এন্টিমোনিয়াম ক্রুড
Antimoniam Crud
রাসায়নিক চিহ্ন:- Sb2 S3
প্রতিশব্দ:- এন্টিমোনি সালফিডাম, সালফাইড অব এন্টিমোনি, এন্টিমোনিয়াম সালফারেটাম, এন্টিমোনিয়াম সালফাইড। বাংলা-সুর্মা।
উৎস ও বর্ণনা:- সুর্মা বা এন্টিমোনি সালফিডাম হইতে ইহা প্রস্তুত হয়। প্রকৃতির মধ্যে এন্টিমোনিয়াম সালফাইড পাওয়া যায়। ইহা একটি খনিজ পদার্থ। ক্রুড আকারে খনি হইতে সংগ্রহ করা হয়। দ্রবণের সাহায্যে ইহাকে বিশুদ্ধ করা হয়। স্ফটিকাকার উজ্জ্বল এই পদার্থ জলে অদ্রবণীয় কিন্তু কেন্দ্রীভূত গরম হাইড্রোক্লোরিক এসিডে যখন হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তুত হয় তখন ইহা দ্রবীভূত হয়। কাঠ কয়লার উপর তাপ দেওয়া হইলে ইহা গলিয়া সালফার অক্সাইডের উৎক্ষিপ্ত সাদা বাষ্পে পরিণত হয়।
প্রস্তুত প্রণালী:- ক্রুড এন্টিমোনি বা ব্ল্যাক সালফাইড অব এন্টিমোনি নামক খনিজ পদার্থ হইতে ইহা প্রস্তুত হইয়া থাকে। ১ ভাগ সালফাইড অব এন্টিমোনির সহিত ৯ 'ভাগ দুগ্ধ শর্করা মিশ্রিত করিয়া ইহার চূর্ণ প্রস্তুত করা হয়। ৬% পর্যন্ত চূর্ণ প্রস্তুত করিয়া তৎপর তরল ক্রম প্রস্তুত করা হয়।
প্রুভার:- ডাঃ হ্যানিমান তাঁহার সঙ্গী ক্যাসপারীকে নিয়া ১৮২৮ সালে ইহা প্রভকরেন।
প্রস্তুতের ফরমূলা:- বিচূর্ণ-৭।
ক্রিয়াস্থান:- এন্টিম ক্রুডের প্রধান ক্রিয়াস্থান পাকস্থলী। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ও চর্মের উপরও ইহা ক্রিয়া প্রকাশ করে এবং এই ক্রিয়া বশতঃ অস্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী শ্লেষ্মাপূর্ণ হইয়া পরিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়।
ধাতু প্রকৃতি:- এন্টিম ক্রুড একটি এন্টিসোরিক ঔষধ। মোটা ও চ্যাপ্টা ধরনের শিশু, বাত প্রধান ব্যক্তি, যে সকল লোকের সূর্যের উত্তাপ সহ্য হয় না, রৌদ্রে পরিশ্রম করিলে অসুখ করে তাহাদের পীড়ায় ইহা সুন্দর কাজ করে। আবার শীতল জলে স্নান করা বা সাঁতার কাটার জন্য পীড়া হইলেও ইহা উপকারী। এন্টিমের রোগীর মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে এবং সেই সঙ্গে সমস্ত জিহ্বা দুধের মত সাদা ময়লাবৃত থাকে। যে সকল রোগীর পরিপাকযন্ত্রের ক্রিয়ার বিকৃতি ঘটিয়া (অতিরিক্ত আহারের ফলে) পরিপাক ক্রিয়া বন্ধ থাকে, ভুক্ত দ্রব্যের আস্বাদযুক্ত ঢেকুর উঠে, এবং রোগী দম সম করিতে থাকে-রোগী মনে করে যে আহার করিয়াছে তাহা বমি করিয়া ফেলিলে ভাল হইত সে সকল রোগীতে এন্টিম অত্যাশ্চার্য ঔষধ।
প্রয়োগ ক্ষেত্র:- অজীর্ণ, ভেদ ও পাকস্থলীর যাবতীয় পীড়া, কোষ্ঠবদ্ধতা, একজিমা ও অন্যান্য চর্মপীড়া, দন্তপীড়া, স্ত্রীরোগ, জ্বর, শ্বেতবর্ণ জিহ্বা প্রভৃতিতে ইহা উপকারী।
মানসিক লক্ষণ:-
১। ইহার মনটি বড়ই বিষণ্ণ ও সর্বদাই নিরাশায় পরিপূর্ণ, এমনকি অত্যন্ত আনন্দজনক অবস্থাতেও রোগীর মনটি মোটেই প্রফুল্ল হয় না। বিমর্ষ ভাব।
২। জীবনের প্রতি ঘৃণা এবং আত্মহত্যা পর্যন্ত করিতে ইচ্ছুক হয়। নৈরাশ্য হেতু মৃত্যু কামনা।
৩। বয়স্ক ব্যক্তিরা জ্যোৎস্নাপুত রাত্রে ভাব প্রবণ হইয়া পড়ে এবং তখন হয়ত কবিতা আবৃত্তি করিতে থাকে।
৪। ইহার শিশু রোগী খুবই ক্রোধি। এমনকি তাহার প্রতি সামান্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেও বা নাড়ী দেখিতে চাহিলেও চটিয়া যায়।
৫। পাগলের ন্যায় আচরণ। অন্যের সহিত আলাপে অপবৃত্তি। রোগী ক্রন্দনশীল।
৬। কোন কোন রোগীর জননেন্দ্রিয়ের উত্তেজনাসহ অল্প অল্প প্রেম বিকারের লক্ষণ দেখা দেয়। মনে হয় কোন সুন্দরী তাহার, প্রেমাধীন বহিয়াছে।
চরিত্রগত লক্ষণ:-
১। ছেলেরা অত্যন্ত রাগী ও খুঁতখুঁতে। পূর্ণ বয়স্ক গণ সদাই মনমরা, দুঃখিত ও রুষ্ট, কথায় কথায় কান্না। ছেলে শীঘ্র শীঘ্র মোটা হয়।
২। ঠাণ্ডা জলে স্নান করাইলে শিশু ক্রন্দন করে কিন্তু গরম জলে স্নান করাইলে বড় একটা কাঁদে না।
৩। নাসিকার ভিতর, ঠোঁটের মধ্যভাগ ফাটা, তথায় মামড়ি পড়ে।
৪। আঙ্গুলের নখ, ঠোঁটের কোণ ও নাসারন্ধ্রের ধার ফাটা।
৫। দুধ, ঘি, মিষ্টি, মাংস প্রভৃতি ভুরি ভোজন জনিত পেটের পীড়া।
৬। ঠাণ্ডায় পীড়ার বৃদ্ধি, স্নানে অনিচ্ছা।
৭। অত্যধিক শীতে বা গ্রীষ্মে পীড়া বৃদ্ধি।
৮। পায়ের তলায় কড়া ও বেদনা, সেজন্য চলিতে কষ্ট।
৯। অম্লদ্রব্য খাওয়ার ইচ্ছা, কিন্তু সহ্য হয় না। পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠবদ্ধতা ও উদরাময়
১০। হামের ন্যায় উদ্ভেদ নির্গমন ও মাথায় একজিমা।
১১। গা বমি বমি ও সেই সঙ্গে জিহ্বা দুধের ন্যায় সাদা ক্লেদে আবৃত। তরল বাহ্যের সহিত কঠিন বাহ্য ও আম মিশ্রিত মল।
জিহ্বার বিশেষত্ব:- এন্টিম ক্রুডের জিহ্বার বিশেষত্ব এই যে, জিহ্বায় সাদা বর্ণের লেপ থাকে। এন্টিম ক্রুডের ন্যায় এত সাদা বর্ণের জিহ্বা আর অন্য কোনও ঔষধেই নাই। ইহার জিহ্বা যেন চুনকাম করার মত দেখায়।
পাকস্থলীর পীড়ায়:- অতিরিক্ত ভোজন করিবার বা ঘৃত, দুগ্ধ, মিষ্টি মাংস ইত্যাদি গুরুপাক দ্রব্য আহার করিয়া পাকস্থলীর পীড়া হইলে এন্টিম ক্রুড মহোপকারী। রোগী আহারের পর অসুস্থ বোধ করে, বার বার উদ্গার তুলিতে থাকে ও উদ্যারের সহিত ভুক্ত দ্রব্যের গন্ধ ও আস্বাদ পায় এবং রোগী মনে করে যাহা খাইয়াছে তাহা বমন হইয়া না গেলে কিছুতেই উপশম হইবে না। রোগীর জিহ্বা সাদা ও পুরু ক্লেদযুক্ত। সামান্য আহার করিলে বা আহার না করিলেও পেটটি বড় ভার বোধ হয়। ইহা ছাড়া সর্বদা বমি বা বিবমিষার ভাব ও তৎসহ অক্ষুধা এবং পিপাসাহীনতা বর্তমান থাকে। ঐ প্রকার বমিতে ইহার পেটের ভারটি মোটেই কমে না। ইহার শিশু রোগী দুগ্ধ পর্যন্ত হজম করিতে পারে না, দুগ্ধ পানের কিছুক্ষণ পরেই উহা অম্লযুক্ত বমি আকার বাহির হইয়া যায়। এই সকল লক্ষণের সহিত শিশু বড়ই খিটখিটে হইয়া পড়ে এবং সর্বদাই ঘিন ঘিন করিতে থাকে। গ্রীষ্মকালে উদরাময় দেখা দেয়, মল কিছুটা শক্ত ও কতক তরল হইয়া হইয়া থাকে। মলের সঙ্গে জমা দুধের কুচি মিশ্রিত থাকে, সে জন্য মলের রং সাদা দেখায়। ঠোঁটের কোণ বা নাসিকার ছিদ্রের ধার ফাটা থাকে। আহারের পর, অম্লস্বাদযুক্ত ফল ভোজনে ও ঠাণ্ডা পানিতে স্নানে উদরাময়ের বৃদ্ধি হয়। এন্টিম ক্রুডের শিশুদের উদরাময় লক্ষণ শেষ পর্যন্ত আমাশয়ে পরিণত হয়। ইহা ছাড়া কোষ্ঠবদ্ধতা ও উদরাময় এই দুইটি অবস্থাই পর্যাক্রমে আসা যাওয়া করে। উত্তম ক্ষুধা, কিন্তু পাকস্থলীর উর্ধাংশ ও বুক জ্বলে, যেন অম্বল হইয়াছে।
এন্টিম ক্রুডের সহিত ইপিকাক ও ইথুজা:-
এন্টিম ক্রুড- আকণ্ঠ ভোজনের বা অতিরিক্ত আহারের দোষে পাকস্থলীর পীড়ার সহিত বমি বমি ভাব, জিহ্বায় সাদা বর্ণের লেপ থাকে। রোগী মনে করে যাহা খাইয়াছে তাহা বমন না হইয়া গেলে কিছুতেই উপশম হইবে না। বার বার উদ্দ্গার তোলে এবং উদ্দ্যারের সহিত ভুক্ত দ্রব্যের গন্ধ ও আস্বাদ পায়। বমি বমি ভাবের সহিত অক্ষুধা ও পিপাসাহীনতা। শিশু রোগী দুগ্ধ পর্যন্ত হজম করিতে পারে না। কেননা দুগ্ধ পানের কিছুক্ষণ পরেই উহা অম্ল গন্ধযুক্ত বমি আকারের বাহির হইয়া যায়। পেটটি বড়ই ভারবোধ। বমি হওয়া সত্বেও উপশমের অভাব ইহার রোগীর বৈশিষ্ট্য।
ইপিকাক- বমি অপেক্ষা গা বমি ভাব বেশী। বমি করিয়াও গা বমি বমি থাকে। জিহ্বাটি প্রায়ই পরিষ্কার থাকে। বমির পূর্বে বা পরে সমভাবেই গা বমি বমি করে।
ইথুজা- বমি ও গা বমি বমি খুব বেশী। শিশুরা দন্তোদামের সময় ছানা কাটা,' চাপচাপ বমির পরই বড়ই দুর্বল হইয়া ঘুমাইয়া পড়ে এবং নিদ্রাভঙ্গের পর পুনরায় খাইতে চায় এবং তাহার পর পুনরায় ঐ একই প্রকার বমি করে ও অবসন্ন হইয়া পড়ে। ইহার জিহ্বায় এন্টিমের মত সাদা লেপ থাকে না।
পীড়া:- শিশুদের জিহ্বার বর্ণ সাদা, ঠিক যেন সমস্ত জিহ্বাটি দুধ মাখানো। ইহার শিশুরা সদাই রাগী, ক্ষুন্ন, খিটখিটে, কেহ তাহার দিকে তাকাইলে ক্রুদ্ধ হয় ও কাঁদে। নাড়ী প্রায় অনিয়মিত থাকে। ঠোঁটের কোণ ও নাসিকার ছিদ্রের ধার ফাটা থাকে। ইহাতে বমি, কাঠ বমি ও ওয়াক তোলা অধিক, কিছু খাইবা মাত্রা উঠিয়া যায়, শিশু জমা জমা দুধের মত বমি করে, সেই বমির রঙ সাদা, ইথুজার মত নানা রঙের বমি নয় এবং অত জোরেও বমি উঠে না। এন্টিমে বমির পর ক্ষুধা হয়। ইথুজার শিশু বমির পর কিছুক্ষণ ঘুমাইয়া বা নিঝুম হইয়া পড়িয়া থাকে ও তাহার পর জাগিয়া উঠিলেই ক্ষুধা হয় ও স্তন্য পান করিতে চায়। এন্টিমে সেরূপ স্তনদুগ্ধ পান করিতে চায় না, বরং অন্য দুধ খাইতে চাহে। তরল মলের সঙ্গে কতক কঠিন গুটলে মল মিশ্রিত থাকে। বাহ্য পরিমাণে ও অধিক হয়, বাহ্যের সঙ্গে জমা দুধের কুঁচি মিশ্রিত থাকে সেজন্য বাহ্যের রং সাদা দেখায়।
চর্মরোগের বা একজিমা:- এন্টিম ক্রুডের চর্মোদ্ভেদের বিশেষত্ব এই যে, ইহাতে হাত পায়ের তেলোয় শৃংগাকার উঁচু আঁচিলের মত উদ্ভেদ থাকে। মুখে, কানে, নাকে, গণ্ডদেশে, দাঁড়িতে ও মাথার মধ্যে একজিমা, ফোড়া- কিংবা ফোস্কার মত উদ্ভেদ। উদ্ভেদে পুঁজ থাকে। পায়ের তলায় কড়া জন্মায়। চর্মোদ্ভেদের আর একটি বিশেষত্ব এই যে, নখের নীচে শক্ত মাংসের অঙ্কুর গজায় এবং উহা বেদনাযুক্ত। অঙ্গুলির অগ্রভাগ হইতে ক্ষুদ্র শিংয়ের ন্যায় মাংস অঙ্কুর বাহির হয়। চর্মের উপর লাল বর্ণের মাংসল পুঁজবটি প্রদাহ থাকে; হাতের উপর আঁচিল।
স্ত্রীপীড়া:- রোগিনী বড়ই বিষণ্ণ হতাশায় পরিপূর্ণ। জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ও ঘৃণাভাব, আত্মহত্যা করার ইচ্ছা। রোগিনী ক্রন্দনশীল। ঠাণ্ডা জলে স্নান করিলে ঋতুবন্ধ এবং জরায়ুর স্থানচ্যুতি। রোগিনী মনে করে যোনী দ্বার দিয়া যেন নাড়ী বাহির হইয়া যাইবে। মাঝে মাঝে প্রসব বেদনার ন্যায় বেগ ও বেদনা অনুভব হয়। শীতল জলে স্নানের পর ঋতুস্রাব বন্ধ হইয়া শ্বেত প্রদর স্রাব আরম্ভ হয়। স্রাবের সহিত জমাট শ্লেষ্মা থাকে। এই সাথে পাকস্থলীর পীড়াও থাকে। শ্বেত প্রদর স্রাব পাতলা ও ক্ষতকারী।
চক্ষুপীড়া:- চক্ষু ও চক্ষুর পাতা প্রদাহিত, তাহাতে চুলকানি, রাত্রিকালে চক্ষু জুড়িয়া যাওয়া ও প্রাতঃকালে চক্ষুতে আলোক অসহ্যবোধ। শিশুদিগের পুরাতন চক্ষু উঠা রোগে এন্টিম ক্রুড বড়ই উপকারী। এই ঔষধের মানসিক লক্ষণ বর্তমান থাকিলে ইহা অধিকতর উপযোগী। মার্কের ন্যায় কোন চকচকে জিনিসের দিকে চাহিলে কিম্বা রৌদ্রতাপ বা অগ্নি তাপের দিকে দৃষ্টি করিলে চক্ষুর যন্ত্রণা বাড়ে।
জ্বর:- স্বল্প বিরাম ও সবিরাম উভয় প্রকার জ্বরেই ইহা উপকারী। তবে শিশুদের সবিরাম জ্বরে ইহা অধিক উপযোগী। যে জ্বরে পেটের দোষ, জিহ্বায় সাদা লেপ ও রোগী নিদ্রালু থাকে, তাহাতেই এন্টিম ক্রুড অব্যর্থ। জ্বর প্রত্যহ দুই প্রহরে বা বৈকালে আসে এবং একদিন অন্তর প্রায় ঠিক একই সময়ে আসে। শীতাবস্থায় পিপাসা থাকে না, বেলা ১২টার সময় কম্পসহ জ্বর, বিকালে শুধু শীত হইয়াও জ্বর হয়। এই শীতের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে ঘর্ম। উত্তাপ প্রয়োগে শীতের বৃদ্ধি। এ অবস্থায় রোগীর নাক বরফের মত ঠাণ্ডা ও তন্দ্রাবেশ থাকে। উত্তাপাবস্থায়-একবার উত্তাপ পরক্ষণেই ঘর্ম। কখনও রাত্রি দ্বিপ্রহরে প্রবল তাপ, সেই সঙ্গে পা ঠাণ্ডা, বুকে বেদনা ও বমি। জ্বর বিচ্ছেদাবস্থায় খুব ঘাম হয় এবং বমি গা বমি পেট ফোলা ও ব্যথা, ঢেকুর উঠা প্রভৃতি লক্ষণ থাকে। রোগী অম্লদ্রব্য খাইবার ইচ্ছা। ইহাতে পিপাসা প্রায় কোন অবস্থাতেই থাকে না। রোগীয় হয় কোষ্ঠবদ্ধ নয় উদরাময় থাকে, জিহ্বা লেপাবৃত। স্মরণীয় যে ইহার রোগী রাগী ও খিটখিটে, ঠোঁটের কোণে ও নাসারন্ধ্রের ধার ফাটা থাকে অথবা মামড়ি পড়ে।
শিরঃপীড়া:- ইহাতে সর্দিজনিত শিরঃপীড়ার আবির্ভাব হইতে দেখা যায়, ঠাণ্ডা লাগার সঙ্গে সঙ্গেই রোগী নাসিকা বন্ধ হইয়া যায় এবং তৎসহ শিরঃপীড়া দেখা দেয়। স্নান করিলে বা পেটের দোষে মাথা ধরে। ইহার মাথা ধরা ও নাসিকার ঐ প্রকার অবস্থাটি রাত্রিতে গরম ঘরে ও রৌদ্রে বৃদ্ধি পায় এবং মুক্ত বাতাসে ঐ সকল লক্ষণ হ্রাস পায়।
বাতরোগ:- বর্ষাকালে, ভিজা বাতাসে ও শীতল জলে স্নান করিলে ইহার বাতের বেদনা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু চুপচাপ থাকিলে বা সামান্য উষ্ণজলে স্নান করিলে যাতনার উপশম হয়। তরুণ বাতে আঙ্গুলই অধিক আক্রান্ত হয়। তৎসহ পেটের গোলযোগ থাকে। সন্ধ্যার পর, শয়নান্তে কিংবা প্রাতে ঘাড়, পিঠ যেন সাঁটিয়া ধরিয়াছে এমন অনুভব। পুরাতন গেঁটে বাত ধাতুগত হইয়া পড়িলে এবং সেই সঙ্গে নানা সন্ধিস্থানে শক্ত ঢিবলী হইলে ইহা উপকারী। অজীর্ণ রোগের সহিত এইরূপ গেঁটে বাত।
কাশি:- পেট গরম হইয়া কাশির উৎপত্তি, প্রাতে দমকা কাশি। প্রথমে খুব বেশী বেশী কাশি হইয়া ক্রমশঃ উহা কমিয়া আসে। তাহাতে প্রচুর গয়ার উঠে। নাকের ভিতর হলদে রঙের শ্লেষ্মা জমে। ব্রংকাইটিস বা হুপিং কাশিতে যখন প্রত্যেক বারের কাশিতে সমস্ত শরীরে ঝাঁকানি লাগে, জিহ্বায় পুরু ময়লা জমে এবং পেটের গোলমাল থাকে তখনই এন্টিম উপযোগী।
পদতলে:- পাকা রাস্তা দিয়া কিংবা পাথরের উপর দিয়া চলিয়া পায়ের তলায় বেদনা। বেদনা টিপিলে তত বুঝা যায় না, কিন্তু চলিবার সময় অত্যন্ত বেদনা অনুভব। পায়ের গোড়ালীতে বেদনা, পায়ে বেদনাযুক্ত কড়া। উত্তাপ প্রয়োগে শীতের বৃদ্ধি। এ অবস্থায় রোগীর নাক বরফের মত ঠাণ্ডা ও তন্দ্রাবেশ থাকে। উত্তাপাবস্থায়-একবার উত্তাপ পরক্ষণেই ঘর্ম। কখনও রাত্রি দ্বিপ্রহরে প্রবল তাপ, সেই সঙ্গে পা ঠাণ্ডা, বুকে বেদনা ও বমি। জ্বর বিচ্ছেদাবস্থায় খুব ঘাম হয় এবং বমি গা বমি পেট ফোলা ও ব্যথা, ঢেকুর উঠা প্রভৃতি লক্ষণ থাকে। রোগী অম্লদ্রব্য খাইবার ইচ্ছা। ইহাতে পিপাসা প্রায় কোন অবস্থাতেই থাকে না। রোগীয় হয় কোষ্ঠবদ্ধ নয় উদরাময় থাকে, জিহ্বা লেপাবৃত। স্মরণীয় যে ইহার রোগী রাগী ও খিটখিটে, ঠোঁটের কোণে ও নাসারন্ধ্রের ধার ফাটা থাকে অথবা মামড়ি পড়ে।
বৃদ্ধি:- আহারান্তে, ঠাণ্ডা জলে স্নানে, অম্লদ্রব্যে, রৌদ্রে, গরম ঘরে, শীত গ্রীষ্মের আতিশয্যে, তৈলাক্ত খাদ্যে, অগ্নির উত্তাপে। গরমের দিনে রোগী বড়ই দুর্বল হইয়া পড়ে অথচ ঠাণ্ডা বিশেষতঃ শীতল জলে স্নানও পছন্দ করে না, কারণ তাহাতে সকল কষ্টের বৃদ্ধি হয়।
হ্রাস:- বায়ু সেবনে, বিশ্রামে, গরম জলে, জ্যোৎস্নাপুত রাত্রে।
অনুপূরক:- মার্কুরিয়াস, সালফার, পালসেটিলা।
পরবর্তী:- ল্যাকেসিস, মার্কুরিয়াস, পালসেটিলা, সিপিয়া, সালফার।
ক্রিয়ানাশক:- ক্যালকেরিয়া, হিপার, মার্কুরিয়াস, পালসেটিলা।
ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ৪০ দিন।
শক্তি বা ক্রম:- ৬-২০০ শক্তি।
0 মন্তব্যসমূহ