পঞ্চম অধ্যায়
অস্বাভাবিক গর্ভ ও গর্ভকালীন ব্যাধিসমূহAbnormal Precnancy and Diseases in Pregnancy
প্রশ্ন- হাইপার এমেসিস গ্রভিডেরাম বা গর্ভকালীন অতিবমন বলিতে কি বুঝ? ইহার প্রকারভেদ লেখ।
উত্তর : হাইপার এমেসিস গ্রাভিডেরাম- গর্ভাবস্থায় গর্ভিনীর বমন এবং
বমনেচ্ছার ভাবটি প্রায়ই দেখা যায়। সকাল বেলা লক্ষণটি বেশী দেখা যায়, ইহাকে Morning Sickness বলে। গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসে প্রায়ই এই লক্ষণ দেখা যায়। এই লক্ষণ সাধারণতঃ চতুর্থ মাস পর্যন্ত চলিতে থাকে। বমির ভাব যদি সমস্ত দিন ধরিয়াই থাকে, দিনরাত্র যে কোন সময় অতিরিক্ত বমন হইতে থাকে, গর্ভিনীর চেহারা খারাপ হয়, অনেক সময় খুব বেশী বমি হইতে থাকে এবং জটিল উপসর্গ হইয়া দাঁড়ায় এবং যদি তাহা বন্ধ না হইয়া ভয়ানক রোগলক্ষণ প্রকাশ পার তাহাকে হাইপার এমেসিস গ্রাভিডেরাম বা অতিরিক্ত বমন বলে।
প্রকারভেদ- হাইপার এমেসিস গ্রাভিডেরামকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) নার্ভাস, হিস্টেরিক্যাল বা নিউরোটিক- প্রথম ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভের প্রথমাবস্থায় যে প্রভাতী অসুস্থতা ও বমি হইতে থাকে, তাহাই চলিতে থাকে অনেকটা মানসিক ভাবের জন্য বা মানসিক বমি বমি ভাবের জন্য। ইহাকে বলা হয় নার্ভাস, হিস্টোরিক্যল বা নিউরোটিক বমন।
২) টক্সিক- দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বমি চলিতেই থাকে এবং বমি বৃদ্ধির কারণ হইল টক্সিক কারণ বা টাক্সিমিয়া। ইহা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এপেন্ডিসাইটিস, পাইলাইটিস প্রভৃতি নানা রোগ হইতেও গর্ভকালীন বমি বৃদ্ধি হইতে পারে।
প্রশ্ন- হাইপার এমেসিস গ্রাভিডেরাম বা গর্ভকালীন অতি বমনের কারণসমূহ কি কি?
উত্তর: হাইপার এমেসিস গ্রাভিডেরামের কারণ- এই রোগের কারণতত্ত্ব আজও চরমভাবে নিষ্পত্তি করা যায় নাই। তবে অনেকে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ কারণ হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছেন।
১) মানসিক অবস্থা- অনেক সময় বমি হয় হিস্টেরিক্যাল ধরণের, যাহার কারণ অনুসন্ধান করিলে মানসিক কারণই দেখা যায়। হিস্টিরিয়া, কিংবা অন্যান্য ধরনের নিউরেসিস বা স্নায়বিক প্রাবল্যের ফলে ইহা উৎপন্ন হয়। অসুখী বিবাহ, জারজ গর্ত সঞ্চার বা সন্তান আকাংখিত না হইলে তাহার জন্য মানসিক কারণে বমি হইতে পারে। শোক, দুঃখ, উত্তেজনা প্রভৃতি কারণেও ইহা হয়। ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পরে গর্ভের বিষয় চিন্তাও বমির কারণ হিসাবে কাজ করে। আবার কেহ কেহ ইহাকে জরায়ুর স্থানচ্যুতি অথবা জরায়ু গ্রীবা বা সার্ভিক্সের প্রদাহিত অবস্থাবশতঃ উৎপন্ন বলিয়া অনুমান করেন।
২) টক্সিমিয়া- গুরুতর আকারের auto-intoxication বশতঃ ইহা হইয়া থাকে। মল, মূত্র, ঘর্ম প্রভৃতি দ্বারা যে সমস্ত দূষিত পদার্থ শরীর হইতে বাহির হইয়া যায়, তাহারা যথাযথভাবে নির্গত হইতে না পারিলে তাহার ফলে শরীরের মধ্যে এক বিশেষ প্রকারের বিষ জন্মায়, তজ্জনিত শরীরের রক্তের যে বিকৃতি হয় তাহাই auto toxication। কোন সময় দেহে হরমোনের প্রভাবে একটা Toxic ভাব আসে, এই Toxic ভাব চলিতে থাকিলে বমিও চলিতে থাকে।
৩) হাইড্রামনিয়াস- গর্ভকালে পানির আধিক্য হইলেও বমন হইতে পারে।
প্রশ্ন- হাইপার এমেসিস গ্রাভিডেরাম বা গর্ভকালীন অতি বমনের লক্ষণাবলী, উপসর্গ বা জটিলতা লিখ।
উত্তর: গর্ভকালীন অতি বমনের লক্ষণ ও উপসর্গ বা জটিলতা-
১) রোগিনী দুর্বল হইতে থাকে এবং শরীর জীর্ণ শীর্ণ হইয়া পড়ে।
২) দেহের ওজন দ্রুত কমিতে থাকে।
৩) ময়লার আবরণে জিহ্বা লেপাবৃত থাকে।
৪) কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
৫) পিপাসা খুব বেশী বৃদ্ধি পায়।
৬) নাড়ীর গতি দ্রুত হইতে থাকে।
৭) প্রস্রাব কম হয় এবং তাহাতে এলবুমিন বা এসিটোন দেখা দেয়।
৮) দিনরাত যে কোন সময়েই অনবরত বমি হয়।
মারাত্মক লক্ষণ-
১) নাড়ী ১২০ এর চাইতে অধিক থাকে।
২) তাপমাত্রা ৯৯০ এর চাইতে বেশী হয়।
৩) এলবুমিনুরিয়া প্রকাশ পায়, প্রস্রাব অত্যন্ত কমিয়া যায়।
৪) ক্ষীণদৃষ্টি দেখা দেয়।
৫) জন্ডিস দেখা দিতে পারে।
৬) কঠিন অবস্থায় খেঁচুনি ও কোমা দেখা দিতে পারে।
৭) মস্তিস্কের লক্ষণ দেখা দেয়।
প্রশ্ন- হাইপার এমেসিস গ্রাভিডেরাম বা গর্ভকালীন অতি বমনের ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: গর্ভকালীন অতি বমনের ব্যবস্থাপনা-
১) রোগিনীকে শয্যায় শয়ন করাইয়া রাখা উচিত। ঘরখানা বেশ নিস্তদ্ধ ও অন্ধকারময় হওয়া প্রয়োজন।
২) রোগিনী যাহাতে কোনভাবেই বিরক্ত না হয় সে ব্যবস্থা করা উচিত।
৩) কোষ্ঠবদ্ধতা থাকিলে দাস্ত পরিষ্কার হয় সে ব্যবস্থা করা উচিত।
৪) কখনও বমির পাত্র রোগিনীর সামনে রাখা উচিত নয়।
৫) অতিরিক্ত পানিশূন্যতা দেখা দিলে ৫% গ্লুকোজসহ নরমাল স্যালাইন শিরা পথে দিতে হইবে।
৬) চিকিৎসায় কোন ফল না হইলে গর্ভপাত করানো ছাড়া কোন উপায় নাই।
৭) গুরুতর অবস্থায় রোগিনীকে হাসপাতাল বা নার্সিং হোম ভর্তি করানো উচিত।
প্রশ্ন- গর্ভকালীন প্রভাত অসুস্থতা বা 'মনিং সিকনেস' বলিতে কি বুঝ? ইহার কারণ ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর : মর্নিং সিকনেস- মর্নিং সিকনেস বা প্রভাত বমন গর্ভের প্রথম মাস হইতে আরম্ভ হইয়া তিন মাস পর্যন্ত বর্তমান থাকে। রোগিনী সকালে ঘুম হইতে উঠিয়াই ক্লান্ত বোধ করেন এবং বমি ভাব থাকে। এই ক্লান্তির সহিত ঋতু বন্ধ থাকিলে গর্ভ হইয়াছে বলিয়া সন্দেহ করা যাইতে পারে। অনেক সময় গ্যাস্টাইটিসেও এরকম হয়।
কারণ-
১) গর্ভাবস্থায় প্রসূতি দেহে কিছু টক্সিন জাতীয় পদার্থ সৃষ্টি হইলে এইরূপ হইতে পারে।
২) জরায়ুর স্থানচ্যুতির ফলেও ইহা হয়। রাত্রে শয়নের সময় জরায়ু ঠিক স্থানে থাকে। সকলে উঠিয়া চলাফেরা করার ফলে জরায়ুর স্থানচ্যুতি ঘটে।
৩) কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও ইহা হইতে পারে।
চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনা-
১) গর্তিনীর যাহাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত।
২) ঘুম হইতে উঠার একঘন্টা পূর্বে শুকনা টোস্ট বা দুই একটি বিস্কুট খাইলে উপকার হয়।
৩) একসঙ্গ বেশী খাবার না দিয়া বার বার অল্প অল্প করিয়া দিতে হইবে।
৪) জল, হালকা চা, কপি, লেবুজল, কমলার রস প্রভৃতি খাইতে দিতে হইবে। বার্লি ও গ্লুকোজ মিশাইয়া সেবন করিলে ভাল হয়।
৫) মাংস, ডিম, গুরুপাক দ্রব্য খাইতে দেওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন- গর্ভাবস্থায় হাইড্রামনিয়া বলিতে কি বুঝায়? হাইড্রামনিয়ার উপসর্গ ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর : হাইড্রামনিয়া- রক্তের মধ্যে জলীয়াংশের বৃদ্ধিকে হাইড্রমনিয়া নামে অভিহিত করা হয়। অনেক সময় ইহা গর্ভাবস্থায় এনিমিয়ার সঙ্গে সংঘটিত হয়।
উপসর্গ- হাইড্রামনিয়া সংঘটিত হইলে অনেক সময় পদদ্বয়ের এবং যোনি কপাটের শোধবৎ স্ফীতি দেখা দেয়। যোনি কপাটদ্বয় যার পর নাই স্ফীত হইলে প্রসব হওয়ার বিঘ্ন ঘটিতে পারে। অনেক সময় এইরূপে যোনি কপাটে পচনশীল ক্ষত পর্যন্ত সংঘটিত হইতে পারে।
ব্যবস্থাপনা- মাঝামাঝি রকমের স্ফীতি দেখা দিলে চিৎ হইয়া শয়ন করিয়া থাকিলে উপকার দর্শে। নিতান্ত প্রয়োজন হইলে এবং অন্য কোন উপায় না থাকিলে যোনি কপাটদ্বয় অত্যন্ত স্ফীত হইয়া উঠিলে পাংচার করা প্রয়োজন হয়। তবে এই ব্যবস্থার বিপদ এই যে, পাংচার করার ফলে অসময়ে প্রসব বেদনা আরম্ভ হইতে পারে বা পূজোৎপত্তি ঘটিতে পারে।
প্রশ্ন- হাইড্রামনিয়াস বা গর্ভকালীন জলাধিক্য কাহাকে বলে? ইহা কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর: হাইড্রামনিয়াস গর্ভকালীন পানির আধিক্য দেখা দিলে তাহাকে
হাইড্রামনিয়াস বলে। স্বাভাবিকভাবে গর্ভকালে ১ হইতে ২ পাইন্ট লাইকার অ্যমনাই থাকে। কখনও কখনও স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশী ৫-৬ পাইন্ট পর্যন্ত ইহা অ্যামনিয়নের থলির মধ্যে সঞ্চিত থাকে এবং ফলে রোগিনীর জীবন বিপন্ন হয়। ইহারই নাম হাইড্রামনিয়াস।
প্রকারভেদ- হাইড্রামনিয়াস দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা-
১) একিউট হাইড্রামনিয়াস- ইহা খুব কম দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় ৩২ সপ্তাহ কাটিয়া যাইবার পর ইহা দেখা দেয়, পেট খুব বেশী ফুলিয়া যায়।
২) ক্রনিক হাইড্রামনিয়াস- পেট ধীরে ধীরে ফোলে এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে পানি ভাঙ্গা, পেটে ব্যথা দেখা দেয়। সাধারণতঃ প্রসবের শেষ ৮-৯ সপ্তাহে ইহা দেখা দেয়।
প্রশ্ন- হাইড্রামনিয়াস বা গর্ভকালীন জলাধিক্যের কারণ, লক্ষণাবলী ও চিকিৎসা ব্যবস্থা লিখ।
উত্তর: কারণ- ইহার সঠিক কারণ আজও জানা নাই। মায়ের বা শিশুর হৃদযন্ত্রের বা মূত্রগ্রন্থির রোগ হইলে পর্দার ভিতর জলাধিক্য হইতে পারে। গর্তিনী নারী র্যানাল কার্ডিয়াক বা ডায়াবেটিস রোগে ভুগিলে ইহা হইতে পারে।
অনেক সময় ভ্রুণের গঠনের মধ্যে malformation হইলে তাহার ফলেও ইহা হইতে পারে।
ইহা ছাড়া যমজ মোল প্রভৃতিতেও পেট বড় হইয়া থাকে।
লক্ষণাবলী-
১) শ্বাসকষ্ট ও দম বন্ধ ভাব।
২) পেট খুব শক্ত বড় ও পেটে চাপবোধ।
৩) জরায়ু খুব বেশী ফুলিয়া উঠে।
৪) শয়ন করিতে কষ্ট অনুভব হয়।
৫) ঘন ঘন প্রস্রাব পায় ও প্রস্রাব বৃদ্ধি পায়।
৬) পেলভিক শিরাতে চাপ পড়ার জন্য নিম্নাঙ্গ, ভাল্ব প্রভৃতিতে ঈডিমা দেখা দেয়।
৭) শিশুর পা, মাথা কিংবা হৃদস্পন্দন টের পাওয়া যায় না।
৮) বুক ধড়ফড়ানি বৃদ্ধি পায়।
৯) জরায়ু টান ও শক্ত হয়।
১০) হাস ফাস করা।
১১) বমি হইতে পারে তবে তাহা খুবই কষ্টকর।
১২) পা, পেট, যোনির বহিরাংশ ও valve প্রভৃতি ফোলে এবং ঈডিমা দেখা দেয়।
১৩) চেহারা ফ্যাকাশে হয়।
১৪) অস ডাইলেট করলে মেমব্রেন জলযুক্ত বিরাট ব্যাগের মত অনুভূত হয়।
১৫) ঠিকমত ভার্টেক্স প্রেজেন্টেশন হয় না।
১৬) পেটে যে পানি জমিয়াছে তাহা দেহের বাহিরে হাত রাখিয়া (ফ্লুয়িড থ্রিল) বুঝিতে পারা যায়।
চিকিৎসা ব্যবস্থা- গর্ভাবস্থায় সাধারণতঃ কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
পেট যদি খুব বেশী ফুলিয়া উঠে ও বেদনা বেশী হয় তাহা হইলে পূর্ণ মেয়াদের আগেই মেমব্রেণ রাপচার করিয়া প্রসব করানো প্রয়োজন হয়। অবশ্য ফিটাস কিছু অস্বাভাবিক হইলে এইরূপ করার দরকার হয়। তেমন না হইলে রোগিনীকে বিশ্রামে রাখিয়া প্রসবের জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে।
অনেক সময় acute কসে লাম্বার পাঞ্চ করিয়া Amniotic sac Tab করিয়া ভাল সার্জন দ্বারা জল কিছুটা বাহির করিয়া দেওয়া হয়। তাহাতে প্রসব হয় না, তবে রোগিনী কিছুটা সুস্থ বোধ করে।
প্রশ্ন- হাইড্রামনিয়াসের সৃষ্ট জটিলতাসমূহ বা ফলাফল কি?
বা, হাইড্রামনিয়াসের কারণে রোগিনীর কি কি অবস্থার সৃষ্টি হয়?
উত্তর: হাইড্রামনিয়াসের জটিলতা বা ফলাফল-
১) ঠিক সময়ের আগেই প্রসব হইয়া যাইতে পারে।
২) জরায়ু বেশী ফোলার জন্য থলথলে হয় ও ঠিকমত কাজ করিতে পারে না।
৩) জরায়ুর ক্লান্তির জন্য পোস্ট পার্টেম রক্তপাত হইতে পারে।
৪) ভ্রুণের অস্বাভাবিক উপস্থিতি হইতে পারে।
৫) অতিরিক্ত বমি হইতে পারে।
৬) ঠিক সময়ের আগেই চাপের জন্য প্লাসেন্টা ফাঁক হইয়া যায় হঠাৎ পানি ভাঙ্গে এবং শক দেখা দিতে পারে।
৭) জরায়ুতে বেশী প্রসারণের জন্য প্রসবের পরে ব্যথা হয়।
প্রশ্ন- এক্টোপিক গেস্টেশন বা জরায়ুর বাহিরে গর্ভধারণ কাহাকে বলে?
উত্তর : এক্টোপিক গেস্টেশন (Ectopic Gestation): ইহাও এক
প্রকার অস্বাভাবিক গর্ভসঞ্চার। সচারাচর নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর অভ্যন্তর ভাগ এন্ডোমেট্রিয়ামে উপস্থিত থাকিয়া গর্ভ সঞ্চার হয়। কিন্তু যদি জরায়ুর বাহিরে বা জরায়ুর গহ্বরে বাহিরে গর্ভসঞ্চার হয় তাহাকে
Uterine Gestation বলে। অনেক সময় ডিম্বটি ডিম্বকোষ ত্যাগ করার পূর্বেই ঠিক ডিম্বকোষে আটকে থাকা অবস্থাতেই পূং শুক্রকীট তার সঙ্গে মিলিত হইয়া গর্ভসঞ্চার হয়। আবার কোন সময় ডিম্বনালী বা ফ্যালোপিয়ান টিউবে ডিম্বটি নিষিক্ত হইবার পর তাহার আর জরায়ু গহ্ববে নামিয়া আসে না। এই নিষিক্ত ডিম্বটি টিউবেই প্রোম্বিত বা embeded হইয়া যায়।
প্রশ্ন- এক্টোপিক গেস্টেশনের কারণসমূহ কি কি?
উত্তর : এক্টোপিক গেস্টেশনের কারণ- নিম্নলিখিত কারণগুলিকে এক্টোপিক গেস্টেশনের কারণ বলিয়া গণ্য করা হয়।
১) ডিম্বনালী দিয়া নিষিক্ত ডিম্বটি ঠিক সময়মত জরায়ুতে নামিয়া না আসিলে বা তাহাতে বাধা পাইলে তাহার ফলে এইভাবে টিউবে গর্ভ সঞ্চার হইতে পারে।'
২) ফ্যালোপিয়ান টিউবের ইনফ্লামেশন বা স্যালপেঞ্জাইটিস এমন কি পেরিটোনাইটিস হইতে পারে এবং একদিকে হইলে তারপর অন্য দিকের টিউবে গর্ভ সঞ্চার হইতে পারে।
৩) ফ্যালোপিয়ান টিউবের দৈর্ঘ্য অস্বাভাবিক হইলে।
৪) যে সব স্ত্রীলোকদের গর্ভসঞ্চার হয় না, তাহাদের এইরূপ গর্ভসঞ্চার হইতে পারে।
৫) ওভামের অস্বাভাবিক নড়াচড়ার কারণে ইহা হইয়া থাকে।
প্রশ্ন- এক্টোপিক গেস্টেশনের লক্ষণাবলী ও চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা কর।
উত্তর: এক্টোপিক গেস্টেশনের লক্ষণাবলী-
নিষিক্ত ডিম্বাণু ফ্যালোপিয়ান টিউবে আকারে বড় হইতে থাকিলে ক্রমবর্ধমান ডিম্বাণুর সঙ্গে সঙ্গে টিউব সেই অনুপাতে প্রসারিত হইতে পারে না, ফলে টিউবটি ফাটিয়া যায়। ফ্যালোপিয়ান টিউব ফাটিয়া গেলে-
১) হঠাৎ তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
২) মাথা ঘোরা ও চোখে ধোঁয়া দেখা।
৩) মুখ ফ্যাকাশে হইয়া যাওয়া।
৪) অস্থির হইয়া পড়া এবং গায়ে ঘাম হওয়া।
৫) ঘামের সঙ্গে নাড়ীর গতি বৃদ্ধি পাওয়া বা নাড়ী স্পন্দন হওয়া।
৬) রক্তচাপ কমিয়া যাওয়া।
৭) পাতলা ও কাল স্রাব বাহির হওয়া।
এক্টোপিক গেস্টেশনের চিকিৎসা- অপারেশান ছাড়া অন্য কোন চিকিৎসা এই
অবস্থায় ফলদায়ক হয় না। যেজন্য অতি দ্রুত অপারেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। পেটের দুইটি পর্দার অন্তবর্তী স্থানে গর্তের মত যে স্থান Peritonial Cavity আছে সেই স্থান হইতে রক্ত ও রক্তের ডেলা সরাইয়া ফেলার জন্য পেট কাটিতে হয়। ফ্যালোপিয়ান টিউবে ডিম্বাণু থাকার জন্য ফ্যালোপিয়ান টিউব কাটিয়া বাদ দেওয়া হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই পেট কাটাকে ল্যাপারেটমি এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব কাটাকে ল্যালিপিন জেকটমি বলে।
প্রশ্ন- এক্টোপিক গেস্টেশনের স্থান বা অবস্থান কোথায়?
উত্তর: এক্টোপিক গেস্টেশনের অবস্থান-
১) ফ্যালোপিয়ান টিউব।
২) ওভারি।
৩) এবডোমিন।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যেই হইয়া থাকে।
প্রশ্ন- এক্টোপিক গেস্টেশনে কি কি অবস্থার সৃষ্টি হয়?
বা, এক্টোপিক গেস্টেশন বা জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণে সৃষ্ট ফলাফল বা পরবর্তী অবস্থা সমূহ কি কি?
উত্তর: ফ্যালোপিয়ান টিউবে গর্ভসঞ্চার হইলে প্রথমে তাহার এপিথিলিয়াম বিনষ্ট হয়। তারপর উহা ক্রমে বাড়িতে থাকে এবং তাহার ফলে ডিম্ববাহী নালীর পেশী ও রক্তবাহ নালীগুলির সঙ্গে আটকাইয়া যায়। ইহার ফলে ৪টি অবস্থা সৃষ্টি হইতে পারে।
১) টিউবে মোল সৃষ্টি- স্বাভাবিকভাবে টিউব হইতে ভ্রুণটি বাহির হওয়ার চেষ্টা চলে, ফলে বার বার অল্প অল্প রক্তপাত হইতে থাকে এবং ভ্রূণ মারা যায়। তখন রক্ত ও ছোট ওভামটি একত্র হইয়া ফাইব্রাস নুডল সৃষ্টি হয়।
২) টিউব ফাটিয়া যাওয়া- ভ্রুণ বৃদ্ধির চাপে টিউবটি প্রসারিত হইতে হইতে ফাটিয়া যায় এবং ওভামটি Peritonial Cavity তে নিক্ষিপ্ত হইয়া একটি গর্ত সৃষ্টি হয়।
৩) টিউব হইতে রক্তপাত-পূর্বের মতই টিউবটি ফাটিয়া যায় বটে তবে ওভাম এবং রক্ত Fimbriated প্রান্তের মধ্য দিয়া পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে পড়ে।
৪) টিউবের ইরোশন- এই ক্ষেত্রে কোরিয়নিক ভিলাইগুলি টিউব পার হইয়া বড়
ধমনী বা অস্ত্র বা জরায়ু গাত্রে প্রোথিত হয় জরায়ুর বাহিরের দিকে। ফলে পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটির মধ্যে ভ্রুণটি বৃদ্ধি পাইতে থাকে। কারণ অন্য অংশ হইতে উহা রক্তের সাপ্লাই পায় এবং ভ্রূণটির মৃত্যু না বাড়িয়া বলে।
প্রশ্ন- টিউবাল প্রেগন্যান্সী বা নলে গর্ভ ধারণ কাহাকে বলে?
উত্তর: টিউবাল প্রেগন্যান্সী- যখন ভ্রুণ জরায়ু মধ্যে অবস্থান না করিয়া
ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে অবস্থান করে তখন টিউবাল প্রেগন্যান্সী বলে। ইহা একটি অস্বাভাবিক গর্ভ। নিষিক্ত ডিম্বাণু একেবার ডিম্বাণুবাহী নলের ভিতর অবস্থান করিলে সেখানেই বাড়িতে থাকে এবং আকারে বড় হইতে থাকে। ক্রমবর্ধমান ডিম্বাণুর সহিত পাল্লা দিয়া ফ্যালোপিয়ান টিউব তদনুযায়ী প্রসারিত হইতে পারে না। ডিম্বাণুর ব্যাস অর্ধ হইতে ১ ইঞ্চি নলের অপ্রশস্ত ইসথনিক অংশ সাধারণতঃ গর্ভের পঞ্চম হইতে সপ্তম সপ্তাহের মধ্যে ফাটিয়া যায়। অবশ্যই ফ্যালোপিয়ান টিউবের প্রশস্ত অংশে যদি ডিম্বাণু অবস্থান করে তাহা হইলে ডিম্বাণু আরও কিছুটা বড় হইতে পারে এবং প্রসবকাল আরও ২-১ সপ্তাহ (৬-৮ সপ্তাহ) বাড়িতে পারে। সাধারণতঃ এই অবস্থায় ডিম্বাণু নলের যে প্রান্তের খোলা মুখে আঙ্গুলের মত ঝালর ঝুলিতে থাকে সেই অংশের শেষাংশ দিয়া বাহির হইয়া থাকে। ইহাকে বলা হয় নলে গর্ভপাত বা টিউবাল এবোরশন। নলের প্রশস্ত এমপুলারী অংশ হইতে ডিম্বাণু বিচ্ছিন্ন হইবার পর ঐ মৃত ডিম্বাণুর গায়ের স্তরে স্তরে রক্তের ডেলা জমা হইয়া রক্তপিণ্ডের মত হয়। এই অবস্থায় ইহাকে বলে টিউবাল মোল। ইহা ডিম্বাণুবাহী নলের মধ্যে থাকিতে পারে অথবা ফিমব্রয়েটের অংশের শেষাংশ দিয়া বাহির হইতে পারে। নল ফাটিয়া গেলে বা টিউবের ভিতর দিয়া ডিম্বাণু বাহির হইয়া আসিলে উভয় ক্ষেত্রেই পেরিটোনিয়াম দ্বারা আচ্ছাদিত অংশের মধ্যেই রক্তপাত আবদ্ধ থাকে। ডিম্বাণুর মৃত্যু ঘটিবার অব্যবহিত পরেই গর্ভঝিল্লী বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় এবং ইহার ফলে যোনিপথ দিয়া রক্তস্রাব হইয়া থাকে।
চিত্র: টিউবাল প্রেগন্যান্সিতে অবস্থান।
'৬' স্বাভাবিক, বাকিগুলো অস্বাভাবিক।
প্রশ্ন- টিউবাল রাপচার কাহাকে বলে?
উত্তর: টিউবাল রাপচার (Tubal Rupture): যখন ভ্রুণ জরায়ু মধ্যে
অবস্থান না করিয়া ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে অবস্থান করে অর্থাৎ নিষিক্ত ডিম্বাণু একবার ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে অবস্থান করিলে সেখানেই বৃদ্ধি পাইতে থাকে। ক্রমবর্ধমান ডিম্বাণুর সহিত পালা দিয়া ফ্যালোপিয়ান টিউব সেই অনুযায়ী প্রসারিত হইতে পারে না। ডিম্বাণুর ব্যাস অর্থ হইতে ১ ইঞ্চি হইলে নলের অপ্রশস্ত ইসথামিক অংশ সাধারণতঃ গর্ভের পঞ্চম হইতে সপ্তম সপ্তাহের মধ্যে ফাটিয়া যায়। ইহাকে টিউবাল রাপচার বলে।
প্রশ্ন- টিউবাল রাপচার বা ফাটিবার লক্ষণ কি?
উত্তর: ফাটিবার (Rupture) লক্ষণ-
গর্ভের পঞ্চম হইতে সপ্তম সপ্তাহের ভিতর ইহার লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলি
হইল-
১) হঠাৎ তলপেটে অসহ্য ব্যথা হয়।
২) চোখে ধোঁয়া দেখা এবং মাথা ঘুরিয়া যাওয়া।
৩) মুখ ফ্যাকাশে হইয়া যাওয়া।
৪) অস্থিরতা বৃদ্ধি এবং গায়ে ঘাম হওয়া।
৫) ঘামের সহিত নাড়ীর গতি বৃদ্ধি পাওয়া বা নাড়ী স্পন্দনহীন হওয়া।
৬) রক্তচাপ কমিয়া যাওয়া।
৭) পাতলা ও কাল স্রাব বাহির হওয়া- ইহা গর্ভঝিল্লীর টুকরা, ভ্রূণের অংশ নয়।
প্রশ্ন- টিউবাল, রাপচারের চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: টিউবাল রাপচারের চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনা- যত দ্রুত সম্ভব
অপারেশানের ব্যবস্থা করিতে হইবে। অন্যথায় রোগিনীর মৃত্যু আবশ্যম্ভাবী। অপারেশান ছাড়া অন্য কোন চিকিৎসা ফলপ্রসু নয়। পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটি হইতে রক্ত এবং রক্তের ডেলা সরাইয়া ফেলার জন্য ল্যাপারোটমি করিয়া পেট কাটিতে হয়। ডিম্বাণুবাহী নলে ডিম্বাণু থাকিবার জন্য স্যালপিনজেকটমি করিয়া ডিম্বাণুবাহী নল কাটিয়া বাদ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন- টিউবাল প্রেগন্যান্সীতে কখন টিউব ফাটিয়া যায়?
উত্তর: গর্ভের পঞ্চম হইতে সপ্তম সপ্তাহের মধ্যে ক্রমবর্ধনশীল ডিম্বাণুর সহিত পাল্লা দিয়া ফ্যালোপিয়ান টিউব যখন সেই অনুযায়ী প্রসারিত হইতে পারে না তখন টিউব ফাটিয়া যায়।
প্রশ্ন- টিউবাল এবোরশান বা নলে গর্ভপাত কাহাকে বলে? টিউবাল এবোরশনের লক্ষণ বর্ণনা কর এবং ইহার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: নলে গর্ভপাত (Tubal Abortion)- ডিম্বাণুবাহী নলের প্রশস্ত অ্যামপুলারি অংশে যদি ডিম্বাণু অবস্থান করে তাহা হইলে ডিম্বাণু কিছুটা বড় হইতে পারে এবং এই অবস্থায় ডিম্বাণু নলের যে প্রান্তের খোলা মুখে আঙ্গুলের মত ঝালর ঝুলিতে থাকে সেই অংশের শেষাংশ দিয়া বাহির হইয়া আসে। ইহাকে টিউবাল এবোরশান বা নলে গর্ভপাত বলে।
টিউবাল এবোরশনের লক্ষণ-
১) তলপেটে ব্যথার তীব্রতা কম অনুভূত হয়।
২) রক্তস্রাবের পরিমাণ কম হয়।
টিউবাল এবোরশান বা নলে গর্ভপাতের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা- ডায়াগনোসিসের পর যত দ্রুত সম্ভব অপারেশনের ব্যবস্থা করিতে হইবে। পেরিটানিয়াল ক্যাভিটি হইতে রক্তের ডেলা সরাইয়া ফেলার জন্য ল্যাপারোটমি করিয়া পেট কাটিতে হইবে। এবং ফ্যালোপিয়ার টিউবে ডিম্বাণু থাকিবার জন্য স্যালপিন জেকটমি করিয়া টিউব কাটিয়া ফেলিতে হইবে।
প্রশ্ন- টিউবাল মোল কাহাকে বলে?
উত্তর : টিউবাল প্রেগন্যান্সীতে ডিম্বাণুর ট্রোফোব্লাস্ট ফ্যালোপিয়ান টিউবের পাতলা প্রাচীর নষ্ট করিয়া ফেলে এবং মায়ের ব্লাড ভেসেল নষ্ট হওয়ার দরুন অত্যাধিক রক্তক্ষরণ হয়। ফ্যালোপিয়ান টিউবের ভিতর ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হইতে থাকিলে এবং এই রক্তক্ষরণ সামান্য হইলে ডিম্বাণুর ট্রোফোরাস্টের চারিপাশে ইহা জমাট বাঁধিয়া যায় এবং টিউবাল মোল তৈরী হয়। অর্থাৎ ফ্যালোপিয়ান টিউব হইতে ডিম্বাণু বিচ্ছিন্ন হইবার পর ঐ মৃত ডিম্বাণুর গায়ের স্তরে স্তরে রক্তের ঢেলা জমা হইয়া রক্তপিণ্ডের মত হয়। ইহাকে টিউবাল মোল বলে।
প্রশ্ন- টিউবাল রাপচার এবং টিউবাল এবোরশনের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর : টিউবাল রাপচার এবং টিউবাল এবোরশনের মধ্যে নিম্নলিখিত
পার্থক্য রহিয়াছে-
১) টিউবাল রাপচারে ফ্যালোপিয়ান টিউব ফাটিয়া যায় কিন্তু টিউবাল এবোরশন ফাটে না।
২) টিউবাল রাপচারে রক্ত স্রাবের পরিমাণ বেশী হয় কিন্তু টিউবাল এবোরশনে রক্তস্রাবের পরিমাণ কম হয়।
৩) টিউবাল রাপচারে তলপেটে অসহ্য ও তীব্র ব্যথা হয় কিন্তু টিউবাল এবোরশনে তলপেটে ব্যথার তীব্রতা অনেক কম।
প্রশ্ন- গর্ভাবস্থায় এইডস (অওউঝ) রোগের কারণ ও বিস্তার এবং ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর : গর্ভবস্থায় এইডস (AIDS) এর কারণ ও বিস্তার-
১) এই রোগের কারণ হিউম্যান ইম্যুনো ডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস (H.I.V.) এর আক্রমণ।
২) এইডস রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সংগম।
৩) এইডস রোগীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জের মাধ্যমে।
অধিকাংশ এইডস রোগাক্রান্তদের উপসর্গ বাহিরে প্রকাশ পায় না। যাহাদের রক্তে ভাইরাস আছে কিন্তু কোন উপসর্গ দেখা যাইতেছে না, অর্থাৎ রোগ সুপ্তাবস্থায় আছে, তাহাদের গর্ভাবস্থায় রোগের উপসর্গ বাহিরে দেখা যাইতে পারে। মায়ের এইডস থাকিলে তিনভাগের দুইভাগ ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তানের এইডস হয়।
ব্যবস্থাপনা- গর্ভস্থ ভ্রূণ এইডস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছে কিনা যদি প্রসবের আগেই পরীক্ষা দ্বারা জানা যায় তাহা হইলে গর্ভপাত করানো উচিত।
প্রশ্ন- গর্ভবস্থায় যোনিপথে স্রাব বা ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ কি? ইহার কারণ, লক্ষণাবলী ও চিকিৎসা ব্যবস্থা লিখ।
উত্তর: গর্ভাবস্থায় যোনিপথে স্রাব (Vaginal Discharge): গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখ এবং যোনিপথ হইতে একপ্রকার অস্বাভাবিক সাদা ও হলুদ রসক্ষরণ বা স্রাব নির্গত হয় ইহাই ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ।
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বা গর্ভাবস্থায় যোনিপথে স্রাবের কারণ-
১) ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিস দ্বারা যোনিপথ সংক্রমণ।
২) ক্যানডিডা অ্যালবিক্যান্স নামক একপ্রকার জীবাণু দ্বারা যোনিপথে প্রাস নামক এক প্রকার ঘা।
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের লক্ষণ-
১) যোনিপথ দিয়া সাদা বা হলুদ বর্ণের অস্বাভাবিক একপ্রকার স্রাব নির্গমন।
২) যোনিপ্রদেশে ক্ষত ও প্রদাহ।
৩) যোনিপথ ও যোনিপ্রদেশ লালবর্ণ হওয়া।
৪) যোনিপথ ও যোনিপ্রদেশে চুলকানি।
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের চিকিৎসা- পরিশুদ্ধ তুলা দ্বারা মুছিয়া যোনিপথ শুকনা
করিতে হয়। রোগ কঠিন হইলে স্রাব অপসারণের জন্য মুছিয়া দিবার তুলাটি সোডিয়াম বাই কার্বনেট দ্রবে ভিজাইয়া নিতে হয়। প্রদাহ কমানোর জন্য যোনিপথ ও যোনিপ্রদেশ প্রত্যহ (এক সপ্তাহ পর্যন্ত) ১% জেনসিয়ান ভায়োলেটের তরল দ্রবের দ্বারা প্রলেপ দিলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়। উপযুক্ত চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হওয়া উচিত।
প্রশ্ন- হাইড্যাটিফরম মোল কি?
উত্তর: হাইড্যাটিফরম মোল- 'হাইডিটিড' অর্থ জলে ভরা বুঝায়। ভ্রুণের কোরিয়ন নামক ঝিল্লী অর্থাৎ পর্দার অপকৃষ্টতা বশতঃ বিভিন্ন আকৃতির অনেকগুলি জলভরা থলি একত্রিত হইয়া ঐ পর্দায় জন্মিয়া থাকে। এইরূপ একটি থলি হইতে আর একটি উৎপন্ন হয় এবং সর্বগুলি একত্রিত হইয়া একটি আঙ্গুরের থলের ন্যায় আকার ধারণ করে। এই থলিগুলির মধ্যে এলবুমেন ও মিউনিস নামক পদার্থ থাকে। ইহাকে হ্যাইড্যাটিফরম মোল বলে। প্রথম পোয়াতির খুব কমই ইহা হয়। যাহারা বহু প্রসবিনী তাহাদের গর্ভে বিশেষতঃ সন্তান প্রসব করিবার বয়সের শেষভা েএই রোগ হইয়া থাকে। ইহা এক প্রকার অস্বাভাবিক গর্ত।
প্রশ্ন- হাইড্যাটিফরম মোলের লক্ষণাবলী লিখ।
উত্তর: হাইড্যাটিফরম মোলের লক্ষণ-
১) কয়েক মাস ঋতু বন্ধ থাকে তৎসহ বমন (বিশেষতঃ প্রাতঃকালীন বমন) দৃষ্ট হয়।
২) প্রায় ২-৩ মাস হইতেই মাঝে মাঝে রক্তস্রাব হয়। রসপূর্ণ থলিগুলি ছিঁড়িয়াই ঐরূপ পদার্থ নির্গত হইতে থাকে। স্রাবের সহিত খলির অংশ বাহির হইয়া থাকে।
৩) পেট অস্বাভাবিক বড় হয়। ২/৩ মাসের পেট অনেক উঁচু দেখায়।
৪) পেট টিপিলে সন্তানের কোন অঙ্গ অনুভূত হয় না। ভ্রূণের স্পন্দন উপলব্দি করা যায় না।
৫) কোমর ও বস্তিপ্রদেশে বেদনা অনুভূত হয়।
৬) তলপেটে সাধারণতঃ ব্যথা থাকে না।
৭) অতিরিক্ত বমি বা শোথ থাকিতে পারে।
৮) মাঝে মাঝে জরায়ুতে ব্যথা হয়।
৯) পেটের উপর হইতে পরীক্ষা করিলে নরম ও ভিজা ময়দার পিণ্ডের মত মনে হয়।
১০) রক্তক্ষয়ের চিহ্ন বর্তমান থাকে-রোগীকে ফ্যাকাশে মনে হয়। অত্যধিক রক্তচাপ, শোখ, এলবুমিনুরিয়া প্রভৃতি উপসর্গ থাকে।
প্রশ্ন- হাইড্যাটিফরম মোলের চিকিৎসা লিখ।
উত্তর: হাইড্যাটিফরম মোলের চিকিৎসা- জরায়ু হইতে মোল বাহির করিয়া ফেলাই চিকিৎসার মূল লক্ষ্য। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ না হইলে জরায়ু হইতে প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক উপায়ে মোল বাহির হইতে দেওয়া উচিত। জরায়ু গ্রীবা প্রসারিত থাকিলে মোল সহজেই বাহির হইতে পারে। আঙ্গুল দ্বারা পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে সম্পূর্ণ মোল বাহির হইয়াছে কিনা। মোলের কিছু অংশ ভিতরে বাকী থাকিলে আঙ্গুল দ্বারা বাহির করিতে হইবে। জরায়ু ভালভাবে সংকুচিত হইতে থাকিলে ওভাম ফরসেপ ব্যবহার করা যায়। জরায়ু গ্রীবা প্রসারিত না হইলে জরায়ু হইতে মোল বাহির করিবার পূর্বে জরায়ু গ্রীবা প্রসারিত করিতে হইবে। জরায়ুর আকার ১৬-২০ সপ্তাহকাল গর্ভের সমান হইলে ও জরায়ু সংকাচন না থাকিলে অ্যাবডোমিন্যাল হিমটারেমী করিতে হইবে।
প্রশ্ন- মিসড এবোরশান বা কার্নিয়াস মোল কি? ইহার লক্ষণ ও চিকিৎসা লিখ।
উত্তর: মিসড এবোরশন- যখন কোরিয়ন এবং ডেসিডুয়ার মধ্যে বার বার
খুব অল্প অল্প রক্তপাত হয়, ভ্রূণটি রক্তের Clot দ্বারা চারিদিকে পরিবেষ্টিত হয়, তখন ইহা বাহির হইয়া আসে দেখিতে একটি মাংসের বলের মত দেখায়। ইহারই নাম বার্নিয়াস মোল বা মিসড এবোরশান। ইহাতে খুব ধীরে সামান্য রক্তপাত হয় বলিয়া জরায়ু ঠিকমত প্রসবের অবস্থায় আসে না।
মিসড এবোরশানের লক্ষণ- প্রথমে যোনি হইতে সামান্য পরিমাণ রক্তস্রাব হইতে পারে এবং তারপর একটু বেগুনি বর্ণের ডিসচার্জ বাহির হইতে পারে। কিন্তু জরায়ু প্রথমে যেমন আকারে একটু বাড়ে, তারপর আর বৃদ্ধি পায় না। প্রথমে গর্ভের যে সকল লক্ষণ দেখা যায়, পরে তাহা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হইতে পারে। স্বাভাবিক জরায়ু হইতে অবশ্য আকারে, একটু বড় হয়, তবে গর্ভবর্তী নারীর জরায়ুর মত বৃহৎ হয় না।
মিসড এবোরশনের চিকিৎসা- মোলটি যাহাতে স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে
বাহির হইয়া যায় সেজন্য অপেক্ষা করাই ভাল। জোর করিয়া কিছু করা হইলে বেশী রক্তপাত হওয়ার আশংকা আছে। জরায়ু যদি দুর্বল হয় এবং দীর্ঘদিনেও মোলটি বাহির না হয় তখন অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হইয়া অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা অপারেশন করানো উচিত।
প্রশ্ন- কি কি কারণে গর্ভের প্রথম অবস্থায় জননপথে রক্তস্রাব হইতে পারে।
উত্তর: নিম্নলিখিত কারণে গর্ভের প্রথম অবস্থায় জননপথে রক্তস্রাব হইতে পারে। যথা-
১) সারভিক্সের 'পলিপ' হইলে।
২) সারাভিক্সের ইরোশান হওয়ার জন্য।
৩) সারাভিক্সের ক্যানসার হওয়ার কারণে।
৪) যোনির মধ্যে Varicose শিরা দেখা দেওয়ার জন্য।
৫) হাইড্যাটিফরম মোল।
৬) এক্টোপিক গেস্টেশন।
৭) প্রি একলামটিক টক্সিমিয়ার জন্য Accidental রক্তপাত।
প্রশ্ন- ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ডেথ কি? ইহার কারণ ও লক্ষণাবলী কি কি?
উত্তর : ইন্টা-ইউটেরাইন ডেথ- স্ত্রীলোকদের গর্ভের ২৮ সপ্তাহ পর যদি জরায়ু মধ্যে ভ্রুণের মৃত্যু হয় অথবা স্টিলবার্থ প্রসব হয় তাহাকে ইন্টা-ইউটেরাইন ডেথ বলে।
ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ডেথের কারণ-
ক) এন্টিনেটাল কারণ-
১) প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া ও এক্ল্যাম্পসিয়া।
২) এন্টিপার্টাম হেমারেজ।
৩) প্লাসেন্টা প্রিভিয়া।
৪) হাইড্রামনিয়াস ও অলিগো হাইড্রামনিয়াস।
খ) মায়ের কারণ-
১) ক্রনিক ইনফেকশন।
২) ক্রনিক হাইপারটেনশন।
৩) ক্রনিক নেফ্রাইটিস।
৪) ডায়াবেটিস মেলিটাস।
৫) এনিমিয়া বা রক্তহীনতা।
গ) ফিটাল কারণে-
১) ফিটালের ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা।
২) পোস্ট ম্যাচিওরিল।
৩) ফিটাসের রক্তে অক্সিজেনের অভাব এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য হইলে।
৪) ইরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস।
৫) ভ্রুণের অস্বাভাবিক উপস্থিতি।
৬) সঠিত কারণ অনেক সময় অজানা থাকে।
ইন্ট্রা- ইউটেরাইন ডেথের লক্ষণ ও চিহ্ন-
ক) লক্ষণ-
১) ফিটাস নড়াচড়া করে না।
২) পেটের আকার বৃদ্ধি পায় না।
৩) পেটে ব্যাথা থাকে না।
৪) জরায়ু নরম থাকে।
খ) চিহ্ন-
১) ফিটাসের নড়াচড়া পাওয়া যায় না।
২) এক্সরে করিলে তাহার চিহ্ন Spalding পজিটিভ পাওয়া যায়।
৩) ফিটাসের হৃদস্পন্দন পাওয়া যায় না।
৪) জরায়ুর উচ্চতা কমিয়া যায়।
৫) জারায়ুর সংকোচন থাকে না।
প্রশ্ন- টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সী বা গর্ভান্তর কাহাকে বলে?
উত্তর : টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সী বা গর্ভান্তর- হাইপার এমেসিস গ্রাভিডেরামে যখন যথেষ্ট চিকিৎসার পরও রোগিনীর অবস্থা খারাপ হইতে থাকে এবং নার্ভাস সিস্টেম আক্রান্ত হয় অথবা লিভার নষ্ট হইতে থাকে তখন হিস্টোরোটনির মাধ্যমে গর্ভপাত ঘটানোর দরকার। ইহাকে গর্ভান্তর বা টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সী বলে।
প্রশ্ন- যমজ বা বহুগর্ভ কাহাকে বলে? যমজের শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর : যমজ বা বহুগর্ভ- প্রসূতির গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে দুইটি ভ্রুণ থাকিলে তাহাকে যমজগর্ত বলে। সাধারণতঃ মোট আশিটি গর্ভের ভিতর একটিতে যমজ থাকে।
যমজ শ্রেণীবিভাগ- যমজ দুই প্রকারের দেখা যায়। যথা-
১) বাই ওভিউলার,
২) ইউনি ওভিউলার।
১) বাইওডিউলার (Biobular) যমজ দুইটি স্বতন্ত্র ডিম্বানুতে গর্ভ হইলে যুগল ডিম্বাণুজাত বা বাইওভিউলার বলা হয়। এখানে জরায়ুর দুইটি ডিম্বকোষ হইতে একটি সঙ্গে দুইটি Mature Ovum বাহির হইয়া আসে। দুইটিই একসঙ্গে Fertilizer হয়। তাহার ফলে দুইটি সন্তান সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাহারা জরায়ুতে একত্রে থাকিলেও দুইটি পৃথক পৃথক গর্ভফুলের দ্বারা দুইটি সন্তান আটকাইয়া থাকে। এইক্ষেত্রে দুইটি এক লিঙ্গ বা পৃথক লিঙ্গের হইতে পারে। ইহাদের পাসেন্টা, কোরিয়ন, অ্যামনিয়ন সবই আলাদা থাকে।
২) ইউনি ওভিউলার (Uniovular) যমজ- একটি ডিম্বাণু হইতে দুইটি সন্ত ান হইলে একক ডিম্বাণুজাত বা ইউনিওভিউলার যমজ বলা হয়, অর্থাৎ একটি ওভাম এর মধ্যে একই সঙ্গে দুইটি শুক্রকীট প্রবেশ করিয়া দুইটি সন্তান সৃষ্টি হয়। পরে ovum টি বিভক্ত হইয়া যায় এবং জরায়ু মধ্যে দুইটি সন্তানই বড় হইতে থাকে।
চিত্র: যমজ শিশু
ক) শিশু দুটি লঙগিটিডিন্যাল অবস্থায় আছে
খ) শিশু দুটি ট্রান্সভার্স অবস্থায় আছে
এই ক্ষেত্রে একটি গর্ভফুলের সঙ্গে দুইটি সন্তান পৃথক পৃথক নাভিরজ্জু দ্বারা আটকাইয়া থাকে। ইউনিওভিউলার এর ক্ষেত্রে যমজ সর্বদা একই লিঙ্গে (দুইটিই ছেলে বা দুইটিই মেয়ে) থাকে। ইউনিওভিউলার বাই ওভিউলার চাইতে চারগুণ বড় হয়।
প্রশ্ন- যমজের ডায়াগনসিস কিভাবে করিতে হয়?
উত্তর: নিম্নলিখিত উপায়ে যমজের ডায়াগনসিস বা রোগ নির্ণয় করা যায়।
১) গর্ভের প্রতিক্ষেত্রেই জরায়ু স্বাভাবিক হইতে বড় হইতে থাকে।
২) ভ্রুণ দুইটি পাশাপাশি থাকিলে পেটে হাত দিয়া পরীক্ষা করিলে দুইটি মাথা এবং বস্তি বুঝিতে পারা যায়। যদি একটি ভ্রণ আর একটি ভ্রুণের সামনা সামনি, থাকে এবং ইহার সহিত যদি থলিতে জলাধিক্য থাকে, তাহা হইলে দ্বিতীয় ভ্রুণটিকে বুঝতে পারা অত্যন্ত কষ্টকর হয়। তবে পেট হাত দিয়া পরীক্ষা দ্বারা যমজের দুইটি মাথা, দুইটি পিঠ ইত্যাদি আছে তাহা অনুমান করা যায়।
৩) স্টেথোস্কোপের সাহায্যে পরীক্ষা করিলে দুইটি হৃদযন্ত্রের অস্তিত্ব বুঝিতে পারা যায়। হৃদস্পন্দন যদি একই সময়ে দুইজনে পরীক্ষা করেন এবং দুইজনের পরীক্ষার ফলে যদি মিনিটে ১০টি স্পন্দনের পার্থক্য, তবে বুঝিতে হইবে যে যমজ বর্তমান।
৪) যদি যমজ বলিয়া সন্দেহ হয় কিন্তু পরীক্ষা দ্বারা ধরা না পড়ে, তাহা হইলে এক্সরে করিলে (ক) যমজে উপস্থিতি সম্বন্ধে এবং (খ) যমজে অবস্থিতি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যাইবে।
প্রশ্ন- যমজের গর্ভাবস্থায় জটিলতাসমূহ কি কি?
উত্তর: যমজের গর্ভাবস্থায় নিম্নলিখিত জটিলতাসমূহ দৃষ্ট হয়। যথা-
১) জরায়ুর আকার বড় হইলে- জরায়ুর আকার বড় হওয়ার দরুণ প্রসূতি চলাফেরা, উঠা বসাতে কষ্ট হয়, পেট বড় হয় ও ঝুলিয়া পড়ে, ভেরিকোজ ভেন স্পষ্ট হইয়া উঠে। পদদ্বয়ে শোথ হইবার ফলে রক্ত জমিয়া শিরা ফুলিবার জন্য রোগিনী কষ্টবোধ করেন। তাহা ছাড়া যমজের ক্ষেত্রে রোগিনী অজীর্ণ, বমন, অনিদ্রা প্রভৃতি রোগে কষ্ট পায় বেশী।
২) প্রি এ্যামটিক টক্সিমিয়া- যমজের ক্ষেত্রে সৃতিকা আক্ষেপে রোগিনী বেশী মাত্রায় আক্রান্ত হইবার সম্ভাবনা। অল্পেই শরীর বিষাক্ত হইয়া উঠে।
৩) হাইড্রামনিয়াস- যমজের বেলায় হাইড্রামনিয়াস বা জলাধিক্য ও রক্তস্বল্পতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। সাধারণত গর্ভের ৫ মাস উত্তীর্ণ হইবার পূর্বেই ইহা হইয়া থাকে।
৪) অকাল প্রসব বা গর্ভপাত- অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাধিক শিশু গর্ভে আসিলে কালপূর্ব প্রসব হইয়া যায়। ৩-৪ সপ্তাহের ভিতর গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশী।
৫) অনেক সময় বেশী লাগিয়া যমজ সন্তানের একটি গর্ভের প্রথম দিকে মরিয়া যায় এবং আর একটি বাঁচিয়া থাকে। প্রসবের সময় মৃত শিশুটির আকার বিকৃত অবস্থায় দেখিতে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন- যমজ প্রসবের জটিলতাসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর: যমজ প্রসবের জটিলতাসমূহ নিম্নরূপ। যথা-
১) অস্বাভাবিক উপস্থিতি- প্রসবের সময় উভয় যমজের মস্তক ৫০% ক্ষেত্রে নিচের দিকে থাকে, ৪০% ক্ষেত্রে প্রথম ভ্রুণের মাথা এবং দ্বিতীয় ভ্রুণের বস্তি নিচের দিকে থাকে, ৮% ক্ষেত্রে প্রথম ভ্রুণের বস্তি এবং দ্বিতীয় ভ্রুণের বস্তি নিচের দিকে থাকে, ২% ক্ষেত্রে প্রথম ভ্রুণের বস্তি এবং দ্বিতীয় ভ্রণ একে অন্যের লম্বভাবে থাকে অর্থাৎ ভ্রুণের দৈর্ঘ্যাক্ষ ও জরায়ু দৈর্ঘ্যাক্ষ আড়াআড়িভাবে থাকে।
২) অস্বাভাবিক প্রসব- গর্ভস্থ দ্বিতীয় ভ্রুণ ট্রান্সভার্স লাইনে অর্থাৎ দ্বিতীয় ভ্রুণের দৈর্ঘ্যাক্ষ (Long axis) ও জরায়ুর দৈর্ঘ্যাক্ষ আড়াআড়িভাবে থাকা সত্ত্বেও যদি তাহা বুঝা না যায় এবং ঠিক করিয়া দেওয়া না হয় তাহা হইলে প্রসবে বাধা অর্থাৎ
চিত্র: যমজের হেড লকিং
দুইটি শিশুর মস্তক উপস্থিতি
একটি শিশুর বস্তি এবং অন্যটির মস্তক উপস্থিতি
অস্বাভাবিক প্রসব হইবার সম্ভাবনা থাকে। প্রসবের সময় উভয় ভ্রুণই যদি একই সঙ্গে বস্তিদেশে প্রবেশ করে তাহা হইলে উভয়ের ঠোকাঠুকি হইয়া থাকে। এই অবস্থাকে বলে লকড টুইন্স। প্রসবে বাধার আর একটি বিরল দৃষ্টান্ত হইতেছে সংযুক্ত যমজ।
৩) প্রসব সময়ের দৈর্ঘ্য- এই প্রসব প্রায় সাধারণ প্রসবের মত না হইয়া একটু দেরীতে প্রসব হয়।
৪) প্রসবের পর রক্তস্রাব- প্রসবের পর যদি রক্তস্রাব হয় তাহা হইলে বিপদের সম্ভাবনা বেশী।
প্রশ্ন- যমজের ব্যবস্থাপনা আলোচনা কর।
উত্তর: যমজের ব্যবস্থাপনা নিম্নরূপ-
১) গর্ভাবস্থায় ব্যবস্থাপনা- পেট খুব বড় হইবার দরুন এবং পদদ্বয়ে শোখ
হইবার দরুন মায়ের অস্বাচ্ছন্দ বিছানায় পূর্ণ বিশ্রাম দ্বারা কিছুটা লাঘব করা যায়। প্রি-এক্লামটিক টক্সিমিয়া বা আশংকাজনক জলাধিক্যে রোগিনীকে হাসপাতলে ভর্তি করিয়া দেওয়া ভালো। হাসপাতালে বিশ্রাম নিলে গর্ভের সীমা বাড়িয়া যাইবে এবং অকাল প্রসবের পথ বন্ধ হইবে।
২) প্রসব সময়ের ব্যবস্থাপনা- যমজের প্রসব ব্যথা উঠিলেই সাবধানতা' অবলম্বন করা উচিত। নিকটে হাসপাতাল থাকিলে সেখানে ভর্তি করাই ভাল। স্বাভাবিক প্রসব অপেক্ষা এই স্থলে ভ্রুণ মৃত্যুর হার তিনগুন বেশী।
প্রসবের আসন্ন অবস্থায় প্রসূতির রক্তস্রাব হইতে পারে। সেজন্য ০.৫ গ্রাম আর্গোমট্রিন সিরিঞ্জে প্রস্তুত করিয়া রাখা দরকার এবং মূত্রাশয় খালি করিনার প্রয়োজন হইতে পারে বলিয়া জল ফুটাইবার পর ক্যাথিটার ফুটন্ত পানি হইতে উঠাইয়া প্রস্তুত রাখিতে হইবে।
সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী শিশুকে প্রসব করাইতে হইবে। শিশু ভূমিষ্ট হইবার পর নিয়ম অনুযায়ী দুইটি বাঁধন দিয়া নাড়ী কাটিতে হইবে। একটি বাঁধন দিলে দ্বিতীয় শিশুর নাভি-নাড়ী দিয়া রক্তস্রাব হইয়া শিশু মারা যাইতে পারে। এইবার ব্যথা না আসা পর্যন্ত দ্বিতীয় শিশুর জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় শিশুর জন্মের পর দুইটি গর্ভফুলই ভূমিষ্ট হয়।
প্রথম শিশু ভূমিষ্ট হইবার পর প্রসূতিকে ২০-৩০ মিনিট বিশ্রাম করিতে দেওয়া উচিত। ইহার পরও যদি দেখা যায় যে জরায়ু সংকোচন হইতেছে না এবং দ্বিতীয় ভ্রূণটি লম্বালম্বি শয়ানে আছে তাহা হইলে পর্দা ফাটাইয়া পেটের উপর একটি বাঁধন দিতে হইবে। দ্বিতীয় শিশুটিকে প্রসব করাইবার ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করিতে হইবে, কারণ প্রথম শিশু ভূমিষ্ট হইবার সময় জরায়ু মুখ পুরা খুলিয়া যাওয়ায় দ্বিতীয় শিশুটির তড়িৎ প্রসব হয়। প্রসবের ব্যাপার শেষ হইলে পেটে আট করিয়া বাঁধন দিলে প্রসূতি আরামবোধ করে।
৩) কখন ডাক্তার ডাকা প্রয়োজন-
১) পরীক্ষা দ্বারা রোগ নির্ণয় সম্বন্ধে সন্দেহ থাকিলে,
২) উপস্থিতি সম্বন্ধে সন্দেহ থাকিলে,
৩) প্রসব ব্যথার গতি স্বাভাবিক না হইলে,
৪) লম্বালম্বি শয়ান না হইয়া অন্য কোন শয়ান হইলে।
৫) সুতিকা কালের সময়কার ব্যবস্থাপনা- সূতিকা কালের সময়ে জরায়ুর সংকোচন স্বাভাবিকের অপেক্ষা অধিকতর শ্লথ গতিতে হইয়া থাকে এবং গর্ভফুল যেস্থানে জুড়িয়া থাকে, তাহা এই স্থলে অধিকতর বেশী হইবার ফলে জরায়ু হইতে একবার স্রাব অধিক' পরিমাণে নির্গত হয়। প্রসূত শিশুকে মায়ের বুকের দুর্ঘ খাওয়ানোই রক্ষণাবেক্ষণের একমাত্র পন্থা। তাহা না হইলে কৃত্রিম উপায়ে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করিয়া ঠিকমত ওজন বাড়াইবার পর হাসপাতাল হইতে ছাড়িয়া দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন- রাক্ষস সন্তান বা ডেমনস কাহাকে বলে? ইহার প্রকারভেদ লিখ।
উত্তর : রাক্ষস সন্তান বা ডেমনস- অনেক সময় দুইটি যমজ সন্তান (Uniovular Twin) একসঙ্গে গর্ভের মধ্যেই জুড়িয়া থাকে এবং তাহারা ভাগ হয় না। তাহার ফলে প্রসবের পর দেখা যায় দুইটি সন্তান একত্র জুড়িয়া এক অদ্ভুত সন্ত ান সৃষ্টি হইয়াছে। তাহাদেরকে রাক্ষস সন্তান বলে। প্রকৃতপক্ষে রাক্ষস নয়। অনেক সময় অপারেশন করিয়া তাহাদের পৃথক করা সম্ভব, কখনও বা তাহা সম্ভব নহে।
প্রকারভেদ- নানা ধরণের রাক্ষস সন্তান দেখা যায়। যেমন-
১) পিঠের দিকে দুইটি জুড়িয়া একটি হয়। তাহাকে বলে Pyopagus।
২) কখনও পেটের দিকে দুইটি জুড়িয়া থাকে। তাহাকে বলে Thorocopagus I
৩) কখনও দুই মাথা চার পা হয় কিন্তু হাত ও দুইটি দেহ জুড়িয়া থাকে। এইরূপ খুব কম হয়। ইহাকে বলে Craniophagus |
৪) কখনও দুইটির পাছা জুড়িয়া থাকে।
প্রশ্ন- ভ্রুণ বা শিশু গর্ভে জীবিত আছে কিনা তাহা জানার উপায় কি?
উত্তর: ভ্রূণ বা শিশু গর্ভে জীবিত না থাকিলে-
১) ভ্রুণ বা শিশুর দেহ বাড়িবে না।
২) ভ্রুণের নড়াচড়া মা অনুভব করিবেন না।
৩) স্টেথোস্কোপ পরীক্ষায় ভ্রুণের বা শিশুর হৃদস্পন্দন শুনিতে পাওয়া যাইবে না।
৪) জরায়ুর বৃদ্ধি বন্ধ হইয়া যাইবে।
৫) এক্সরে বা আল্টাসাউন্ড পরীক্ষায় দেখা যাইবে যে শিশুর মাথায় হাড়গুলি একটি আর একটির উপরে আসিয়া পড়িয়াছে। এই কারণে পেটের ডাক্তারী পরীক্ষায় ডিমের খোসা হাতে চাপিলে যেমন খচখচ শব্দ হয়, সেই রকম শব্দ হয়।
৬) Late stage এ শিশু বেশ কিছুদিন আগে মরিয়া গিয়া থাকিলে যোনিপথ এর মাধ্যমে পরীক্ষায় শিশুর নরম মাথা বোঝা যায়।
প্রশ্ন- টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সী বা গর্ভাবস্থায় বিষোদুষ্টতা বলিতে কি বুঝ? টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সীগুলি কি কি?
উত্তর: টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সী- গর্ভের শেষের দিকে গর্ভিনীর কতকগুলি গুরুতর অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থা ছাড়া অন্য সময় এই অবস্থাগুলি দেখা যায় না। এই অবস্থাগুলি বাহ্যিক প্রকাশের ব্যাপারে একটি অবস্থার সহিত আর একটি অবস্থার কোন সম্পর্ক নাই। এই অস্বাভাবিক অবস্থাগুলিকে একত্রে টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সী বা গর্ভাবস্থায় বিষোদুষ্টতা বলে।
টক্সিনিয়া অব প্রেগন্যান্সী সমূহ গর্ভাবস্থায় টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সী সমূহ হইল- বমি, প্রস্রাবের এলবুমিন, প্রি- এক্যাম্পশিয়া, লিভারের ইয়োলো এট্রোফি প্রভৃতি।
প্রশ্ন- টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সী কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর: টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সীর প্রকারভেদ টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সী নিম্নবর্ণিত ৪ ভাগে বিভক্ত। যথা-
১) গর্ভকালীন অতি বমন বা হাইপার এমোসিস গ্রাভিডেরাম বা পার্নিসাস বমি।
২) প্রি এক্র্যাম্পশিয়া বা প্রস্রাবের সঙ্গে এলবুমিন।
৩) এ্যাস্পশিয়া।
৪) গর্ভকালীন অত্যাধিক হলুদ চক্ষু, লিভারের ইয়েলো এট্রোফি প্রভৃতি।
প্রশ্ন- টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সীর কারণসমূহ কি কি?
উত্তর: টক্সিমিয়া অব প্রেগন্যান্সীর কারণ- ইহার সঠিক কারণ অজ্ঞাত হইলেও নিম্নবর্ণিত কারণগুলিকে ইহার সম্ভাব্য কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়।
১) দৈহিক ও মানসিক বিপর্যয়ের জন্য ইহা হইতে পারে।
২) টক্সিন নামক বস্তু রক্তে অবস্থানের ফলে ইহা হইতে পারে। যেমন-সন্তানের শরীর হইতে নানাবিধ ক্ষতিকর বস্তু বাহির হইয়া মায়ের রক্তে মিশ্রিত হওয়া এবং মায়ের অস্ত্র হইতে নানাবিধ ক্ষতিকর বস্তু মায়ের রক্তে মিশ্রিত হওয়া।
৩) যে সকল মহিলার ডায়াবেটিস মেলিটাস আছে তাহাদের ইহা বেশী হয়।
৪) মায়ের শরীরে বিভিন্ন হরমোনের ক্রিয়ার তারতম্য ঘটিলে।
৫) হাইড্রামনিয়াসের ফলে।
৬) জরায়ুর বৃদ্ধির দরুণ উহার দ্বারা লিভার ও কিডনীর রক্তবহানালীসমূহের উপর চাপ পড়া ও উহাদের নিয়মিত কার্য ব্যাহত হওয়া।
৭) এসেনসিয়্যাল হাইপারটেনশনের ফলে।
৮) ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর অভাব বশতঃ।
৯) একক গর্ভ অপেক্ষা বহু গর্ভে (যমজ) ইহা বেশী হয়, বিকৃত গর্তে বা হাইড্যাটিফরম মোল হইলে।
প্রশ্ন- প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া কাহাকে বলে?
উত্তর: প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া হইলে গর্ভাবস্থার এক প্রকার টক্সিমিয়া। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে গর্ভিনীর হাতে পায়ে শোথসহ মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, চোখে ঝাপসা দেখা, উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাবে এলবুমিন ও ইন্ডিমা সম্মিলিত রোগকে প্রি-এ্যামশিয়া বলে।
প্রশ্ন- প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া অব টক্সিমিয়ার কারণ, লক্ষণাবলী ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে বর্ণনা দাও।
উত্তর: প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া অব টক্সিমিয়ার কারণ- ইহার প্রকৃত কারণ সঠিকভাবে এখনও জানা যায় নাই। তবে নিম্নলিখিত অবস্থায় এই রোগের আক্রমণ ঘটিতে পারে।
১) প্রথম গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে ইহা দেখা যায়।
২) যমজ পেটে আসিলে ইহা হইতে পারে।
৩) সন্তানের শরীর হইতে নানাবিধ ক্ষতিকর বস্তু বাহির হইয়া মায়ের রক্তে মিশিলে।
৪) মায়ের অস্ত্র হইতে নানাবিধ ক্ষতিকর বস্তু বাহির হইয়া মায়ের রক্তে মিশিলে।
৫) হাইড্যাটিফরম মোল অর্থাৎ ভ্রুণের বিকৃতি ঘটিলে।
৬) বহুমূত্র রোগ।
৭) এসেনসিয়্যাল হাইপারটেনশন অর্থাৎ আপাত লক্ষণহীন উচ্চ রক্তচাপ।
৮) জরায়ু বৃদ্ধির ফলে উহার দ্বারা লিভার ও কিডনীর রক্তবাহী নালিকাসমূহের উপর চাপ পড়া ও উহাদের নিয়মিত কার্য ব্যাহত হওয়া।
৯) ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর অভাব বশত।
প্রশ্ন- প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া অব টক্সিমিয়ার লক্ষণাবলীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া অব টক্সিমিয়ার লক্ষণাবলী-
১) রক্তের চাপ অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়া। সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ১৪০ হইতে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হইতে পারে।
২) অবিরত শিরঃপীড়া।
৩) অবিরাম বমি।
৪) মানসিক অবসাদ, মাথাঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, নিদ্রা কম।
৫) পাকস্থলীতে ব্যথা ও অবিচ্ছেদ মলরোধ।
৬) পদদ্বয়ের স্ফীতি। কখনও কখনও মুখমণ্ডল ও হাতে শোথ হয়।
৭) অস্পষ্ট দৃষ্টি।
৮) স্বল্প ও ঘন রঙ বিশিষ্ট প্রস্রাব। প্রস্রাবে এলবুমেন, এসিটোন ও কাষ্ট থাকে।
৯) দেহের ওজন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। গর্ভকালে প্রতিমাসে স্বাভাবিকভাবে ৫ পাউন্ড বৃদ্ধি পায়। একমাসে ইহার অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাইলে টক্সিমিয়া রোগ হইতেছে বুঝিতে হইবে।
১০) ইহা এক্যাম্পটিক ফিট আরম্ভ হওয়ার পূর্বাবস্থা।
প্রশ্ন- প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া অব টক্সিমিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে বর্ণনা দাও।
উত্তর: প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া অব টক্সিমিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা- রোগের কারণ নির্ণয় করিয়া তাহা রোধ করার জন্য আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। রোগিনীর ওজন মাসে ৫ পাউন্ড বা সপ্তাহে ২ পাউন্ডের বেশী বৃদ্ধি পাইলে রোগিনীকে ঘনঘন চেক আপ করাইতে হইবে। খাদ্যে লবণের পরিমাণ সাধ্যমত কমাইতে হইবে। রক্তচাপ ১৪০/৯০ বা ইহার অধিক হইলে এবং রক্তচাপের সহিত মূত্রে এলবুমিন থাকিলে কালবিলম্ব না করিয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত। উল্লেখ্য যে, যোনিপথের স্রাব হইতে মূত্র দূষিত হইয়া কেবলমাত্র মূত্রে এলবুমিনের মাত্রা বাড়িয়া যাওয়া সম্ভব এবং মূত্র পরীক্ষা করিয়া ইহার প্রতিকারের ব্যবস্থা করা উচিত। হাসপাতালে ভর্তি করার উদ্দেশ্য হইল উপযুক্ত তত্ত্বাবধান, বিশ্রামের ব্যবস্থা, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা, রোগিনীকে সাধারণ খাবার দিতে হইবে। প্রতিদিন যাহাতে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় সেদিকে নজর রাখা উচিত। প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়ার গতি মৃদু হইলে এই অবস্থায় গর্ভশেষ করিয়া দেওয়ার সময় কয়েক সপ্তাহ পিছাইয়া দেওয়া যায়, ইহাতে শিশুর বাঁচিয়া থাকার অনেক বেশী সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু গতি তীব্র এবং কঠিন হইলে এবং ঔষধ পত্রে ২৪ ঘন্টায় কোন উন্নতি না হইলে বিলম্ব না করিয়া গর্ভশেষ করিয়া দেওয়া উচিত। তাহাতে মায়ের জীবন রক্ষা পাইবে।
প্রশ্ন- প্রি-এক্ল্যাম্পপিশয়ার ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় কিভাবে করা হয়?
উত্তর: প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়ার ডায়াগনোসিস-
ক) বর্ধিত রক্তচাপ,
খ) প্রস্রাবে এলবুমিন এবং
গ) শোথ হইলে এই লক্ষণ তিনটির মধ্যে প্রথমে যে লক্ষণটি প্রকাশ পায় তাহা হইল বর্ধিত রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন।
প্রি-এক্ল্যামশিয়ার মৃদু রক্তচাপ ১৪০/৯০ হইতে ১৬০/১০০, ভয়ানক রক্তচাপ ১৬০/১০০ বা ইহার উপরে উঠে। ইহার পর দেখা যায় প্রস্রাবে এলবুমিন ও শোথ। গর্ভাবস্থায় ৮ মাসের পর হইতে ইহা সাধারণত দেখা যায়। প্রথম অবস্থায় শোথের লক্ষণ খুব সামান্য, কেবলমাত্র পা ফোলে কিন্তু কঠিন অবস্থায় সর্ব শরীরে শোখ প্রকাশ পায়। যেমন-হাতে, পায়ে, মুখে, যোনিদেশে, তলপেটের দেওয়ালে, স্যাক্রামে এই শোথের লক্ষণ দেখা দেয়। এই অবস্থায় ১) পাকস্থলীতে ব্যথা, ২) বমি, ৩) দুঃসহ মাথা যন্ত্রণা, ৪) দৃষ্টিক্ষীণতা বা দৃষ্টিহীনতা প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন- প্রি-এক্লাম্পশিয়া অব টক্সিমিয়ার জটিলতাসমূহ কি কি?
উত্তর: প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া অব টক্সিমিয়ার জটিলতা-
ক) মায়ের ক্ষেত্রে-
১) ইহা এক্ল্যাম্পশিয়া অর্থাৎ ফিট আরম্ভ হইবার পূর্বাবস্থায়। ইহার পর পরই এক্যাম্পশিয়া দেখা দেয়।
২) অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ বা accidental haemorrhage.
৩) বর্ধিত রক্ত চাপ বা Hypertention.
৪) প্রস্রাবের পরিমাণ কমিয়া যাওয়া বা Oliguria.
৫) প্রস্রাবের বন্ধ হইয়া যাওয়া বা Anuria.
৬) চক্ষুর নানা প্রকার উপসর্গ, দৃষ্টিক্ষীণতা ও দৃষ্টিহীনতা' প্রভৃতি।
৭) শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর রক্তক্ষরণ।
৮) শক বা অভিঘাত Shock.
খ) শিশুর পরিণতি-
১) শিশু জরায়ুতেই মরিয়া যাইতে পারে।
২) কালপূর্ব প্রসব (Pre-matuer birth) হইতে পারে।
প্রশ্ন- এক্ল্যাম্পশিয়া বা সূতিকা আক্ষেপ কাহাকে বলে? ইহার শ্রেণী বিভাগ কর।
উত্তর: এ্যাম্পশিয়া- এক্ল্যাম্পশিয়া হইল গর্ভকালের এক ধরণের অতিরিক্ত টক্সিমিয়া যাহার ফলে নির্দিষ্ট ধরণের ফিট বা অজ্ঞান অবস্থা হয়। অবশ্য ফিট হওয়ার পূর্বে সব সময় টক্সিমিয়ার জন্য প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়ার লক্ষণ দেখা যাইবে। আবার কোন কোন সময় প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়ার লক্ষণগুলি ঠিকমত বুঝা যায় না; হঠাৎ রোগিনী ফিট পড়িতে শুরু করে। প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়ার লক্ষণগুলি সহিত অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাবে এলবুমিন, ইডিমা, শোথ প্রভৃতির সহিত বিচুনী বা মূর্ছা থাকিলে তাহাকে এক্ল্যাম্পশিয়া বলে।
ইহাতে মৃগীরোগীর ন্যায় রোগিনীর হাত পা আক্ষিপ্ত হইতে থাকে, ছয় মাসের পূর্বে এই প্রকার ফিট কদাচ দেখা যায়, আট মাস হইতে পূর্ণ গর্ভাবস্থা পর্যন্ত সময়ের ভিতর এই রোগ সর্বাপেক্ষা ঘন ঘন প্রকাশ পায়। প্রসববেদনা আরম্ভ হওয়ার পূর্বে, সময়ে বা প্রসব হইয়া যাওয়ার পরও ফিট প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন- এক্ল্যাম্পশিয়া বা সূতিকা আক্ষেপের শ্রেণী বিভাগ কর।
উত্তর: এক্যাম্পশিয়ার শ্রেণীবিভাগ-
ক) সময়ের উপর নির্ভর করিয়া- সময়ের উপর নির্ভর করিয়া ইহাকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) এন্টি পার্টাম এক্ল্যাম্পশিয়া- গর্ভসঞ্চারের পর হইতে প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ্যামশিয়া দেখা দিলে ইহাকে এন্টিপার্টাম এ্যামশিয়া বলে।
২) ইন্ট্রা পার্টাম এ্যামশিয়া- প্রসব আরম্ভ হইবার সময়ে এ্যামশিয়া দেখা দিলে ইহাকে ইন্ট্রা পার্টাম এ্যামশিয়া বলে।
৩) পোষ্ট পার্টাম এ্যামশিয়া- প্রসব শেষ হওয়ার পর ২৮ ঘন্টার মধ্যে এক্ল্যাম্পশিয়া দেখা দিলে ইহাকে পোষ্ট পার্টাম এক্ল্যাম্পশিয়া বলে।
খ) লক্ষণের দিক হইতে- লক্ষণের দিক হইতে ইহাকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) পূর্বলক্ষণ- রোগিনী মাথা ব্যথা এবং দৃষ্টিক্ষীণতার কথা বলিয়া থাকেন। অনেক সময় পাকস্থলীতে ব্যথা ও বমি হয়।
২) আক্রমণ- সন্যাস রোগে যেমন মূর্ছা হয়, এই রোগেও ঠিক তেমনি মূর্ছা হইয়া থাকে। মূর্ছা আরম্ভ হইবার পর সামান্য পেশী সংকোচন দেখা দেয়। ইহার পর রোগিনী সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকে এবং দেহের পেশীগুলি শক্ত হইয়া যায়।
৩) খিঁচুনি- রোগাক্রমণের পর দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের খিঁচুনি আরম্ভ হয়, এই অবস্থায় মুখ হইতে লালা পড়ে।
৪) নিস্তেজ অবস্থা- অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিচুনি ধীরে ধীরে কমিয়া গিয়া রোগিনী অজ্ঞান অবস্থায় পড়িয়া থাকে এবং শব্দ করিয়া নিঃশ্বাস নিতে থাকে। মুখমণ্ডলের বিবর্ণতা ধীরে ধীরে চলিয়া যায়। এই অবস্থায় সাধারণতঃ বারবার খিঁচুনি হয়।
প্রশ্ন- এক্ল্যাম্পশিয়ার কারণ, লক্ষণাবলী ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: এক্যাম্পশিয়ার কারণ- ইহার সঠিক কারণ এখনও অজ্ঞাত থাকিলেও নিম্নালিখিত বিষয়গুলিকে ইহার কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়।
১) প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়ার জটিলতা স্বরূপ ইহা হইতে পারে।
২) বহুগর্ভ (যমজ) পেটে আসিলে এবং বিকৃতগর্ভ (হাইড্যাটিফরম মোল) হইলে।
৩) সন্তানের শরীর হইতে নানাবিধ টক্সিন বাহির হইয়া মায়ের রক্তে মিশিলে বা মায়ের অস্ত্র হইতে টক্সিন বস্তু মায়ের রক্তে মিশিলে।
৪) ডায়াবেটিস মেলিটাস হইলে।
৫) এসেনসিয়্যাল হাইপারটেনশান অর্থাৎ আপাত লক্ষণহীন উচ্চ রক্তচাপে।
৬) জরায়ু বৃদ্ধির ফলে উহার দ্বারা লিভার ও কিডনীর রক্তবাহী নালিকাসমূহের উপর চাপ পড়া এবং উহাদের নিয়মিত কার্য ব্যাহত হয়।
৭) হাইড্রামনিয়াসের ফলে।
প্রশ্ন- এক্ল্যাম্পশিয়ার লক্ষণাবলী লিখ।
উত্তর: এক্ল্যাম্পশিয়ার লক্ষণাবলী- এক্ল্যাম্পশিয়ার লক্ষণাবলী নিম্নে প্রদত্ত হইল।
১) এ্যামশিয়ার পূর্ব লক্ষণ হিসাবে রোগিনীর মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, সর্বদা বমি, কোষ্ঠবদ্ধতা এবং চোখে ঝাপসা দেখা প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেক সময় পাকস্থলীতে ব্যথা ও বমি হয়।
২) মূর্ছা বা ফিট দেখা দেয়। ফিট আরম্ভ হওয়ার পর সামান্য পেশী সংকোচন দেখা দেয়। ইহার পর রোগিনী সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকে। দেহের পেশীগুলি শক্ত হইয়া যায়। নিঃশ্বাস বন্ধ হয় এবং মুখমণ্ডল নীলবর্ণ ধারণ করে।
৩) দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে খিঁচুনি হয়। বার বার খিচুনি হইতে পারে।
৪) প্রস্রাব কম হয়, প্রস্রাবে এলবুমিন পাওয়া যায়।
৫) রোগিনীর নাড়ীর গতি ও রক্তের চাপ বাড়িয়া যায়। রক্তচাপ সিস্টোলিক ১৮০-২০০ পর্যন্ত উঠিতে পারে। ডায়াস্টলিক চাপ ৯০ হইতে ১২০ বা ১৪০ পর্যন্ত হয়।
৬) রোগিনীর মুখ ও দেহের নিম্নাংশে ফোলা থাকে।
৭) হৃদপিণ্ডের দ্বিতীয় শব্দ উচ্চতর শব্দযুক্ত।
প্রশ্ন- এক্ল্যাম্পশিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর : এক্যাম্পশিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা-
১) রোগিনীকে বাড়ীতে না রাখিয়া চিকিৎসকের পরামর্শ মত হাসপাতালে পাঠানো উচিত।
২) রোগিনীর ঘর নিস্তব্দ ও অন্ধকারময় রাখিতে হইবে। জল ছাড়া অন্য খাদ্য দেওয়া বন্ধ রাখিতে হইবে।
৩) রোগিনীর যাহাতে কোন প্রকার আঘাত না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে। মুখে গ্যাস বা চামড়ার ডাটি দিয়া রাখা উচিত।
৪) রোগিনী বিছানা হইতে যাহাতে পড়িয়া না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে।
৫) রোগিনীর যাহাতে শয্যাক্ষত না হয় এবং ফুসফুসে শ্লেষ্মা না জমে সেদিকেও লক্ষ্য রাখিতে হইবে।
৬) রোগিনীর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ও নাড়ীর গতির হার, দেহের তাপমাত্রা ও অস্থিরতার প্রতি লক্ষ্য রাখিতে হইবে।
৭) অক্সিজেনের ব্যবস্থা এবং অক্সিজেন দেওয়ার যন্ত্র প্রস্তুত রাখিতে হইবে।
৮) ক্যাথিটার দিয়া প্রস্রাব করানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
৯) ৪৮ ঘন্টা পর মুখে পানীয় দেওয়া ও ধীরে ধীরে কঠিন খাদ্যের ব্যবস্থা করা উচিত।
১০) প্রসব বেদনা না থাকিলে ৪৮ ঘন্টার পর পর্দা ফাটাইয়া দেওয়া উচিত বা প্রথমে পেট ও পরে জরায়ু কাটিয়া শিশুকে বাহির করা উচিত। প্রসব বেদনা থাকিলে পর্দা ফাটাইয়া তাড়াতাড়ি প্রসব করানো উচিত। মরা শিশু থাকিলে রোগিনীকে অজ্ঞান করিয়া শিশুর মাথা ফুটা করিয়া শিশুকে বাহির করিতে হইবে।
প্রশ্ন- এক্ল্যাম্পশিয়ার ডায়াগনসিস বা রোগ নির্ণয় কিভাবে করা হয়?
উত্তর: এক্যাম্পশিয়ার ডায়াগনসিস বা রোগ নির্ণয়- যখন একটি নারী
গর্ভবতী থাকে এবং প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া জাতীয় টক্সিমিয়া দেখা দেয় তখন রোগ নির্ণয় কঠিন হয় না। কিন্তু অনেক ধাত্রী এমন গর্ভবতী নারী দেখিতে পান যাহার আগের ইতিহাস কিছুই জানা নাই অথচ তাহার ফিট হইতেছে তখন রোগ নির্ণয় করা একটু অসুবিধাজনক হয়। এইরূপ অবস্থায় রোগিনীর কেন মূর্ছা হইতেছে তাহার কারণ নির্ধারণ করিতে হইবে। সাধারণতঃ নিম্নলিখিত কারণে মূর্ছা হইতে পারে। যথা-
১) হিস্টিরিয়া রোগ।
২) মৃগী রোগ বা Epilepsy
৩) সন্যাস রোগ বা Apoplexy।
৪) প্রস্রাবের স্বল্পতা বা Uraemia।
৫) বিষাক্ত পদার্থ সেবন বা Poisning।
হিস্টিরিয়া হইলে রোগিনী পূর্ণ অজ্ঞান হয় না। আগের হিস্টিরিয়ার ইতিহাস- সামাজিক আঘাত, শোক প্রভৃতির ইতিহাস পাওয়া যায়। প্রস্রাবে এলবুমিন থাকিবে না।
মৃগী রোগেও আগের ইতিহাস পাওয়া যাইবে। রোগিনীর প্রস্রাব ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকিবে।
কিন্তু এক্যাম্পশিয়া হইলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পাইবে ও প্রস্রাবে এলবুমিন পাওয়া যাইবে।
প্রশ্ন- এক্ল্যাম্পশিয়ার জটিলতাসমূহ (Complication) বা জটিল অবস্থাসমূহ কি কি?
উত্তর: এক্যাম্পশিয়ার কতকগুলি জটিল উপসর্গ দেখা দেয়। যথা-
১) পরপর ফিট বা ৮-১০ বার ফিট হয়।
২) দেহের তাপ বৃদ্ধি পায়। ১০৩° পর্যন্ত তাপ উঠিতে পারে।
৩) হৃদপিণ্ড প্রসারিত হয়।
৪) প্রেসার ১৮০-১৯০ বা আরও বেশী হইতে পারে।
৫) ফুসফুসে জল বা কফ জমিতে পারে।
৬) প্রস্রাব ফুটাইলে তাহা Solid হইয়া যায়।
৭) প্রস্রাব কমিয়া যায় বা সম্পূর্ণ বন্ধ হইয়া যায়।
৮) প্রস্রাব কমিয়া গিয়া ফুলা দেখা দেয়। অনেক সময় তাহা নাও হইতে পারে।
৯) ফোলাভাব দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
১০) গভীর মোহ (Coma) অবস্থা আসিতে পারে।
১১) জন্ডিস বা ন্যাবা দেখা দিতে পারে। গা, হাত, পা, চোখ সব হলুদাভ হইয়া যায়।
১২) প্রসবের সময় বা পরে ফিট চলিতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ