ইপিকাক - Ipecacuanha, প্রথম বর্ষ

             

                                        ইপিকাক
                                    Ipecacuanha



প্রতিশব্দ:- ইপিকাক, ক্যালিকোকা ইপিকাকুয়ানহা, সিফাইলিস এমিটিকা, ব্রাউন ইপিকাক, ডিসেন্টেরিকা।

গাছের বর্ণনা:- ব্রাউন ইপিকাক নামক গাছড়ার শুষ্ক মূল হইতে ইহা প্রস্তুত হয়। ইহা ২ হইতে ৩ ফুট লম্বা কাণ্ডা বিশিস্ট এক জাতীয় গাছড়া। ইহার মূল বিস্তৃত, কিছুটা শাখাময় এবং মাটির মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট, অনেকটা রাজহংসের পালকের ন্যায় পাকানো। পাতাগুলি বৃত্তযুক্ত, বিপরীতমুখী, অণ্ডাকৃতি এবং অগ্রভাগ সূঁচালো। এই সকল পাতা ৩ হইতে ৪ ইঞ্চি লম্বা, ১ হইতে ২ ইঞ্চি চওড়া, উপরিভাগ অমসৃণ এবং কৃষ্ণ সবুজ বর্ণের, নীচের ভাগ ফ্যাকাশে। ইহার ফুলসমূহ ১০ হইতে ২০টি সংযুক্ত শীর্ষদেশ সহযোগে অবৃন্তক এবং ছোট সাদা বর্ণের হইয়া থাকে। এই সকল ফুলসমূহ ডাঁটার প্রান্তে ফুটিয়া থাকে এবং ডাঁটার সাহায্যে ফুলগুলি শাখার সহিত যুক্ত থাকে। শুষ্ক মূল ১/৮ ইঞ্চি হইতে ১/৪ ইঞ্চি পুরু হইয়া থাকে। ইহা সূত্রাকৃতি কেন্দ্র এবং আংশিক অথবা সম্পূর্ণভাবে গাঁটযুক্ত পৃষ্ঠদেশ দ্বারা বৃত্তাকারে গঠিত। এই মূল ভঙ্গুর পদার্থ, বাহিরের আবরণ বাদামী এবং ভিতরের আবরণ সাদা ধূসর বর্ণের হইয়া থাকে।

প্রাপ্তিস্থান:- ভারতবর্ষে মাংপু এবং পশ্চিমবঙ্গে, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আমেরিকার উপরের অংশে এই সকল গাছড়ার চাষ হইয়া থাকে।

প্রুভার:- মহাত্মা হ্যানিমান ১৮০৫ সালে ঔষধটি প্রুভ করেন।

প্রস্তুত প্রণালী:- উপরিউক্ত গাছড়ার শুষ্কমূল হইতে সুরাসার সহযোগে মূল অরিষ্ট প্রস্তুত হয়। পরবর্তী শক্তিসমূহ মূল অরিষ্ট হইতে ফার্মাকোপিয়ার নিয়মানুসারে পরিশ্রুত সুরাসারের সহিত প্রয়োগ হয়। বিচূর্ণাকারেও ঔষধটি প্রস্তুত করা হয়।

প্রস্তুতের ফরমূলা:- এফ-৪।
 
ইপিকাক:- ইহা একজাতীয় গাছড়ার শুষ্ক মূল হইতে প্রস্তুত। অধিকমাত্রায় সেবন করিলে বমি হয়। ইপিকাকে যে এলকোলয়েড পাওয়া যায় তাহাকে 'এমেটিন' বলে। ইপিকাকে এই পদার্থ থাকে বলিয়াই বমন হয়। ইহা একটি বমনকারক ঔষধ।

ক্রিয়াস্থান:- নিউমোগ্যাষ্ট্রি স্নায়ুতে ইহার প্রধান ক্রিয়া। পাকস্থলী ও বায়ুনালীর উপর ইহা ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া থাকে। তাহা ছাড়া যে কোনও স্থানে ইহা রক্তস্রাব ঘটাইতে পারে এবং রক্ত টকটকে লাল থাকে।

মানসিক লক্ষণ:- খিটখিটে মেজাজ, প্রত্যেক বস্তুকে অবজ্ঞা করে। রোগীর মনে বহুবিধ কামনা থাকে কিন্তু কি বিষয়ে তাহা জানে না। রোগীর ভিতরে যেন একটি ছন্দোভঙ্গ হইয়াছে। যেন একটা অশান্তি হইয়াছে। ক্ষুধা ও পরিপাক কার্য বিশৃঙ্খলা হইয়া উঠায় মনের সুখ নাই। এই প্রকার ছন্দোভঙ্গ অবস্থা হইতে নিরন্তর মৃত্যুভয়, অবিরত বিবমিষা ও বমন, সর্বদাই অরিস্থতা, ব্যাকুলতা ইত্যাদি অবস্থা আসিয়া জোটে।

চরিত্রগত লক্ষণ:- 
সকল পীড়াতেই অনবরত গা বমি বমি। মাথা সামান্য নীচু করিলেই বমির উদ্রেক হয়।
২। জিহ্বা প্রায়ই পরিস্কার থাকে, অথচ লালাস্রাব হয়।
৩। মল ঘাস ছেঁড়ার ন্যায় সবুজ ও থুথুর মত বুজবুজে। সেই সঙ্গে গা বমি বমি। পেট কামড়ানি ও নাভির চারিদিকে খামচানি। পেট ফাঁপা।
৪। বুকে শ্লেষ্মা ঘড়ঘড় করে, ছোট শিশুগণ সর্দিতে বমি করে। হুপিং কাশি।
৫। রোগীর পিপাসা থাকে না।
৬। রোগীর কোমরে ও পিঠে বেদনা হয়, সেই সঙ্গে শীতল ভাব। জ্বরে বহুক্ষণ স্থায়ী উত্তাপ কিন্তু অল্পক্ষণ স্থায়ী শীত। উত্তাপাবস্থায় শিরঃপীড়া, পিপাসা, গা বমি বমি, কাশি এবং জ্বর ছাড়িবার সময় ঘর্ম থাকে।
৭। মুখে ও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ।
৮। হাঁপানি কাশিতে বুকে সাঁই সাঁই শব্দ।
৯। শরীরের সকল স্থান হইতে উজ্জ্বল লাল বর্ণের রক্তস্রাব।
১০। শীত গ্রীষ্ম উভয়ই অসহ্য।
 
প্রয়োগক্ষেত্র:- সর্দিজ্বর, সবিরাম জ্বর, রক্তস্রাব, হাঁপানি কাশি, হুপিং কাশি, বমন, উদরাময়, শিরঃপীড়া, আমাশয়, রক্তবমন প্রভৃতিতে ইহা প্রয়োগ হয়।

শ্বাসকষ্টে লক্ষণ:- শ্বাসকষ্টে ইপিকাক একটি ঔষধ। শিশুদের নিমোনিয়া, কষ্টকর শ্বাসপ্রশ্বাস, বুকে ঘড়ঘড় শব্দ, হাঁপানি, টান, গা বমি বমিসহ মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে প্রভৃতি লক্ষণে উপকারী। হাঁপানীতে প্রবল টান, শ্বাসকষ্ট, দম আটকান ভাব, বুকে সাঁই সাঁই ঘড়ঘড় শব্দ, অনেকক্ষণ কাশির পর একটু সর্দি উঠা কিম্বা একেবারে না উঠা, শুইতে অক্ষমতা প্রভৃতি লক্ষণে ইপিকাক উপকারী। ছোট ছোট ছেলেদের সর্দি আক্রমণ হইবামাত্র উহা নাসিকা পথে স্রাব না হইয়া বায়ু নালীকে বন্ধ করে এবং শ্বাসকষ্ট উপস্থিত করে। ইহা ক্যাপিলারী ব্রঙ্কাইটিস, সাধারণতঃ মোটা ঘড়ঘড়ানিযুক্ত ব্রঙ্কাইটিসই দেখা যায়। সাংঘাতিক পীড়ার যেরূপ হয়, নাক তদ্রুপ ভিতর দিকে আকৃষ্ট হয় এবং শ্বাস প্রশ্বাস এমনভাবে চলে যে রোগটি সাংঘাতিক মনে হয়। কাশি কতকটা আক্ষেপিক, ঘন ঘন কাশি হয়, কাশিতে কাশিতে বমি হয় কিম্বা শ্লেষ্মা উঠে। কখন কখন কাশিতে শিশু যেন শক্ত হইয়া যায় ও মুখ নীল হয় এবং থলো থলো শ্লেষ্মা নির্গত হয়। সেই সঙ্গে জ্বর বেশ থাকে। অনেক সময় বুকে এত শ্লেষ্মা জমে, শ্বাসকষ্ট হয়, বুক ভার হয় মুখ চোখ নীলবর্ণ ধারণ করে। অনেক সময় হুপিং কাশিতে নাক দিয়া রক্ত বাহির হওয়াও ইপিকাকে দেখিতে পাওয়া যায়।

শ্বাসযন্ত্রের পীড়ায় ইপিকাক ও এন্টিম টার্টের তুলনা:- 
ইপিকাক ও এন্টিমটার্ট দুইটিতেই ঘড়ঘড়ানিযুক্ত কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাস আছে এবং দুইটিতে বমন আছে। ইপিকাকের লক্ষণগুলি উপদাহ অবস্থার সদৃশ, কিন্তু এন্টিম টার্টের লক্ষণগুলি সর্দি শিথিল হওয়ার সময় উপস্থিত হয়। অর্থাৎ ইপিকাকের লক্ষণ দ্রুত উপস্থিত হয় এবং তরুণ রোগের ন্যায় উপস্থিত হয়। এন্টিমের লক্ষণগুলি উপস্থিত হয় ধীরে ধীরে। এন্টিমে ইপিকাক অপেক্ষা কাশি বারে কম হয়, কিন্তু বুকে শ্লেষ্মার পরিমাণ বেশী। এন্টিমে গলা ঘড়ঘড় করে মনে হয় যেন একটু চেষ্টা করিলেই শ্লেষ্মা উঠিয়া যাইবে। ইপিকাকের গলায় ও বায়ুনালীতে সাঁই সাঁই শব্দ হয়-এন্টিমের শব্দ আরও একটু মোটা। কাশিলেও কিন্তু এন্টিমের কফ আদৌ উঠে না। ইপিকাক ও এন্টিম উভয় ঔষধেই বমন আছে। তবে ইপিকাকে বমন অপেক্ষা গা বমি ভাব বেশী।

শিরঃপীড়ায়:- মাথার ভিতরের হাড়গুলি এমনকি জিবের গোড়া পর্যন্ত যেন বেদনায় থেঁতলাইয়া যায়। নিউর‍্যালজিক কিংবা অজীর্ণ বশতঃ শিরঃপীড়া, সেই সঙ্গে অবিরত গা বমি বমি ভাব। আধকপালে মাথা ব্যথায় বামদিকের কপালে ব্যথার সহিত গা বমি বমি। প্রত্যহ বেলা ১১টায় ব্যথা আরম্ভ হইয়া ক্রমশঃ বাড়িয়া অসহ্য বোধ হয়। তারপর ক্রমশঃ কমিতে থাকে এবং ২টার সময় ব্যথা থাকে না।

পাকস্থলী প্রদাহ:- এই পীড়ায় এক ফোঁটা পানি পর্যন্ত পেটে থাকে না। যাহা খায় তাহাই বমি হইয়া যায়, সর্বদা ওয়াক তোলে। পাকস্থলীতে তীব্র ব্যাথা, ডান কাঁধের নিচে এত ব্যথা হয় যে মনে হয় যেন ভাঙিয়া যাইবে। পিত্ত বমি হয়। তৈল, ঘৃতপক্ক দ্রব্য, পিঠা, বরফ, ক্ষীর প্রবৃতি খাইয়া পীড়া হইলে ইহা উপকারী।

সর্দি লক্ষণ:- রোগীর নাক সর্দিতে পূর্ণ হইয়া থাকে। যদি খুব জোরে নাক ঝাড়া হয় তাহা হইলে উহা নির্গত হয়। নাক দিয়া রক্ত পড়ে। গা বমি বমি করে এবং কখনও কখনও ব্রঙ্কাইটিসও থাকে।

কাশি এবং হুপিং কাশি লক্ষণ:- এক প্রকার দম আটকান কাশি কিংবা ঠাণ্ডা লাগিয়া কাশি, যাহাতে শিশু কাশিতে কাশিতে শক্ত ও নীলবর্ণ হইয়া যায়, বুকে শ্লেষ্মা জমিয়া গলায় সাঁই সাঁই কিংবা ঘড়ঘড় শব্দ হইতে থাকে। তাৎক্ষণিক ধরনের কাশি, কাশিতে কাশিতে বমি হয়, বমির সহিত কেবল শ্লেষ্মা উঠে। অনেক সময় বুকে এত শ্লেষ্মা জমে যে শ্বাসকষ্ট হয়, বুক ভারী হয়, মুখ চোখ নীলবর্ণ ধারণ করে। হুপিং কাশিতে নাক মুখ দিয়া রক্তস্রাব হওয়াও ইপিকাকের লক্ষণ।

তড়কায় লক্ষণ:- আহারের ব্যতিক্রম বশতঃ পেটের কোনও পীড়ার সহিত অথবা ছোট ছেলেদের দাঁত উঠিবার সময় কোন রকম উদ্ভেদ বাহির হইতে না পারিয়া যদি তড়কা হয় তাহা হইলে ইপিকাক উপযোগী।

প্রান্তদেশ:- দেহ বিস্তার করিলে শক্ত হইয়া যায়, তৎপরে দুই হাত একটি অপরটির দিকে ঝাঁকি দিয়া উঠে।

বমনেচ্ছা ও বমন:- ইপিকাক বমনের একটি প্রধান ঔষধ। ইপিকাকে যে এলকোলয়েড পাওয়া যায়, তাহাকে এমেটিন বলে। ইপিকাকে এই পদার্থ থাকে বলিয়াই বমন হয়। যে পীড়ার সহিত অনবরত গা বমি বমি ভাব থাকে এমনকি বমন হইলেও গা বমি ভাবের নিবৃত্তি হয় না, সেখানে ইপিকাক উপযোগী। কলেরা রোগের প্রথমে যখন বমি, গা বমি বমি বিদ্যমান থাকে, বমি হইয়া গেলেও গা বমির ভাব থাকে, জিহ্বা পরিষ্কার থাকে তখন এই ঔষধ উপকারী। বমি অপেক্ষা গা বমিই ইপিকাকের সর্বপ্রধান চরিত্রগত লক্ষণ। বমির পূর্বে কিম্বা পরে সমভাবেই গা বমি করে। এই প্রকার গা বমি বমি সর্দি, কাশি, জ্বর, রক্তস্রাব, উদরাময় ইত্যাদি যে কোন পীড়ার সহিতই থাকুক না কেন তাহাতে ইপিকাক ব্যবহারে উপকার হইবে। তাই বলা যায় ইপিকাক বমনেচ্ছা ও বমনের একটি প্রধান ঔষধ।

জ্বর:- সবিরাম জ্বরের সহিত শরীরের যে কোন স্থানের রক্তস্রাব এবং ব্রঙ্কাইটিস থাকিলে ইপিকাক বিশেষ উপযোগী। সাধারণতঃ পরিপাকের গোলযোগ লইয়াই ইপিকাকের জ্বর আরম্ভ হয় এবং পথ্যপথ্যের সামান্য মাত্র অনিয়ম হইলেই জ্বরটি পুনরায় দেখা দেয়। জ্বর আসিবার প্রাক্কালে গা ভাঙ্গা, হাই উঠা এবং সর্বাঙ্গেই একটি অবসাদ প্রভৃতি লইয়া শীতাবস্থা প্রকাশ পায়। রোগী এই অবস্থায় যদিও শীত অনুভব করে তবুও ঘরের মধ্যে সে থাকিতে চাহে না, বাতাসে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে। শীতাবস্থায় রোগীর পিপাসা থাকে না। শীতাবস্থার পূর্ব হইতেই মুখে লালাস্রাব হয় এবং শীতাবস্থায়ও লালাস্রাব হইয়া থাকে। এই সাথে বমি বমি ভাব থাকে। এই বমি বমি ভাব জ্বরের সকল অবস্থাতেই চলিতে থাকে। শীতাবস্থা অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়। ইহার পরেই আসে উত্তাপাবস্থা। এই অবস্থায় সামান্য পিপাসা থাকে, কিন্তু জল ভাল লাগে না। জলপানে বমনেচ্ছা বৃদ্ধি পায়। তাপাবস্থাটি ৩/৪ ঘন্টা স্থায়ী হইতে পারে। বমনেচ্ছা, বমন, ঘনশুষ্ক কাশি, শ্বাসকষ্ট এমনকি বক্ষোদেশে একটি টান টান ভাব দেখা দেয়। ইহার পরই ঘর্ম দেখা যায়। যদি জ্বরটি কুইনাইন দ্বারা ইতিপূর্বে চাপা দেওয়া না থাকে তাহা হইলে ইপিকাকের জ্বরে ঘর্ম বড় বেশী হয় না। নতুবা কুইনান চাপা জ্বরটি পুনরায় ফুটিলে বেশী ঘর্ম হওয়াই ইহার বৈশিষ্ট্য। ঘর্মাবস্থায় রোগীর বড় কষ্ট হয়। পিপাসা থাকে না তবে বমনেচ্ছা থাকিবেই। জ্বর আসার সময় বেলা ৯ টা হইতে ১২টা (শীতসহ) অথবা বেলা ৪টা (শীতবিহীন)। কুইনাইনের অপব্যবহারের পর ইহা বেশী উপযোগী। ইপিকাকের জ্বরে শীতাবস্থাতেই অধিক কষ্ট। রোগী শীতাবস্থাটিকেই জ্বর বলে।

রক্তস্রাব:- রক্তস্রাব নিবারণে এই ঔষধের অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। নাসিকা, পাকস্থলী, মলদ্বার, গর্ভাশয়, ফুসফুস মূত্রথলী এমনকি দেহের যে কোন দ্বার দিয়া রক্তস্রাব হোক না কেন তাহাতে ইপিকাক উপকারী। যখন জরায়ু হইতে ক্রমাগত রক্তস্রাব হইতে থাকে, কিন্তু প্রত্যেক সামান্যক্ষণ অন্তর রক্তক্ষরণ বাড়িয়া, ঝলকে ঝলকে রক্তস্রাব হইতে থাকে। প্রত্যেক বার বেগে রক্তস্রাব হইলেই উজ্জ্বল লাল রক্ত নির্গত হয় স্ত্রীলোকটি মনে করেন যে তিনি মূর্ছিতা হইয়া পড়িবেন অথবা তাহার শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয় এবং যখন রক্তের পরিমাণের সহিত অবসন্নতা, বিবমিষা, মূর্ছা, প্রভৃতির সামঞ্জস্য থাকে না, তখন ইপিকাকই ঔষধ। রক্তস্রাবের সহিত গা বমি ও শ্বাসকা থাকিলে সকল ঔষধ অপেক্ষা ইহাই একমাত্র ফলপ্রদ।
 
উদরাময়:- আহারের কোন অমিতাচার, আহার্য দ্রব্য পরিপাক না হইয়া পেট বেদনা, ভেদ বমন, অজীর্ণ ইত্যাদি পীড়া হইলে পালসেটিলা ও নাক্সভমের ন্যায় ইপিকাকও উপকারী। চর্বি ও ঘৃত পক্ক দ্রব্য, পিঠা, বরফ, ক্ষীর প্রভৃতি খাইয়া পীড়া হইলে যেমন পালসেটিলা উপযোগী, ইপিকাকও তেমনি উপযোগী। কিন্তু যদি বমি হইয়া যায় তাহা হইলে ইপিকাক উপযোগী। ইপিকাকের মল প্রায়ই ফেনা ফেনা এবং ঘাসের ন্যায় সবুজ, জলের ন্যায় অথবা মিউকাস মিশ্রিত হড়হড়ে মল। গ্রীষ্মকালে ছেলেদের এইরূপ উদরাময়ে প্রথমাবস্থায় ইপিকাক পড়িলে উহা প্রায়ই আরোগ্য হয়। ইপিকাকে অনেক সময় মল হলদে ও কালচে বর্ণের হয় এবং সেই সাথে পেট ব্যথা ও কামড়ানি থাকে। বমি ও গা বমি ভাব উদরাময়ের সাথে থাকিলে ইপিকাক অধিকতর উপযোগী।

আমাশয়:- সর্বদা মলত্যাগের বেগ হয় এবং পায়খানায় গেলে সামান্য আম কিংবা উজ্জ্বল রক্ত পড়ে। মলদ্বারে জ্বালা ও বেদনাসহ ভয়ানক কোঁথানি, সর্বদা গা বমি বমি। মলত্যাগের সময়ে কোঁথ দিলে এত ব্যথা হয় যে গা বমি বমি করে ও পিত্ত বমন হয়। বাহ্যে অনেক সময় ঝোলাগুড়ের ন্যায় বর্ণ বিশিষ্ট এবং ফেনাযুক্ত।

বৃদ্ধি:- বমনের পর, বমনের পূর্বে, স্পর্শে, শীতকালে, কুইনাইন অপব্যবহারে, গুরুপাক দ্রব্য ভোজনে, আহারের পর, শুষ্ক বায়ুতে, উত্তাপে, কাশিলে।

উপশম:- চাপে, চক্ষু মুদ্রিত করিলে, বিশ্রামে, শীতল জল পানে।

অনুপূরক:- এন্টিম চার্ট, কুপ্রমেমেট, আর্ণিকা, আর্সেনিক, ব্রায়োনিয়া।

পরবর্তী ঔষধ:- এন্টিম টার্ট, এপিস মেল, বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, কুপ্রাম, পডোফাইলাম, ভেরেট্রাম, ফসফরাস, ক্যামোমিলা, সালফার।

প্রতিষেধক ঔষধ:- নাক্স, চায়না, আর্সেনিক, ট্যাবেকাম, আর্ণিকা।

ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ৭ হইতে ১০ দিন।

ব্যবহারের শক্তি:- ৩x হইতে ১০০০ শক্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ