এন্টিমোনিয়াম টার্ট - Antim Tart, প্রথম বর্ষ

 এন্টিমোনিয়াম টার্ট
Antim Tart








প্রতিশব্দ:- টারটেট অব এন্টিমোনি, পটাসিয়াম এন্টিমোনি টারটা, এন্টিমোনিয়াম পটাসিয়াম, টার্টারেট এসেটিক।

রাসায়নিক চিহ্ন:- 2k (Sbo) C4H406+H2O

উৎস:- এন্টিমোনিয়াম অক্সাইড এবং পটাশিয়াম টার্টারেট যোগে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ইহা প্রস্তুত হয়। 

বর্ণনা:- বর্ণহীন নির্মল স্ফটিকরূপে ইহা পাওয়া যায়। বায়ুতে রাখিলে ইহা সাদা ও অস্বচ্ছ হইয়া যায়। ইহা জলে দ্রবণীয়।

প্রস্তুত প্রণালী:- এন্টিমোনি ও পটাশের রাসায়নিক সংমিশ্রণে এক প্রকার অম্লাকার পদার্থ উৎপন্ন হয়। ঔষধার্থে ইহার তরল ও বিচূর্ণ প্রস্তুত উভয়ক্রম প্রস্তুত হইয়া থাকে। দুগ্ধ শর্করা সহযোগে বিচূর্ণ প্রস্তুত হয়। উক্ত বিচূর্ণ হইতে হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মে বিভিন্ন ক্রমের ঔষধ প্রস্তুত করা হয়।

প্রস্তুতের ফরমূলা:- আমেরিকা- এফ-৫ বি (দ্রবণ), এফ-৭ (বিচূর্ণ)।

প্রুভার:- মহাত্মা হ্যানিমান কিছু সহযোগীকে নিয়া ঔষধটি প্রুভ করেন।

প্রধান ক্রিয়াস্থান:- মস্তিষ্কের স্নায়ুমণ্ডলীতে, পাকস্থলী, ফুসফুস ও যকৃতের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ইহার। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে ক্রিয়া করিয়া রক্ত সঞ্চালন ও শ্বাসযন্ত্রের অবসন্নতা আনয়ন করে। ফুসফুসে প্রদাহ উৎপন্ন হয় ও বুকের ভিতর শ্লেষ্মা জন্মিয়া ঘড় ঘড় শব্দ করে এবং চর্মের উপর বসন্তের মত এক প্রকার কন্তু বাহির হয়। 'পরিপাক যন্ত্রের উপর ক্রিয়া করার জন্য বমন ও ভেদ হইতে থাকে।

ধাতু প্রকৃতি:- অলস ও শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুর রোগীরাই এন্টিম টার্টের প্রয়োগ ক্ষেত্র।

চরিত্রগত লক্ষণ:- 
১। রোগীর মুখমণ্ডল মলিন, নীলবর্ণ, নীরক্ত ও শীতল ঘর্মে আবৃত থাকে। ওয়াক পাড়ে, কাট বমি হয়। বমির বেগ প্রবল, সকল অবস্থাতেই বামদিকে শুইলে বমন হয় কিন্তু ডানদিকে শুইলে বমি হয় না।
২। গলা ঘড়ঘড়ানির সহিত কাশি। বুকের মধ্যে শ্লেষ্মায় পরিপূর্ণ অথচ শেহ্মা উঠাইয়া ফেলিবার শক্তি থাকে না। অনেক সময় শ্বাসরোধ হইবার উপক্রম।
৩। প্রচুর পরিমাণে লালাময় পদার্থ বমন, সে সাথে গা বমি বমি ভাব।
৪। চোখ বসিয়া যায়, নাক কুঞ্চিত থাকে।
৫। জিহ্বা পাতলা সাদা ক্লেদে আবৃত থাকে এবং উহার প্যাপিলিগুলি সামান্য লাল। কিন্তু ধারগুলি ঘোর লালবর্ণ।
৬। নাড়ীর গতি দ্রুত-বুকে শ্লেষ্মা ঘড়ঘড় করে, দুর্বলতা ও অবসাদ।
৭। পিপাসায় ঠাণ্ডা পানি পান করিতে চায় এবং অল্প অল্প করিয়া পান করে।
৮। রোগী ঘাড় বা কাঁধে কোন কাপড় না রাখিয়া এবং নিঃশ্বাস লওয়ার জন্য রাত্রের পোষাক অনেকখানি খুলিয়া ফেলিয়া বিছানায় বসিয়া থাকে। অতিরিক্ত গরম ঘরে তাহার দম আটকায়।
৯। চোখের পাতার ধারসমূহ মিউকাসে আবৃত।
১০। শীতল জলে স্নান করিলে রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি।
১১। ঘর্ম ঠাণ্ডা ও চটচটে।
১২। শিশুরা একটু রাগিলে বা আহারান্তে কাশি থাকে।
১৩। রোগীর ঘুমানোর খুব ইচ্ছা কিন্তু ঘুমাইতে পারে না।
১৪। শিশু সব সময় বদ মেজাজে থাকে। কেহ বিরক্ত করিলে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠে। কোন প্রকার গোলমালে শ্বাসক্রিয়া বাড়িয়া উঠে।

 মানসিক লক্ষণ:-
 ১। রোগী একাকী থাকিতে ভয় করে।
২। বিড় বিড় করে, প্রলাপ বকে, বদমেজাজ।
৩। মাথাঘোরা, তৎসহ নিস্তেজ ভাব এবং বিভ্রান্ত।
৪। শিশুরা বড়ই খিটখিটে হয়, বদমেজাজী হয়, কেহ বিরক্ত করিলে ক্রুদ্ধ হইয়া উঠে। শিশু রোগী অন্যের দৃষ্টিপাত বা স্পর্শ সহ্য করিতে পারে না।
৫। রোগী পাশে যাহাকে পায় তাহাকে জড়াইয়া ধরে।
৬। রোগী চায় না যে কেহ তাহাকে রিক্ত করুক, কেহ তাহার সহিত আলোচনা করুক।
৭। চতুর্দিকের পরিবেশে একটা মৃত্যুর গন্ধ পাওয়া যায়।
৮। অসভ্য উল্লাস।

বিশেষ লক্ষণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য:- এন্টিম টার্ট শিশু ও বৃদ্ধদের পীড়ার প্রধান ঔষধ। রোগী অলস ও শ্লেষ্মা ধাতু বিশিষ্ট হইয়া থাকে। এন্টিম টার্ট মস্তিষ্কের স্নায়ুমণ্ডলীতে মুখ্য ক্রিয়া দর্শাইয়া পাকস্থলী, ফুসফুস ও যকৃতের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ইহার শক্তি প্রকাশ করে। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে ক্রিয়া করিয়া ইহা রক্ত সঞ্চালন ও শ্বাসযন্ত্রের অবসন্নতা আনয়ন করে। ব্রঙ্কাইটিস, নিমোনিয়া, হাঁপানী, কাশি অথবা হুপিং কাশি যে কোন কাশিতেই গলায় ও বুকে সর্দি জমে এবং সে জন্য খুব মোটা অর্থাৎ ঘড়ঘড়ে এবং গলায় যেন সর্দির তাল আটকাইয়া আছে মনে হয় এবং রোগী তাহা তুলিতে পারিতেছে না। শিশুরা ঠাণ্ডা, ভিজা আবহাওয়ায় শরৎকালে বা বসন্তকালে ঝড়বৃষ্টি হইলে এবং মেঘলা আবহাওয়ায় বার বার ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়। দুর্বলতা ইহার প্রধান বৈশিষ্ট্য। জিহ্বা পাতলা সাদা ক্লেদে আবৃত থাকে এবং কিনারাগুলি লাল হয়। সদ্যজাত শিশু মরার মত পড়িয়া থাকে।
এন্টিমে বিবমিষা ও বমন আছে। বমনের পর কিছু সময়ের জন্য বিবমিষার উপক্রম হয় এবং প্রত্যেকবার বমনের পর রোগী অবসন্ন হইয়া পড়ে ও তন্দ্রাভিভূত হয়। ইহার বমনের বিশেষত্ব এই যে ডান পার্শ্বে শুইলে বমি হয় না। রোগী আপেল খাইতে চায়।

শ্বাসযন্ত্রের বা ব্রঙ্কোনিমোনিয়ায়:- শিশুদের মধ্যে যাহারা ঠাণ্ডা, ভিজা আবহাওয়ায় শরৎকাল বা বসন্তকালে ঝড় বৃষ্টি হইতে এবং মেঘলা আবহাওয়ায় পুনঃ পুনঃ ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়। একবার ঠাণ্ডা লাগা কাটাইতে না কাটাইতেই তাহাদের আবার ঠাণ্ডা লাগে। তরুণ অবস্থা তাহাদের পক্ষে কখনই ভীষণ হয় না। কিন্তু তাহাদের ঐ প্রতিক্রিয়াহীন ঘড়ঘড়ে সর্দিটি থাকিয়া যায়। রোগী শীতার্ত ও বিবর্ণ হইয়া পড়ে এবং দুর্বলতা দেখা দেয়। ব্রঙ্কাইটিস, নিমোনিয়া, হাঁপানি, কাশি বা হুপিং কাশি যে কোন কাশিই হোক না কেন যদি দেখা যায় যে গলায় ও বুকে সর্দি জমিয়া রহিয়াছে এবং সেজন্য ঘড়ঘড়ে শব্দ এবং গলায় যেন সর্দির তাল খানিকটা আটকাইয়া রহিয়াছে বোধ হয় অথচ রোগী তাহা তুলিতে পারে না। স্মরণ রাখা উচিত যে, শিশুর কাশি বারে অনেক কমিয়াছে, কিন্তু গলা ও বুকের সর্দি ঘড়ঘড়ানি সেই একই রকম আছে, কিছুমাত্র কমে নাই, অথচ সর্দি জমিয়া বুকে এত বসিয়া গিয়াছে যে, শিশু আর কাশিতে পারে না, তাই কাশি বারে কম হয় এবং রোগারম্ভের ২/৩ দিনের মধ্যে শিশু নিঝুম হইয়া পড়ে। এইরূপ অবস্থায় এন্টিম টার্ট নিম্নশক্তি অতি শীঘ্র প্রয়োগ করিতে হইবে। যতক্ষণ না শিশুর কাশি পুনরায় বৃদ্ধি পায়, ততক্ষণ ইহা প্রয়োগ করিতেই হইবে। ঐরূপ কাশি বাড়িলে সর্দি পৃথক হইয়াছে বুঝিতে হইবে এবং তাহাতে উপকার হইবার সম্ভাবনা আছে।
ক্যাপিলারী ব্রঙ্কাইটিস ও নিমোনিয়াতেও উল্লেখিত লক্ষণসমূহ বিশেষ লক্ষণ বলিয়া পরিগণিত। নিমোনিয়ায় যদি রোগ লক্ষণ ও সর্বপ্রকার কষ্টের বৃদ্ধি প্রাতঃকালে হয়, তাহা হইলে উহা এন্টিম টার্টের একটি পরিচায়ক লক্ষণ বুঝিতে হইবে। স্তন্যপান কালে হঠাৎ স্তন্য ছাড়িয়া দিয়া শিশু যদি কাঁদিয়া উঠে, নিঃশ্বাস বন্ধের মত হয় এবং সোজা করিয়া ধরিলে ও কোলে লইয়া বেড়াইলে উপশম হয়, গলায় ও বুকের মধ্যে ঘড় ঘড় শব্দ হয় এবং তৎসহ নিদ্রালুতা থাকে তবে এন্টিম টার্ট উপকারী।

হাঁপানি/হুপিং কাশি বা শ্বাসযন্ত্রের:- শ্বাসযন্ত্রের পীড়ায় এন্টিমের ক্ষমতা অসীম। ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, কাশি অথবা হুপিং কাশি যে কোন কাশিতেই যদি গলায় ও বুকে সর্দি জমিয়া থাকে, গলায় মোটা ঘড়ঘড়ে শব্দ হয় এবং সর্দির তাল গলায় আটকাইয়া থাকে অথচ তাহা তুলিতে পারে না তখনই এন্টিম উপকারী। দন্তোদামের সময় হোক বা অন্য কোন সময়েই হোক গলায় ঐ ঘড়ঘড়ানি শব্দ অথচ কিছুতেই সর্দি উঠানো যায় না। রাগিলে কাঁদিলে, আহার করিলে যদি কাশি দেখা যায় এবং কাশিতে কাশিতে ভুক্তদ্রব্য ও লালাময় নীল পদার্থ বমন হইয়া উঠিয়া গেলে ইহা প্রযোজ্য। ইপিকাকেও কিছুটা মোটা ঘড়ঘড় শব্দ আছে। তবে ইহা রোগের কয়েক দিন পর উপস্থিত হয়। কাশি, শ্বাসবদ্ধভাব এবং বমি ইপিকাকেও আছে। কিন্তু তাহা দেখা দেয় অত্যন্ত শিথিলতা, অবসন্নতা ও শীতলতার অবস্থায়।
প্রতিবার ভিজা আবহাওয়া আসিলেই রোগীর বুকে, কণ্ঠনালীতে, বায়ুনালীতে সর্দিজ অবস্থা উপস্থিত হয় এবং উহাতে প্রচুর শ্লেষ্মাস্রাব হইতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গেই রোগী শয্যাগত হয় এবং মোটা ঘড়ঘড়ে শব্দের সহিত অবসন্ন হইয়া পড়ে। বৃদ্ধদের উপসর্গ রাত্রি ৩টার সময় বৃদ্ধি হয়, কাশির টানের জন্য রোগী শুইতে পারে না। বিছানায় শুইতে পারে না। রোগী বিছানায় বসিয়া থাকিতে বাধ্য হয় এবং হাওয়া করিতে হয়। শ্বাসকষ্টের জন্য বুকের পূর্ণতা বোধের জন্য শুইতে পারে না। যদি সাদা শ্লেষ্মা হয় এবং তৎসহ অবসন্নতা, ঘর্ম, শীতলতা, বিবর্ণতা ও মুখের নীলবর্ণ থাকে তাহা হইলে এন্টিম টার্ট তাহাকে সুস্থ করিয়া তুলিবে।

কাশিতে এন্টিম টার্ট ও ইপিকাকের তুলনা:- ব্রঙ্কাইটিস ও কাশিতে এন্টিম টার্টের সহিত ইপিকাকের তুলনা করা যাইতে পারে। এন্টিম টার্টে বুকে ও গলায় সর্দি জমিয়া থাকে সেজন্য মোটা ঘড়ঘড়ে শব্দ হয়। যেন সর্দির তাল গলায় আটকাইয়া আছে, অথচ রোগী তাহা অনেক চেষ্টার পরও তুলিতে পারে না। ইপিকাকেও গলায় শব্দ আছে। তবে ইপিকাকের ঘড়ঘড়ানি কিছুটা সাঁই সাঁই শব্দের ন্যায়। এন্টিমের শব্দ একটু মোটা। এন্টিমে মনে হয় চেষ্টা করিলে শ্লেষ্মা উঠিয়া যাইবে অথচ উঠাইতে পারে না। ইপিকাক অপেক্ষা এন্টিমে কাশি বারে কম হয় কিন্তু বুকে জমা শ্লেষ্মার পরিমাণ বেশী। এন্টিম টার্ট ও ইপিকাক উভয়ের মধ্যেই বমন আছে। এন্টিম বমনের পর রোগী অবসন্ন হইয়া পড়ে এবং বমনের পরে বিবমিষার ভাবই বেশী। ইপিকাকের লক্ষণগুলি উপদাহ অবস্থার সদৃশ, কিন্তু এন্টিমের লক্ষণগুলি সর্দি শিথিল হওয়ার সময় উপস্থিত হয়। অর্থাৎ ইপিকাকের লক্ষণ দ্রুত উপস্থিত হয় এবং তরুণ রোগের ন্যায় উপস্থিত হয়। কিন্তু এন্টিম টার্টের লক্ষণগুলি উপস্থিত হয় ধীরে ধীরে।
এন্টিম টার্ট শিশু ও বৃদ্ধ উভয়ের পীড়ায়ই উপযোগী। মেঘলা বা ভিজা ঠাণ্ডা আবাহাওয়ার শিশু বার বার ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হয়। তরুণ অবস্থা তাহাদের জন্য ভীষণ হয় না কিন্তু প্রতিক্রিয়াহীন ঘড়ঘড়ে সর্দিটি থাকিয়া যায়। এন্টিমের রোগী অসম্ভব দুর্বল হইয়া পড়ে। এন্টিমের ভগ্নস্বাস্থ্য রোগীরা শ্বাসকষ্টের জন্য বুকের পূর্ণতা বোধ করে সে জন্য শুইতে পারে না, উঠিয়া বসিতে বাধ্য হয়। আর ইপিকাক বিশেষভাবে শিশুর বন্ধু এবং শিশু ব্রঙ্কাইটিসে ব্যবহৃত হয়। শিশুকালে তাহার গলারোধ হয়, দমবন্ধ হইয়া পড়ে, বুকের শব্দ সারা ঘরে শুনিতে পাওয়া যায় এবং রোগটিও বেশ দ্রুত উপস্থিত হয়। ঘন ঘন কাশি হয়, কাশি অনেকটা আক্ষেপিক। ইপিকাকে কাশিতে শিশু যেন শক্ত হইয়া যায় ও মুখ নীল হয় এবং থলো থলো শ্লেষ্মা নির্গত হয়। ইপিকাকে সর্দি আক্রমণ করামাত্র শিশুদের নাসিকা পথে স্রাব না হইয়া বায়ুনালীকে বন্ধ করে এবং শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয়। ক্যাপিলারী ব্রঙ্কাইটিস এবং ইপিকাকে ইহা প্রায়ই হয়। আর এন্টিমে নিঃশ্বাস ফেলিতে গেলে টান ও কষ্ট বোধ হয় এবং সে সঙ্গে রোগী ফ্যাকাশে, রক্তহীন ও দুর্বল হয়, কেবল ঘুমাইতে চায়। ইপিকাক প্রথম অবস্থার ঔষধ আর এন্টিম অন্তিম অবস্থার ঔষধ।
 
নিমোনিয়ায়  লক্ষণ:- দুর্বলতা আছে। বক্ষদেশ শ্লেষ্মায় পূর্ণ, ঘড় ঘড় করে, কাশিটি ঘড়ঘড়ে প্রকৃতির কিন্তু শ্লেষ্মা উঠে না অথবা সামান্য মাত্র উঠে। কিন্তু তাহাতে উপশম হয় না। নিমোনিয়া পীড়ায়-রোগী যখন শীতের সহিত প্রথম শয্যাগত হয় তখন আক্রমণটি ভীষণ হইতে পারে। এইরূপ আক্রমণে রোগের ভীষণতা হইতে শীঘ্র অর্থাৎ ৩/৪ দিন পরে অসন্নতা দেখা দেয়। ইহা পীড়ার গোড়ার দিকে শীতের সময় দেখা দেয় না এবং প্রদাহের তীব্র অবস্থাতেও দেখা দেয় না। কিন্তু রস সঞ্চয় অবস্থায় দেখা দেয়। রোগী এতই অবসন্ন হইয়া পড়ে যে নড়াচড়া বা কথাবার্তা বলে না। জ্বর, ঠাণ্ডা ঘর্ম, শীতলতা, শিথিলতা এবং পাণ্ডুর বিবর্ণ চেহারা। রোগীর ডান দিকের বুকে সুঁচ ফোটানবৎ বেদনা। নিদ্রালুতা ও অচৈতন্য স্রাব। বক্ষ পরীক্ষাকালে যদি শ্বাস প্রশ্বাসে মর্মর শব্দের অভাব দেখা যায়, বক্ষে অঙ্গুলি দ্বারা আঘাত করিলে যদি ঢেবঢেবে শব্দ শোনা যায় এবং নিঃশ্বাস ফেলিতে গেলে টান টান ও কষ্ট বোধ হয় এবং সেই সঙ্গে রোগী ফ্যাকাশে, রক্তহীন এবং কেবল ঘুমাইতে চাহে, তবে এন্টিম উপযোগী। মাতালদের নিমোনিয়া, গা বমি, বমি পেট ফোলা। নিমোনিয়ার পর লাংসের সর্দি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করিতে ইহা উপকারী।

কলেরা:- বাহ্য প্রায়ই পানির মত তবে কখনও শুধু আম পড়ে, কখন বা ভেদের সহিত আম মিশ্রিত থাকে, কখন বা কেবল রক্ত অথবা রক্ত মিশ্রিত ভেদও হয়। ইহার ভেদ প্রায়ই সবুজ, লাল হড়হড়ে, পরিমাণে প্রচুর এবং বারেও খুব বেশী। এইরূপ ঘন ঘন পরিমাণে প্রচুর পানির মত ভেদ.ও সেই সঙ্গে পূর্ব বর্ণিত বমি, গা বমি বমি, নাড়ী ক্ষয়, অবসাদ প্রভৃতি লক্ষণ উপস্থিত হয়। ইহা ব্যতীত পিত্তজ হরিদ্রা বর্ণ, ফ্যাকাশে সবুজ বা হলদে ফ্যাকাশে রঙের বাহ্য এন্টিম টার্টে নির্দিষ্ট। এন্টিমে পিপাসা থাকে না। থাকিলেও সামান্য পানি পানে পিপাসা নিবৃত্ত হয়। ইহাতে গা বমি বমি ও বমন আছে, অত্যন্ত বলক্ষয়, নিতান্ত অবসাদ, তন্দ্রাভাব এবং অচৈতন্য বা ঘুমঘুম ভাবও আছে। বমি ও বমি ভাবের সহিত কপালে ঠাণ্ডা ঘামবেশী থাকে। বমির পরিমাণ ইহাতে বেশী হয়। রোগী চুপচাপ পড়িয়া থাকে।

কলেরায় এন্টিমের সাথে ভেরেট্রামের তুলনা:- কলেরায় ভেরেট্রামের সাথে এন্টিমের বিশেষ সাদৃশ্য আছে। তবে প্রভেদ জানা থাকিলে আর বলিতে হইবে না যে ভেরেট্রামই কলেরার অমোঘ ঔষধএবং এন্টিম টার্ট কলেরার কেবল বমন নিবারনপোযোগী বহুতর ঔষধের মধ্যে একটি প্রচলিত ঔষধ। ভেরেট্রাম ও এন্টিম টার্টের বাহ্য ও বমন অনেক এক রকমের। এন্টিম টার্টে যেমন সজোরে বমন, কষ্টদায়ক বমন, ওয়াকতোলা, কাঠ বমি ও কষ্টদায়ক বমনের চেষ্টা প্রভৃতি লক্ষণ থাকে, ভেরেট্রামের বমনে সে সকল দেখা যায় না-তবে নাড়ীক্ষয়, বলক্ষয়, অবসাদ এই দুই ঔষধেই সমান। কিন্তু ভেরেট্রাম বাহ্যের পর বলক্ষয় অধিক আর এন্টিম টার্টে বমনের পরই এইরূপ নাড়ীক্ষয় ও বলক্ষয় অধিক। ভেরেট্রাম ভেদের পর কপালে ঠাণ্ডা ঘাম। ভেরেট্রামে ছটফটানি, ব্যাকুলতা নৈরাশ্য ব্যঞ্জক কাতরতা অধিক পরিমাণে বর্তমান থাকে। কিন্তু এন্টিমে ছটফটানির লেশমাত্র নাই রোগী চুপ করিয়া অচৈতন্য ভাবে বা ঘুম ঘুম ভাবে থাকে।
ভেরেট্রামে বাহ্য অধিক, এন্টিমে, বমি অধিক। দুইটি ঔষধেই পিপাসা আছে, কিন্তু ভেরেট্রাম রোগী বেশী পরিমাণে পানি পান করিলেই রোগীর পিপাসা নিবারিত হয় এবং অনেক সময় সেরূপ পিপাসা থাকেও না।

সবিরাম জ্বর:-  জ্বর সাধারণতঃ বেলা ৩টায় আসে। কখনও কখনও বেলা ৯টা বা সন্ধ্যা ৬টার সময় জ্বর আসিতে দেখা যায়। খুব স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে বাস করার জন্য বা ঐরূপ স্থানে বসিয়া কাজ করা হেতু বা ঠাণ্ডা হাওয়া লাগাইবার ফলে জ্বর হয়। জ্বর আসিবার পূর্বে রোগী খুব হাই তুলিতে থাকে ও আড়মোড়া ভাঙ্গিতে থাকে।
যতক্ষণ শীতাবস্থা থাকে ততক্ষণ পিপাসা থাকে না। একবার শীত একবার উত্তাপ হয়। মনে হয় ভিতর হইতে শীত বাহির হইতেছে। শীতে রোগী ঠকঠক করিয়া কাঁপিতে থাকে। শীত আরম্ভ হইলে রোগী নিদ্রালু হয়। উত্তাপের সময় রোগীর কপালে প্রচুর ঘাম বাহির হয়। উত্তাপের সময়েও পিপাসা থাকে না, কিন্তু ঘাম বাহির হইবার সময় অত্যন্ত পিপাসা পায়।

জ্বরে এপিস ও এন্টিম টার্টের তুলনা:- এন্টিম টার্টে প্রায় সকল অবস্থায়ই ঘুম পায় কিন্তু এপিসে উত্তাপ ও ঘর্মাবস্থায় ঘুম পায়। এপিসে পেটের দোষ দেখা যায় না। এন্টিমে পেটের দোষ থাকে। এপিসের জিহ্বা লালবর্ণ এবং তাহাতেই ঘা থাকে। এন্টিমের জিহ্বার ধারগুলি এবং দানাগুলি লাল।

বিবমিষা ও বমন:- ইপিকাকের ন্যায় এন্টিম টার্টেও বিবমিষা ও বমন দেখিতে পাওয়া যায়। ইপিকাকের বমির পূর্বে ও পরে সর্বদাই বিবমিষা বা বমিভাব বর্তমান থাকে কিন্তু এন্টিম টার্টে বমনের পর কিছু সময়ের জন্য বিবমিষার উপশম হয় এবং প্রত্যেকবার বমনের পর রোগী অবসন্ন হইয়া পড়ে ও তন্দ্রাভিভুত হয়। এন্টিম টার্টের বমনের বিশেষত্ব এই যে, ডান পার্শ্বে শুইলে বমি হয় না। কিন্তু অন্য যেভাবে থাকা যায় তাহাতেই বমি হয়।
 
 আহারের ইচ্ছা:-  এন্টিম টার্টে আপেল খাওয়ার ইচ্ছা বড় প্রবল।

প্রান্তদেশ:- হস্তপদ কম্পন শীল। কটিদেশে তীব্র বেদনা। মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে ভারবোধ, সব সময়ই যেন নিচের দিকে টানিতে থাকে। পেশীসমূহ মোচড়ায়।

হাম ও বসন্ত:-  হাম এবং বসন্তের গুটিকাসমূহ যখন সম্পূর্ণ বাহির হইতে না পারিয়া মিশাইয়া যায় অথবা ভালভাবে বাহির না হইয়া যদি শিশুদের জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গলা ঘড়ঘড়ানি প্রভৃতি লক্ষণ প্রবলভাবে প্রকাশ পাইতে থাকে, তখন এন্টিম টার্ট প্রয়োগে উদ্ভেদগুলি বাহির হইয়া মন্দ লক্ষণাদি অচিরে তিরোহিত হয় এবং ধীরে ধীরে আরোগ্যের পথ সূচিত করে। গুটি বাহির হইবার পূর্বে রোগীর মুখমণ্ডল নীল বর্ণ ধারণ করে, নিদ্রালুতা, সাদা লেপাবৃত জিহ্বা, গা বমি ভাব বা বমি, নিমোনিয়া কাশি. বুকের ঘড়ঘড় শব্দ প্রভৃতি লক্ষণ বর্তমান থাকে। হাম ও বসন্তের সাথে ব্রঙ্কাইটিস অথবা নিমোনিয়া থাকিলে এন্টিম বিশেষ ফলপ্রদ।

শোথ:- এন্টিমোনিয়ামের সর্বপ্রকার প্রস্তুতিতেই শোথ একটি স্বাভাবিক অবস্থা। এন্টিম টার্ট শোথে পরিপূর্ণ। পূর্বে একটি প্রথা ছিল যে, নিমোনিয়া ও জ্বর রোগের পর বৃদ্ধ এবং ভগ্নস্বাস্থ্য লোকদিগকে এন্টিম টার্টের উপরই রাখিয়া দিতে হইবে। কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ হইবার পূর্বে ৩/৪ মাস ধরিয়া প্রায় ক্ষেত্রেই তাহাদের পায়ের পাতা ফুলা থাকিত। এইরূপ না হইলে তাহাদের জ্বর ক্ষত হইত। এন্টিমোনিয়াম এইরূপ জ্বর ক্ষতের একটি সাধারণ কারণ। ইহা এক প্রকার দীর্ঘকাল স্থায়ী অলস প্রকৃতির ক্ষত। যাহা ভঙ্গ স্বাস্থ্য ব্যক্তিদের পুরাতন জ্বরের পর পায়ের উপর প্রকাশ পায়। এন্টিমের মতাবলম্বী কোন চিকিৎসকের হাতে না পড়িলে প্রায়ই তাহারা মুক্তি পায় না।

বৃদ্ধি:- সন্ধ্যাকালে, রাত্রিকালে শয়ন করিলে, উত্তাপে, স্যাঁতস্যাঁতে শীতল বায়ুতে, অম্লাত্মক বস্তু খাইলে, দুগ্ধ পান করিলে, শরৎ ও হেমন্তকালে, বায়ু পরিবর্তনে।

উপশম:- খাড়া হইয়া বসিলে, উদগারে ও শ্লেষ্মা উঠিলে, ডান পার্শ্বে শুইলে, নির্মল বায়ুতে, গয়ার উঠিলে।
 
সদৃশ:- ইপিকাক, কেলি সালফ।

পরিপূরক:- ইপিকাক।

ক্রিয়ানাশক:- সিপিয়া, পালসেটিলা, ওপিয়াম, রাসটক্স, চায়না, ককুলাস, এসাফিটিডা।

 পরবর্তী:- হিপার, সিপিয়া, সিনা, কার্বোভেজ, পালসেটিলা, ইপিকাকাক, সালফার।

ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ২০ হইতে ৩০ দিন।

ব্যবহারের শক্তি:- ৩x হইতে ২০০ শক্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ