গড়গড় করিয়া ডাকা, তলপেট ও উদর ফাঁপা। যন্ত্রণায় রোগী পাকস্থলীতে হাত স্পর্শ করিতে দেয় না। নিম্নোদরে ঠাণ্ডা লাগিয়া শূলবেদনা, উদরাময়। নিম্নোদরের বেদনা উত্তাপে উপশম হয়। আহারের পর অল্প বমি। সোরার বৈশিষ্ট্য হইল পেট খালি খালি বোধ।
খ) সিফিলিস- কোন নির্দিষ্ট খাদ্যবস্তুতে আকাংখা বা বিতৃষ্ণা নাই, কোনটি ভাললাগে, কোনটি খারাপ লাগে' এই লক্ষণটি সিফিলিস রোগীতে স্পষ্টভাবে বিকাশ লাভ করে না। মদ, চা, কফি তামাক জাতীয় উত্তেজক খাদ্য খাওয়ার বাসনা জাগ্রত হয়। অল্প মসলাযুক্ত মাংসে বিতৃষ্ণা ও অধিক মশলাযুক্ত খাদ্যে অভিরুচি দেখা যায়। উদর মধ্যে ক্ষত, উদর শূল, পাকস্থলীর প্রদাহ, উদরে ক্যান্সার প্রভৃতি লক্ষণ দৃষ্ট হয় এবং সে সাথে পচন। রাত্রে বৃদ্ধি, নৈরাশ্য প্রভৃতি বর্তমান থাকে। উদরাময়, মূত্র প্রভৃতি স্বাভাবিক স্রাবে রোগীর মানসিক লক্ষণ বৃদ্ধি পায়। ঠাণ্ডা খাদ্য ও পানীয় রোগী পছন্দ করে। আলু খাইতে অভিলাষ।
গ) সাইকোসিস- উদরাময়ে অতিশয় বেগের সহিত মল নির্গত হয়, তলপেটে মোচড়ানিও খামচানি বেদনা। অর্শপীড়া। ইহার শিশুরোগী আহারের পর একটি কষ্ট অনুভব করে এবং উপুড় হইয়া শুইলে, দ্রুত সঞ্চালনে তাহা উপশমিত হয়। উদর সংক্রান্ত যাবতীয় যন্ত্রণায় মোচড়ানি বেদনা বর্তমান থাকে কিছুক্ষণ পর পর বেদনা আসা-যাওয়া করে এবং সজোরে চাপনে উপশম হয়। লবণাক্ত, ঝাল খাদ্য, ঠাণ্ডা গরম উভয় প্রকার খাদ্য বা পানীয়, কাঁচা লবণ, মদ প্রভৃতি ইহার রোগী পছন্দ করে।
ঘ) টিউবারকুলার- যে সকল দ্রব্যে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি হয় তাহা পাইবার অদম্য বাসনা ইহার রোগীতে দেখা যায়। প্রচুর ক্ষুধা ও আহার সত্বেও শীর্ণতা। চা, দোক্তা, মাটি, চুন, কয়লা প্রভৃতি খাইতে ইচ্ছা করে। ইহার রোগী মাংসে প্রবৃত্তি থাকে কিন্তু সহ্য করিতে পারে না। উদ্ভিজ্জ খাদ্য, চর্বিজাতীয় ও লবণাক্ত খাদ্য বেশী পছন্দ করে। উদরের গ্লান্ডের বৃদ্ধি এবং অস্ত্রের গ্রহণী এই দোষহেতু আসিয়া থাকে। নিম্নোদরে শূলব্যথা, উদরে বায়ুসঞ্চয় এবং তলপেটে নানাপ্রকার শব্দের অনুভূতি তৎসহ প্রাতঃকালীন ও আহারের পর উদরাময় ইহাতেও দৃষ্ট হয়।



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের ক্ষুধার লক্ষণের তুলনা কর।  

উত্তর: নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের ক্ষুধার লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- সোরার রোগীর অত্যন্ত ক্ষুধা, পেট ভরিয়া খাওয়া সত্বেও ক্ষুধাবোধ করে, কারণ সে খাদ্যবস্তু হইতে সারাংশ গ্রহণ করিতে পারে না সেজন্য পেট ভরিয়া খাওয়া সত্বেও ক্ষুধা লাগে। ক্ষুধার তাড়নায় মধ্যরাত্রিতে ঘুম হইতে জাগিয়া খাবার খাইতে চায়। দুপুরে ও মধ্যরাত্রিতে পেটে অত্যন্ত শূণ্যতাবোধ করে। সুসিদ্ধ খাদ্যবস্তুতে বিতৃষ্ণা, ভাজা বা অল্পসিদ্ধ খাদ্যসমূহে এবং অত্যধিক মশলাযুক্ত খাদ্যে বিশেষ অভিরুচি থাকে কিন্তু তাহা সহ্য হয় না। রোগী গরম খাদ্য চায়।
খ) সিফিলিস- সুপ্ত সিফিলিসগ্রস্ত রোগী কোন খাদ্য ভাল লাগে, কোন খাদ্য খারাপ লাগে তাহা সম্পূর্ণ বুঝাইয়া বলিতে পারে না। অনুভূতি শক্তি হ্রাসের ফলে ক্ষুধার স্বল্পতা বা আধিক্য কোনটিই ইহার রোগীতে প্রকটভাবে দেখা দেয় না। রোগীর দেহমন যাহাতে অতি সহজেই উত্তেজিত হয় এইরূপ বস্তু যেমন চা, কফি, তামাকজাত দ্রব্য, মদ্য প্রভৃতি পানের প্রবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। অল্প মশলাযুক্ত মাংসে বিতৃষ্ণা ও অত্যধিক মশলাযুক্ত খাদ্য খাওয়ার অভিলাষ। রোগী ঠাণ্ডা খাদ্য চায়।
গ) সাইকোসিস- ইহার রোগীর মদ্যপানের ও প্রচুর কাঁচা লবণ সেবনের দারুন স্পৃহা। লবণাক্ত, ঝাল খাদ্য দ্রব্য, ঠাণ্ডা গরম উভয় প্রকার খাদ্য ও পানীয় বেশী পছন্দ করে। নারিকেল, সুপারী, সীম প্রভৃতি জাতীয় খাদ্যে সাইকোসিস রোগীর অভিরুচি বর্তমান থাকে।
ঘ) টিউবারকুলার- ইহার রোগী যে সকল দ্রব্য খাইলে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি হয় তাহারই অদম্য বাসনা। রোগীর মাংসে প্রবৃত্তি থাকে। মাংস ব্যতীত অন্য খাদ্য মুখরোচক নয়। খাদ্য হইতে খাদ্যান্তরে যাওয়ার প্রবৃত্তি। তবে চর্বিজাতীয় ও লবণাক্ত খাদ্যই বেশী পছন্দ করে। প্রচুর ক্ষুধা ও আহার সত্বেও শীর্ণতা দেখা দেয়।



প্রশ্ন-  সোরা, সাইকোসিস, সিফিলিস ও টিউবারকুলারের চক্ষু এবং দৃষ্টি শক্তির লক্ষণের তুলণামূলক বর্ণনা দাও।

উত্তর: নিম্নে সোরা, সাইকোসিস, সিফিলিস ও টিউবারকুলারের চক্ষু এবং দৃষ্টি শক্তির লক্ষণের তুলনামূলক বর্ণনা দেওয়া গেল।
ক) সোরা- সোরা রোগীর চক্ষুর নানাপ্রকার কার্যগত বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পীড়া দেখা দেয়। দিবালোক ও আলোক অসহ্য, চক্ষুর ব্যথা ভোরে শুরু হইয়া সূর্যাবর্তরূপে বৃদ্ধি পায় ও সন্ধ্যায় উপশম হয়। চক্ষুপীড়ায় প্রায়ই চুলকানি ও জ্বালা বর্তমান থাকে এবং চোখের পাতা ঘর্ষণ করিলে ভাল লাগে। দৃষ্টি বিভ্রম, চক্ষুর সামনে নানা বর্ণের দৃশ্য বা গুচ্ছবদ্ধ বিন্দু দেখে। অদূদ্র দৃষ্টি, দূরদৃষ্টি বা নিশান্ধতা প্রকাশ পায়। কোনকিছুর অর্ধাংশ, তার দ্বিগুন বা বহুগুণ দেখে।
খ) সাইকোসিস- সাইকোসিসগ্রস্ত রোগীর চক্ষুতে নানা প্রকারের রোগ দৃষ্ট হয় যাহা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ও বর্ষার দিনে বৃদ্ধি পায়। চক্ষুতে প্রচুর ঘন পুঁজ জন্মে ও পুঁজ নির্গত হয়। ঝাপসা দৃষ্টি, যেন কুশাশার মধ্যে দেখিতেছে এইরূপ বোধ। চক্ষু ঘষিলে ক্ষণকালের জন্য দৃষ্টি পরিষ্কার হয়। চক্ষুর বেদনা আর্দ্র আবহাওয়ায় ও বর্ষাকালে বৃদ্ধি পায়।
গ) সিফিলিস- ইহার রোগীর চক্ষুর যন্ত্রগত পরিবর্তন, অস্বাভাবিক গঠন বা বিকৃত চক্ষু, লেন্সের ক্ষত, কর্নিয়ায় ক্ষত, চোখের পাতায় ক্ষত দেখা দেয়।
কৃত্রিম আলোক অসহ্য, চক্ষুর পাতায় পক্ষাঘাত, চক্ষুর স্নায়বিক যাতনা। রোগলক্ষণ রত্রিতে ও উত্তাপে বৃদ্ধি পায়। ঠাণ্ডায় উপশম হয়।
ঘ) টিউবারকুলার- ইহার রোগীর অঞ্জনী জাতীয় যাবতীয় চক্ষুরোগ দৃষ্ট হয়। পুরাতন চক্ষুক্ষত, আলোকভীতি, এমন কি কৃত্রিম আলোক একেবারেই অসহ্য। পড়িতে পড়িতে চক্ষুর পাতা মুদিয়া আসে, চক্ষুতে ব্যথা বোধ হয়, চক্ষু বন্ধ করিলে ব্যথার উপশম। শিরঃপীড়ার পূর্বে এবং মাথা ঘোরার সহিত দৃষ্টি শক্তির হ্রাস পায়। চোখের পাতা ফোলা ও লালবর্ণ। দানাময় চক্ষুপত্র, অঞ্জনী প্রভৃতির মূলে টিউবারকুলার দোষ বর্তমান।



প্রশ্ন-  সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের কর্ণের লক্ষণের তুলনা কর।

উত্তর: নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের কর্ণের লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- সোরা রোগীর কর্ণের কার্যগত বিশৃঙ্খলা ব্যতীত যন্ত্রগত কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না। ইহার রোগীর কর্ণ দৃশ্যত ছোট এবং স্বাভাবিক। কর্ণের মধ্যে দেখিতে শুষ্ক ও খসখসে। কর্ণে সকল প্রকার শব্দ অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর। কর্ণে প্রায়ই ফোঁড়া হয় না বলিলেই চলে।
খ) সিফিলিস- ইহার রোগীর কর্ণ সাধারণত দেহের সহিত যতটুকু হইলে লাগসই হয় তাহার চাইতেও দীর্ঘাকৃতির হইয়া থাকে। যাহাকে চলতি কথায় বেখাপ্পা বলে। রোগীর কর্ণ দুর্গন্ধযুক্ত রস ও পূজপ্রবণ। সামান্য ঠাণ্ডায় সর্দিলাগে বা কোন প্রকার উদ্ভেদ জাতীয় পীড়া যেমন হাম, বসন্ত প্রভৃতির সহিত কর্ণে দুর্গন্ধযুক্ত পূজোৎপত্তি হয়। কর্নের যাবতীয় স্রাব রাত্রিতে ও উত্তাপে বৃদ্ধি পায়।
গ) সাইকোসিস- শিশুদের কানের মধ্যে জমাটবাঁধা পিণ্ড দেখা দেয়।
ঘ) টিউবারকুলার- ইহার রোগীর শিশুকালে হাম, বসন্ত, স্কার্লেট ফিভার প্রভৃতি রোগে ভুগিয়া কর্ণদ্বয় হইতে দুর্গন্ধযুক্ত পূজ স্রাব হয়। সামান্য ঠাণ্ডাতেই কানে যন্ত্রণা হয়, পাকে তৎসহ জ্বর আসে। পুনঃপুনঃ কর্ণমূল ও গ্লান্ডের স্ফীতিসহ টনসিল প্রদাহ। কর্ণে শুষ্কজাতীয় চর্মরোগের আবির্ভাব ঘটে। কর্ণের যাবতীয় কষ্ট দিনের বেলায় হ্রাস পায় ও রাত্রিকালে বৃদ্ধি পায়।
 


প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের নাসিকার লক্ষণের তুলনা কর।

উত্তর: সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের নাসিকার লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- সোরা রোগীর নাসিকা স্বাভাবিক সকল প্রকার গন্ধেই স্পর্শকাতর হইয়া উঠে। নাসিকায় সুগন্ধ, দুর্গন্ধ কোনটাই সহ্য করিতে পারে না। কখনো কখনো সুগন্ধ দুর্গন্ধ উভয়টিতেই রোগীর ঘুম ভাঙিয়া যায় বা বেহুঁশ হইয়া পড়ে। নাসিকায় কোন যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়া হইলে তাহা কোন সময়ই মারাত্মক হয় না। তবে রোগীর নাসিকায় ক্ষত বা ঘা হওয়া সোরা ও সিফিলিস দোষের সংমিশ্রণ সংকেত বহন করে।.
খ) সিফিলিস- রোগীর প্রায়শই সর্দি লাগার কারণে নাসিকা সুড়সুড় করে। নাসিকা গহ্বরে ক্ষত হয়, মামড়ি পড়ে, চটা জমে এবং দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস বাহির হয়। নাসিকা গহ্বরে বার বার স্ফোটক হয় যাহা সুচিকিৎসিত না হইলে নাসিকার ঘ্রাণশক্তি ও নাসিকার মধ্যেকার কোমল অস্থিটি পর্যন্ত বিনাশ হইতে পারে। নাক দিয়া রক্ত পড়ে।
গ) সাইকোসিস- রোগীর নাসিকার ঘ্রাণশক্তি বিনষ্ট হইয়া যায়। সর্দিজনিত কারণে নাসিকা সুড়সুড় করার সহিত ক্ষতবিহীন মৎস্যগন্ধযুক্ত স্রাব নির্গত হয়। নাসিকার মধ্যে পাতলা অস্থিযুগলের প্রদাহজনিত কারণে নাসিকা বন্ধ মনে হয়। নাসিকার প্রচুর সর্দিস্রাব বা স্ত্রীলোকদের শ্বেতপ্রদর স্রাব প্রভৃতির মাধ্যমে নাসিকার রোগলক্ষণের উপশম হয়।
ঘ) টিউবারকুলার- শিশুদের সামান্য কারণে নাক ঝাড়িলে, মুখ ধুইলে নাক হইতে রক্তপাত হয়। নাসিকার পলিপাস হইতে প্রচুর রক্তস্রাব হয়। বিদ্যালয়গামী ছাত্রছাত্রীদের বিনাকারণে রক্তোচ্ছাসের ফলে নাসিকা হইতে রক্তস্রাব হয়। সামান্য ঠাণ্ডায় নাক বন্ধ হইয়া যায়। মুখ দিয়া শ্বাসক্রিয়া চালায়। সর্দি স্রাবের রঙ হলুদবর্ণের এবং পুরাতন মাখন বা গন্ধকের গন্ধযুক্ত।



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের মুখমণ্ডলে লক্ষণের তুলনা কর।

উত্তর: নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের মুখমণ্ডলের লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- সোরার রোগীর মুখমণ্ডল দেখিতে অনেকটা উল্টানো পিরামিডের ন্যায়। সমস্ত মুখমণ্ডল শুষ্ক, কখনও ঘাম হয় না। ঠোঁট শুষ্ক ও উজ্জ্বল লাল বর্ণের। জুরাবস্থায় ঠোঁট দুইটি নীলাভ, উজ্জ্বল লাল বর্ণের দেখায় এবং সারা মুখে তাপোচ্ছাস হয়। সোরা ও সিফিলিস দোষের সংমিশ্রণে মুখমণ্ডলে প্রচুর ঘর্ম হয়।
খ) সিফিলিস- সিফিলিস দুষ্ট রোগীর মুখমণ্ডল দেখিলে মনে হয় যেন মুখমণ্ডলে তৈল জাতীয় কিছু মাখানো আছে। তাই মুখমণ্ডল তেলতেলে ও উজ্জ্বল দেখায়। সমগ্র মুখমণ্ডলে প্রচুর ঘর্ম হয়।
গ) সাইকোসিস- সাইকোসিস রোগীর মুখমণ্ডল দেখিতে শোখগ্রস্ত, নীলাভও মৃতব্যক্তি ন্যায় পাংশু দেখায়।
ঙ) টিউবারকুলার- ইহার রোগীর মুখটি মলিন ও বিবর্ণ কিন্তু গাল দুইটি ঈষৎ আরক্তিম। এই আরক্তিমতা সাধারণতঃ অপরাহ্নের দিকে জুরাবস্থায়, সর্দিকাশির আক্রমণের সময়, শিশুদের দন্তোদগমের সময় বা কৃমি লক্ষণের সহিত বিকশিত হয়। রোগীর ঠোঁট দুইটি লালবর্ণ ধারণ করে। অনেক সময় শুষ্কতা দেখা দেয়। প্রাতঃকালে নিদ্রা ভঙ্গের পর সমগ্র মুখমণ্ডলটি অর্থাৎ নাসিকা, চক্ষু, ঠোঁট সর্বত্রই স্ফীতভাব বর্তমান থাকে। রোগীর একটি গাল গরম, অন্য গাল ঠাণ্ডা বোধ হয়। মুখমণ্ডলে ক্ষুদ্রাকৃতির যন্ত্রণাদায়ক স্ফোটক বা বয়ঃব্রণ হয়। চক্ষুদ্বয় কোটরাগত।



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের মুখগহ্বরের লক্ষণাবলীর তুলনা কর।

উত্তর : নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের মুখ গহ্বরের লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- সোরার রোগীর দন্তমাড়ি, দন্তগোড়া ও জিহ্বায় ময়লা জমে। মাড়িতে ও জিহ্বায় জ্বালা করে। মুখে নানা রকমের বিস্বাদ যেমন টক, মিষ্টি, তিক্ত ইত্যাদি। এমনকি কখনো ভুক্ত পানীয়ের অবিকল স্বাদযুক্ত ঢেকুর উঠে। অধিক সুগন্ধিযুক্ত খাদ্যপানীয়ে অনীহা। কখনো কখনো সকল প্রকার খাদ্য পানীয়ে একপ্রকার পোড়া স্বাদ পায়।
খ) সিফিলিস- ইহার রোগীর মুখগহ্বরে যাবতীয় ক্ষত লক্ষণ দৃষ্ট হয়। রোগীর দাঁতগুলি অসম, ক্ষয়প্রাপ্ত, দন্তের প্রান্তভাগ করাতের ন্যায় খাঁজ কাটা ও দন্তমূল আলগা। দাঁতের মাঁড়িতে স্ফোটক ও পূজ সঞ্চয় হয় এবং দুর্গন্ধযুক্ত লালাস্রাব হয়। জিহ্বার ধারগুলি দাঁতের ছাপযুক্ত, জিহ্বা সরস অথচ প্রচুর পানির পিপাসা হয়। গলক্ষত দেখা দেয়, গলার গ্লান্ডগুলি স্ফীত হয়। মুখে ধাতবদ্রব্যের স্বাদ বিশেষ করিয়া তামার স্বাদ পাওয়া যায়।
গ) সাইকোসিস- রোগীর মুখাম্মাদ মাংসের আঁইসের ন্যায়।
ঘ) টিউবারকুলার- রোগীর দন্তমাড়ি ও মুখমণ্ডল হইতে প্রচুর পরিমাণে উজ্জ্বল লালবর্ণের তাজা রক্ত স্রাব হয়। দন্তমাজনের সময়ও দাঁতের মাড়ি হইতে প্রচুর রক্তস্রাব হয়। শিশুদের দন্ত নির্গমন হইতে না হইতে তাহা বিনষ্ট হইয়া যায়। দাঁতগুলি অসম ও সারিবদ্ধ নহে। জিহ্বায় শ্বেত বা হলুদ বর্নের ময়লা জমে। জিহ্বাগ্রে শ্বেতবর্ণের ক্ষতসহ প্রদাহ হয় যাহা দই এর বর্ণ বিশিষ্ট। মুখে দুর্গন্ধ, পূজ ও রক্তের স্বাদ, কফস্রাব মিষ্টি, সময়ে সময়ে লবণাক্ত বা ডিমপচার ন্যায় স্বাদযুক্ত বা একেবারে স্বাদহীন।



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণের তুলনা কর।

উত্তরঃ নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- অসদৃশ বিধান মতে চিকিৎসার ফলে হাম বা উদ্ভেদ জাতীয় কোন পীড়ার পরে ফুসফুসটি প্রায়ই আক্রান্ত হয়। কষ্টদায়ক শুষ্ক আক্ষেপিক জাতীয় কাশির প্রাদুর্ভাব হয়। কাশির সহিত শ্লেষ্মা উঠে না, কখনো কখনো অল্প পরিমাণে স্বাদহীন শ্লেষ্মা উঠে। কখনো চাপাপড়া রোগলক্ষণের কুফলরূপে ফুসফুস হইতে রক্ত নির্গত হয়। ইহার রোগীর কাশির দাপটে শিরঃপীড়ার আবির্ভাব ঘটে।
খ) সিফিলিস - সিফিলিস দোষ একটি ধ্বংসকারী দোষ; ইহা যে কোনও ক্ষয় ও পচন এবং যাবতীয় যন্ত্রগত বিশৃঙ্খলা আনিতে সক্ষম। রোগীর শ্বাসনালীতে ক্ষত হইবার ফলে কণ্ঠস্বর লোপ পায়। শ্বাসগ্রহণের সময় হাঁপানী বা শ্বাসরুদ্ধকর কাশি হয়। সামান্য কারণে শ্বাসযন্ত্রে সর্দি দেখা দেয়। স্বাদহীন, সবুজ, হলুদ বা সাদাবর্ণের চটচটে বা সুতার ন্যায় শ্লেষ্মা নির্গত হয়। স্ত্রীলোকদের ঋতুস্রাবের পূর্বে কণ্ঠস্বর ভঙ্গ হইতে দেখা যায়।
গ) সাইকোসিস- রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত যাবতীয় রোগ যেমন নিউমোনিয়া, হাঁপানী, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি, কাশি, ইত্যাদি মেঘবৃষ্টির দিনে আর্দ্র আবহাওয়ায় ও বর্ষাকালে বৃদ্ধি পায়। প্রচুর পরিমাণে শ্লেষ্মা নিঃসরণকারী হাঁপানী রোগে শেষ রাত্রিতে রোগী স্থিরভাবে শুইয়া বসিয়া থাকিতে পারে না। রাত্রে শ্বাসকষ্ট বাড়ে তাই পায়চারি করে। উপুড় হইয়া শুইলে শ্বাসকষ্টের উপশম হয়। রোগীর উপর্যুপরি সর্দি হয়, সর্দি সহজে পাকে না। বুকে সূঁচ ফোটানো ব্যথা, টাটানিপূর্ণ ব্যথা অনুভব হয় এবং চাপে বৃদ্ধি পায়।
ঘ) টিউবারকুলার- ইহার রোগীর বক্ষস্থলটি শীর্ণ, শুষ্ক ও অপ্রশস্ত বলিয়া বক্ষদেশটি সম্পূর্ণরূপে সম্প্রসারিত ও সংকুচিত করিতে পারে না। যে কারণে ফুসফুস প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করিতে পারে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিনষ্ট হইবার কারণে শ্বাসযন্ত্রে জীবাণুঘটিত রোগদৃষ্ট হয়। রক্তের সহিত অক্সিজেন ভালভাবে সংমিশ্রিত না হইবার কারণে রোগী ঘনঘন শ্বাস নিতে বাধ্য হয়। খুসখুসে কাশি, কাশির সহিত পূজের ন্যায় ও চটচটে দুর্গন্ধযুক্ত, মিষ্টি ও লবণাক্ত স্বাদযুক্ত শ্লেষ্মা উঠে। কাশির সহিত রক্ত মিশ্রিত শ্লেষ্মা বা শুধু রক্ত নির্গত হইতেও দেখা যায়। ইহার শ্লেষ্মা পানিতে না ডুবিয়া ভাসিয়া উঠে।



প্রশ্ন-  সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের হৃদযন্ত্রের লক্ষণের তুলনা করা।

উত্তরঃ নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের হৃদযন্ত্রের লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- সোরা' হৃদযন্ত্রের কোন যন্ত্রগত পরিবর্তন আনিতে পারে না। রোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছু চাপাইয়া দিলে সোরাদুষ্ট, মনে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হইয়া হৃদপিণ্ডে অত্যধিক রক্তোচ্ছাসের অনুভূতি, দুর্বলতাবশতঃ অতিদ্রুত হৃদস্পন্দন, হৃদপিণ্ডে হাতুড়ি মারার মত অনুভূতি প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। হৃদপিণ্ডের উপসর্গের সহিত ভয়, দুশ্চিন্তা আনুষঙ্গিক লক্ষণরূপে প্রকাশ পায়। রোগীর মন সর্বদা হৃদপিণ্ডের উপর থাকে, রোগী মনে করে এই বুঝি হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া মারা, গেলাম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সোরা দুষ্ট রোগী হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া মারা যায় না।
খ) সিফিলিস- ইহার রোগীর হৃদপিণ্ডের এনজাইনা পেক্টোরিস, হৃদপিণ্ডের উপর স্ফোটক, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই সকল রোগলক্ষণ রাত্রিতে বৃদ্ধি পায়, সে সাথে প্রচুর ঘর্ম ও মানসিক নৈরাশ্যের ভাব বিদ্যমান থাকে। ইহা ছাড়া যে সকল রোগের ক্ষেত্রে হঠাৎ করিয়া রোগীর মৃত্যু হইতে দেখা যায় সে সকল রোগের ক্ষেত্রেও সিফিলিসের প্রাধান্যই বর্তমান থাকে।
গ) সাইকোসিস- রোগীর জন্মগত হৃদরোগ বা হৃদযন্ত্রের গঠনের অস্বাভাবিকতা দৃষ্ট হয়। হৃদযন্ত্রের রোগের কারণেই স্কন্ধ হইতে হৃদযন্ত্রস্থল বা হৃদযন্ত্র হইতে স্ক্যাপুলা পর্যন্ত ব্যথা অনুভব হয়। হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত শ্বাসকষ্টে হঠাৎ করিয়া হৃদক্রিয়া বন্ধ হইবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। হৃদযন্ত্র আক্রান্ত শ্বাসকষ্টে রোগী ক্রমাগত-কষ্ট ভোগ করা সত্বেও একপ্রকার শোথের কারণে দেহ স্কুল হইতে থাকে। হৃদযন্ত্রটি বড় বা স্থূল হয়। অপচিকিৎসায় বাতরোগ চাপা পড়িয়া হৃদযন্ত্রের রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়। বিদ্যুৎগতির ন্যায় একপ্রকার যন্ত্রণা হঠাৎ আসা যাওয়া করিতে থাকে।
ঘ) টিউবারকুলার- হৃদযন্ত্রের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের রোগলক্ষণও রোগীর মনে কোনপ্রকার আশংকার সৃষ্টি করিতে পারে না। রোগী এমনভাব প্রকাশ করে যেন তাহার কিছুই হয় নাই। হৃদযন্ত্রের রোগলক্ষণের সহিত সাময়িক সংজ্ঞা লোপের ভাব, দৃষ্টিহীনতা, কর্ণে নানা প্রকার শব্দ এবং অতিশয় দুর্বলতা দৃষ্ট হয়। বসিয়া থাকিলে উক্ত রোগলক্ষণের বৃদ্ধি এবং শয়নে উপশম হয়। হৃদযন্ত্রের রোগলক্ষণসমূহ অর্শ ও ভগন্দরের সহিত পর্যায়ক্রমে আসা যাওয়া করে।



প্রশ্ন-  সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের মূত্রযন্ত্রের লক্ষণের তুলনা কর।

উত্তর: নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের মূত্রযন্ত্রের লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- সামান্য ঠাণ্ডা লাগিলেই সোরা দোষজ বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রস্রাব বন্ধ হইয়া যায়। প্রস্রাব যন্ত্রের নানা প্রকার লক্ষণ যেমন অসাড়ে প্রস্রাব নিঃসরণ এবং জ্বালাযুক্ত প্রস্রাব হাসিলে, কাশিলে বা হাঁচি দিলে প্রকাশ পায়। জ্বরে ভুগিবার পর সাদা ফসফেট জাতীয় মরিচা রঙের ন্যায় প্রায়ই প্রস্রাব হয়।
খ) সিফিলিস- সিফিলিস দুষ্ট রোগীতে যন্ত্রণাবিহীন মূত্রকৃচ্ছতা অর্থাৎ মূত্রের ধারা ক্ষীণ, মূত্রত্যাগ কালে কোন প্রকার জ্বালা যন্ত্রণা নাই অথচ বার বার মূত্রবেগের তীব্রতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। দেহের কোন স্থানে প্রস্রাব লাগিলে তথায় জ্বালা পোড়া করে। লিঙ্গমুণ্ডে কঠিন বা কোমল স্যাংকার বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। মূত্রযন্ত্রের ক্ষত।
গ) সাইকোসিস- সাইকোসিস দোষজ রোগীর প্রস্রাব ত্যাগকালে তীব্র যন্ত্রণা, শিশু রোগী যন্ত্রণায় চীৎকার করে। সূত্রপথ সংকুচিত হওয়া এবং মূত্রযন্ত্রে নানাপ্রকার আঁচিলের আবির্ভাব সাইকোসিস দোষজ। প্রস্রাব পরিষ্কার না হওয়া, ফোঁট ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া মূলত সাইকোসিসের কর্ম। মূত্রকৃচ্ছতা লক্ষণ ইহাতে যথেষ্ট বর্তমান থাকিলেও বর্ষার দিনে প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব নির্গত হওয়া ইহার এক অদ্ভূত লক্ষণ। মূত্রথলীতে পাথুরী, মূত্রকোষের নানা প্রকার কষ্টসহ অন্যান্য রোগলক্ষণ কিছুদিনের জন্য আরাম হইয়া পুনরায় বৃদ্ধি পায় ও মারাত্মক আকার ধারণ করে। শর্করা মিশ্রিত বহুমূত্র এবং মূত্রের সহিত এলবুমিন নির্গত হওয়া টিউবারকুলার দোষজ হইলেও পীড়ার মারাত্মক অবস্থা সাইকোসিসের প্রাধান্যযুক্ত সংমিশ্রণেই উৎপন্ন। হাইড্রোসিল বা হাইড্রোসিল জনিত অন্যান্য লক্ষণ সাইকোসিস দোষজ।
ঘ) টিউবারকুলার- মূত্রযন্ত্রে টিউবারকুলার দোষহেতু যে সকল লক্ষণ দেখা যায় তাহা সোরার সহিত সাইকোসিসের প্রাধান্য জনিত অবস্থা হইতেই সৃষ্টি হয়। সিফিলিস দোষহেতু মূত্রযন্ত্রের ক্ষত হয়। কিন্তু সাইকোসিস দোষে মূত্রযন্ত্রের ক্ষত ব্যতীত নানাজাতীয় লক্ষণ বিকাশ পায়। এই জন্য মূত্রযন্ত্রের উপর টিউবারকুলার দোষের যে প্রভাব তাহার মূলে সাইকোসিস দোষটিই . ক্রিয়াশীল। মূত্রত্যাগের পর অস্থিরতা ও দুর্বলতা দেখা দেয়। রোগী স্বচ্ছ পানির ন্যায় বর্ণহীন প্রচুর মূত্র ত্যাগ করে। ডায়াবেটিস রোগগ্রস্ত ব্যক্তির মূত্রে প্রায়ই এলবুমেন বিদ্যমান থাকে। মূত্র পচা ও ভ্যাপসা গন্ধযুক্ত। বিছানায় মূত্রত্যাগ কালে শিশুর ঘুম ভাঙিয়া যায়। মূত্রদ্বার দিয়া রক্তস্রাব হয়। বিছনায় শুইবার সঙ্গে সঙ্গে যে সকল শিশু অসাড়ে মূত্রত্যাগ করে তাহারা সুপ্ত টিউবারকুলার দোষে দুষ্ট।



প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের স্ত্রী-জননেন্দ্রিয়ের লক্ষণের লক্ষণের তুলনা কর।

উত্তর: নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- স্ত্রীলোকদের মাসিক ঋতুস্রাব সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যগত বিশৃংখলা সোরা দোষ হেতুই ঘটিয়া থাকে। কিন্তু যন্ত্রগত কোন বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয় না। উল্লেখ্য মাসিক ঋতুস্রাবের এই সকল পরিবর্তনের সহিত কোন প্রকার জ্বালাপোড়া, হাজা ও ক্ষতকর লক্ষণ বিদ্যমান থাকে না।
খ) সিফিলিস- পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীদেহেই সিফিলিস ও সাইকোসিসের প্রভাব বহুলাংশে পরিস্ফুট হইতে দেখা যায়। সঙ্গম শক্তির অক্ষমতা প্রধানতঃ সিফিলিস দোষ হেতুই আসিয়া থাকে। জরায়ুর ক্যান্সার, স্তনের ক্যান্সার, যোনী কপাটে ক্ষত, যোনীদ্বার হইতে ক্ষতকারী দুর্গন্ধযুক্ত ও সুতার ন্যায় লম্বা লম্বা স্রাব, যোনীপথে দুর্গন্ধ, যোনী পথে স্পর্শকাতরতা, ঋতুস্রাবের পর মূর্ছা লক্ষণ, ঋতুকালে গুহ্যদ্বারে বেদনা, নৈরাশ্য ও ভয়ের উদ্রেক হওয়া, গর্ভস্রাব প্রভৃতি যাবতীয় লক্ষণ রাত্রেই বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক নৈরাশ্য ও জীবনের প্রতি বীতস্পৃহা ও আত্মহত্যার ইচ্ছাসহ অধিক ঋতুস্রাব সিফিলিস দোষেই বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।
গ) সাইকোসিস- জরায়ু, ডিম্বাধার ও ডিম্বনালীর প্রদাহ, রোগী সর্বদাই তাহার মনটিকে জননেন্দ্রিয়ের প্রতি নিবদ্ধ রাখে এবং সময় পাইলেই প্রতিদিন সে কয়েকবার যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করিয়া দেখে। ক্ষতকারী বা হাজাকর প্রদর স্রাবের কারণে রোগিনী অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়ে। ঋতুস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ঋতুকালীন ব্যথা বেদনা থাকে। ঋতুস্রাবের সময় ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ হয় এবং স্তনে ব্যথা হয়। মৎস্য পচা গন্ধযুক্ত জমাট বাঁধা স্রাবের সহিত একটি সার্বদৈহিক দুর্বলতা এবং মানসিক নৈরাশ্যের ভাব বিদ্যমান থাকে। ঋতুস্রাব কাপড়ে লাগিলে ধুইলেও দাগ সহজে উঠিতে চায় না। নানাপ্রকার ঋতু বিশৃঙ্খলার সহিত যোনীপথে চুলকানি এবং স্ত্রীলোকদের বন্ধ্যাত্ব দোষ দৃষ্ট হয়। তবে স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের যে কোন রোগ লক্ষণের সহিত সাইকোসিসের মানসিক লক্ষণসমূহ যেমন-গোপনপ্রিয়তা, সন্দিগ্ধচিত্ততা, অন্যমনষ্কতা, স্মৃতি শক্তির দুর্বলতা, প্রতিহিংসা পরায়নতা, ক্রোধান্ধতা ও বিরক্তিভাব অবশ্যই বিদ্যমান থাকে।
ঘ) টিউবারকুলার- স্ত্রীলোকদের জরায়ু, ডিম্বাধার ও তৎসংক্রান্ত নানা প্রকার রোগলক্ষণ অত্যন্ত বিভীষিকাময় যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা লইয়া টিউবারকুলার দোষ হেতুই আবির্ভূত হয়। উজ্জ্বল লাল বর্ণের প্রচুর পরিমাণে ঋতুস্রাব, ঋতুস্রাবের পূর্বে ও পরে তরল, ক্ষতকর প্রদর স্রাব, যেখানে এই স্রাব লাগে সেখানেই চুলকায় ও সুড়সুড় করে। ঋতুস্রাবের আধিক্যের ফলে মাথাঘোরা, মাথাধরা, কোমর ব্যথা, অত্যন্ত দুর্বলতা, সংজ্ঞালোপ ও হজমশক্তির গোলযোগ কিছুদিন চলিবার পরে আবার কয়েকদিন বিরতি দিয়া পুনরায় আবির্ভূত হয়। উদরাময় সহ ঋতুস্রাবের আবির্ভাব, ঋতুকালীন জ্বর, বিবমিষা, বমন, ক্ষুধাহীনতা, চোখে নানাপ্রকার বর্ণ দেখা এবং কর্ণে নানা প্রকার শব্দ শোনার লক্ষণ ইহাতে দৃষ্ট হয়। ঋতুস্রাব অবসান হইলে চক্ষু কোটরাগত হয় এবং চোখের চারিদিকে কালিমা পড়া সহ রোগী একেবারে রক্তশূণ্য ও অবসন্ন হইয়া পড়ে।
 


প্রশ্ন- সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের পুং যৌনাঙ্গের লক্ষণের তুলনা কর।

উত্তর: নিম্নে সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলারের পুং যৌনাঙ্গের লক্ষণের তুলনা করা হইল।
ক) সোরা- পুরুষদের স্বপ্নঘোরে অসাড়ে বীর্যপাত, বীর্যপাত দীর্ঘদিন যাবত চলিতে থাকিলে হজম শক্তির দুর্বলতা, কাজকর্মে উৎসাহহীনতা, বিষণ্ণ মন, স্মৃতিশক্তি হাস পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণাবলী আসিয়া দেখা দেয়। ইহা ব্যতীতও দীর্ঘদিন যাবত যে কোন প্রকার রোগ ভোগের পরে পুং জননেন্দিয়ের কোন প্রকার লক্ষণ বিশেষ করিয়া দুর্বলতা দৃষ্ট হইলে তাহা সোরাঘটিত বলিয়া নিশ্চিত হইতে হইবে।
খ) সিফিলিস- সিফিলিসের ধর্ম এই যে, বংশগত যে অবস্থাপ্রাপ্ত হয় তাহার পূর্ণচিত্র নিজ নিজ দেহে বহন করিয়া চলে। লিঙ্গমুন্ডে শক্ত বা নরম স্যাংকার বা ক্ষত সৃষ্টি হয়। পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রী দেহে সিফিলিসের প্রভাব বহুলাংশে পরিস্ফুট হয়। পুংলিঙ্গ মুণ্ডে ক্যান্সারও সিফিলিসের দোষে ঘটিয়া থাকে।
গ) সাইকোসিস- পুরুষদের নানা প্রকার লক্ষণ যেমন অণ্ডকোষ প্রদাহ,  হাইড্রোসিল, মূত্রকোষ ও মূত্রথলীতে পাথর জমা প্রভৃতি সাইকোসিস দোষ হেতু আসিয়া থাকে। বিনা কারণে লিঙ্গোচ্ছাস এবং হস্তমৈথুনের অদম্য অভিলাষ এই দোষে দৃষ্ট হয়। পুংজননেন্দ্রিয়ের যে কোন রোগলক্ষণের সহিত ইহার মানসিক লক্ষণ যেমন- গোপনপ্রিয়তা, সন্দিগ্ধচিত্ততা, অন্যমনষ্কতা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, প্রতিহিংসা পরায়নতা, ক্রোধান্ধতা এবং বিরক্তিরভাব অবশ্যই বিদ্যমান থাকে।
ঘ) টিউবারকুলার- পুংজননেন্দ্রিয় পথে রক্তস্রাব, ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন না দেখিয়াই বীর্যপাতের কারণ টিউবারকুলার দোষজ। ইহার রোগী প্রায়ই অনৈতিক পন্থায় শুক্র ক্ষয় করে, অবৈধ উপায়ে শুক্রক্ষয়ের প্রবৃত্তি। যতই বীর্যক্ষয় করে ততই স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। প্রস্রাব ও মলত্যাগ করার সময় কিংবা সামান্য মানসিক উত্তেজনা ও অবসাদে অনিচ্ছা সত্বেও আপনা হইতেই বীর্য বাহির হইয়া যায়। মন সব সময়ই উৎসাহ শূণ্য ও বিষণ্ণ থাকে। শেষ পরিণতি হিসাবে এই সকল ব্যক্তি সাধারণতঃ শুষ্ক জাতীয় টিউবারকুরার রোগে ভুগিয়া মৃত্যুবরণ করে।



 প্রশ্ন-  সিউডো সোরা ও টিউবারকুলার ধাতুতে পার্থক্য কি?

উত্তর: ডাঃ জে এইচ অ্যালেনের মতে, সোরার সঙ্গে যখন অর্জিত -সিফিলিসের সংমিশ্রন ঘটে এবং চাপা দেওয়া অসদৃশ বিধানের চিকিৎসায় তখন যে দোষযুক্ত অবস্থার উদ্ভব হয় সেই অবস্থাকে বলা হয় সিউডো সোরা বা নকল সোরা। কিন্তু বংশগত সিফিলিস দোষ অর্থাৎ বংশগত সোরা সিফিলিসের মিশ্র দোষই পরিণত হয় টিউবারকুলার ধাতুতে।



প্রশ্ন-  টিউবারকুলার ধাতুতে কেন সোরার মানসিক লক্ষণের প্রাধান্য এবং সিফিলিসের ধ্বংসকারিতা ও ভয়াবহতা বিদ্যমান থাকে?


উত্তর: সোরা ও সিফিলিসের সংমিশ্রণজাত টিউবারকুলার ধাতুতে সোরার মানসিক লক্ষণের প্রাধান্য এবং সিফিলিসের ধ্বংসকারিতা ও ভয়াবহতা বিদ্যমান থাকে। সোরা কোন কিছুর আকারগত পরিবর্তন আনয়ন করিতে পারে না, কিন্তু সিফিলিসে গঠনগত পরিবর্তন আনয়ন করিয়া থাকে। সোরার মানসিক লক্ষণের প্রাধান্যের কারণে ইহার রোগী কাজে ও চিন্তায় মনোনিবেশ করিতে পারে না, চিন্তা বিষয় হইতে বিষয়ান্তরে গমন করে, মানসিক চাঞ্চল্যের কারণে চিকিৎসকের নিকট, বন্ধুবান্ধবের নিকট ব্যাধির কথা বলিয়া বিরক্ত করে। কিন্তু সিফিলিসের রোগী তাহার অভিযোগের কথা বলিতেই চায় না, দরকার হইলে আত্মহত্যা করিয়া সকল জ্বালা জুড়ায়। সোরার রোগী নানাপ্রকার কষ্ট ভোগের কথা বলে, কিন্তু সিফিলিসের রোগীর অভিযোগ কম। সোরায় অবজেকটিভ বা বিষয়নিষ্ঠ বা মনের বাহিরের বিষয় কম, কিন্তু সিফিলিটিক রোগীতে উহা অধিক।

টিউবারকুলার রোগীর মানসিক চাঞ্চল্য, অসহিষ্ণুতা বা অধৈর্য, পরিবর্তনশীলতা এবং অসন্তুষ্টির ভাব সর্বত্র দৃষ্ট হয়। মনের এই পরিবর্তনশীলতার জন্য টিউবারকুলার রোগী কিছুতেই শান্তি পায় না। সোরা ও সিফিলিসের সংমিশ্রণে টিউবারকুল্লার ধাতুর উৎপত্তি হওয়ায়, সোরার মানসিক অবস্থার প্রাবল্য যখন থাকে, তখন ঐ ধাতুতে মানসিক অবস্থার যে চাঞ্চল্য, পরিবর্তনশীলতা ও অসন্তোষের ভাব পরিলক্ষিত হয় এবং সিফিলিসের মানসিক অবস্থার যখন প্রাবল্য থাকে, তখন আত্মজীবন সম্বন্ধে উদাসীনতা ও দুর্দমনীয় শুক্রক্ষয়ে ঐকান্তিক আকাংখা এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম পালন বিষয়ে যথেচ্ছাচারিতা অর্থাৎ ধ্বংসের অবস্থার সকল লক্ষণ পরিস্ফুট দেখা যায়। একটি টিউবারকুলার ধাতুর প্রাথমিক অবস্থা, অপরটি শেষ দিকের অবস্থা। সুতরাং টিউবারকুলার ধাতুর প্রথম অবস্থায় সর্ববিষয়ে অসন্তোষ, ক্রোধ, পরিবর্তনশীলতা, অস্থিরতা থাকে এবং শেষের দিকে উদাসীনতা ও ধ্বংস আনিয়া সকল কষ্টের নিবৃত্তি করে।



প্রশ্ন-  মিশ্র মায়াজম কাহাকে বলে?

উত্তর: চির মায়াজম তিনটি। যথা- সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস। দুই বা ততোধিক মায়াজম একই দেহে সম্মিলিত অবস্থায় যে জটিল মায়াজমেটিক অবস্থার সৃষ্টি করে তাহাকে মিশ্র মায়াজম বলে।



প্রশ্ন- মিশ্র মায়াজম হইতে উৎপন্ন ১০টি রোগের নাম উল্লেখ কর।

উত্তর: মিশ্র মায়াজম হইতে উৎপন্ন ১০টি রোগের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হইল।
যথা- টিউবারকুলোসিস, ক্যান্সার, উন্মাদ, শয্যাক্ষত, দাউদ, একজিমা, উদরী, মেরুমজ্জার ক্ষয়, নিউমোনিয়া, টিউবারকুলার মেনিনজাইটিস।



প্রশ্ন-  মিশ্র মায়াজমঘটিত রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা কর।

উত্তর: মিশ্র মায়াজমঘটিত রোগলক্ষণের চিকিৎসায় পর্যায়ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন এন্টিমায়াজযেটিক ঔষধ প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। সোরার সহিত শুধুমাত্র সিফিলিস বা সাইকোসিস মায়াজমের সংমিশ্রণ থাকিলে যে মায়াজম দোষের লক্ষণ প্রকট থাকিবে প্রথমেই সেই এন্টি মায়াজমেটিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। প্রকট মায়াজম প্রশমিত হইলে এন্টিসোরিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। পূর্বের মায়াজমেটিক অবস্থার লক্ষণ যদি তখনও বিদ্যমান থাকে তাহা হইলে পুনরায় উক্ত এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। এইরূপে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার ভিন্ন ভিন্ন এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ প্রয়োগ করিলে তবেই সম্পূর্ণ রোগারোগ্য হইবে। কিন্তু চিকিৎসাকার্য সম্পন্ন করিবার পূর্বে পুনরায় এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা সমাপ্ত করিতে হইবে।
আবার সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজম যদি একই রোগীদেহে বিদ্যমান থাকে তাহা হইলে এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করিবার পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজমের মধ্যে যে মায়াজম দোষটির লক্ষণ প্রকটরূপে বিরাজমান, সেই মায়াজম দোষের এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। এইরূপে তৃতীয় পর্যায়ে পুনরায় এন্টিসোরিক ঔষধ এবং চতুর্থ পর্যায়ে সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজমের মধ্যে যে দোষটি অবশিষ্ট থাকিবে সেই দোষটির এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। এইরূপে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার ভিন্ন ভিন্ন এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ দ্বারা চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করিলে তবেই রোগলক্ষণ সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য হইবে। এক্ষেত্রে সর্বদা স্মরণ রাখিতে হইবে যে চিকিৎসা কার্য সম্পূর্ণ করিবার পূর্বে অবশ্যই এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা সমাপ্ত করিতে হইবে।


প্রশ্ন- রুদ্ধগতি বলিতে কি বুঝ? রুদ্ধগতির কারণ বর্ণনা কর। রুদ্ধগতির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের করণীয় কি?

উত্তর: রোগ বিকাশের সমগ্র ক্রমবর্ধমান গতিটিই ভিতর হইতে বাহিরের দিকে। সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিসের বিকশিত মূর্তির গতিও ভিতর হইতে বাহিরের দিকে। বাহ্যিক প্রকাশমান লক্ষণই হইল আভ্যন্তরীণ দোষ বা রোগের অবস্থা জানার একমাত্র উপায়। অসদৃশ বিধানমতে রোগ বিকাশের গতিকে বা বাহ্যিক প্রকাশমান লক্ষণকে লুপ্ত করিয়া চাপা দেওয়া চিকিৎসায় অন্তর্মুখী করিয়া প্রধান অঙ্গে কেন্দ্রীভূত করাকে রুদ্ধগতি বলে।
রুদ্ধগতির কারণ-রুদ্ধ গতির কারণসমূহ নিম্নরূপ-
ক) এলোপ্যাথিক বা অন্যান্য বিসদৃশ বিধানে কোন প্রকার চর্মরোগ আশু উপশমের জন্য ঔষধি প্রলেপ লাগানো।
খ) বিসদৃশ বিধানে যে কোন স্রাব বন্ধ করা।
গ) মাত্রাতিরিক্ত বিসদৃশ বিধানের ঔষধ সেবন।
ঘ) ভুল ঔষধ সেবন।
ঙ) বিনাকারণে বার বার চিকিৎসক পরিবর্তন।
চ) ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধ অস্ত্রোপচার।
ছ) ত্বরিত উপশম লাভের আশায় অসমলক্ষণে চিকিৎসা করা।
জ) হঠাৎ ঠাণ্ডা বা গরম লাগা, ভয় পাওয়া, আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি, দুঃখ, ক্ষোভমানসিক আঘাত প্রভৃতি কারণে।
রুদ্ধগতির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের করণীয়-সদৃশ বিধানমতে রুদ্ধগতির ক্ষেত্রে চিকিৎসক গতি চাপা পড়ার ইতিহাস ও কারণ অনুসন্ধান করতঃ রোগ আরোগ্যের সম্ভাবনা থাকিলে চাপা দেওয়া অবস্থার যাবতীয় লক্ষণ ও বর্তমান রোগলক্ষণের সমন্বয়ে একটি উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করিয়া চাপা পড়া রোগলক্ষণ তথা পূর্বের বিকাশের গতিটি পুনরানয়ন করা একমাত্র কাজ। তৎপর লক্ষণানুসারে ক্রমান্বয়ে নির্বাচিত ঔষধ উচ্চশক্তিতে প্রয়োগ করিয়া চিকিৎসা কার্য সম্পন্ন করিতে হইবে।



প্রশ্ন- ভাবীফল কি?

উত্তর: ভাবীফল বলিতে পীড়ার পরিণাম ফল বুঝায়। কোন পীড়ায় রোগী দীর্ঘদিন ভুগিতে থাকিলে বা অনারোগ্য থাকিলে অথবা আরোগ্যকল্পে ঔষধ ব্যবহার করিলেও পীড়ার পরিণাম ফল হিসাবে রোগীতে যে সকল দৈহিক, মানসিক, আঙ্গিক বা 'যান্ত্রিক বৈলক্ষণ্য সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহাকে পীড়ার ভাবীফল বলে। কোন কোন ক্ষেত্রে পীড়ার ভাবীফল শুভ আবার কোন কোন সময় অশুভ বা মারাত্মক হইতে পারে।



প্রশ্ন-  রোগ চাপা দেওয়া কাহাকে বলে? চর্মপীড়া চাপা পড়ার কুফল বা ফলাফল কি?

উত্তর: জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খল অবস্থার ফলটিকে বা যে কোন রোগলক্ষণকে অসদৃশ উপায়ে অপসারণের নামই চাপা দেওয়া। জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খল অবস্থাই রোগ। বিকশিত লক্ষণগুলিকে চাপা দিয়া প্রকৃতির বহির্মুখী গতিটিকে বিপর্যস্ত করা হইলে বা অপসারিত করা হইলে তৎপরিবর্তে অধিকতর জটিলতাসহ আরও কতকগুলি আভ্যন্তরীক তন্ত্র ও যন্ত্র আক্রান্ত হয়।
সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলার দোষজ চর্মপীড়া চাপা পড়ার কুফলাদি সকল রোগীতে একই প্রকার রূপ লইয়া পরিস্ফুট হয় না। বিভিন্ন দোষজ রোগীতে কুফলাদি বিভিন্ন মূর্তিতে দেখা দেয়।
সোরাদুষ্ট চর্মপীড়া চাপা পড়িলে অবিলম্বে মনটিই সরাসরি আক্রান্ত হয়। সাইকোসিস দোষজ চর্মপীড়া চাপা দিলে প্রথমতঃ স্নায়ুকেন্দ্র এবং তাহার পর হৃদযন্ত্র, যকৃত ও প্রজনন যন্ত্র আক্রান্ত হয়। সিফিলিস দোষজ চর্মপীড়া চাপা পড়িয়া স্নায়ুকেন্দ্রের বুদ্ধির পথটি সর্বপ্রথম অবরুদ্ধ হইয়া যায় এবং তাহার পর বিষন্নতা, নিরোৎসাহ ও বুদ্ধির স্থূলত্ব দেখা দেয়। টিউবারকুলার দোষজ চর্মপীড়া চাপা পড়ার প্রভাবটি ব্যক্তিগত অবস্থার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। কেননা ঐ দোষটি প্রবণতাকারে চলিতে থাকাকালে চর্মপীড়া চাপা পড়িলে গভীরতম পেশীসমূহে ধ্বংসমুখী ক্ষতলক্ষণ বিকাশ লাভ করে এবং সর্বসম্পূর্ণ ক্ষয়াবস্থায় ঐ চাপা দেওয়া হেতু ঐ ধ্বংস কার্যটি অধিকতর দ্রুতগতিতে সুসম্পন্ন হইতে দেখা যায়।



প্রশ্ন-  রোগ চাপা দেওয়ার কারণ কি কি? 
বা, রোগলক্ষণ চাপাপড়ার কারণগুলি কি কি?

উত্তর: রোগ চাপা দেওয়ার বা চাপা পড়ার কারণগুলি নিম্নরূপ- 
ক) এলোপ্যাথিক বা অন্যান্য বিস্দশ বিধানে কোন প্রকার চর্মরোগ আশু উপশমের জন্য ঔষধি প্রলেপ বা বাহ্য প্রলেপ লাগানো।
খ) বিসদৃশ বিধানে যে কোন স্রাব বন্ধ করা।
গ) মাত্রাতিরিক্ত বিসদৃশ বিধানের ঔষধ সেবন।
ঘ) ভুল ঔষধ সেবন।
ঙ) বিনাকারণে বার বার চিকিৎসক পরিবর্তন করা।
চ) ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈধ অস্ত্রোপচার।
ছ) হঠাৎ ঠাণ্ডা বা গরম লাগা, ভয় পাওয়া, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি, দুঃখ, ক্ষোভ, মানসিক আঘাত প্রভৃতি কারণে।



প্রশ্ন- রোগ চাপা পড়ার ধরণ বর্ণনা কর।

উত্তর : স্বাভাবিকভাবে রোগ চাপা পড়িতে পারে। আবার ঔষধ, অস্ত্রোপচার প্রভৃতির দ্বারাও রোগ চাপা পড়িতে পারে। রোগ চাপা পড়ার ধরণগুলি নিম্নরূপ-
ক) স্বাভাবিক উপায়ে চাপা পড়া:
১) হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগিয়া বা ভয় পাইয়া মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া।
২) ঘাম বসিয়া জ্বর হওয়া।
৩) দুঃখ, ক্ষোভ, মানসিক আঘাত ইত্যাদি চাপা পড়িয়া মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দেওয়া।
৪) রাগ চাপা পড়িয়া তড়কা বা অজ্ঞান হওয়া প্রভৃতি।
খ) অস্বাভাবিক উপায়ে চাপা পড়া:
১) চর্মরোগে বাহ্যিক মলম বা প্রলেপ লাগানো।
২) অবৈধ অস্ত্রোপচার, যেমন অস্ত্রোপচার দ্বারা টিউমার, আঁচিল, ফিশ্চুলা, অর্শ ইত্যাদির অপসারণক্রমে চাপা দেওয়া।
৩) নীতিহীনভাবে ঔষধ প্রয়োগ। যেমন ক্রমাগত উপশমদায়ক ঔষধ ব্যবহারের ফলে রোগের বহিঃপ্রকাশ চাপা পড়া।
৪) ভুল ঔষধ সেবনের কারণে কোন লক্ষণ অদৃশ্য হওয়া।
৫) বিসদৃশ বিধানের চিকিৎসা। চিররোগ বিসদৃশ বিধানে চিকিৎসার ফলে একরোগ লক্ষণ চাপা পড়িয়া অন্য রোগের সৃষ্টি হওয়া প্রভৃতি।



প্রশ্ন- রোগ চাপা দেওয়ার কুফলের চিকিৎসা পদ্ধতি লিখ।


উত্তর: রোগ চাপা দেওয়ার কুফলের চিকিৎসা খুবই জটিল ব্যাপার। রোগ চাপা দেওয়ার কুফলের চিকিৎসার সময় স্মরণ রাখিতে হইবে যত দীর্ঘদিন পূর্বে রোগ চাপা পড়ার ইতিহাস থাকিবে তাহার পুনরাবির্ভাবের জন্য তত বেশী সময় লাগিবে এবং তাহা আরোগ্য হইতেও ততবেশী সময় লাগিবে। বর্তমান অসুস্থতার পূর্ব পর্যন্ত কোন রোগ কিভাবে চাপা দেওয়া হইয়াছে তাহার পূর্ণ ইতিহাস লইতে হইবে। বর্তমান অসুস্থতা কোন স্তরে আছে, রোগীর বয়স কত এবং জীবনীশক্তির সতেজতা কেমন তাহা জানিতে হইবে। যদি আরোগ্যের সম্ভাবনা থাকে তবে চাপা দেওয়া অবস্থার সময়ের যাবতীয় লক্ষণ এবং রোগীর বর্তমান লক্ষণ মিলাইয়া একটি ঔষধ নির্বাচন করিতে হইবে। বর্তমান লক্ষণ সব যদি নাও মিলে তাহাতে কোন ক্ষতি নাই, কিন্তু চাপা দেওয়া অবস্থার লক্ষণ অবশ্যই মিলিতে হইবে। এইভাবে সঠিক ধাতুগত ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব হইলে তাহা পূর্বের চাপা দেওয়া অবস্থা পুনরায় ফিরিয়া আসিতে বাধ্য। এই পুরাতন ফিরিয়া আসা লক্ষণগুলি দীর্ঘদিন থাকিতে পারে। এই অবস্থায় দীর্ঘসময় অপেক্ষা করিয়া ক্রমে ক্রমে উক্ত ঔষধটি পুনরায় অপেক্ষাকৃত উচ্চশক্তিতে প্রয়োগ করিতে হইবে। কিন্তু তাহাতে যদি সম্পূর্ণ আরোগ্য না হয় তবে পুনরায় রোগীলিপি প্রস্তুত করিয়া বর্তমান অবস্থার সহিত মিলাইয়া নূতন ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে। এইভাবে দীর্ঘসময় ধরিয়া রোগ চাপা দেওয়ার কুফলের চিকিৎসা করিতে হয়।



প্রশ্ন-  আরোগ্যের বিকৃত গতিপথ কাহাকে বলে?


উত্তর : তথাকথিত আরোগ্য সাধনের নিমিত্ত রোগারোগ্যে একটি অস্বাভাবিক ক্রিয়া দেখানো হয়। যেমন এমন সময় ছিল শিরা কাটিয়া রক্ষ বাহির করিয়া দিয়া, কোন স্থান পোড়াইয়া বা কোন অদ্ভূত পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হইত। কোনস্থান পোড়াইয়া, কোন স্থান কাটিয়া, কোন প্রকাশিত লক্ষণকে অপসারণ করিয়া বা কোন উগ্র ঔষধ ব্যবহার করিয়া প্রকৃত আরোগ্য হয় না। তাহা দ্বারা একটি অস্বাভাবিক ক্রিয়া দেখানো হয় মাত্র, উহাতে জীবনীশক্তির রোগ আরোগ্য করিবার স্বাভাবিক শক্তিকে বাধা দেওয়া হয় মাত্র। রোগারোগ্যের এইরূপ পথকেই আরোগ্যের বিকৃত গতিপথ বলে। অর্থাৎ যে কার্য করিলে জীবনশক্তির রোগারোগ্য করিবার স্বাভাবিক শক্তিকে বাধা দেওয়া হয় তাহাকে আরোগ্যের বিকৃত গতিপথ বলে।




প্রশ্ন- আরোগ্যের বিকৃত গতিপথের চিকিৎসা লিখ।

উত্তর : আরোগ্যের বিকৃত গতিপথ দ্বারা জীবনীশক্তি এতই দুর্বল হইয়া পড়ে যে ধ্বংসপ্রাপ্ত না হইলেও ধীরে ধীরে বিকৃত হইয়া থাকে। এই অশুভ এবং ধ্বংসাত্মক আক্রমণের মুখে প্রাণ রক্ষার্থে জীবনীশক্তিকে দেহযন্ত্রে এমন বিপদ ঘটাইতে হয়, যাহার ফলে দেহের কোন স্থানের অনুভূতি শক্তি হারাইয়া ফেলে, কোন স্থানের উত্তেজনা বৃদ্ধি করে, কোন স্থান অস্বাভাবিকরূপে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, কোন অঙ্গ বিশেষের শীর্ণতা কিংবা স্থূলতা, শিথিলতা কিংবা কাঠিন্য ঘটে অথবা একাধিক অঙ্গের ধ্বংস ঘটায়। এই সকল অবস্থায় কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নাই। কারণ সৃষ্টিকর্তা কেবল প্রাকৃতিক ব্যাধির চিকিৎসার জন্যই প্রতিকারক ঔষধ দিয়াছেন। উহাদের দূর করিবার জন্য জীবনীশক্তিই শুধু উহার স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারে। তবে দেহে যতদিন কোন প্রাকৃতিক ব্যাধি থাকে তাহা ঔষধ দ্বারা দূর করিয়া দেওয়া হইলে এবং জীবনীশক্তি যদি অত্যন্ত দুর্বল না হইয়া থাকে তাহা হইলে জীবনীশক্তি দীর্ঘকাল ধরিয়া স্বাধীনভাবে চেষ্টা করিলে ঐ সকল অবস্থার আরোগ্য হইতে পারে।



সমাপ্ত



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ