এলো সকোট্রিনা
Aloe Socotrina
প্রাকৃতিক অবস্থা:- লিলিয়াসিয়া।
প্রতিশব্দ:- এলো গামি, হেপাটিক। বোম্বাই-মোচা। সংস্কৃত এবং বাংলা-ঘৃত কুমারী। আরবী-মুসাব্বর।
উৎস:- ঘৃত কুমারী হইতে এই ঔষধ প্রস্তুত হয়। ইহা মাত্র সামান্য কয়েক ফুট উঁচু হয়। এই সব গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ কতকগুলি সোজা শাখা বিশিষ্ট ডাঁটার সমষ্টি লইয়া গঠিত। সোজা পাতাগুলি মাংসল অথবা রসাল হয় এবং ইহার একপ্রান্ত ক্রমশঃ সরু হইয়া যায়। অনেকগুলি ঘৃতকুমারী গুল্মের শুধুমাত্র রসাল পাতাগুলি মাটির উপরিভাগ হইতে বাহির হইয়া চতুর্দিকে ছড়াইয়া পড়ে, ডাঁটা হয় না। পাতাগুলির উভয় প্রান্তে কাঁটা থাকে এবং সমস্ত পাতা জেলির ন্যায় রসে পরিপূর্ণ থাকে। এই জাতীয় গুল্ম বিভিন্ন জাতের হইয়া থাকে। যেমন-কেপ এলোজ, কিউরাকাও এলোজ, জানজিবার এলোজ, সকোট্রিণা এলোজ প্রভৃতি।
প্রাপ্তিস্থান:- পূর্ব ভারতীয় দীপপুঞ্জ, আফ্রিকা, আরব, ভারত ও বাংলাদেশে এই উদ্ভিদ জন্মিয়া থাকে।
প্রুভার:- জার্মানীর ডাঃ হেলবিন ১৮৩৩ খৃষ্টাব্দে এই ঔষধটি প্রুভ করেন।
প্রস্তুত প্রণালী:- ঘৃত কুমারী পাতার ঘনীভূত রস কঠিন করিয়া চূর্ণ করিতে হয়। সেই মোটা চূর্ণ পর্যাপ্ত পরিমাণে তীব্র সুরাসারের সহিত মিশ্রিত করিয়া মূল অরিষ্ট প্রস্তুত হয়। ২০ এবং উচ্চ শক্তি পরিশ্রুত সুরাসারের সহিত প্রয়োগ হয়। বিচূর্ণাকারেও ইহা প্রস্তুত করা যায়।
প্রস্তুতের ফরমূলা:- এফ-৪ (অরিষ্ট) এবং এফ-৭ (বিচূর্ণ)।
ক্রিয়াস্থান:- উদর, অস্ত্র, মলদ্বারে ইহার বিশেষ ক্রিয়া দেখা যায়। লিভারের উপর ইহা ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া লিভার ধমনীতে রক্তাধিক্যতা ও প্রচুর পরিমাণে পিত্ত নিঃসরণ করিয়া ক্রিয়া বৃদ্ধি করে।
প্রয়োগক্ষেত্র:- আমাশয়, উদরাময়, অর্শ, কোষ্ঠবদ্ধতা, শূল বেদনা, শিরঃপীড়া, কটিবাত, লিভার পীড়া, চর্মপীড়া ও শ্বাস যন্ত্রের পীড়ায় ইহা প্রয়োগ হয়।
মানসিক লক্ষণ:-
১। রোগী মানসিক পরিশ্রম কাতর, রাগী ও খিটখিটে।
২। কোষ্ঠবদ্ধ অবস্থায় মেজাজ রাগী হয়। রোগ ভোগের পর খিটখিটে।
৩। নড়াচড়া করার অনিচ্ছা, অবসাদগ্রস্ত।
৪। মেঘলা দিনে সকল যন্ত্রণার বৃদ্ধি।
৫। রসাল জিনিষ খাওয়ার ইচ্ছা, মাংস খাইতে অনিচ্ছা।
চরিত্রগত লক্ষণ:-
১। কোন কিছু পানাহারের পরই বাহ্যের বেগ, তাড়াতাড়ি পায়খানায় ছোটে, মলদ্বার যেন খোলা থাকে। প্রাতে বিছানা হইতে উঠার পূর্বেই বাহ্যের বেগ।
২। বায়ু নিঃসরণের সময় মলদ্বারে জ্বালা, বায়ু নিঃসরণ হইলেই প্রায় অসাড়ে বাহ্য হইয়া যায়। নিঃসৃত বায়ুতে অত্যন্ত দুর্গন্ধ বাহির হয়। বাহ্যের সময় বায়ু নিঃসরণ হয় বেশী, মলের ভাগ অল্প।
৩। বাহ্যের পূর্বে পেট গড় গড় করিয়া ডাকে, হঠাৎ বাহ্যের বেগ।
৪। বাহ্যের পর দুর্বলতা ও মূর্ছার ভাব।
৫। কঠিন মল হইলেও অসাড়ে নির্গত হয়।
৬। অর্শ পীড়ায় আঙ্গুর ফলের মত বলী। সর্বদাই মলদ্বারে ঠেলা মারা মত বেদনা, মলদ্বার গরম, জ্বালা করে, অত্যন্ত চুলকানি এবং রক্তস্রাব হয়।
৭। লিভার, সরলাস্ত্র অথবা জরায়ুর পীড়ায় ঐ সমস্ত যন্ত্রের ফুলা ফুলা ভাব থাকে।
৮। শরীরের চর্ম শুষ্ক, জ্বালাযুক্ত ও গরম অনুভূত হয় অথচ থার্মোমিটার লাগাইলে তাপ উঠে না।
৯। প্রতি বৎসর শীতকালে পাঁচড়া হয়।
১০। শিরঃপীড়া গরমে বৃদ্ধি, ঠাণ্ডায় উপশম। প্রতিবার পা ফেলিয়া চলিবার সময় মাথায় যন্ত্রণা, শিরঃপীড়াসহ গা বমি বমি। চক্ষু ভারী বোধ।
প্রাতঃকালীন উদরাময়:- অসাড়ে বাহ্য হওয়ার জন্য এলো উৎকৃষ্ট ঔষধ। প্রাতঃকালীন উদরাময়। ইহার বাহ্যের বেগ ভোর ৫টার দিকে কিংবা শেষ রাত্রি হইতে আরম্ভ হয়। গুহ্যদ্বার অসাড়, সহজ বাহ্য হইলেও বাহ্য অসাড়ে হয়। বাহ্যের পূর্বে পেট খুব ডাকে, রোগী মনে করে প্রচুর বাহ্য হইবে, ফলতঃ তাহা হয় না। শুধুমাত্র সশব্দে বায়ু নিঃসরণ হইয়া থাকে। বায়ু নিঃসরণের সঙ্গেই মল বাহির হইয়া পড়ে। বাহ্য অতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত। তলপেটে কল কল শব্দ হয়। পেটে বেদনা থাকে। তলপেটে ও মলদ্বার অনবরত ভারবোধ, নাভির চতুর্দিকে বেদনা বাহ্যের পূর্বে ও সময়ে পেটে মোচড়ানি • ব্যথা। বাহের পর তাহার নিবৃত্তি ঘটে। বাহ্যের বর্ণ হলদে ভস্কা ভস্কা জলের মত তরল ও গরম আম সংযুক্ত। কখনও অল্প কখনও অধিক বাহ্য হয়। উদরাময়ে বাহ্য হইলে প্রায় অধিক পরিমাণেই থাকে। খাওয়ার ঠিক পরেই বাহ্য হওয়া ইহার লক্ষণ। বাহ্যের পর ঘর্ম ও দুর্বলতা এমনকি মূর্ছা পর্যন্ত হয়। উদরাময়ে এলো উচ্চ শক্তি প্রযোজ্য।
আমাশয়ের লক্ষণ:- অসাড়ে বাহ্য হয়। মলত্যাগের পূর্বে পেটে গড় গড় করিয়া ডাকে, পেটে বেদনা থাকে। নাভির চতুর্দিকে বেদনা, বাহ্যের পূর্বে ও সময়ে পেটে মোচড়ানি ব্যথা, বাহ্যের পর তাহার নিবৃত্তি হয়। বাহ্যের সময় থলো থলো সাদা আম নির্গত হয়। অনেক সময় রক্ত মিশ্রিত আম নির্গত হয়। পেটে বায়ু সঞ্চয় হয়, বায়ু নিঃসরণের সঙ্গেই মল বাহির হইয়া পড়ে। আহারের পরই বাহ্য হওয়া উহার লক্ষণ। বাহ্যে দুর্গন্ধ, বাহের পর ঘর্ম ও দুর্বলতা প্রকাশ পায়, এমনকি মূর্ছা পর্যন্ত হয়। ইহার রোগী শীতল স্থান ও শীতল জিনিষ পছন্দ করে।
অর্শ:- অর্শ পীড়ায় এলো লক্ষণানুযায়ী সফলতার সহিত ব্যবহৃত হয়। বাহ্যের বেগের সঙ্গে আঙ্গুরের থলোর ন্যায় অর্শের বলী বাহির হয়। অর্শ অত্যন্ত চুলকায় এবং জ্বালা করে। এই জ্বালা ঠাণ্ডা জলে উপশম হয়। অর্শের বলির রং নীল দেখায়। অধিক পরিমাণে মলিন বর্ণের রক্তস্রাব, কুন্থন এবং কর্তনবৎ বেদনা। এসিড মিউরেও আঙ্গুর ফলের ন্যায় বলী নির্গত হয়। কিন্তু তাহার জ্বালা গরম জলে বা গরম সেঁক দিলে সামান্য উপশম হয়। ইহাতে অত্যন্ত টাটানি ব্যথা থাকে, স্পর্শে কিংবা কাপড় দিলে সামান্য উপশম হয়। অর্শের সঙ্গে উদরাময় থাকিলে এলো, আর যদি কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে তবে কলিনসোনিয়া উপকারী। পডোফাইলামেও গুহ্যদ্বার বাহির হইয়া পড়ে কিন্তু তাহাতে অর্শ থাকে না। যেখানে উদরাময় ও কলেরায় বাহ্য অধিক হইতে হইতে হারিস বাহির হয় সেখানে পডোফাইলাম উপকারী। অর্শের বলি যদি প্রদাহিত ও স্ফীত হয় এবং প্রদাহিত বলি গুহ্যদ্বারের বাহির হইয়া ভিতরে প্রবেশ না করে তবে ল্যাকেসিস উপকারী।
মলদ্বার বা সরলান্ত্রের:- গুহ্যদ্বারে নিয়ত ঠেলামারা বেদনা, রক্তস্রাব, টাটানি, উষ্ণতাবোধ, শীতল জলে উপশম। দুর্বলতা বোধ এবং গুহ্যদ্বারের মুখশায়ী সংকোচক পেশীর শক্তিহীনতা। বাত কর্মের সময় মনে হয় যেন কাপড় নষ্ট হইয়া গেল। রোগীর অজান্তেই মল বাহির হইয়া যায়, সে তাহা লক্ষ্য করিতেও পারে না। দলা দলা মল, জলবৎ মল, আঠার মত মল, তৎসহ মলত্যাগের পর গুহ্যদেশে বেদনা। অর্শের বলি আঙ্গুর থোকার ন্যায় বাহির হইয়া পড়ে। অত্যন্ত বেদনান্বিত ও কোমল, শীতল জল স্পর্শে আরাম লাগে। গুহ্য পথ ও গুহ্যদ্বারে জ্বালা। কোষ্ঠবদ্ধতাসহ পেটের নিম্নতর অংশে চাপবোধ।
ইগ্নেশিয়া-সরলান্ত্রের উপর অংশে চুলকানি ও খোঁচামারা ব্যথা। গুহ্যদ্বার নির্গমন। মল কষ্টে নির্গত হয়। মলত্যাগের পর গুহ্যদ্বারের কষ্টকর সংকোচন। কাশিবার 'পর গুহ্যদ্বারের কষ্টকর সংকোচন। কাশিবার সময় অর্শ বলিতে বেদনা লাগে। গুহ্যদ্বার হইতে সরলান্ত্রের মধ্য পর্যন্ত কাঠি ভরা বেদনা। রক্তস্রাব এবং বেদনা, মল তরল হইলে বৃদ্ধি। সরলান্ত্রের ভিতর হইতে বাহির দিকে তীক্ষ্ণ অস্ত্রের দ্বারা চাপিয়া ধরার মত চাপ দেয়।
খাওয়ার ইচ্ছা অনিচ্ছা:- এলোর রোগী মাংস পছন্দ করে না। তবে রসাল জিনিষ খাওয়ার স্পৃহা আছে। ভোজনের পর পেটে বায়ু সঞ্চয়। শিরঃপীড়ার সহিত বমনেচ্ছা। ভুল জায়গায় পা পড়িলে পেটের মধ্যে বেদনা অনুভূত হয়। গা বমি, তিক্ত ঢেকুর।
শিরঃপীড়া এবং কটিবাত:- যেখানে উদরাময় আরম্ভ হইলে শিরঃপীড়ার হ্রাস হয় এবং উদরাময় বন্ধ হইলে শিরঃপীড়া বাড়ে সেখানে এলো উপকারী। ললাটের উপরিভাগে স্থায়ী যন্ত্রণা, তৎসহ চক্ষুগুলিতে ভারীবোধ এবং ঐগুলি আংশিকভাবে বন্ধ করিয়া রাখিতে বাধ হয়। মলত্যাগের পর শিরঃপীড়া। যে শিরঃপীড়া গরমে বৃদ্ধি পায় এবং ঠাণ্ডা কোনও দ্রব্য প্রয়োগ করিলে উপশম হয় তাহাতে এলো উপকারী।
যকৃত বা লিভার:- লিভার হইতে বুক পর্যন্ত সুঁচ ফোটান ব্যথা, শ্বাসকৃষ্ণতা লিভারের স্থান ভারীবোধ ও বেদনাযুক্ত। ডান পাঁজরার নিম্নে ভার বোধ।
বৃদ্ধি:- উষ্ণ বায়ুতে দাঁড়াইলে, আহারের পর, অতি প্রত্যুষে, গ্রীষ্মে, শুষ্ক গরম আবহাওয়ায়।
উপশম:- বায়ু ও মল নির্গমনে, শীতল জলে, শীতল বায়ুতে।
অনুপূরক:- সালফার, সিপিয়া, এসিড সালফ, কেলি বাইক্রম।
ক্রিয়ানাশক:- সালফার, নাক্স, লাইকো, ক্যাক্ষর।
স্থিতিকাল:- ৩০ হইতে ৪০ দিন।
শক্তি:- ১০ হইতে ২০০।
0 মন্তব্যসমূহ