প্রসব সংক্রান্ত অস্ত্রোপচার - Obstetrical Operation, তৃতীয় বর্ষ - সপ্তম অধ্যায়

 সপ্তম অধ্যায়

প্রসব সংক্রান্ত অস্ত্রোপচার
(Obstetrical Operation)







ইন্ডাকসন অব লেবার

প্রশ্ন-  ইন্ডাকসন অব লেবার কাহাকে বলে? ইহার ইন্ডিকেসনগুলি কি কি?

উত্তর: ইন্ডাকসন অব লেবার গর্ভের মধ্যে ভূমিষ্ট সন্তান বাঁচিয়া থাকিবার উপযুক্ত হইবার পরে মাতার চিকিৎসার জন্য প্রসব করানো হইলে তাহাকে ইন্ডিকেসন অব লেবার বলে।
ইন্ডিকেসনসমূহ-
১) প্রি-এক্ল্যামটিক টক্সিমিয়া।
২) পোস্ট ম্যাচুরিটি।
৩) ব্রীচ প্রেজেন্টেসন।
৪) ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ফিটাল ডেথ।
৫) ডায়াবেটিস মেলিটাস।
৬) হাইড্রামনিয়াস।
৭) কেফালো পেলভিক ডিসপ্রপোরসন।
৮) এন্টিপার্টাম হেমারেজ।
৯) হেমোলাইটিক ডিজিজ।

পদ্ধতি-
দুইটি পদ্ধতিতে ইহা করানো যায়। যথা-
১) মেডিক্যাল ইন্ডাকসন বা ঔষধের সাহায্যে।
২) সার্জিকেল ইন্ডাকসন বা মেমব্রেন ছিঁড়িয়া দেওয়ার মাধ্যমে।
 



বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীক ভারসন

প্রশ্ন- ভারসন কাহাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর: ভারসন- যখন গর্ভের জটিল প্রেজেন্টেসনকে পরিবর্তন করিয়া সহজ প্রেজেন্টেসনে আনা হয় তখন তাহাকে ভারসন বলে। ইহা জটিল প্রেজেন্টেসনকে পরিবর্তন করিয়া সহজ প্রেজেন্টেসনে আনয়ন করার প্রক্রিয়া।
ভারসনের প্রকারভেদ- ভারসন তিন প্রকার। যথা-
১) এক্সটারন্যাল ভারসন (External Version)
২) ইন্টারন্যাল ভারসন (Internal Version)
৩) বাইপোলার ভারসন (Bipolar Version)




প্রশ্ন- এক্সটারন্যাল ভারসন কাহাকে বলে? কি কারণে এবং কোন অবস্থায় উহা করা হয় বা ইহার সংকেত কি?

উত্তর : এক্সটারনাল ভারসন- যখন শুধুমাত্র পেটের উপর উভয় হাত রাখিয়া ভারসন করা হয় তাহাকে এক্সটারন্যাল ভারসন বলে। ট্রান্সভার্স লাই অর্থাৎ শিশু নির্গমম্বারের দিকে আড়াআড়ি শুইয়া থাকিলে তাহা ঠিক করার জন্য এবং ব্রীচ হইতে হেড প্রেজেন্টেসনে আনিতে হইলে এক্সটারন্যাল ভারসনের প্রয়োজন হয়।
কি কারণে বা কোন অবস্থায় ইহা করা হয় বা সংকেত- শিশু নির্গমদ্বারের দিকে আড়াআড়িভাবে (না মাথা, না পাছা) শুইয়া থাকিলে অর্থাৎ টান্সভার্স লাই হইলে উহা ঠিক করার জন্য এবং ব্রীচ প্রেজেন্টেশন হইতে হেড প্রেজেন্টেশনে আনার জন্য ইহা করা হয়। কারণ ঐ অবস্থায় প্রেজেন্টেশন হইলে শিশুর বিপদের আশংকা বেশী থাকে। এজন্য আট মাস হইতে ভার্সন করিবার চেষ্টা করা হইয়া থাকে।





প্রশ্ন-  ইন্টারন্যাল ভারসন কাহাকে বলে? কি কারণে এবং কোন অবস্থায় ইহা করা হয় বা সংকেত কি?

উত্তর: ইন্টারন্যল ভারসন- অস পুরাপুরি অথবা অন্ততঃ একটি হাত ঢুকাইবার মত প্রশস্ত হইবার পর এবং মেমব্রেনস ছিঁড়িয়া যাইবার পর যখন এক হাত পেটের উপর এবং অন্য হাত জরায়ু মধ্যে প্রবেশ করাইয়া ভারসন করা হয় তাহার নাম ইন্টারন্যাল ভারসন। ইন্টারন্যাল ভারসন সর্বদাই এমনভাবে করা হয় যাহাতে শিশুর পাছা নির্গমম্বারের দিকে মুখ করিয়া থাকে।
 কি কারণে এবং কোন অবস্থায় ইহা করা হয় বা সংকেত- ম্যালপ্রেজেন্টেসন যেমন শোলডার হইতে ব্রীচ ঠিক করার জন্য ইহা করা হয়। ইহা ঠিক না করিলে শিশুকে বাহির করা সম্ভব হয় না। যমজ সন্তানের দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রেও এইরূপ করা হয়।

প্রশ্ন- বাইপোলার ভারসন কাহাকে বলে?

উত্তর: বাইপোলার ভারসন- অস দুই আঙ্গুল প্রমাণ প্রশস্ত হইলে এবং মেমব্রেনস না ছিঁড়িয়া মাতাকে অজ্ঞান করিয়া যখন এক বা দুই আঙ্গুল সারভিক্সের মধ্যে প্রবেশ করাইয়া এবং এক হাত পেটের উপর রাখিয়া ভারসন করানো হয় তাহার নাম বাইপোলার ভারসন। বর্তমানে ইহার প্রয়োগ নাই।




প্রশ্ন-  কেফালিক ভারসন এবং পোডালিক ভারসন কাহাকে বলে?

উত্তর: কেফালিক ভারসন- যখন ভারসন করিয়া শিশুর মস্তক প্রেজেন্টেসন করানো হয় তখন উহাকে কেফালিক ভারসন বলে।
পোডালিক ভারসন- যখন ভারসন করিয়া শিশুর ব্রীচ প্রেজেন্টেশন করানো হয় তাহাকে পোডালিক ভারসন বলে।




প্রশ্ন-  ট্রাকশন কাহাকে বলে?

উত্তর: ট্রাকশন- প্রসবকালীন যখন গর্ভস্থ শিশুর কোন অংশ ধরিয়া বিশেষ উদ্দেশ্যে টানা হয় তাহাকে ট্রাকশন বলে। যেমন-অবসটেট্রিক ফরসেফস সন্তানের মাথায় লাগাইয়া ডেলিভারীর জন্য টানা, প্লাসেন্টা প্রিভিয়াতে উইলেটস ফরসেপস সন্তু ানের মাথায় লাগাইয়া উহাতে ওজন বাঁধিয়া দেওয়া হয় যাহাতে নিচের দিকে টান অব্যাহত থাকে প্রভৃতি।




প্রশ্ন- ইপিসিওটমি কি? কখন এবং কোন অবস্থায় ইপিসিওটমির প্রয়োজন হয় বা ইহার সংকেত কি?

উত্তর: ইপিসিওটমি- কাঁচি দিয়া পেরিনিয়মের একধার কাটিয়া শিশু ভূমিষ্ট হইবার পর তাহা পুনরায় সেলাই করিয়া দেওয়ার নাম ইপিসিওটমি। ইহা সাধারণত প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থায় প্রয়োজন হয়। যদি প্রসূতির কোন কষ্ট (যেমন-সূতিকা আক্ষেপ, হৃদরোগ) এবং শিশুর কোন কষ্ট (অকাল প্রসব) থাকে, তখন প্রসূতি ও শিশুর কষ্ট কমাইবার জন্য ইহার প্রয়োজন হয়।

কোন অবস্থায় ইহা প্রয়োজন বা সংকেত-
১) যদি মায়ের কোন কষ্ট (যেমন-এক্ল্যাম্পশিয়া, হৃদরোগ) বা শিশুর কোন কষ্ট (অকাল প্রসব) থাকে এবং যদি প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থা দীর্ঘ হয়, তখন মা ও শিশুর কষ্ট লাঘবের জন্য ইহা করা হয়।
২) অস্বাভাবিক প্রসব (যথা-ফেস প্রেজেন্টেশন)
৩) ফরসেপস ডেলিভারীর পূর্বে।
৪) প্রথমবারের গর্ভে যদি শিশু খুব বড় হয় এবং বিটপ যদি স্থিতিস্থাপক না হয় এবং বিটপের উপর চাপ পড়ে।
৫) আগে যদি কখনও বিটপ মেরামত করা হইয়া থাকে।




প্রশ্ন- পেরিনিওয়াফি কি? ইহার শ্রেণীবিভাগ কর।

উত্তর: পেরিনিওরাফি- প্রসবের সময় পেরিনিয়াম ছিঁড়িয়া গেলে তাহা মেরামত বা সেলাই করিবার নাম পেরিনিওরাফি। প্রসবের পরে পেরিনিয়াম ছিঁড়িবার মাত্রার উপর নির্ভর করিয়া ইহার শ্রেণীবিভাগ করা হয়।
পেরিনিওরাফির শ্রেণীবিভাগ-প্রসবের পরে পেরিনিয়ম ছিঁড়িবার মাত্রার উপর নির্ভর করিয়া ইহাকে তিনভাগে ভাগ করা হইয়াছে। যথা-
১) প্রথম ডিগ্রী- যোনিপথের মিউকাস মেমব্রেন ছিঁড়িয়া যাইয়া চামড়ার কিছুদুর পর্যন্ত ছিঁড়িয়া থাকে।
২) দ্বিতীয় ডিগ্রী- যে ক্ষেত্রে বিটপের সবটুকু এবং মলদ্বারের স্ফিংটার পর্যন্ত ছিঁড়িয়া যায়।
৩) তৃতীয় ডিগ্রী- এই অবস্থায় মলদ্বারের স্ফিংটারও ছিঁড়িয়া যায়।






ফরসেপস ডেলিভারী
(Forceps Delivery)

প্রশ্ন-  ফরসেপস প্রয়োগের সংকেতগুলি লিখ
বা, ফরসেপস ডেলিভারীর নির্দেশিক বর্ণনা কর।

উত্তর: ফরসেপস প্রয়োগের সংকেত- নিম্নলিখিত কারণে ফরসেপস ব্যবহার করিতে হয়-
১) পেরিনিয়াম ঠিকমত কাজ না করিলে অর্থাৎ স্থিতিস্থাপক না হইলে, ব্যথা বেশী না হইলে, দুর্বল জরায়ু সংকোচন হইলে, স্থায়ী মেন্টো পেস্টিরিয়র পজিসেন, বা শিশুর অক্সিপিটো পোস্টিরিয়র পজিশন স্থায়ী হইলে প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থা দীর্ঘ হয় এবং মাতা ও শিশু উভয়েই কষ্ট পান। এই কষ্ট কমাইবার জন্য অর্থাৎ প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থা সংক্ষিপ্ত করিতে ফরসেপস ব্যবহার করা হয়।
২) মাতার ডিসট্রেস হইলে, মায়ের ফুসফুসে ও হৃদপিণ্ডে মারাত্মক অসুখ থাকিলে, হৃদরোগ, অত্যধিক রক্তচাপ, এক্ল্যাম্পশিয়া প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত মাতার কষ্ট লাঘব ও জীবন রক্ষার জন্য ফরসেপস প্রয়োগ বিধেয়।
৩) অপরিণত শিশুর ক্ষেত্রে বা প্রসবের সময় শিশুর পাছা বাহির হইয়াছে অথবা মাথা বাহির হইতে দেরী হইতেছে এইরূপ হইলে, নাভিরজ্জুর জটিলতা দেখা দিলে, জরায়ুতে জীবাণু সংক্রমণ ঘটিলে, শিশুর শ্বাসরোধ এড়াইতে ফরসেপস প্রয়োগ করা হয়।




প্রশ্ন-  ফরসেপস লাগানোর পূর্বশর্ত কি?

উত্তর: ফসফেস লাগানোর পূর্বশর্ত ফরসেফ লাগানোর পূর্বশর্তগুলো নিম্নরূপ। যথা-
১) অবশ্যই শিশুর মাথা এনগেজ হইতে হইবে।
২) উপস্থিতি সুবিধাজনক হইবে।
৩) যথেষ্ট পেলভিক আউটলেট হইতে হইবে।
৪) মূত্রথলী খালি করিতে হইবে।
৫) জরায়ু গ্রীবা সম্পূর্ণ সম্প্রসারিত হইতে হইবে।
৬) জরায়ু গ্রীবা সংকুচিত ও প্রসারিত হইতে হইবে।
৭) অবশ্যই মেমব্রেন ছিড়িতে হইবে।




প্রশ্ন- ফরসেপস এর শ্রেণীবিভাগ কর।

উত্তর: ফরসেপস এর শ্রেণীবিভাগ ফরসেপস এর শ্রেণীবিভাগ নিম্নরূপ। যথা-
১) স্বল্প বক্র ফরসেপস (Short Curved Forceps)
২) দীর্ঘ বক্র ফরসেপস (Long Curved Forceps)
৩) কিল্যান্ডের ফরসেপস (Kielland's Forceps)
৪) এক্সিস ট্রাকসন ফরসেপস (Axis Traction Forceps)




প্রশ্ন-  ফরসেপস ডেলিভারীর বিভিন্ন স্ত রের বর্ণনা দাও।

উত্তর: ফরসেফস ডেলিভারীর বিভিন্ন স্তর- ফরসেফস ডেলিভারীর স্ত রসমূহ নিম্নরূপ। যথা-
ক) পূর্ব ব্যবস্থাপনা, খ) ফরসেফস প্রয়োগ ও
গ) নিষ্ক্রমণ।

ক) পূর্ব ব্যবস্থাপনা-
১) অন্যান্য অপারেশনের ন্যায় যন্ত্রপাতি তৈরী রাখা।
২) যৌনকেশ সেভ করিয়া পানি দ্বারা ধৌত করিয়া এন্টিসেপটিক লোশন দ্বারা মুছিতে হইবে। অপারেশন এলাকা জীবাণুমুক্ত তোয়ালে দ্বারা পরিবেষ্টিত রাখিতে হইবে।
৩) অজ্ঞান করিয়া অপারেশন করিতে হইবে।
৪) রোগিনীকে লিখোটমি পজিশনে রাখিতে হইবে।
৫) ক্যাথিটারের সাহায্যে মূত্রথলী খালি করিতে হইবে।
৬) প্রথম প্রসবের ক্ষেত্রে ইপিসিওটমি করিতে হইবে।

খ) ফরসেপস প্রয়োগ-
১) ফরসেপস বাম বেড প্রথমে প্রবেশ করাইয়া বাম হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে ইহার হাতল ধরিয়া বাচ্চার মাথা ও পূর্বে যোনিপথে ঢুকানো গ্লাভস পরা ডান হাতের তালুর মধ্যস্থানে বাম বেড প্রবেশ করাইতে হইবে।
২) ফরসেপের হাতল প্রসূতির পেটের উপর এবং ডান দিকে কাত করিয়া ধরিতে হইবে। বেড যখন প্রসবের নিচের দিকের রাস্তায় প্রবেশ করিতে থাকিবে, তখন হাতলকে পিছনে এবং মাঝরেখা (Midline) বরাবর টানিয়া আনিতে হইবে।
৩) বাম বেড ঠিকভাবে লাগানোর পর ডান হাতের আঙ্গুল যোনিপথ হইতে বাহির করিতে হইবে। এমতাবস্থায় বাম হাতের আঙ্গুলগুলি মায়ের পেলভিসের ডানপাশ দিয়া প্রবেশ করাইতে হইবে এবং ফরসেপের ডান বেড পূর্বের মতই ধরিয়া একইরূপে ঢুকাইতে হইবে। ইহার হাতল বাম বেডের হাতলের উপর অবস্থান করিবে।
৪) বেড দুইটি লক করিয়া টান দেওয়ার জন্য তৈয়ার করিতে হইবে।

গ) নিষ্ক্রমণ-
১) সন্তানের মাথার পজিশন অনুসারে ফরসেপের হাতগুলি ডান হাতের সাহায্যে শক্ত করিয়া ধরিয়া ট্রাকশন দিক নির্ণয় করিয়া টান দিতে হইবে।
২) ট্রাকশনের দিকে প্রথমে যতটা সম্ভব পিছন দিক হইবে এবং যতই মাথা নিচের দিকে নামিতে থাকিবে ততই ট্রাকশনের দিক সামনের দিকে থাকিবে। মাথা যতক্ষণ পর্যন্ত যোনিপথের মুখে না আসিবে ততক্ষণ পর্যন্ত সামনের দিকে ট্রাকশন দিতে হইবে।
৩) সন্তানের মাথা উন্নীত হওয়ার পর ফরসেপস খুলিতে হইবে যাহাতে পেরিনিয়াম ছিঁড়িয়া যায়।





চিত্র: ফরসেপ ডেলিভারী

প্রশ্ন-  ফরসেপস এর সতর্কতা বা সাবধানতা বর্ণনা কর।

উত্তর: ফরসেপস এর সাবধানতা- ফরসেপস প্রয়োগে নিম্নলিখিত সতর্কতা লবলম্বন করা উচিত। যথা-
১) ফরসেপস প্রয়োগের পূর্বে এপিসিয়োটমি করিতে হয়, তাহা না হইলে পেরিনিয়াম বা বিটপ এবড়ো থেবড়োভাবে ছিঁড়িয়া যাইতে পারে।
২) ফরসেপস দিবার পূর্বে ক্যাথিটার দিয়া রোগিনীকে প্রস্রাব করানো উচিত, নতুবা মূত্রাশয় ছিঁড়িয়া যাইতে পারে।
৩) ফরসেপের বেড বেজায়গায় বেঠিক পরিমাণ চাপ দিয়া শিশুর শ্বাসরোধ ঘটাইতে পারে। অতএব ইহার সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন।




প্রশ্ন-  ফরসেপস এর ব্যর্থতার কারণ কি?

উত্তর: ফরসেপস এর ব্যর্থতার কারণ- নিম্নলিখিত কারণে ফরসেপস ব্যর্থ হইতে পারে।
১) প্রয়োগকারীর অদক্ষতা।
২) ত্রুটিপূর্ণ ক্লিনিক্যাল জাজমেন্ট।
৩) সন্তানের মাথার বিকৃত পজিশন।
৪) জরায়ু গ্রীবার অসম্পূর্ণ প্রসারণ।



ক্রনিওটমি
(Cranieotomy)

প্রশ্ন- ক্রনিওটমি কাহাকে বলে? ক্রনিওটমি করার কৌশল বা প্রক্রিয়া বর্ণনা কর।

উত্তর: ক্রনিওটমি-গর্ভস্থ সন্তান মৃত হইলে এবং যোনিপথে প্রসব করানো সম্ভব হইলে গর্ভস্থ সন্তানের মাথা ফুটা করিয়া ছোট করিয়া রোগিনীকে বেশী কষ্ট না দিয়া প্রসব করানোকে ক্রনিওটমি বলে।
ক্রনিওটমির প্রক্রিয়া বা কৌশল-দুইটি ধাপে ক্রনিওটমি সম্পন্ন হয়। যথা-
১) ফুটা করা (Perforation) এবং
২) নিষ্ক্রমণ (Extraction) ।
১) ফুটা করা (Perforation):
১) রোগিনীকে লিখোটমি পজিশনে শোয়াইয়া সহকারী পেটে চাপ দিয়া গর্ভস্থ সন্তানের মাথা নিচের দিকে ঠেলিয়া ধরিতে হইবে।
২) মৃত শিশুর মাথা ফুটা করার পূর্বে জরায়ু গ্রীবা সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত হইতে হইবে।
৩) গর্ভিনীর যোনিপথের মধ্যে অপারেটর তাহার বাম হাত এমনভাবে প্রবেশ করাইবেন যাহাতে গর্ভস্থ সন্তানের মাথা হাতের আঙ্গুলে স্পর্শ করে।
৪) ডানহাত দ্বারা পারফোরেটর ধরিয়া বাম হাতের আঙ্গুল দিয়া ইহার সূঁচালো মাথা অবলোকন করতঃ যোনি নালীতে প্রবেশ করাইয়া সন্তানের মাথার ফ্রন্টাল বোনের সঙ্গে লম্বভাবে লাগাইতে হইবে।




চিত্র: ক্রনিওটমি

৫) তীব্র অস্থি ফুটা করিয়া পারফোরেটরের শোল্ডার পর্যন্ত মাথার খুলিতে প্রবেশ করাইতে হইবে। ইহার পর হাতল দুইটি চাপিয়া একসঙ্গে লাগাইয়া অস্থি চূর্ণবিচূর্ণ করিতে হইবে।
৬) অতঃপর হাতল দুইটি আলাদা করিয়া বৃত্তের এক চতুর্থাংশ ঘুরাইয়া পুনরায় হাতল দুইটি একসঙ্গে লাগাইতে হইবে। এইভাবে পূর্বের ল্যাসারেশনের সঙ্গে লম্বাভাবে আর একটা ল্যাসারেশন হইবে। তারপর খুলির ভিতর পারফোরেটর ঘুরাইয়া মস্তিষ্ক গালাইয়া ফেলিতে হইবে।

২) নিষ্ক্রমণ (Extraction):
১) হাইড্রোকোফালস এর ক্ষেত্রে মাথার খুলি ফুটা করার পর সাথে সাথে প্রসব হইতে পারে।
২) জরায়ু গ্রীবা সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত হইলে খুলি ফুটা করার পর ফরসেপস দ্বারা মাথা প্রসব করানো যাইতে পারে।
৩) খুলি ফুটা করার পরও যদি মাথার আকার বড় থাকে তাহা হইলে ক্রনিওক্লাস্ট এর সাহায্যে মাথার খুলি গুঁড়া করিয়া বাহির করিতে হইবে।





প্রশ্ন- ক্রনিওটমির উদ্দেশ্য ও সংকেত লিখ।

উত্তর: ক্রনিওটমির উদ্দেশ্য-ক্রনিওটমির উদ্দেশ্য হইল গর্ভস্থ সন্তানের, মাথা ছোট করিয়া রোগিনীকে সামান্য কষ্ট দিয়া প্রসব করানো।
ক্রনিওটমির সংকেত-
১) সামান্য কেফালো পেলভিক অসামঞ্জস্য বিশিষ্ট অবস্ট্রাকটেড প্রসবের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তান মৃত হইলে এবং যোনিপথে প্রসব করানো যদি সম্ভবপর হয়। 'যেমন- আঁট হইয়া বসা মাথার স্থায়ী অক্সিপিটো পেস্টিরিয়র পজিশন, মাথা মেন্ট্রো পোস্টিরিয়র পজিশন, ব্রীচের পরে আসা মাথা এক্সডেনডেড থাকা।
২) হাইড্রোকেফালাস।





ডিক্যাপিটেশন
(Decapitation)


০৭.১৮। ডিক্যাপিটেশন কি? ইহার নির্দেশিকা বা সংকেত বর্ণনা কর।

উত্তর: ডিক্যাপিটেশন- গর্ভস্থ সন্তান মৃত হইলে মৃত সন্তানের গলা কাটিয়া প্রসব করানোকে ডিক্যাপিটেশন বলে।
ডিক্যাপিটেশনের নির্দেশিকা বা সংকেত:
১) আঁট হইয়া বসা স্কন্ধ উপস্থিতি।
২) সংযুক্ত যমজ সন্তান (Lacked Twin) যদি পৃথক করা সম্ভব না হয়।
৩) কদাচিৎ ডবল মনস্টার (Double monsters) এর ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য।




প্রশ্ন- ডিক্যাপিটেশন অপারেশন প্রণালী ও ইহাতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির নাম লিখ।

উত্তর: ডিক্যাপিটেশন অপারেশন প্রণালী- এই অপারেশনের প্রাথমিক প্রস্ত তি গ্রহণ করিয়া রোগিনীকে অজ্ঞান করিয়া লিখোটমি পজিশনে রাখিতে হইবে। তারপর ডান হাতের সাহায্যে হুকের হাতল ধরিয়া বাম হাত দ্বারা আবৃত করিয়া সন্ত ানের গলার সমান্তরালভাবে যোনিপথে প্রবেশ করাইতে হইবে। সন্তানের বুক এবং মায়ের পেটের এন্টিরিয়র ওয়ালের মাঝ দিয়া হক সন্তানের গলার একটু উপর পর্যন্ত ঢুকাইতে হইবে। তারপর হাতল ধরিয়া এক সমকোণ ঘুরাইতে হইবে, যাহাতে হুকের ধারালো দিকটা সন্তানের গলার উপর স্থাপিত হয়। বাম হাতের আঙ্গুল যোনিপথে গলার অপর পাশ দিয়া প্রবেশ করাইয়া হকের ভোঁতা মাথা ধরিয়া রাখিতে হইবে। ইহার পর হাতল ধরিয়া সামনে পিছনে টানিয়া সন্তানের গলা দিখণ্ডিত করিতে হইবে।
গলা দ্বিখণ্ডিত করার পর বাহিরে আসা হাত ধরিয়া টানিয়া সন্তানের ধড় প্রসব করাইতে হইবে। শেষে মাথা আপনা আপনি প্রসব হইতে পারে অথবা যদি আপনা আপনি প্রসব না হয় তাহা হইলে ফরসেপস দ্বারা মুখে আঙ্গুল ঢুকাইয়া মাথা প্রসব করাইতে হইবে।





চিত্র: ডিক্যাপিটেশন

ডিক্যাপিটেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি-
১) ডিক্যাপিটেশন হুক (Decapitation Hook).
২) বন্ড হিডল থিম্বল এবং করাত (Blond Heidle thimble and Saw).
৩) দীর্ঘ ভোঁতা প্রান্তযুক্ত শক্ত কাঁচি (Strong pair of blunt ended long scissors)।









সিজারিয়ান সেকশন
(Ceassarean Section)

প্রশ্ন-০৭.২০। সিজারিয়ান সেকশন বলিতে কি বুঝ?

উত্তর: সিজারিয়ান সেকশন- গর্ভবতীকে অজ্ঞান করতঃ তলপেট ও জরায়ু কাটিয়া যে প্রসব করানো হয় তাহাকে সিজারিয়ান সেকশন বলে। গর্ভের ২৮ সপ্তাহ পরে এই অস্ত্রোপচর করা হয়।





প্রশ্ন- সিজারিয়ান সেকশনের সংকেত লিখ।
বা, সিজারিয়ান সেকশন কোন কোন সময় করিতে হয়?
বা, সিজারিয়ান সেকশন করার কারণ কি কি?

উত্তর: সিজারিয়ান সেকশনের সংকেত বা কারণ- যোনিপথে প্রসব করানো যদি প্রসূতি ও শিশুর পক্ষে বিপজ্জনক হয় তবে এই অপারেশনের সাহায্যে লওয়া হয়।
১) ঠিকমত ব্যথা না উঠিবার দরুন (ইউটেরাসের জড়তা বা ইউটেরাইন ইনারশিয়া) সার্ভিক্সের মুখ (অস) প্রয়োজন মত না খোলায় যোনিপথে প্রসব মা ও শিশু উভয়ের পক্ষেই কষ্টদায়ক হয়।
২) প্রসূতির যদি সার্ভাইক্যাল ফাইফ্রয়েড বা সাভ্যাইক্যাল ক্যানসার থাকে, ইহা শিশুর বহির্গমনে ব্যথা সৃষ্টি করে, সে ক্ষেত্রে ইহার প্রয়োজন হয়।
৩) বস্তিদেশের হাড়ের কাঠামোর আকারের তুলনায় যদি শিশু বড় হয়, বা বস্তি দেশ সংকুচিত থাকে এবং যোনি পথে প্রসব করানো কষ্টদায়ক হয় তখন ইহা দরকার।
৪) অধিক বয়সে প্রথম সন্তান প্রসবের সময়।
৫) ফেস প্রেজেন্টেশন, শোল্ডার প্রেজেন্টেশন, ব্রাও প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে।
৬) সংকুচিত বস্তিদেশ আছে এমন মায়ের সন্তানের যদি ব্রীচ প্রেজেনেটশন হয় তাহা হইলে ইহার প্রয়োজন হয়।
৭) প্রসূতির যদি পাসেন্টা প্রিভিয়া থাকে অর্থাৎ গর্ভফুল যদি জরায়ু মুখে থাকে, তবে প্রসবের সময়ে প্রচুর রক্তপাত হয় ও প্রসূতির জীবন সংশয় হইতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ইহা প্রয়োগ করা উচিত।




প্রশ্ন- সিজারিয়ানের পূর্ব প্রস্তুতি বর্ণনা কর।

উত্তর: সিজারিয়ানের পূর্ব প্রস্তুতি:
১) পায়খানার জন্য এনেমা দেওয়া।
২) ভালভা সেল-যোনিদ্বারের চুল কামাইয়া সাবান জল ও জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়া দুই গজে জড়ানো জীবাণুমক্ত ডাক্তারী তুলার আবরণের সাহায্যে যোনিপথকে জীবাণুর আক্রমণ হইতে রক্ষা করা হয়।
৩) পেট ও উরুর চুল কামাইয়া সাবান জল ও জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়া ধুইয়া স্টেরাইল প্যাডের আবরণ দিয়া জীবাণুর আক্রমণ বন্ধ করিতে হইবে।
৪) অপারেশন থিয়েটারে লইয়া যাইবার পূর্বে ১/১০০ গ্রেণ এট্রোপিন ইনজেকশন দেওয়া হয়।




প্রশ্ন- সিজারিয়ান সেকসনের পদ্ধতি বা প্রণালী লিখ।
বা, সিজারিয়ান সেকসন কত প্রকার? বিবরণ দাও।

উত্তর: সিজারিয়ান সেকশনের পদ্ধতি বা প্রণালী- সিজারিয়ান সেকশন ২ প্রকার। যথা-
১) ক্লাসিক্যাল- ইহার প্রচলন বর্তমানে প্রায় নাই। জরায়ুর উচ্চতম অংশ ফান্ডাস, তাহার ঠিক নিচ হইতে আরম্ভ করিয়া সোজাসুজি ৫ ইঞ্চি পরিমাণ স্থান কাটা হয়।
২) লোয়ার সেগমেন্ট- গর্ভ অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে জরায়ুর অন্তর্মুখ (Internal OS) এর উপরের ৩-৪ ইঞ্চি স্থান আকারে বাড়িতে থাকে। এই অংশটিকে লোয়ার ইউটেরাইন সেগমেন্ট বলে। লোয়ার সেগমেন্ট অপারেশনে এই লোয়ার ইউটেরাইন সেগমেন্টকে আড়াআড়িভাবে কাটিতে হয়।

লোয়ার সেগমেন্ট অপারেশনের সুবিধা:
১) রক্তপাত কম হয়।
২) জরায়ু জীবাণুদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৩) ইউটেরাসে যে সেলাই করিতে হয় পরবর্তী গর্ভে তাহা ছিঁড়িয়া যাইবার সম্ভাবনা কম থাকে, কেননা জরায়ুর নিম্নাংশে অপারেশনের সেলাই ভাল জোড়া লাগে।




প্রশ্ন- সিজারিয়ান সেকসনের উপযুক্ত সময় কোনটি?

উত্তর : সিজারিয়ান সেকসনের উপযুক্ত সময়- সিজারিয়ান সেকশনের উপযুক্ত সময় হইল ব্যথা উঠিবার ঠিক আগে বা ব্যথার প্রথম দিকে অর্থাৎ শিশু- আচ্ছাদক পর্দা ছিড়িবার পূর্বে। যদি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ব্যথা উঠিবার আগেই সিজারিয়ান করা হইবে বলিয়া ঠিক করা হয় তাহা হইলে পুরা মাসে অথবা তাহার কাছাকাছি ইহা করা হইয়া থাকে।




প্রশ্ন- সিজারিয়ান অপারেশন করার পদ্ধতি বর্ণনা কর।

উত্তর: সিজারিয়ান অপারেশনের পদ্ধতি- রোগিনীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পূর্বে ক্যাথিটার দিয়া মূত্রাশয় খালি করিতে হয়। অপারেশনের ৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগিনীকে কোন শক্ত খাবার বা দুধ প্রভৃতি খাইতে দিতে নাই। অপারেশন টেবিলে রোগিনীকে চিৎ হইয়া শুইতে হয়। গুকোজ ড্রিপ ধমনীতে চালানো হয়। ধমনীতে ইনজেকশান দিয়া ঘুম পাড়ানো হয়। তার পূর্বে এনস্থেটিস মেশিন হইতে মাসক দিয়া শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য মাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। ইনজেকশন দ্বারা রোগিনী অজ্ঞান হইলে গলার মধ্যে দিয়া একটি নল এনস্থেটিস বায়ুনালীতে পাস করানো হয় ও এই নলের সাহায্যে অক্সিজেন ও নাইট্রাস গ্যাস দ্বারা অজ্ঞান করা হয়। সার্জন স্পিরিট দ্বারা তলপেট পরিষ্কার করিয়া স্টেরাইল কাপড় চাপা দেন। শুধু খালি থাকে অপারেশনের জায়গা। অনেকে নাভীর নিচে ও ৪ ইঞ্চি করিয়া মাঝ লাইনে চামড়া কাটেন। ইহাতে শিশু প্রসব করানো সুবিধা হয়। অনেকে আড়ভাবে ঠিক ভালভার উপরের দিকে চামড়া কাটেন। দ্বিতীয়বার সিজারিয়ানের সময় এইরূপ কাটার পর শিশুকে ডেলিভারী করাইতে অসুবিধা। পেটের চারটি লেয়ার পরপর কাটিয়া পেটের মধ্যে ঢোকার পর একটা রিট্রাকটর (টানার যন্ত্র) দ্বারা জরায়ুর নিচের দিকে খোলা হয়। ইহার পর জরায়ুর নিচের দিকে ঠিক প্রস্রাবের থলির উপর আড়দিকে ৪ ইঞ্চি জরায়ু কাটা হয়। হাত দ্বারা শিশুর মাথা বা পা ধরিয়া আস্তে আস্তে শিশুকে ডেলিভারী করানো হয়। শিশুর মাথা ডেলিভারী করিয়াই মুখ ও গলা সাকসন পাইপ দ্বারা পরিষ্কার করা হয়। তখন শিশু কাঁদিতে শুরু করে। শিশুর বাকী শরীর জরায়ু বাহির করিয়া তাহার নাড়ী কাটিয়া নার্সের ট্রেতে দেওয়া হয়। ইহার জরায়ু হইতে ফুল ডেলিভারী করিয়া জরায়ুর কাটা দেওয়ালে ভাল করিয়া সেলাই করা হয়। জরায়ু সংকোচনের জন্য ধমনীতে আরগোমেট্রিন ইনজেকশন করা হয়। পেটের কাটা লেয়ার সেলাই এর পর চামড়ার নাইলন সেলাই করিয়া দেওয়া হয়। এই অপারেশন করিতে ৫০-৬০ মিনিট সময় লাগে। আজকাল অজ্ঞান করিয়া অপারেশন করার পর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রোগিনীর জ্ঞান ফিরে ও রোগিনী জিব দেখায়। তবে পেটে ব্যথা পাওয়ার জন্য ঘুমের ঔষধ দ্বারা ঘুম পাড়াইয়া রাখা হয়। ঘুমের ক্রিয়া কাটিতে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। অপারেশনের পর প্রায় বার ঘণ্টা গুকোজ ড্রিপ চলে।




প্রশ্ন- সিজারিয়ান রোগিনীর সেবা বা নার্সিং পদ্ধতি লিখ।

উত্তর: সিজারিয়ান রোগীর সেবা বা নার্সিং পদ্ধতি:
১) হাতের নাড়ী, শ্বাসপ্রশ্বাস ও দেহের তাপ ঠিক আছে কিনা তাহা লক্ষ্য রাখিতে হইবে। সেজন্য রোগিনীকে একলা রাখা যাইবে না।
২) অপারেশনের সময় আরগোমেট্রিন ইনজেকশান (০.৫ মি.গ্রা.) পেশীর মধ্যে দেওয়া হয়। ডাক্তারের নির্দেশ মত এই ইনজেকশন ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর অন্তর দেওয়া যাইতে পারে।
৩) ডাক্তারের নির্দেশ মত পেনিসিলিন ইনজেকশন পেশীতে দিতে হয়।
৪) যদি অতিরিক্ত রক্তস্রাবের জন্য সিজারিয়ান সেকসন করা হয়, তবে রোগিনীকে বাঁচাইবার জন্য শিরার মধ্যে রক্ত দেওয়া যাইতে পারে।
৫) রোগিনী প্রস্রাব ত্যাগ করিতে অসমথ্য হইলে ক্যাথিটার ব্যবহার করিতে হইবে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর ২৪ ঘণ্টা পার হইয়া গেলে ক্যাথিটার না দিয়া রোগিনীকে বসাইয়া স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাব ত্যাগ করানোর চেষ্টা করা উচিত।
৬) জ্ঞান ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা কমানোর জন্য ০.২৫ গ্রেন মরফিন ইনজেকশান দিতে হইবে।
৭) দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাত্রিতে ঘুমের জন্য নিম্নলিখিত পেথিডিন (১০০ মি. গ্রা.) দেওয়া চলে। ইহাতে ব্যথারও উপশম হয়। বিনা ঔষধে স্বাভাবিকভাবে ঘুম হইলে ব্যথা থাকিলে ব্যথার ঔষধ দেওয়া চলে।
৮) জ্ঞান ফেরার পর ঔষধের প্রভাব কাটিয়া গেলে হালকা খাবারের ব্যবস্থা করিতে হয়।
৯) তৃতীয় দিনে এনেমার সাহায্যে (গ্লিসারিন ও গরম পানি মলদ্বারে দিয়া) পায়খানা করাইতে হয়।
১০) ষষ্ঠ দিনে সেলাই কাটিতে হয়। কোন বিশেষ উপসর্গ না থাকিলে ১৪ দিনের দিন রোগিনীকে ছাড়িয়া দেওয়া যায়।



প্রশ্ন-  সিজারিয়ান রোগিনীর উপসর্গসমূহ কি কি?

উত্তর: সিজারিয়ান রোগিনীর উপসর্গসমূহ:
১) অপারেশনের সময় জরায়ুর যে জায়গাটি কাটা হইয়াছিল তাহা হইতে রক্তক্ষরণ হইলে তাহা যোনিপথে রক্তপাত হিসাবে দেখা দিতে পারে। যোনিপথে রাখা জীবাণুমুক্ত তুলার প্যাডে রক্ত দেখা দিলে ধাত্রী ডাক্তারকে খবর দিবেন। ইহার আনুষঙ্গিক উপসর্গ হইল পালস উঠা বা প্রেসার কমা।
২) সেলাইয়ের জায়গা জীবাণুদুষ্ট হইলে জ্বর ও ব্যথা হয়, হাতের নাড়ীর গতি বাড়ে। জীবাণুর আক্রমণ আরও বেশী বিস্তার লাভ করিলে বনি হয়। পেট ফাঁপে, পেটে ব্যথা হয়, জ্বর হয়। এই অসুখকে পেরিটোনাইটিস বলে। এইসব লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারও ডাকা উচিত।
৩) অস্ত্রোপচারের সময় কোনও কঠিন বা প্রায় কঠিন (Solid or semi solid) বস্তু যদি ফুসফুসে আশ্রয় লাভ করে এবং রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে তবে বুকে হঠাৎ তীব্র ব্যথা হইতে পারে। ভীব্র উত্তেজনা, ভীতিভাব, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি দেখা দিবে। এই উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারকে খবর দেওয়া উচিত।




প্রশ্ন- সিজারিয়ান সেকসনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহ কি কি? চিত্র এঁকে দেখাও।
বা, ধাত্রীবিদ্যায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহ কি কি?

উত্তর: সিজারিয়ান সেকসনে বা ধাত্রীবিদ্যায় কয়েকটি নিত্য ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি:
১) সিম্স স্পেকুলার- (ভিতরে দেখিবার জন্য)। ইহা যোনিপথ খুলিবার জন্য ব্যবহার করা হয়। ইহা দ্বারা যোনিপথের নিম্নপ্রান্ত প্রসারিত করা হয়।
২) ফারগুসন্স স্পেকুলাম।
৩) কুসকোর স্পেকুলাম (বাই ভালব)- ইহা দ্বারা যোনি পথের উচ্চ ও নিম্নপ্রান্তে র উপর চাপ দিয়া যোনিপথকে প্রসারিত করা হয়।
৪) ভালসেলাম ফরসেপস-জরায়ু গ্রীবার মুখের সামনের দিকের ওষ্ঠ ধরিবার যন্ত্র।



চিত্র: ১-সিক্স স্পেকুলাম, ২-ফারগুসন্স স্পেকুলাম, ৩-কুসকো'র স্পেকুলাম, ৪-ভ্যাজাইনাল ডাইলেটর, ৫-ভালসেলাম পরসেপস।

৫) ইউটেরাইন সাউদ-জরায়ু গহ্বরের দৈর্ঘ্য ও অবস্থিতি দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
৬) ওভাম ফরসেপস- গর্ভপাতের সময় ডিম্বাণুকে ধরিয়া জরায়ু হইতে বাহির করিয়া দিবার জন্য।
৭) হেগার্স ডায়লেটারস-জরায়ু গ্রীবার মুখ প্রসারিত করার জন্য।
৮) কিউরেট-জরায়ু অন্তর্বিলী চাঁচিবার জন্য।
৯) স্পঞ্জ ফরসেপস- স্পঞ্জ ধরিবার জন্য।
১০) ভ্যাজাইনাল ডাইলেটর।
১১) স্টেরাইল পিপেট।

চিত্র: ২-হেগার্স ডাইলেটরস, ৪-ওভাম ফরসেপস, ৫-কিউরেট, ৬-ইউটেরাইন সাউন্ড, ৭-স্পঞ্জ ফরসেপস।
১২) ভুস নজল।
১৩) ভ্যাজাইনাল ইন্সাফ্রেটর।
১৪) অডার্ডস স্পেকুলাম।
১৫) ফ্লাসিং কিউরেট।




চিত্র: ১ প্রেফেরাস প্রোব, ২- ফ্লাসিং কিউরেট, ৩-স্টেরাইল পিপেট, ৪-ডুস নজল, ৫-ভ্যাজাইন্যাল ইলাফ্রেটর, ৫-অভার্ডস স্পেকুলাম এ



সমাপ্ত




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ