জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা - Birth Control and Family Planning, তৃতীয় বর্ষ - নবম অধ্যায়

 নবম অধ্যায়
জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা 
Birth Control and Family Planning







প্রশ্ন-  পরিবার পরিকল্পনা বলিতে কি বুঝ? পরিকল্পিত পরিবার কি?

উত্তর: সাধারণ অর্থে পরিবার পরিকল্পনা বলিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রোধ করা বুঝায়। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা বলিতে শুধু জন্মহার নিয়ন্ত্রণ বুঝায় না। ব্যাপক অর্থে একটি সুখী, সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য পরিবারের আয়তন সীমিত রাখার প্রচেষ্টাকে পরিবার পরিকল্পনা বলে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সুখী, সুন্দর ও আনন্দময় জীবন উপভোগ করার জন্য ছোট আয়তনের পরিবার গঠনকে পরিকল্পিত পরিবার বলে।





প্রশ্ন-  বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তর : বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব আলোচনা করা হইল। যথা-
১) অর্থনৈতিক সুবিধা- সংসারের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বহুলাংশে অর্থের উপর নির্ভরশীল। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতির জন্য অর্থের প্রয়োজন। সেজন্য পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়া সন্তান সংখ্যা সীমিত রাখিতে পারিলে অল্প আয় দ্বারাও মোটামোটি সংসার চালাইয়া যাওয়া সম্ভব।
২) খাদ্য- কৃষি প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে খাদ্য সংকট অনেক বেশী এবং প্রতি বছরই আমাদেরকে বিদেশ হইতে খাদ্য আমদানী করিতে হয়। একমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হইতেছে না এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হইতেছে। সীমিত জমির উপর উৎপাদন আমাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সমস্যা সমাধানে অক্ষম। তদুপরি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে পৈত্রিক জমিজমাও ভাগ বাটোয়ারা হইয়া যাইতেছে এবং কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাইতেছে। তাই পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবারের আয়তন সীমিত রাখিলে জনসংখ্যার বৃদ্ধির গতিও হ্রাস পাইবে এবং খাদ্য সমস্যারও সমাধান হইবে।
৩) বস্ত্র- খাদ্যের পরেই আমরা পোষাক পরিচ্ছদের কথা চিন্তা করিয়া থাকি। সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য যে পোষাকের প্রয়োজন অধিক সন্তানের মাতাপিতার পক্ষে সেই প্রয়োজন মিটানো সম্ভব হয় না। পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়া যাহারা সন্তান সংখ্যা কম রাখিতে পারিবেন তাহারা সীমিত আয়ের দ্বারাও পরিবারের প্রত্যেকের পোষাকের চাহিদা পূরণ করিতে পারেন।
৪) বাসস্থান- বাসস্থান আমাদের মৌলিক প্রয়োজন। বাসস্থান ভালভাবে তৈরী করিতে না পারিলে স্বাস্থ্যহানি ঘটে। পরিবারের সন্তান সংখ্যা অধিক হইলে দৈনন্দিন খরচ চালাইয়া অর্থ উদ্বৃত্ত রাখা অসম্ভব, ফলে এইরূপ পরিবারে কর্তার পক্ষে স্বাস্থ্যসম্মত বাসগৃহ নির্মাণ করা সম্ভব হয় না।
৫) শিক্ষা- ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং তাহাদেরকে সুনাগরিক হিসাবে গড়িয়া তোলার দায়িত্ব প্রত্যেক পিতামাতার। যে পিতামাতার সন্তান সংখ্যা বেশী তাহার পক্ষে সব ছেলে মেয়েদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা কোনক্রমেই সম্ভব হয় না। পরিকল্পিত স্বল্প সংখ্যক ছেলেমেয়ে হইলে ইহা সম্ভব।
৬) স্বাস্থ্যগত সুবিধা- স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল। সুস্বাস্থ্য গঠন করিতে হইলে উপযুক্ত খরচের প্রয়োজন। অভাবগ্রস্ত সংসারে অনাহারে, অনিদ্রায় স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির দুর্বল হইয়া পড়ে। পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়া সন্তান সংখ্যা সীমিত রাখিলে মাতাপিতার ও সন্তানের স্বাস্থ্য ভাল রাখা সম্ভব।
৭) মাতার স্বাস্থ্য- ঘন ঘন সন্তান জন্ম হইলে মাতার স্বাস্থ্যহানি ঘটে। গর্ভবতী মায়েদের শিশু ও তাহার পুষ্টির জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। ঘন ঘন সন্তান হইলে এই খাদ্য জোগাড় করা স্বল্প আয়ের লোকের পক্ষে সম্ভব নয়। যে কারণে মাতা রক্তহীনতা ও বিভিন্ন রোগে ভোগে। দীর্ঘ বিরতিতে সন্তান ধারণ করিলে মাতার স্বাস্থ্য অটুট থাকে।
৮) পিতার স্বাস্থ্য- অধিক সন্তান চিন্তার কারণ। পিতাকে অত্যধিক পরিশ্রম করিতে হয়। অধিক চিন্তার কারণে অকাল বার্ধক্য দেখা দেয়। অধিক সন্তানের পক্ষে সুখ শান্তি প্রাপ্তির প্রত্যাশা দুরাশা।
৯) শিশু স্বাস্থ্য- অধিক সন্তান হইলে মাতার স্বাস্থ্য খারাপ হয় সাথে সাথে তাহার গর্ভ হইতে রুগ্ন শিশু জন্ম নেয়। রুগ্ন মাতার গর্ভ হইতে স্বাস্থ্যহীন ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়। এইরূপ রুগ্ন শিশু সমগ্র জাতির অধঃপতন ডাকিয়া আনে।
তাই পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে উপযুক্ত বিরতির পর সুস্থ সন্তান লাভ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই সকল কারণে পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অসীম।






প্রশ্ন-  বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের প্রতিবন্ধকতাসমূহ কি কি?
বা, বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রতিবন্ধকতাসমূহ কি কি?

উত্তর: বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্তবায়নে ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে কতকগুলি বাধা রহিয়াছে। নিম্নে এইসব বাধা সম্পর্কে আলোচনা করা হইল-
১) শিক্ষার অভাব- বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত ও নিরক্ষর। অনেকের ভ্রান্ত ধারণা যে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করিলে তাহাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটিবে এবং স্বামী স্ত্রীর যৌন তৃপ্তিতে ব্যাঘাত ঘটিবে। সেজন্য অশিক্ষিত জনগন পরিবার পরিকল্পনার সাহায্যে জন্মনিয়ন্ত্রণে আগ্রহী হয় না।
২) নারী শিক্ষার অভাব দেশে নারী শিক্ষার হার মাত্র ২৬%। নারী শিক্ষার হার কম হওয়ায় মহিলারা স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করার সুযোগ পায় না এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাহাদেরকে মাতৃত্বের বোঝা বহন করিতে হয়।
৩) ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী- বাংলাদেশে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী পরিবার পরিকল্পনার প্রতিকূলে কাজ করে। ধর্ম মানুষের মঙ্গলের জন্য আর পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণও মানুষের মঙ্গলের জন্যই। মানুষের ভ্রান্ত ধারণা যে গর্ভনিরোধ করা মানে ভ্রুণ নষ্ট করা। প্রকৃতপক্ষে গর্ভনিরোধ মানে ভ্রুণ হইতে না দেওয়া। সুতরাং যেখানে ভ্রূণ সৃষ্টিই হইতেছে না, সেখানে ভ্রুণ নষ্ট করার কথাই আসিতে পারে না। এই ভুল ধারণাই পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে।
৪) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞতা- বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক নিরক্ষর ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞ। জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকের অহেতুক ভয় ও আশংকা। এই অবস্থায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে আগ্রহী হয় না।
৫) জন্মনিয়ন্ত্রণ সরঞ্জামাদির অভাব- বাংলাদেশে জন্ময়িন্ত্রণের জন্য সাধারণত কনডম, ফোম ও জন্মনিরোধক বড়ি ব্যবহৃত হয়। গ্রামাঞ্চলে এইসব সামগ্রী সহজে পাওয়া যায় না। এই কারণেও জন্মনিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
৬) পুত্রসন্তান কামনা- বাংলাদেশের জনগণ খুবই দরিদ্র। তাহাদের ধারণা পুত্রসন্তান ভবিষ্যতে উপার্জন করিয়া খাওয়াইবে। তাই পর পর কয়েকটি কন্যা সন্তান লাভ করিলেও পুত্রসন্তানের আশায় তাহারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ হইতে বিরত থাকে।
৭) মোটিভেটর ও প্রচারের অভাব- মোটিভেটরের অভাবে গ্রামাঞ্চলে ইহা প্রসার লাভ করিতেছে না। রেডিও, টিভি, ভ্রাম্যমান চলচ্চিত্র, সংবাদ পত্র ইত্যাদির মাধ্যমে ইহার প্রচার আরও বাড়াইয়া দিতে হইবে যাহাতে সাধারণ জনগণ সহজে বুঝিতে পারে।





প্রশ্ন- বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে?
বা, পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রতিবন্ধকতাসমূহ কিভাবে দূর করা যায়?

উত্তর: পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রতিবন্ধকতা দূর করিয়া এই কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নের জন্য নিন্মলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। যথা-
১) শিক্ষার প্রসার- শিক্ষার প্রসার ঘটিলে জনসাধারণের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটিবে। ফলে পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আগ্রহ সৃষ্টি হইবে।
২) নারী শিক্ষার প্রসার- পরিবার পরিকল্পনার সাফল্য শিক্ষিতা মহিলাদের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। তাই নারী শিক্ষার প্রসার ঘটিলে বিভিন্ন কুসংস্কারবাদ উপেক্ষা করিয়া জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
৩) ব্যাপক প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণ- বাংলাদেশের নিরক্ষর ও দরিদ্র জনগণকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করিতে হইলে ব্যাপক ও সফল প্রচারের উপর জোর দিতে হইবে।
৪) ঔষধ সরঞ্জাম সরবরাহ- দরিদ্র জনসাধারণকে জন্মনিয়ন্ত্রণের ঔষধ ও সরঞ্জামাদি সুলভে সরবরাহ করা গেলে জনগণ পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে উৎসাহিত হইবে।
৫) পুরস্কার- দেশের স্বল্পশিক্ষিত ও দরিদ্র জনগণকে পরিবার পরিকল্পনায় আগ্রহী করিতে হইলে পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকা দরকার। সমাজ সংস্কার কার্যক্রম- পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীতে আমাদের ধর্মীয়
৬ নেতৃবৃন্দকে সংশিষ্ট করিয়া সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করিতে হইবে।
৭) চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা- চিত্তবিনোদন ও সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ জন্মনিয়ন্ত্রণের স্বপক্ষে পরোক্ষ প্রভাব সৃষ্টি করে। ভাই বিশেষ করিয়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করিতে হইবে।





প্রশ্ন-  বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীর উদ্দেশ্য কি কি?

উত্তর: বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীর উদ্দেশ্য হইল-
১) জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো।।
২) মাতা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন।
৩) খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা।
৪) মা ও শিশুর অকাল মৃত্যুর হার কমানো।
৫) মাতা ও শিশুর পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করণ।
৬) পরিবারের লোকসংখ্যা সীমিত রাখা এবং যে সকল দম্পতি সন্তান জন্মদানে অক্ষম, তাহাদের সন্তান লাভের যথাযথ উপদেশ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।





প্রশ্ন-  গর্ভনিরোধ কাহাকে বলে?

উত্তর : দাম্পত্য জীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখিয়া যাহাতে গর্ভধারণ না হয় তাহাকে গর্ভনিরোধ বলে।




প্রশ্ন- কন্ট্রাসেপশান বা জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর : জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলিকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
১) অস্থায়ী পদ্ধতি।
২) স্থায়ী পদ্ধতি।

১। অস্থায়ী পদ্ধতিসমূহ-
ক) নিরাপদ সময়ে সঙ্গম।
খ) আজল বা অসম্পূর্ণ সঙ্গম।
গ) মাসিক নিয়ন্ত্রণ।
ঘ) ফোট ট্যাবলেট।
ঙ) জেলী বা শুক্রকীটনাশক ক্রীম।
চ) জন্মনিয়ন্ত্রণের ইনজেকশান।
ছ) ডায়াফ্রাম।
জ) কনডম।
ঝ) লুণ।
ঞ) কপার টি, আইইউডি বা অন্তর্জরায়ু পদ্ধতি।

২। স্থায়ী পদ্ধতিসমূহ-
ক) টিউবেকটমী বা লাইগেশান।
খ) ভ্যাসেকটমী বা পুংনির্বীজকরণ।




প্রশ্ন-  জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি কি?

উত্তর : সন্তান ধারণের ক্ষমতা আছে এমন যে কোন সুস্থদেহী রমনী যদি লক্ষ্য রাখেন তাহা হইলে তাহাদের চোখে পড়িবে যে, মাসিকের পর কোনদিন বা তাহার শ্বেতস্রাব-হইতেছে আবার কোন সময় কোন স্রাব (মিউকাস) নাই। এই সময়টিকে নারীর ড্রাই পিরিয়ড বলা হয়। ড্রাই পিরিয়ডে পর পর প্রথমদিকের মিউকাস কিছুটা পাতলা ও চটচটে হয়। পরে এক একটি দিন অন্তর মিউকাস ক্রমশ ঘন হইতে হইতে এক সময় সবচাইতে ঘন হয়।'
দুই মাসিকের অন্তবর্তী সময়ে কয়েকদিন ধরিয়া ডিমের শ্বেতাংশের মত অথবা সাধারণ জলের মত শ্বেতস্রাব হইয়া থাকে। বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হইয়াছে যে, ঐ স্রাব সন্তান ধারণের সময়ের সূচক। এই সময় স্ত্রী পুরুষের মধ্যে মিলন ঘটিলে মেয়েদের মা হইবার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে। এই সময়ে বিশেষ করিয়া অতিরিক্ত ঘন এবং থকথকে মিউকাস নিঃসরণ যে দিনটিতে বেশী হয় সেই দিনটি এবং তাহার পরের ও আগের দিনটি মেয়েরা পুরুষের সান্নিধ্যে না আসিলে গর্ভসঞ্চার এড়াইয়া চলা যায়। ইহাই জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি।




প্রশ্ন-  জন্মনিয়ন্ত্রণ কেন প্রয়োজন?

উত্তর : নিম্নলিখিত কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। যথা-
১) অধিকাংশ পরিবারের আর্থিক ক্ষমতা সীমিত। বিশেষতঃ আমাদের মত দরিদ্র দেশে সন্তানের সংখ্যা বেশী হইলে পরিবারের পক্ষে তাহাদের খাদ্য, শিক্ষা, প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির যথাযোগ্য যত্ন নেওয়া সম্ভব হয় না।
২) জন্মনিয়ন্ত্রিত না হইলে দেশের পক্ষেও নবজাত শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও বাসস্থানের যথাযোগ্য ব্যবস্থা করা সম্ভব হইবে না।
৩) চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মৃত্যুহার কমিয়াছে। কিন্তু জন্মাহার ইহার তুলনায় বেশী বলিয়া প্রতি বৎসর জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার দ্রুতগতিতে বাড়িতেছে। এই হারে জনসংখ্যা বাড়িতে থাকিলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা।
৪) অর্থনৈতিক সমস্যা ছাড়াও ঘন ঘন গর্ভ হইলে মাতার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। মাতার পক্ষে নবজাত শিশুর দেখা শোনারও অসুবিধা হয়। ফলে শিশুর স্বাস্থ্য ভাল থাকে না। দুইটি সন্তানের মধ্যে কয়েক বৎসর ব্যবধান মাতা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এই সকল কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণের আবশ্যকতা রহিয়াছে।





প্রশ্ন- কোন কোন ব্যক্তি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের উপযুক্ত নহে?

উত্তর: নিম্নবর্ণিত অবস্থায় ও রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ জন্মনিয়ন্ত্রণ গ্রহণের উপযুক্ত নহে। যথা-
১) গর্ভাবস্থায়।
২) পিউবার্টির পূর্বে।
৩) মেনোপোজের পর।
৪) মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত রোগী।
৫) হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত রোগী।
৬) ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী।
৭) ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী।
৮) টিউবারকুলোসিসের রোগী।
৯) ক্রনিক নেফ্রাইটিসের রোগী।
১০) হাইপার টেনশনের রোগী।





প্রশ্ন-  একটি আদর্শ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত?

উত্তর : একটি আদর্শ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা গেল। যথা-
১) আদর্শ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সস্তা ও সহজপ্রাপ্য।
২) ইহা ব্যবহারে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই।
৩) গর্ভনিরোধ সম্পর্কে ১০০% ভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।
৪) সন্তান ধারণের ক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করে না।
৫) ইহার ব্যবহার সহজ ও সুবিধাজনক।
৬) ইহা ব্যবহারে যৌন উপভোগ ও তৃপ্তি ব্যাহত হয় না।
৭) ইহা সার্বজনীনভাবে সকলেই ব্যবহার করিতে পারে।





প্রশ্ন-  টিউব্যাল প্রেগন্যান্সি বা গর্ভ প্রতিস্থাপন কাহাকে বলে?

উত্তর: টেস্ট টিউবের মধ্যে বিশেষ মিডিয়ায় জীবন্ত ওভামের সহিত জীবন্ত শুক্রকীটের মিলনের দ্বারা গর্ভসঞ্চার ঘটাইয়া জরায়ুতে স্থাপন করাকে টিউবাল প্রেগন্যান্সি বা গর্ভ প্রতিস্থাপন বলে।





প্রশ্ন-  টেস্ট টিউব বেবী কাহাকে বলে?

উত্তর: টেস্ট টিউবের মধ্যে বিশেষ মিডিয়ায় জীবন্ত ওভামের সহিত জীবন্ত শুক্রকীটের মিলন ঘটাইয়া তাহা জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করিয়া জন্মানো শিশুকে টেস্ট টিউব বেবী বলে।





প্রশ্ন-  টেস্ট টিউব বেবীর সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কি কি?
 
উত্তর : টেস্ট টিউব বেবীর সুবিধা- যে সকল দম্পতি স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানে অক্ষম তাহাদের জন্য এই পদ্ধতি ফলপ্রদ।

টেস্ট টিউব বেবীর অসুবিধা:
১) এই পদ্ধতি প্রচুর ব্যয় সাপেক্ষ।
২) উপযুক্ত চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব।
৩) টেস্ট টিউব বেবী গ্রহণকারী স্ত্রীর ছোট খাটো অপারেশন প্রয়োজন হয়।
৪) টেস্ট টিউব বেবী গ্রহণকারী দম্পতিকে দীর্ঘসময় চিকিৎসকের অধীনে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে থাকিতে হয়।







প্রশ্ন-  নিরাপদ সময়ে সঙ্গম বলিতে কি কি বুঝায়? ইহার সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ কি কি?

উত্তর: ডিম্বস্ফোটন, ঋতুচক্রের একটি নির্দিষ্ট দিনে, পরবর্তী ঋতুর প্রথম হইতে ১৪ দিন আগে ঘটিয়া থাকে। যেমন যাহাদের ২১দিন ঋতু হয় তাহাদের ডিম্বস্ফোটন হয় ঋতুচক্রের ৭ম দিনে। ডিম্বস্ফোটনের পর ডিম্বটি ৩৫ ঘণ্টা ডিম্বনালীতে জীবিত থাকে। এই সময় সঙ্গম করিলে গর্ভের সম্ভাবনা খুণ বেশী। সাবধানতার খাতিরে ডিম্বস্ফোটনের দিনের চারিদিন পূর্ব হইতে চারিদিন পর অবধি সঙ্গম না করিলে গর্ভ এড়ানো যায়। অতএব যাহাদের ২১ দিন ঋতু তাহাদের ক্ষেত্রে গর্ভের সম্ভাব্য সময় ধরা হয় ঋতুচক্রের তিনদিন হইতে এগার দিন পর্যন্ত। সাধারণ লোকের মধ্যে প্রচলিত মত হইল ঋতুচক্রের শেষ সাত দিন 'নিরাপদ' সময়। যাহাদের ৩০ দিনে ঋতু তাহাদের ক্ষেত্রে হিসাব হইল- ডিম্বস্ফোটন ষোল দিনের দিন। অতএব গর্ভের সম্ভাব্য সময় ১২দিন হইতে ২০ দিন।
যাহারা আরও একটু সাবধান হইয়া চলিতে চায় তাহাদের জন্য চলিত মত হইল, ঋতুচক্রের প্রথম সাত দিন এবং শেষ সাতদিন নিরাপদ সময়।
সুবিধা:
১) এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা এই যে, এখানে কোনও প্রকার কৃত্রিম উপায়ের সাহায্য লওয়া হয় না।
২) জন্মনিয়ন্ত্রণের সকল প্রকার কৃত্রিম পদ্ধতি নানা শারীরিক উপসর্গ সৃষ্টি করিতে পারে। এখানে সে সম্ভাবনা নাই।

অসুবিধা:
১) যাহাদের অনিয়মিত ঋতু হয়, তাহাদের ক্ষেত্রে কতদিনে ঋতু হইবে জানা নাই, অতএব নিরাপদ, সময় হিসাব করা সম্ভব হয় না।
২) এই পদ্ধতি সবচাইতে বড় অসুবিধা হইল, হিসাব মত 'নিরাপদ' সময়ে সঙ্গম করিলেও শতকরা ২০% ক্ষেত্রে গর্ভসঞ্চার হইতে পারে।
৩) এই পদ্ধতি গ্রহণ করিলে মাসের মধ্যে প্রায় পনর দিন মিলিত হওযা সম্ভব নয়। এই পদ্ধতির সাফল্যের জন্য স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী।






প্রশ্ন-  আজল বা অসম্পূর্ণ সঙ্গম বলিতে কি বুঝ? ইহার সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

উত্তর: জন্মনিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সঙ্গমের সময় শুক্রকীট নির্গমনের পূর্বেই স্বামী যদি সঙ্গম শেষ করিয়া দেন বা জরায়ু ও যোনির বাহিরে যদি শুক্র নির্গমণ করেন এই পদ্ধতি আজল বা অসম্পূর্ণ সঙ্গম নামে অভিহিত। এই পদ্ধতিতে অবশ্যই গর্ভ এড়ানো যায়। গুবিধা-সাফল্যের সঙ্গে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করিলে গর্ভ এড়ানো অবশ্যই সম্ভব। অসুবিধা-সাফল্যের সাথে এই পদ্ধতি অনেকে প্রয়োগ করিতে পারে না অর্থাৎ বিফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।





প্রশ্ন-  কনডম ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

উত্তর: কনডম বা পাস্টিক কয়েল সঙ্গমের পূর্বে পুরুষের যৌনাঙ্গের অগ্রে লাগাইয়া লইলে গর্ভনিরোধ হয়। ইহার সুবিধা ও অসুবিধাগুলি নিম্নে প্রদত্ত হইল-

সুবিধা:
১) ইহা সহজ পদ্ধতি, সহজ প্রাপ্য ও কোন উপসর্গ সৃষ্টি করে না।
২) ইহা অনেকটা নিশ্চিত গর্ভনিরোধ পদ্ধতি।
৩) নব বিবাহিতরাও ইহা ব্যবহার করিতে পারে।

অসুবিধা:
১) যৌন উপভোগ সম্পূর্ণ হয় না। ইহাতে যৌনতৃপ্তি ব্যাহত হয়।
২) ব্যবহারের সময় ছিড়িয়া গেলে বিপদের সম্ভাবনা।






প্রশ্ন-  জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত খাওয়ার বড়ি ব্যবহারের নিয়ম কি এবং ইহা কিভাবে কাজ করে? ইহার সুবিধা ও অসুবিধা (উপসর্গ) সমূহ কি কি?

উত্তর: খাওয়ার বড়ি ব্যবহারের নিয়ম- 'প্রচলিত সকল জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে ইহা সর্বোৎকৃষ্ট। ইস্টোজেন ও প্রজেস্টেরন এই দুইটি হরমোনের তৈরী খাওয়ার বড়ির প্রতি প্যাকেটে ২৮টি বড়ি থাকে। ২১টি সাদা ও ৭টি খয়েরী রঙের। প্রথমবার বড়ি খাওয়ার শুরু করিতে হয় মাসিকের ৫ম দিন হইতে। প্যাকেটের তীর চিহ্নিত স্থান হইতে একটি করিয়া রোজ রাত্রে শয়নের পূর্বে খাইতে হয়। ভুলবশতঃ একদিন বড়ি খাওয়া বাদ পড়িলে পরদিন মনে হওয়ার সাথে সাথেই বড়ি খাইতে হইবে এবং ঐ দিনের বড়িও নিয়মিত সময়ে খাইতে হইবে। ভুলবশত তিন দিন বড়ি খাওয়া বাদ পড়িলে বড়ি খাওয়া বন্ধ করিতে হইবে। পরবর্তী মাসিকের ৫ম দিন হইতে নূতন করিয়া আবার একটি প্যাকেট লইয়া বড়ি খাওয়া শুরু করিতে হইবে। ডিম্বস্ফোটন বন্ধ করিয়া খাওয়ার বড়ি কাজ করিয়া থাকে।

সুবিধা:
১) খাওয়ার বড়ি শতকরা ১০০ ভাগ কার্যকরী অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।
২) ইহা গর্ভধারণকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করে না। বড়ি খাওয়া বন্ধ করিলেই সন্তান ধারণ সম্ভব।
অসুবিধা বা উপসর্গসমূহ (প্রার্শ্বপ্রতিক্রিয়া): বড়ি খাওয়ার ২/৩ মাসে মাথা ধরা, গা বমি বমি ভাব, ঋতুস্রাবের স্বল্পতা বা সাময়িক বন্ধ থাকা, ঋতুচক্রের যে কোন সময়ে সামান্য পরিমাণে রক্তস্রাব হওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। বড়ি খাওয়ার ফলে কখনও দেহের ওজন বাড়িয়া যায়।






প্রশ্ন- সঙ্গমোত্তর জন্মরোধক কি? ইহার সুবিধা লিখ।

উত্তর: বৃহৎমাত্রায় ইস্ট্রোজেনের সঙ্গমোত্তরকালীন ব্যবহার ডিম্বের বহন ও প্রোথিত হওয়ার প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত করে। তাই মুখে দৈনিক ৫০ মিলিগ্রাম স্টিলরয়েস্ট্রেরল অথবা ৫ মিলিগ্রাম এথিনিলইস্ট্রাডিয়ল পাঁচদিন খাইতে হয় এবং সঙ্গমের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রথম মাত্রা আরম্ভ করিতে হয়।
সুবিধা- অনভিপ্রেত সঙ্গমের ক্ষেত্রে এই মাধ্যমটি উপকারে আসে।






প্রশ্ন- মিনিপিলের ভূমিকা ও সুবিধা লিখ।

উত্তর: মিনিপিলে ইস্ট্রোরেন থাকে না শুধু প্রজেস্টেরন থাকে। আবার এই প্রজেস্টেরনের পরিমাণও সম্মিলিত ট্যাবলেটে যাহা থাকে তাহার চাইতে কম থাকে।
গুবিধা- যদি ৩৫ বৎসরের অধিক বয়সী স্ত্রীলোকের মাথা ধরা ও উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকে তবে মিনিপিল দেওয়া ভাল। উভয় হরমোনের সম্মিলিত বড়ি যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার লক্ষণ সৃষ্টি করে তবে মিনিপিল খাওয়ার উপদেশ দেওয়া যাইতে পারে।






প্রশ্ন- মাসিক নিয়মিত করণ বা এম. আর. কাহাকে বলে? ইহার সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ কি কি?

উত্তর: সাধারণতঃ মেয়েদের ২৮-৩০ দিন পরপর নিয়মিত মাসিক হয়। যথাসময়ে মাসিক না হইলে পেটে সন্তান আছে বলিয়া ধারণা করা হয়। অবশ্য নানা কারণে মাসিক অনিয়মিতত হইতে পারে। এম.আর. এমন একটি ব্যবস্থা যাহা দ্বারা মাসিক নিয়মিত করা হয়।
নিয়মিতভাবে যেদিন মাসিক হওয়ার কথা ছিল সেদিন হইতে দুই সপ্তাহের মধ্যে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।
সুবিধা- এই অপারেশনে রোগীকে অজ্ঞান করিতে হয় না। অপারেশনের কয়েক মিনিট পরেই রোগিনী বাড়ী যাইতে পারে। অসুবিধা- ইহাতে রক্তপাত হয়। কখনও কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে।






প্রশ্ন- ফোম টেবলেট বা ফেনাকারী বড়ি কিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়? ইহার সুবিধা ও অসুবিধা লিখ।

উত্তর: বাজারে বিভিন্ন রকম জন্মনিয়ন্ত্রণের ফেনাকারী বড়ি পাওয়া যায়। বড়িগুলি গোলাকার ছোট মুদ্রাকৃতির। সঙ্গমের ৫-১০ মিনিট পূর্বে যোনিপথের গভীরে একটি বড়ি প্রবিষ্ট করাইয়া নিলে ফেনার সৃষ্টি হয়। এই ফেনা শুক্রকীট নষ্ট করে এবং তাহার গতিবিধিতে বাধার সৃষ্টি করে।
গুবিধা- ইহাতে সুবিধা হইল ইহা সস্তা ও সহজলভ্য এবং কোন শারীরিক ক্ষত করে না।

অসুবিধা- ইহার অসুবিধা হইল, যোনিপথে জ্বালা বা অশান্তি সৃষ্টি হয়। শতকরা ২৫% ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে গর্ভসঞ্চার হইয়া থাকে।





প্রশ্ন- জেলী বা শুক্রকীটনাশক ক্রীম কিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ করে? ইহার সুবিধা অসুবিধাগুলি লিখ।

উত্তর : প্রিসেপটিন ক্রীম, তোলপার পেস্ট, অর্থজাইনল প্রভৃতি নামে বাজারে নানা রকম ক্রীম বা জেলি পাওয়া যায় যেগুলি সঙ্গমের আগে বিশেষ ধরণের পিচকারী দিয়া যোনিপথে লাগাইয়া দেওয়া হয়। দেহের উত্তাপে ইহা গলিয়া গিয়া যোনিপথে ছড়াইয়া পড়ে এবং শুক্রকীটে রাসায়নিক ক্রিয়ার দ্বারা বিনষ্ট করে।
সুবিধা- সহজলভ্য ও সস্তা।

অসুবিধা:
১) কখনও কখনও শুক্রকীট এই সকল ক্রীম ও জেলির আক্রমণ এড়াইয়া জরায়ুতে প্রবেশ করিয়া গর্ভ সঞ্চার করিতে পারে।
২) ইহা ব্যবহারে অনেক সময় যোনিপথে জ্বালা বা অস্বস্তি হইতে পারে।





প্রশ্ন- ডায়াফ্রাম কিভাবে ব্যবহৃত হয়? ইহার সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

উত্তর : মহিলাদের ব্যবহারের জন্য ইহা একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। ইহা পাতলা রাবারের তৈরী বাটির মত গোলাকৃতির ঢাকনা বিশেষ, উপরের দিকে একটি গোলাকার স্প্রীং থাকে। যোনিপথের মধ্যে ইহাকে ঠিকভাবে প্রবেশ করাইয়া দিলে ইহা জরায়ুর মুখে আসিয়া বসে। জরায়ুর মুখে থাকার কারণে পুরুষের বীর্য জরায়ুর ভিতর প্রবেশ করিতে পারে না। প্রথমবার, ব্যবহারের জন্য ডাক্তারের সাহয্য নিতে হয় পরে নিজেই ব্যবহার করা যায়। সঙ্গমের পর অন্ততঃ ৮ ঘণ্টা ইহা রাখিতে হয় পরে খুলিয়া লইতে হয়।
গুবিধা-একটি ডায়াফ্রাম বহুদিন ব্যবহার করা যায়। ইহা ঠিকমত ব্যবহারে প্রচুর কর্মক্ষম ও সুফলপ্রদ। দামও কম ও নিরাপদ।
অসুবিধা- যোনিপথের পেশী ঢিলা হইলে ইহা ব্যবহার করা যায় না এবং অশিক্ষিত স্ত্রীলোকেরা অনেক সময় নিজেরা ডায়াফ্রাম লাগাইয়া অসুবিধা বোধ করে।






প্রশ-  প্লাস্টিক কয়েলের ব্যবহার কিভাবে করিতে হয়? ইহার সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

উত্তর : ইহা জনন্মনিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতিগত ব্যবহার। পাস্টিক কয়েল বা কনডম সঙ্গমের পূর্বে পুরুষের যৌনাঙ্গের অগ্রে লাগাইয়া লইলে গর্ভনিরোধ হয় কেননা শুক্রকীট যোনিপথে পড়ে না। কয়েলে থাকিয়া যায়।
সুবিধা- ইহা সহজ পদ্ধতি, সহজপ্রাপ্য। কোন উপসর্গ সৃষ্টি করে না।
অসুবিধা-ব্যবহারের সময় ছিড়িয়া গেলেই বিপদ এবং যৌন উত্তেজনা ঠিকমত হয় না।





প্রশ্ন-  জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসাবে লুপের ব্যবহার লিখ। ইহার সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

উত্তর: ডাবল এম আকৃতি পাস্টিকের তৈরী লুপের ব্যবহার জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই কার্যকরী প্রণালী। লুপের সঙ্গে নাইলেনের সুতা লাগানো থাকে। এই সুতার সাহায্যে একটি হাতলের সঙ্গে লুপকে আটকাইয়া দেওয়া হয় এবং তারপর লুপকে জরায়ুর মধ্যে প্রবিষ্ট করাইয়া দেওয়া হয়। ঋতুর সময়ে এবং ঋতু শেষ হওয়ার পরের পাঁচদিনই লুপ প্রবেশ করানোর উপযুক্ত সময়।
সুবধা- লুপ সরাইয়া নিলেই সন্তান ধারণ ক্ষমতা ফিরিয়া আসে। ইহার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই।
অসুবিধা- সন্তান সম্ভবা স্ত্রীলোক লুপ ব্যবহার করিতে পারে না। বস্তিদেশে জীবাণু সংক্রমণ ঘটিলে লুপের ব্যবহার নিষিদ্ধ।

প্রশ্ন- কপারটি, কপার ৭, বা আই.ইউ.ডি পদ্ধতি কি? ইহার সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

উত্তর: এগুলিও লুপের ন্যায় জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। কপার বা তামা ধীরে ধীরে দ্রবীভূত হয় এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ করে। লুপের তুলনায় ইহারা বেশী উপযোগী, কেননা ইহারা কম রক্তপাত ঘটায়।

সুবিধা:
১) ইহাদের মাপ ছোট বলিয়া জরায়ুর মধ্যে ইহাদের প্রবেশ করাইতে সুবিধা হয়।
২) সন্তান হয় নাই এই ধরনের নারীদের জন্য ইহারা সুবিধাজনক।
অসুবিধা- চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়।






প্রশ্ন-  আই.ভি.এফ (I.V.F) কি? কি কি অবস্থায় আই.ভি.এফ করানো হয়?

উত্তর: আই.ভি.এফ হইল প্রজননের সহায়ক একটি প্রযুক্তি বা Assitrd Reproductive Technology ইহার পূর্ণ নাম ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (In Vitro Fertilization)। নিম্নলিখিত অবস্থায় আই.ভি.এফ করানো হয়।
১) বন্ধ্যাত্ব দূর করার জন্য অন্য চিকিৎসা ফলপ্রসু না হইলে।
২) বন্ধ্যাত্বের কোন কারণ যদি না পাওয়া যায়, যাহাকে বলা হয় Unexplanned infertility.
৩) কোনও কারণে ফ্যালোপিয়ন টিউব দুইটি ডিম্বাণুর সঙ্গে শুক্রাণুর মিলন ঘটাইতে অক্ষম হইলে।
৪) এন্ডোমেট্রিওসিসের মাত্রা বেশী হইলে।






প্রশ্ন- জন্মনিয়ন্ত্রণে ইনজেকশনের ভূমিকা কি? ইহার সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ কি কি?

উত্তর : জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য মেয়েদের প্রতি তিনমাস অন্তর অর্থাৎ বৎসরে মাত্র চারবার এই ইনজেকশন নিতে হয়। মাসিক শুরু হওয়ার ১ম হইতে ৫ দিনের মধ্যে ইহা অবশ্যই নিতে হইবে। একবার ইনজেকশান নিলে তিনমাসের জন্য নিশ্চিত থাকা যায়।
সুবিধা- একবার ইনজেকশন নিলে তিনমাসের জন্য নিশ্চিত থাকা যায়। গর্ভধারণের ইচ্ছা হইলে ইনজেকশন বন্ধ করিয়া দিলে গর্ভধারণ করা যায়।
অসুবিধা- যে সকল স্ত্রীলোকের সন্তান হয় নাই তাহাদের ইনজেকশন লওয়া উচিত নয়। লিভারের দোষ, রক্তচাপ, হৃদরোগ, বহুমূত্র, চর্মরোগ, টিউমার প্রভৃতি থাকিলে ইনজেকশন নেওয়া উচিত নয়। ইনজেকশান নেওযার পর মাসিক অনিয়মিত হইতে পারে, বন্ধ হইতে পারে কম বা বেশী হইতে পারে। তবে ইহাতে ভয়ের কিছু নাই।






প্রশ্ন- ডিএন্ডসি (D & C) বলিতে কি বুঝ?

উত্তর : ইহা গাইনকলজির সবচাইতে প্রয়োজনীয়, সাধারণ ও সরল অপারেশন। মাসিক পরিষ্কার না হইলে ও ব্যথা হইলে, জরায়ুতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটিলে, ইনকমপ্লিট এবোরশন হইলে ডিএন্ডসি করানো হয়।

 



প্রশ্ন-  টিউবেকটমী বা স্ত্রী নির্বীজকরণ বলিতে কি বুঝ? ইহার সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

উত্তর: মেয়েদের ডিম্ববাহী নল কিছুটা বাঁধিয়া অস্ত্রোপচার করার নাম টিউবেকটমী বা স্ত্রী নির্বীজকরণ। ইহা এক প্রকার স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এই অস্ত্রোপচারের ফলে সংগমের সময় শুক্রকীট ও ডিম্বকের মিলন হয় না। কারণ যে নল ইহাদের বহন করে ঐ নলটি কাটিয়া ফেলা হয়।
সুবিধা- ইহাতে স্থায়ীভাবে জন্মনিরোধ হয় এবং স্বামী স্ত্রীর মিলনের আনন্দ ক্ষুণ্ণ হয় না।
অসুবিধা-অপারেশনের সময় পূর্ণ সতর্কতা না নিল জীবাণু সংক্রমণের আশংকা থাকে।





প্রশ্ন- ভ্যাসেকটমি বা পুং নির্বীজকরণ কি? ইহার সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

উত্তর : পুরুষের শুক্রকীটবাহী দুইটি নল বাঁধিয়া খানিকটা কাটিয়া ফেলিবার অস্ত্রোপচারের নাম ভ্যাসেকটমি বা পুং নির্বীজকরণ। ইহার ফলে বীজ নির্গমণের পর বন্ধ হয়।
সুবিধা- ইহাতে পুরুষের তেমন বেশী কষ্ট হয় না। অপারেশনের পরে হাঁটিয়া বাড়ী যাওয়া যায় এবং পরদিন হইতে স্বাভাবিকভাবে কাজ কর্ম করা যায়। স্বামী স্ত্রী মিলনে আনন্দ ক্ষুণ্ণ হয় না।
অসুবিধা- ভ্যাসেকটমী করার পর তিনমাস সঙ্গম করা উচিত নয়। অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি অনুসরণ করিতে হইবে। শুক্রে শুক্রকীট আছে কিনা দেখিবার জন্য পরীক্ষা করা উচিত। শুক্রকীট মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্রোপচার সফল হয় না ও সঙ্গমে গর্ভের ভয় থাকে।






প্রশ্ন-  হোমিওপ্যাথিক জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর : ১৯৭৯ সালের আগস্ট মাসের 'বহুব্রীহি' পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় ডাঃ প্রসাদ বন্দোপাধ্যায় 'জন্মনিয়ন্ত্রণে হোমিওপ্যাথি' নামক প্রবন্ধে লিখিয়াছেন যে, নেট্রাম মিউর, প্লাম্বাম মেট এবং এপিস মেল প্রভৃতি হোমিওপ্যাথির ঔষধ শীঘ্র গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট করে। তন্মধ্যে একমাত্র নেট্রাম মিউরই দীর্ঘদিন ব্যবহার করিলে কোন ক্ষতির আশংকা থাকে না, অথচ গর্ভ বন্ধ থাকে।
সেবনবিধি- হোমিওপ্যাথিক নেট্রাম মিউর অপেক্ষা বায়োকেমিক নেট্রাম মিউর ব্যবহার করা আরও বেশী নিরাপদ।
মাসিকের ৫ম দিন হইতে পরবর্তী মাসিক না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যহ সন্ধ্যায় নেট্রাম মিউর, ৩০ শক্তির ছয়টি ট্যাবলেট সামান্য গরম পানিসহ শুধু মুখে ফেলিয়া চুষিয়া খাইতে হইবে। প্রথম একমাস এইভাবেই চলিবে। দ্বিতীয় মাসে প্রতি সন্ধ্যায় নেট্রাম মিউর ৬০ শক্তির ছয়টি টেবলেট খাইতে হইবে। তৃতীয় মাসে ১২০ শক্তির প্রতি সন্ধ্যায় ৫টি টেবলেট এবং চতুর্থ মাসে ৩০০ শক্তির প্রতি সন্ধ্যায় ৫টি টেবলেট খাইতে হইবে। ৫ম মাসে মাসিকের ৫ম দিনে সন্ধ্যায় নেট্রাম মিউর হোমিওপ্যাথিক ১০০০ শক্তির একমাত্রা সেবন করিতে হইবে। এ মাসে আর ঔষধ সেবনের প্রযোজন নাই। ৬ষ্ঠ মাসে পুনরায় প্রথম মাসের ন্যায় ৩০ এবং পূর্বানুরূপ পদ্ধতিতে ঔষধ সেবন করিতে হইবে। ২/১ দিন ঔষধ সেবনে ভুল হইলে আশংকার কোন কারণ নাই।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া- এই ঔষধ সেবনে বাড প্রেসার সামান্য বৃদ্ধি পাইতে পারে। যদি তাহা হয় তবে সিপিয়া ৩০ বা ক্যাক্ষর ৩x দুই ঘণ্টা অন্তর ৩-৪ মাত্রা সেবন করিতে হইবে। উদরাময় দেখা দিলে ফেরাম ফস ৩০ তিনটি বটিকা ও কেলি ফস ৩০ তিনটি বটিকা এক ঘণ্টা অন্তর সেবন করিতে হইবে। তবে মাঝে মাঝে নেট্রাম ফস ও নেট্রাম সালফ ৬x সেবন করা যায়।



সমাপ্ত


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ