ষষ্ঠ অধ্যায়
অস্বাভাবিক প্রসব
Abnormal Labour
প্রশ্ন- অবস্ট্রাকটেড লেবার বা প্রসবে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা বলিতে কি বুঝ?
উত্তর: প্রসবে বাধা (Obstructed Labour): গর্ভিনীর প্রসবের সময় তীব্র জরায়ু সংকোচন থাকা সত্ত্বেও শিশুর উপস্থিতকারী অংশের বা গ্রেজেন্টিং পার্টের জননপথ দিয়া কোন প্রকার অগ্রগতি না হইলে মনে করিতে হইবে যে উপস্থিতকারী অংশ বাধাপ্রাপ্ত হইয়াছে। ইহাকেই প্রসবে প্রতিবন্ধকতা বা বাধা বলা হয়। প্রসব পথ এবং অংশ ত্রুটিযুক্ত হইবার দরুণই ঘটিয়া থাকে।
প্রশ্ন- প্রসবে প্রতিবন্ধকতার কারণগুলি কি?
উত্তর : অবস্ট্রাকটেড লেবার বা প্রসবে বাধার কারণ- প্রসবে বাধার কারণগুলি নিম্নরূপ। যথা-
প্রসূতির ত্রুটিপূর্ণ অবস্থা-
ক) সংকুচিত বস্তিদেশ।
খ) বস্তিদেশে আব।
গ) জরায়ু ও ওভেরীর টিউমার।
ঘ) সারাভিক্সের অত্যন্ত সংকীর্ণতা।
প্রসূত অংশ-
ক) স্কন্ধ উপস্থিতি।
খ) কপাল উপস্থিতি।
গ) মুখ উপস্থিতি।
ঘ) পশ্চাৎদিক উপস্থিতি।
৫) বড় শিশু।
চ) গর্ভস্থ শিশুর গুরুতর অস্বাভাবিকতা।
ছ) টউন লকিং।
বুঝিবার সংকেত-
ক) উপস্থিতকারী অংশ পেলভিসের প্রবেশ করে না।
খ) জরায়ু মুখ ধীরে ধীরে খোলে।
গ) পর্দা ফাটিয়া যায়।
প্রশ্ন- প্রসবে প্রতিবন্ধকতার জটিলতাসমূহ কি কি?
উত্তর : প্রসবে বাধার জটিলতা প্রসবে বাধার জটিলতাসমূহ নিম্নরূপ।
যথা-
ক) মাতার দিক হইতে:
ক) জরায়ু ফাটিয়া যাওয়া।
খ) মাতার মৃত্যু হওয়া।
গ) মূত্রাশয় ফুটা হইয়া যোনিপথের সহিত তাহার যোগ হওয়া। ফলে যোনিপথ দিয়া প্রস্রাব বাহির হয়।
খ) গর্ভস্থ শিশুর দিক হইতে:
ক) জরায়ুতে শিশুর মৃত্যু এবং মৃত শিশু ভূমিষ্ট হওয়া।
খ) ভূমিষ্ট হওয়ার সময় হইতে একমাসের মধ্যে শিশুর মৃত্যু হওয়া।
প্রশ্ন- প্রসবে প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: প্রসবে প্রতিবন্ধকতায় নিম্নলিখিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা যাইতে পারে। যথা-
ক) গর্ভাবস্থায়:
১) প্রতিবন্ধকতার কারণ নির্ণয়।
২) নয় মাসের সময় ডাক্তারকে দিয়া পরীক্ষা করিয়া কোন প্রকার আকারগত বৈষম্য আছে কিনা তাহা নির্ণয় করা।
৩) কাঁধ- উপস্থিতিতে পেটের উপর দিয়া হাত দিয়া ঘুরাইয়া শিশুর অবস্থান পরিবর্তন করা।
৪) মাথা ফুটা করিয়া দিবার বা ক্রেনিওটমির ব্যবস্থা করা।।
খ) প্রসবের সময়:
১) বাধার কারণ বর্তমান থাকিলে জরায়ুর নিম্নাংশ কাটিয়া দেওয়া বা সিজারিয়ান সেকশান করা।
২) প্রসবের ব্যাপারে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন থাকিলে প্রসবের পূর্বে এবং পরে শিরার মধ্যে সূঁচ দিয়া গ্লুকোজ ঢুকানো।
৩) মাতা ও শিশুর শক এর হাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ঠিক রাখা।
৪) মাতাকে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা ঠিক রাখা।
প্রশ্ন- এমব্রায়োটমি (Embryotomy) বা মাতৃগর্ভে মৃত শিশুর অপারেশন যারা নিষ্কাশন বলিতে কি বুঝায়? কি কি ভাবে ইহা করা হয়?
উত্তর : এমব্রায়োটনি (Embryotomy) মাতৃগর্তে শিশু মৃত্যু হইলে তাহাকে যদি স্বাভাবিকভাবে প্রসব না করানো যায় তবে অপরেশন করিয়া মাতৃগর্ড হইতে বাহির করিতে হয়। এই অপারেশনের নাম এমব্রায়োটনি।
এই অপরেশনে মৃত শিশুকে কাঁচি দিয়া কাটিয়া বাহির করিতে হয়। এই ক্যাঁচিয় নাম Embryotomy Scissors। যদি মৃত শিশুর গলা ফাটিতে হয়, তবে অপারেশনের নাম ডিক্যাপিটেশন। যদি পেটে এবং বুক কাটিতে হয় তবে অপারেশনের নাম Evisceration। যদি মেরুদণ্ড কাটিতে হয় তবে তাহাকে বলে Spondylotomy। যদি শিশুর স্কন্ধদ্বয় আটকাইয়া যায় এবং শিশুকে বাহির করিতে মুস্কিল হয় তবে Cllidotomy অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে শিশুর মৃত্যু হইলেও স্বাভাবিকভাবে মৃত শিশুর প্রসব করানো সম্ভব হয়।
প্রশ্ন- ইউটেরাইন ইনারশিয়া কি? উহা কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর : ইউটেরাইন ইনারশিয়া ইউটেরাইন ইনারশিয়া অর্থ হইল, জরায়ুতে প্রসব ব্যথার কমজোর এবং জরায়ুর নিষ্ক্রয়তা। স্বাভাবিক প্রসবে যে ধরনের ব্যথ্যা হয় যদি প্রসবের সময় তদপেক্ষা কম যা সামান্য এবং অনিয়মিত ব্যথা হয় এবং মৃদু জরায়ু সংকোচন হয় তাহাকে ইউটেরাইন ইনারশিয়া বলে। ইউটেরাইন ইনরাশিয়ার প্রকারভেদ- জরায়ুর নিক্রিয়তাকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) প্রাইমারী ইউটেরাইন ইনারশিয়া বা নিষ্ক্রিয় জরায়ু।
২) সেকেন্ডারী ইউটেরাইন ইনারশিয়া বা ক্লান্ত জরায়ু।
১) প্রাইমারী ইউটেরাইন ইনারশিয়া- ইহার অপর নাম নিষ্ক্রিয় জরায়ু। অলস
এবং নিষ্ক্রিয় জরায়ুতে প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত ব্যথার জোর কম থাকে, প্রথমে সামান্য ব্যথা হয় এবং ইহা অনিয়মিত হয়, জরায়ুর সংকোচন ফলপ্রদ হয় না।
২) সেকেন্ডারী ইউটেরাইন ইনারশিয়া- ইহার অপর নাম ক্লান্ত জরায়ু। ইহাতে জরায়ু সংকোচন খুব তীব্রভাবে হইবার ফলে জরায়ুর সমস্ত শক্তি ব্যয়িত হইয়া যায় এবং জরায়ু আর সংকুচিত হইতে পারে না। ইহাতে ব্যথা হঠাৎ ক্রমে ক্রমে কমিয়া যায় এবং জরায়ু ক্লান্ত হইয়া পড়ে।
প্রশ্ন- ইউটেরাইন ইনারশিয়ার কারণসমূহ কি কি?
উত্তর: ইউটেরাইন ইনারশিয়ার কারণসমূহ- ইউটেরাইন ইনারশিয়ার কারণসমূহ নিম্নরূপ। যথা-
ক) প্রাইমারী ইউটেরাইন ইনারশিয়ার কারণ:
১) মৃদু ব্যথাযুক্ত জরায়ু সংকোচন।
২) অপ্রচুর, বিলম্বিত ও অনিয়মিত জরায়ু সংকোচন।
৩) পেলভিসের সামান্য সংকীর্ণতা।
৪) প্রথম গর্ভবতী নারীর বেশী বয়সে গর্ভ হইলে।
৫) ভ্রূণের মস্তক ও পেলভিসের আকার বৈষম্য থাকিলে।
৬) অস্বাভাবিক উপস্থিতি থাকিলে।
৭) মূত্রাশয় ও মলাশয় পূর্ণ থাকিলে।
৮) মাতার মনে চিন্তাচাঞ্চল্য থাকিলে।
৯) জরায়ু সংকোচনকারী পিটুইটারী গ্ল্যান্ডের অক্সিটোসিন হরমোনের অভাব।
খ) সেকেন্ডারী ইউটেরাইন ইনারশিয়ার কারণ:
১) সংকুচিত পেলভিস।
২) অস্বাভাবিক প্রেজেন্টেশন বা মাথার ভারটেক্স ছাড়া মুখমণ্ডল, কপাল, স্কন্ধ, নিতম্ব প্রভৃতি আগে আসিলে।
৩) রিজিড সারভিক্স অর্থাৎ সারভিক্স প্রসারিত হওয়ার পরিবর্তে শক্ত ও টাইট হইয়া থাকিলে।
৪) অতিরিক্ত রক্তহীনতা।
৫) এন্টিপার্টান হেমারেজ।
প্রশ্ন- ইউটেরাইন ইনারশিয়ার সম্ভাব্য বিপদ কি কি? এবং কখন হয়?
উত্তর: প্রসব বেদনা অধিক্ষণ চলার ফলে মা ও শিশু দুইজনের পক্ষেই বিপদের কারণ হইতে পারে। বেদনা অধিক্ষণ থাকার ফলে মায়ের এই সকল উপসর্গ উপস্থিত হয়-যেমন বেশী বেদনার জন্য মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তি, আহার ও নিদ্রার অভাবে শারীরিক দুর্বলতা প্রভৃতি।
এই অবস্থায় শিশুর মাথা জরায়ুতে অ্যাসফিক্সিয়েটেড অবস্থায় থাকার জন্য প্রায় মেমব্রেন ফাটিয়া গিয়া লাইকার বাহির হইয়া যায় ফলে জরায়ু সংকুচিত হয়। ফুল বা প্লাসেন্টাতে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ কমিয়া যায় সেই সঙ্গে শিশুর অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রাও কমিয়া বলয়।
প্রশ্ন- ইউটেরাইন ইনারশিয়ার ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: ইউটেরাইন ইনারশিয়ার ব্যবস্থাপনা- প্রসব বেদনার সময় যে কোন অস্বাভাবিক অবস্থার সময় ধাত্রীর চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। যে অস্বাভাবিক কারণে জরায়ু অলস বা নিষ্ক্রিয় হয় সর্বাগ্রে সেই কারণ বাহির করা উচিত। মলাশয় বা যোনিপথে পরীক্ষার পর পর পেটের উপর হাত বুলাইয়া যদি বুঝিতে পারা যায় যে হেড এনগেজড হয় নাই অথবা অস্বাভাবিক উপস্থিতি বর্তমান তখন চিকিৎসককে ডাকা দরকার। আবার মাতার মানসিক ও শারীরিক অবসন্নতা মনে করিলে বা জরায়ুর মধ্যে শিশুর কষ্ট বুঝিতে পারিলে তখনও ডাক্তারকে খবর দেওয়া ধাত্রীর কর্তব্য। কারণ উক্ত অবস্থায় ফরসেপস প্রয়োগের অথবা আগে পেট ও পরে জরায়ু কাটিয়া শিশুকে বাহির করিবার প্রয়োজন হইতে পারে। অবশ্য বস্তিদেশে শিশুর মাথা নামিবার গতি যদি ধীরে ধীরে বাড়িতে থাকে এবং জরায়ু মুখ আস্তে আস্তে খুলিলেও এই মুখ খোলা যদি ধীরে ধীরে বৃদ্ধির দিকে থাকে এবং সেই সঙ্গে মা ও শিশুর অবস্থা যদি সন্তোষজনক হয় তবে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা থাকে।
প্রসবের প্রথম অবস্থায় ন্যায় দ্বিতীয় অবস্থাও যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে ফরসেপস প্রয়োগ করিতেই হইবে। প্রসবের তৃতীয় অবস্থায় মৃদু সংকোচন চলিতে থাকিলে অত্যন্ত অধিক প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ হইতে পারে। সুতরাং সেস্থলে গর্ভফুল পড়িবার পূর্বেই চিকিৎসক আরগোমেট্রিন ব্যবহার করিতে পারেন।
প্রশ্ন- ম্যাল প্রেজেন্টেশন অব ফিটাস বা ভ্রুণের অস্বাভাবিক উপস্থিতি কাহাকে বলে? ম্যাল প্রেজেন্টেশনগুলি কি কি?
উত্তর: ম্যাল প্রেজেন্টেশন অব ফিটাস বা ভ্রুণের অস্বাভাবিক উপস্থিতি- ভ্রূণের মস্তক হেট করিয়া বুকের উপর ঝুঁকিয়া পড়া অবস্থায় থাকা এবং উপস্থিতি হইতে মস্তকের শীর্ষদেশ, এইরূপ অবস্থাকে গর্ভস্থ শিশুর স্বাভাবিক উপস্থিতি বলা হইয়া থাকে। ভ্রুণের অন্য কোন অংশ যদি উপস্থিতকারী অংশ হয় অথবা মস্তক ভ্রূণের পিঠের দিকে সম্পূর্ণ হেলানো বা প্রসারিত অবস্থায় থাকে, বা মস্তক পূর্ণ প্রসারণ এবং পূর্ণ নমনের মধ্যপথে থাকে অর্থাৎ কপালের উঁচু জায়গার উপস্থিত হয় তাহা হইলে তাহাকে ভ্রুণের অস্বাভাবিক উপস্থিতি বলা হয়। সংক্ষেপে ভ্রণের হস্তক উপস্থিতি ব্যতীত মুখ, কপাল, স্কন্ধ ইত্যাদি যে কোন অঙ্গের উপস্থিতিকেই অস্বাভাবিক বলা হয়।
ম্যাল প্রেজেন্টেশনসমূহ- সাধারণতঃ নিম্নলিখিত ম্যালপ্রেজেন্টেশন বা অস্বাভাবিক উপস্থিতি দেখিতে পাওয়া যায়।
১) Vertex ঠিকমত Flex না হওয়া- ফলে অক্সিপিটো পোষ্টিরিয়র পজিশন হইয়া থাকে। অক্সিপুট বা শিশুর মাথার পিছন দিকটা বাহির হওয়ার সময় প্রসূতির সামনের দিকে না আসিয়া সিছনের দিকে আসে।
২) ভুক দেখা যায় আগে বা Brow পেজেন্টেশন।
৩) মুখ দেখা যায় আগে বা Face প্রেজেন্টেশন।
৪) পাছা দেখা যায় আগে বা Breach প্রেজেন্টেশন।
৫) আড়াআড়িভাবে Transerse বা Oblique Lie থাকে।
৬) জটিল প্রেজেন্টেশন (Complex)
প্রশ্ন- অক্সিপিটো পোস্টিরিয়র পজিশন কাহাকে বলে?
উত্তর: অক্সিপিটো পোস্টিরিয়র পজিশন- প্রসবকালীন শিশুর মাথার
অক্সিপুট (মাথার পিছনদিকের হাড়ের ঢিবির মত উঁচু অংশ) যদি পিছন দিকে (Posterior Position) ঘুরানো থাকে তাহাকে অকসিপিটো পোষ্টিরিয়র পজিশন বলা হয়। অক্সিপিটো পোষ্টিরিয়ার পজিশনকে সত্য বিচারে অস্বাভাবিক উপস্থিতি বলিতে পারা না গেলেও উহা যদি ঘুরিয়া অকসিপুটের সম্মুখ উপস্থিতি না হয় তাহা হইলে ইহার প্রসব ব্যথার গতি অস্বাভাবিক হইয়া থাকে।
প্রশ্ন- অক্সিপিটো পোস্টিরিয়র পজিশনের ডায়াগনসিস বা অবস্থান নির্ণয় কিভাবে করিতে হয়?
উত্তর: অক্সিপিটো পেস্টিরিয়র ডায়াগনসিস- তলপেট পরীক্ষা দ্বারা ভ্রূণের পৃষ্ঠদেশের সমতল স্থান অনুভব করা যায় না। ইহার পরিবর্তে তলপেটের সম্মুখের জায়গা, বাহুদ্বয় ও পদদ্বয়ের জন্য উঁচু হওয়ার দরুন অসম হওয়ায় পেটের উপর হাত বুলাইয়া পরীক্ষা করিলেই বুঝিতে পারা সম্ভব হয়। মস্তক স্বল্প মাত্রায় প্রসারিত অবস্থায় থাকিবার দরুন প্রায়ই আঁটিয়া বসে না এবং ইহার ফলে মস্তকের উপস্থিতকারী অংশের ব্যাস বাড়িয়া যায়। ভ্রুণের হৃৎস্পন্দন পার্শ্বদেশে এবং কখনও কখনও নাভির উপর দিয়া পেট বরাবরে যে রেখা কল্পনা করা হয় সেই স্থানে শুনিতে পাওয়া যায়।
অক্সিপুট পিছনে থাকিলে যোনিপথ পরীক্ষা দ্বারা বুঝিতে পারা যাইবে যে এন্টিরিয়র ফন্টানেল বা সম্মুখ সংযোজক মিলনী জরায়ুর ফাঁক করা মুখের উপর পড়িয়া যায়। সম্মুখ সংযোজক মিলনীর অবস্থান হইতেই নিরূপণ করা সম্ভব হইবে যে অবস্থান আর.ও.পি অথবা এল.ও.পি।
প্রশ্ন- অকসিপিটো পোস্টিরিয়র প্রেজেন্টেশনের প্রসব পরিচালনা যা ব্যবস্থাপনা কিভাবে করা হয়?
উত্তর : অকসিপিটো পোস্টিরিয়র প্রেজেন্টেশনের প্রসব পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনা- প্রসবে প্রথম অবস্থায় জরায়ু অলস হইয়া জটিলতার সৃষ্টি করিতে পারে। সুতরাং পূর্ব হইতেই রোগিণীর নিদ্রা এবং পুষ্টিকর খাদ্যের প্রতি নজর রাখিতে হইবে। পেটের উপর হাত দিয়া পরীক্ষা দ্বারা এবং মলদ্বারের ছিদ্রপথে পরীক্ষা দ্বারা প্রসবের অগ্রগতি নিরূপণ করিতে হইবে। মাতা ও শিশুর অবস্থা এবং জরায়ু সংকোচনের অবস্থা লিপিবদ্ধ করিতে হইবে। স্বাভাবিক উপায় অবলম্বনের দ্বারা, পিউবিসের দিকে মুখ করিয়া প্রসব হইতে পারে এবং এইভাবে প্রসবের দরুণ যোনিদ্বারের নরম তন্তু বা পেরিনিয়া ছিঁড়িয়া যাইতে পারে। যদি ধাত্রী মনে করেন যে, পেরিনিয়াম কাঁচি দিয়া মধ্য রেখার যে কোন দিকে অল্প কাটিয়া দিলে মায়ের যোনিদ্বারের নরম তত্ত্ব অধিক ক্ষতির হাত হইতে রক্ষা পাইবে তাহা হইলে অবস্থা জরুরী বিবেচনা করিয়া ধাত্রী তাহা করিবেন এবং সেলাই করার জন্য পরে ডাক্তার ডাকিবেন। প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থায় জরায়ু সংকোচন থাকা সত্বেও এবং মাতার ঠিক সময় কোঁথ দেওয়া সত্ত্বেও শিশু ভূমিষ্ট না হইলে অবিলম্বে ডাক্তারকে খবর দেওয়া প্রয়োজন। শিশুর মাথার অক্সিপুট সম্মুখের দিকে ঘুরাইয়া ফরসেপসের সাহায্যে শিশুকে বাহির করিতে হইবে। অক্সিজেনের অভাবজনিত শাসকষ্টযুক্ত শিশুর যত্নের জন্য পূর্ব হইতেই সর্বপ্রকার ব্যবস্থা করিয়া রাখিতে হইবে।
প্রশ্ন- ফেস প্রেজেন্টেশন বা মুখ উপস্থিতি বলিতে কি বুঝ? ফেস প্রেজেন্টেশনের অবস্থানসমূহ বা পজিশন সমূহ বা শ্রেণীবিভাগ কি কি?
উত্তর: ফেস প্রেজেন্টেশন- প্রসবকালীন সময়ে শিশুর চিবুক যদি বুকের উপর না ঠেকে কিন্তু মাথার পূর্ণ প্রসারণ হইয়া মাখার পিছনটা উল্টাইয়া গিয়া যদি পিঠের দিকে ঠেলে তখন মাথার পরিবর্তে মুখ উপস্থিত হয়। মুখমণ্ডল সর্বাগ্রে পেলভিক ব্রিম পার হইয়া পেলভিক ক্যাভিটিতে প্রবেশ করিলে উহাকে ফেস প্রেজেন্টেশন বলে।
চিত্র: ফেস প্রেজেন্টেশন
ফেস প্রেজেন্টেশনের পলিশন বা অবস্থান বা শ্রেণীবিভাগ:
ফেন প্রেজেন্টেশনের চার রকম পজিশন দেখিতে পাওয়া যায়। যথা-
১) রাইট মেন্টো পোস্টিরিয়র বা RMP অর্থাৎ থুতনি ডান সেক্রোইলিয়াক সন্ধির দিকে থাকে এবং কপাল বাম ফোরামেস ওভেরির দিকে থাকে।
২) লেফট মেন্টো পেস্টিরিয়র বা LMP অর্থাৎ থুতনি পিছন দিকে থাকে অর্থাৎ বাম সেক্রো ইলিয়াক সন্ধির দিকে থাকে, কিন্তু কপাল ডানদিকে থাকে।
৩) লেফট মেন্টো এন্টিরিয়র বা LMA অর্থাৎ বাম থুতনি পেকটিনিয়াল এমিনেলের দিকে থাকে।
৪) রাইট মেন্টো এন্টিরিয়া বা RMA অর্থাৎ থুতনি ডান পেকটিনিয়াল এমিনেন্সের দিকে থাকে।
প্রশ্ন- ফেস প্রেজেন্টেশন বা মুখ উপস্থিতির কারণসমূহ কি কি?
উত্তর : ফেস প্রেজেন্টেশনের কারণ- নিম্নলিখিত বিষয়গুলিকে ফেস প্রেজেন্টেশনের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়।
১) জরায়ুর খুব বেশী তীর্ষকভাবে অবস্থান।
২) তলপেটের ত্বক থলথলে হওয়ার ফলে।
৩) সংকুচিত বস্তিদেশ।
৪) ভ্রূণের আকার বৃহৎ হওয়ায়।
৫) ভ্রুণের মাথার খুলির সম্মুখপশ্চাৎ ব্যাস লম্বা হইবার দরুন।
৬) সহজাত শারীরিক অস্বাভাবিকতা হেতু যেমন গলগণ্ড, মাথার অস্বাভাবিকতা প্রভৃতি।
প্রশ্ন- ফেস প্রেজেন্টেশনের ডায়াগনসিস কিভাবে করা হয়?
উত্তর: ফেস প্রেজেন্টেশনের ডায়াগনসিস- ফেস প্রেজেন্টেশনের ডায়াগনসিস নিম্নরূপ। যথা-
ক) পেটের উপর হাত দিয়া পরীক্ষা- পেটের উপর হাত দিয়া পরীক্ষা করিলে পৃষ্ঠদেশ সামনের দিকে থাকিলে পিঠ এবং মাথার অনেকটা বাংলা '১' এর মত অনুভূত হইবে। এই অবস্থানে প্রসবের প্রথম অবস্থায় শিশুর মাথা পেলভিসের প্রবেশ দ্বারের বেশ একটু উপরে থাকে এবং অক্সিপুটের পিছনের চিবির মত অংশ পৃষ্ঠের একই দিকে সুস্পষ্টভাবে হাতে ঠেকে। এই ক্ষেত্রে স্মর্তব্য যে মস্তক উপস্থিতিতে অকসিপুটের পিছনের টিবির মত অংশ পৃষ্ঠের উল্টা দিকে অনুভব হয়। মস্তক উপস্থিতিতে সমস্ত পৃষ্ঠদেশ ভালভাবে বুঝিতে পারা যায়, কিন্তু মুখ উপস্থিতিতে সমস্ত পৃষ্ঠদেশ বুঝিতে পারা তত সহজ নয়। শিশুর পৃষ্ঠদেশ যখন পশ্চাৎ দিকে থাকে তখন আবার পেটের উপর হইতে অক্সিপুটের পিছনের টিবির মত জায়গা অতি সহজে বুঝতে পারা যায় না, বরঞ্চ শিশুর হাত পাগুলি চট করিয়া বুঝিতে পারা যায়।
খ) যোনিপথে পরীক্ষা- মস্তক উপস্থিতিতে মাথা দ্বারা জরায়ুর নিম্নাংশ ভরা থাকে কিন্তু এই স্থলে মুখ জরায়ুর নিম্নাংশ ভরিয়া রাখে না। এই হেতু জলের থলি বড় হয়। খলির উপর হইতে উপস্থিতিকারী অংশের নিচে জল গড়াইয়া আসে। এই পরীক্ষাকালে পর্দা যাহাতে না ফাটে সেইদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে। দুইবার ব্যথার মধ্যবর্তী বিরামে খুব সতর্কতার সহিত ধীরে যোনিপথে আঙ্গুল ঢুকাইয়া দিলে পর্দা ফাটিবার পর নাক, নাকের ছিদ্র, মুখের ভিতরে জিভ ও দুইটি মাড়ী টের পাওয়া যায়। খুব সাবধানে পরীক্ষা করা উচিত কারণ শিশুর চোখে চোট লাগিতে পারে। মুখের ও নাকের মধ্যে আঙ্গুল দিলে শ্বাস ফেলার চেষ্টা করার সময় ময়লা গিলেতে পারে।
প্রশ্ন- ফেস প্রেজেন্টেশন বা মুখ উপস্থিতির প্রসব কৌশল ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: ফেস প্রেজেন্টেশনের প্রসবকৌশল ও ব্যবস্থাপনা- ফেস প্রেজেন্টেশনে মাথা যদি পূর্ণভাবে আঁটিয়া বসে তাহা হইলে তখন প্রেজেন্টিং অংশের মাফ ঠিক সঠিক ভারটেক্স প্রেজেন্টেশনের মত হয়। এই অবস্থায় মুখটি পেলভিসের brim দিয়া ঠিক নামিয়া আসিবে-এই অবস্থায় চিন্তার কোনও কারণ নাই। যদি ফেস পূর্ণ না আসে অর্থাৎ মাথা পূর্ণভাবে আঁটিয়া না ঘসে তাহা হইলে অবশ্য অসুবিধা হইতে পারে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই থুতনির সম্মুখ ঘূর্ণনের দ্বারা মাথা বাহির হইয়া আসে।
প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থা যদি খুব বেশী দীর্ঘায়িত হয় এবং মাথা যদি বস্তিদেশে ঠিকভাবে অবস্থান করে এবং থুতনি যদি সম্মুখ দিকে থাকে তাহা হইলে ফরসেফস প্রয়োগ করিয়া মাতা টানিয়া বাহির করিতে হইবে।
থুতনি যদি পিছন দিকে ঘুরিয়া যায় অথবা সম্মুখ ঘূর্ণন হইতে যদি খুব বেশী দেরী হয় তাহা হইলে প্রসূতিকে ঔষধের সাহায্যে অজ্ঞান করিয়া মাথা এবং ঘাড় ঘুরাইয়া থুতনিকে সামনের দিকে আনিতে হইবে। ইহার পর থুতনিকে এমনভাবে টানিতে হইবে যাহাতে মুখ পূর্ণ প্রসারিত হয়। এই অবস্থা হইবামাত্র ফরসেফস দিয়া মাথা টানিয়া বাহির করিতে হইবে। এইভাবে সম্মুখ ঘূর্ণন যদি না হয় এবং শিশুর আকার যদি ছোট হয় তাহা হইলে পার্সিসটেন্ট মেন্টো-পোস্টিরিয়ার অবস্থান হইলেও অ্যাকসিস ট্রাকসন ফরসেফস দিয়া শিশুকে অল্পায়াসেই বাহির করা সম্ভব হইতে পারে। ইহাতেও যদি শিশু ভূমিষ্ট না হয় এবং শিশু যদি মৃত হয় তাহা হইলে মাথা ফুটা করিয়া শিশুকে বাহির করিতে হইবে। হাত বাহির হইয়া আসিবার জন্য বা নাভিরঞ্জুর স্থানচ্যুতি হইয়া নামিয়া আসিবার জন্য উপস্থিতি জটিল হইলে সিজারিয়ান সেকশনের কথা চিন্তা করিতে হইবে।
অস্বাভাবিক বস্তিদেশ থাকিলে বস্তিদেশের আকার ও আয়তনের উপর পরিচালন নির্ভর করবে। ধাত্রীর কর্তব্য হইল-১) যে পার্শ্বে শিশুর পিঠ সেই পার্শ্বে প্রসূতিকে শোয়াইয়া রাখা, ২) প্রসূতিকে কোঁথ দিতে বারণ করা, ৩) পর্দা ফাটিয়া না যাওয়া পর্যন্ত যোনিপথে পরীক্ষা না করা, ৪) ফরসেপস বা ক্রেনিওটমি বা সিজারিয়ান যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা, ৫) ডাক্তারকে খবর দেওয়া।
প্রশ্ন- ব্রাও প্রেজেন্টেশন বা কপাল উপস্থিতি বলিতে কি বুঝ? কপাল উপস্থিতির ডায়াগনসিস লিখ বা বুঝিবার উপায় কি?
উত্তর: ব্রাও প্রেজেন্টেশন বা কপাল উপস্থিতি- মাথা এক্সটেনশন এবং ফ্লেকশনের মাঝামাঝি অবস্থায় থাকার জন্য ব্রাও প্রেজেন্টেশন হইয়া থাকে। মুখ উপস্থিতিতে মাথা সম্পূর্ণ উত্তোলন অবস্থায় থাকে এবং মস্তক উপস্থিতিতে মাথা সম্পূর্ণ অবনমিত থাকে। এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থায় মাথা সম্পূর্ণ উত্তোলিত এবং সম্পূর্ণ অবনমিত অবস্থায় মাঝামাঝি থাকিবার দরুন কপাল উপস্থিতি হইয়া থাকে। প্রসব বেদনার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মস্তক অবনমিত হইয়া মস্তক উপস্থিতি হইতে পারে অথবা মাথা আরও উত্তোলিত হইবার ফলে মুখ উপস্থিতি হইতে পারে। স্থায়ী কপাল উপস্থিতির সংখ্যা ১৫০০-২০০০ এর মধ্যে ১টি কপাল উপস্থিতির ডায়াগনসিস বা বুঝিবার উপায়- মাথার মেট্রো ভার্টিক্যাল ব্যাস ৫.৫ ইঞ্চি। প্রবেশ দ্বারের অপেক্ষ্য উহার ব্যাস বড়। সুতরাং মাথা প্রবেশদ্বারে আঁটিয়া বসিতে পারে না। উপযুক্ত সময়ে ইহ্য বুঝিতে না পারিলে প্রসবে বাধার সৃষ্টি হয়।
পেটের উপর হাত দিয়া পরীক্ষা করিলে কোন প্রকার অস্বাভাবিকতা টের পাওয়া যায় না। জরায়ু মুখ সম্পূর্ণরূপে না খুলিবার আগে যোনিপথ পরীক্ষা করিলে কপাল উপস্থিতি বলিয়া ভুল হইবার সম্ভাবনা থাকে। জরায়ু মুখ সম্পূর্ণ খুলিবার পর যোনিপথে পরীক্ষা করিলে কপালের উঁচু জায়গা অনুভব করা যায় এবং কপালের একদিকে সম্মুখ সংযোজক মিলনী বা এন্টিরিয়র ফন্টানেল আর একদিকে নাকের গোড়া, চোখ এবং চোখের ফ্র পাওয়া।
চিত্র: ব্রাও প্রেজেন্টেশন
প্রশ্ন- ব্রাও প্রেজেন্টেশন বা কপাল উপস্থিতির প্রসক কৌশল ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর : ব্রাও প্রেজেন্টশন বা কপাল উপস্থিতির প্রসব কৌশল ও ব্যবস্থাপনা- ব্রাও প্রেজেন্টেশনে সবসময় মাথাটা এক্সটেন্ড করিয়া ফেস করিয়া নিতে হয় অথবা Flex করিয়া ভারটেক্স করিতে হয়। অন্য কোন উপস্থিতিতে আনিয়া শিশুকে বাহির করার চেষ্টা করিতে হয়। রোগিনীকে অজ্ঞান করিয়া তারপর যোনিপথে (Vagina) ম্যানিপুলেশন দ্বারা ইহা করাইতে হইবে। যত সত্বর সম্ভব এই পদ্ধতি সম্পন্ন করিতে হইবে। ব্রাও প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে প্রসব করানো প্রায় অসম্ভব। বস্তি দেশের সংকোচন কিংবা অন্য কোন অস্বাভাবিকতা থাকিলে তাহার একমাত্র চিকিৎসা হইল আগে পেট ও পরে জরায়ু কাটিয়া শিশুকে বাহির করা।
প্রশ্ন- ব্রীচ প্রেজেন্টেশন বা বস্তি উপস্থিতি কাহাকে বলে? ব্রীচ প্রেজেন্টেশনের প্রকারভেদ লিখ।
উত্তর: ব্রীচ প্রেজেন্টেশনের উপস্থিতি- যখন শিশুর বত্তি বা হাঁটু বা পা প্রসবের জন্য মায়ের পেলভিক ব্রীমের নিকট উপস্থিত হয় তখন তাহাকে ব্রীচ প্রেজেন্টেশন বলে। ব্রীচ প্রেজেন্টেশনের প্রকারভেদ- বস্তি উপস্থিতি প্রধানত দুই প্রকারের। যথা-
১) পূর্ণ উপস্থিতি (Complete Breech Presentation)- এই উপস্থিতিতে হাঁটু, উরু এবং পা পুরাপুরি গুটানো অবস্থায় থাকে।
২) আংশিক বস্তি উপস্থিতি (Incomplete Breech Presentation): এই উপস্থিতিতে বত্তির সঙ্গে উরু অথবা পা প্রসারিত অবস্থায় থাকে। আংশিক বস্তি উপস্থিতিকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) প্রসারিত পা (Extended legs)- গোড়ালীসহ পায়ের পাতাদ্বয় জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশে আসে। পা দুইটি সটান ভাবে উপরের দিকে চলিয়া যায়। উরুদ্বয় গুটানো থাকে।
খ) প্রসারিত উরু (Extended thighs)- ইহা দুই প্রকারের। ১) হাঁটু উপস্থিতি-পা গুটানো থাকে। ২) গোঁড়ালি সমেত পায়ের পাতার উপস্থিতি-পা প্রসারিত।
অবস্থান ভেদে ব্রীচ প্রেজেন্টেশন ৪ প্রকারের। যথা-
১) রাইট সেক্রো এন্টিরিয়র-সেক্রাম ডানদিকে এবং সম্মুখদিকে।
২) লেফট সেক্রো এন্টিরিয়র-সেক্রাম বামদিকে এবং সম্মুখদিকে।
৩) রাইট সেক্রো পোস্টিরিয়র-সেক্রাম ডানদিকে এবং পশ্চাৎদিকে।
৪) লেফট সেক্রো পোস্টিরিয়র-সেক্রাম বাম দিকে এবং পশ্চাৎদিকে।'
চিত্রঃ ব্রীচ প্রেজেন্টেশন
প্রশ্ন- ব্রীচ প্রেজেন্টেশন বা বস্তি উপস্থিতির ডায়াগনসিস কিভাবে করিতে হয় বা বুঝিবার সংকেত কি?
উত্তর : ব্রীচ প্রেজেন্টেশন বা বস্তি উপস্থিতির ডায়াগনসিস- ব্রীচ প্রেজেন্টেশনের ডায়াগনসিস নিম্নরূপ। যথা-
ক) তলপেটে হাত রাখিয়া পরীক্ষা-
১) আমবিলিক্যাল গ্রীপ- এ ভ্রুণের পিঠ এবং পা গুলি ঠেকিবে। পিঠ শক্ত ও লম্বা হইবে এবং হাত পা তলতলে ও উঁচুনিচু হইবে-চাপ দিলে সরিয়া যাইবে। পেটে বেশী চর্বি থাকিলে এই পরীক্ষায় একটু অসুবিধা ঘটে।
২) ফান্ডাল গ্রীপ- এ জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশে বা ফান্ডাসে মাথা লাগিলে শক্ত গোলাকার পদার্থ হাতে ঠেকিবে। মাথার নিচে গলা। কাজেই মাথার নিচে হাত নামাইলে একটি খাঁজ পাওয়া যাইবে। মাথার বদলে বস্তি থাকিলে কোনও খাঁজ পাওয়া যাইবে না।
৩) শিশু প্রসব বত্তিদেশে নামিবার আগে নাভিতে বা নাভির উপর শিশুর হৃদস্পন্দন শোনা যাইবে।
৪) জরায়ুর নিম্নাংশে নরম মাংসপিণ্ড অনুভব করিলে এবং ঐ মাংসপিণ্ড নাড়া দিলে নাড়িবার গতি মাথা হইতে কম হইবে।
খ) যোনিপথ পরীক্ষা-
১) পর্দা ফাটিবার পর চটচটে মেকোনিয়াম বা শিশুর সবুজবর্ণ মল বাহির হয়। এ সময়ে পরীক্ষা করিলে আঙ্গুলে মল লাগিয়া যাইবে।
২) বস্তি উপস্থিতি হইলে সংযোগ (Suture) ও সংযোজক মিলনী (Fontanelle) হাতে ঠেকিবে না।
৩) এক্সরে পরীক্ষা দ্বারা ব্রীচ প্রেজেন্টেশন নির্ণয় করা যায়।
প্রশ্ন- ব্রীচ প্রেজেন্টেশন বা বস্তি উপস্থিতির কারণ কি কি?
উত্তর: ব্রীচ গ্রেজেন্টেশনের কারণ-
১) অন্যান্য অস্বাভাবিক উপস্থিতির ন্যায় ভারটেক্স ঠিকমত অগ্রসর হইতে বাধাপ্রাপ্ত হয় বলিয়া পা আগাইয়া আসে।
২) প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার কারণে ব্রীচ হওয়ার সম্ভাবনা।
৩) প্রি ম্যাচুরিটি।
৪) হাইড্রামনিয়াস।
৫) কন্ট্রাকডেট পেলভিস।
৬) অধিক সন্তান প্রসব।
৭) যমজ সন্তান।
৮) পেলভিব টিউমার।
৯) হাইড্রোকেফালস।
১০) প্লাসেন্টার ল্যাটারেল ইনসারশন।
প্রশ্ন- ব্রীচ প্রেজেন্টেশন বা বস্তি উপস্থিতির বিপদ বা জটিলতাসমূহ কি কি?
উত্তর: ব্রীচ প্রেজেন্টেশনের বিপদ বা জটিলতাসমূহ নিম্নরূপ-
১) অসময়ে পর্দা ফাটিয়া গেলে প্রসব হইতে বিলম্ব হয়।
২) মাথা দেরীতে বাহির হইলে শিশুর মৃত্যু হয়, আবার মাথা বাহির হইলে পেলভিক হাড়ের চাপে শিশুর মাথায় আঘাত লাগায় মাখার শিরা ছিঁড়িয়া ইন্ট্রাক্রেনিয়্যাল হেমারেজ হইতে পারে।
৩) পর্দা অসময়ে ফাটিয়া যাইবার দরুন নাভি নাড়ী স্থানচ্যুত হইয়া নামিয়া আসিতে পারে এবং জরায়ু অলস হইতে পারে।
প্রশ্ন- কোন অবস্থায় ফিটাল হেড এনগেজড বিপদের কারণ হয়?
উত্তর: নিম্নলিখিত অবস্থায় ফিটাল হেড এনগেজড বিপদের কারণ হয়।
১) কন্ট্রাকটেড পেলভিস।
২) পেলভিক টিউমার।
৩) প্লাসেন্টা প্রিভিয়া।
৪) হাইড্রোকেফালাস।
প্রশ্ন- ফ্লেক্সড ব্রীচ প্রেজেন্টেশন বা বত্তি উপস্থিতির ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: ফ্রেন্সড ব্রীচ প্রেজেন্টেশন বা বস্তি উপস্থিতির ব্যবস্থাপনা- জেরাড ব্রীচ প্রেজেন্টেশন বা বস্তি উপস্থিতির ব্যবস্থাপনা নিম্নরূপ। যথা-
প্রথম অবস্থা- প্রথম অবস্থায় নিম্নাঙ্গ গুটানো অবস্থায় বত্তি উপস্থিতি হইলে মক্ত কের চাইতে গুটানো অবস্থায় নিম্নাঙ্গ অধিকতর বড় হয় এবং অধিকতর স্থান অধিকার করে। এই অবস্থায় আঁটিয়া বসিতে সময় লাগে। এই হেতু অকাল পর্দা ফাটিয়া যায়। এই স্থলে ধাত্রীর কর্তব্য হইল পর্দা যাহাতে অসময়ে ফাটিয়া না যায় তাহার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। মেমব্রেন ফাটিয়া গেলে লক্ষ্য রাখিতে হইবে যাহাতে কর্ড স্থানচ্যুত না হয়। প্রসূতিকে অসময়ে কোঁথ দিতে নিষেধ করিতে হইবে। প্রয়োজন হইলে এনিমা দিতে হইতে পারে।
দ্বিতীয় অবস্থা- এই অবস্থায় প্রসূতিকে চিৎ করিয়া শোয়াইয়া দিতে হইবে। প্রসব আসন্ন হইলে প্রসূতিকে লিখোটমি পজিশনে (চিৎ করিয়া শোয়াইয়া টেবিলের প্রান্তে পাছা আনিয়া হাঁটু গুটানো হয়, পা উঁচু, স্বদ্ধ আরও উঁচু এবং হাত বুকের দুই পাশে) রাখিতে হইবে। প্রসূতি যাহাতে ক্লান্ত না হয় বা কোঁথ দেওয়ার শক্তি হারাইয়া ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। এই অবস্থায় ধাত্রীকে খুব ধৈর্য সহকারে প্রসব করাইতে হইবে। ধৈর্য হারাইয়া কখনও পা টানিয়া বাহির করিবার চেষ্টা যাহাতে না করা হয়। কারণ ইহাতে-
১) রক্তক্ষরণ হইতে পারে।
২) পর্দা ফাটিয়া যাইতে পারে।
৩) নাভি নাড়ী স্থানচ্যুত হইয়া নামিয়া আসিতে পারে।
৪) হাত উপরের দিকে গিয়া মাথা বাহির হইবার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করিতে পারে।
৫) থুতনি প্রসব বস্তিদেশের প্রবেশদ্বারে বা ব্রিমে আটকাইয়া গিয়া গলা টান
হইয়া যাইবার ফলে মাথা আটকাইয়া যাইতে পারে।
প্রশ্ন- জটিলতা বিহীন বস্তিপ্রসব বা আন-কমপ্লিকেটেড ব্রীচ ডেলিভারীর ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: আন-কমপ্লিকেটেড ব্রীচ ডেলিভারীর ব্যবস্থাপনা- বস্তিপ্রসবে জটিলতা না থাকিলে-
১) গর্ভস্থ শিশুর নিচে নামিবার ক্রমবর্ধমান গতি বজায় থাকিবে।
২) জরায়ুর সংকোচন মৃদু থাকিবে না।
৩) বস্তিদেশেও কোন প্রকার বৈষম্য থাকিবে না। এই ধরণের প্রসব খুব ভালভাবে করানো সম্ভব।
বস্তি যখন নামিতে থাকে তখন সবকিছুই প্রকৃতির উপর ছাড়িয়া দিতে হইবে। বস্তিতে বা পায়ে কোন প্রকার টান দিবার প্রয়োজন হইবে না। বস্তি বিটপে আসিলে এপিসিওটমি করিতে হয়। ইহা করিবার পর বস্তি বাহির হইয়া আসে এবং সেই সঙ্গে অথবা ঠিকমত তাহার পরে সংকোচনে বডি বাঁহির হইতে আরম্ভ করিবে। নাভির বাহির হইবা মাত্র ইহার উপর এবং নাভি নাড়ির উপর যাহাতে টান না পড়ে সেজন্য নাভি নাড়ীর একটি ভাঁজ ধরিয়া নিচের দিকে টান দিতে হইবে।
কাঁধ বাহিরে আসিলে শিশুর বডি নিচের দিকে ঝুলিতে দিতে হয়। কারণ ঐ দেহের ভার থাকায় হেট অবস্থায় মাথা বস্তিদেশে প্রবেশ করে। ইহার পর গ্রীবা সন্ধি এবং শিশুর চুল বাহিরে দেখা যায়। এই অবস্থা দেখা দিলে বুঝিতে হইবে মাথা বাহির হইতে আর দেরী নাই।
ধাত্রী বাম হাত দিয়া পায়ের পাতা ও পায়ের সংযোগ স্থল ধরিবেন, বডি টান করিয়া ধরিবেন এবং ইহাকে এমনভাবে তুলিবেন যাহাতে যোনি প্রদেশের বহির্দারে শিশুর মুখ আসিয়া যায়। বডি তুলিয়া ধরিবার প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত টান বজায় রাখিতে হইবে। এই টান বাজায় না থাকিলে মাথা বস্তিদেশের মধ্যে ঘুরিবে, অকসিপুট পিছনের দিকে হটিয়া যাইবে এবং যোনিদ্বারের পেশুগুলি প্রসারিত হইবে না। ইহার ফলে গ্রীবা প্রসারিত হইয়া মেরুদণ্ড, মেরুরুজ্জু অথবা গলার অন্যন্য স্থানের সাংঘাতিক ক্ষতি সাধন করিতে পারে।
কখনও টান দিয়া মাথা বাহির করা সঙ্গত নহে। বরঞ্চ ধীরে ধীরে অতি সতর্কতার সহিত মাথা বাহির করিতে হইবে। হঠাৎ মাথা বাহির হইয়া আসিলে গুরুতর ক্ষত এবং মাথার মধ্যে রক্তক্ষরণ হইয়া শিশুর মৃত্যু ঘটিতে পারে।
প্রশ্ন- জটিল বা অস্বাভাবিক বস্তি প্রসবের বা কমপ্লিকেটেড ব্রীচ ডেলিভারীর পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা লিখ। অস্বাভাবিক ব্রীচ প্রেজেন্টেশনের অসুবিধাসমূহ কি কি?
উত্তর: জটিল বা অস্বাভাবিক বস্তি প্রসব বা কমপিকেডেট ব্রীচ ডেলিভারীর ব্যবস্থাপনা-
অস্বাভাবিক বস্তি প্রসবে ৪ প্রকার অসুবিধা দেখা দিতে যাইতে পারে।
১) শিশুর বস্তি মায়ের বস্তিদেশের প্রবেশ দ্বারের উপরে আটকাইয়া যাইতে পারে। ২) শিশুর পদদ্বয় প্রসারিত থাকিলে মায়ের বস্তিদেশের বহির্দ্ধারে শিশুর বস্তি আটকাইয়া যাইতে পারে। ৩) বাহুদ্বয় প্রসারিত অবস্থায় থাকিলে স্কন্ধদ্বয় এবং মাথার প্রসব ব্যহত হইয়া থাকে। ৪) মাথা বস্তি গহ্বরে বা বস্তিদেশের প্রবেশ পথের উপরে আটকাইয়া যাইতে পারে।
১) প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থায় নির্ধারিত সময় পার হইবার পরও গর্ভস্থ শিশুর বস্তি মায়ের বস্তিদেশের প্রবেশপথে প্রবেশ করিতে না পারিলে নিম্নলিখিত কারণগুলি চিন্তা করিতে হইবে। ক) বস্তিদেশ সংকুচিত থাকিতে পারে, খ) গর্ভস্থ শিশুর আকার অত্যন্ত বড় হইতে পারে, গ) জরায়ু সংকোচনের ক্রিয়া অত্যন্ত দুর্বল হইতে পারে।
এই অবস্থায় প্রসূতিকে অজ্ঞান করিয়া পরীক্ষা দ্বারা যদি দেখা যায় যে, গর্ভস্থ শিশু ও প্রসূতির বস্তিদেশের মধ্যে আকারগত বৈষম্য রহিয়াছে তাহা হইলে আগে পেট ও পরে জরায়ু কাটিয়া শিশুকে বাহির করিতে হইবে। শিশুর এবং মায়ের বস্তি দেশের মধ্যে আকার বৈষম্যের মাত্রা যদি খুব কম থাকে এবং জরায়ু অলস হইবার জন্য প্রসবে বিলম্ব হয় তাহা হইলে শিশুর একটি পা নিচের দিকে লইয়া আসিবার পর কিছুক্ষণ দেরী করিতে হয়। ইহাতেও প্রসবে দেরী হইবে এবং জরায়ু মুখ খুলিয়া যাওয়া সত্বেও গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যুর আশংকা দেখা দিলে জরায়ুর উপরাংশে চাপ দিয়া এবং জরায়ু সংকোচন কালে পায়ে টান দিয়া শিশুকে বাহির করিতে হইবে।
২) শিশুর বস্তি মায়ের বস্তিদেশের মেঝের উপর নামিলে যোনিদ্বারের নরম তন্ত চুতে চাপ পড়ে, ফলে ইহা প্রসারিত হইতে থাকে কিন্তু প্রসবের কোন অগ্রগতি হয় না। এ স্থলে নিম্নলিখিত কারণে প্রসবে বিলম্ব ঘটিতে পারে। ১) শক্ত বিটপের সহিত জরায়ুর অলসতাযুক্ত থাকার দরুণ, ২) গর্ভস্থ শিশুর আকার স্বাভাবিক অপেক্ষা বড় থাকিবার দরুন। শক্ত বিটপের দরুন বিটপ একটু কাটিয়া দিয়া প্রসবে সহায়তা করিতে হইবে। অলস জরায়ু থাকিলে প্রসব ব্যাথার সময় শিশুর কুঁচকির খাঁজে টান দিতে হইবে অথবা একটি পা নিচে টানিয়া নামাইয়া টান দিতে হইবে।
পা দুইটি প্রসারিত অবস্থায় সটান হইয়া উপরে শিশুর দেহের দিকে থাকে, তাহা হইলে শিশুর বস্তি মায়ের বস্তিদেশের মেঝেতে আটকাইয়া থাকে। এই অবস্থায় মাথা, কাঁধ এবং পদদ্বয় মিলিয়া গোঁজের আকার ধারণ করে। এইরূপ আকার বেশ বড় হয় এবং বড় হইবার দরুন দেহের পার্শ্ব নমনের বিঘ্ন ঘটে এবং ইহার জন্যও বস্তি আটকাইতে পারে।
এইসব ক্ষেত্রে এক্সরে প্রয়োগে পূর্ব হইতেই নিশ্চিত হওযা উচিত।
৩) শিশুর বাহুদ্বয় প্রসারিত থাকার অর্থ হইল বাহুদ্বয়ের স্থানচ্যুতি। নিম্নের কারণে এই স্থানচ্যুতি ঘটিতে পারে। ক) গর্ভস্থ শিশুকে তাড়াহুড়া করিয়া টানাটানি করার জন্য, খ) সংকুচিত বস্তিদেশ থাকিবার জন্য, গ) গ্রীবার মুখ ঠিক মত না খুলিবার জন্য।
শিশুর বাহুদ্বয় প্রসারিত অবস্থায় থাকিলে মোটেও দেরী না করিয়া তাহা নামানো উচিত। তবে উহা খুব ধীরে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী করিতে হইবে। একটি বাহু বা বাহুদ্বয় স্থানচ্যুত হইয়া পৃষ্ঠদেশের দিকে গেলে ডাক্তারকে খবর দেওয়া উচিত।
৪) মাথা বাহির করার অসুবিধার কারণগুলি নিম্নরূপ-
১) শিশুর আকার বড় হইলে, ২) শিশুর মাথা চিতানো অবস্থায় থাকিলে, ৩)
শিশুর মাথা পিছন দিকে ঘুরিয়া গেলে, ৪) বস্তিদেশের সংকোচন থাকিলে, ৫) জরায়ু মুখ অসম্পূর্ণভাবে খুলিলে, ৬) যোনিদ্বারের নরম তন্তু শক্ত থাকিলে।
শিশুর মাথা প্রবেশদ্বারের উপরে বা বস্তি গহ্বরের অনেক উপরে থাকিলে প্রসবের একমাত্র পদ্ধতি হইল জরায়ুর উপরাংশে চাপ দেওয়া এবং সেই সঙ্গে চোয়ালে এবং কাঁধে টান দেওয়া। বিটপ শক্ত হইবার দরুন মাথা বস্তি গহ্বরের নিচে অথবা বস্তি গহ্বরের বহির্দ্ধারে থাকিলে 'জ এবং শোল্ডার ট্রাকশন' পদ্ধতি ব্যর্থ হইলে ফরসেপস ব্যবহার করিতে হইবে। মাথা পিছনদিকে ঘুরিয়া গেলে মাথা এবং ধড় এমনভাবে ঘুরাইতে হইবে যাহাতে অকসিপুট সামনের দিকে আসিয়া পড়ে। মৃত শিশু থাকিলে দেরী না করিয়া শিশুর মাথা ফুটা করিয়া প্রসব করাইতে হইবে।
প্রশ্ন- জ-ফ্লেকসন এবং সোলডার ট্রাকসন পদ্ধতি কি?
উত্তর: জ-ফ্লেকসন এবং সোলডার ট্রাকসন পদ্ধতি- ব্রীচ প্রেজেন্টেশনে যদি শিশুর দেহ বাহির হইবার পর শিশুর মাথা পেলভিসে ঠিকমত না আসে তখন শিশুর দেহ প্রসূতির পেটের দিকে একটু তুলিয়া ধরিয়া প্রসূতিকে কোঁথ দিতে বা হাঁ করিয়া নিঃশ্বাস নিতে বলিতে হইবে। যদি ইহাতেও মাথা বাহির না হয় তবে বাম হাত চিৎ করিয়া শিশুর দুই পা ঐ হাতের দুইদিকে ঝুলাইয়া দিয়া ঐ হাতের তর্জনী শিশুর মুখে প্রবেশ করাইয়া দিতে হইবে। এই অবস্থাকে ফ্লেকশন বলে। ইহার উদ্দেশ্য শিশুর মাথার অবনমিত অবস্থা রক্ষা করা। তারপর ডান হাতের মধ্যম আঙ্গুল ও বৃদ্ধাঙ্গুল সাঁড়াশির মত করিয়া শিশুর গলার উপর দিয়া দুই কাঁধ ধরিতে হইবে, তারপর প্রথমে নিচের দিকে ও পিছনের দিকে ধীরে ধীরে টানিয়া উপরের দিকে তুলিতে হইবে। ইহার উদ্দেশ্য টান বা ট্রাকশন দেওয়া। অকসিপুটে যে আঙ্গুল থাকিবে ঐ আঙ্গুল দিয়া অকসিপুট ঠেলিয়া আস্তে আস্তে মাথা নামাইতে হইবে। আঙ্গুল প্রবেশ কালে যেন আঙ্গুল শিশুর চোখে মুখে না লাগে।
প্রশ্ন- ব্রীচ প্রসবে বা বস্তি প্রসবের বিপদসমূহ কি কি?
উত্তর: ব্রীচ প্রসবে নানা কারণে নানা সময়ে মা ও শিশু উভয়েরই নানা বিপদ হইতে পারে। যথা-
মায়ের বিপদ-
১) বেশী ক্ষত বা Injury হইবার আশংকা থাকে।
২) বেশী infection হইবার ভয় থাকে।
৩) বেশী রক্তপাত হইবার ভয় থাকে।
বেশী ক্ষত হওয়ার কারণ-
১) প্রসবের সময় তাড়াতাড়ি করিতে হয়, বিশেষ করিয়া মাথা বাহির হইবার সময়। তাহা না হইলে শিশুর মৃত্যুর আশংকা দেখা দিতে পারে।
২) হাত Extend হইলে তাহাকে ঠিকমত প্রসব করাইতে ক্ষত বেশী হয়।
ইনফেকশন হওয়ার কারণ-
১) প্রসব করানোর সময় Manipulation করিতে গিয়া নানা জীবাণু প্রবেশ করিতে পারে।
২) Laceration হইবার জন্য ঐ পথে নানা বীজাণু প্রবেশ করিতে পারে।
৩) দীর্ঘস্থায়ী প্রসব এবং বেশী রক্তপাত হইবার দরুণ দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কনিয়া যায়। ফলে ইনফেকশান হওয়ার ভয় বেশী থাকে।
রক্তপাত বেশী হওয়া কারণ-
১) দীর্ঘস্থায়ী সময়ের জন্য জরায়ুর সংকোচনের ক্ষমতা কমিয়া যায় এবং টানাটানি বেশী হয়।
২) Laceration এর জন্য রক্তপাত বেশী হইতে পারে।
৩) প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হইলেও রক্তপাত বেশী হয়।
৪) এপিসিওটমি অপারেশনের জন্য।
শিশুর বিপদ-
১) পা টানাটানির সময় পায়ের কোন নরম হাড় ভাঙ্গিয়া যাইতে পারে।
২) পুরুষ শিশুর ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গে আঘাত লাগিয়া যাইতে পারে।
৩) কর্ডের উপর চাপ পড়া, ফুসফুসে লাইকার অ্যামনি প্রবেশ করা, জরায়ুর ফান্ডাসের শক্তভাব মাথার উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য, প্রসবে দেরী হইবার জন্য প্রভৃতি কারণে দমবন্ধ হইবার বিপদ আসে।
৪) মাথার আঘাত, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, গলা বা ঘাড়ের হাড় ভাঙ্গা প্রভৃতি বিপদের সম্ভাবনা থাকে।
প্রশ্ন- ব্রীচ প্রেজেন্টেশনের বা বস্তি উপস্থিতির জটিলতাসমূহ কি কি?
উত্তর: ব্রীচ প্রেজেন্টেশনের জটিলতাসমূহ-
১) কোনও প্রেজেন্টিং অংশ ঠিকমত প্রসবদ্বারের সঙ্গে খাপ না খাওয়া।
২) কর্ড আগেই প্রোলান্স হইয়া যাওয়া।
৩) প্রসূতির ক্ষেত্রে ইহা জটিল উপসর্গ। তখন এপিসিওটমি অপারেশনের প্রয়োজন হয়।
৪) পায়ের প্রসারণ বা Extended হইলেও জটিলতা সৃষ্টি হয়।
৫) হাত দুইটি Extended হইলেও জটিলতা সৃষ্টি হয়।
৬) হাত দুইটি পিঠের দিকে উল্টিয়া যাওয়া।
৭) মাথা Extended হইয়া যাওয়া।
৮) মাথা প্রসবে দেরী হওয়া। মাথা বাহির হইতে দেরী হইলে এই অবস্থায় অনেক সময় দম বন্ধ হইয়া শিশুর মৃত্যু হইতে পারে।
প্রশ্ন- সোল্ডার প্রেজেন্টেশন বা স্কন্ধ • উপস্থিতি কাহাকে বলে? শোল্ডার প্রেজেন্টেশনের শ্রেণীবিভাগ কর।
বা, ইহার উপস্থিতি কয় প্রকারের?
উত্তর: সোন্ডার প্রেজেন্টেশন বা স্কন্ধ উপস্থিতি- শিশু যখন জরায়ুর মধ্যে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে এবং কাঁধ কিংবা হাত আগে আসে তাহাকে সোল্ডার প্রেজেন্টেশন বলে।
সোল্ডার প্রেজেন্টেশনের শ্রেণীবিভাগ-
ইহা দুই প্রকার। যথা-
১) ডরসো এন্টিরিয়র।
২) ডরসো পোস্টিরিয়র।
উপস্থিতি হিসাবে শ্রেণীবিভাগ করা হইলে উপস্থিতি ৪ প্রকারের। যথা-
১) পিঠ সন্মুখে, মাথা বাম দিকে, পা ডানদিকে এবং ডান কাঁধ বা হাত আগে আসে।
২) পিঠ সন্মুখে, মাথা ডান দিকে এবং বাম কাঁধ বা হাত আগে আসে।
৩) পিঠ পিছনে, মাথা ডানদিকে এবং ডান কাঁধ বা হাত আগে আসে।
চিত্র: শোল্ডার প্রেজেন্টে
প্রশ্ন- সোল্ডার প্রেজেন্টেশন বা ক্ষদ্ধ উপস্থিতির কারণ কি কি? সোল্ডার প্রেজেন্টেশনের ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: সোল্ডার প্রেজেন্টেশন বা স্কন্ধ উপস্থিতির কারণ-
১) কন্ট্রাকটেড পেলভিস।
২) হাইড্রামনিয়াস।
৩) যমজ সন্তান।
৪) জরায়ু ও পেটের মাংসপেশীর শিথিলতা।
৫) প্লাসেন্টা প্রিভিয়া।
শোল্ডার প্রেজেন্টেশনের ব্যবস্থাপনা- একমাত্র দ্বিতীয় গ্রীপের সাহায্যেই কাঁধ বা হাত উপস্থিতি ভালভাবে বুঝিতে পারা যায়। এই অবস্থায় প্রসব করানো সাধারণতঃ অসম্ভব এবং প্রসববেদনা চলিতে থাকিলে প্রসবে ব্যথা হয়। এই স্থলে ডাক্তারকে খবর দেওয়া ধাত্রীর কর্তব্য। ডাক্তার কোন কোন ক্ষেত্রে যোনিপথে হাত ঢুকাইয়া শিশুর অবস্থিতি ঘুরাইয়া দিয়া বস্তি উপস্থিতি হিসাবে প্রসব করাইতে পারেন, কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সিজারিয়ান সেকসানের প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থায় দেখিলে ডাক্তার দুই হাত পেটের উপর দিয়া ঘুরাইয়া মস্তক উপস্থিতি করিবার চেষ্টা করিয়া থাকেন।
প্রশ্ন- কর্ড প্রেজেন্টেশন বা নাভি রজ্জুর উপস্থিতি কাহাকে বলে? কর্ড প্রেজেন্টেশনের প্রকারভেদ লিখ।
উত্তর: কর্ড প্রেজেন্টেশন বা নাভি রজ্জুর উপস্থিতি- প্রসবকালীন সময়ে কখনও কখনও নাভি নাড়ীর একটি ফাঁস উপস্থিতকারী অংশের নিচের দিকে নামিয়া আসে। পর্দা ফাটিবার পর যদি নাভি নাড়ীর একটি ফাঁস যোনিপথে নামিয়া আসে তখন তাহাকে কর্ড প্রেজেন্টেন বা নাভি রজ্জুর উপস্থিতি বলে।
কর্ড প্রেজেন্টেশনের প্রকারভেদ-
১) কর্ড প্রেজেন্ট হওয়া- যখন কর্ডের একটি লুপ মেমব্রেনের ব্যাগে থাকে, তখন দেখা যায় মেমব্রেন রাপচার করিলে প্লাসেন্টা কর্ডের অংশ আগে নামিয়া আসে।
২) কর্ডের প্রোলান্স- আগের ক্ষেত্রে মেমব্রেন ত্রাপচার করার পর কর্ড দেখা যায়। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র রাপচার করার পরই বুঝা যায় যে প্রোলান্স ঘটিল এবং - নাভি রজ্জুর খানিকটা নামিয়া আসে।
৩) কর্ডের এক্সপ্রেশন- আগে নাভি রজ্জু নিচে বাহির হইয়া আসে না কিন্তু প্রসবকালে জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণের সময় দেখা যায় যে, শিশু দেহের সঙ্গে নাভি রজ্জুর অংশ আগে বাহির হইয়া আসিতেছে।
প্রশ্ন- কর্ড প্রেজেন্টেশন বা নাভি রজ্জুর উপস্থিতির কারণ লিখ।
উত্তর: কর্ড প্রেজেন্টেশনের কারণ- স্বাভাবিক প্রসব অপেক্ষা অস্বাভাবিক প্রসবে নাভি নাড়ীর স্থানচ্যুতি বেশী হইয়া থাকে। কারণগুলি নিম্নে প্রদত্ত হইল। যথা-
১) অস্বাভাবিক উপস্থিতিতে। যথা- বস্তি উপস্থিতিতে, খ) স্কন্ধ উপস্থিতিতে, গ) • মুখ ও কপাল উপস্থিতিতে।
২) বস্তিদেশ সংকুচিতে।
৩) অ্যামনিয়মের থলিতে অতিরিক্ত জল (হাইড্রামনিয়াস) থাকিলে।
৪) প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকিলে।
৫) অসম্ভব লম্বা নাভি রজ্জু থাকিলে।
৬) যমজ সন্তান হইলে।
৭) মৃত ভ্রুণ থাকিলে এবং ভ্রূণের আকার খুব ছোট থাকিলে।
প্রশ্ন- কর্ড প্রেজেন্টেশন বা নাভি রজ্জুর উপস্থিতির ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসা লিখ।
উত্তর: কর্ড প্রেজেন্টেশনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা- কর্ড প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে শিশু বাঁচিয়া থাকে। এক্ষেত্রে ধাত্রীর প্রধান কর্তব্য হইল চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত যাহাতে মেমব্রেন রাপচার না করে তাহার ব্যবস্থা করা। প্রোলান্স দেখা গেলে প্রথমে ধাত্রীকে দেখিতে হইবে কর্ডটিতে পালস বিট হইতেছে কিনা। যদি পালস বিট কর্ডে পাওয়া যায় তাহা হইলে বুঝিতে হইবে শিশু বাঁচিয়া আছে। যদি তাহা না হয় তবে বুঝিতে হইবে, শিশু মারা গিয়াছে।
শিশু জীবিত থাকিলে রোগিণীকে Knee chest পজিশনে রাখিয়া দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য গ্রহণ করা উচিত এবং অপারেশন করা উচিত। রোগিনীকে Knee chest পজিশনে রাখিলে কর্ডটি দ্রুত ভিতরে প্রবেশ করিয়া থাকে এবং শিশুটি সামনের দিকে ঝুলে। ফলে শিশুর জীবন বিপন্ন হয় না।
যদি দীর্ঘক্ষণ রোগিনী ঐভাবে থাকিতে না পারে, তাহা হইলে চিৎ হইয়া শুইয়া পা দুইটি উঁচু বালিশের উপর তুলিয়া রাখা উচিত এবং দ্রুত অপারেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হয়।
শিশু যদি মারা যায় তাহা হইলে যথাক্রমে যথাসম্ভব নিরাপদে প্রসবের ব্যবস্থা করিতে হইবে। প্রয়োজনে ফরসেপস দ্বারা প্রসব করানো উচিত।
প্রশ্ন- নাভিরজ্জুর স্থানচ্যুতির বিপদ বা জটিলতাসমূহ কি কি?
উত্তর: নাভি নাড়ীর স্থানচ্যুতি ঘটিলে মায়ের বিপদের আশংকা বাড়ে না। নাভীনাড়ীকে স্বস্থানে রাখার জন্য চেষ্টা করা উচিত, তাহা না হইলে তাহাতে রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হইতে পারে।
শিশুর পক্ষে বিপদ খুব বেশী। যতক্ষণ মেমব্রেন ঠিক থাকে, ততক্ষণ বিপদ ততটা থাকে না। কিন্তু রাপচারের পর শিশুর দেহ কর্ডে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে গর্ভফুল হইতে রক্ত প্রবাহের বিঘ্ন ঘটে। এই কারণে রক্ত চলাচল বন্ধ হইয়া শিশু মারা যাইতে পারে। অনেক সময় কর্ডের প্রোলান্স জানা যাওয়ার আগেই শিশু দম বন্ধ হইয়া মারা যায়। তবে মস্তক উপস্থিতিতে বস্তি উপস্থিতি অপেক্ষা গর্ভস্থ শিশুর বিপদ বেশী।
প্রশ্ন- কর্ড প্রেজেন্টেশন বা নাভিরজ্জুর উপস্থিতি ডায়াগনোসিস বা অবস্থা নির্ণয় কিভাবে করা হয়?
উত্তর: কর্ড প্রেজেন্টেশনের ডায়াগনসিস- শিশু জীবিত থাকিলে নাভি নাড়ীর ফাঁসে আঙ্গুল দিলে উহার দপদপ শব্দেই টের পাওয়া যায় যে উহা নাভি নাড়ীর ফাঁস। ভ্রুণ মৃত থাকিলে নাভি নাড়ীতে দপদপ শব্দ হয় না। এই স্থলে হাত বা পা উপস্থিতি বলিয়া ভুল হইতে পারে।
প্রশ্ন- এন্টিপার্টম হেমারেজ কাহাকে বলে? ইহা কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর: এন্টিপার্টাম হেমারেজ (Ante-Partum Haemorrhage) : গর্ভের সাত মাসের পর হইতে শিশু ভূমিষ্ট হইবার পূর্ব পর্যন্ত জননপথ হইতে রক্ত ক্ষরণ হইলে তাহাকে এন্টিপার্টম হেমারেজ বলে। ইহা একটি ভয়ঙ্কর লক্ষণ এবং উহাতে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যু ঘটিতে পারে।
এন্টিপার্টম হেমারেজের প্রকারভেদ-ইহা প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
১) অনিবার্য রক্তক্ষরণ (Unavoidable heamorrhage) বা প্লাসেন্টা প্রিভিয়া।
২) অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ (Accidental heamorrhage)
প্রশ্ন- এন্টিপার্টম হেমারেজের কারণসমূহ কি কি?
উত্তর: এন্টিপার্টম হেমারেজের কারণ-এন্টিপার্টন হেমারেজের কারণসমূহ নিম্নে দেওয়া হইল-
১) অজ্ঞাত কারণ। অনেক সময় কোন কারণ খুঁজিয়া পাওয়া যায় না।
২) প্লাসেন্টা প্রিভিয়া।
৩) প্রি-এক্লাম্পশিয়া।
৪) এ্যামশিয়া।
৫) এক্সটারনাল ভারশন।
৬) ক্রনিক নেফ্রাইটিস।
৭) হাইড্রামনিয়াস।
৮) তলপেটে আঘাত বা পড়িয়া আঘাত পাওয়া।
৯) এসেনসিয়াল হাইপারটেনশন।
১০) ফলিক এসিডের অভাব।.
১১) বহু প্রসবিনীদের রক্তহীনতা।
১২) অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমে।
প্রশ্ন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা অনিবার্য Preaevia রক্তক্ষরণ (Placenta or Unavoidable haemorrhage) বলিতে কি বুঝ? ইহার শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর: প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা অনিবার্য রক্তক্ষরণ- স্বাভাবিক অবস্থায় প- াসেন্টা বা ফুল জরায়ুর উপর দিকে কিংবা মধ্যস্থলে জন্মায় এবং সন্তান প্রসব হওয়ার পর আধঘণ্টার মধ্যেই ঐ ফুল জরায়ু গাত্র হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া বাহির হইয়া আসে। কিন্তু কোন কোন নারীর প্লাসেন্টা জরায়ুর অভ্যন্তর ভাগের নিচের মুখে কাছে জন্মায়। গর্ভের সাত মাস পর পর হইতে সন্তান ভূমিষ্ট হইবার পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময়ে প্ল- াসেন্টা ছিঁড়িয়া বাহির হইয়া আসে এবং তাহাতে অত্যধিক রক্তস্রাব হইয়া থাকে। এই অবস্থাকে 'প্লাসেন্টা প্রিভিয়া' অর্থাৎ 'আগে ফুল বাহির হওয়া' নাম দেওয়া হয়। ইহার আর এক নাম অনিবার্য রক্তক্ষরণ।
প্রশ্ন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা অনিবার্য রক্তক্ষরণের শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর: প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার শ্রেণীবিভাগ- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা অনিবার্য রক্তক্ষরণকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) প্রথম প্রকার (Type-i): পার্শ্ব সংলগ্ন প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Lateral Placenta Preaevia)- এই অবস্থায় কেবলমাত্র গর্ভফুলের নিম্নপ্রান্ত জরায়ুর নিম্নাংশের উর্ধভাগে সংলগ্ন থাকে। বাকী অংশ জরায়ুর উপরাংশে অবস্থান করে। জরায়ুর অন্তর্মুখ পর্দা দিয়া ঢাকা থাকে।
২) দ্বিতীয় প্রকার (Type-ii): প্রান্তদেশ সংলগ্ন প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Marginal Placenta Praevia)- এই অবস্থায় গর্ভফুল জরায়ুর অন্তর্মুখকে আবৃত করিয়া রাখে না, কিন্তু গর্ভফুলের কিনারা অন্তর্মুখের প্রান্তভাগে অবস্থান করে।
৩) তৃতীয় প্রকার (Type-iii) আংশিক কেন্দ্র সংলগ্ন প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Incomplete Placenta Praevia)- অন্তর্মুখ সম্পূর্ণ খোলা না থাকিলে গর্ভফুল অন্তর্মুখকে আংশিকভাবে ঢাকিয়া রাখে, আর অন্তর্মুখ বন্ধ থাকিলে গর্ভফুল অন্তর্মুখ চাকিয়া রাখে।
৪) চতুর্থ প্রকার (Type-iv) সম্পূর্ণ কেন্দ্র সংলগ্ন প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Complete Placenta Praevia): অন্তর্মুখ পুরাপুরি খুলিবার পরও গর্ভফুল সম্পূর্ণভাবে অন্তর্মুখকে ঢাকিয়া রাখে। এই অবস্থায় গর্ভফুল অন্তর্মুখের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করে। কাজেই পশ্চাৎভগে অবস্থানকারী পাসেন্টা প্রিভিয়া অধিকতর বিপজ্জনক।
চিত্র: প্লাসেন্টা প্রিভিয়া
প্রশ্ন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা অনিবার্য রক্তক্ষরণের কারণসমূহ কি কি?
উত্তর: গ্লাসেন্টা প্রিভিয়ার কারণ- যে সকল নারীর শীঘ্র শীঘ্র গর্ভসঞ্চার হয়, যাহারা বহুপ্রসবিনী বা যে সকল নারীর গর্ভস্রাবের প্রবণতা থাকে তাহাদের ক্ষেত্রে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। যমজ সন্তানের কারণেও ইহা হইতে পারে।
পাসেন্টা লোয়ার ইউটেরাইন সেগমেন্টের কিছু অংশে অথবা সম্পূর্ণ অংশে থাকার ফলে প্রসব ব্যথা আরম্ভ হওয়ার কিছুদিন পূর্বে ক্রমবর্ধমান সন্তানকে স্থান সংকুলানের জন্য যখন লোয়ার ইউটেরাইন সেগমেন্টের মাংসপেশী প্রলম্বিত হইতে থাকে তখন উহার গা হইতে প্লাসেন্টা আংশিকভাবে পৃথক হইয়া যাইতে পারে। ফলে রক্তস্রাব হইতে পারে। অথবা ডেলিভারী আরম্ভ হইলে সন্তান প্রসবের সুবিধার জন্য যখন লোয়ার ইউটেরাইন সেগমেন্টের মাংসপেশীগুলি সম্প্রসারিত ও প্রলম্বিত হইতে থাকে তখন প্লাসেন্টা আংশিকভাবে উহার গা হইতে পৃথক হইয়া যায় এবং পৃথক হওয়ার স্থান হইতে রক্তক্ষরণ হইতে থাকে।
প্রশ্ন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা অনিবার্য রক্তক্ষরণের লক্ষণাবলী কি কি?
উত্তর: প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার লক্ষণ- সাধারণত ছয় মাসের পর ২দিন, ৪দিন, এক সপ্তাহ বা এক মাস অন্তর হঠাৎ সামান্য সামান্য রক্তস্রাব হইতে দেখা যায়। ইহাতে কোন প্রকার বেদনা থাকে, প্রসূতি অস্বস্তি বোধ করে না। প্রসবের দিন যতই আগাইয়া আসে ফুলটি ততই জরায়ু গাত্র হইতে ছাড়িয়া আসিতে থাকে, প্রসূতির রক্তস্রাবও ততই বাড়িতে থাকে এবং জীবন সংশয় করিয়া তোলে।
প্রশ্ন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার বিপদ ও জটিলতা বর্ণনা কর।
উত্তর: প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার বিপদ ও জটিলতা- জরায়ুর নিম্নাংশে গর্ভফুল থাকে বলিয়া প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার ভ্রুণ মস্তক ভালভাবে বসিতে পারে না। সুতরাং ভ্রুণের উপস্থিতি ঠিকভাবে হয় না বা ম্যালপ্রেজেন্টেশন হইয়া থাকে। সময় মত ইহার চিকিৎসা না হইলে বিপদের আশংকা আছে। ইহার ফলে অধিক মাত্রায় রক্তক্ষরণ হয় এবং রোগিনীর মৃত্যু ঘটে।
প্রশ্ন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা অনিবার্য রক্তক্ষরণের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা- রোগিনীকে বিছানায় শোয়াইয়া রাখিয়া শান্ত করা এবং বিলম্ব না করিয়া হাসপাতালে প্রেরণ করা উচিত। ধাত্রী এবং চিকিৎসক কেহই সাধারণভাবে রোগিনীর যোনিপথে পরীক্ষা করা উচিত নয়। রক্তস্রাব কম হইলে রোগিনীকে ঘুমের ঔষধ দিয়া বিশ্রামে রাখিতে হইবে। অধিক রক্তস্রাব হইলে রোগিনীকে অজ্ঞান করিয়া প্রথমে পেট ও পরে জরায়ু কাটার এবং শরীরে রক্ত ঢুকানোর ব্যবস্থা রাখিতে হইবে। ডাক্তার আসিতে দেরী হইলে ধাত্রী রক্তস্রাব বন্ধের জন্য পর্দা ফাটাইয়া দিবেন (Rupture)। যোনিপথ পরিশুদ্ধ ছিপি বা প্লাগ দিয়া বন্ধ করিতে হইবে। জরায়ু মুখ এক আঙ্গুল খুলিলে গর্ভফুল জরায়ু মুখকে চাকিয়া রাখিয়াছে বুঝা গেলে প্রথমে পেট ও পরে জরায়ু কাটা ছাড়া আর অন্য কোন পথ নাই। জরায়ু মুখ দুই আঙ্গুল খুলিলে- গর্ভফুল প্রান্তভাগে অনুভূত হইলেও আজকাল সিজারিয়ান সেকশন করা হয়। জরায়ু মুখ দুই আঙ্গুলের বেশী খুলিলে- গর্ভফুল জরায়ু মুখ হইতে দূরে অনুভূত হইলে ফর্দা ফাটাইয়া শিশুর মস্তক গর্ভফুলের অবস্থানের দিকে ঠেলিয়া দিবার উদ্দেশ্যে শক্ত বন্দনীর ব্যবস্থা করিতে হইবে।
প্রশ্ন- অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ বা একসিডেন্টাল হেমারেজ কাহাকে বলে? ইহার প্রকারভেদ লিখ।
উত্তর: অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ বা একসিডেন্টাল হেমারেজ- প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল স্বাভাবিকভাবে জরায়ুর উপরের অংশে বা আপার ইউটেরাইন সেগমেন্ট লাগিয়া থাকা অবস্থায় কোনও কারণবশতঃ যদি গর্ভফুল আংশিকভাবে জরায়ু গাত্র হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় ও রক্তক্ষরণ হয় তাহাকে অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ বা একসিডেন্টাল হেমারেজ বলে।
অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ বা একসিডেন্টাল হেমারেজের শ্রেণীবিভাগ-অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণকে নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায়। যথা-
১) গুপ্ত রক্তক্ষরণ (Concealed heamorahage)- এই অবস্থায় রক্ত দেখা যায় না, কিন্তু রক্ত গর্ভফুল এবং জরায়ুর দেওয়ালের মধ্যে জমিতে থাকে। পেটে অসহ্য ব্যথা হয়।
২) ব্যক্ত রক্তক্ষরণ (Revealed heamorahage)- এই অবস্থায় গর্ভফুলের প্রান্তদেশ হইতে রক্তস্রাব হয় এবং রক্ত জরায়ু এবং পর্দার ভিতর দিয়া গিয়া জরায়ু গ্রীবা দিয়া নির্গত হয়।
৩) গুপ্ত ব্যক্ত মিশ্রিত রক্তক্ষরণ (Combined heamorahage)-কোন কোন ক্ষেত্রে গর্ভের সাত মাসের পর অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণের ক্ষেত্রে গর্ভফুলের প্রান্ত হইতে ব্যক্ত রক্তক্ষরণ হইয়া থাকে। আবার জরায়ুর দেওয়ালে এবং গর্ভফুলের ভিতরেও কিছু রক্তক্ষরণ হয় এবং গর্ভফুলের পিছনে রক্ত জমাট বাঁধে।
প্রশ্ন- অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ 'বা একসিডেন্টাল হেমারেজের কারণসমূহ কি কি?
উত্তর: অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণের কারণ- নিম্নলিখিত কারণে অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ ঘটিয়া থাকে।
১) রক্তদৃষ্টিজনিত কারণ (Toxaemic): শতকরা ৭৫-৮০% ক্ষেত্রে এই কারণে অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ হইয়া থাকে। এই অবস্থায় প্রস্রাবে এলবুমিন থাকে, তৎসহ প্রি-এক্ল্যাম্পশিয়া, এক্ল্যাম্পশিয়া, হাইপারটেনশন, ক্রনিক নেফ্রাইটিস প্রভৃতি থাকে। সাধারণ রক্তচাপের আপাত লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় না এমন রক্তচাপ এবং দীর্ঘদিনের মূত্রগ্রন্থি প্রদাহ বিশেষভাবে গুপ্ত এবং ব্যক্ত মিশ্রিত রক্তক্ষরণে রক্তদুষ্টিজনিত কারণ বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।
২) উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension): উচ্চ রক্তচাপও অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণের কারণ হইতে পারে।
৩) আঘাতজনিত কারণ (Traumatic)- পেটের উপরে হাত দিয়া খুব জোরে ঘুরাইয়া বস্তি উপস্থিতিকে মস্তক উপস্থিতিতে পরিণত করিতে গিয়া শিশুর আঘাত লাগিতে পারে, নাভিরজ্জু ছোট থাকিলে এই বস্তি উপস্থিতিকে মস্তক উপস্থিতি করিতে গেলে নাভিরুজ্জতে টান পড়িয়া রক্তপাত হইতে পারে।
৪) রক্তক্ষরণের কোন কারণ খুঁজিয়া না পাওয়া (Idiopatic)- অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণের বহুক্ষেত্রেই কোন কারণ খুঁজিয়া পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন- অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ একসিডেন্টাল হেমারেজের লক্ষণগুলি কি কি? বা
উত্তর : অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণের লক্ষণ- অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণের নিম্নলিখিত লক্ষণাবলী দৃষ্ট হয়। যথা-
১) গর্ভফুলের প্রান্তদেশ হইতে রক্তস্রাব হয় এবং রক্ত জরায়ু এবং পর্দার ভিতর দিয়া গিয়া জরায়ু গ্রীবা দিয়া নির্গত হয়।
২) রক্তক্ষরণ অধিক হইলে মূর্ছার ভাব হয়।
৩) নাড়ী ক্ষীণ ও চঞ্চল হয়।
৪) ঠোঁটের রং ফ্যাকাশে থাকে।
৫) শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
৬) বেশী মাত্রায় গুপ্ত বা ব্যক্ত রক্তক্ষরণে-
ক) অত্যধিক অস্থিরতা দৃষ্ট হয়।
খ) সামান্যতেই হাঁপাইয়া উঠে।
গ) চোখে অন্ধকার দেখে এবং মূর্ছা দেখা দেয়।
ঘ) হাঁ করিয়া বেশী হাওয়া লইবার চেষ্টা করে।
৭) নাড়ীর স্পন্দনহীনতা দেকা দেয়।
প্রশ্ন- অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণ বা একসিডেন্টাল হেমারেজের চিকিৎসা বর্ণনা কর।
উত্তর: অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণের চিকিৎসা- ইহা দুই প্রকারে করা হইয়া থাকে। যথা-
১) গুপ্ত রক্তক্ষরণের চিকিৎসা- চিকিৎসার মূখ্য উদ্দেশ্য হইল হঠাৎ শকের হাত হইতে রোগিনীকে রক্ষা করা। ব্যথ কমানোর জন্য চিকিৎসক ০.২৫ গ্রেন মরফিন ত্বকের নিচে ইনজেকশন দিবার ব্যবস্থা করেন। রক্তক্ষয় হেতু রোগিনীর দেহে রক্ত দেওয়া হয়। ধীরে-ধীরে পরিমিত গরম পানীয়েরও ব্যবস্থা করা হয়। এই ব্যবস্থার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রোগিনী অবসাদজনিত অবস্থার বা শকের টাল সামলাইতে পারিবেন। জরায়ুর শক্তি ফিরিয়া পাওয়া যাইবে এবং প্রসব ব্যথা হেতু জরায়ু সংকোচন আরম্ভ হইবে এবং যুগপৎ মৃত শিশু, গর্ভফুল ও রক্তের ডেলাসমূহ বাহির হইয়া যাইবে।
২) ব্যাক্তি রক্তক্ষরণের চিকিৎসা- অপ্রত্যাশিত রক্তক্ষরণের পর প্রায়ই সঙ্গে সঙ্গে প্রসব ব্যথা আরম্ভ হয়। রক্ত ক্ষরণ বন্ধ না হইলে ব্যথার গতি ত্বরান্বিত করার জন্য চিকিৎসক পর্দা ফাইয়া দিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারেন। রক্তক্ষরণ বন্ধ হইবার পরও প্রসব ব্যথার সূত্রপাত না হইলে মাতাকে ১০-১৪ দিন পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে।
প্রশ্ন- পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণে লক্ষণাবলী কি কি?
উত্তর: পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ- স্বাভাবিক প্রসবের পর গর্ভফুল পড়ার আগে এবং পরে ৪ আউন্স হইতে ১০ আউন্সের বেশী রক্তক্ষরণ হয় না। শিশু ভূমিষ্ট হইবার পর হইতে অর্থাৎ প্রসবের পর হইতে প্রসবোত্তর কালের শেষ পর্যন্ত যে কোন সময়ে জননেন্দ্রিয় দিয়া যদি ২০ আউন্স বা তাহারও অধিক রক্তক্ষরণ হইয়া রোগিনীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় তবে তাহাকে পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বলে।
পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্ত ক্ষরণের প্রকারভেদ-
প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ দুই প্রকারের। যথা-
১) প্রাইমারী ও
২) সেকেন্ডারী।
১) প্রাইমারী পোস্ট পার্টাম হেমারেজ প্রসবের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রক্তক্ষরণকে প্রাইমারী পোস্টপার্টাম হেমারেজ বলে। ইহাকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
ক) ট্রউম্যাটিক পোস্ট পার্টাম হেমারেজ- জেনিট্যাল ক্যানেলের কোন অংশের বিদারণ বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য বা আঘাতজনিত যে রক্তস্রাব তাহাই এই শ্রেণীর।
খ) অ্যাটোনিক পোস্ট পার্টাম হেমারেজ অত্যধিক অবসাদবশত বা জরায়ু পেশীর সংকোচন ও দৃঢ়রূপে পশ্চাদকর্ষণ অভাববশতঃ এই অবস্থা সৃষ্টি হয়।
২) সেকেন্ডারী পোস্ট পার্টাম হেমারেজ সন্তান প্রসবের ২৪ ঘণ্টা পরে এবং সাধারণত ১ মাসের মধ্যে যে রক্তক্ষরণ হয় তাহাই সেকেন্ডারী পোস্ট পার্টাম হেমারেজ।
প্রশ- পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণের কারণসমূহ কি কি?
উত্তর: পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণের কারণ- পোস্ট পার্টান হেমারেজ এর কারণ নিম্নরূপ। যথা-
১) জরায়ু মুখ, যোনিপথ বা যোনিদ্বারের নরমতন্ত্র ছিড়িয়া যাওয়ার কারণে।
২) জরায়ু শক্ত না হইবার জন্য গর্ভফুল হইতে রক্তক্ষরণ।
৩) ফুলের অংশ বিশেষ, ভ্রণ উপরিস্থিত মেমব্রেনগুলির কোন অংশ অথবা ব্লাড ক্লড থাকা-অর্থাৎ প্রসবের তৃতীয়াবস্থার অনুচিত ভাবে নির্বাহ।
৪) জরায়ু গাত্রস্থিত পেশীসূত্রের ও স্নায়ুর দুর্বলতা ও শিথিলতা।
৫) অত্যধিক পরিমাণে লাইকার এমনাই পেরোর থলির মধ্যে জমা হওয়া।
৬) বহুক্ষণ ব্যাপী প্রসব বেদনা।
৭) যমজ সন্তান উৎপত্তির জন্য জরায়ুর অত্যধিক স্ফীতি।
৮) অতি শীঘ্র শীঘ্র প্রসব।
৯) জরায়ু মধ্যে মায়োমেটা প্রভৃতি আকারে অর্বুদ।
১০) বহুবার গর্ভধারণ করার ফলে জরায়ু, পেশী সূত্রগুলি ধ্বংস হওয়া।
১১) পূর্বে রক্তস্রাবজনিত দুর্বলতা।
১২) পাসেন্টা প্রিভিয়া।
প্রশ্ন- পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণের লক্ষণাবলী কি কি?
উত্তর : পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণের লক্ষণ-
সাংঘাতিক প্রকার রক্তস্রাব হইতে থাকিলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দৃষ্ট হইবে। যথা-
১) নাড়ী- নাড়ীর বেগ ক্রমশঃ দ্রুত হইতে থাকে কিন্তু অতি ক্ষীণ ও দুর্বল, অবশেষে এতই ক্ষীণ হয় যে উহা অনুভূত হয় না।
২) বিবর্ণতা- গাত্রত্বক মোমের ন্যায় সাদা হয়, ওষ্ঠ ফ্যাকাশে নীলবর্ণ এবং চক্ষু বসিয়া যায়।
৩) গাত্রতাপ- গাত্রতাপ কনিয়া যায়। ৯৬০-৯৬.৫০ পর্যন্ত।
৪) তৃষ্ণা- তৃষ্ণা বৃদ্ধি পায় এবং রোগিনীর অনেকবার বমনোদ্রেক ও বমন হয়।
৫) শ্বাসকষ্ট- শ্বাসরোধ হইয়া আসে, জোরে নিঃশ্বাস নিতে চেষ্টা করে ও বাতাস চায়।
৬) অস্থিরতা- সাংঘাতিক অবস্থায় চরম অস্থিরতা দেখা দেয়।
৭) দৃষ্টিহীনতা- অনেক স্থলে সাময়িকভাবে দৃষ্টিহীনতা পরিলক্ষিত হয়। তবে এই অবস্থা ২৪ ঘণ্টার বেশী থাকে না।
প্রশ্ন- পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণের ডায়াগনসিস লিখ।
উত্তর: পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্ত ক্ষরণের ডায়াগনসিস-
প্রথমেই দেখিতে হইবে রক্তস্রাব কোন আঘাতজনিত কিনা বা জরায়ুর সংকোচন অভাব হেতু সংঘটিত হইতেছে। আবার রক্তস্রাব বাহিরে প্রকাশিত না হইয়া জরায়ু গহ্বরেও অতিমাত্রায় সংঘটিত হইতে পারে। সুতরাং রক্ত বাহিরে দিবার পূর্বেই জরায়ুটি বর্ধিতাকার প্রাপ্ত হইতেছে কিনা তাহা নির্ধারণ আবশ্যক। অন্যান্য লক্ষণ দেখা না গেলেও বাহ্যিক বা আভ্যন্তরিক রক্তস্রাবসহ রোগিনীর নাড়ীর গতি বৃদ্ধি বুঝিতে পারা যাইবে।
যোনিপথে পরীক্ষা করিলে অত্যধিক রক্তক্ষরণ দৃষ্ট হয়। রক্তক্ষরণের সাথে অস্থিরতা হাত পা ঠাণ্ডা হওয়া, নাড়ীর বর্ধিত গতি, মুখের বিবর্ণতা, রক্তচাপের নিম্নগতি, হাঁ করিয়া বাতাস পাওয়ার জন্য ছটফট করা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যাইবে।
প্রশ্ন- পোস্ট পার্টাম হেমারেজ বা প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণের চিকিৎসা আলোচনা কর।
উত্তর: পোস্ট পার্টাম হেমারেজের চিকিৎসা- আঘাতজনিত রক্তস্রাব বলিয়া সন্দেহ হইলে ক্লাইটরিস ও সারভিক্স পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যদি দেখা যায় যে সারভিক্স ও ক্লাইটরিস ছিড়িয়া গিয়াছে তবে তাহা সেলাই করিয়া দিতে হইবে।
এটোনিক পোস্ট পার্টাম হেমারেজের ক্ষেত্রে ঔষধ ছাড়াও নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।
১) প্রসূতির মাথা নিচু করিয়া কোমর ও পায়ের দিক উঁচু করিয়া শয়ন করাইতে হইবে।
২) ফুলটি জরায়ু বা যোনি মধ্যে কোথায় আছে তাহা ভালভাবে পরীক্ষা করা উচিত। যদি জরায়ু মধ্যে থাকে তবে তলপেটটি হাত দিয়া ঘর্ষণ করিয়া জরায়ুটি শক্ত করিয়া উহার মাথাটি হাতের মুঠায় আনিয়া চাপ দিয়া ফুলটি বাহির করিতে হইবে। খুব সাবধানে অভিজ্ঞ ধাত্রী দ্বারা করা উচিত।
৩) খুব বেশী রক্তস্রাব হইলে প্রসূতির তলপেটে ও যোনি মধ্যে ঠাণ্ডা জলের পটি বা বরফের টুকরা রাখিলে রক্তস্রাব বন্ধ হইতে পারে।
৪) অনেক সময় জীবাণুমুক্ত গজ দ্বারা জরায়ু প্লাগ করিলেও রক্তস্রাব বন্ধ হয়।
৫) পরিষ্কার একখণ্ড কাপড় ভিনিগারে ভালভাবে ভিজাইয়া জরায়ু গহ্বরে প্রবেশ করাইলে রক্ত বন্ধ হয়।
প্রশ্ন- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া ও (আকস্মিক) হেমারেজের মধ্যে একসিডেন্টাল পার্থক্য কি?
বা, অনিবার্য রক্তস্রাব ও আকস্মিক বা অপ্রত্যাশিত রক্তস্রাবের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: প্লাসেন্টা প্রিভিয়া ও একসিডেন্টাল হেমারেজের মধ্যে পার্থক্য-
একসিডেন্টাল বা আকস্মিক বা অপ্রত্যাশিত রক্তস্রাব
১। প্রসবের অনেক পূর্বেই প্রচুর রক্তপাত হয়।
২। একেবারেই রক্তস্রাব আরম্ভ হইয়া ইহা অবিরত হইতে থাকে এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতে থাকে।
৩। রক্তদৃষ্টি লক্ষণ বর্তমান থাকে-শোথ, প্রস্রাবে এলবুমিন এবং তলপেটে বেদনা হয়।
৪। এই ক্ষেত্রে জরায়ু উত্তেজিত হইয়া প্রসব হয়।
৫। প্রথম প্রসূতিদের প্রায়ই হয় না। সাধারণতঃ বহু প্রসবিনীদেরই বেশী হয়।
৬। ভ্রুণটি সহজে হাতে অনুভূত হয় না।
৭। সন্তান প্রসবে প্লাসেন্টা বিঘ্ন সৃষ্টি করে না।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা অনিবার্য রক্তস্রাব
১। প্রসব শুরু হওয়ার সময় রক্তপাত শুরু হয়।
২। কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ অন্তর বার বার রক্তস্রাব হয়।
৩। রক্তদৃষ্টি লক্ষণ থাকে না, বেদনা থাকে না এবং রক্তস্রাবের কারণ বুঝিতে পারা যায় না।
৪। এই ক্ষেত্রে তাহা হয় না।
৫। এই ক্ষেত্রে এরূপ কোন নিয়ম নাই।
৬। ক্রনটি স্বাভাবিক অবস্থায় ন্যায় হাতে অনুভূত হয়।
৭। সন্তান প্রসবে প্লাসেন্টা বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন- গর্ভপাত বা এবোরশন বা মিসক্যারেজ কাহাকে বলে?
উত্তর: গর্ভপাত বা এবোরশন বা মিসক্যারেজ- গর্ভসঞ্চারের পর ৩য় ও ৪র্থ মাসের পূর্বে অর্থাৎ প্লাসেন্টা বা ফুল পূর্ণভাবে সংঘটিত হওয়ার পূর্বে যদি জরায়ু হইতে ভ্রূণটি নির্গত হইয়া যায় তাহাকে এবোরশন বা গর্ভপাত বলা হয়। প্লাসেন্টা পূর্ণভাবে সংগঠিত হওয়ার পর অর্থাৎ ৫ম বা ৬ষ্ঠ মাসে গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হইয়া জরায়ু হইতে বহিরাগমন করিলে উহাকে মিসক্যারেজ বলে। ঐ সময়ের পর হইতে আটত্রিশ সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত যে কোন সময় ভ্রুণ নির্গত হইলে তাহাকে অকাল প্রসব বলে।
প্রশ্ন- গর্ভপাতের শ্রেণীবিভাগ কর।
উত্তর : গর্ভপাত বা এবোরশনের শ্রেণীবিভাগ- গর্ভপাতকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) জোর করিয়া গর্ভপাত ঘটানো।
২) আপনা থেকেই গর্ভপাত হইয়া যাওয়া।
বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়া গর্ভপাত হইতে পারে। অনেকে এই স্তরগুলিকে শ্রেণীবিভাগ হিসাবে গণ্য করেন। স্তরগুলি হইল-
১) অনিশ্চিত গর্ভপাত (Threatened Abortion): গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন
মাসের মধ্যে ভয়জনিত কারণে জরায়ু হইতে রক্তস্রাব হইতে থাকিলে উহাকে গ্রেটেড এবোরশন বলিয়া মনে করা হয়। এই অবস্থায় ক্রশটি আংশিকভাবে জরায়ু গাত্র হইতে পৃথক হইয়াছে কিন্তু সম্পূর্ণ পৃথক হইয়া নাই বলিয়া ভ্রূণটির মৃত্যু তখনও হয় নাই। রক্তপাত ধীরে ধীরে বন্ধ হইলে আবার গর্ভ চলিতে শুরু করে।
২) নিশ্চিত গর্ভপাত (Inevitable Abortion): যখন কোন চিকিৎসা দ্বারা গর্ভপাত নিরোধ সম্ভব নয় এবং অনবরত রক্তস্রাব চলিতেই থাকে ও প্রসবের লক্ষণ দেখা দেয় তাহাকে নিশ্চিত গর্ভপাত বলে। এই অবস্থায় ভ্রুণ গর্ভ হইতে সম্পূর্ণ বাহির হইয়া যায়।
৩) আংশিক গর্ভপাত (Incomplete Abortion): জরায়ু হইতে ভ্রূণটি বাহির হইয়া গিয়া যদি গর্ভফুলের টুকরা প্রভৃতি জরায়ু গাত্রে আটকাইয়া থাকে এবং ফলে চোয়াইয়া রক্ত পড়িতেই থাকে তাহাকে আংশিক গর্ভপাত বলে। এই অবস্থায় পূর্ণ গর্ভপাত না করাইলে ভিতরে উহা গচিয়া যায় এবং জীবাণু দূষণ হইয়া থাকে।
৪) সম্পূর্ণ গর্ভপাত (Complete Abortion): যখন জরায়ু হইতে ভ্রশ, গর্ভফুল ও পর্দার সবটুকু আপনা হইতেই বাহির হইয়া যায় তাহাকে সম্পূর্ণ গর্ভপাত বলে।
৫) মিসড এবোরশন (Missed Abortion): ওভামটি গর্ভে মরিয়া গেলেও জরায়ু হইতে উহা নির্গত হয় না। এইরূপে ইহা জরায়ু মধ্যে কয়েক সপ্তাহকাল অবস্থান করিতে পারে। গর্ভপাতের আশংকা হইলেও গর্ভপাত হয় না, কিন্তু ডিম্বাণু জরায়ুতে থাকে এবং বিকৃত অবস্থায় বা মোল হইয়া অনেকদিন পরে গর্ভপাত হয়। ইহাকে মিডস এবোরশন বা বিকৃত গর্ভপাত বলে।
৬) সারভাইক্যাল এবোরশন (Cervical Abortion): এইরূপ গর্ভপাতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এই অবস্থায় সার্ভিক্সটি ডাইলেট করাইয়া আঙ্গুল দ্বারা ওভামটিকে নির্গত করিয়া দিতে হইবে।
৭) থেরাপিউটিক এবোরশন (Therapeutic Abortion): গর্ভিনীর জীবন সংশয় হইতে পারে মনে করিয়া ডাক্তার যখন স্বামী এবং স্ত্রীর (গর্ভিনীর) মত লইয়া গর্ভপাত করিয়া থাকেন তাহাকে থেরাপিউটিক এবোরশন বলে।
৮) বে আইনী গর্ভপাত (Criminal Abortion): গর্ভবতী নারী নিজে বা অন্যের দ্বারা ঔষধ বা যন্ত্রের সাহায্যে গর্ভপাত করিলে তাহাকে বে আইনী গর্ভপাত বলে।
৯) সেপটিক এবোরশন (Septic Abortion): ভ্রূণ ও জরায়ু জীবাণুদুষ্ট অবস্থায় ভ্রূণের গর্ভপাত হইলে তাহাকে সেপটিক এবোরশন বলে।
১০) হ্যাবিচুয়্যাল এবোরশন (Habitual Abortion)- যখন কোন মহিলার পরপর ৩টি এবোরশন হয় তখন তাহাকে হ্যাবিচুয়্যাল এবোরশন বলে।
প্রশ্ন- গর্ভপাতের কারণসমূহ কি কি?
উত্তর: গর্ভপাতের কারণসমূহ ডাঃ জেলেটের প্রণালী অনুযায়ী গর্ভস্রাবের কারণসমূহকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
ক) যে সকল কারণে জরায়ু হইতে ভ্রূণের বিচ্যুতি ঘটায়।
খ) যে সকল কারণে ভ্রূণের মৃত্যু সংঘটন করে।
ক) যে সকল কারণে জরায়ু হইতে ভ্রুনের বিচ্যুতি ঘটায় ফলে গর্ভপাত হয়-
১) ডেসিভুয়ার আবরণী পর্দায় প্রদাহিত অবস্থা কিংবা ভ্রুণের সিফিলিস রোগ।
২) জরায়ু গাত্রে টিউমার বা বস্তিপ্রদেশে কোন স্থলে টিউমার কিংবা জরায়ুর স্থানবিচ্যুতি হইলে জরায়ুতে চাপ পড়ে এবং তাহাতে জরায়ুর স্বাভাবিক বিবৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৩) অনেকদিন যাবত অধিক পরিমাণে উত্তেজক ও তেজস্কর দ্রব্য পানাহার, আরগট প্রভৃতি ঔষধাদি সেবন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, অস্বাভাবিক মানসিক উত্তেজনা বা অতিরিক্ত রতিক্রিয়ার ফলে জরায়ুর সংকোচন ক্রিয়া বৃদ্ধি পাইয়া জরায়ু হইতে ভ্রুণের বিচ্যুতি ঘটায়।
৪) হঠাৎ আঘাত পাওয়া বা পড়িয়া যাওয়া, পেটে কিল, ঘুষি, লাথি মারা, জরায়ু মধ্যে কোন যন্ত্র প্রবিষ্ট করানো প্রভৃতি আঘাতজনিত কারণে কিংবা ক্রোধ, আনন্দ, শোক প্রভৃতি মানসিক উত্তেজনা, মূর্ছা, বমন, ভারী দ্রব্য উত্তোলন প্রভৃতি কারণে শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পাইলে জরায়ু হইতে ভ্রুণ আংশিক বা সম্পূর্ণ বিচ্যুত হইয়া গর্ভস্রাব হইতে পারে। গর্ভাবস্থায় গরুর গাড়ী, পালকি, ঝাঁকুনি লাগে এমন যানবাহনে আরোহন করিলে ও ভ্রমণ করিলে গর্ত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
খ) যে সকল কারণে ভ্রুণের মৃত্যু হইয়া গর্ভস্রাব হয়-
১) মাতৃগত কারণ-অল্প বয়সে বিবাহের কারণে যদি স্ত্রী অপরিণত বয়সে গর্ভবতী হন তবে সেই গর্ত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মূত্রযন্ত্রাদির পীড়া, সিফিলিস, ডেসিডুয়ারা সংক্রান্ত পর্দার প্রদাহ, হৃদরোগ প্রভৃতি পীড়ার ফলে মাতার শরীরে বিষাক্ততা সৃষ্টি হইতে পারে। ইহা ছাড়া টাইফয়েড জ্বর, অতিরিক্ত গাত্রতাপ বিশিষ্ট জ্বর, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, বসন্ত ও হাম রোগ, কলেরা, দীর্ঘদিন ব্যাপী পেটের পীড়া, মেদাধিক্য, কার্বনিক গ্যাস দ্বারা রক্তদুষ্টি, সীসা, সুরা বা অন্য প্রকার বিশেষ বিষাক্ততা মাতৃগত কারণের মধ্যে উলেখযোগ্য। মাতার মনে শোক, ভয় প্রভৃতি মানসিক উদ্বেগ হইলে ইহার প্রভাবে ভ্রূণের মৃত্যু হইতে পারে।
২) পিতৃগত কারণ-পিতার সিফিলিস রোগ বিশেষ উলেখযোগ্য। গর্ভাবস্থায় সিফিলিস রোগগস্ত স্বামীর সহিত সহবাস করিলে উক্ত রোগের বিষ গর্ভস্থ ভ্রুণের মৃত্যু ঘটাইয়া থাকে।
৩) ভ্রুণের বিকৃত গঠন হওয়ার জন্য, কর্ড এর সহিত উহা জড়াইয়া যাওয়ার জন্য বা লাইকার অ্যামনিয়াই অতিরিক্ত উৎপন্ন হওয়ায় ভ্রুণের মৃত্যু ঘটিতে পারে।
প্রশ্ন- গর্ভপাতের জটিলতাসমূহ কি কি?
উত্তর : গর্ভপাতের জটিলতা-গর্ভপাতের জটিলতা বিশেষভাবে দুইটি ক্ষেত্রেই প্রকট হইয়া উঠে। যথা-সেপটিক এবোরশনে এবং মিসড এবোরশন বা বিকৃত গর্ভপাতে।
সেপটিক এবোরশন বা জীবাণুদুষ্ট গর্ভপাতে আংশিক গর্ভপাত হইলে জরায়ু জীবাণুদুষ্ট হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হইয়া উঠে। বে আইনী গর্ভপাতের পরেই এই জটিলতা বৃদ্ধি পায়। জরায়ু জীবাণুদুষ্ট হওয়ার পর জরায়ু গহ্বরে বা গোটা পেটে জীবাণু সংক্রমণ হইতে পারে। রক্তে জীবাণু সংক্রমিত হইয়া ১০৪০ বা তার উপরেও জ্বর উঠিতে পারে, সে সাথে শীতের প্রাবল্য থাকিতে পারে। ইহাকে সেপটিসিমিয়া বলে। ফ্যালোপিয়ান টিউবে জীবাণু প্রবেশ করিলে নলদ্বয়ে প্রদাহ হইতে পারে এবং নলদ্বয় একেবারে বন্ধ হইয়া গেলে বন্ধ্যাত্ব হইতে পারে।
বিকৃত গর্ভপাতের জটিলতাও কম নয়। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে গর্ভপাতের
আশংকা থাকে কিন্তু গর্ভপাত হয় না। এই অবস্থায় রক্তস্রাব হয় কিছু জরায়ুর ভিতরের সমুদয় বস্তু বাহির হইয়া আসে না। ভ্রুণের খলি ও জরায়ুর দেওয়ালের মধ্যে রক্তপাত হয় কিন্তু ডিম্বাণুর মৃত্যু ঘটে না। জরায়ুর আকার বাড়ে না এবং জরায়ুর ভিতর বিকৃত পিণ্ড বা মোলের অবস্থান হেতু ঋতু হইতে পারে না। ফলে গর্ভের অন্যান্য লক্ষণ না থাকিলেও রোগিনী মনে করেন তাহার গর্ভ স্বাভাবিক আছে। এই অবস্থায় যোনিপথ দিয়া ফোঁটা ফোঁটা রক্ত চুয়াইয়া পড়িতে পারে অথবা রক্তের চিহ্ন নাও থাকিতে পারে। বহুমাস পর্যন্ত এই বিকৃত পিণ্ড ভিতরে থাকিতে পারে। ভ্রূণের ভিতর রক্তস্রাব হইলে ভ্রুণ নষ্ট হইয়া যায় এবং একটি মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। বেশ কিছুকাল ভিতরে থাকিলে ভ্রূণের অস্থিগুলি আলগা হইয়া যায়।
প্রশ্ন- অনিশ্চিত গর্ভপাত বা আশংকাজনক গর্ভপাত বা থ্রেটেড এবোরশন (Threatened Abortion) বলিতে কি বুঝ? ইহার লক্ষণ কি?
উত্তর: অনিশ্চিত গর্ভপাত বা আশংকাজনক গর্ভপাত বা প্রেটেড এবোরশন-
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিনমাসের মধ্যে ভয়জনিত বা অন্য কোন কারণে ভ্রূণটি জরায়ু গাত্র হইতে পৃথক হইয়া রক্তস্রাব হইতে থাকিলে উহাকে অনিশ্চিত গর্ভপাত বা থ্রেটেন্ড এবোরশন বলে। এই অবস্থায় ভ্রূণটি আংশিকভাবে জরায়ু গাত্র হইতে পৃথক হয় কিন্তু সম্পূর্ণ পৃথক হয় না বলিয়া ভ্রুণের মৃত্যু তখনও হয় না।
অনিশ্চিত বা আশংকাজনক 'গর্ভপাতের লক্ষণ-
১) রক্তস্রাবের সহিত তলপেটে অম্লাধিক পরিমাণে শূল বেদনার মত যন্ত্রণা।
২) সারভিক্স ততখানি প্রসারিত হয় না।
৩) রক্তস্রাবের পরিমাণ খুবই সামান্য।
৪) মাঝে মাঝে রক্তস্রাব দেখা দেয়, আবার বন্ধ থাকে।
৫) বিছানার বিশ্রাম নিলে রক্তস্রাব কমিয়া যায় বা বন্ধ হয়।
প্রশ্ন- অনিশ্চিত গর্ভপাতের ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: অনিশ্চিত বা আশংকাজনক গর্ভপাতের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা-
১) গর্ভপাতের আশংকা দেখা দিলে রোগিনীকে সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে। বিশ্রাম ও সুচিকিৎসায় গর্ভটি রক্ষা পাইতে পারে।
২) সহজপাচ্য ও হালকা খাদ্য রোগিনীকে দিতে হইবে।
৩) যোনি পরীক্ষা করা উচিত হইবে না। কারণ তাহাতে নিশ্চিত গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।
৪) যোনি হইতে যে রক্ত বাহির হয় তাহার রূঙ যদি লাল হইতে পিঙ্গলবর্ণ ধারণ করে এবং ধীরে ধীরে বর্ণহীন হয় তবে বুঝিতে হইবে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাইতেছে।
৫) রক্তস্রাব বন্ধ হওয়ার পরও রোগনীকে এক সপ্তাহ বিছানায় পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে।
প্রশ্ন- অনিশ্চিত বা আশংকাজনক গর্ভপাতের জটিলতা লিখ।
উত্তর: অনিশ্চিত বা আশংকাজনক গর্ভপাতের জটিলতা আশংকাজনক গর্ভপাতের জটিলতা হিসাবে বিকৃত গর্ভপাত বা মিসড এবোরশন হইতে পারে বা নিশ্চিত গর্ভপাতও হইতে পারে। ইহাতে ভ্রূণটি চারিদিকে রক্ত পরিবেষ্টিত হইয়া মারা যাইতে পারে।
প্রশ্ন- ইনএভিটেবল নিশ্চিত এবোরশন গর্ভপাত বা (Inevitable Abortion) বলিতে কি বুঝ? ইহার লক্ষণাবলী ও ব্যবস্থাপনা লিখ। নিশ্চিত গর্ভপাতের পরিণতি কি লিখ।
উত্তর: নিশ্চিত গর্ভপাত বা ইনএভিটেবল এবোরশন-যখন কোন চিকিৎসা দ্বারা গর্ভপাত নিরোধ করা সম্ভব নয় এবং অনবরত রক্তস্রাব চলিতেই থাকে ও প্রসব লক্ষণ দেখা দেয় তাহাকে নিশ্চিত গর্ভপাত বলে। এই অবস্থায় ভ্রুণ উহার কোরিয়ন, ডেসিভুয়া ও পাসেন্টাসহ জরায়ু গাত্র হইতে পৃথক হইয়া পড়ে। ফলে ভ্রূণের জীবিত থাকা মোটেই সম্ভবপর নয়।
নিশ্চিত গর্ভপাত বা ইনএভিটেবল এবোরশনের লক্ষণাবলী-
১) যোনিপথে রক্তস্রাবের পরিমাণ বেশী হয়।
২) জরায়ু সংকোচন শক্তিশালী ও গতিশীল হয়।
৩) তলপেটে ব্যথা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইতে থাকে।
৪) জরায়ু গ্রীবা প্রসারিত হইতে থাকে।
৫) রক্তহীনতা, ক্ষীণ নাড়ী ও নিম্ন রক্তচাপ দেখা দেয়।
নিশ্চিত গর্ভপাত বা ইনএভিটেবল এবোরশনের ব্যবস্থাপনা-
ধাত্রী উপস্থিত থাকিলে জীবাণু প্রবেশ রোধ করিবার জন্য সর্বপ্রকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। রোগিনীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে এবং পরিশুদ্ধ প্যাড ব্যবহার করাইতে হইবে। জরায়ুর ভিতর হইতে ভ্রুণ ও উহার কোরিয়ন ও ডেসিডুয়া এবং ফিটাস উহার প্ল্যাসেন্টাসহ বাহির হওয়ার জন্য ঔষধ সেবন করানো উচিত। ঔষধ ব্যর্থ হইলে রোগিনীকে অজ্ঞান করিয়া জরায়ু মধ্যস্থিত উপরোল্লিখিত বস্তুগুলি বাহির করিয়া ফেলিতে হইবে। রোগিনীর পূর্ণ বিশ্রাম ও আরামের ব্যবস্থা করিতে হইবে। প্রয়োজনে ক্যাথিটার ব্যবহার করা হইতে পারে। অধিক রক্তস্রাব হইলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
নিশ্চিত গর্ভপাতের পরিণতি-
ইহার পরিণতি দুই প্রকারের হইতে পারে। যথা-
১) পূর্ণ গর্ভপাত বা Comlete Abortion
২) আংশিক গর্ভপাত বা Incomplete Abortion.
প্রশ্ন- কমপ্লিট এবোরশন (Complete Abortion) বা পূর্ণ গর্ভপাত বলিতে কি বুঝ? ইহার কারণ, লক্ষণাবলী ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর : কমপ্লিট এবোরশন বা পূর্ণ গর্ভপাত-যখন জরায়ু হইতে ভ্রুণ, গর্ভফুল ও পর্দার সবটুকু অর্থাৎ সম্পূর্ণ গর্ভ আপনা হইতেই বাহির হইয়া যায় তাহাকে সম্পূর্ণ গর্ভপাত বা কমপ্লিট এবোরশন বলে। ইহাতে গর্ভফুল, পর্দাসহ গর্ভস্থ শিশু বাহির হইয়া আসে।
কমপ্লিট এবোরশন বা পূর্ণ গর্ভপাতের লক্ষণাবলী-
১) পেটে ব্যথা থাকে না এবং সামান্য রক্তপাত হয়।
২) ধীরে ধীরে রক্তস্রাব বন্ধ হইয়া যায়।
৩) হঠাৎ যোনিপথে রক্তস্রাব দেখা দেয় এবং স্রাবের সময় একবার একটা ঢেলার মত বাহির হইয়া যায়।
৪) জরায়ু গ্রীবা সামান্য ঢিলা হয়।
কমপ্লিট এবোরশন বা পূর্ণ গর্ভপাতের কারণ-
১) পুষ্টিহীনতা।
২) নেফ্রাইটিস।
৩) ডায়াবেটিস।
৪) সার্ভিক্যাল ইরোশান।
৫) সংক্রমণজনিত কারণ।
কমপ্লিট এবোরশন বা পূর্ণ গর্ভপাতের ব্যবস্থাপনা-
পূর্ণমাসে প্রসবের ন্যায় প্রসূতির যেরূপ বিশ্রাম লওয়া উচিত এখানেও ঐভাবে বিশ্রাম নিতে হইবে। রক্তহীনতার জন্য চিকিৎসা করিতে হইবে। জটিল পরিস্থিতিতে রোগিণীকে হাসপাতালে পাঠানো উচিত।
প্রশ্ন- পৃইনকমপ্লিট এবোরশন বা আংশিক গর্ভপাত (Incomplete Abortion) বলিতে কি বুঝ? ইহার লক্ষণাবলী ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর: ইনকমপ্লিট এবোরশন বা আংশিক গর্ভপাত- জরায়ু হইতে ভ্রম্পটি বাহির হইয়া গিয়া যদি জরায়ু মধ্যে গর্ভফুলের কিছু টুকরা, সম্পূর্ণ গর্ভফুল অথবা ডেসিডুয়ার কিছু অংশ গাত্রে আটকাইয়া থাকে এবং ফলে চোয়াইয়া চোয়াইয়া রক্ত পড়িতেই থাকে তাহাকে আংশিক গর্ভপাত বলে। এই অবস্থায় পূর্ণ গর্ভপাত না করাইলে ভিতরে উহা পচিয়া যায় এবং জীবাণুদূষণ হইয়া থাকে।
ইনকমপ্লিট এবোরশন বা আংশিক গর্ভপাতের লক্ষণাবলী-
১) হঠাৎ যোনিপথে রক্তস্রাব দেখা দেয়।
২) জরায়ু পথে পরীক্ষা করিলে সারভিক্সের মুখ খোলা পাওয়া যাইবে।
৩) জবায়ুর আকার বড়।
৪) অত্যধিক রক্তস্রাব হইতে পারে। প্রথমদিকে উজ্জ্বল বর্ণের রক্ত, পরে রক্তের পরিমাণ কমিয়া যায় ও কালবর্ণের হয়।
৫) ব্যথা থাকিতেও পারে, নাও থাকিতে পারে।
ইনকমপ্লিট এবোরশন বা আংশিক গর্ভপাতের ব্যবস্থাপনা-
যদি আংশিক গর্ভপাত হয় অর্থাৎ গর্ভপাতের সময় যদি ভ্রুণ, গর্ভফুল ও পর্দার কিছু অংশ জরায়ুর ভিতর থাকিয়া যায় এবং রক্তপাতের পরিমাণ বেশী হয় তবে রোগিনীকে হাসপাতালে পাঠানো উচিত। জরায়ুর মধ্যে যাহা রহিয়া গিয়াছে তাহা সম্পূর্ণ বাহির করিয়া অস ডাইলেট করাইয়া সব বাহির করিয়া প্রয়োজন বোধে রোগিনীর দেহে রক্ত প্রবেশ করাইতে হইবে। টাটকা উজ্জ্বল লাল বর্ণের রক্ত অধিক পরিমাণে বাহির হইতে থাকিলে অপারেশন করিয়া জরায়ুস্থিত গ্লাসেন্টা ও ডেসিভুয়া বাহির করিয়া ফেলিতে হইবে। জরায়ুস্থিত সম্পূর্ণ বস্তু বাহির হইলে এবং রক্ত বন্ধ হইলে পরে জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবস্থা করিতে হইবে। ইহার পরও রোগিনীকে ৩ সপ্তাহকাল সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখিতে হইবে।
প্রশ্ন- মিসড এবোরশন (Missed Abortion) বা বিকৃত গর্ভপাত বা কারনিয়াস মোল কাহাকে বলে? ইহার লক্ষণাবলী ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
উত্তর : মিসড এবোরশন বা বিকৃত গর্ভপাত- ওভামটি গর্ভে মরিয়া গেলেও জরায়ু হইতে উহা নির্গত হয় না। এইরূপে ইহা জরায়ু মধ্যে কয়েক সপ্তাহকাল অবস্থান করিতে পারে। গর্ভপাতের আশংকা হইলেও গর্ভপাত হয় না, কিন্তু ডিম্বাণু মারা যায়। মৃত ডিম্বাণু জরায়ুতে থাকে এবং বিকৃত অবস্থায় বা মোল হইয়া অনেকদিন পরে গর্ভপাত হয়। ইহাকে মিসড এবোরশন বা বিকৃত গর্ভপাত বলে।
মিসড এবোরশন বা বিকৃত গর্ভপাতের লক্ষণাবলী-
গর্ভিনী স্পষ্টত গর্ভধারণ করিয়াছিল দেখা যায়। কিন্তু জরায়ুটি প্রথমে আকারে একটু বাড়িবার পর আর জরায়ু বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় না। জরায়ুর আকৃতি ঠিক একই থাকিয়া যায়। প্রথমে গর্ভের যে সকল লক্ষণ দেখা যায় পরে তাহা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হইতে থাকে। জরায়ুর আকার ক্রমে পরে হ্রাস পাইতে থাকে এবং স্তনযুগল শিখিল হয়। অনেক সময় জরায়ু বৃদ্ধির জন্য ঋতু বন্ধ হইলে তখন তাহাকে কার্নিয়াস মোল বলিয়া সন্দেহ করা হয়। প্রথমে যোনি হইতে সামান্য পরিমাণে রক্তপাত হইতে পারে এবং তারপর একটু বেগুনী রঙের স্রাব বাহির হইতে পারে।
মিসড এবোরশন বা বিকৃত গর্ভপাতের ব্যবস্থাপনা- সাধারণত মিসভ
এবোরশনে কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। আপনা আপনি জরায়ু হইতে স্থানচ্যুত কারনিয়াস মোলটি বাহির হইয়া যায় এবং মোলটি বাহির হইয়া যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করাই ভাল। যদি জোর করিয়া কিছু করা হয় তাহা হইলে বেশী রক্তপাত হওয়ার আশংকা থাকে।
যদি জরায়ুটি দুর্বল হয় তাহা হইলে বেশী দিন অপেক্ষা করিতে হইবে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও মোলটি বাহির না হইলে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা অপারেশন করিয়া উহা বাহির করিতে হইবে।
প্রশ্ন- সেপটিক এবোরশন (Septic Abortion) বা জীবাণুদুষ্ট গর্ভপাত বলিতে কি বুঝ? ইহার কারণ, লক্ষণাবলী ও ব্যবস্থপনা লিখ।
উত্তর: সেপটিক এবোরশন- ভ্রুণ ও জরায়ু জীবাণুদুষ্ট হইবার পর জীবাণুদুষ্ট অবস্থায় ভ্রুণের গর্ভপাত হইলে তাহাকে সেপটিক এবোরশন বলে।
সেপটিক এবোরশনের কারণ- এবোরশনের সময় উত্তমরূপে জীবাণুমুক্ত হওয়ার জন্য সাবধানতা অবলম্বন না করিয়া বার বার ভ্যাজাইনার পথে জরায়ু পরীক্ষার দরুন উহা হইতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবৈধ উপায়ে গর্ভপাত করাইবার জন্য যে সমস্ত দ্রব্য জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করানো হয় উহাদের জীবাণু দ্বারা সেপটিক এবোরশনের সৃষ্টি করে।
সেপটিক এবোরশনের লক্ষণাবলী-
১) নিম্নোদরে ব্যথা হয় এবং দেহের তাপমাত্রা ও হাতের নাড়ীর গতি বৃদ্ধি পায়।
২) সামান্য সামান্য জ্বর বা অধিক জ্বর থাকে।
৩) জরায়ু হইতে সামান্য রক্তপাত হয় ও স্রাবে দুর্গন্ধ থাকে।
৪) পেট শক্ত হইতে পারে।
৫) জরায়ু গ্রীবা বন্ধ থাকিতে পারে।
সেপটিক এবোশনের ব্যবস্থাপনা-
১) অতিরিক্ত রক্তস্রাব এবং সেপটিক এক সাথে থাকিলে সঙ্গে সঙ্গে আংশিক গর্ভপাতের ক্ষেত্রে যেভাবে প্লাসেন্টা প্রভৃতি বাহির করা হয় ঐভাবে এইক্ষেত্রেও বাহির করিতে হইবে।
২) অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হইলে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করিতে হইবে।
৩) নাড়ীর গতি, রক্তচাপ ও দেহের তাপমাত্রা রেকর্ড করিতে হইবে।
৪) জটিল অবস্থায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
প্রশ্ন- থ্রেটেড এবোরশন ও ইনএভিটেবল এবোরশনের মধ্যে পার্থক্য কি?
বা, আশংকাজনক গর্ভপাত ও নিশ্চিত গর্ভপাতের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: আশংকাজনক গর্ভপাত ও নিশ্চিত গর্ভপাতের পার্থক্য নিম্নে ছংত আকারে দেখানো হইল-
থ্রেটেড এবোরশন বা আশংকাজনক গর্ভপাত
১। একমাস বা কয়েক মাস ধরিয়া ঋতুস্রাব বন্ধ থাকার ইতিহাস পাওয়া যায়।
২। হঠাৎ যোনিপথে বেদনাহীন রক্তস্রাব দেখা দেয়, তবে তলপেটে ও কটিদেশে সামান্য ব্যথা হইতে পারে।
৩। রক্তস্রাবের পরিমাণ খুবই কম।
৪। মাঝে মাঝে রক্তস্রাব দেখা দেয় আবার বন্ধ থাকে।
৫। ইহাতে ইন্টারনাল অস বন্ধ থাকে।
ইনএভিটেবল এবোরশন বা নিশ্চিত গর্ভপাত
১। একমাস বা কয়েক মাস ধরিয়া ঋতুস্রাব বন্ধ থাকার ইতিহাস পাওয়া যায় না।
২। প্রসব ব্যথার সহিত যোনিপথে রক্তস্রাব দেখা দেয় এবং তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
৩। রক্তস্রাবের পরিমাণ খুব বেশী।
৪। রক্তস্রাব ক্রমশঃ বৃদ্ধি পায়, সঙ্গে তলপেটের ব্যথাও থাকে।
৪। ইহাতে ইন্টারন্যাল অস খোলা থাকে।
প্রশ্ন- ক্রিমিন্যাল (Criminal Abortion) বা এবোরশান বে-আইনী গর্ভপাত কাহাকে বলে? ইহার কারণ ও জটিলতা সম্পর্কে লিখ।
উত্তর: ক্রিমিন্যাল এবোরশন বা বে আইনী গর্ভপাত- গর্ভবতী নারী নিজে বা অন্যের দ্বারা বা যন্ত্রের সাহায্যে গর্ভপাত করিতে গেলে বা গর্ভপাত করিলে তাহাকে ক্রিমিন্যাল এবোরশন বা বে আইনী গর্ভপাত বলে। ইহা প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে জোর করিয়া এবোরশন করানো।
ক্রিমিন্যাল এবোরশন বা অপরাধমূলক গর্ভপাতের কারণ-
১) নিষিদ্ধ যৌন মিলনে গর্ত সৃষ্টি হইলে-
ক) অবিবাহিত মহিলার ক্ষেত্রে।
খ) বিধবার ক্ষেত্রে।
গ) স্বামী দীর্ঘ প্রবাসে অবস্থানের ক্ষেত্রে।
২) দারিদ্রতা- দরিদ্র পিতা-মাতা সন্তানের ভরণ পোষণে অপারগ হইয়া গর্ভপাত করে।
৩) উত্তরাধিকারত্ব সম্পত্তির অংশ বেশী পাওয়ার লোভে কোন মহিলাকে নিঃসন্তান করা।
৪) অতিরিক্ত সন্তানের ভয়ে-জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য।
৫) প্রসূতি অত্যধিক দুর্বল থাকিলে।
৬) প্রসূতির বিভিন্ন রোগ যেমন- হার্ট ডিজিজ, রক্তহীনতা, গনোরিয়া, সিফিলিস, এক্যাম্পশিয়া প্রভৃতিত পীড়ার জন্য।
ক্রিমিন্যাল এবোরশনের জটিলতা- গর্ভবতী নারী নিজে বা অন্যের দ্বারা ঔষধ বা যন্ত্রের সাহায্যে গর্ভপাত করিতে গেলে অনেক সমর জীবাণু দূষণ এবং পেটের পর্দার প্রদাহ হেতু অনেকে মৃত্যু মুখে পতিত হন।
প্রশ্ন- হ্যাবিচুয়্যাল এবোরশন বা অভ্যাসগত গর্ভপাত কাহাকে বলে? ইহার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে লিখ।
উত্তর : হ্যাবিচ্যুয়াল 'এবোরশন বা অভ্যাসগত গর্ভপাত- যখন কোন মহিলার পর পর তিনটি এবোরশন হয় তখন তাহাকে হ্যাবিচুয়্যাল এবোরশন বা অভ্যাসগত গর্ভপাত বলে। সাধারণতঃ প্রজেস্টেরনহরমোনের অভাবে ইহা হইয়া থাকে।
হ্যাবিচুয়্যাল এবোরশনের কারণ- নিম্নলিখিত কারণে হ্যাবিচুয়্যাল এবোরশন ঘটিয়া থাকে। যথা-
১) গর্ভবতীর প্রজেস্টেরন হরমোনের অভাবের কারণ।
২) জরায়ুর গঠন অস্বাভাবিকতার কারণ।
৩) বিভিন্ন প্রকার রোগে ভোগার জন্য।
৪) গর্ভধারণে সারভিক্স অযোগ্য হইলে বা সার্ভাইক্যাল ইরোশানের জন্য।
৫) অজ্ঞাত কারণে।
হ্যাবিচুয়্যাল এবোরশনের লক্ষণ- সাধারণত গর্ভের ২০ সপ্তাহ হইতে ২৮ সপ্তাহে এই গর্ভপাত হইয়া থাকে। হ্যাবিচুয়্যাল এবোরশনের চিকিৎসা-
১) যে কারণে এইরূপ গর্ভপাত ঘটিয়া থাকে প্রথমে সে কারণে দূর করিতে হইবে।
২) গর্ভিনীকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা হইতে বিরত রাখিতে হইবে।
৩) জন্মগত ত্রুটি থাকিলে পরীক্ষা করিয়া উহার চিকিৎসা করিতে হইবে।
৪) হরমোনের অভাব থাকিলে হরমোন দিতে হইবে।
৫) গর্ভের প্রথম দিকের মাসগুলিতে যৌনমিলন বন্ধ রাখিতে হইবে।
প্রশ্ন- থেরাপিউটিক এবোরশন (Therapeutic Abortion) বা কল্যাণকর গর্ভপাত কাহাকে বলে? ইহার কারণ এবং নির্দেশাবলী কি কি লিখ।
উত্তর: থেরাপিউটিক এবোরশন বা কল্যাণকর গর্ভপাত- গর্ভিনীর জীবন সংশয় হইতে পারে মনে করিয়া ডাক্তার যখন স্বামী এবং স্ত্রীর (গর্ভিনীর) মত লইয়া গর্ভপাত করিয়া থাকেন তাহাকে থেরাপিউটিক এবোরশন বলে।
থেরাপিউটিক এবোরশনের কারণ-
নিম্নলিখিত কারণে থেরাপিউটিক এবোরশনের করানো হইয়া থাকে। যথা-
১) গর্ভিনীর অতিরিক্ত দুর্বল দেহের জন্য।
২) গর্ভিনীর এক্যাম্পশিয়া রোগের জন্য।
৩) গর্ভিনীর অতিরিক্ত রক্তহীনতার জন্য।
৪) গর্ভিনীর হার্টের দুর্বলতার জন্য।
৫) গর্ভিনীর ভেনারেল ডিজিজ, যেমন-সিফিলিস, গনোরিয়া প্রভৃতি রোগের জন্য।
থেরাপিউটিক এবোরশনে নির্দেশাবলী-
১) স্বামী স্ত্রীকে লিখিত অনুমতি দিতে হইবে।
২) হৃদপীড়া, ক্রনিক নেফ্রাইটিস, মারাত্মক মৃগী রোগ, এক্ল্যাম্পশিয়া, গনোরিয়া, সিফিলিস প্রভৃতি পীড়া থাকিলে গর্ভপাতের উপদেশ দেওয়া হয়।
৩) যখন ভ্রুণ বড় থাকে এবডোমিন্যাল হিস্টারোকটমি করা হয়।
৪) ১২তম সপ্তাহের পূর্বে যে কোন সময় জরায়ু হইতে ভ্রূণ নিক্ষিপ্ত করা সহজতর।
প্রশ্ন- প্যাথলজিক্যাল এবোরশন (Pathological abortion) কাহাকে বলে?
উত্তর: প্যাথলজিক্যাল এবোরশন- যখন কোন রোগের কারণে এবোরশন করা হয় তাহাকে প্যাথলজিক্যাল এবোরশন বলে। যেমন-জরায়ুর টিউমার, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া জ্বর প্রভৃতি কারণে এবোরশন করানো।
প্রশ্ন- সার্ভাইক্যাল এবোরশন (Cervical Abortion) কাহাকে বলে?
উত্তর: সার্ভাইক্যাল এবোরশন- জরায়ুর নিচের দিকে ১ ইঞ্চি পরিমিত অংশ হইল সার্ভিক্স। এইরূপ গর্ভপাতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এই অবস্থায় সার্ভিক্স ডাইলেট করাইয়া আঙ্গুল দ্বারা ওভামটিকে নির্গত করিয়া দিতে হইবে।
প্রশ্ন- কোন কোন মাসে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশী?
উত্তর: গর্ভপাত প্রায়ই গর্ভের প্রথম মাসের মধ্যে এবং গর্ভের পূর্বে যে সময় ঋতু হইত সেই সময়ে হইয়া থাকে।
প্রশ্ন- কোন কোন সময় গর্ভপাত বা এবোরশন হইলে বিপদের আশংকা থাকে।
উত্তর: গর্ভের তিন মাস হইতে পাঁচ মাসের মধ্যে এবোরশন হইলে আংশিক এবোরশন হইয়া থাকে। এই কারণে গর্ভের তিন হইতে পাঁচ মাসের মধ্যে এবোরশন হইলে বিপদের আশংকা থাকে।
প্রশ্ন- পুনঃপুনঃ গর্ভপাতের নিরাময় কিভাবে করা যায়?
উত্তর: পুনঃপুন গর্ভপাতের নিরাময়ের উপায়সমূহ নিম্নে দেওয়া হইল। যথা-
১) গর্ভপাতের প্রধান কারণ বাহির করিয়া উহা অবশ্যই দূর করিতে হইবে।
২) জরায়ুর স্থানচ্যুতি ঘটিলে চিকিৎসার দ্বারা জরায়ুকে স্বস্থানে আনয়ন করে।
৩) পিতা-মাতার সিফিলিস প্রভৃতি রোগ থাকিলে উপযুক্ত সময়ে চিকিৎসা করা।
৪) জরায়ু গ্রীবায় ল্যাসারেশন থাকিলে জরায়ু গ্রীবা সেলাই করা।
৫) গর্ভের প্রথম দিকের মাসগুলিতে যৌনসংগম না করা।
৬) মানসিক উদ্বেগ ও অস্থিরতা দূর করা।
৭) অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা এবং পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া।
৮) পুষ্টিকর আহার গ্রহণ করা, অংকুরিত ছোলা, দুধ, কডলিভার অয়েল প্রভৃতি।
৯) জোলাপ জাতীয় ঔষধ ও উগ্র নেশাকারক দ্রব্য না খাওয়া।
১০) শেষ গর্ভপাতের কয়েক- সপ্তাহ পর কিউরেট করিবার ব্যবস্থা করা।
প্রশ্ন- জোনডেক অ্যাশাইম টেস্ট কি?
উত্তর: জোনডেক অ্যাশাইম টেস্ট- কাহারও গর্ভ হইয়াছে কিনা তাহা জানিবার জন্য ইহা একটি পরীক্ষা। গর্ভিনীর মূত্র অপরিণত স্ত্রী গিনিপিগের শরীরে ইনজেকশন করিলে যদি তাহার জননেন্দ্রিয়ে যৌন পূর্ণতার চিহ্ন দেখা যায়, তবে বলা যায় যে যাহার মুত্র লওয়া হইয়াছে তাহার গর্ভ হইয়াছে। ইহাই জোনডেক অ্যাশাইম টেস্ট।
জরায়ুর এন্টিভারসন ও রেট্রোভারসন
(Antiversion and Retrovertion of the uterus)
প্রশ্ন- জরায়ুর এন্টিভারসন বা সম্মুখাবর্তন কাহাকে বলে? ইহার কারণ ও লক্ষণ লিখ।
উত্তর: জরায়ুর সম্মুখাবর্তন বা এন্টিভারসন- জরায়ু স্বাভাবিক অবস্থায় সামনের দিকে একটু হেলিয়া থাকে। গর্ভাবস্থায় প্রথম কয়েক মাস আরও সামনের দিকে হেলিয়া আসে। তবে খুব বেশী হেলিয়া থাকিলে কষ্টকর ও অস্বস্তিকর কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়। জরায়ুর ফান্ডাস সামনের দিকে বেশী থাকিয়া পড়িবার নাম জরায়ুর এন্টিভারসন।
জরায়ুর এন্টিভারসনের কারণ- নিম্নলিখিত কারণে জরায়ুর এন্টিভারসন হইয়া থাকে।
১) আলস্যময় জীবন যাপন।
২) কষিয়া কাপড় পরা।
৩) প্রবল আঘাত।
৪) অত্যধিক পরিশ্রম।
৫) বস্তিকোটরের প্রদাহ এবং জরায়ুর প্রদাহ।
৬) জরায়ুর টিউমার ও পেটে টিউমার।
৭) বন্ধ্যাত্ব।
৮) বারবার গর্ভপাত।
৯) এন্ডোমেট্রাইটিস পীড়া।
জরায়ুর এন্টিভারসনের লক্ষণাবলী-
জরায়ু সামনের দিকে হেলিয়া পড়িলে কোন রকম যন্ত্রণা নাও দেখা দিতে পারে। হাত দিয়া পরীক্ষা করিলে তাহা জরায়ুর স্থানচ্যুতি বা সম্মুখাবর্তন বেশ বুঝা যায়। যোনির পিছন দিকের গায়ে জরায়ু মুখের চাপে বাধক বা বন্ধ্যাত্ব আনিতে পারে।
জরায়ু মুত্রথলীর উপর চাপ দেওয়ায় প্রস্রাব বাহির হইতে কষ্ট হয়। জরায়ু মুখের চাপে মলদ্বারে অস্বস্তিবোধ হয়। কোষ্ঠবদ্ধতা, রজঃহীনতা, অত্যধিক রজঃস্রাব, ডিম্বাধারে রক্তাধিক্য প্রভৃতি দেখা দেয়।
প্রশ্ন- জরায়ুর এন্টিভারসন বা সম্মুখাবর্তনের চিকিৎসা ব্যবস্থা বর্ণনা কর।
উত্তর: জরায়ুর এন্টিভারসনের চিকিৎসা- অভিজ্ঞ ধাত্রীগণ হাতের সাহায্যে জরায়ুর ফান্ডাসটিকে পাছার দিকে টানিয়া দিয়া উহাকে স্বস্থানে আনয়ন করিতে পারেন। রোগ খুব পুরাতন না হইলে পেশারী পরাইয়া রাখিলে পুনরায় পূর্বাবস্থা প্রাপ্ত হয়। আজকাল সেলুলয়েড রিং পেশারী ব্যবহৃত হয়। জন্ম হইতে প্রাপ্ত অসম্পূর্ণরূপে বর্ধিত জরায়ু অনেক সময়ে সামনের দিকে স্থানান্তরিত হয়। রোগের দরুন ফরওয়ার্ড • ডিসপেসমেন্ট হইলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। পেলভিক পেরিটোনাইটিস রোগ উপস্থিত থাকিলে প্রধানত এই অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখিয়া চিকিৎসা করিতে হইবে। গরম জলের ডুস ব্যবহার করিতে হইবে। কোন কোন ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হইতে পারে।
* প্রশ্ন- জরায়ুর রেট্রোভারসন বা পশ্চাদাবর্তন কাহাকে বলে? ইহার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা লিখ।
উত্তর : জরায়ুর রেট্রোভারসন- স্বাভাবিক অবস্থায় জরায়ুর উপরিভাগ (ফান্ডাস) মূত্রথলী ও সিমফিসিস পিউবিসের উপর একটু হেলিয়া থাকে। ইহার বিপরীত অবস্থা প্রাপ্ত হইলে অর্থাৎ জরায়ুর ফান্ডাস পিছনের দিকে হেলিয়া পড়িলে তাহাকে জরায়ুর রেট্রোভারসন বলে। পরীক্ষা করিলে দেখা যাইবে যে, জরায়ুর মাথাটি সেক্রাম অস্থির দিকে পিছন করিয়া আছে এমনকি উহা নিচে নামিয়া সেক্রাম অস্থির প্রমোনটারী পর্যন্ত নিচে নামিয়া আসে।
জরায়ুর রেট্রোভারসনের কারণ- নিম্নলিখিত কারণে জরায়ুর রেট্রোভারসন হইয়া থাকে।
১) কনজেনিট্যাল অর্থাৎ মাতৃগর্ভ হইতে প্রাপ্ত দোষ।
২) পেলভিক পেরিটোনাইটিসের ফলে উহার অ্যাডহিসান ও নিচের দিকে আকর্ষণ।
৩) জরায়ুর তস্তুর রূপান্তর প্রাপ্তি, যেমন- জরায়ু প্রাচীরে নানাপ্রকার টিউমারের উৎপত্তি।
৪) গর্ভাবস্থার পর জরায়ুর বন্ধনী ও পেশীগুলি শিথিলতা প্রাপ্তি।
৫) জরায়ুর অভ্যন্তরে প্রদাহ।
৬) বিটপ স্থানের বিদারণ।
৭) অকস্মাৎ পতন বা পেটে চাড় লাগা।
৮) মূত্রাধারের স্ফীতি।
৯) কুস্থন, নৃত্যু ও পদবিক্ষেপের অসাবধানতা।
জরায়ুর রেট্রোভারসনের লক্ষণ- জরায়ুর রেট্রোভারসনে নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ দৃষ্ট হয়।
১) মূত্রাধারের উত্তেজনা ও মূত্রস্তম্ভন, মূত্রত্যাগ কালে বেদনা, কোঁথ পড়িয়া মূত্রত্যাগ করিতে হয় ও ফোঁটা ফোঁটা মূত্র নির্গত হয়।
২) সরলান্ত্রের উপর চাপ পড়ার জন্য বারবার মলত্যাগের ইচ্ছা কিন্তু অতিকষ্টে মল নিঃসরণ।
৩) কোমরের পৃষ্ঠদেশে বেদনা ও তজ্জনিত চলাফেরা করিতে কষ্ট। বেশীক্ষণ থাকিতে পারা যায় না। বস্তিপ্রদেশে, কুঁচকিতে ও উরুদ্বয়ের ভিতরে টান পড়া।
৪) বিবমিষা ও বমন। যদি গর্ভাবস্থায় হয় তবে প্রথম কয়েক মাস এই কষ্টকর লক্ষণগুলি প্রবল হয়। গর্ভাবস্থায় ৪র্থ মাসে মুত্রস্তম্ভন লক্ষণটি ভীষণ কষ্টকর হয়।
৫) স্থানচ্যূতি দীর্ঘদিন থাকিলে সঞ্চাপহেতু পরিবর্তন বশতঃ রজঃকৃচ্ছতা, প্রদর প্রভৃতি লক্ষণ।
জরায়ু রেট্রোভারসনের চিকিৎসা-
বাই ম্যানুয়েল ম্যানিপুলেশন অর্থাৎ দুই হাত সঞ্চালন দ্বারা সাউন্ড নামক যন্ত্রের সাহায্যে উহাকে সঠিক স্থানে প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে। অতঃপর হজ সাহেবের পেশারী নামক একপ্রকার বালা ব্যবহার করিতে হয়, এই পেশারীর দুইটি অংশ আছে। উহাদিগের গোলাকার অংশকে পিউবিক কার্ড বলে। যতদিন পর্যন্ত না রেট্রোভারসনের কোন নিদর্শন পাওয়া যায় ততদিন পর্যন্ত এই যন্ত্রটি ভ্যাজানাইনার মধ্যে ধারণ করিতে হয়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ ধরা পড়িলে জরায়ুটিকে রিপেস করা যায় না। এরূপস্থলে এবোরশন না হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র আভ্যন্তরীক ঔষধের উপর নির্ভর করিতে হয়।
প্রশ্ন-জরায়ুর এন্টিফ্লেকশন কি? ইহার কারণ কি?
উত্তর: জরায়ুর এন্টিফ্লেকশন-ফান্ডাস সহ সমগ্র জরায়ুটি সামনের দিকে হেলিয়া পড়ার নাম জরায়ুর এন্টিভারসন। কিন্তু অনেক সময় জরায়ু গ্রীবায় কোন রকম পরিবর্তন ঘটে না। উহা স্বস্থানে থাকে কিন্তু জরায়ুর উপরিভাগ বা ফান্ডাসটি সামনের দিকে হেলিয়া থাকে। এই অবস্থাকে এন্টিফ্লেকশন বলে।
এন্ট্রিফ্লেকসনের কারণ-
১) প্রবল আঘাত।
২) কষিয়া কাপড় পড়া।
৩) অতিরিক্ত পরিশ্রম।
৪) বস্তিকোটরের ও জরায়ু প্রদাহ।
৫) জরায়ুর টিউমার।
৬) বার বার গর্ভপাত।
৭) বন্ধ্যাত্ব প্রভৃতি।
প্রশ্ন- জরায়ুর রেট্রোফ্লেকশন কি? ইহার কারণ কি?
উত্তর: জরায়ুর রেট্রোফ্লেকশন- জরায়ুর রেট্রোফ্লেকসনে সমগ্র জরায়ুটি পশ্চাৎদিকে সেক্রাম গহ্বর মধ্যে হেলিয়া যায়। কিন্তু যে স্থলে জরায়ুর গ্রীবাটির কোন পরিবর্তন না ঘটিয়া উহা স্বস্থানেই থাকে এবং জরায়ুর উপরিভাগ বা ফান্ডাসটি পশ্চাৎদিকে হেলিয়া থাকে সেই অবস্থাকে রেট্রোফ্লেকসন বলে।
জরায়ুর রেট্রোফেকসনের কারণ-
১) ইহা জরায়ু সংক্রান্ত তস্তুসমূহের দুর্বলতাবশত সংঘটিত হয়।
২) কোনরূপ অস্বাভাবিক চাপ বা আঘাত প্রাপ্তি হইলে ইহা হঠাৎ সংঘটিত হয়।
৩) যে সকল স্ত্রীলোকের সন্তান হয় নাই তাহাদের ক্ষেত্রে এইরূপ ঘটিতে পারে।
৪) জরায়ু প্রাচীরে টিউমার, জরায়ুর অভ্যন্তরে প্রদাহের কারণে।
৫) মূত্রাধারের স্ফীতি, নৃত্য, কুন্থন প্রভৃতি কারণে।
প্রশ্ন- ইনভারসন অব দি ইউটেরাইন কাহাকে বলে? ইহার কারণ ও লক্ষণসমূহ কি কি?
উত্তর: ইনভারসন অব দি ইউটেরাইন- জরায়ুর উপরিভাগটি (ফান্ডাস) সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে জরায়ু গহ্বর হইতে নামিয়া বাহিরে চলিয়া আসার নাম ইনভারসন অব দি ইউটেরাইন। সম্পূর্ণ উল্টান অবস্থায় জরায়ুর অভ্যন্তর ভাগ বাহিরে এবং বাহিরের ভাগ অভ্যন্তর প্রদেশে অবস্থান করে। আংশিক উল্টানো ফান্ডাসটির কতকাংশ ভিতরে থাকে কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টানো সমস্ত ফান্ডাসটি উল্টাইয়া বাহিরে আসে।
ইনভারসন অব দি ইউটেরাইনের কারণ-নিম্নলিখিত কারণে জরায়ু উল্টাইয়া যায়। যথা-
১) প্রবল কষ্টকর কাশি।
২) অত্যধিক কোষ্ঠকাঠিন্য বশতঃ কোঁথ দেওয়া।
৩) প্রসব সময়ে ধাত্রী কর্তৃক তাড়াতাড়ি প্রসব করানো বা জোরে ফুল টানিয়া বাহির করা।
৪) জরায়ুর মধ্যে টিউমার প্রভৃতি।
ইনভারসন অব দি ইউটেরাইনের লক্ষণসমূহ-
১) অতিরিক্ত রক্তস্রাব।
২) জরায়ু গহ্বারে বেদনা। চলাফেরা করার সময় বেদনার আধিক্য।
৩) বাহ্য প্রসবের সময় কষ্ট ও রক্তস্রাব।
৪) নাড়ীর দ্রুত ও দুর্বল গতি।
0 মন্তব্যসমূহ