চির রোগসমূহ - অর্গানন অব মেডিসিন, তৃতীয় বর্ষ - চতুর্থ অধ্যায়

অর্গানন অব মেডিসিন (তৃতীয় বর্ষ)

চতুর্থ অধ্যায়


স্থানীয় রোগ (১৮৫-২০৩)

অনুচ্ছেদ নং ১৮৫
একদৈশিক (One sided) রোগসমূহের মধ্যে তথাকথিত স্থানীয় রোগগুলো একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। যে সকল পরিবর্তন বা রোগ লক্ষণ দেহের বহির্ভাগে প্রকাশিত হয় সেগুলোকেই স্থানীয় রোগ বলে আজ পর্যন্ত চিকিৎসা জগতে এই ধারনাই প্রচলিত ছিল যে শরীরের এই সকল অংশই কেবল রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বাদবাকী অংশের সাথে রুগ্ন অংশের কোন যোগসূত্র নেই। ইহা অনুমান সর্বস্ব, অসংগত মতবাদ এবং ইহাই অত্যন্ত বিপজ্জনক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রবর্তন করেছে।

অনুচ্ছেদ নং- ১৮৬
তথাপি যে সকল স্থানীয় রোগ কিছুদিন আগে কোন বাহ্যিক আঘাত হতে উৎপন্ন হয়েছে সেগুলোই আপাত দৃষ্টিতে স্থানীয় রোগ বলে অভিহিত করার উপযুক্ত। কিন্তু তা নিশ্চিতভাবেই নগণ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে ইহা গুরুতর কিছুই নয়। কারণ বাইরের আঘাত গুরুতর হলে তাতে সমগ্র জীবন্ত শরীরতন্ত্র সমবেদনা প্রকাশ করে। ফলে জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি করে। এসব রোগের চিকিৎসা সার্জারীর আওতাভুক্ত। আক্রান্ত স্থানে যান্ত্রিক সাহায্যের জন্য ইহা প্রয়োজন। কারণ যে আরোগ্যের কেবলমাত্র জীবনীশক্তির উপযোগীতার দ্বারা সম্ভব, ঐ যান্ত্রিক উপায়ে সেই আরোগ্যপথের বাহ্যিক বাধা দূর হয়ে যায় বলে আশা করা যায়। যেমন সন্ধিচ্যুত স্থানসমূহ পুনঃপুনঃ সংযোজন, সেলাই ও ব্যান্ডেজের দ্বারা ক্ষতের মুখগুলোকে জোড়া দেয়া, যান্ত্রিক চাপ দিয়ে খোলা ধমনীর রক্তস্রাব বন্ধ করা, দেহের কোন গহব্বরে উত্তেজক পদার্থ থাকলে তা বের করে দেবার পথ করে দেয়া, ভগ্ন অস্থির গ্রন্থিগুলোকে সংযুক্ত করে উপযুক্ত ব্যান্ডেজের সাহায্যে সেগুলোকে উপযুক্ত যথাস্থানে স্থাপন করা প্রবৃতি এই যান্ত্রিক উপায়ের অন্তর্গত। কিন্তু এরূপে আঘাতের ফলে সমগ্র জীবন্ত শরীরতন্ত্রকে আরোগ্য করার জন্য যখন কার্যকরী গতিশীল সাহায্য প্রয়োজন হয় এবং সর্বদাই প্রয়োজন হয়ে পড়ে, যেমন ব্যাপক ভাবে নিষ্পেষণের ফলে পেশী পেশীবন্ধনী, রক্তবহা নাড়ী ছিঁড়ে গিয়ে প্রচন্ড জ্বর দেখা দিলে আভ্যন্তরিক ঔষধ প্রয়োগ করে তা সারাতে হয় অথবা এতে তরল পদার্থ লেগে বা আগুনে পুড়ে গেলে তার বাহ্যিক যাতনা সদৃশ বিধান মতে উপশম করার প্রয়োজন হয়। তখন গতিশীল চিকিৎসকের তাঁর সাহায্যকারী হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোন গন্তব্য থাকে না।

অনুচ্ছেদ নং- ১৮৭
কিন্তু শরীরের বহির্ভাগে ঐ সকল উপসর্গ বিকৃত ও রোগ লক্ষণসমূহ কোন বাহ্যিক আঘাত হতে সৃষ্টি না হলে অথবা কিঞ্চিত বাহ্যিক আঘাত অব্যবহিত উত্তেজক কারণ (immediate exciting cause) হলে সেগুলো সম্পূর্ণ আলাদাভাবে উৎপন্ন হয়। আভ্যন্তরীন অন্য কোন অর্গানের আক্রান্ত রোগই তার মূলকারণ। সেগুলোকে শুধুমাত্র স্থানীয় রোগ হিসাবে বিবেচনা করা এবং কেবলমাত্র অস্ত্র চিকিৎসার দ্বারা বা প্রায় সেভাবে স্থানীয় রোগ হিসাবে বিবেচনা করা বা প্রায় সেভাবে স্থানীয় প্রলেপ বা অনুরূপ ঔষধের দ্বারা চিকিৎসা প্রাচীনপন্থী চিকিৎসকগণ বহুযুগ হতে করে আসছে, তা একদিকে যেমন অসংগত অন্যদিকে তার ফল তেমনি ক্ষতিকর।

অনুচ্ছেদ নং- ১৮৮
এই রোগসমূহকে কেবল মাত্র স্থানীয় রোগ বলে বিবেচনা করে স্থানীয় রোগ নামে অবিহিত করা হত। এগুলো যেমন শুধুমাত্র ঐসব (আক্রান্ত) স্থানেই সীমাবদ্ধ- তার সহিত শরীরতন্ত্রের অবশিষ্ট অংশের সম্পর্ক যেন অত্যন্ত নগন্য বা একবারেই নেই। এসব বিশেষ দৃশ্যমানস অংগসমূহের রোগ সম্বন্ধে জীবন্ত শরীরতন্ত্রের বাকী অংশ বলতে গেলে যেন কিছুই জানে না।

অনুচ্ছেদ নং ১৮৯
একটু সামান্য চিন্তা করলেই আমরা ইহা বুঝতে পারি যে, কোন আভ্যন্তরীণ কারণ ছাড়া সমগ্র জীবন্ত শরীরতন্ত্রের সহযোগীতা ছাড়া কোন বাহ্যিক রোগ (যদি তা বাইরের গুরুতর আঘাত জনিত না হয়) তবে সৃষ্টি হতে বা বর্তমান থাকতে বা অধিকতর বৃদ্ধি পেতে পারে না। শরীরের অবশিষ্ট সুস্থ অংশের সার্বিক অনুমোদন ও সমগ্র জীবন্ত শরীরতন্ত্রের অবশিষ্ট সুস্থ অংশের প্ররোচনা ব্যতিত রোগ উৎপন্ন হওয়া কিছুতেই সম্ভব হত না। কারণ দেহের অনুভূতিশীল ও অন্যান্য অংশে পরিব্যাপ্ত উত্তেজনা প্রবণ জীবনীশক্তির বর্তমান। প্রকৃতপক্ষে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ পরস্পর এমন একাত্মভাবে গঠিত যে অনুভূতি ও যান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের সমগ্রতা সৃষ্টি করতে সম্পূর্ণ জীবন্ত দেহতন্ত্রের সহায়তা ছাড়া রোগের উৎপত্তি সম্বন্ধে ধারণা করাও অসম্ভব। ঠোঁটের উপরে কোন উদ্ভেদ বা আঙ্গুল হাড়া- পূর্ববর্তী ও সমসাময়িক আভ্যন্তরীণ অসুস্থতা ব্যতীত কখনো উৎপন্ন হতে পারে না।

অনুচ্ছেদ নং- ১৯০
সুতরাং নামমাত্র বাহ্যিক আঘাতে বা বিনা আঘাতে শরীরের বহির্ভাগে প্রকাশিত রোগের যুক্তিসংগত, নিশ্চিত, ফলপ্রদ ও নির্মল আরোগ্য করতে হলে অভ্যন্তরীণ ঔষধ প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ রোগের বিরুদ্ধেই প্রকৃত চিকিৎসা পরিচালিত করতে হবে এবং রোগ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে হবে।চাটতে। হর বেলায়্যাত তাপচ্য ছানিয় জামাত রসুনের
 
অনুচ্ছেদ নং ১৯১
অভিজ্ঞতায় এটা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, প্রত্যেকটি শক্তিশালী ঔষধ আভ্যন্তরীক প্রয়োগ করার অব্যবহিত সেই রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্যে বিশেষত আক্রান্ত বাহ্য দেহে এবং সাধারণ স্বাস্থে বিশেষত আক্রান্ত বাহ্য এবং সাধারণ চিকিৎসকগণ যাকে সম্পূর্ণ একক রোগ বলে মনে করেন এমন কি দেহের একান্ত বাহ্যিক অংশের স্থানীয় রোগের ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন করে। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে সুনির্বাচিত ঔষধটি সদৃশ বিধান মতে আভ্যন্তরিণ প্রয়োগ করা হলে উহার দ্বারা যে পরিবর্তন সাধিত হয় তা সম্পূর্ণ দেহকে পুনরায় স্বাস্থ্যে প্রতিষ্ঠিত করে এবং তৎসহ বাহ্যিক রোগকে ও দূর করে দেয় কোন রকম বাহ্যিক ঔষধের সহায়তা ছাড়াই। এই জন্য ইহা অত্যন্ত মঙ্গলকর।

অনুচ্ছেদ নং- ১৯২
ঐরূপ রোগের প্রকৃতি অনুসন্ধান করার সময় স্থানীয় রোগের ও সঠিক প্রকৃতি সর্বপ্রকার বিকৃতি, যাতনা ও লক্ষণসমূহ যা রোগীর সমগ্র শরীরে পরিলক্ষিত হয় ঔষধ সেবনের পূর্বে যেগুলি দৃষ্টিগোচর হত সেগুলি একত্রিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি প্রস্তুত করা হলে সর্বাপেক্ষা ভাল হয়। অতঃপর যে সকল ঔষধের বিশেষ অদ্ভুত কার্যকারিতা (peculiar pathogenetic effects) তাদের মধ্য হতে সদৃশবিধান মতে লক্ষণসমষ্টির যথার্থ সদৃশ একটি ঔষধ নির্বাচন করা যায়।

অনুচ্ছেদ নং – ১৯৩
এই ঔষধের শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ প্রয়োগের ফলেই (রোগটি একেবারে অচির প্রকৃতির হলে প্রথম 'মাত্রাতেই প্রায়) শরীরের সাধারণ অসুস্থতাসহ স্থানীয় রোগও আরোগ্য হয়। পূর্ববর্তী পরবর্তী দুইটি রোগই
একই সময়ে আরোগ্য লাভ করে। তা হতেই প্রমাণিত হয় স্থানীয় রোগ দেহের অবশিষ্ট অংশের রোগের উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল। সে জন্যেই তাকে সম্পূর্ণ রোগের সহিত অবিচ্ছেদ্য ও সমগ্র রোগের সর্বাপেক্ষা প্রমাণ্য ও স্পষ্ট লক্ষণসমূহের মধ্যে অন্যতম বলে বিবেচনা করা উচিত।

অনুচ্ছেদ নং- ১৯৪
নবাগত অচির রোগের বা বহুদিনের স্থায়ী স্থানীয় রোগের নির্দিষ্ট ঔষধ (specific) বলে পরিগণিত হলেও আক্রান্ত অংগে কোন বাহ্যিক ঔষধের মর্দন বা প্রলেপ দেয়া চলবে না। সদৃশ বিধান মতে আভ্যন্তরীণ সেবনে ফলপ্রদ হলেও এমন কি তখন ইহা আভ্যন্তরীণ প্রয়োগ করা হলেও না। কারণ সে সব অচির স্থানীয় রোগ বাহ্যিক সমানুপাতিক আঘাতের প্রবলের ফলে (external injury of propottinate violence) উৎপন্ন হয় নাই। বরঞ্চ কোন গতিশীল বা আভ্যন্তরীণ কারণেই (internal causes) ইহা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পরিলক্ষীত বাহ্য ও আভ্যন্তরীণ অবস্থায় সদৃশ, পরীক্ষিত ঔষধসমূহের সাধারণ ভান্ডার হতে সদৃশ বিধান মতে একটি ঔষধ আভ্যন্তরীণ প্রয়োগ করলে নিশ্চিত আরোগ্য লাভ করবে। ইহাতে সাধারণত অন্য কোন প্রকার সাহায্যের দরকার হয় না। কিন্তু এতসত্বেও যদি রোগ সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য না হয় যথাযথ পথ্যটি সত্বেও যদি আক্রান্ত স্থানে ও সমগ্র দেহে রোগের জের থেকে যায় (a relic of disease) তাকে জীবনীশক্তি ও সাধারণ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয় না, তাহলে সেই অচির রোগকে সোরা হতে সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরে নিতেই হবে এবং এ কারণ প্রায় ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। এ সোরা এতদিন ধরে শরীরের অভ্যন্তরের সুপ্ত অবস্থায় (Latent in the interior) ছিল, বর্তমানে প্রচন্ডভাবে আত্মপ্রকাশ করে সুস্পষ্ট চির রোগে পরিগণিত হবার উপক্রম করছে।

অনুচ্ছেদ নং- ১৯৫
এই প্রাকৃতির রোগের সংখ্যা মোটেই কম নয়। এদের নির্মল আরোগ্যের জন্য (readical cure) প্রাথমিক অবস্থার প্রচন্ডতা অনেকটা কমে গেলে অবশিষ্ট লক্ষণসমূহ ও রোগীর পূর্বেকার রুগ্নাবস্থা বিবেচনা করে এ্যান্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা (আমার ক্রনিক ডিজিজেস নামক গ্রন্থের নির্দেশ অনুসারে) অবশ্যই করতে হবে। নিশ্চিতভাবে যৌনরোগ না হলে চির প্রকৃতির স্থানীয় রোগের প্রতিকারের জন্য একমাত্র আভ্যন্তরীক এন্টিসোরিক ঔষধ দ্বারা চিকিৎসাই আবশ্যক।

অনুচ্ছেদ - ১৯৬
বাস্তবিকই ইহা মনে হতে পারে যে এসব রোগে লক্ষণ সমষ্টির সদৃশ ঔষধের আভ্যন্তরীক প্রয়োগের সাথে বাহ্যিক প্রয়োগের দ্বারা আরোগ্য ত্বরান্বিত হয়। কারণ আক্রান্ত অঙ্গে ঔষধ লাগানোর ফলে এতে আরো দ্রুত পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

অনুচ্ছেদ - ১৯৭
কেবলমাত্র সোরাজনিত রোগই নয়, সাইকোসিস ও সিফিলিস-জাত স্থানীয় রোগের ক্ষেত্রেও এরূপ চিকিৎসা কিছুতেই অনুমোদন যোগ্য হতে পারে না। কারণ যেখানে কোন অনড় স্থানীয় রোগই (Constant Local affection) প্রধান লক্ষণ সেখানে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক ঔষধ যুগপথ প্রয়োগের মস্তবড় অসুবিধা এই যে, বাহ্যিক প্রয়োগের ফলে প্রধাণ লক্ষণটি (স্থানীয় রোগ) ১১৪ আভ্যন্তরীণ রোগটি আরোগ্য হবার পূর্বেই দুরীভূত (অন্তর্হিত) হয়। ইহার ফলে আমরা প্রকৃত আরোগ্য হয়েছে বলে প্রতারিত হতে পারি অথবা স্থানীয় রোগ লক্ষণটি আগেভাগেই দুরীভূত হয় বলে যুগপথ আভ্যন্তরিক ঔষধ প্রয়োগের ফলে সর্বাঙ্গীন রোগ ধ্বংস হলো কিনা তা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে।

অনুচ্ছেদ- ১৯৮
আভ্যন্তরীণ প্রয়োগে যে সকল ঔষধ রোগ নিরাময় করতে পারে সেগুলোকে ক্রনিক মায়াজমেটিক রোগের (Chronic Miasmatic Disease) বাহ্যিক লক্ষণে কেবলমাত্র বাহ্যিকভাবে প্রয়োগ করা সেজন্যই অনুমোদন করা যায় না। কারণ চির রোগের স্থানীয় লক্ষণটি শুধু এককভাবে অপসারিত করা হলে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য একান্ত অপরিহার্য আভ্যন্তরিক চিকিৎসা সংশয়ের আবর্তে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। প্রধাণ লক্ষণটি (স্থানীয় রোগ) চলে গেলে অন্যান্য অস্পষ্ট, পরিবর্তনশীল ও ক্ষণস্থায়ী লক্ষণগুলোই অবশিষ্ট থাকে। সেগুলো বিশেষত্ব বর্জিত ও নিতান্ত কম পরিচায়ক বলে রোগের সুস্পষ্ট ও বিশিষ্ট প্রতিকৃতি অংকন করার জন্য যথেষ্ট হয় না।

অনুচ্ছেদ - ১৯৯
রোগের সহিত সর্বতোভাবে সদৃশ ঔষধ এখনো আবিষ্কৃত না হলে স্থানীয় লক্ষণগুলোর ক্ষতকারক বা শোষক (Corrosive or desiceative) ঔষধের বাহ্যিক প্রয়োগে অথবা অস্ত্রের দ্বারা ধ্বংস করা হয়। ফলে অবশিষ্ট্য লক্ষণসমূহ অত্যন্ত অপরিচায়ক ও পরিবর্তনশীল প্রকৃতির হয় এবং রোগ আরো জটিল হয়ে পড়ে। কারণ যথার্থ উপযোগী সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের পক্ষে এবং সার্বিক আরোগ্যলাভ করা পর্যন্ত সেই ঔষধের আভ্যন্তরীক প্রয়োগ করার পক্ষে সর্বাপেক্ষা নিশ্চিত এই বহিঃপ্রকাশিত প্রধান লক্ষণটি তখন আমাদের দৃষ্টির বাইরে চলে যায়।
 
অনুচ্ছেদ - ২০০
আভ্যন্তরিক চিকিৎসায় পথ প্রদর্শক সেই প্রধাণ লক্ষণটি এখনো বর্তমান থাকলে সম্পূর্ণ রোগের জন্য সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব হতো। সে ঔষধের আভ্যন্তরিক প্রয়োগ করা সত্বেও স্থানীয় রোগ বিদ্যমান থাকলে আরোগ্য সম্পূর্ণ হয় নাই বলে বুঝতে পারা যেত। অধিকন্তু, সেই ঔষধের দ্বারা যথা সময়ে ইহা (স্থানীয় রোগ) আরোগ্য হয়ে গেলে রোগটি যে সর্বতোভাবে আরোগ্য হয়ে গেছে এবং সামগ্রিকভাবে আকাংঙ্খিত আরোগ্য সাধিত হয়েছে, তা নিঃসশয়ে প্রমাণিত হতো। সর্বাঙ্গীন আরোগ্যসাধনের পথে ইহা অপরিমেয়, অপরিহার্য সহায়তা দান করে।

অনুচ্ছেদ - ২০১
মানুষের জীবনীশক্তি চির রোগের দ্বারা অভিভূত হয়ে পড়লে ইহা সহজাত শক্তিতে রোগকে পরাভূত করতে সমর্থ হয় না- এই সত্যটি আমাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্যই শরীরের বহির্ভাগে একটি স্থানীয় রোগ সৃষ্টি করার অভিসন্ধি জীবনীশক্তিই গ্রহণ করে।
শরীরের যে অংশ মানব জীবনের পক্ষে অপরিহার্য নয়, সে অংশকে অসুস্থ করে এবং অসুস্থ অবস্থায় রেখে আভ্যন্তরীন রোগকে আরোগ্য করাই ইহার একমাত্র উদ্দেশ্য, নচেৎ ইহার দ্বারা শরীরতন্ত্রের কোন প্রধান অংশ (Vital Organs) বিনষ্ট হবার এবং রোগীর প্রাণনাশের উপক্রম হয়। সেজন্যই আভ্যন্তরিণ রোগকে আকর্ষণ করে উহার স্থলে স্থানীয় রোগে রূপান্তরিত করে। এই ধরনের স্থানীয় রোগের উপস্থিতিতে আভ্যন্তরীণ রোগ সাময়িকভাবে সুপ্ত থাকে। বাস্তবিকপক্ষে ইহা আভ্যন্তরিণ রোগকে আরোগ্য বা খর্ব করতে সমর্থ হয় না। স্থানীয় রোগ সম্পূর্ণ রোগের অংশ ছাড়া কিছুই নয়। আভ্যন্তরিণ রোগ আরোগ্যের জন্য আংগিক জীবনীশক্তি এই রূগ্নঅংশকে শরীরের অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক (বাইরের) কোন অংশে স্থানান্তরিত করে। কিন্তু (পূর্বেই বলা হয়েছে যে), এই স্থানীয় লক্ষণ প্রকাশের দ্বারা আভ্যন্তরিণ রোগ সুপ্ত থাকলেও সামগ্রিক রোগের উপশম বা আরোগ্যের ক্ষেত্রে জীবনীশক্তির ইচ্ছাতে কোন লাভ হয় না। উপরন্তু, ইহা বর্তমান থাকা সত্ত্বেও আভ্যন্তরিণ রোগ ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রকৃতিও স্থানীয় লক্ষণটিকে ক্রমবর্ধমান গতিতে বিস্তৃত করতে ও বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়। বৃদ্ধি-প্রাপ্ত আভ্যন্তরিণ রোগের স্থলাভিষিক্ত করে স্থানীয় রোগ যাতে এখনও বর্তমানে থেকে তাকে প্রতিরোধ করতে পারে তাই করে। যতই দেরী হয় ততই প্রচলিত আভ্যন্তরিণ রোগ- যেমন বাড়তে থাকে ঠিক তেমনিভাবে সোরা মায়াজম বর্তমান থাকা পর্যন্ত পায়ের ক্ষত ক্রমশঃ বাড়তে থাকে, আভ্যন্তরিণ সিফিলিস মায়াজম দুরীভূত না হওয়া পর্যন্ত সিফিলিস ক্ষত বেড়েই চলে, সাইকোসিস মায়াজম বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত আঁচিল বাড়তে থাকে এবং ততদিন ইহাকে আরোগ্য করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

অনুচ্ছেদ - ২০২
সমগ্র রোগকে আরোগ্য করার বিশ্বাস নিয়ে প্রাচীনপন্থী চিকিৎসক এখন যদি বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগ করে স্থানীয় লক্ষণ সরিয়ে দেন, প্রকৃতি তখন এই অপচয়কে পরিপূর্ণ করার জন্য আভ্যন্তরিণ রোগ এবং অন্যান্য লক্ষণগুলোকে, যেগুলো আগের থেকেই স্থানীয় লক্ষণের পাশাপাশি এ যাবৎ সুপ্ত অবস্থায় ছিল, জাগ্রত করে আভ্যন্তরিণ রোগকে বাড়িয়ে তোলে। এরূপ হলে ভুলক্রমে বলা যায় যে স্থানীয় রোগকে বাহ্যিক ঔষধের দ্বারা শরীরের ভিতরে বা স্নায়ুর মধ্যে প্রবেশ করে দেয়া হয়েছে।

অনুচ্ছেদ- ২০৩
এরূপ স্থানীয় লক্ষণসমূহের প্রত্যেকটিকে বাহ্যিক চিকিৎসার দ্বারা শরীরের উপরিভাগ হতে সরিয়ে দেয়া হলেও মায়াজমজাত আভ্যন্তরিণ রোগ অনারোগ্য অবস্থাতেই থেকে যায়। যেমন- বিভিন্ন প্রকারের মলম প্রয়োগে চর্মের উপরিভাগ হতে সোরাজাত উদ্ভেদের অপসারণ, কষ্টিকের দ্বারা উপদংশজাত ক্ষতকে পুড়িয়ে ফেলা, ছুরি, বন্ধনী বা উত্তপ্ত লৌহশলাকার দ্বারা আঁচিল তুলে ফেলা প্রভৃতি এই যাবৎ প্রচলিত বিপজ্জনক বাহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি। ইহাই মানবজাতির যন্ত্রনাদায়ক সর্বপ্রকার নামযুক্ত বা নামহীন পুরাতন রোগের মূল কারণ। ইহাই চিকিৎসক সমাজের সর্বাপেক্ষা মারাত্মক অপরাধমূলক কাজের মধ্যে অন্যতম। অথচ ইহাই সাধারণতঃ এতদিন ধরে নির্বিচারে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং বিদ্যাপীঠসমূহ হতে একমাত্র করণীয় কাজ বলে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।


১। প্রশ্ন: স্থানীয় রোগ বলতে কি বুঝায়?
টিকা লিখঃ স্থানীয় রোগ বা স্থানীয় ব্যাধি (Local maladies) ১৪
স্থানীয় রোগের সংজ্ঞা:

যে সকল অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেহের বহির্ভাগে স্থান বিশেষে দেখা দেয়, তাকে স্থানীয় রোগ বলে। দেহের স্থান বিশেষে হলেও তা সমগ্র দেহের দেহসত্ত্বার সাথে জড়িত। দেহের সকল অংশের অনুভূতি ও ক্রিয়ার দিক দিয়ে এমনভাবে জড়িত যে সমস্ত জীবনীশক্তির সাহায্য ব্যতিত তা অনুভব করা সম্ভব নয়। যেমন- চর্মের নিচে টিউমার, কার্বাংকাল, আঁচিল ইত্যাদি। বাহ্যিক ধরনের প্রকৃতিগত রোগসমূহকে স্থানীয় রোগ বলে।


২। প্রশ্নঃ স্থানীয় রোগের প্রকারভেদ বর্ণনা কর।
স্থানীয় রোগের প্রকারভেদ বর্ণনা: স্থানীয় রোগ দুই প্রকার, যথা:

১। আভ্যন্তরীণ উপসর্গ ও ২। বাহ্যিক উপসর্গ।
বাহ্যিক উপসর্গকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন : (ক) ডাইনামিক্যাল বা মায়াজমের প্রভাবে হয়। (খ) সার্জিক্যাল-যা দূর্ঘটনা জনিত
কারণে এবং
(১) আভ্যন্তরীণ উপসর্গ: যে রোগে শুধুমাত্র রোগী কষ্ট অনুভব করে রোগী প্রকাশ না করলে চিকিৎসকদের জানার উপায় থাকে না। যেমন: বহুদিনের মাথাব্যাথা, উদরাময়, হৃদশূল ইত্যাদি।
(২) বাহ্যিক উপসর্গ:
(ক) ডাইনামিক্যাল যা মায়াজমের প্রভাবে সৃষ্টি হয়। রোগী কষ্ট অনুভব করার সাথে বাহ্যিক চিহ্ন প্রকাশ করে। যেমন: টিউমার, আচিল, চর্মরোগ ইত্যাদি।
(খ) সার্জিক্যাল: যা দূর্ঘটনা জনিত কারণে হয়। যেমন: হাড় ভেঙ্গে যাওয়া, কেটে যাওয়া, আগুনে পোড়া ইত্যাদি।


৩। প্রশ্ন: স্থানীয় রোগ প্রকৃত স্থানীয় রোগ কিনা আলোচনা কর। স্থানীয় রোগ প্রকৃত স্থানীয় রোগ আলোচনাঃ

স্থানীয় রোগ প্রকৃতই স্থানীয় নয় যদিও ইহা স্থান বিশেষ প্রকাশিত হয়ে থাকে। ডাঃ হ্যানিম্যান এ সম্পর্কে অর্গানন অব মেডিসিনের ১৮৭-১৮৯ নং অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে দেহের বাহিরে প্রকাশিত লক্ষণাবলী যদি আঘাত হতে উৎপন্ন না হয়ে থাকে তবে তা আভ্যন্তরিন গোলযোগের কারণে উদ্ভূত হয়। সে জন্য ঐ স্থানীয় রোগকে স্বতন্ত্র এবং সেই স্থানের সম্পূর্ণ নিজস্ব বলে ধারণা করা শুধু ক্ষতিকারকই নয় তা মারাত্মক ভুল, এরূপ রোগের চিকিৎসা হবে সামগ্রিকভাবে বাহ্যিক ব্যবস্থার মধ্যমে নয়। তা না হলে রোগীর রোগ যন্ত্রণা উপশম হওয়ার সাথে সাথে স্থানীয় রোগও দুরীভূত হবে। সুতরাং স্থানীয় রোগ, কোন কোন ক্ষেত্র প্রকৃত স্থানীয় রোগ নয় তার যোগসূত্র থাকে 'আভ্যন্তরিক উৎসের।


৪। প্রশ্নঃ শল্য চিকিৎসা সম্পর্কে ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের মতামত লিখ। ০৮, ১১
শল্য চিকিৎসা সম্পর্কে ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের মতামত:

মহাত্মা ডাঃ হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা আইন গ্রন্থ "অর্গানন অব মেডিসিন" এর ১৮৬নং অনুচ্ছেদে শল্য চিকিৎসা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
যে সকল স্থানীয় রোগ কিছুদিন আগে কোন বাহ্যিক আঘাত হতে উৎপন্ন হয়েছে সেগুলোই আপাত দৃষ্টিতে স্থানীয় রোগ বলে অবিহিত করার উপযুক্ত। কিন্তু তা নিশ্চিতভাবেই নগণ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে ইহা গুরুতর কিছুই নয়। কারণ বাইরের আঘাত গুরুতর হলে তাতে সমগ্র জীবন্ত শরীরতন্ত্র সমবেদনা প্রকাশ করে। ফলে জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ সৃষ্টি করে। এই সব রোগের চিকিৎসা সার্জারীর আওতাভুক্ত। আক্রান্ত স্থানে যান্ত্রিক সাহায্যের জন্য ইহা প্রয়োজন। কারণ যে আরোগ্যের কেবলমাত্র জীবনীশক্তির উপযোগীতার দ্বারা সম্ভব, ঐ যান্ত্রিক উপায়ে সেই আরোগ্য পথের বাহ্যিক বাধা দূর হয়ে যায় বলে আশা করা যায়। যেমন সন্ধিচ্যুত স্থানসমূহ পুনঃ পুনঃ সংযোজন, সেলাই ও ব্যান্ডেজের দ্বারা ক্ষতের মুখগুলোকে জোড়া দেওয়া, যান্ত্রিক চাপ দিয়ে খোলা ধমনীর রক্তস্রাব বন্ধ করা, দেহের কোন গহব্বরে উত্তেজক পদার্থ থাকলে তা বের করে দেবার পথ করে দেয়া, ভগ্ন অস্থির গ্রন্থিগুলোকে সংযুক্ত করে উপযুক্ত ব্যান্ডেজের সাহায্যে সেগুলোকে উপযুক্ত যথাস্থানে স্থাপন করা . প্রভৃতি এই যান্ত্রিক উপায়ের অন্তর্গত। কিন্তু এরূপে আঘাতের ফলে সমগ্র জীবন্ত শরীরতন্ত্রকে আরোগ্য করার জন্য যখন কার্যকরী গতিশীল সাহায্য প্রয়োজন হয় এবং সর্বদাই প্রয়োজন হয়ে পড়ে, যেমন ব্যাপকভাবে নিস্পেষণের ফলে পেশী, পেশীবন্ধনী, রক্তবহা নাড়ী ছিঁড়ে গিয়ে প্রচন্ড জ্বর দেখা দিলে আভ্যন্তরীণ ঔষধ প্রয়োগ করে তা সরাতে হয় অথবা ওতে তরল পদার্থ লেগে বা আগুনে পুড়ে গেলে তার বাহ্যিক যাতনা সদৃশ বিধান মতে উপশম করার প্রয়োজন হয়। তখন গতিশীল চিকিৎসকের তাঁর সাহায্যকারী হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।


৫। প্রশ্ন: স্থানীয় রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।০৮ স্থানীয় রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা:

মহাত্মা ডাঃ হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা আইন "অর্গানন অব মেডিসিন" গ্রন্থের ১৯০-২০৩ নং অনুচ্ছেদে স্থানীয় রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।
স্থানীয় রোগের চিকিৎসা করার পূর্বে তার কারণ অনুসন্ধান করা একজন আর্দশ চিকিৎসকের প্রধান কাজ। ডাঃ হ্যানিম্যানের মতে স্থানীয় রোগের কারণ যদি কোন বাহ্যিক আঘাত দ্বারা উৎপন্ন হয় তবে প্রয়োজনীয় বাহ্যিক আনুষঙ্গিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে। 'যেমন-সন্ধিচ্যুত হলে তা যথাস্থানে পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর রোগীলিপি অনুযায়ী সদৃশ বিধানমতে নির্বাচিত ঔষধ আভ্যন্তরীণ প্রয়োগ করতে হবে।


৬। প্রশ্ন: বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগ বলতে কি বুঝ? ০৮, ১০, ১২
বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগ:

যে সকল ঔষধ বা দ্রব্য দেহের বাহিরের অংশে বা চর্মে প্রলেপ আকারে ব্যবহার করা হয়, তাকে বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগ বলে।
ডাঃ হ্যানিম্যান ঔষধের বাহ্যিক প্রয়োগ বলতে দেহের বাহির অংশে মলম, মালিশ, মাদার টিংচার ইত্যাদি ব্যবহার করাকে বুঝিয়েছেন। ডাঃ হ্যানিম্যানের মতে, এ ধরনের বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের কুফল খুবই মারাত্মক। এতে রোগের বিকৃত হয়। রোগ সাধারণ অবস্থা হতে জটিল থেকে জটিলতর হয়। এমনকি রোগী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। তাঁর মতে, বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে রোগের গতি এক রকম থাকে তবে বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের পরে তা ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়।


৭। প্রশ্ন: কোন কোন ক্ষেত্রে বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগ 'অনুমোদন যোগ্য? ০৮, ১০, ১২, ১৪
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগ অনুমোদন যোগ্য:

(i) চর্মরোগে চর্ম থেকে খোসা উঠে যাওয়ার সময় যখন ক্ষত ও ভয়ানক চুলকানি থাকে তখন ব্যবহারে রোগী সামান্য স্বস্তিবোধ করে।
(ii) ইরিসিপেলাস রোগে ভয়ানক টান ধরা ও অস্বস্তিকর শুষ্ক চড়চড়ানি ভাব থাকে।
(iii) দূর্ঘটনাজনিত কারণে কোন অঙ্গের হাড় ভেঙ্গে গেলে।
(iv) আঘাত জনিত কারণে কোন অঙ্গ থেতলে গেলে প্রভৃতি।


৮। প্রশ্ন: বাহ্যিক প্রয়োগের কুফল আলোচনা কর। ০৮, ১৪ বা ঔষধের বাহ্যিক প্রয়োগ সম্পর্কে ডাঃ হ্যানিম্যানের মতামত বর্ণনা কর।
বাহ্যিক প্রয়োগের কুফল আলোচনা:

ডাঃ হ্যানিম্যান ঔষধের বাহ্য প্রয়োগ বলতে দেহের বাহির অংশে মলম, মালিশ, মাদার টিংচার ইত্যাদি ব্যবহার করাকে বুঝায়। ডাঃ হ্যানিম্যানের মতে, এ ধরনের বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের কুফল খুবই মারাত্মক। এতে রোগের বিকৃতি হয়। রোগ সাধারণ অবস্থা হতে জটিল থেকে জটিলতর হয়। এমনকি রোগী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। তাঁর মতে, বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে রোগের গতি একরকম থাকে তবে বাহ্যিক ঔষধ প্রয়োগের পরে তা ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়। চর্মরোগে চর্ম থেকে খোসা উঠে যাওয়ার সময় যখন ক্ষত ও ভয়ানক চুলকানি থাকে তখন ব্যবহারে রোগী সামান্য স্বস্তিবোধ করলেও বাহ্যিক প্রয়োগের ফলে উহা অন্তমুখী অবস্থান নেয়। ইরিসিপেলাস রোগে ভয়ানক টান ধরা ও অস্বস্তিকর শুষ্ক চড়চড়ানি ভাব থাকে তা সামান্য উপশমিত হয় কিন্তু পরক্ষণে অধিকরত যন্ত্রনাদায়ক হয়।


সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ