ম্যাগনেসিয়া কার্ব
Magnasia Carb
রাসায়নিক চিহ্ন:- প্রায় (Mg CO3)4 Mg (OH)2+5H₂O
প্রতিশব্দ:- ম্যাগনেশি কার্বনাস, ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট, ম্যাগনেশিয়া হাইড্রিকো-কার্বনিকা, কার্বনেট অব ম্যাগনেশিয়াম।
উৎস ও বর্ণনা:- ম্যাগনেশিয়াম সালফেট এবং সোডিয়াম কার্বনেটের দ্রবণ প্রয়োজন অনুপাতে মিশ্রিত করিয়া ইহা প্রস্তুত করা হয়। এই মিশ্রিত পদার্থ হইতে ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেটের তলানি পাত্রের তলায় জমা হয়। ইহা সাদা বর্ণের কোমল মেটো স্বাদ বিশিষ্ট গন্ধহীন চূর্ণবৎ পদার্থ। ২৫০০ ভাগ পানিতে ইহা দ্রবীভূত হয় কিন্তু সুরাসারে ইহা দ্রবীভূত হয় না।
প্রস্তুত প্রণালী:- কার্বনেট অব সোডা, সালফেট অব ম্যাগনেশিয়া পরিশ্রুত জল প্রভৃতির রাসায়নিক সম্মিলনে এই ঔষধ হোমিও ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে বিচূর্ণ প্রস্তুত হইয়া থাকে। পরে তরল ক্রমে প্রস্তুত হয়।
প্রস্তুতের ফরমূলা:- এফ-৭।
ক্রিয়াস্থান:- ইহা শিশু যুবা সকলের পক্ষেই সমান উপযোগী। নার্ভাস ও খিটখিটে প্রকৃতির লোক এবং যে সকল অত্যন্ত জীর্ণ, শীর্ণ, যাহাদের পেটে কিছুই সহ্য হয় না, দুগ্ধপান করিলেই পেট কামড়ায় পেটে অত্যন্ত বেদনা হয়, মলের সহিত গরহজমের জমা জমা দুধ নির্গত হয়, তাহাদের পক্ষে ইহা অধিক উপযোগী। অন্নপথের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী এবং স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের উপর এই ঔষধের প্রধান ক্রিয়া দেখিতে পাওয়া যায়। অস্ত্রে ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া আম, অতিসার ও অগ্নিমান্দ্য ইত্যাদি উৎপন্ন করে এবং স্ত্রী
রোগী দেখার সময়ঃ প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা-দুপুর ১টা জননেন্দ্রিয়ে উহার প্রভাব বিস্তার করিয়া ঋতুস্রাবের গোলযোগ ঘটায়। যে সকল বালকদিগের শরীরে টকগন্ধ পাওয়া যায় তাহাদের পক্ষে ইহা বিশেষ উপযোগী।
মানসিক লক্ষণ:- ইহার শিশুরা রুগ্ন ও খিটখিটে প্রকৃতির। রোগী মনে করে প্রতিটি জিনিষ যেন ঘুরিতেছে, কেহ যেন চুল ধরিয়া টানিতেছে, মুখের উপর ডিমের লালা যেন শুষ্ক হইয়া রহিয়াছে, দাঁতগুলি যেন লম্বা হইয়া গিয়াছে বা মলদ্বার সূঁচে পূর্ণ হইয়া আছে ইত্যাদি অদ্ভুত অনুভূতি। আঘাত শোক অথবা মানসিক কষ্টের কুফল। অসাড় ভাব।
চরিত্রগত লক্ষণ:-
১। শিশু রুগ্ন ও খিটখিটে প্রকৃতির। শরীরে টকগন্ধ পাওয়া যায়। দুগ্ধপান করিলে তাহা হজম না হইয়া ঐ দুগ্ধই বাহ্য বা বমির সহিত বাহির হইয়া যায়, শেওলা সবুজ বর্ণের মলত্যাগ হয়। তাহাতে টকগন্ধ থাকে।
২। স্ত্রীলোকদের জরায়ু পীড়া বশতঃ স্বাস্থ্য ভঙ্গ হইয়াছে, সংসারের নানা চিন্তা
ভাবনায় ও শোকে তাপে দুর্বল ও অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে।
৩। প্রতি তৃতীয় সপ্তাহে রোগ লক্ষণ পুনঃ আবির্ভাব হয় (উদরাময়)।
৪। সমস্ত শরীরে ক্লান্তি ও বেদনাবোধ, হাতে পায়ে বেদনা অধিক কামড়ায় ও অস্থির হয়।
৫। পাকস্থলী ও অস্ত্রের আক্ষেপ বশতঃ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর স্রাব নিঃসরণ।
৬। বুক জ্বালা, টক ঢেকুর, টক উদগার, মুখে টক আস্বাদ, টক বমি, টক গন্ধ ঘর্ম।
৭। অসম্পূর্ণ নিদ্রা, গাত্রোত্থানের সময় অত্যন্ত ক্লান্তিবোধ।
৮। মাথার চাঁদিতে যেন চুল উপড়াইতেছে এরূপ বেদনা।
৯। প্রতি ঋতুর সময় গলায় ঘা ও বেদনা হয়। ঋতু আরম্ভ হইলেই উহা কমিয়া যায়।
১০। রাত্রিতে রজস্রাব।
প্রয়োগক্ষেত্র:- শিশু উদরাময়, অম্ল ও অজীণের পীড়া, স্ত্রীপীড়া, দন্তপীড়া, বাত, শ্বাসযন্ত্রের পীড়া, বেদনা, চর্মপীড়া, জ্বর প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা প্রয়োগ হয়।
শিশুচিত্র:- ম্যাগনেশিয়া শিশুর ধাতুপ্রকৃতি বা শিশুচিত্র: শিশুকালে যে সকল ঔষধ প্রয়োগের ফলে শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সুন্দর ও সবল হয় ম্যাগ কার্ব তাহদের মধ্যে অন্যতম। ম্যাগ কার্বের শিশুর বিশেষত্ব এই যে-
১। শিশুর মেজাজ বড় খারাপ থাকে, তাহাকে ঘুরাফেরা করাইলে তুষ্ট হয়।
২। দুধ ও মাংস জাতীয় খাবারে তাহার অধিক রুচি, কিন্তু হজম করিতে পারে
৩। নিতন্তই শীত কাতর, অথচ খোলা বাতাসের জন্য প্রবল আকাংখা।
৪। অতিশয় ক্লান্ত এবং সেই অনুপাতে খিটখিটে।
৫। গরমে থাকিতে ভালবাসে এবং নিদ্রার পর ক্লান্তি ও অশান্তির বৃদ্ধি।
৬। দুধ পানে পেটে ব্যথা হয় অথবা বদ হজম অবস্থায় বমি হয়।
৭। পায়খানা সবুজ বর্ণের ও টক গন্ধযুক্ত।
শিশু উদরাময়ে:- শিশুর উদরাময়ে ম্যাগ কার্বের লক্ষণ: শিশু উদরাময়ে ম্যাগনেশিয়া কার্ব অতি উত্তম। ইহার পায়খানার রং সবুজ ও ফেনা ফেনা, তাহার উপর ডিমের মত সাদা বা সাদা দধির মত এক প্রকার পদার্থ দেখা যায়। কখনও কখনও সবুজ রং এর পায়খানার উপর কলাইয়ের খোসার মত এক প্রকার পদার্থ ভাসে। পায়খানার পূর্বে পেটে ভয়ানক শূল বেদনার মত ব্যথা হয়। পায়খানার গন্ধ টক, শিশুর গায়ে পর্যন্ত টক গন্ধ থাকে। শিশু দুধ পানের পর অজীর্ণ দুধ পায়খানা করে। রোগী অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়ে।
অজীর্ণের:- অম্ল ও অজীর্ণের পীড়ায় ম্যাগ কার্বের লক্ষণ: ইহার রোগী তৈলাক্ত কোন জিনিষ-আলু, আটা-ময়দা, ভাজা ডাল ইত্যাদি কোন কিছু খাইবার পরই বুক জ্বালা আরম্ভ হয় এবং টক ঢেকুর উঠে। ধীরে ধীরে রোগীর পেটে বায়ু জমিতে থাকে এবং শূল বেদনার ন্যায় এক প্রকার ব্যথা অনুভূত হয়। এই ঔষধে লিভারের গোলযোগও থাকে। খাদ্যদ্রব্য ভালভাবে হজম হয় না বলিয়া শিশু ক্রমশ দুর্বল ও শীর্ণ হইয়া পড়ে।
স্ত্রীপীড়ায়:- স্ত্রীপীড়ায় ম্যাগ কার্বের প্রয়োগ লক্ষণঃ ঋতু আরম্ভ হইবার পূর্বে রোগীর গলায় ঘা ও ব্যথা হয়। রোগীর ঋতুস্রাব সময় মত হয় না, অনেক দেরীতে হয় এবং অনেক দেরীতে হয় এবং অনেক দিন পর্যন্ত থাকে। ইহাতে রাত্রিকালে স্রাব খুব বেশী হয়। স্রাব দেখিতে আলকাতরার ন্যায় দেখায়। ভ্রমণকালে স্রাব থামিয়া যায়। রক্তপ্রদর ভিন্ন শ্বেতপ্রদর হইলে স্রাব ঘন শ্লেষ্মার ন্যায় দেখায়। ম্যাগনেশিয়া প্রয়োগ করিলে এই রোগে ভাল ফল পাওয়া যায়।
না।
দন্তপীড়ায়:- এই পীড়া বিশেষ করিয়া যদি গর্ভাবস্থায়, বিশ্রামে, রাত্রিকালে এবং ঠাণ্ডায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তাহা হইলে ম্যাগনেশিয়া কার্ব উপকারী। রোগীর দাঁতে অসহ্য বেদনা হয়, মনে হয় দাঁতগুলি যেন বেশ দীর্ঘ হইয়া গিয়াছে। আক্কেল দাঁত বাহির হইবার ব্যাথায়ও ইহা বেশ উপকারী।
বাতপীড়ায়:- বাতপীড়ায় ম্যাগ কার্বের লক্ষণ: ইহার ব্যথা রাত্রিকালে বেশী বৃদ্ধি পায়। একটু এদিক-সেদিক ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়াইলে ব্যথা উপশম হয়। বিশেষ করিয়া ডান কাঁধের সন্ধিবাতে এবং পেশীর বাতে ইহা বেশ উপকারী।
শ্বাসযন্ত্রের:- শ্বাসযন্ত্রের পীড়ায় ম্যাগ কার্বের লক্ষণ: গলার মধ্যে সুড়সুড় করে ও
কাশি হয়, সেই সাথে লোনা স্বাদবিশিষ্ট শেঙ্খা বাহির হয়। বুকের ক্যাথা নড়িলে-চড়িলে বাড়ে এবং টাটানি বেদনা হয়। শ্বাস কষ্ট হয়।
বেদনার:- ম্যাগ কার্বের বেদনার প্রকৃতি: ইহার সকল প্রকার বেদনা যেমন-মাথা, মুখ, দাঁত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ইত্যাদি সকল স্থানের বেদনা ঠাণ্ডায় ও চুপ করিয়া বসিয়া বা শুইয়া থাকিলে অনেক বৃদ্ধি পায়। তাই রোগী ক্রমাগত এদিক-সেদিক নড়াচড়া ও পায়চারী করিতে থাকে।
শুষ্কতা ও শীর্ণতা:- ক্রমিক শুষ্কতা ও শীর্ণতা প্রাপ্তি পুঁঞে পাওয়া: কোন ছোট শিশুর অম্লাজীর্ণ রোগ হইলে তাহার এটিই পীড়া এই ধারণার বশবর্তী হইয়া তাহাকে আরোগ্য না করিয়া অম্লটিকে দূর করিয়া যদি মনে করা হয় তাহাকে আরোগ্য করা হইয়াছে, তবে শিশুটি টিউবারকুলার পথ অবলম্বন করিবেই এবং পুঞে পাওয়া পীড়ায় অকালে প্রাণ হারাবে। এক্ষেত্রে অম্লাজীর্ণটি একটি অভিব্যক্তি কিন্তু তার ভিতর টিউবারকুলার রোগটি প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে সেটিই প্রধান পীড়া। এক্ষেত্রে টিউবারকুলার পিতামাতা হইতে জন্ম হইলে ম্যাগ কার্বের ক্ষেত্রে ভাল করা সম্ভব। পুঞে পাওয়া পীড়ায় ছেলে বেশ ক্ষুধা ও যথেষ্ট আহার সত্বেও ক্রমেই দুর্বল হইয়া যায়। সন্ধ্যার প্রাক্কালে মৃদুভাবের জ্বর। শুষ্ক কাশি অবসাদ ইত্যাদি আসিয়া উপস্থিত হয়। তখন লোক ও নিজের যেন সন্দেহ হয় যে, নিশ্চয় ক্ষয়পীড়া আসিয়াছে। এই অবস্থায় অম্লাজীর্ণটি বজায় থাকে। তাছাড়া যকৃত বেদনা, সর্বদাই বুভুক্ষা, বিশেষতঃ জান্তব খাদ্য প্রভৃতিতে অদম্য ইচ্ছা ইত্যাদি বিশিষ্ট লক্ষণ।
প্রান্তদেশে:- প্রান্তদেশে ম্যাগ কার্বের লক্ষণ: কাঁধে প্রচণ্ড ছিন্নকর বেদনা যেন উহা
সন্ধিচ্যুত হইয়া গিয়াছে। ডানকাঁধের সন্ধিতে বেদনা অত্যন্ত তীব্র থাকে যেন হাত উপরের দিকে উঠানো যায় না। হাঁটুর বক্র অংশে বেদনা, মাথার তালুর চুল যেন উপড়াইয়া ফেলিতেছে, হস্তপদে অধিক বেদনা ইত্যাদি।
বৃদ্ধি:- ম্যাগ কার্বের বৃদ্ধি বা উপচয়: ঋতু পরিবর্তনে, ঠাণ্ডায়, স্থির হইয়া থাকিলে, বিছানার গরমে প্রভৃতি।
উপশম:- ম্যাগ কার্বের উপশম: হাঁটা চলায়, গরম বাতাস, দন্তশূল-ঠাণ্ডা পানি মুখে রাখিলে, উদরশূল-টিপিলে ইত্যাদি।
অনুপূরক:- ম্যাগ কার্বের অনুপূরক ঔষধ ক্যামোমিলা।
ক্রিয়ানাশক:- মার্ক, নাক্স, ক্যামো, পালসেটিলা ইত্যাদি।
ক্রিয়াস্থিতিকাল:- ৪০ হইতে ৫০ দিন।
শক্তি:- ৬ হইতে ২০০ শক্তি।
0 মন্তব্যসমূহ