চির ও অচির রোগ Chronic and Acute Diseases, ক্রনিক ডিজিজ, দ্বিতীয় অধ্যায় - চতুর্থ বর্ষ

দ্বিতীয় অধ্যায়
চির ও অচির রোগ
Chronic and Acute Diseases





প্রশ্ন-  চিররোগ কাহাকে বলে? কয়েকটি চিররোগের নাম উল্লেখ কর।

উত্তর: যে সকল রোগ ক্রণিক মায়াজম হইতে উদ্ভূত, নিঃশব্দ' পদসঞ্চারে তস্করের ন্যায় মৃদুভাবে এবং প্রায় অজ্ঞাতসারে নিজ প্রকৃতি অনুসারে সুস্থসবল দেহযন্ত্রকে ক্রমশঃ মন্থর গতিতে আক্রমণ করিয়া বিকৃত করে, জীবনীশক্তি উক্ত রোগ শক্তিকে বাধা প্রদান করিয়া ব্যর্থ হয়, প্রকৃত উপযুক্ত ঔষধ ব্যতীত আরোগ্য হওয়ার কোন প্রবণতা থাকে না, যতই দিন যাইতে থাকে ততই নানা নামে ভিন্নরূপে প্রকাশিত হইয়া থাকে এবং নিরাশভাবে মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত রোগী রোগের প্রসারতা সহ্য করিতে থাকে, এই ভয়াবহ ব্যাধির নামই চিররোগ বা স্থায়ী রোগ।
উদাহরণ-ক্যান্সার, সিফিলিস, হাঁপানী, টিউমার, পাইল্স, মৃগী, শোথ, ন্যাবা প্রভৃতির নাম উল্লেখ করা যাইতে পারে।



প্রশ্ন-  অচির রোগ কাহাকে বলে? অচির রোগ কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর: যে সকল রোগ হঠাৎ আবির্ভূত হইয়া দ্রুত বৃদ্ধি পাইতে থাকে, যাহাদের ভোগকাল স্বল্পক্ষণ বা স্বল্পদিন স্থায়ী, ঐ সময়ের মধ্যে হয় রোগী আরোগ্য লাভ করে অথবা নিজে নিজেই ধ্বংস হইয়া যায়, নতুবা ঐ সময়ের মধ্যে পরিণতি, ফল হয় মৃত্যু এই সকল রোগকে অচিররোগ বা তরুণ রোগ বলে।
অচিররোগের প্রকারভেদ নিম্নরূপ-
ক) ব্যক্তিগত অচিররোগ,
খ) বিক্ষিপ্ত অচিররোগ,
গ) মহামারী রোগ।



প্রশ্ন- ব্যক্তিগত অচির রোগ কাহাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে সকল রোগ রোগীর ব্যক্তিগত কর্মফলের জন্য আক্রমণ করে সে সকল রোগকে ব্যক্তিগত অচির রোগ বলে। যেমন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগানোর ফলে জ্বর, সর্দি হওয়া।



প্রশ্ন- বিক্ষিপ্ত অচিররোগ কাহাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে সকল রোগ একই সময়ে বিক্ষিপ্তভাবে কতিপয় ব্যক্তিকে আক্রমণ করে সেসকল রোগকে বিক্ষিপ্ত অচির রোগ বলে। যেমন- হঠাৎ করিয়া বিক্ষিপ্তভাবে ২/১ জন পেট ফুলিয়া মারা গেল।



প্রশ্ন- মহামারী রোগ কাহাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে সকল অচিররোগ কোন বাহ্যিক উত্তেজক কারণে হঠাৎ যুদ্ধ, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় কোন বিশেষ জনপদে ব্যাপকভাবে বহুলোককে আক্রমণ করে সে সকল রোগকে মহামারী রোগ বলে। যেমন-হাম, বসন্ত, প্লেগ প্রভৃতি।



প্রশ্ন- অচির বা তরুণ রোগের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?

উত্তর: অচির রোগের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হইল-
ক) অচির রোগ অচির মায়াজম হইতে সৃষ্টি হয়।
খ) ইহার চলার গতি অতি দ্রুত। তাই অতি সহজেই ইহাকে সনাক্ত করা যায়।
গ) ইহা কখনও কখনও রোগীকে বিনাশ করে।
ঘ) ইহারা কখনও বা আত্মনশ্বর, নিজে নিজেই বিনাশ প্রাপ্ত হয়।
ঙ) ইহার ভোগকাল সুনির্দিষ্ট এবং স্বল্পকাল বা স্বল্পদিন স্থায়ী।
চ) ইহার নিরাময় অপেক্ষাকৃত সহজসাধ্য।
ছ) ইহা পথ্য নিয়ন্ত্রণ করিলে, রোগের কারণ নিবারণ করিলে, রোগীকে স্বাস্থ্যকর স্থানে, স্থানান্তরিত করিলে এবং উপযুক্ত পরিচর্যার ব্যবস্থা করিলে অনেক সময় বিনা চিকিৎসায়ও আরোগ্য হয়।
জ) ইহা বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন, গ্রহনক্ষত্রাদির অবস্থানের পরিবর্তন, পানি বাতাসের দূষিত প্রভাব, অতি ভোজন, অতি ঠাণ্ডা, অতি গরম, উপবাস ইত্যাদির কারণে সৃষ্টি হয়।
ঝ) ইহাতে সাধারণতঃ বংশানুক্রমিক কোন ধাতুপ্রবণতার প্রভাব থাকে না।
ঞ) ইহা কখনও কখনও মহামারী আকারে দেখা দেয়।



প্রশ্ন- অচির বা তরুণ রোগের কারণসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তর: অচির বা তরুণ রোগের কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হইল-
ক) ব্যক্তিগত শ্রেণীর অচির বা তরুণ রোগ সাধারণতঃ অতিভোজন, অল্প ভোজন, রোজা বা উপবাস, যথোপযুক্ত পরিমাণে খাদ্য গ্রহনের অভাব, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা, অনিদ্রা, মানসিক উদ্বেগ, শোক, দুঃখ ইত্যাদি কারণে সৃষ্টি হইয়া থাকে। যেমন- অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগানোর ফলে সর্দি, কাশি, জ্বর প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হওয়া।
খ) বিক্ষিপ্ত শ্রেণীর অচির রোগসমূহ সাধারণত বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ও গ্রহনক্ষত্রাদির অবস্থানের পরিবর্তনের কারণে সৃষ্টি হইয়া থাকে। যেমন-হঠাৎ করিয়া বিক্ষিপ্তভাবে দুই একজন লোক পেট ফুলিয়া মারা গেল।
গ) মহামারী শ্রেণীর অচিররোগ বা তরুণ রোগ সাধারণতঃ দূষিত বায়ুর প্রভাব, স্থানীয় মাটি ও পানি দূষণ, যুদ্ধ, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদির কারণে সৃষ্টি হইয়া থাকে। যেমন-হাম, বসন্ত, প্লেগ প্রভৃতি।



প্রশ্ন- অচির বা তরুণ রোগ যত তীব্রতর হয়, ততই নিশ্চিতরূপে ও অতিসহজে ঔষধ নির্বাচন করা যায় কেন?

উত্তর: প্রাকৃতিক নিয়মেই রোগ যত সাংঘাতিক হয়, তাহার লক্ষণসমূহও ততই সুষ্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয় এবং এক্ষেত্রে আদর্শ চিকিৎসকের যত বেশী ঔষধসমূহের লক্ষণ জানা থাকে ততই উক্ত রোগের জন্য ঔষধ নির্বাচন করা সহজসাধ্য হইয়া যায়। অধিক সংখ্যক ঔষধসমূহের সুস্পষ্ট লক্ষণনিচয় জানা থাকিলে কোন প্রাকৃতিক রোগ চিকিৎসার জন্য উহার সদৃশ ঔষধ সন্ধান করিয়া বাহির করিতে কোনরূপ বেগ পাইতে হয় না।
অতএব সংগত কারণেই অচির রোগ যত তীব্রতর হয় ততই নিশ্চিতরূপে ও অতিসহজে যথোপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করা যায়।
 


প্রশ্ন- অচির বা তরুণ রোগে ঔষধজ রোগবৃদ্ধি অল্প বা মৃদুতর করিবার পন্থা কি?

উত্তর: মহাত্মা ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিমানের মতে অচির বা তরুণ রোগে ঔষধজ রোগ বৃদ্ধি অল্প বা মৃদুতর করার পন্থা হইল-প্রথমতঃ রোগের জন্য রোগীকে সম্যক সদৃশপূর্ণ ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে এবং দ্বিতীয়তঃ তাহা অবশ্যই সূক্ষ্মতম মাত্রায় প্রয়োগ করিতে হইবে। এ বিষয়ে অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের ১৫৯ নং সূত্রে তিনি উল্লেখ করিয়াছেন- 'The smaller the dose of the Homoeopathic medicine, the less and the shorter in the aggravation in first hours.' অর্থাৎ হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাত্রা যত কম হয়, প্রথম কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঔষধ প্রয়োগজনিত রোগবৃদ্ধিও তত কম হয় এবং অল্পকাল স্থায়ী হয়।
অতএব যতটা সম্ভব সদৃশপূর্ণ ঔষধ ক্ষুদ্র মাত্রায় প্রয়োগ করাই অচির বা তরুণ রোগে ঔষধজ রোগ বৃদ্ধি অল্প বা মৃদুতর করিবার পন্থা।



প্রশ্ন- হোমিওপ্যাথিক বিধানমতে অচির ও চিররোগ আরোগ্যের জন্য কিরূপ সময়ের প্রয়োজন?

উত্তর: হোমিওপ্যাথি বিধান মতে সুনির্বাচিত ঔষধ যথার্থভাবে রোগীকে সেবন করিতে দিলে রোগটি অল্প দিনের মধ্যে আবির্ভূত হইলে অল্প কয়েক ঘন্টার মধ্যে, আবার বেশী দিনের হইলে কয়েক দিনের মধ্যে রোগীর অজান্তেই রোগযন্ত্রণাসহ রোগটি বিদূরীত হইয়া যায়। বলা যাইতে পারে রোগী প্রযুক্ত ঔষধজ কৃত্রিম রোগটি একপ্রকার অনুভবই করিতে পারে না এবং ঔষধের ক্রিয়াশেষে যাহা প্রত্যাবর্তিত হয় তাহা একমাত্র পূর্ণস্বাস্থ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। যে সকল রোগ দীর্ঘকাল স্থায়ী ও জটিল প্রকৃতির এবং ক্রনিক মায়াজম হইতে উদ্ভূত, সে সকল রোগকে বিদূরীত করিতে অপেক্ষাকৃত বেশী সময়ের প্রয়োজন হয়। বিশেষতঃ যে সকল রোগ এলোপ্যাথিক কুচিকিৎসায় আরোগ্য হয় নাই অথচ উক্ত রোগের সহিত ঔষধজনিত কৃত্রিম রোগ যুক্ত হইয়াছে সে সকল রোগ বিদূরিত করিতে আরও বেশী সময়ের প্রয়োজন হয়। এলোপ্যাথিক কুচিকিৎসার কারণে যখন রোগী অত্যন্ত দুর্বল ও রক্তশূন্য হইয়া পড়ে তখন এইরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয় যে কেহই আর শত চেষ্টা করিয়াও তাহার রোগ দূরীভূত করিতে পারে না।
 


প্রশ্ন- অচিররোগের লক্ষণ সংগ্রহ প্রণালী বর্ণনা কর।
বা, অচিররোগের অবস্থা সম্পর্কে জানিবার জন্য কি কি বিষয় অনুসন্ধান করিতে হইবে?

উত্তর: অচিররোগের ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ অত্যন্ত সুস্পষ্টরূপে বিদ্যমান থাকে বলিয়া উহা ক্ষণকাল স্থায়ী হয় এবং উহার লক্ষণসমূহের প্রকাশ ও বিকাশও অতি দ্রুত ঘটে। রোগশক্তির প্রভাবে রোগীর জীবনীশক্তি প্রচণ্ডরূপে আক্রান্ত হইবার ফলে বাহিরের সাহায্য জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন হয়। কাজেই জীবনীশক্তি তখন সুস্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ করিয়া একজন আদর্শ চিকিৎসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই সময়ে রোগী স্বয়ং কষ্টকর উপসর্গাদির প্রকৃতি অনুধাবন করিয়া চিকিৎসকের নিকট বর্ণনা করিতে পারে। এমনকি তাঁহার সেবা শুশ্রূষাকারী, বন্ধু বান্ধবগণও বুঝিতে পারেন যে কোন উপসর্গাদি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও দৃষ্টি আকর্ষণকারী। চিকিৎসকও সেই সকল লক্ষণসমূহের ব্যঞ্জনা অতিসহজে ধরিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে রোগ অল্প দিনের বলিয়া এবং কষ্টকর, অনুভূতিগুলি তীব্র বলিয়া রোগী উহা স্বতঃপ্রবৃত্ত ভাবেই সকল কষ্টকর লক্ষণসমূহের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করিতে পারেন। ফলে রোগের আসল পরিচয় পাইতে চিকিৎসককে বেশী প্রশ্ন করিতে হয় না। তবে স্মরণ রাখিতে হইবে যে, অচির রোগের বিকাশ যেমন অতি দ্রুত, তেমনি উহা দ্রুত পরিণতির দিকেও অগ্রসর হয়। সেজন্য এই রোগের রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসককে অতি দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত লইয়া ঔষধ ব্যবস্থার দ্বারা রোগারোগ্য সাধন করিতে হইবে।



প্রশ্ন- অচির রোগের পথ্যাপথ্য আলোচনা কর।
বা, অচির রোগের পথ্যাপথ্য সম্বন্ধে কোনরূপ শিথিলতা প্রত্যাশা করা যায় কি?

উত্তর: আমরা জানি, অচিররোগ অতি দ্রুত গতিতে রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। যে কারণে অচিররোগে আক্রান্ত রোগীকে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর, সহজপাচ্য খাদ্য ও পানীয় প্রদান করা আবশ্যক। রোগী যাহা ইচ্ছা করিয়া খাইতে ও পান করিতে চায় তাহা পরিমিত মাত্রায় প্রদান করিতে হইবে। ইহাতে যদি রোগ আরোগ্যের পথে সাময়িক কিছুটা বাধা আসে তবুও রোগীর আত্মতৃপ্তি এবং ঔষধের আরোগ্য সাধিকা শক্তি দ্বারা তাহা অতিক্রান্ত হয়। কারণ রোগীর কাংখিত খাদ্য বা পানীয় যদি ভেষজগুনবিহীন হয় তাহা হইলে উক্ত খাদ্য বা পানীয় গ্রহণে আত্মতৃপ্তির পরে রোগীর জীবনীশক্তি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। তাই অচির রোগে রোগীর মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে পথ্যাপথ্য সম্বন্ধে কিছুটা হইলেও শিথিলতা বাঞ্ছনীয়।



প্রশ্ন- অচিররোগের পথ্যাপথ্য সম্বন্ধে বিবেচ্য বিষয় কি?
বা, অচিররোগে রোগীর কোন প্রকার খাদ্যের বিষয়ে আকাঙ্খা থাকিলে তাহা পরিতৃপ্তির বিষয়ে মহাত্মা ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিমান কি উপদেশ প্রদান করিয়াছেন?

উত্তর : অচির রোগের ক্ষেত্রে রোগীর কোন প্রকার, মানসিক বিকৃতি না থাকিলে আভ্যন্তরীন সূক্ষ্ম নির্ভুল জীবনরক্ষাকারী শক্তিই তাহার জ্ঞান ও অনুভবের দ্বারা উক্ত রোগে কি প্রকারের পথ্যাপথ্য বা খাদ্য প্রয়োজন তাহা জানাইয়া দেয়। এক্ষেত্রে একজন আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রোগীর আত্মীয় স্বজনদিগকে শুধুমাত্র বলিয়া দিবেন যে, রোগী যে সকল পথ্যাপথ্য বা খাদ্যের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করিবে শুধুমাত্র সে সকল পথ্যাপথ্য বা খাদ্য যেন তাহাকে প্রদান করা হয় এবং জোর করিয়া এমন কোন পথ্যাপথ্য বা খাদ্য তাহাকে প্রদান করা না হয় যাহাতে তাহার রোগের অনিষ্ট হইতে পারে। যেমন কোন রোগীর উষ্ণতায় রোগ যন্ত্রণা বৃদ্ধি হয় অথচ তাহাকে জোর করিয়া উষ্ণ খাদ্য বা পানীয় পানাহার করানো হইলে উহাতেই রোগ যন্ত্রণা আরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইল।
মহাত্মা ডাঃ হ্যানিমান আরও বলিয়াছেন, অচির রোগে রোগী যে খাদ্য পানীয় পানাহার করিবার জন্য ঐকান্তিক অভিলাষ জ্ঞাপন করে সেই খাদ্য পানীয় প্রধানতঃ রোগীর পক্ষে আরামদায়ক হয় এবং উক্ত খাদ্য পানীয় যদি ঔষধি গুণসম্পন্ন না হয় তাহা হইলে উহা রোগীর আভ্যন্তরীন অভাব পূরণ করিবে। তবে সব সময় মনে রাখিতে হইবে রোগীর ঐকান্তিক অভিলাষ পূরণ করিতে গেলে যদি উক্ত খাদ্য পানীয় দ্বারা নির্বাচিত ঔষধের ক্রিয়ার কোনরূপ ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা থাকে তবে উহা অল্প পরিমাণে প্রদান করিলে বিশেষ কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। কারণ কাংখিত খাদ্য পানীয় পানাহার করিলে রোগী মানসিক পরিতৃপ্তি লাভ করে। ফলে প্রয়োগকৃত ঔষধ তাহার দেহে আরও সুন্দরভাবে রোগারোগ্য ক্রিয়া সম্পন্ন করিতে সক্ষম হয়।
 


প্রশ্ন- ইনডিস্পোজিশন (Indisposition) কাহাকে বলে?
বা, রোগী যদি অল্প সময় আগে হইতে অতি সামান্য দুই একটি রোগলক্ষণ অনুভব করে তখন চিকিৎসকের কি করা উচিৎ? ডাঃ হ্যানিমান ইহার কি নাম দিয়াছেন?

উত্তর: রোগী যদি অল্প সময় আগে হইতে অতি সামান্য দুই একটি রোগলক্ষণ অনুভব করে তাহা হইলে এ ক্ষেত্রে কোন চিকিৎসক রোগটি সুস্পষ্টভাবে বা পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হইয়াছে এমন মনে করিয়া যেন কোনও ঔষধ ব্যবস্থা না করেন। কারণ এ ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে, এই ধরণের অসুস্থতা গোছল, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করিলে কোন ঔষধ ব্যতীতই আরাম হইয়া যায়। মহাত্মা ডাঃ হ্যানিমান এই রোগের নাম দিয়াছেন (Indisposition) ইনডিসপোডিশন।



প্রশ্ন- প্রকৃত চিররোগ বা স্থায়ীরোগ বা জীর্ণরোগ কাহাকে বলে? উহার প্রকৃতি কি? কয়েকটি প্রকৃত চিররোগ বা জীর্ণ রোগের নাম উল্লেখ কর।

উত্তর: স্থায়ী উপবিষ হইতে অর্থাৎ সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস হইতে যে সকল রোগের সৃষ্টি হয় তাহাকে প্রকৃত চিররোগ বা জীর্ণ রোগ বলে। ইহার প্রকৃতি হইল-রোগীর অজ্ঞাতসারে ক্রমশঃ ধীরে ধীরে বর্ধিত হইয়া চিরজীবনই রোগীকে যন্ত্রণা দেয় এবং পরিশেষে রোগীর প্রাণনাশ করিয়া থাকে। জীবনীশক্তি এই রোগশক্তিকে বাধা প্রদান করিয়া ব্যর্থ হয় এবং আমৃত্যুকাল জীবনীশক্তি নিরাশভাবে রোগের প্রসারতা সহ্য করিয়া থাকে। মূলতঃ সোরা আদি রোগবীজ, প্রমেহবীজ ও উপদংশবীজ এই তিন প্রকার রোগবীজ প্রকৃত চিররোগের মূল কারণ। উদাহরণ স্বরূপ- ক্যান্সার, সিফিলিস, এজমা, টিউমার, পাইলস, লিপ্রসী, এপিলেন্সী, ড্রপসি, জন্ডিস, আঁচিল ইত্যাদির নাম উল্লেখ করা যাইতে পারে।



প্রশ্ন- প্রকৃত চিররোগ ও মিথ্যা বা অলীক চিররোগের মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর: প্রকৃত চিররোগ ও অলীক বা মিথ্যা চিররোগের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য বিদ্যমান-



প্রশ্ন- চিররোগের শ্রেণীবিভাগ কর।

উত্তর: চিররোগ প্রধানত তিন প্রকার। যথা-
ক) অলীক বা জীর্ণ চিররোগ।
খ) কৃত্রিম চিররোগ ও
গ) প্রকৃত চিররোগ।
প্রকৃত চিররোগ আবার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা-
ক) সোরাঘটিত প্রকৃত চিররোগ।
খ) সিফিলিসঘটিত প্রকৃত চিররোগ।
(গ) সাইকোসিসঘটিত প্রকৃত চিররোগ।



প্রশ্ন- চিররোগের মূলভিত্তিসমূহ কি কি?

উত্তর: চিররোগের মূলভিত্তিসমূহ হইল-সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস।



প্রশ্ন- যথার্থ চিররোগ কাহাকে বলে? কি হইতে উহাদের উৎপত্তি হয় উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ যে সকল রোগ চিরউপবিষ হইতে উদ্ভূত হয় সে সকল রোগকে যথার্থ চিররোগ বলে। সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস রোগবীজ হইতে উহাদের উৎপত্তি হয়। যেমন-প্রমেহ বা গনোরিয়া, অর্শ, মৃগী, শোথ, কুষ্ঠ প্রভৃতি।



প্রশ্ন-  অচিররোগ ও চিররোগের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।

উত্তর: অচিররোগ ও চিররোগের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য বিদ্যমান।




প্রশ্ন- কৃত্রিম চিররোগ বা স্থায়ী রোগ বলিতে কি বুঝ? ইহার কারণগুলি লিখ।

উত্তর: কৃত্রিম চিররোগ বলিতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যতীত এলোপ্যাথিকসহ অন্যান্য প্যাথির চিকিৎসকদের দীর্ঘদিন ব্যাপী অপচিকিৎসা বা কু চিকিৎসার ফলে সৃষ্ট নিম্নলিখিত বিভিন্ন প্রকার অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও পরিবেশে পুষ্ট রোগসমূহকে বুঝি। ইহার কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হইল।
ক) সর্বদা দূষণীয় আবহাওয়ায় 'বসবাস।
খ) নানা প্রকার স্বাস্থ্যহানিকর ও অসংযত আচরণ।
গ) মাদকদ্রব্য ও অখাদ্য সেবন।
ঘ) অস্বাস্থ্যকর স্থান, জলাভূমি ও আলোবাতাসহীন আবদ্ধ ঘরে বসবাস।
ঙ) অধিক পরিমাণে শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম।
চ) সর্বদা মানসিক দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও অশান্তি প্রভৃতি।



প্রশ্ন- চিররোগের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?

উত্তর: চিররোগের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হইল-
ক) চিররোগ চির মায়াজম হইতে সৃষ্টি হয়।
খ) ইহার চলার গতি অতি মন্থর, তাই ইহাকে অচিররোগের ন্যায় সহজেই সনাক্ত করা যায় না।
গ) চিররোগ সবসময়ই অবিনশ্বর।
ঘ) ইহার ভোগকাল অনির্দিষ্ট এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ঙ) চিররোগ নিরাময় এক প্রকার দুঃসাধ্য ব্যাপার।
চ) ইহা কোন অবস্থাতেই বিনা চিকিৎসায় আরোগ্য হয় না।




প্রশ্ন- চিররোগ সম্বন্ধে প্রাচীনপন্থীদের মতবাদ কি?

উত্তর: অতি সুপ্রাচীন কাল হইতেই প্রাচীনপন্থী এলোপ্যাথ চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকগণ বিভিন্ন রোগের ভোগকাল অনুসারে রোগকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছেন। যেমন-ক) যে সকল রোগের ভোগকাল প্রায় ৬ সপ্তাহ বা দেড় মাসের কম সে সকল রোগকে তরুণ রোগের শ্রেণীভূক্ত করিয়াছেন। খ) যে সকল রোগের ফলাফল ছয় সপ্তাহ বা দেড়মাসের বেশী কিন্তু দুই মাসের কম সে সকল রোগকে স্বল্প পুরাতন বা sub acute রোগের শ্রেণীভূক্ত করিয়াছেন এবং গ) যে সকল রোগের ভোগকাল দুইমাসের বেশী সে সকল রোগকে চিররোগের শ্রেণীভূক্ত করিয়াছেন।




প্রশ্ন- চিররোগসমূহের মধ্যে কোন রোগসমূহ নিরাময় করা সর্বাপেক্ষা অসাধ্য ও শোচনীয়?

উত্তর: বিসদৃশ বিধানমতে প্রস্তুতকৃত ও রোগী চিকিৎসার্থে অপব্যবহৃত ঔষধসমূহ দ্বারা সৃষ্ট সর্বপ্রকার চিররোগসমূহ নিরাময় করা সর্বাপেক্ষা অসাধ্য ও শাচনীয়।


প্রশ্ন- মিথ্যা চিররোগ বা অলীক জীর্ণ রোগ বা ভুলভাবে পরিগণিত চিররোগ কাহাকে বলে?

উত্তর: দীর্ঘকাল যাবত স্বাস্থ্যবিধি লংঘনের কারণে, দূষিত আবহাওয়ায় সর্বদা বসবাস করা, অনিয়ম অনাচার, মদ্যপান আলো বাতাসহীন বদ্ধ ঘরে বসবাস, মানসিক দুশ্চিন্তা প্রভৃতি কারণে ব্যক্তিদেহে যে সকল জটিল রোগ বা রোগলক্ষণ সৃষ্টি হয় উহাদিগকে অলীক (মিথ্যা) জীর্ণ রোগ বা ভুলভাবে পরিগণিত চিররোগ বলে। ইহাতে বংশানুক্রমিক ধাতুপ্রবণতার প্রভাব থাকে না। মিথ্যা চিররোগের পেছনে কোন চির উপবিষ দেহের মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে থাকে না।



প্রশ্ন- অলীক জীর্ণ রোগ বা ভুলভাবে পরিগণিত চিররোগের কারণসমূহ কি কি?

উত্তর: স্বাভাবিক স্বাস্থ্যবিধির অনিয়ম-অনাচারই অলীক জীর্ণরোগ বা ভুলভাবে পরিগণিত চিররোগের মূল কারণ। ইহা ছাড়া অন্যান্য কারণগুলি হইল-
ক) প্রতিনিয়ত ভোগ বিলাসের মধ্যে জীবন যাপন করা।
খ) মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান, ইন্দ্রিয় চালনা, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি।
গ) অস্বাস্থ্যকর স্থানে এবং জলাভূমি ও আলোবাতাসহীন বন্ধ ঘরে বসবাস।
ঘ) স্বাস্থ্যহানিকর নানাপ্রকার অসংযত আচরণ।
ঙ) মানসিক দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও অশান্তি বহন করা।
চ) অতিরিক্ত শারিরীক ও মানসিক পরিশ্রম।
ছ) দীর্ঘকাল ধরিয়া পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব প্রভৃতি।



প্রশ্ন-  অলীক জীর্ণ রোগ বা ভুলভাবে পরিগণিত চিররোগ কিভাবে তিরোহিত হয়?
বা, বিনা ঔষধে অলীক জীর্ণ রোগ বা ভুলভাবে পরিগণিত চিররোগ আরোগ্যের পূর্বশর্ত কি?

উত্তর: রোগীর দেহাভ্যন্তরে কোন প্রকার চির উপবিষ যেমন-সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস বীজ প্রচ্ছন্নভাবে না থাকা এবং স্বাস্থ্যকর নিয়মে জীবন যাপন ও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানিয়া চলা প্রভৃতি হইল বিনা ঔষধে অলীক জীর্ণ রোগ বা ভুলভাবে পরিগণিত চিররোগ আরোগ্যের পূর্বশর্ত।
 


প্রশ্ন- এলোপ্যাথিক বা বিসদৃশ ঔষধের অপব্যবহারের কারণে সৃষ্ট রোগসমূহকে হোমিওপ্যাথির ভাষায় চিররোগ বলে কেন?

উত্তর: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা জনক দর্শনশাস্ত্রের চূড়ামনি মহাত্মা হ্যানিমান এলোপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্ম হইতে তাঁহার ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করিবার সময় পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের আদ্যোপান্ত ইতিহাস হইতে অবগত হন যে, দীর্ঘকাল যাবত অধিক মাত্রায় অতি উত্তেজক বিসদৃশ বা এলোপ্যাথিক বিধান মতে প্রস্তুতকৃত ও মানুষের রোগারোগ্যের জন্য অপব্যবহৃত ঔষধসমূহের ফলে অতি শোচনীয়ভাবে জীবনীশক্তির অপচয় সাধিত হইয়াছে। গবেষণা করিয়া তিনি জানিয়াছেন- ক্যালোমেল, ডিজিট্যালিস, ভ্যালেরিয়ান, সিলভার নাইট্রেট, আইওডিন, সিঙ্কোনা গাছের ছাল, কুইনিন, জোলাপ, প্রুসিক ও সালফিউরিক এসিড, পারদঘটিত মলম, রক্তমোক্ষণ, জোঁক লাগানো, কৃত্রিম ক্ষত তৈরী করিয়া গুল বসানো প্রভৃতি সাময়িক উপশমদায়ক দ্রব্য এবং ঔষধ নিচয়ের অপব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনীশক্তি এতই দুর্বল হইয়া পড়ে যে উহা ধ্বংসপ্রাপ্ত না হইলেও ক্রমশঃ ধীর গতিতে বিকৃত হইতে থাকে। এই অশুভও ধ্বংসাত্মক আক্রমণের মুখে প্রাণ রক্ষার্থে জীবনীশক্তিকে মানবদেহযন্ত্রে এমন। বিপদ ঘটাইতে হয়, যাহার ফলে দেহের কোন স্থানের অনুভব শক্তি হারাইয়া ফেলে, কোন স্থানের উত্তেজনা বৃদ্ধি করে, কোন স্থান অস্বাভাবিকরূপে বৃদ্ধি পায়, কোন অঙ্গবিশেষের শীর্ণতা কিংবা স্থূলতা, শিথিলতা কিংবা কাঠিন্যতা ঘটে অথবা এক বা একাধিক অঙ্গের ধ্বংসসাধন করে। এই সকল রোগ ভীষণাকারের 'জটিলতাপূর্ণ বলিয়া সংগত কারণেই এলোপ্যাথিক ঔষধনিচয়ের অপব্যবহারজনিত কারণে সৃষ্ট রোগসমূহকে হোমিওপ্যাথির ভাষায় চিররোগ বলে।



প্রশ্ন- এলোপ্যাথিক ঔষধসমূহের অপব্যবহারজনিত কারণে সৃষ্ট রোগসমূহ দুশ্চিকিৎস্য কেন? এগুলি নিরাময়ের উপায় কি?

উত্তর: যত প্রকার রোগ আছে তাহাদের মধ্যে এলোপ্যাথিক ঔষধজাত চিররোগ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। দীর্ঘকাল ধরিয়া ক্রমশঃ অধিকমাত্রায় বিসদৃশ ঔষধ প্রয়োগের ফলে ক্রমে রোগলক্ষণ দূরে গিয়া ঔষধজ লক্ষণ প্রকাশিত হয়। রোগের প্রতিষেধক ঔষধ, কিন্তু ঔষধজ রোগের প্রতিষেধক পাওয়া দুষ্কর। অর্থাৎ যে অচির রোগ কোনও ঔষধ সেবন না করিলেও আরোগ্য হইত তাহা এখন দুরারোগ্য হইয়া উঠিয়াছে। শুধুমাত্র প্রকৃতিজাত চিররোগ সমূহের প্রতিকারক ঔষধ ব্যবস্থাই পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা একমাত্র হোমিওপ্যাথিতে দিয়াছেন। যাহার প্রমাণ সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান আল কোরআন এবং তাহার প্রচারক সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ মানব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বানীতে ব্যক্ত হইয়াছে-'প্রতিটি রোগের ঔষধ রহিয়াছে, যখন রোগসদৃশ ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তখন আল্লাহর ইচ্ছায় রোগ আরোগ্য হয়।' (মুসলিম শরীফ, বুখারী শরীফ, যাদুল মাআদ: ২য় খণ্ড)। কিন্তু এলোপ্যাথিক ঔষধসমূহের অপব্যবহারজনিত কারণে সৃষ্ট চিররোগসমূহের কোন প্রকার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা প্রদান করেন নাই। এই কারণেই এই সকল রোগ দুশ্চিকিৎস্য।
এলোপ্যাথিক ঔষধসমূহের অপব্যাবহারজনিত সৃষ্ট চিররোগসমূহের বিদূরীত করিবার জন্য স্বয়ংক্রিয় জীবনীশক্তিই শুধু তাহার স্বাধীন সত্ত্বা বা স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারে। তবে রোগীর দেহে যদি কোন প্রকার প্রাকৃতিক রোগ বিদ্যমান থাকে তাহা ঔষধ দ্বারা বিদূরিত করা সম্ভব এবং এলোপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা কুচিকিৎসার ফলে যদি জীবনীশক্তি অত্যন্ত দুর্বল না হইয়া থাকে, তাহা হইলে উক্ত জীবনীশক্তি দীর্ঘকাল যাবত স্বাধীনভাবে চেষ্টা করিলে উক্ত চিররোগসমূহ আরোগ্য হইতে পারে।



প্রশ্ন- কোন প্রকার কম শক্তিশালী অসদৃশ এলোপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা কোন চিররোগ দীর্ঘকাল যাবত চিকিৎসা করিলে তাহার ফল কি ঘটে?

উত্তর: চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাধারণতঃ এইরূপ দৃষ্ট হয় যে, একটি অসদৃশ এলোপ্যাথিক ঔষধ যদি মূল চিররোগ হইতে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী হয়, তাহা হইলে উহা রোগীর দেহে রোগের কোন প্রকার পরিবর্তন সাধন করিতে পারে না। এমনকি কতিপয় বৎসর যাবতও যদি এইরূপ একটি কম শক্তিশালী অসূদশ ঔষধ দ্বারা উক্ত চিররোগের চিকিৎসা চলিতে থাকে, তথাপিও উক্ত রোগের কোনরূপ পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ উহা পূর্বাবস্থায়ই থাকিয়া যায়।



প্রশ্ন- চিররোগসমূহের মূলকারণ দূরীভূত করিবার জন্য সর্বদা ঔষধের আভ্যন্তরীক প্রয়োগের উপর নির্ভর করিতে হইবে কেন?

উত্তর: সর্বদা অস্বাস্থ্যকর স্থানে বসবাস বা স্বাস্থ্যের নিয়ম লংঘন করিবার কারণে যে সকল রোগ উদ্ভূত হয় এবং সামান্য রোগের চিকিৎসার জন্য বিসদৃশ লক্ষণে বেশী মাত্রায় অনিয়মিতভাবে ঔষধ সেবনের ফলে যে সকল দীর্ঘস্থায়ী রোগ উৎপন্ন হয়, সে সকল রোগ ব্যতীত অন্যান্য প্রাকৃতিক চিররোগই মহাত্মা ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিমানের ভাষায় সিফিলিস, সাইকোসিস এবং বেশীর ভাগ সোরা এই তিনটি চিররোগের বীজ হইতে উদ্ভূত হয়।
সোরা, সাইকোসিস ও সিফিলিস প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই দেহের সকল স্থান দখল করিয়া নেয়।
সোরা-প্রাথমিক লক্ষণরূপে চুলকানিযুক্ত চর্মরোগ, সিফিলিস-ক্ষত, বিশেষ করিয়া যৌনাঙ্গে এবং সাইকোসিস-আঁচিল জন্মাইয়া থাকে। যাহা সাধারণতঃ দেহের বহির্দেশে প্রকাশ পায় এবং উহাদের উপস্থিতিকালে প্রায়ই ঐ সকল রোগের আভ্যন্তরীক বিপদজনক লক্ষণসমূহ বিকশিত হইতে পারে না। ঘটনাক্রমে এই চিররোগসমূহ কোনও কারণবশতঃ বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশে অক্ষম হইলেই অসীম ক্ষমতাশালী পরাক্রম প্রকৃতি মন্থর গতিতে উহাদের আভ্যন্তরীক অসংখ্য রোগলক্ষণ বা রোগ প্রকাশ করিতে থাকে।
বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের দ্বারা এই সকল বাহ্যিক লক্ষণসমূহ বিদূরণের চেষ্টা না করিয়া চিকিৎসক যদি সদৃশ বিধান মতে আভ্যন্তরীক ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে রোগের মূল উৎপাটন করিতে জানিতেন তাহা হইলে উহারা দূরারোগ্য রোগ জন্মাইতে পারিত না। তাই কোন আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কখনই ঐ সকল চিররোগসমূহের একটিমাত্র গৌণ লক্ষণ বিদূরণের জন্য দেহের বহির্দেশে কোন ঔষধই প্রয়োগ করেন না। বরং তিনি এইরূপ ঔষধ রোগীর দেহাভ্যন্তরে প্রয়োগ করেন যাহার সাহায্যে চিররোগের মূল কারণটি সম্পূর্ণরূপে বিদূরিত হওয়ায় তাহার প্রাথমিক ও গৌন অবস্থাসমূহ সম্পূর্ণরূপে বিদূরিত হইয়া যায়।
দুর্ভাগ্য বশতঃ এই সকল রোগীগণ আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিকট আসিবার পূর্বেই এলোপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে এলোপ্যাথিক ঔষধসমূহের বাহ্যিক প্রয়োগ দ্বারা রোগের প্রাথমিক স্থানীয় লক্ষণসমূহকে এইরূপ বিনষ্ট করিয়া দেয় যে, দেহাভ্যন্তরের সকল চিররোগসমূহ বিশেষতঃ সোরা উহাদের সকল আভ্যন্তরীক গৌন লক্ষণসমূহ একে একে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করিতে থাকে। যাহা একজন আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সমগ্রজীবনব্যাপী কঠোর অনুশীলন, পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দ্বারা পরিজ্ঞাত হইতে পারেন।
এই কারণেই চিররোগসমূহের মূল কারণ দূরীভূত করার জন্য একজন আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে সর্বদাই উপযুক্ত ঔষধের আভ্যন্তরীক প্রয়োগের উপর নির্ভর করিতে হইবে।



প্রশ্ন-  চিররোগের চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে রোগীর কি কি বিষয়ে অনুসন্ধান করা দরকার এবং এই অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য কি?
বা, চিররোগের লক্ষণ সংগ্রহ প্রণালী বর্ণনা কর।

উত্তর: চিররোগের চিকিৎসা শুরু করিবার পূর্বে রোগীর উপদংশ বা আঁচিলযুক্ত গণোরিয়া রহিয়াছে কিনা তাহা অনুসন্ধান করিতে হইবে। কারণ সম্প্রতি এই দুইটি দোষের কোনটিই প্রায় একাকী দৃষ্ট হয় না অর্থাৎ আভ্যন্তরীক কণ্ডুয়নজনক সোরার সহিত উহাদের প্রায়ই বিজড়িত থাকিতে দেখা যায়। সংগত প্রেক্ষিতে একজন আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক যখন প্রায়শই উপদংশ ও প্রমেহের চিকিৎসা শুরু করেন তখন সেই সাথে উক্ত সোরা দোষের চিকিৎসাও করিতে বাধ্য হন। যদি রোগী উপদংশ বা প্রমেহ দ্বারা আক্রান্ত হন তাহা হইলে সোরা উহাদের সহিত সংমিশ্রিত হয়। আর এই তিনটি চিররোগ বীজের পরস্পরের সংমিশ্রণের ফলে এবং এলোপ্যাথিক কুচিকিৎসার দ্বারা নানা রকম জটিলতার সৃষ্টি করেন এবং নানারূপ বিকৃতি, বিবৃদ্ধি ও রূপান্তরের মাধ্যমে নানাপ্রকার নাম পরিগ্রহ করে।
উপরোক্ত তথ্যসমূহ যখন জ্ঞাত হওয়া যায় তখন একজন আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক উক্ত চিররোগের যে সকল বিস্দশ এলোপ্যাথিক ঔষধসমূহ প্রয়োগ করা হইয়াছে বিশেষতঃ উহাদের মধ্যে কোন কোন ঔষধসমূহ ক্ষতিকারক ও বার বার প্রয়োগ করা হইয়াছে এবং কোনপ্রকার ধাতব পানিতে গোছল করানো হইয়াছে কিনা তাহা জানিতে হইবে। উহা জানিতে - পারিলে উক্ত চিররোগসমূহের মূল অবস্থা হইতে কখন, কি প্রকারে বিকৃত হইয়াছে তাহাও জানিতে সক্ষম হইবেন। তখন তিনি ঐ সকল কুচিকিৎসার কারণ, তাহার দোষসমূহ বিদূরণের জন্য চেষ্টা করিবেন। ইহা ছাড়া যে সকল ঔষধ অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করা হইয়াছে তিনি তাহা ভুলক্রমে পুনঃপ্রয়োগ হইতে বিরত থাকিবেন।
অতঃপর রোগীর বয়স, জীবনযাপন প্রণালী, প্রাত্যহিক কাজকর্ম, পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা, বংশগত ইতিহাস ইত্যাদিও জানিবেন। ঠিক একই প্রকারে তাহার মানসিক অবস্থা ও প্রকৃতি জানিয়া লইতে হইবে এবং দেখিতে হইবে যে উহাদের মধ্য হইতে কোনোটি তাহার রোগবৃদ্ধি করিতে পারে কিনা। দীর্ঘকাল রোগ ভোগের ফলে রোগী বুঝিতেই পারে না যে প্রকৃত রোগ কোনটি? অনেক সময় রোগের মূল উপসর্গগুলিতে রোগী এমন অভ্যস্ত হইয়া পড়েন যে সেগুলি তাঁহার নিকট আর রোগ বলিয়াই মনে হয় না। অথচ এসব ঘটনা রোগের সর্বাধিক পরিচয় বহন করে।
এই সকল পরীক্ষা সমাপ্ত করার পরও চিকিৎসক রোগীর সহিত তাহার রোগ সম্বন্ধে আরও কথাবার্তা বা আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়া অনেক সময় রোগীর বিশেষ উল্লেখযোগ্য ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণসমূহ সংগ্রহ করিয়া রোগীচিত্রটি এইরূপে পূর্ণাঙ্গ করিতে পারেন যে, উহার সাহায্যে লক্ষণ সাদৃশ্যের উত্তম ঔষধটি পাইয়া আদর্শ চিকিৎসা শুরু করিতে পারেন।



প্রশ্ন- চিররোগ চিকিৎসার সময় রোগীর খাদ্য, পানীয় ও আনুষঙ্গিক কোন্ কোন্ বিষয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখিতে হইবে?

উত্তর: যেহেতু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অত্যন্ত সূক্ষ্ম হইতে সূক্ষ্মতম মাত্রায় শক্তিকৃত করিয়া ব্যবহার করা হয়, সেহেতু রোগীর খাদ্য পানীয় এবং অন্যান্য সকল ব্যবহার্য সামগ্রীতে যেন কোন প্রকার ঔষধি গুণ বিশিষ্ট দ্রব্যের সংমিশ্রণ না থাকে সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখিতে হইবে। কারণ ঐ সকল খাদ্য পানীয় ও ব্যবহার্য সামগ্রী কখনো কখনো প্রয়োগকৃত ঔষধের ক্রিয়া বিনষ্ট করিতে পারে। যেমন অতিরিক্ত চা, কফি, জর্দা, দোক্তা ও নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্য, ইলিশ মাছ, চিংড়ী মাছ, ডিম, নারিকেল, গরুর মাংস, পিয়াজ, রসুন, কালমেঘ, বাসকপাতা, চিরতা, দূর্বা ইত্যাদির নির্যাস এবং অতিরিক্ত মশলাযুক্ত গুরুপাক খাদ্য বা অতিরিক্ত এলকোহল ও মেডিকেটেড পানীয় প্রভৃতি।
আবার অত্যধিক রাত্রিজাগরণ, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, নস্য ব্যবহার, অতিমৈথুন, হস্তমৈথুন, বদ্ধ আর্দ্র গৃহে বসবাস, মানসিক ও দৈহিক অতি পরিশ্রম ইত্যাদি কারণেও প্রয়োগকৃত ঔষধের ক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটিতে পারে। এ কারণে চিররোগে ঔষধ ব্যবহারের সময়ে যে সকল খাদ্যপানীয় ও ব্যবহার্য সামগ্রী দ্বারা রোগীর অনিষ্ট হয় তাহা ত্যাগ করিবার এবং যে সকল খাদ্য পানীয় ও ব্যবহার্য সামগ্রী দ্বারা রোগীর কল্যাণ হয় তাহা পানাহার বা গ্রহণ করিবার পরামর্শ প্রদান করিতে হইবে। উল্লেখ্য যে, এই সময়ে রোগীকে কেবলমাত্র নির্দোষ ও নৈতিক মানসিক চিন্তাধারা, মুক্ত হাওয়া, হাল্কা ভ্রমণ, ব্যায়াম এবং ঔষধি গুণবিশিষ্ট পুষ্টিকর খাদ্য ও পানীয়ের সুব্যবস্থা করিবার পরমর্শ প্রদান করিতে হইবে।
 


প্রশ্ন- অন্য ঔষধ ব্যবহারকালীন কোন চিররোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ পর্যবেক্ষণের উপযুক্ত সময় কখন?

উত্তর: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিকট কোন চিররোগী অন্য কোন প্যাথির ঔষধ ব্যবহার করিয়া আসিলে উক্ত অবস্থায় তাহার পরীক্ষা নিরীক্ষা সমাপন করিয়া তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করা উচিত নহে। যেহেতু তখনও পূর্বপ্রযুক্ত ঔষধের ক্রিয়া চলিতেছে বলিয়া প্রস্ফুটিত লক্ষণসমূহ যথার্থ রোগীচিত্র প্রকাশে অক্ষম। এমতাবস্থায় রোগীকে পরীক্ষা করিলে মূল রোগের ও ঔষধজনিত রোগের সংমিশ্রিত লক্ষণ ভিন্ন কাংখিত প্রকৃত রোগের সুনির্দিষ্ট লক্ষণসমূহ পাওয়া যাইবে না। তাই প্রকৃত রোগলক্ষণসমূহ সংগ্রহের জন্য কিছুদিন অনৌষধি বা ফাইটাম ব্যবহার করিতে হইবে। ফলে পূর্ব প্রযুক্ত ঔষধের ক্রিয়া শেষ হইয়া যখন প্রকৃত রোগলক্ষণসমূহ প্রস্ফুটিত হইবে ঠিক তখনই এই রোগী পর্যবেক্ষণের উপযুক্ত সময়।



প্রশ্ন- চিররোগ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথি ও অহোমিওপ্যাথি মতাদর্শের পার্থক্য নির্ণয় কর।

উত্তর: নিম্নে চিররোগ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথি ও অহোমিওপ্যাথি মতাদর্শের পার্থক্যসমূহ নির্ণয় করা হইল-
হোমিওপ্যাথি মতাদর্শ
ক) চির মায়াজম সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস কর্তৃক চিররোগ সৃষ্টি হইয়া থাকে।
খ) চিররোগে রোগীর রোগভোগের কোন সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নাই।
গ) অলীক বা মিথ্যা জীর্ণরোগকে কখনও চিররোগ হিসাবে গণ্য করা যায় না।
ঘ) চিররোগে ব্যক্তির জীবনীশক্তির কার্যকলাপ স্বীকৃত।

অহোমিওপ্যাথি মতাদর্শ
ক) বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা চিররোগ সৃষ্টি হইয়া থাকে।
খ) দুই মাসের বেশী সময় রোগী রোগ ভোগ করিলে তাহাকে চিররোগ হিসাবে গণ্য করা হয়।
গ) অলীক বা মিথ্যা জীর্ণ রোগকে চিররোগ হিসাবে গণ্য করা হয়।
ঘ) চিররোগে ব্যক্তির জীবনীশক্তির কার্যকলাপ অস্বীকৃত।
 


প্রশ্ন- পরিহারযোগ্য কু অভ্যাসাদি হইতে যে সকল রোগসমূহের উদ্ভব হয় প্রকৃত পক্ষে উহারা কি চিররোগ?

উত্তর: দীর্ঘকাল যাবত স্বাস্থ্যবিধি লংঘন, মদ্যপান বা এই জাতীয় দ্রব্যাদির ব্যবহার, পুষ্টিকর খাদ্যাভাব, অত্যধিক শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম, ভয়, দুশ্চিন্তা, অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতস্যাঁতে আর্দ্র স্থানে বসবাস, ইত্যাদি কারণ হইতে যে সকল রোগসমূহের উদ্ভব হইয়া থাকে সে সকল রোগসমূহকে ভুলক্রমে চিররোগ বলা হইলেও বাস্তবে উহারা চিররোগ নয়। কারণ এই প্রকারের রোগসমূহ রোগী স্বয়ং তাহার দেহে আনয়ন করে। কিন্তু রোগীর দেহে যদি কোন প্রকার চিররোগের কারণ বিদ্যমান থাকে তাহা হইলে পুনরায় স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম পালন করিয়া জীবন যাপন করিলেই উক্ত রোগসমূহ বিদূরীত হইয়া যায়। অতএব, অকারণে উক্ত রোগসমূহকে শুধু শুধু চিররোগ বলা অনুচিত।



প্রশ্ন-  নূতন কোন তীব্র রোগ দ্বারা রোগী আক্রান্ত হইলে তখন পুরাতন মৃদুতর অসদৃশ রোগটির কিরূপ অবস্থা হয়?

উত্তর: নবাগত অসদৃশ রোগটি যদি পূর্ববর্তী রোগ হইতে অধিকতর শক্তিশালী হয় তাহা হইলে পূর্ববর্তী রোগটি এই নবাগত অধিকতর শক্তিশালী রোগটির প্রতাপে রোগীর দেহের কোন এক নিভৃত স্থানে নির্জীবের ন্যায় ততক্ষণ পড়িয়া থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ নবাগত শক্তিশালী রোগটির গতি বা ভোগকাল শেষ না হয়। অতঃপর যখন নবাগত রোগটি বিদূরীত হইয়া যায় তখনই পূর্ববর্তী পুরাতন রোগটি পুনরায় সজীব হইয়া উঠে এবং নিজস্ব লক্ষণ লইয়া আত্মপ্রকাশ করে। উদাহরণস্বরূপ কোন কোন মাম্পস্ রোগীকে টিকা প্রদানের পর টিকাজনিত গুটিসমূহ প্রকাশিত হইবার সঙ্গে সঙ্গেই মাম্পস্ হ্রাস পায় এবং তৎপরে গুটিসমূহ অন্তর্হিত হইবার পরে মাম্পস্ পুনরায় আত্মপ্রকাশ করিয়া এক সপ্তাহের মধ্যে উহার সকল কাজ শেষ করে।



প্রশ্ন-  চিররোগের গতি প্রকৃতি আলোচনা কর।

উত্তর: চিররোগের মানবদেহে সূচনা হয় অতি সংগোপনে, রোগের গতি তথা বিকাশ ঘটে অতি ধীরে ধীরে, এমনকি রোগীর অজ্ঞাতসারে এবং এর বিষক্রিয়া রোগীর সমগ্র সত্বাকে গভীরভাবে আচ্ছন্ন করিতে থাকে। রোগী প্রথমে কিছুই বুঝিতে পারে না। ধীরে ধীরে তাহার দেহে ও মনে নানা প্রকার কষ্টকর লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। ধীরে ধীরে বিশেষ কোন আলোড়ন সৃষ্টি না করিয়া নিজস্ব প্রভাবে দেহীর শক্তিকে ভিতর হইতে ঘুণে খাওয়ার মত দুর্বল করিয়া   
দেয়। তারপর হয়ত কোন উদ্দীপক কারণে যথা ঠাণ্ডা লাগা, কোন দুঃসংবাদ বা স্বাস্থ্যবিধি পালনের অনিয়মে বিষ্ফোরণ ঘটে। মানুষের প্রাণসত্বা তার সমস্ত শক্তি দ্বারা প্রতিহত করিয়াও এই অবস্থা কিছুতেই কাটিয়া উঠিতে পারে না। জীবনীশক্তি তার সমস্ত শক্তি সংহত করিয়া রোগশক্তিকে দেহকাণ্ডের প্রান্তদেশে নিয়া যায়। ফলে গাত্রত্বকে একপ্রকার উদ্ভেদ (সোরার প্রাথমিক নির্দশন), কিংবা ফুলকফির ন্যায় অর্বুদ (সাইকোসিসের প্রাথমিক নির্দশন) বা যৌনাঙ্গে ক্ষত বা স্যাংকার (সিফিলিসের প্রাথমিক নির্দশন) দেখা দেয়। প্রাণশক্তি নিজের শক্তিতে ইহাদের নির্মূল করিতে অক্ষম। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম উপসর্গ, বিভিন্ন রকম রোগ, বিভিন্ন নামের রোগ, কিন্তু এইসব কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, একই রোগের বিভিন্ন রূপ। উপযুক্ত চিকিৎসা না হইলে এই ধরনের রোগ মানুষের দেহযন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে ঠেলিয়া নিয়া যায়। চিররোগের গতি প্রকৃতি এমনই যে এই রোগের বিষক্রিয়া বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রবাহিত হইয়া চলে। পক্ষাঘাত, যক্ষ্মা, বহুমূত্র, অর্শ, ক্যান্সার, বধিরতা, আধকপালে মাথব্যথা, মানসিক রোগ প্রভৃতি চিররোগের দৃষ্টান্ত।



প্রশ্ন - চিররোগ কখন আরোগ্য লাভ করে না?

উত্তর: যত প্রকার রোগ আছে তাহাদের মধ্যে এলোপ্যাথিক ঔষধজাত চিররোগ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং আরোগ্য বহির্ভূত। দীর্ঘকাল ধরিয়া ক্রমশঃ অধিক মাত্রায় বিসদৃশ ঔষধ প্রয়োগের ফলে ক্রমে ক্রমে রোগলক্ষণ দূরে গিয়া ঔষধজ লক্ষণ প্রকাশিত হয়। ঔষধ দ্বারা রোগ প্রতিকার করা যায়, কিন্তু ঔষধজ রোগের প্রতিষেধক পাওয়া দুষ্কর। শুধুমাত্র প্রকৃতিজাত চিররোগসমূহের প্রতিকারক ঔষধ ব্যবস্থাই পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা একমাত্র হোমিওপ্যাথিতে দিয়াছেন। কিন্তু এলোপ্যাথিক ঔষধসমূহের অপব্যবহার জনিত কারণে সৃষ্টি চিররোগসমূহের কোন প্রকার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা প্রদান করেন নাই। রোগলক্ষণ এবং বিসদৃশ ঔষধের অপব্যবহারের কারণে ঔষধের লক্ষণ মিলিয়া এমন কিম্ভুত কিমাকার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং এমন মারাত্মক আকার ধারণ করে ইহার চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন অসম্ভব। এই অবস্থায় চিররোগ আরোগ্য লাভ করে না।
 


প্রশ্ন-  চিররোগ চিকিৎসার জটিলতা কি?

উত্তর : ক্রনিক মায়াজম হইতে সৃষ্ট রোগসমূহকেই চিররোগ বলিয়া আখ্যায়িত করা হয়। চিররোগ চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত জটিলতার সম্মুখীন হইতে হয়।
ক) শুধু ঔষধ প্রয়োগে রোগশক্তিকে নির্মূল করা দুরূহ। আরোগ্যের পথে প্রথমেই উদ্দীপক কারণসমূহ দূর করা প্রয়োজন। রাত্রিজাগরণ, অতিভোজন, গুরুপাক দ্রব্য ভোজন, অতিরিক্ত দৈহিক ও মানসিক পরিশ্রম, প্রতিকুল অবস্থায় জীবন যাপন, শোক, দুঃখ, ভয়, নৈরাশ্য প্রভৃতি এই সকল কারণের মধ্যে অন্যতম।
খ) রোগীর যদি দৈহিক কাঠামোগত কোন বিকৃতি থাকে তবে তাহা ঔষধের ক্রিয়া পথে বাধার সৃষ্টি করিতে পারে।
গ) রোগীর নিদানগত অবস্থা যদি খারাপ হয়, রোগীদেহের যান্ত্রিক যদি অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি হয় তবে ঔষধ প্রয়োগে আরোগ্য বিধানে প্রচণ্ড অসুবিধার সম্মুখীন হইতে হয়।
ঘ) ঔষধের অপপ্রয়োগজনিত সমস্যাও চিকিৎসায় জটিলতা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন প্রকার বেদনানাশক, অবসাদকর, এন্টিবায়োটিক প্রভৃতি ঔষধ ব্যবহার, এক্সরে, রেডিয়াম চিকিৎসা প্রভৃতির ফলে রুগ্ন দেহকোষ আরোগ্যের পরিবর্তে ধ্বংস হয়। আবার স্থানীয় পীড়া মনে করিয়া টনসিল, ডিম্বকোষ, এপেন্ডিক্স, অর্শ প্রভৃতি অস্ত্রোপচারে বিলুপ্ত করিয়া অঙ্গহানির ফলেও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়।
ঙ) চিররোগ চিকিৎসাক্ষেত্রে চিকিৎসকের ত্রুটি যেমন আংশিক লক্ষণের উপর ভিত্তি করিয়া ঔষধ প্রয়োগ, ঔষধের মাত্রা ও শক্তি নির্ণয়ে ব্যর্থতা, বৃহৎমাত্রায় বার বার ঔষধ প্রয়োগ করা, ঘন ঘন ঔষধ পরিবর্তন, কোন ঔষধের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রভৃতি চিকিৎসাপথে অন্তরায়।
আবার অনেক সময় রোগীর সত্য ঘটনা প্রকাশে অনিচ্ছা, রোগের আসল কারণ চাপিয়া যাওয়া, লক্ষণ বাড়াইয়া বা কমাইয়া বলা প্রভৃতিও চিকিৎসার পথে বাধা হইয়া দাঁড়ায়।
চ) এলোপ্যাথিক ঔষধের কুচিকিৎসায় জটিলতা সৃষ্টির পর অনেক সময় হোমিও চিকিৎসক রোগী চিকিৎসার সুযোগ পান। এমতাবস্থায় রোগের মূল লক্ষণগুলি চাপা পড়িয়া বা দূরীভূত হইয়া ঔষধজ লক্ষণগুলিই বিকশিত থাকে। ফলে মূলরোগ আরোগ্যের কোন লক্ষণ পাওয়া যায় না।
আবার হোমিওপ্যাথিক ঔষধ যদি পূর্বে রোগীতে অপপ্রয়োগ করা হয় তাহাও আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক অবগত হইতে পারেন না। ফলে ঔষধ প্রয়োগে জটিলতা ও সমস্যার সৃষ্টি হয়।



প্রশ্ন-  চিররোগে ঔষধ প্রয়োগের পর নিম্নবর্ণিত অবস্থায় প্রত্যাশিত ফলাফল কি হইবে?
ক) অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধি ও ইহার পর অবনতি।
খ) প্রথমে অল্পক্ষণ স্থায়ী উপশম, কিন্তু পরে বৃদ্ধি।
গ) অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধির পর ধীরে ধীরে উন্নতি।
ঘ) রোগ লক্ষণের বৃদ্ধি দীর্ঘকাল ধরিয়া চলিতে থাকে এবং রোগীর অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হইতে থাকে।

উত্তর: ক) অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধি ও ইহার পর অবনতি দেখা দিলে বুঝিতে হইবে যে সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করা হয় নাই। তাই প্রতিষেধক হিসাবে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করিতে হইবে।
খ) প্রথমে অল্পক্ষণ স্থায়ী উপশম পরে বৃদ্ধি দেখা দিলে বুঝিতে হইবে যে
ঔষধ নির্বাচন সঠিক হইয়াছে তবে নিম্নশক্তিতে ঔষধ প্রয়োগ করা হইয়াছে। তাই নির্বাচিত ঔষধ উচ্চ শক্তিতে প্রদান করা প্রয়োজন এবং দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করিতে হইবে।
গ) অধিককাল স্থায়ী বৃদ্ধির পর ধীরে ধীরে উন্নতি দেখা দিলে বুঝিতে
হইবে যে ঔষধ নির্বাচন সঠিক হইয়াছে। কিন্তু ঔষধের মাত্রা বেশী হওয়ায় সদৃশ বৃদ্ধি ঘটিয়াছে। এমতাবস্থায় ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করিলে সদৃশ শক্তি অন্ত র্হিত হইবে। এখানে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রয়োজন হইবে না।
ঘ) রোগলক্ষণের বৃদ্ধি দীর্ঘকাল ধরিয়া চলিতে থাকে এবং রোগীর অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হইতে থাকিলে মনে করিতে হইবে ঔষধ সঠিক ভাবে নির্বাচিত হইয়াছে কিন্তু রোগী অনারোগ্য ছিল। তাহার দেহযন্ত্রে নিদানগত অবস্থা বহুপূর্বে হইয়াছিল। এই অবস্থায় কোন গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ প্রদান করা হইয়াছে। দ্রুত প্রতিকারক ব্যবস্থা না নিলে জীবন বিপন্ন হইতে পারে।



প্রশ্ন- বৃত্তিগত ব্যাধি কাহাকে বলে?

উত্তর: মানুষের জীবিকার্জনের জন্য অনেক সময় এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে কাজ করিতে হয় যাহা তাহার স্বাস্থ্যের পক্ষে বিশেষ হানিকর। ফলে মানুষ সহজেই পীড়িত হইয়া পড়ে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরমে কাজ করা, জলাভূমিতে কাজ করা, বিষাক্ত রাসায়নিক গুণসম্পন্ন দ্রব্য নিয়া কাজ করা প্রভৃতির ফলে একই বৃত্তিতে নিযুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তি সাধারণত একই বিশেষ ধরণের পীড়ায় আক্রান্ত হন। এই সমস্ত পীড়া অলীক চিররোগ শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। এইগুলিকে বৃত্তিগত ব্যাধি বলা হয়।



প্রশ্ন-  চিররোগের চিকিৎসাকালীন অচিররোগের আক্রমণ দেখা গেলে চিকিৎসকের করণীয় কি?

উত্তর: চিররোগের চিকিৎসাকালীন অনেক সময় অচির রোগের আক্রমণ দৃষ্ট হয়। যদি নবাগত অচির ব্যাধিটি অতিশয় ভীষণ প্রকৃতির না হয় তাহা হইলে অচির পীড়ার সদৃশ লক্ষণে একটি ঔষধ নিম্ন শক্তিতে নির্বাচন করিয়া প্রয়োগ করিতে হয়। অল্পকাল স্থায়ী ঔষধের নিম্নশক্তি প্রয়োগে অচির ব্যাধিটি আরোগ্য হইলে উহাতে চিররোগের জন্য পূর্বে প্রদত্ত ঔষধের ক্রিয়ার কোন ক্ষতিই হয় না।
কিন্তু যদি অচির ব্যাধিটি ভীষণ প্রকৃতির হয়, তাহা হইলে চিররোগের জন্য চিন্তা না করিয়া অচির রোগের আরোগ্যের জন্য শক্তিকৃত ঔষধ ব্যবহার করিতে হইবে। তীব্র অচির পীড়াটি আরোগ্য হইবার পর চির রোগের জন্য পূর্বে যে ঔষধটি নির্বাচিত হইয়াছিল, তাহা পুনঃপ্রয়োগ করার পূর্বে বিবেচনা করিয়া দেখিতে হইবে যে, পূর্বে চিররোগের যে সকল লক্ষণ ছিল, এখনও তাহাই আছে কিনা। অচির পীড়ার চিকিৎসাকালীন অনুপযুক্ত ঔষধ ব্যবহারের দ্বারা চিররোগের লক্ষণসমূহ পরিবর্তিত হইয়া যাইতে পারে। এইক্ষেত্রে পরবর্তীতে সংগৃহীত লক্ষণের উপর নির্ভর করিয়া নূতন একটি উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করিতে হইবে।
অনেক সময় চিররোগের রোগীতে মধ্যে মধ্যে চিররোগেরই তরুণ অভিব্যক্তি ঘটে অচির পীড়ার আকারে। এক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় অচির ব্যাধির লক্ষণের সাদৃশ্যযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করা যাইবে না। অচির লক্ষণসমূহের সাদৃশ্যে যে ঔষধটি নির্বাচিত হয়, তাহার কার্যপূরক কোন দীর্ঘকালস্থায়ী ঔষধটি এক্ষেত্রে চিররোগের রোগীকে সামগ্রিকভাবে আরোগ্য করিবে।



প্রশ্ন-  অবদমন কাহাকে বলে? অবদমনের প্রকারভেদ লিখ। অবদমনের ফলে কিভাবে রোগ সৃষ্টি হয়?
 
উত্তর : মানুষের সুস্থাবস্থায় জীবনীশক্তি দেহতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ রাখে। প্রাণসত্বার উপর বাহিরের প্রভাব এবং প্রাণসতার অভ্যন্তরে ক্রিয়াশীল প্রভাবসমূহের মধ্যে এমনভাবে সামঞ্জস্য বজায় থাকে যাহাতে দেহতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে। জীবনীশক্তির এই স্বাভাবিক ক্রিয়াধারা জীবনেরই প্রকাশ। এই ক্রিয়া চলে কেন্দ্র হইতে পরিধির দিকে, ভিতর হইতে বাহিরের দিকে এক ছন্দোময় গতিতে। কোন কারণে এই স্বাভাবিক ক্রিয়া ধারায় ব্যঘাত সৃষ্টি হইলে দেহতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হইয়া যায়। জীবনীশক্তির স্বাভাবিক ক্রিয়ার প্রকাশ ধারায় প্রতিন্ধকতা সৃষ্টি হইলে ইহাকে অবদমন বলা হয়।
অবদমন বিভিন্ন প্রকারের হইয়া থাকে। যেমন-
ক) ভাবাবেগ অবদমন।
খ) অর্থনৈতিক চাপে অবদমন।
গ) স্বাভাবিক নিঃস্রাব দমন।
ঘ) ঔষধ প্রয়োগে অবদমন।
ঙ) রোগের বাহ্যিক প্রকাশের অবদমন।
চ) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অবদমন।
অবদমনের ফলে নিম্নলিখিত ভাবে পীড়ার সৃষ্টি হইয়া থাকে।
ক) দৈনন্দিন জীবনে মানুষের মনের স্বাভাবিক ভাবাবেগের প্রকাশ ব্যাহত হইতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই মনের আবেগ চাপিয়া রাখিতে হয়। ফলে ভাবাবেগের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। অনেক সময় মনের আবেগ, উচ্ছাস, আনন্দ, ভয়, ইচ্ছা, অনিচ্ছা, ভালবাসা, ক্রোধ, সন্তান লাভের তীব্র আকাংখা, অতৃপ্ত ও ব্যর্থ প্রেম, শোক দুঃখ প্রভৃতির ফলে মানুষের ভাবাবেগের ক্ষেত্রে যে চাপ সৃষ্টি হয় তার ফলে সুপ্ত সোরা জাগ্রত হয় এবং মানুষ পীড়িত হয়।
খ) অর্থনৈতিক চাপ যেমন-জীবনে সর্বদাই ব্যস্ততার ভাব, অনিশ্চয়তা, থাকার অসুবিধা, খাদ্যের অভাব, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি প্রাপ্তি ও সংগ্রহের অনিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে উৎকণ্ঠা, বিশ্রামের অভাব, স্বাভাবিক আনন্দ ও আমোদ প্রমোদের অভাব, অর্থনৈতিক বৈষম্য, পদে পদে ব্যর্থতা জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে, জীবনীশক্তির উপর চাপ সৃষ্টি করে, ফলে কঠিন পীড়ার সহজ শিকার হই।
গ) আজকাল বিভিন্ন কৃত্রিম উপায়ে দেহের স্বাভাবিক নিঃস্রাব যেমন ঘর্ম, প্রমেহ স্রাব, ঋতুস্রাব, প্রভৃতিকে দমন রাখার চেষ্টা হয়। প্রাণসত্বা তখন অন্যপথে এগুলি বাহির করিতে সচেষ্ট হয়। ফলে জীবনীশক্তির উপর চাপ পড়ে ও স্বাস্থ্যের প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হয়।
ঘ) নানাপ্রকার অবসাদকর, নিদ্রাকারক, বেদনা নাশক, কোষ্ঠ পরিষ্কারক প্রভৃতি ঔষধ ব্যবহারে, স্থলমাত্রায় বিসদৃশ ঔষধ প্রয়োগ প্রভৃতির ফলে জীবনীশক্তির উপর তীব্র চাপ পড়ে। এই অবস্থা দীর্ঘকাল চলিলে রোগী জটিল রোগের শিকার হয়।
ঙ) রোগের বাহ্যিক প্রকাশ অবদমন অর্থাৎ চর্মরোগ, আঁচিল, অর্বুদ, ক্ষত প্রভৃতি মলম বা লোশন দ্বারা বিলুপ্ত করিলে রোগ চাপা পড়ে, অন্তর্মুখী হয় এবং দেহতন্ত্রের প্রধান অংশে সঞ্চালিত হইয়া বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়।
চ) অস্ত্রোপচারের সাহায্যে টনসিল, এপেন্ডিক্স, ডিম্বকোষ, দাঁত প্রভৃতির বিলুপ্তির ফলে রোগচিত্র জানিবার আর কোন উপায় থাকে না। ফলে রোগ অন্ত মূখী হয় এবং জীবনক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। রোগ চাপা পড়ার কারণে নূতন জটিল রোগের উৎপত্তিতে সাহায্য করে।



প্রশ্ন- হোমিওপ্যাথিতে 'দোষ' অর্থে কি বুঝায়?

উত্তর: 'দোষ' অর্থে অসমলক্ষণ মতে ঔষধ প্রয়োগ দ্বারা বাহ্য বিকশিত লক্ষণগুলি দমন বা চাপা দিবার ফলে বাহির হইতে ভিতরের দিকে একটি গতির সৃষ্টি হয়-এই অভ্যন্তর গতি, অর্থাৎ বাহির হইতে ভিতরের অভিমুখী গতিটিই মানব শরীরের অভ্যন্তর প্রদেশের যন্ত্রগুলি আক্রমণ করিবার একটি প্রবণতার উদ্ভব করে এবং প্রকৃত প্রস্তাবে আক্রমণও করিয়া থাকে। এই প্রবণতা বা প্রকৃতির নামই 'দোষ'।



প্রশ্ন-  মায়াজম বা উপবিষ কাহাকে বলে?

উত্তর: যে সকল প্রাকৃতিক অদৃশ্য কারণসমূহ হইতে রোগ উৎপত্তি হয় সে সকল কারণসমূহকে মায়াজম বলে। 'মায়াজম' শব্দের অর্থ হইল উপবিষ, কলুষ, পুতিবাষ্প, ম্যালেরিয়া বিষ প্রভৃতি। মায়াজম হইল এমন কিছু যাহা কোন কারণবশতঃ একবার মানবদেহে অনুপ্রবেশ করিবার পর সদৃশ বিধান মতে সুচিকিৎসিত না হইলে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যাহা সারাজীবনব্যাপী চলিতে থাকে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যেও উহার ফলজনিত অস্বাভাবিক অবস্থার চিহ্ন প্রায়শই সুপ্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। ভবিষ্যতে কোন সুবিধাজনক পরিবেশে এই মায়াজম সুপ্তাবস্থা হইতে প্রকাশ্য অসুস্থতার রূপ পরিগ্রহ করিয়া বিকাশ লাভ করে। যেমন-সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস।



প্রশ্ন-  মহাত্মা হ্যানিমানের দৃষ্টিতে মায়াজম অর্জিত না বংশানুক্রমিক?

উত্তর : মহাত্মা ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিমান তাঁহার ক্রনিক ডিজিজেস গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন-সর্বপ্রকার রোগসমূহ মায়াজমের অশুভ প্রভাবের ফলেই উদ্ভূত হয়। এই মায়াজম হইল প্রাকৃতিক অশুভ অতি সূক্ষ্মশক্তি যাহা অর্জিত ও বংশানুক্রমিক এই দুইটির একটিও হইবার কথা নহে। কিন্তু ভাবগতিকে, লক্ষণদৃষ্টে সোরা সেই আদিকাল হইতেই বংশানুক্রমিক ভাবে চলিয়া আসিতেছে। আবার সিফিলিস ও সাইকোসিসকে একদিকে যেমন বংশানুক্রমিকভাবে চলিয়া আসিতে দেখা যাইতেছে অন্যদিকে তেমন কুকর্মের দ্বারা অর্জিত হইতে দেখা যাইতেছে।
অতএব মায়াজমকে আমরা অর্জিত ও-বংশানুক্রমিক উভয় প্রকারেই বলিতে পারি।



প্রশ্ন- মায়াজম বা উপবিষ সনাক্ত করার উপায় কি?

উত্তর: তিনপ্রকার মায়াজম সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস প্রভৃতি মায়াজম স্বীয় বৈশিষ্টে অনন্য এবং প্রত্যেকটি প্রকাশিত রোগ তার প্রসূতি মায়াজমের আকৃতি ও প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য বহন করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করিতে পারার মধ্যেই চিকিৎসা কার্যে সফলতার চাবিকাঠি নিহিত রহিয়াছে।
রোগী যদি সাইকোটিক হয় তবে তার আভ্যন্তরীন যন্ত্রসমূহের ক্রিয়ায় একটা নিষ্ক্রিয় অবস্থা দেখা দিবে। তার খাদ্যে অরুচি থাকিবে, দেহের পুষ্টি হইবে না, ক্ষয়পূরণ হইবে না, নূতন কোষের সৃষ্টি হইবে না। সে দিনদিন রক্তহীন ও দুর্বল হইয়া পড়িবে। আরোগ্য ক্রিয়া বার বার পশ্চাৎ দিকে মোড় নিবে এবং শীঘ্রই যকৃত, কিডনী, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড প্রভৃতি প্রধান যন্ত্রসমূহ আক্রান্ত হইবে।
রোগী যদি সিফিলিটিক হয় তবে তাহার মাথা হইতে গোছা গোছা চুল উঠিতে থাকিবে, বুদ্ধিবৃত্তি নিষ্প্রভ হইয়া আসিবে, যান্ত্রিক ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষত দেখা দিবে।
যদি এই সকল লক্ষণ স্পষ্ট না হয়, অথচ রোগী পূর্বস্বাস্থ্য ফিরিয়া না পায় তবে আমরা বুঝিতে পারি রোগীতে সোরা বিষ ক্রিয়াশীল রহিয়াছে। তাহা ছাড়া সব ধরণের অযৌন প্রাকৃতিক চিররোগ সমূহ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং আদি রোগবীজ সোরা হইতেই ইহাদের উৎপত্তি।



প্রশ্ন- মায়াজম বা উপবিষ চাপা পড়ার কারণগুলি লিখ।

উত্তর: মায়াজম চাপা পড়ার কারণগুলি হইল-
ক) এলোপাথিক বা অন্যান্য বিসদৃশ বিধানে কোন প্রকার চর্মরোগ আশু উপশমের জন্য উহাতে ঔষধি প্রলেপ লাগানো বা কোন ইনজেকশান ব্যবহার করা যাহার ফলে রোগশক্তি অন্তর্মুখী করানো।
খ) মাত্রাতিরিক্ত বিসদৃশ ঔষধ সেবন।
গ) ত্রুটিপূর্ণ ও বৃথা অস্ত্রোপচার করিয়া দেহের বাহিরের কোন স্থানীয় পীড়া - যেমন টনসিল, টিউমার, ফিশ্চুলা, ভগন্দর, প্রভৃতিকে বিলুপ্ত করিয়া পীড়ার গতিকে অন্তর্মুখী করা।
ঘ) ভুল ঔষধ সেবন। যেখানে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হোমিও নীতি অনুযায়ী ব্যবহৃত না হইয়া কেবলমাত্র ২/১টি লক্ষণ সাদৃশ্যে ঔষধ নির্বাচন করিয়া প্রয়োগ করা হয়, সেক্ষেত্রেও লক্ষণ চাপা পড়ে।
ঙ) অনিয়মিত ঔষধ সেবন।
চ) বিনাকারণে বার বার চিকিৎসক পরিবর্তন করা।



প্রশ্ন-  মায়াজম বা উপবিষ চাপা পড়ার ফলাফল লিখ।
বা, মায়াজমসমূহ চাপা পড়িলে ইহার কুফল কি হয় বর্ণনা কর।

উত্তর: চাপা দেওয়ার প্রকৃত অর্থ হইল যে কোনও রোগলক্ষণকে অসদৃশ উপায়ে অপসারণ করা। জীবনীশক্তির বিশৃংখল অবস্থার ফলটিকে অর্থাৎ লক্ষণসমূহ চাপা পড়িলে ইহার নিম্নলিখিত কুফলগুলি দৃষ্ট হয়।
ক) মায়াজমঘটিত রোগলক্ষণ বা রোগের স্বাভাবিক গতিকে পরিবর্তন করিলে জটিল হইতে জটিলতর অবস্থা সৃষ্টি হয়।
খ) রোগের গতি বহির্মুখী হইতে অন্তর্মুখী হয়।
গ) স্পষ্ট রোগ বা স্পষ্ট লক্ষণগুলি অস্পষ্ট বা সুপ্তরূপ ধারণ করে।
ঘ) অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে তথা দেহের গভীরতম তন্ত্রসমূহ পীড়াক্রান্ত হয়।
৬) কখনও কখনও আক্রান্ত অঙ্গের বিপর্যয় সাধন করে।
চ) মায়াজম চাপা পড়িলে কখনও বা রোগীর অকাল মৃত্যুর প্রধান কারণ হইয়া দাঁড়ায়।




প্রশ্ন- মায়াজমঘটিত চর্মপীড়া চাপা পড়ার কুফলটি রোগীতে কি কি মূর্তিতে দেখা দেয়।

উত্তর: সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস ও টিউবারকুলার দোষজ চর্মপীড়া চাপা পড়ার কুফলটি সকল রোগীতে একই প্রকার রূপ লইয়া পরিস্ফুট হয় না।
সোরা দুষ্ট রোগীর চর্মপীড়া চাপা পড়িলে অবিলম্বে মনটিই সরাসরি আক্রান্ত হয়।
সিফিলিস দোষে দুষ্ট রোগীর চর্মপীড়া চাপা পড়িয়া স্নায়ু কেন্দ্রের বুদ্ধির পথটি সর্বপ্রথম অবরুদ্ধ হইয়া যায় এবং তাহার পর বিষন্নতা, নিরোৎসাহ ও বুদ্ধির স্থূলত্ব দেখা দেয়।
সাইকোসিস দোষজ রোগীর চর্মপীড়া চাপা দিলে প্রথমতঃ স্নায়ুকেন্দ্র এবং তাহার পর হৃদযন্ত্র, যকৃত ও প্রজনন যন্ত্র আক্রান্ত হয়।
টিউবাকুলার দোষজ সকল রোগীর চর্মপীড়া চাপা পড়ার প্রভাবটি ব্যক্তিগত অবস্থার উপর নির্ভরশীল। কেননা ঐ দোষটি প্রবণতাকারে চলিতে থাকা কালে চর্মপীড়া চাপা পড়িলে গভীরতম পেশীসমূহে ধ্বংসমুখী ক্ষতলক্ষণ বিকাশ লাভকরে এবং সর্ব সম্পূর্ণ ক্ষয়াবস্থায় ঐ প্রকার চাপা দেওয়া হেতু ঐ ধ্বংস কার্যটি অধিকতর দ্রুতগতিতে সুসম্পন্ন হইতে দেখা যায়।



প্রশ্ন- বিভিন্ন মায়াজম বা উপবিষ কখন ও কিভাবে সংমিশ্রিত হয়?

উত্তর: বিভিন্ন মায়াজমের মধ্যে সোরাই একমাত্র আদি রোগ প্রসবিনী সকল রোগের জননী। সোরার প্রথম পরিচয় মনে। যতদিন মানুষ প্রকৃতি প্রদত্ত বস্তুতে সন্তুষ্ট ছিল ততদিন পর্যন্ত মনুষ্যমন একটি শৃংখলা ও শান্তির আবাসভূতিতে পরিগণিত ছিল। যখনই মনুষ্য মনের অন্তস্থলে একটি অস্থিরতা বা মানসিক কণ্ডুয়নের অনুভূতি জাগ্রত হইল, অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাইবার ব্যাকুলতাপূর্ণ কামনা বা মানসিক চঞ্চলতা বা মনের কণ্ডুয়ন বহিঃপ্রকাশিত হইয়া
বাহ্যদেশে উদ্ভেদ আকারে বিকশিত হয়। এই উদ্ভেদপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ অর্থাৎ চুলকানি বা খোসপাঁচড়া সোরার ফল। যদি ভুল করিয়া অচিকিৎসার সাহায্যে ঐ ফলটিকে বা আরোগ্য গতিকে বাধা দেওয়া হয় তবে দেহাভ্যন্তরে অবস্থিত অন্য যন্ত্রাদি সহজেই আক্রান্ত হয়। মনটিকে বিপথগামী করাই সোরার প্রথম পরিচয়। সোরাদুষ্ট মন থাকে পঙ্গু, অসামঞ্জস্য কাল্পনিক চিন্তায় বিভোর, মমত্ববোধের একান্ত অভাব, স্বার্থপরতায় পূর্ণ। নীতিভঙ্গের সূচনা মনোমধ্যে অংকুরিত হইয়া দেহে আসিয়া তাহা পল্লবিত ও কুসুমিত হয়। নানা প্রকার ব্যাধিলক্ষণ দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্রে প্রকাশ পায় এবং যৌবনে অন্য দুইটি দোষ গনোরিয়া বা সিফিলিস দোষদ্বয়ের বীজ বপন করিয়া সোরাই দেহটিকে শতসহস্র ব্যাধির উর্বর ভূমিতে পরিণত করে।
দূষিত সংসর্গের ইচ্ছাটি সোর। দোষই মনুষ্য মনে উৎপন্ন করিয়া থাকে। সাধারণতঃ দূষিত সংসর্গ ও গণিকালয়ে গমন করার ১০/১৫ দিনের ভিতর জননেন্দ্রিয় পথে জ্বালাজনক স্রাব ও ক্ষত লক্ষণ দেখা দেয়। এই স্রাবটি অপচিকিৎসার লুপ্ত করিলে সংক্রামিত ব্যক্তির শরীরে স্থায়ী সাইকোসিস দোষের সৃষ্টি হয়। সোরা দোষজনিত দূষিত সংসর্গের আকাংখা চরিতার্থ করার জন্য দূষিত সংসর্গে গমনের ফলেই এই পীড়ার আবির্ভাব ঘটে। গোপন করার ইচ্ছাটিই সাইকোসিস দোষদুষ্ট রোগী মনের প্রথম পরিচয়। এই গোপনতার পশ্চাতে আছে নীচতাপূর্ণ সংসর্গের ইতিহাস। সেজন্য মনটিতে ভীতি ও সন্দেহভাব বর্তমান থাকে। অসন্তোষ বা চাঞ্চল্যসহ স্মৃতিশক্তির বিপর্যয়, সৎ চিন্তার অভাব, পরিশেষে অনুতাপের কষাঘাতে আত্মহত্যার চিন্তাটি মনোমধ্যে উদয় হয়।
আবার দূষিত সংসর্গের ফলে লিঙ্গমুণ্ডে ক্ষত দেখা দিলে ঐ ক্ষত অসদৃশ বিধানে চাপা দিলে তাহা দোষে পর্যবসিত হয়। ইহা সিফিলিস দোষ। সাইকোসিস ও সিফিলিস দোষের অস্তিত্ব দেহে না থাকিলে সোরা দ্বারা টিউবারকুলার দোষের আবির্ভাব সংঘটিত হইতে পারে না। তাই সোরা দোষ সাইকোসিস ও সিফিলিস দোষকে আহবান করে এবং উহারা আসিয়া উপস্থিত হইলে সোরা উহাদের সাথে মিলিত হইয়া বহুগুণে শক্তিশালী হয় এবং টিউবারকুলার দোষ সৃষ্টি করে। সোরার সহিত সাইকোসিসের মিলন ঘটিলে সাইকোসোরা দোষের উৎপত্তি হয়। টিউবারকুলার দোষের শেষ পরিণতি হইল টিউবারকুলোসিস।
এইভাবে রোগীদেহে বিভিন্ন মায়াজমের একত্রে সংমিশ্রণ ঘটিয়া থাকে।

 সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ