স্বাভাবিক গর্ভ - Normal Pregnancy, তৃতীয় বর্ষ - দ্বিতীয় অধ্যায়

দ্বিতীয় অধ্যায়
স্বাভাবিক গর্ভ
(Normal Pregnancy)











প্রশ্ন- ওভারি বা ডিম্বকোষের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর: ওভারি বা ডিম্বকোষের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা- জরায়ুর দুইপাশে পেটের নিচে ঠিক মাঝামাঝি শক্ত টিবির মত যে জোড়, সেই জোড় হইতে প্রায় ৪ ইঞ্চি দূরে চওড়া বন্ধনীর পশ্চাৎ স্তরে বাদামের মত আকারের দুইটি গ্রন্থি আছে ইহাদের বলা হয় ওভেরি বা ডিম্বকোষ। ইহারা লম্বায় দেড় ইঞ্চি ও চওড়ায় পৌনে এক ইঞ্চি এবং পুরু আধা ইঞ্চি। ওভারিয়ান লিগামেন্টের দ্বারা ইহারা জরায়ুর সাথে যুক্ত। ওভারির ভিতর ছোট ছোট ফাঁপা দানা আছে ইহাদের গ্রাফিয়ান ফলিকল বলে। এই ফলিকলের ভিতর ডিম বা ওভাম থাকে এবং ফলিকল ফাটিয়া ডিম বা ওভাম বাহির হয়। এই ওভারি বা ডিম্বাধারের জন্য মেয়েদের ঋতু শুরু হয়। গর্ভাবস্থায় জরায়ুর বৃদ্ধি হয়, স্তনদ্বয় বড় হয়, মেয়েদের নারীসুলভ যৌন বিশেষত্বগুলি প্রকাশ পায়।
ভেসেল ও নার্ভ- ওভারিয়ান ও ইউটেরাইন ধমনী। ওভারিয়ান ফ্লেক্সাসের নার্ভ।




প্রশ্ন- ওভারি বা ডিম্বকোষের কার্যাবলী কি কি?

উত্তর: ওভারি বা ডিম্বকোষের কার্যাবলী- ওভারি বা ডিম্বকোষে দুইটি উল্লেখযোগ্য কার্য সম্পাদন করে। যথা-
(১) Exocrine এর কাজ- ওভারি ছোট ছোট অপক্ক ডিম্বকে পক্ক করে এবং একটি করিয়া ডিম্ব ডিম্বনালীতে প্রেরণ করে। এই ডিম্বই শুক্রাণুর সহিত মিলনে Fertilized হয় এবং ইহার ফলে জাইগোট সৃষ্টি হয়। ইহা হইতেই ভ্রুণের বিকাশ ঘটে।
(২) Endocrine এর কাজ- ওভেরি হইতে ইসট্রোজেন, প্রোজেসটারোন রিলাক্সিন প্রভৃতি হরমোন বাহির হর এবং ইহারা বিভিন্ন কাজ করিয়া থাকে।
ক) ইহা জরায়ু, ডিম্বনালী, যোনী প্রভৃতি প্রাথমিক সেক্স অর্গানগুলির বৃদ্ধি ও কর্মক্ষমতাকে সহায়তা করে।
খ) এই হরমোন নিয়মিতভাবে ঋতুচক্রকে ঠিক রাখে এবং নিয়ন্ত্রণ করিয়া রাখে।
গ) ইহার দ্বারা যৌবন আগমনে জরায়ু ও যোনির পূর্ণবৃদ্ধি ঘটিয়া থাকে।
ঘ) ইহারা সেকেন্ডারী যৌন চরিত্রগুলিকে ঠিকমত গড়িয়া তুলিতে সাহায্য করে।
ঙ) ইহা বক্ষ ও ম্যামারি গ্রন্থির গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
চ) ওভারির রিলাক্সিন হরমোনের জন্য গর্ভকালে জরায়ু ঢিলা হয় ও বৃদ্ধি পায়, প্রসবের আগে জরায়ু মুখ ঢিলা ও প্রসারিত হয়।
ছ) গর্ভাবস্থায় ইহার দ্বারা ওভামটি জরায়ুতে Embedding হয় এবং প্লাসেন্টার বৃদ্ধি হয়।




প্রশ্ন- ওভারি হইতে কি কি হরমোন নিঃসৃত হয়?

উত্তর: ওভারি হইতে নিঃসৃত হরমোনসমূহ- ওভারি হইতে নিম্নলিখিত হরমোনগুলি নিঃসৃত হইয়া থাকে। যথা-
১) ইস্ট্রোজেন- ডিম্বথলী, আন্তরকোষ এবং পীতগ্রন্থি হইতে ইস্ট্রোজেনা হরমোন ক্ষরিত হয়।
২) প্রোজেসটারোন- ডিম্বাশয়ের সক্রিয় পীতগ্রন্থি হইতে প্রোজেসটারোনা হরমোন ক্ষরিত হইয়া থাকে।
৩) রিলাক্সিন- ইহা ডিম্বাশয় হইতে ক্ষরিত হইয়া থাকে।
৪) অ্যানড্রোজেন- ডিম্বাশয় সামান্য পরিমাণে অ্যানড্রোজেন হরমোন ক্ষরণ করে।




প্রশ্ন- ওভুলেশন বা ডিম্বানুপাত বা ডিম্বক্ষরণ কাহাকে বলে? ইহা কখন ঘটিয়া থাকে?

উত্তর: ওভুলেশন বা ডিম্বানুপাত বা ডিম্বক্ষরণ- স্ত্রী গ্রন্থি বা ওভেরির ভিতর যে ছোট ছোট ফাঁপা দানাগুলি আছে (গ্রফিয়ান ফলিকল), সেগুলি হইতে পরিণত অবস্থায় ডিম্বাণুর (ওভাম) বাহির হওয়াকেই স্ত্রীবীজ নির্গমণ বা ওভুলেশন বলে। ওভারি আকারে যতই বাড়িতে থাকে ততই ইহা ছোট ছোট ফাঁপা দানার বা
ফলিকলের তলের দিকে আগাইয়া আসে। অবশেষে ফলিকল ফাটিয়া যায় এবং ডিম্বাণু বাহির হইয়া পেটের সামনের এবং পিছনের পর্দার মধ্যবর্তী স্থানে গর্তের মত যে স্থান আছে সেইস্থানে পড়িবার সময় ডিম্বানুবাহী নলের এক প্রান্তে যে ঝালর থাকে তাহা ডিম্বানুকে ঘরিয়া লয় এবং নলের পথে চালিত করে।
পরবর্তী ঋতুর প্রথমদিন হইতে গণনা করিলে দেখা যায় যে ইহা পরবর্তী ঋতুস্রাব আরম্ভ হওয়ার ১৪দিন আগে ঘটিয়া থাকে। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতিমাসে সাধারণতঃ একটি মাত্র করিয়া দানা (ফলিকল) পরিণতি প্রাপ্ত হয়।




প্রশ্ন-  ওভুলেশন বা ডিম্বানুপাতের কারণসমূহ কি কি?

উত্তর: ওভুলেশন বা ডিম্বানুপাতের কারণসমূহ-
১) পিটুইটারী গ্রন্থির ভূমিকা- ওভুলেশন প্রধানতঃ সম্মুখস্থ পিটুইটারী গ্রন্থি হইতে নিঃসৃত পীতবর্ধক হরমোনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যৌনচক্রের মাঝামাঝি এসট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ যখন সর্বাধিক মাত্রায় পৌঁছায় তখন ইহা ডিম্বনালী উদ্দীপক হরমোন ক্ষরণে বাধা প্রদান করে এবং ঐ সময় পীতবর্ধক হরমোনের ক্ষরণ সর্বাধিক হয়। এই হরমোন সরাসরি ডিম্বথলীর উপর, ক্রিয়া করিয়া ডিম্বথলীস্থ তরল পদার্থের পরিমাণের অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটায়, ফলে ডিম্বথলী ও ফলিকল ফাটিয়া গিয়া ডিম্বানু নির্গত হয়।
২) দেহ উষ্ণতার সহিত সম্পক- ওভুলেশন মুহূর্তে স্ত্রীলোকের দৈহিক উষ্ণতা কিছুটা হ্রাস পায়, তাহার পরই ইহা যৌনচক্রের প্রথমার্থের অপেক্ষা প্রায় ০.৮০° ফারেন হাইট তাপ বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী যৌনচক্র না হওয়া পর্যন্ত সেভাবেই বজায় থাকে।




প্রশ্ন- কর্পাস লুটিয়াম কি? কর্পাস লুটিয়ামের গঠন ও কার্যাবলী লিখ।

উত্তর: কর্পাস লুটিয়াম- পরিণত ডিম্বথলী হইতে ওভামটি বাহির হইয়া
গেলে সেই স্থানটি একটি হলুদ বর্ণের তরল পদার্থে পূর্ণ হয়। ইহার নাম কর্পাস লুটিয়াম। ওভাম বা ডিম্ব পরিণত না হইয়া মরিয়া গেলে কর্পাস লুটিয়াম ক্ষয়ের দিকে যায়। যদি ওভামের দ্বারা গর্ভ সঞ্চার হইয়া থাকে তবে যে পর্যন্ত পাসেন্টা ইসট্রোজেন প্রস্তুত করিতে সমর্থ না হয় সে পর্যন্ত কর্পাস লুটিয়াম থাকিয়া যায়। কর্পাস লুটিয়ামের গঠন-
১) মাঝের কেন্দ্রীয় ছোট গহ্বর রক্ত দ্বারা পূর্ণ হয়।
২) গ্রাফিয়ান ফলিক এর লাইনিং মেমব্রেনটি ভাঁজ ভাঁজ লেয়ার গঠন করিয়া থাকে।
৩) স্ট্রাটাম গ্রানুলোসাম হইতে বড় বড় ছয় কোণযুক্ত Lutin কোষগুলি গঠিত হয়।
৪) টিউনিকা ইন্টার্না হইতে প্যারালিউটিন সেল গঠিত হয়। ইহাদের মধ্যেও লিউটিন থাকে।
৫) থেকা ইন্টার্না হইতে প্যারালিউটিভ টিসুগুলি একটি জমা বাঁধা মাস এ পরিণত হয়। ইহাতে কোনও সেল থাকে না।

কর্পাস লুটিয়ামের কার্যাবলী-
১) ইহা হইতে Oestrone হরমোন এবং প্রোজেসট্রোন বাহির হয় যাহা ঋতুচক্র চলাকালে নারীর ঋতু, যৌবনোচিত গঠন, সেকেন্ডোরী সেক্স চরিত্র প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।
২) গর্ভ সঞ্চার হইতে প্রোজেস্ট্রোন সন্তানের বৃদ্ধি, গঠন, জরায়ুর গঠন প্রভৃতি কাজে সহায়তা করিয়া থাকে।
৩) ইহা হইতে রিলাক্সিন নিঃসৃত হয় এবং ইহা গর্ভকালে জরায়ুকে ঢিলা ও বড় করে এবং যোনীনালীর গঠনে পরিবর্তন আনে, ফলে সন্তান প্রসব সহজ হয়।




প্রশ্ন-  নিষিক্তকরণ (Fertilization) বা গর্ভোৎপাদন কাহাকে বলে। নিষিক্তকরণের বিভিন্ন দশা পদ্ধতি বা কৌশলগুলি বর্ণনা কর।

উত্তর : নিষিক্তকরণ (Fertilization)- যৌন জননের যে পদ্ধতিতে
একটি পুংজনন কোষ তথা শুক্রাণু ও একটি স্ত্রীজনন কোষ তথা ডিম্বানু পরস্পর মিলিত হইয়া তাহাদের নিউক্লিয়াসে সংযোগ ঘটায় তাহাকে নিষিক্তকরণ বা গর্ভোৎপাদন বলে। ইহা ফ্যালোপিয়ান টিউবে ঘটিয়া থাকে।
নিষিক্তকরণের বিভিন্ন দশা, পদ্ধতি বা কৌশল- নিষিক্তকরণ একটি জটিল প্রক্রিয়া, যাহাকে নিম্নলিখিত কয়েকটি পর্যায়ক্রমিক দশায় ভাগ করা যায়।
১) শুক্রানু ও ডিম্বানুর সম্মুখীন হওয়া- শুক্রাশয় হইতে শুক্রাণু এবং ডিম্বনালী হইতে ডিম্বানু নির্গত হইবার পর নিষিক্তকরণের জন্য ইহাদের উভয়ের সম্মুখীন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। ডিম্বানু শুক্রানুর 'সংস্পর্শে আসা মাত্র ডিম্বানুর চারিপার্শ্বে অবস্থিত স্বচ্ছে বলয়ের ভৌত লক্ষণের পরিবর্তন ঘটে।
২) যোগ্যতা অর্জন ও সংযোগ স্থাপন- শুক্রানু হইতে এন্টিফার্টিলাইজিন এবং ডিম্বানু হইতে ফার্টিলাইজিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হইয়া থাকে। এক্ষেত্রে শুক্রানুগুলি ডিম্বানু নিঃসৃত ফার্টিলাইজিন নামক রাসায়নিক পদার্থের দ্বারা আকৃষ্ট হয় এবং ফ্লাজেলা দ্বারা তাড়িত হইয়া ডিম্বানুর সহিত সংযোগ স্থাপন করে।
৩) অ্যাক্রোজোম প্রতিক্রিয়া ও প্রবেশ- শুক্রানু ডিম্বানুগাত্র স্পর্শ করা মাত্রই শুক্রানুর মস্তকের সম্মুখভাগে অবস্থিত অ্যাক্রোজোম টুপি হইতে হায়ালিউরোনিডেজ নামক উৎসেচক এবং স্পার্মলাইসিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, যাহার স্পর্শে ডিম্বানুর বাহিরের স্বচ্ছ বলয় আবরণকে দ্রবীভূত করে এবং ঐ দ্রবীভূত অংশের মধ্য দিয়া শুক্রানুর ডিম্বাণুর ভিতর প্রবেশ করে।
৪) ডিম্বাণুর প্রতিক্রিয়া- শুক্রাণুর অ্যাক্রোজেন টিউবিউল ডিম্বানুগাত্র স্পর্শ করা মাত্র স্পর্শ স্থানের চারিদিক স্ফীত হইয়া ডিম্বানুর সাইটোপ্লাজম মোচার আকারে অভিক্ষেপিত হয়, ইহাকে নিষেক শুরু বলে। নিষেক শুরু ক্রমাগত বৃদ্ধি পাইয়া এক সময় শুক্রানুটিকে সম্পূর্ণ গ্রাস করিয়া ফেলে।
৫) শুক্রানু ও ডিম্বানুর সক্রিয়তা- শুক্রানুর মস্তক ডিম্বানুর সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করার সাথে সাথে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর প্লাজমা পর্দা ভাঙ্গিয়া যায় এবং পুংনিউক্লিয়াসটি ডিম্বাণুর সাইটোপ্লাজমে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণুর প্লাজমা পর্দা তথা নিষিক্তকরণ পর্দা গঠিত হয়।
৬) শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াসের মিলন- শুক্রাণু নিউক্লিয়াসটি ডিম্বাণুর সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করার পর ১৮০ ডিগ্রী কোণে আবর্তিত হয়। শুক্রানুর মস্তিষ্ক ও নিউক্লিয়াসটি স্ফীত হইয়া উঠে এবং ইহার ক্রোমোটিন সূক্ষ্ম কণিকায় পরিণত হয় এবং অবশেষে গোলাকার হইয়া পুনঃ উপনিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। দ্বিতীয় মেরুডিম্ব নিক্ষেপের পর ডিম্বাণু নিউক্লিয়াসটি পরিধির দিকে সরিয়া যায় এবং ডিম্বানুর হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াসের ক্যারিওমিয়ারগুলি সংযুক্ত হইয়া একটি স্ত্রী উপনিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। এইবার পুং উপনিউক্লিয়াস যৌন সংগম পথ ধরিয়া স্ত্রী উপনিউক্লিয়াসের নিকটবর্তী অঞ্চলে পৌঁছায় এবং উপনিউক্লিয়াসের সেন্ট্রিওল হইতে অ্যাস্টার গঠিত হয়। ফলে উপনিউক্লিয়াস দুইটি পাশাপাশি লাগিয়া ক্রোমোজোমগুলি পরস্পরের • সহিত মিশিয়া যায়। উপনিউক্লিয়াস দুইটি একীভূত হইয়া একটি নূতন নিউক্লিয়াস গঠন করে।
৭) নিষিক্ত ডিম্বাণুর পরিবর্তন- উপনিউক্লিয়াস দুইটি একীভূত হইলে জাইগোট
গঠি হয়। পরবর্তী পর্যায়ে কোষটির দ্রুত বিভাজনের ফলে একটি কোষপুঞ্জ তৈরী হয়। এই কোষপুঞ্জকে মেরুলা বলে। এই অবস্থায় ইহা ডিম্ববাহী নালীস্থ সিলিয়ার বিচলনে ও নালীর ক্রমসংকোচনের ফলে জরায়ুতে নীত হয় এবং তথায় একটি পূর্ব নির্দিষ্ট অঞ্চলে রোপিত হইয়া থাকে। দ্রুত মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজনশীল নিষিক্ত ডিম্বানু মেরুলা পর্যায় অতিক্রম করিয়া ব্লাস্টোসিস্ট পর্যায়ে পৌঁছায়। ডিম্ববাহী নালীতে অবস্তানকালেই নিষিক্ত ডিম্বানুর চারিপাশে ট্রোফোব্লাস্ট কোষস্তর সৃষ্টি হয়। নিষিক্ত ডিম্বানু বা ভ্রুণ মাতৃজঠরে জরায়ুর প্রাকারের আন্তজরায়ু স্তরে সংলগ্ন হইয়র যায়। ভ্রুণ ও জরায়ুর ভিলাইগুলি আন্তর্জরায়ু স্তরের কিছু সংখ্যক কোষ ও ট্রোফোব্লাস্ট কোষের সমন্বয়ে ভ্রুণ এবং মাতৃদেহের মধ্যে যে গ্রন্থিময় যোগসূত্র সৃষ্টি হয় তাহাকে অমরা বলে।





প্রশ্ন- ভ্যাজাইনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর: ভ্যাজাইনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা- ভ্যাজাইনা বা যোনী একটি ন্যবিশেষ। ইহা ইউটেরাস অর্থাৎ জরায়ু এবং ভালবার যোগসূত্র। ইহার এন্টিরিয়র দেওয়াল-৩ ইঞ্চি লম্বা এবং পোস্টিরিয় দেওয়াল ৪ ইঞ্চি লম্বা, ইহার উপর দিকের শেষ অংশকে ভল্ট বা খিলান ছাদ বলে। এই ভল্ট আবার সার্ভিক্স দ্বারা চারিটি আর্চে বিভক্ত হইয়াছে। বড় আর্চটিকে বলা হয় পোস্টিরিয়র ফারনিক্স, ইহা সার্ভিক্সের পিছনে অবস্থিত। আর সার্ভিক্সের সামনে দিকের আর্চটিকে বলা হয় এন্টিরিয়র ফারনিক্স এবং দুই পাশের আর্চকে বলা হয় ল্যাটারেল ফারনিক্স।
গঠন- ইহা তিনটি স্তরে গঠিত। ভিতরের স্তর মিউকাস মেমব্রেন, বাহিরের স্তর মাসকুলার কোট এবং মাঝের স্তর Elastic Areolar টিসু দ্বারা গঠিত। ভ্যাজাইনার গহ্বরটি স্কোয়াস এপিথিলিয়াম' স্তর দ্বারা গঠিত। ইহাতে বহু ভাঁজ আছে। সামনের এবং পিছনের স্তর লম্বা কতকগুলি রিজ বা আলি হইতে এই ভাঁজ শুরু হইয়াছে। এই রকম ব্যবস্থা থাকায় ভ্রুণের মাথা বাহির হইবার সময় ভ্যাজাইনায় পরিসর বিস্তার লাভ করে। ভ্যাজাইনার কোন প্ল্যান্ড নাই। যে রস বাহির হইয়া। ইহাকে আর্দ্র রাখে তাহার গতিক্রিয়া অম্লযুক্ত। এই অম্লরসের জন্য ইহার মধ্যে সজীব পদার্থের উৎপত্তি ব্যাহত হইয়া থাকে।
ভেসেল ও নার্ভ- ইন্টারন্যাল ইলিয়াক ধমনীর শাখা, ভ্যাজাইনাল ইউটেরাইন ও রেকটাল ধমনী এবং ভ্যাজাইনাল পেক্সাসের নার্ভ।




প্রশ্ন-  ফ্যালোপিয়ান টিউবের (ডিম্বাণুবাহী নল) সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর: ফ্যালোপিয়ান টিউবের (ডিম্বাণুবাহী নল) সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ফ্যালোপিয়ান টিউব সংখ্যায় দুইটি, প্রত্যেকটি প্রায় ৪ ইঞ্চি লম্বা। ইহারা ব্রড লিগামেন্টের ভাঁজের মধ্যে, জরায়ুর দুই পাশে বিদ্যমান। পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটির সহিত জরায়ুর গহ্বরের যোগ সাধন করিতেছে। জরায়ুর দিকে এই নালীর মুখ অতি সরু আবার ওভারির দিকে এই নালীর মুখ 'সানাই' এর শেষ প্রান্তের মত। এই ডিম্বানুবাহী নল ওভারিতে বীর্য হইয়া যায় এবং ওভারি হইতে জরায়ুতে ওভাম বা ডিম্বানু লইয়া আসে। নালীর ভিতরের আবরণীতে সরু সূচের ন্যায় যে পদার্থ আছে, সেগুলি এমনভাবে নড়িতে থাকে যে ঐ চুলের উপর দিয়া ডিম্বানু জরায়ুতে চলিয়া যায়।

অংশ-ইহার তিনটি অংশ। যথা- ফিমব্রিয়া, এ্যামপুলা ও ইছথমাস।

ফিমব্রিয়া- ফ্যালোপিয়ান টিউবের যে প্রান্ত পেরিটোনিয়‍্যাল গহ্বরে অবস্থান করে তাহাকে ফিমব্রিয়া বলে। এই অংশ দেখিতে অনেকটা হাতের আঙ্গুলের মত।

এ্যামপুলা- ফিমব্রিয়ার ভিতরের দিকের অংশকে এ্যামপুলা বলে। এই অংশটি বেশ চওড়া।

ইছথমাস- যে অংশ জরায়ুর গায়ে সংযুক্ত হয় তাহাকে ইছথমাস বলে। এই অংশ সরু।

গঠন- ফ্যালোপিয়ান টিউব তিনটি অংশে গঠিত। যথা-বাহির হইতে ভিতরে সিরাস স্তর, মাসকুলার স্তর ও মিউকাস স্তর।





প্রশ্ন-  ঋতুস্রাব কাহাকে বলে? ঋতুচক্রের বা রজঃচক্রের বর্ণনা দাও।

উত্তর : ঋতুস্রাব- স্ত্রী জননেন্দ্রিয়সমূহের সাময়িক ও পর্যাশীল ক্রিয়াকেই ঋতু বলে। নারীর যৌবন আগমনের পর হইতে শুরু করিয়া ঋতুবন্ধ হওয়া পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রতি ২৮দিন অন্তর নারীর মাসিক বা ঋতুস্রাব হইয়া থাকে। যৌবনে যুবতীদের ওভারির ভিতর নানারকম পরিবর্তন সাধিত হয় বলিয়াই প্রতিমাসে ঋতুস্রাব হয়। এই পরিবর্তন বলিতে বুঝায় স্ত্রীগ্রন্থির ভিতর গ্রাফিয়ান ফলিকল এবং কর্পাস লুটিয়ামের পুষ্টিসাধন ও ক্রমবিকাশ এবং এসট্রাডিয়াল ও প্রজেস্টেরোনের উৎপত্তি। এই হরমনগুলি জরায়ুর অন্তঝিল্লীর বা এন্ডেমেট্রিয়ামের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতি মাসে ঋতুচক্রের শেষ পর্যায়ে জরায়ুর অন্তঝিল্লী ঝরিয়া পড়ে এবং রক্তস্রাবের সহিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডাকারে বাহির হইয়া আসে। ওভাম বা ডিম্বটি নিষিক্ত না হইলে তাহা নির্দিষ্ট দিন অপেক্ষা করার পর মৃত হইয়া জরায়ুতে নামিয়া আসে, তখন জরায়ু গাত্রে জমা রক্ত, ঝিলীর মিউকাস প্রভৃতিসহ মৃত ডিম্বটি জরায়ু হইতে বাহির হইয়া আসে। ইহাই ঋতুস্রাব। তাই ঋতুস্রাব হইল, ডিম্বের দ্বারা সন্তান সৃষ্টির ব্যর্থতার প্রমাণ।
 




প্রশ্ন-  ঋতুচক্রের বা রজঃচক্রের বর্ণনা দাও।

উত্তর: ঋতুচক্র বা রজঃচক্র- পূর্ণ বয়স্ক নারীর ঋতু শুরু হইতে বন্ধ না হওয়া
পর্যন্ত জরায়ু হইতে চক্রাকারে একমাস অন্তর অন্তর যে রক্তস্রাব হয় তাহাকে ঋতুচক্র বলে। ঋতুস্রাব হওয়ায় কয়েকদিন পূর্বে ডিম্বটি মরিয়া যায়। তারপর জরায়ু পরের ঋতুর জন্য তৈরী হয়। ঐ দিকে ডিম্বকোষে আবার পূর্ণাঙ্গ ডিম্ব সৃষ্টির প্রস্তুতি চলে ঋতুস্রাবের পর হইতে। ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরী করিতে থাকে। আবার ডিম্ব নিষিক্ত না হইলে কিছুদিন পর মৃত হইয়া জরায়ুতে নামিয়া আসে। আবার ঋতুস্রাব হয়। এই ভাবে যে চক্র চলে তার সময় হইল ২৮ হইতে ৩০ দিন। একটি রজস্রাবীয় দশা হইতে আর একটি রজঃস্রাবীয় দশা আরম্ভের পূর্ববর্তী সময়ে স্ত্রী যৌনাঙ্গ সমূহে যে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন সাধিত হয় তাহাকে মাসিক যৌনচক্র বলে। রজঃচক্রের বা মাসিক যৌনচক্রের মূল অর্থ হইল প্রাপ্ত বয়স্ক যৌনক্ষমতাযুক্ত নারীদেহে গর্ভসঞ্চারের অক্ষমতা। সেজন্য রজঃচক্রকে সন্তান ধারণের অক্ষমতার জন্য জরায়ুর কান্নারূপে আখ্যা দেওয়া হইয়া থাকে।





প্রশ্ন-   ঋতুচক্রের কারণ কি লিখ।

উত্তর: ঋতুচক্রের কারণ- ঋতুস্রাব হইল একটি অবস্থা যাহার অর্থ হইল পূর্ণবয়স্ক সকল যৌন ক্ষমতাযুক্ত নারীদেহে গর্ভসঞ্চারের অক্ষমতা। পিটুইটার গ্ল্যান্ডের ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের প্রভাবে ওভারির মধ্যে একটি গ্রাফিয়ান ফলিকল বৃদ্ধি পাইতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত উহা ফাটিয়া ডিম্বটি ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে আসে। ঐ সময় নারীর সঙ্গে পুরুষের যৌন মিলন হইলে নারীর গর্ভসঞ্চার হইয়া থাকে কিন্তু যদি পুরুষের শুক্রকীটের সঙ্গে উহার সাক্ষাত না ঘটে তাহা হইলে ডিম্বটি জরায়ুর মধ্যে গিয়া মরিয়া যায় ও বাহির হইয়া আসে। তাহার সঙ্গে সঙ্গে জরায়ুর যে এন্ডোমেট্রিয়াম তৈরী হইয়াছিল সন্তান ধারণের জন্য তাহার কিছু অংশ ও রক্ত, মিউকাস প্রভৃতিসহ বাহির হইয়া আসে। ডিম্বটির মৃত্যুর জন্য জরায়ু যেন রক্তরূপ অশ্রু বিসর্জন করিয়া থাকে সন্তান ধারনের অক্ষমতার জন্য। জরায়ুর এই কান্নাকেই ঋতুস্রাব বলে।





প্রশ্ন-০২.১৩। ঋতুস্রাবের সময় জরায়ুর কি কি পরিবর্তন হয়?
বা, ঋতুচক্রের স্তরে বা ধাপসমূহ কি কি আলোচনা কর।
বা, রজঃচক্র বা মাসিক চক্রের বিভিন্ন দশাসমূহ কি কি?

উত্তর: ঋতুস্রাবের সময় জরায়ুর পরিবর্তনসমূহ ঋতুচক্রে জরায়ুতে যে যে পরিবর্তন দেখা দেয় তাহা চক্রাকারে ঘটিয়া থাকে। সেজন্য ইহাকে ঋতুচক্রও আখ্যায়িত করা হইয়াছে। ডিম্বাশয়ের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করিয়া রজঃচক্রকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা হইয়াছে। যথা- ডিম্বথলীয় দশা ও পীতগ্রন্থি দশা।
ডিম্বথলীয় দশা- স্ত্রীলোকের রজঃস্রাবের সময় হইতেই আরম্ভ হয় এবং ডিম্বাণু নিঃসরণের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই দশার স্থায়িত্বকাল রজঃচত্রের ১ হইতে ১৪ দিন পর্যন্ত। এই জাতীয় দশায় এস্ট্রোজেন হরমোনের ক্রমবর্ধমান ক্ষরণে ডিম্বথলী ধীরে ধীরে পূর্ণ হইয়া উঠে।
পীতগ্রন্থি দশা- এই দশা ডিম্বস্রাবী দশার পরপরই আরম্ভ হয়। এই দশার স্থায়িত্বকাল রজঃচক্রের ১৪ দিন হইতে ২৮ দিন পর্যন্ত। এই সময়ে সম্মুখ পিটুইহারী গ্রন্থি নিঃসৃত পীত গ্রন্থিপোষক হরমোনের প্রভাবে পীতগ্রন্থি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় এবং অধিক পরিমাণে প্রোজেস্টারোন হরমোন ক্ষরিত হইয়া থাকে। ইহাদের বিবরণ নিম্নে আলোচনা করা গেল।

ক) নিরাময় দশা (Regenerativ বা Resting phase): রজস্রাব আরম্ভ হওয়ার ৩ দিন পর হইতে রজঃচক্রের ৬ষ্ঠ দিন পর্যন্ত এই দশা চলে। রজঃস্রাব সমাপ্ত হওয়ার পরই জরায়ুতে যে মেরামতি কাজ আরম্ভ হয় তাহাকে নিরাময় দশা বলে। এই অবস্থায় জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম বা আবরণ ঝিল্লী ধীরে ধীরে গঠিত হয় এবং তাহা মাত্র ১ মিলিমিটার পুরু হয়। ডিম্বাশয়ে ডিম্বথলী গঠন আরম্ভ হয়।

খ) ক্রমবর্ধনশীল দশা (Proliferative phase): এই দশার স্থায়িত্বকাল প্রায় রজঃচক্রের ৭দিন হইতে ১৪ দিন পর্যন্ত। এন্ডোমেট্রিয়াম আরও মোটা হইয়া প্রায় ৩ মিলিমিটার পুরু হয়। এপিথেলিয়ামগুলি লম্বা ও কলামনার হয়। ক্রমবর্ধমান এসট্রোজেন হরমোন প্রভাবে জরায়ুর অন্তস্তর বৃদ্ধি পায় এবং এই স্তরে অবস্থিত নলগুলি শাখা প্রশাখা বিস্তার লাভ করে। পরিণত ডিম্বথলী পূর্ণ ও mature হয় এবং ঠিক ১৪তম দিনে পূর্ণ ডিম্ব ওভারী হইতে বাহির হইয়া আসে। ডিম্ববাহী নালীতে পীতগ্রন্থি গঠন শুরু হয়।

গ) প্রাক রজঃস্রাবীয় দশা (Pre menstrual বা Secretory বা Progentational Phase)- এই দশার স্থায়িত্বকাল রজঃচক্রের ১৫ হইতে ২৮ দিন পর্যন্ত। এই সময়ে জরায়ুর অন্তস্তর প্রায় ৬ মিলিমিটার পুরু হয় এবং রক্তবাহের প্রাচুর্য আরও বৃদ্ধি পায়। এন্ডোমেট্রিয়াম এই সময় খুব বেশী ফুলিয়া উঠে। জরায়ু গ্রন্থিগুলি খুব লম্বা কর্কান্ডুর আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। এই দশায় সম্মুখ পিটুইটারী গ্রন্থি নিঃসৃত পীতবর্ধক হরমোনর প্রভাবে পীতগ্রন্থি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় এবং অধিক পরিমাণে প্রোজেসটারোন হরমোন ক্ষরিত হয়। প্রোজেসটারোন হরমোনের প্রভাবে ডিম্বনালীর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ফলে ডিম্বথলী পরিণত হইতে পারে না। এই সময় ডিম্বাণু নিষিক্ত না হইলে পীতথলী পুনরায় ধীরে ধীরে ক্ষয় পাইতে থাকে।

ঘ) রজঃস্রাবীয় দশা (Menstrual বা Destructive বা Bleeding Phase)- মাসিক যৌনচক্রের ২৮ দিনের মাথায় প্রোজেসটারোন হরমোনের হ্রাস প্রাপ্তিতে এই দশা আরম্ভ হয় এবং প্রায় ৪ হইতে ৬ দিন স্থায়ী হয়। রক্তাভাবে জরায়ুর অন্তস্তরের কুণ্ডলীকৃত ধমনী প্রসারিত হয়। ফলে উপধমনী ও রক্তজালিকা বিচ্ছিন্ন হয় এবং রক্তক্ষরণ আরম্ভ হয়। রক্তবাহ সমূহের ছিন্নপ্রান্ত সংকুচিত হইলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া আসে এবং পরবর্তী রজঃচক্রের নিরাময় দশা শুরু হয়। এই সময়ে পীতগ্রন্থি লোপ পায় এবং প্রোজেসটারোন হরমোন বন্ধ হইয়া যায়। ৪ হইতে ৬ দিন রক্তস্রাবের পর জরায়ু এন্ডোমেট্রিয়াম রক্তহীন ও পাতলা হয়, ধ্বংস হইয়া নূতনভাবে আবার তাহা সৃষ্টি হয়।




প্রশ্ন- ঋতুস্রাবের মেকানিজম লিখ।

উত্তর: ঋতুস্রাবের মেকানিজম- নারীর যৌবন আগমনের পর হইতে শুরু করিয়া ঋতু বন্ধ পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রতি ২৮ দিন অন্তর নারীর মাসিক বা ঋতুস্রাব হইয়া থাকে। ঋতুস্রাব এমন একটি অবস্থা যাহার অর্থ পূর্ণ বয়স্ক বা যৌন ক্ষমতাযুক্ত একটি নারীর দেহের সন্তান সৃষ্টির ক্ষমতার প্রকাশ। ফ্যালোপিয়ান টিউবে পূর্ণাঙ্গ ডিম্বটি আসিয়া নির্দিষ্ট সময় ধরিয়া অবস্থান করে। ঐ সময় নারীর সঙ্গে পুরুষের মিলন হইলে এবং পুরুষের শুক্রকীট নারীর জরায়ু দিয়া ফ্যালোপিয়ান টিউবে আসিয়া ডিম্বটির সঙ্গে মিলন হইলে গর্ভ সঞ্চার হইয়া থাকে কিন্তু তাহা না হইলে অর্থাৎ ওভামটি নিষিক্ত না হইলে তাহা নির্দিষ্ট দিন অপেক্ষা করার পর মৃত হইয়া জরায়ুতে নামিয়া আসে। তখন জরায়ুর গাত্রে জমা রক্ত, ঝিল্লীর মিউকাস প্রভৃতিসহ মৃত ডিম্বটি জরায়ু হইতে বাহির হইয়া আসে। ইহাই ঋতুস্রাব। ইহা ডিম্বের দ্বারা সন্তান সৃষ্টির ব্যর্থতার প্রমাণ। তাই ঋতুস্রাবকে জরায়ুর কান্না বলে।





প্রশ্ন- ঋতুস্রাবের রক্তের উপাদান কি কি?

উত্তর: ঋতুস্রাবের রক্তের উপাদানগুলি নিম্নরূপ-
ক) রক্ত।
খ) জরায়ুস্থিত এন্ডোমেট্রিয়ামের ছিন্ন অংশ এবং ভ্যাজাইনাল এলিথেলিয়াম।
গ) Unpertilized ডিম্বটি।
ঘ) মিউকাস লিম্ফোসাইট প্রভৃতি।





প্রশ্ন-  মেনোপোজ কাহাকে বলে?

উত্তর: মেনোপোজ- নারীর জীবনে প্রজনন ক্ষমতা চিরদিনের জন্য লোপ পাওয়াকে বা অবসর গ্রহণ করাকে মেনোপোজ বলে। ইহা সাধারণতঃ ৪৮ হইতে ৫২ বৎসর বয়সের মধ্যে ঘটিয়া থাকে। ৪৫ বৎসর বয়সে সাধারণতঃ একজন মহিলার ঋতুস্রাব কমিতে থাকে এবং ৪৮ হইতে ৫২ বৎসরের মধ্যে একেবারেই বন্ধ হইয়া যায়। এই বয়সকে মেনোপোজ বলে। মেনোপোজের পর জনন যন্ত্রাদির ধীরে ধীরে শুষ্কতা প্রাপ্তি পরলক্ষিত হয়।





প্রশ্ন- পিউবার্টি বা যৌবন আগমন কাহাকে বলে?

উত্তর: পিউবার্টি বা যৌবন আগমন- স্বাভাবিকভাবে পুরুষের ১৫ হইতে ১৭ বৎসর বয়সে শুক্রকীট জন্ম নেয় এবং ১২ হইতে ১৫ বৎসর বয়সে একজন নারীর ঋতুস্রাব আরম্ভ হয়। পুরুষ ও নারীর এই বয়সকে পিউবার্টি বলে। ইহা শুধুমাত্র শুক্রাশয় এবং ওভারীর পূর্ণাঙ্গ ক্রিয়াচক্রই প্রকাশ করে না ইহা পুরুষ ও নারীর সেকেন্ডারী চরিত্রও প্রকাশ করে।





প্রশ্ন- ঋতুকালীন স্বাস্থ্য রক্ষা বা কি কি নিয়ম পালন করা উচিত?

উত্তর : ঋতুকালীন স্বাস্থ্যরক্ষার পালনীয় নিয়ম- ঋতুকালীন সমেয খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা একান্ত প্রয়োজন। এই সময়ে নিম্নলিখিত নিয়মগুলি মানিয়া চলা আবশ্যক। যথা-
ক) এই সময়ে বিশুদ্ধ প্যাড ব্যবহার করা উচিত। প্যাডের শোষণ ক্ষমতা থাকা আবশ্যই প্রয়োজন। এই সময়ে ন্যাকড়া ব্যবহার করিলে উহা সাবান জলে উত্তমরূপে পরিষ্কার করিয়া রৌদ্রে শুকাইয়া তাহার পর ব্যবহার করা যাইতে পারে।
খ) ব্যবহৃত প্যাডগুলি শুকনা কাপড়ে ভাল করিয়া জড়াইয়া উহা রাখিবার নির্দিষ্ট পাত্রে রাখা কর্তব্য।
গ) এই সময়ে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ নজর দেওয়া একান্ত বিধেয়।
 ঘ) প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের সময় আসিলে পূর্ব হইতেই প্রস্তুত রাখা উচিত।
ঙ) সব সময়ে একাধিক প্যাড হাতের কাছে রাখা বিধেয়। সাধারণতঃ ৪-৬ ঘণ্টা অন্তর প্যাড বদলানোর দরকার হয়।
চ) এই সময়ে সহজ পাচ্য আহার্য গ্রহণ করা উচিত এবং উপযুক্ত পরিমাণ বিশ্রাম এবং ব্যায়াম করা বাঞ্ছনীয়।
ছ) এই সময় ব্যথা, দুর্বলতা এমনকি দেহের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাইতে পারে।





প্রশ্ন-  প্রথম ঋতুস্রাব শুরুতে বিলম্বের কারণসমূহ কি কি?

উত্তর: প্রথম ঋতুস্রাব শুরুতে বিলম্বের কারণসমূহ- নারীর যৌবন আগমন সাধারণত ১২-১৫ বৎসর বয়সে ঘটিয়া থাকে। প্রথমত ঋতুস্রাব শুরুতে অনেকের বিলম্ব ঘটে। ইহার কারণসমূহ হইল-
ক) দেহে নারী হরমোন বা স্ত্রী জাতীয় হরমোনের অভাব। ডিম্বাশয়ের Oestrone হরমোন নারীর দেহে যৌবন আগমনের ও ঋতু শুরুর জন্য দায়। তাহাকে আবার নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানতঃ পোস্ট পিটুইটারী গ্রন্থি এবং এড্রনাল গ্রন্থির করটেক্স। যদি নারীর ডিম্বাশয়ের হরমোন নিঃসরণ ঠিকমত না হয় বা অন্য দুইটি গ্রন্থির নিঃসরণ কম হয়, তাহা হইলে উপযুক্ত বয়সে নারীর ডিম্বকোষ ও ডিম্ব ঠিকমত বর্ধিত ও গঠিত হইতে পারে না। তাহার ফলে প্রথম ঋতু সহজে শুরু হয় না।
খ) নারীর জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের জন্মগত অপরিণতি বা ঠিক বর্ধিত না হওয়া।
গ) নারীর দেহে পুষ্টির অভাব এবং তাহার জন্য দেহের গঠন ঠিকমত না হওয়া।
ঘ) রক্তশূণ্যতা ও তাহার জন্য ঠিকমত ঋতুস্রাব না হওয়া।




প্রশ্ন- প্রথম ঋতু শুরু হওয়ার আগে নারীদের কখন গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

উত্তর : প্রথম ঋতু শুরু হওয়ার আগেই যখন প্রথম ডিম্বটি বা Primordial Follicle টি বর্ধিত হইয়া গ্রাফিয়ান ফলিকল হইয়া ডিম্বনালীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে যদি ঐ নারী পুরুষ সংসর্গ করে, তাহা হইলে সে গর্ভবতী হইয়া যায়। তাহার ঋতু শুরু হওয়ার আগেই তাহার গর্ভসঞ্চার ঘটিবে।



প্রশ্ন- ঋতু চলাকালে ঋতুতে বিলম্বেরকারণ কি কি?

উত্তর: অনেক সময় ঋতু চলাকালীন সময়ে ঠিকমত ২৮ দিন অন্তর অন্তর ঋতুস্রাব হয় না। কখনো কখনো ৩০-৩৫ দিন পর, কখনো বা আরও দেরী হয়। নানা কারণে নারীদের এইরূপ হইতে দেখা যায়। কারণসমূহ হইল-

ক) দেহে হরমোণের অভাব। এদের দেহে Oestrone হরমোনের নিঃসরণ কম হয়।

খ) জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের অপরিণতি- জরায়ু ও ডিম্বাশয় ঠিকমত হয় না। তাহার ফলে ঋতু হয় বটে তবে তাহা অনেক দেরীতে।

গ) রক্তহীনতার জন্য এরূপ হয়।

ঘ) উপযুক্ত খাদ্য ও পুষ্টি প্রভৃতির অভাবেও এইরূপ হইয়া থাকে।

৬) অনেক সময় ডিম্বাশয় বা ডিম্বনালীর গঠন এমন হয় যে তাহার ফলে তাহাদের ঠিকমত ডিম্ব বর্ধিত ও ঋতুস্রাব, জরায়ুর উপযুক্ত গঠনের পরিবর্তন প্রভৃতিতে গোলমাল হয়। তাহার ফলে ঋতু ঠিকমত হয় না।




প্রশ্ন- ঋতু চলাকালে ঋতু বিলম্বের লক্ষণসমূহ কি কি?

উত্তর: যতু চলাকালে ঋতু বিলম্বের লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ-
ক) অনেক সময় দেহে রক্ত কম দেখা যায় ও তাহার জন্য রক্তশূণ্যতা থাকে।
খ) দেহের গঠন কৃশকায় হয়-দেহ ঠিকমত বর্ধিত ও পুষ্ট হয় না।
গ) মাথা ধরা, মাথা ব্যথা, মাথা ভার প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়।
ঘ) অনেক সময় ঋতু খুব সামান্য হয়। অনেকের আবার দেরীতে হইলেও পরিমাণে বেশী হয়।
৫) তলপেট ভারী বোধ। শরীর অসুস্থ, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ দেখা যায়।
চ) উরুতে ভারবোধ হয়। পেটে, বুকে ও স্তনে অনেক সময় ব্যথা দেখা দেয়।





প্রশ্ন- বাধক বেদনার কারণ ও লক্ষণসমূহ কি কি?

উত্তর: বাধক বেদনার কারণ- রজঃস্রাবের নানা গোলমাল, ডিম্বশয়ের নানা রোগ, জরায়ুর রোগ প্রভৃতি কারণে এই ব্যথা দেখা দেয়। যখন ঋতু হয় তখন তলপেটে ও কোমরে খুব ব্যথা হইতে দেখা যায়। যথা-
ক) বস্তি গহ্বরে অবস্থিত সব যন্ত্রাদিতে রক্তাধিক্য হয় কিন্তু ঠিকমত ঋতু পরিষ্কার না হইলে এইরূপ হইয়া থাকে।
খ) জরায়ুর পেশীর অস্বাভাবিক ও প্রবল সংকোচনের জন্য এইরূপ হইতে দেখা যায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ইহাই প্রধান কারণ।
গ) ডিম্বাশয়ের রোগ, জরায়ুর ব্যাধি বা জন্মগত পরিণতির জন্যও অনেক সময় এই জাতীয় বাধক বেদনা হইতে দেকা যায়।

বাধক বেদনার লক্ষণসমূহ-
ক) মসিক খুব কম পরিমাণে হয়। অল্প অল্প ঋতুস্রাব হয় ও তাহার সঙ্গে জরায়ু বা তলপেটে ব্যথা হয়।
খ) মাথাধরা ও মাথাঘোরা থাকে।
গ) অনেক সময় জ্বর এবং অধিক দুর্বলতা হইতে দেখা যায়।
ঘ) আলস্য, অগ্নিমান্দ্য, বদহজম প্রভৃতি নানা লক্ষণ দেখা দেয়।
ঙ) বমি বা বমনেচ্ছা প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।




প্রশ্ন- ভ্রূণবিদ্যা কাহাকে বলে? ভ্রূণের কয়টি পর্যায়?

উত্তর: ভ্রূণবিদ্যা- চিকিৎসা বিদ্যার যে অংশ গর্ভস্থ শিশুর বা ভ্রূণের ক্রমবিকাশ, ভ্রুণ দেহে রক্তসঞ্চালন, গর্ভফুল বা পাসেন্টা তথা ভ্রুণের সামগ্রিক বিষয়ের পর্যালোচনা করে তাহাকে ভ্রশ বিদ্যা বলে। ভ্রূণের পর্যায়- ভ্রূণের ক্রমবিকাশকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হইয়াছে। যথা-
ক) ওডুলার পিরিয়ড গর্ভের প্রথম সপ্তাহ হইতে আরম্ভ করিয়া দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই পর্যায়।
খ) এমব্রায়োনিক পিরিয়ড গর্ভের ৩য় সপ্তাহ হইতে ৫ম সপ্তাহ পর্যন্ত এই পর্যায়। এই সময় গর্ভস্থ ভ্রূণ মানুষের আকৃতি ধারণ করে।
গ) ফিটাল পিরিয়ড- গর্ভের ৬ষ্ঠ সপ্তাহের পর হইতে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই পিরিয়ড।





প্রশ্ন-০২.২৫। ভ্রূণ ও ফিটাস কাহাকে বলে?

উত্তর: ভ্রুণ- গর্ভের প্রথম হইতে আরম্ভ করিয়া অষ্টম সপ্তাহ পর্যন্ত সমস্ত কাঠামোকে ভ্রুণ বলে।
ফিটাস- গর্ভের অষ্টম সপ্তাহ হইতে আরম্ভ করিয়া প্রসবের পূর্ব মহূর্ত পর্যন্ত গর্ভস্থ শিশুকে ফিটাস বলে।






প্রশ্ন-  ভ্রুণদেহের ক্রমোন্নতি বা ক্রমবিকাশ বর্ণনা কর।

উত্তর: ভ্রুণদেহের ক্রমোন্নতি বা ক্রমবিকাশ- স্ত্রীগ্রন্থি হইতে নিষ্ক্রান্ত স্ত্রী বীজের (ওভাম) সহিত পুংবীজ বা শুক্রকীটের মিলন ঘটিয়া জরায়ুর ভিতর গিয়া পড়িবার পর সেখানেই তাহা বড় হইতে থাকে। প্রথমে ভ্রুণ একটা কীটের মত গর্ভাশয়ে অবস্থান করে।

প্রথম মাস- প্রথম কয়েক দিন ভ্রুণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তিন চারদিন পর ভ্রূণের মাপ দাঁড়ায় ০.০৪ ইঞ্চির মত। প্রথম মাসের শেষে ভ্রূণ দেহের দৈর্ঘ্য হয় ০.৫০ ইঞ্চি-১ ইঞ্চি। প্রথমে গর্ভস্থ শিশুর মাথা ও মস্তিষ্ক তৈরী শুরু হয়। এই সময় হাত পা তৈরী শুরু হওয়ায় মটরের মত উঁচু হয়।

দ্বিতীয় মাস- গর্ভস্থ শিশুর হাত পা ক্রমশ বড় হইতে থাকে। ওভামের ডায়ামিটার ১ হইতে ২ ইঞ্চির মত হয়। ভ্রূণ ১ ইঞ্চির কিছু বড় হয়। স্যাকের আকার মুরগীর ডিমের মত হয়। দেহের তুলনায় মাথা বড় হইতে থাকে। ওজন ১ আউন্সের দশভাগের এক ভাগের মত।

তৃতীয় মাস- হাত পায়ের আঙ্গুল দেখা যায়। ওজন ১ আউন্সের কি? কম হয়। গর্ভফুলের গঠন হয়। স্যাক বা থলি আকারে রাজহাসের ডিমের মত হয়। ফিটাস সাড়ে তিন ইঞ্চি লম্বা হয়।

চতুর্থ মাস- ফিটাসের দৈর্ঘ্য শীঘ্র বৃদ্ধি পাইতে থাকে। ফিটাস ৪ হইতে ৭ ইঞ্চির মত লম্বা হয়। যৌন অঙ্গগুলি স্পষ্ট হওয়ায় স্ত্রী পুরুষ ভেদ করা যায়। চোখ, নাক, মুখ বন্ধ থাকে। পেটের ভিতর সামান্য নড়াচড়া করিতে থাকে।

পঞ্চম মাস- পঞ্চম মাসের ভ্রুণের মধ্যে চেতনার সঞ্চার হয়। ফিটাস ৮ হইতে ১০ ইঞ্চির মত লম্বা হয়। মাথার চুল তৈরী হয়। ওজন প্রায় দেড় ফাউন্ডের মত হয়। স্টেথোস্কোপের দ্বারা শিশুর স্পন্দন অনুভব করা যায়।

ষষ্ঠ মাস- ফিটাসের আকার ও ওজন বৃদ্ধি পায়। প্রায় ১১ হইতে ১৩ ইঞ্চি লম্বা, হয়। ভ্রু ও চোখের পাতা তৈয়ার হয়। পেটের ভিতর বেশ নড়াচড়া করে। চামড়া কোঁচকানো থাকে এবং গায়ে আঠাযুক্ত পদার্থ মাখানো থাকে।

সপ্তম মাস- ফিটাস ১৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। শরীরের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি প্রায় পুরাপুরি তৈয়ারী হইয়া যায়। ওজন তিন পাউন্ডের কাছাকাছি। চামড়া কুঁচকে যাওয়ায় বুড়ো মানুষের মত দেখায়। চোখের পাতা খুলিতে পারে। এই সময় শিশু জন্মগ্রহণ করিলে বিশেষ তত্ত্বাবধানে বাঁচিয়া যাইতে পারে।

অষ্টম মাস- ফিটাসের ওজন প্রায় চার পাউন্ডের মত হয়। লম্বায় ১৬ ইঞ্চির মত। চামড়া কোঁচকানো থাকে না। আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত নখ পৌছায়।

নবম মাস- ফিটাসের ওজন প্রায় ৫ পাউন্ড হইতে ৬ পাউন্ড হয়। লম্বা ১৮ ইঞ্চি হয়। মাথায় সুন্দর চুল হয়। পুরুষ শিশুর অন্ডকোষ অন্তাবরনীতে নামিয়া আসে।

দশম মাস- ওজন ৭ পাউন্ড হয়। লম্বা ২০ ইঞ্চি। নখগুলি লম্বা হয়। চামড়া কোঁচকানো থাকে না। গর্ভাকাল পূর্ণ হইলে সম্পূর্ণ মানবাকৃতি লইয়া এই ভ্রূণ ভূমিষ্ট হয়।





প্রশ্ন- ভ্রুণদেহে রক্ত সঞ্চালন বা ফিটাস সার্কুলেশন বর্ণনা কর।

উত্তর: ভ্রুণদেহে রক্ত সঞ্চালন বা ফিটাস সার্কুলেশন- ভ্রণজীবনের অমরা বা প্লাসেন্টা 'শ্বাস প্রশ্বাস কার্য চালনা করে। ভ্রূণের রক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে এবং মায়ের রক্ত হইতে ভ্রূণ অক্সিজেন গ্রহণ করে। ভ্রূণের রক্ত দক্ষিণ ও বাম নাভি ধমনীর মধ্যদিয়া প্লাসেন্টায় প্রবেশ করে এবং নাভি শিরার মধ্য দিয়া ভ্রূণ দেহে ফিরিয়া আসে। এইভাবে অক্সিজেনযুক্ত খাদ্যবস্তু সম্বলিত রক্ত যকৃত মধ্যে প্রবেশ করে। এইখানে রক্তের প্রধান অংশ ডাকটাস ভেনোসাসের মধ্য দিয়া সরাসরি ইনফিরিয়র ভেনাকাভাতে প্রবেশ করে এবং অবশিষ্ট অংশ পোর্টাল রক্তের সহিত মিশ্রিত হয়। ইনফিরিয়ার ভেনাকাভা একাধারে নিম্ন দেহাঙ্গের রক্ত, যকৃত শিরার রক্ত এবং ডাকটাস ভেনোসাসের রক্ত পরিবহণ করে। এই ভেনাকাভাস্থিত রক্তের প্রধান অংশ ফোরামেন ওভালের মধ্য দিয়া সোজাসুজি বাম অলিন্দে প্রবেশ করে এবং অবশিষ্ট অংশ ডান অলিন্দে প্রবেশ করে। বাম অলিন্দে ইনফিরিয়র ভেনাকাভা হইতে আগত রক্ত ফুসফুস হইতে আগত ক্ষুদ্র রক্ত প্রবাহের সহিত মিলিত হয়। ইহার পর ইহা বাম নিলয়ে প্রবেশ করে এবং মহাধমনীতে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই স্থানে অধিকাংশ রক্তই মস্তক ও উপর প্রত্যঙ্গে প্রেরিত হয় এবং অতি অল্প পরিমাণ রক্ত নিম্নগামী মহাধমনীতে গিয়া পৌঁছায়। মস্তক ও উপর প্রত্যঙ্গ হইতে প্রত্যাগত রক্ত সুপিরিয়র ভেনা কাভার মধ্য দিয়া ডান অলিন্দে আসিয়া উপস্থিত হয়। ডান অলিন্দে ইনফিরিয়র ভেনা কাভার এবং সুপিরিয়র ভেনাকাভার অক্সিজেন সম্পৃক্ত রক্ত একসাথে মিলিত
হয়।





চিত্র: ভ্রুণদেহের রক্তসংবহন পদ্ধতি

ইহার পর এই রক্ত ডান নিলয়ে প্রবেশ করে এবং সেখান হইতে ফুসফুসীয় ধমনীতে নিক্ষিপ্ত হয়। কিন্তু এই সময় ফুসফুস নিষ্ক্রিয় থাকায় সেখানে রক্তের কোন ক্রিয়া থাকে না বলিয়া অতি অল্প রক্ত তাহাদের দিকে গিয়া ফুসফুসীয় শিরা দিয়া বা অলিন্দে পৌঁছায়। অপর পক্ষে বাম অলিন্দে ইনফিরিয়র ভেনাকাভাও ফুসফুসীয় শিরার মিশ্রিত রক্ত তন্ত্রীয় সংবহনতন্ত্রের মাধ্যমে ভ্রুণদেহে ছড়াইয়া পড়ে। প্রথমে করোনারী ধমনীর মাধ্যমে হৃদপিন্ডে, ইহার পর মস্তিষ্কে, তাহার পর দেহের উর্ধাংশে এবং অবশিষ্টাংশ অবরোহনকারী মহাধমনীর মাধ্যমে নিম্ন দেহাঙ্গে ছড়াইয়া পড়ে। এই প্রকার রক্ত প্রবাহে দেখা যায় যে, মস্তক ও উপর প্রত্যঙ্গ অভিমুখে অপেক্ষাকৃত বিশুদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হইয়া থাকে। সেজন্য সন্তান ভূমিষ্ট হইবারকালে তাহার ঐ দুই অঙ্গ সমধিক পুষ্ট দেখা যায় কিন্তু নিম্ন প্রত্যঙ্গ অভিমুখে সর্বাপেক্ষা অপরিশুদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হওয়ার ফলে তাহা অপরিণত অবস্থায় থাকিয়া যায়।

অন্যদিকে দক্ষিণ নিলয় কর্তৃক নিক্ষিপ্ত ফুসফুসীয় ধমনীস্থিত রক্ত অংশত ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং অবশিষ্ট প্রধান অংশ সোজাসুজি ডাকটাস আরটারিওসাসের মাধ্যমে মহাধমনীতে প্রবেশ করে। এই রক্ত ভ্রুণ দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হইয়া পুনরায় নাভিধমনীর মাধ্যমে প্লাসেন্টায় প্রবেশ করে। এইভাবে ভ্রূণের দেহের রক্ত সঞ্চালিত হয়।




প্রশ্ন-গর্ভধারণ বলিতে কি বুঝ?
বা, কিভাবে গর্ভ সঞ্চার হয়, ইহা কত প্রকার?

উত্তর : গর্ভধারণ বা গর্ভসঞ্চার- স্ত্রী পুরুষের মিলনের শেষভাগে যোনিপথে পুরুষের শুক্র আসিয়া পতিত হয়। আবার শুক্র অসংখ্য শুক্রকীট বা পুংবীজে পরিপূর্ণ থাকে। এই শুক্রকীট স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের উপর দিকে আকৃষ্ট হয়। এই সময়ে স্ত্রী গ্রন্থি বা ওভেরী হইতে জরায়ু বা ফ্যালোপিয়ান টিউবে আগত স্ত্রী বীজের সহিত শুক্রকীটের মিলন ঘটিলেই গর্ভসঞ্চার বা গর্ভ উৎপাদন হয়। ইহাই গর্ভধারণ। গর্ভধারণ দুইপ্রকার। যথা- স্বাভাবিক গর্ভধারণ ও অস্বাভাবিক গর্ভধারণ।





প্রশ্ন-  স্বাভাবিক গর্ভ বলিতে কি বুঝ?

উত্তর: কোন নিয়মিত মাসিকধারী বিবাহিতা স্ত্রীলোকের মাসিক বন্ধ হইলে গর্ভের লক্ষণ সন্দেহ করা হয় এবং ৯৮% ক্ষেত্রে গর্ভ প্রমাণিত হয়। স্ত্রী পুরুষের মিলনের ফলে জরায়ুতে নিঃসৃত স্পার্মাটোজায়া এবং ওভুলেশনের পর ওভারী হইতে জরায়ু বা ফ্যালোপিয়ান টিউবে আগত ডিম্বের মিলনের ফলে গর্ভসঞ্চার হয়। ইহাকেই স্বাভাবিক গর্ভ বলে।





প্রশ্ন-  স্বাভাবিক গর্ভধারণের আনুমানিক লক্ষণগুলি কি কি?

উত্তর: স্বাভাবিক গর্ভধারণের লক্ষণসমূহকে নিম্নোক্ত শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) আনুমানিক লক্ষণ,
খ) নিশ্চিত লক্ষণ।
গর্ভের আনুমানিক লক্ষণ- গর্ভের আনুমানিক লক্ষণগুলি নিম্নরূপ-
১) ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া- যাহাদের নিয়মিত ঋতু হয় তাহাদের যদি হঠাৎ ঋতু বন্ধ হইয়া যায় এবং সেই সাথে গর্ভের অন্যান্য লক্ষণগুলি বর্তমান থাকে তাহা হইলে ইহাকে গর্ভের একটি লক্ষণ বলিয়া ধরা যায়।

২) প্রভাত ক্লান্তি বা মর্নিং সিকনেস ও বমিভাব- গর্ভের মাস হইতে আরম্ভ করিয়া সাড়ে তিন মাসের মধ্যে শতকরা ৫০ জন গর্ভবতী নারী সকালে ঘুম হইতে উঠিবার পর ক্লান্তিবোধ করে অথবা তাহাদের বমি ভাব হয়। এই প্রভাত ক্লান্তির সাথে যদি নিয়মিত ঋতুবন্ধ থাকে তাহা হইলে গর্ভ হইয়াছে বলিয়া সন্দেহ করা যায়। পাকাশয় প্রদাহে বা গ্যাস্ট্রাইটিসেও এইরূপ হইয়া থাকে বলিয়া কেবল প্রভাত ক্লান্তি কে নিশ্চিত গর্ভের লক্ষণ বলা যায় না না।

৩) স্তনের পরিবর্তন বা ব্রেস্ট চেঞ্জেস স্তনে ব্যথা হয়, স্তন বৃদ্ধি পায় এবং ক্রমশ বেদনা হয়। ইহাও অবশ্য গর্ভের নিশ্চিত লক্ষণ নয়। কারণ অ-গর্ভবতী নারীদেরও অনেক সময় স্তন টাটায় এবং ওভারিয়ান সিস্ট ও ফাইব্রয়েড বর্তমান থাকিলে স্তন হইতে জলীয় পদার্থ গালিয়া বাহির করা যায়।

৪) বারংবার প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছা বা ফ্রিকোয়েনসি মিকচুরিসন- গর্ভের তিনমাস পূর্ণ হইবার পূর্বে বার বার প্রস্রাব ত্যাগ করিতে হয়। অবশ্য গর্ভ ছাড়া অন্য কারণেও ইহা হইতে পারে।

৫) ত্বকের পরিবর্তন বা স্কিন চেঞ্জ- স্তনে প্রাথমিক ভেলার উপর আবার ভেলা পড়িলে তাহা গর্ভের বিশেষ লক্ষণ হইলেও নিশ্চিত লক্ষণ নয়। গর্ভাবস্থায় পেটে, উরুতে, এবং স্তনে একটা নীল বর্ণের বা ঈষৎ নীল বর্ণের ফাটা দাগ হয়।

৬) পেটের মধ্যে সন্তান নড়িবার প্রথম অনুভূতি বা কুইকনিং- সাধারণতঃ৪/৫ মাসে মাতা পেটে সন্তানের নড়াচড়া টের পান। তবে পেটে বায়ু হইলে বা মলনাড়ী নড়িলে বা মিথ্যাগর্ভ হইলেও সন্তান নড়িবার মত হয়।

৭) নিম্নদরের আয়তন বৃদ্ধি বা এনলার্জড অ্যাবডোমেন- তৃতীয় মাসের প্রায় 'শেষ দিক হইতে অথবা চতুর্থ মাসের প্রথমদিক হইতে নিম্নোদরের আয়তন বাড়িতে থাকে। সেই সময় বর্ধিত গর্ভাশয়ের উপরিভাগ নাভির সমস্তরে পৌছায়। এই সময় হইতে শিশুর জন্মের পূর্ব পর্যন্ত গর্ভাশয় ক্রমসঃ বৃদ্ধি পায় এবং নিম্নোদরের পরিসরও সেইসঙ্গে বৃদ্ধি পায়। তবে এইরূপ হইলেই নিশ্চিত গর্ভ বলিয়া মনে করা উচিত হইবে না কারণ মিথ্যাগর্ভ, উদরি, ম্যালেরিয়া জনিত পেট বড় হওয়া, আর রোগ বা ফাইব্রয়েড প্রভৃতি কারণেও নিম্নোদরের আয়তন বৃদ্ধি পাইতে পারে।





প্রশ্ন- গর্ভের নিশ্চিত লক্ষণগুলি কি কি?

উত্তর: গর্ভের নিশ্চিত লক্ষণ- গর্ভের নিশ্চিত লক্ষণ বা প্রমাণ নিম্নরূপ। যথা-
১) ভ্রুণের হৃদস্পন্দন বা ফিটাল হার্ট সাউন্ড- গর্ভের পঞ্চম মাস হইতে ভ্রুণের শব্দ শোনা যাইতে পারে।

২) ভ্রুণের নড়াচড়া বা ফিটাল মুভমেন্টস- গর্ভের পঞ্চম মাস হইতে ভ্রূণের নড়াচড়া অনুভূতি হয়।

৩) ভ্রুণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বা ফিটাল পার্টস পেটের উপর হাত দিয়া ষষ্ঠ মাসে ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অনুভব করা যায়।

৪) এক্স-রে পরীক্ষা- এক্স-রে পরীক্ষা দ্বারা ভ্রূণের অস্থির ছায়া দেখিতে পাওয়া যায়। গর্ভের ৪ মাসের সময় ফটোগ্রাফে ভ্রূণের অস্থির ছায়া দেখা যাইবে।

৫) গ্র্যাভিন ডেস্ক টেস্ট- সম্ভাব্য ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়র ১৩ দিন পর গর্ভবতীর মূত্র পরীক্ষা করিয়া গর্ভ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়।





প্রশ্ন- একজন গর্ভবতী মহিলার ঋতুস্রাব বন্ধ হইলে কি কি লক্ষণাদি প্রকাশ পায়?

উত্তর : গর্ভবতী মহিলার ঋতুস্রাব বন্ধ হইলে নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়। যথা-
ক) প্রথম তিনমাস কাল: লক্ষণ-
১) এক হইতে তিন মাস পর্যন্ত ঋতু বন্ধের ইতিহাস পাওয়া যাইবে।
২) প্রাতঃকালে অস্বস্তিবোধ, দুর্বলতা, সকালে বমি বমি ভাব বা সামান্য বমন হয়।
৩) স্তনে ব্যথা অনুভব হয়।
৪) মুখে অরুচিবোধ বা ভিন্নরুচি।
৫) প্রস্রাবে কষ্ট, বার বার প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছ।

চিহ্ন -
১) স্তনের বোঁটার চতুর্দিকে কাল দাগ পড়ে।
২) স্তনের বোঁটার উপর শিরার দাগগুলি স্পষ্টভাবে ফুটিয়া উঠে।
৩) যোনিপ্রদেশে বেগুনি রং ধরে।
৪) যোনি দেওয়াল পুরু ও নরম হয়।
খ) দ্বিতীয় তিনমাস কাল:

লক্ষণ-
১) চার হইতে ছয় মাস পর্যন্ত ঋতুস্রাব বন্ধের ইতিহাস পাওয়া যাইবে।
২) স্তন বৃদ্ধি পায়।
৩) ভ্রুণের নড়াচড়া অনুভূত হয়।
৪) পেট বড় হয়।
৫) মাহু, ভাত প্রভৃতির গন্ধ সহ্য হয় না।
৬) স্তন হইতে একপ্রকার আঠাল পদার্থ বাহির হয়।

চিহ্ন
১) পেটে ও স্তনের বোঁটায় কাল দাগ দেখা যায়।
২) জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণ অনুভূত হয়।
৩) শেষ দিকে সন্তানের অবস্থিতি হাত দ্বারা অনুভূত হয়।
৪) ভ্রুণের হৃদস্পন্দন শব্দ পাওয়া যায়।
গ) তৃতীয় তিনমাস কাল:

লক্ষণ-
১) সাত বা তাহার অধিক মাস পর্যন্ত ঋতু বন্ধের ইতিহাস পাওয়া যাইবে।
২) শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হয়।
৩) ভ্রূণের নড়াচড়া অনুভব করা যায়।
৪) পেট আরও বড় হয়।

চিহ্ন
১) পেটে সাদা সাদা দাগ দেখা দেয়।
২) ভ্রুণের হৃদস্পন্দন শব্দ শুনিতে পাওয়া যায়।
৩) ভ্রুণের শরীরের অংশ হাতে অনুভব করা যায়।
৪) এক্সরের সাহায্যে ভ্রুণের হাড়ের ছবি দেখা যায়।




প্রশ্ন-  গর্ভবতী মহিলার গর্ভ নিশ্চিত হওয়ার জন্য হরমোন টেস্ট (Hormone Test) কিভাবে করা হয়?

উত্তর: হরমোন টেস্ট (Hormone Test): একটি পরিষ্কার টেস্ট টিউবে শুষ্ক গোন্যাডোট্রফিক হরমোন ডিস্টিল্ড ওয়াটারের সাথে মিশাইয়া একটি দ্রবণ প্রস্তুত করিতে হয়। যে মহিলা গর্ভবতী হইয়াছে বলিয়া সন্দেহ, ভোরবেলা তাহার প্রস্রাব সংগ্রহ করিয়া ঐ প্রস্রাব হইতে দুই ফোঁটা প্রস্রাব টেস্ট টিউবের দ্রবণে ফেলিয়া টেস্ট টিউবকে একটি আয়নার উপর স্থাপন করিতে হয়। যদি মহিলা গর্ভবতী হইয়া থাকেন তাহা হইলে টেস্ট টিউবের তলদেশে একটি গোলকার বলয় (Ring) দেখা • যাইবে।





প্রশ্ন- এচিম জোনডেক টেস্ট (Aschheim-Zendek Test) এর বর্ণনা দাও।

উত্তর : এচিম জোনডেক টেস্ট (Aschheim-Zondek Test) : ৩ সপ্তাহ বয়স যুক্ত পাঁচটি ইঁদুর নিতে হইবে। গর্ভিনী সন্দেহযুক্ত নারীর ভোরের প্রস্রাব নিয়া ইঁদুরের দেহে ৩০ মি.লি. করিয়া ২ বার সাব কিউটেনিয়াস ইনজেকশন দিতে হইবে। ৫ দিনে সকল ইঁদুর মারা যাইবে। তখন তাহাদের দেহ কাটিয়া পরীক্ষা করিলে তাহাদের ওভারীতে কর্পাস লুটিয়াম এবং রক্তক্ষরণের জন্য ওভারীতে কাল দাগ (Spot) দেখা দিলে এবং জরায়ু ও যোনির বৃদ্ধি দেখা দিলে বুঝা যাইবে যে ঐ নারী গর্ভবর্তী।





প্রশ্ন-  জিনোপাস টেস্ট (Xenopus Test) এর বর্ণনা দাও।

উত্তর : জিনোপাস টেস্ট (Xenopus Test): ইহা করা হয় বড় স্ত্রী সোনা ব্যাঙ বা কোলা ব্যঙের দেহের উপর। বন্দী অবস্থা রাখিলে ইহাদের ওভারীতে পূর্ণ ডিম্ব সৃষ্টি বন্ধ থাকে। ইহাদের ডরসাল স্যাকে নারীর ২ মি.লি. প্রস্রাব ইনজেকশান দেওয়া হয়। দেখা যাইবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যাঙের ডিম্বকোষে পূর্ণাঙ্গ ডিম্ব সৃষ্টি হইয়াছে। কমপক্ষে ৫-৬ টি ডিম্ব নিঃসৃত না হইতে টেস্টটি সঠিক বুঝা যায় না। ব্যাঙকে জীবিত রাখিয়া দিলে ডিম্ব বাহির হইতে থাকিলেই বুঝা যায় যে টেস্টটি পজিটিভ।




প্রশ্ন-  হেগার্স সাইন এর বর্ণনা দাও।

উত্তর: হেগার্স সাইন- দেড় মাস হইতে আড়াই মাসের মধ্যে এই চিহ্ন টের পাওয়া যায়। জরায়ু গ্রীবা এবং জরায়ু নরম হয়। ডিম্বাণু বা ওভাম জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশে থাকে। একহাত জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশের পিছন দিয়া যদি জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশকে সামনের দিকে ঠেলিয়া দেওয়া হয় এবং অন্য হাতের আঙ্গুল যদি জরায়ু গ্রীবার নরম জায়গায় রাখিয়া পিছন দিকে ঠেলিয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে বর্ধিত জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশ এবং জরায়ু গ্রীবা অনুভব করা যায়। ইহাদের মধ্যে অবস্থিত নরম জরায়ুর হয়তো টের নাও পাওয়া যাইতে পারে।



বাহিরের হাতের আঙ্গুল এবং ভিতরের হাতের আঙ্গুল ঐ স্থানে প্রায় একত্র হইয়া যায়। এই চিহ্নকেই বলা হয় হেগার্স সাইন (Hager's Sign)। এই লক্ষণ হেগার সাহবের আবিষ্কৃত বলিয়া উহাকে হেগারের লক্ষণ বলা হয়।




প্রশ্ন- গর্ভ নির্ণয়ের পরীক্ষা বর্ণনা কর।

উত্তর: গর্ভসঞ্চারের পরীক্ষা প্রধানতঃ গর্ভবতী স্ত্রীলোকের মূত্রের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়। গর্ভবতীর মূত্রে গর্ভের প্রথম অবস্থায় গর্ভপুষ্পজাত যে যৌনাঙ্গ পোষক হরমোন অধিক পরিমাণে ক্ষরিত হয়, পরীক্ষার ফলাফলের জন্য প্রধানতঃ এই হরমোনই একমাত্র দায়ী। গর্ভসঞ্চারের এই জাতীয় পরীক্ষা অত্যন্ত কার্যকরী।

১) অ্যাচিম্য জনডেক বর্ণিত পরীক্ষা (Ascheim-zondec Test)- এই পরীক্ষার সাহায্যে সাধারণতঃ ৩ হইতে ৪ সপ্তাহ বয়সের অপরিণত ছোট ইঁদুর গ্রহণ করিতে হয়। গর্ভিনীর মূত্র প্রতিবারে ০.৪ হইতে ০.৫ মিলিলিটার পরিমাণ সেই ইঁদুরের পেরিটোনিয়াম ঝিল্লীর মধ্যে ৩দিন ধরিয়া ইনজেক্ট করা হয়। সেই প্রাণীটিকে পঞ্চম দিনে মারিয়া ফেলা হয়। ইহার পর ইহার ডিম্বাশয়কে পরীক্ষা করিলে দেখা যায় যে পীত গ্রন্থিগুলি রক্তস্রাবযুক্ত হইয়াছে যাহা প্রকৃত গর্ভবতী স্ত্রীলোকের সূচনা প্রদর্শন করে।

২) ফ্রিডম্যান বর্ণিত পরীক্ষা (Friedman Test)- স্ত্রী খরগোসের শিরাতে ১০ হইতে ১৫ মিলিমিটারের গর্ভকালীন মূত্র প্রবেশ করানো হইলে ১ হইতে ২ দিনের মধ্যে তাহার ডিম্বানু নিঃসরণ ঘটে। ডিম্বাশয়কে এই সময়ের মধ্যে পর্যবেক্ষণ করিলে রক্তস্রাবযুক্ত পীতগ্রন্থি দেখা যায়।

৩) কুপারম্যান বর্ণিত পরীক্ষা (Kupperman's Test)- ২ মি.লি. গর্ভকালীন মূত্র অপরিণত স্ত্রী জাতীয় ইঁদুরের পেরিটোনিয়াম ঝিল্লীর মধ্যে ইনজেক্ট করা হয় এবং ৬ ঘন্টার পর প্রানীটিকে মারিয়া ফেলা হয়। তখন ইহার ডিম্বাশয়ের রক্তবাহের প্রসারতা ও রক্তাধিক্য দেখা যায়।

৪) গ্যালি মৈনিনি বর্ণিত পরীক্ষা (Galli Mainini Test)- এই জাতীয় পরীক্ষা সর্বাপেক্ষা আধুনিক এবং অতি দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। পুরুষ জাতীয় কুনোব্যাঙ বা সোনা ব্যাঙে ২ হইতে ৩ মি.লি. মূত্র ইনজেকট করিলে ৩ হইতে ৪ ঘন্টার মধ্যে তাহাদের মূত্রে চলমান শুক্রাণুর আবির্ভাব ঘটে।

৫) হগহেন বর্ণিত পরীক্ষা (Hoghen Test বা Xenopus Test)- দক্ষিণ আফ্রিকার স্ত্রী জাতীয় নখর বিশিষ্ট জোনোপাস ব্যাঙের ত্বকের নিচে ২০ হইতে ৩০ মি.লি. গর্ভকালীন মূত্র ইনজেকট করিলে ৬ হইতে ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রচুর সংখ্যক ডিম্বাণুর আবির্ভাব ঘটে। যে জলাধারে প্রাণীকে রাখা হয় সেইখানে ডিম্বাণুগুলিকে জমা থাকিতে দেখা যায়।




প্রশ্ন- গর্ভাবস্থায় জরায়ুর অবস্থান বর্ণনা কর।

উত্তর: গর্ভাবস্থায় জরায়ুর অবস্থান- গর্ভের প্রথম মাসে জরায়ুর ওজন বৃদ্ধি হওয়ায় উহা পেলভিক ক্যাভিটি বা বস্তি গহ্বরের নিচে নামিয়া যায়। তিন মাস পর্যন্ত জরায়ু পেলভিক ক্যাভিটির ভিতর থাকে এবং পেটটি ধীরে ধীরে উঁচু হইতে থাকে। ৪ মাসের শেষে জরায়ু পিউবিসের ২ ইঞ্চি উপরে উঠে। ৫ মাসের সময় জরায়ু পিউবিস হাড় হইতে ৩ ইঞ্চি উপরে উঠে এবং এবডোমিন্যাল ওয়ালের সংস্পর্শে আসে। ফলে প্রসূতি গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া প্রথম অনুভব করে। প্রতি মাসে জরায়ু ১ ইঞ্চি করিয়া বড় হয়। ৬ মাসের সময় জরায়ু নাভি বরাবর আসে।





৭ মাসের সময় জরায়ু নাভি হইতে ২ ইঞ্চি উপরে উঠে। ৮ মাসের সময় জরায়ু নাভি হইতে ৪ ইঞ্চি উপরে উঠে। ৯ মাসের সময় জরায়ুর ফান্ডাস স্টার্নামের হাড়ের নিম্নাংশে পৌঁছায়। ১০ মাসের সময় ১ ইঞ্চি নিচে নামিয়া যায়।





প্রশ্ন- কিভাবে গর্ভবতীর প্রসবের বা শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার প্রত্যাশিত তারিখ বা E.D.D. (Expected date of delivery) নির্ণয় করা যায়?

উত্তর: শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার প্রত্যাশিত তারিখ বা E.D.D. (Expected date of delivery) নির্ণয়- প্রসবের প্রত্যাশিত তারিখ সাধারণতঃ মাসিকের প্রথম দিন হইতেই হিসাব করা হয়। মোট ২৭৫-২৮০ দিন পর্যন্ত সন্তান গর্ভে থাকে। তারপর প্রসব হয়। গর্ভধারিণীর প্রসবের প্রত্যাশিত তারিখ নিম্নলিখিত উপায়ে নির্ণয় করা যায়।

ক) প্রথম পদ্ধতি- শেষ ঋতুস্রাবের প্রথমদিন হইতে ৯ মাস সময় গণনা করিয়া তাহার সহিত ৭ দিন যোগ করিতে হইবে। যেমন কোন গর্ভবর্তী মহিলার শেষ ঋতুস্রাবের প্রথম দিন ছিল ১৪ই ডিসেম্বর। ১৪ই ডিসেম্বর হইতে ৯ মাস গণনা করিলে ১৪ই সেপ্টেম্বর পাওয়া যায়। এখন এই ১৪ই সেপ্টেম্বরের সাথে ৭ দিন যোগ করিলে ২১শে সেপ্টেম্বর হইবে ঐ গর্ভবতী নারীর প্রসবের প্রত্যাশিত দিন।

খ) দ্বিতীয় পদ্ধতি- শেষ ঋতুস্রাবের প্রথম দিন হইতে ৩ মাস পিছাইয়া যে তারিখ পাওয়া যাইবে সে সাথে ৭ দিন যোগ করিলে মোটামুটি ভাবে সন্তান প্রসবের প্রত্যাশিত দিন পাওয়া যায়। যেমন কোন গর্ভবতী মহিলার শেষ ঋতুস্রাবের প্রথম ছিল ২রা নভেম্বর। ২রা নভেম্বর হইতে ৩ মাস পিছনের দিকে গণনা করিলে ২রা আগস্ট পাওয়া যাইবে। ২রা আগস্টের সাথে ৭ দিন যোগ করিলে ৯ই আগস্ট পাওয়া যাইবে। এখন এই ৯ই আগস্ট হইবে ঐ গর্ভবতী নারীর সন্তান প্রসবের প্রত্যাশিত দিন।





প্রশ্ন- ব্যালটমেন্ট কি?

উত্তর: ব্যালটমেন্ট- গর্ভবতীর জরায়ু পরীক্ষার সময় যদি 'অসের' উপর সামান্য আঘাত করা হয় তবে একটা কি যেন শক্ত মত জিনিষ হাতে ঠেকিবে আবার সরিয়া যাইবে। এই অনুভূতির নাম ব্যাটল। চার মাসের সময় এই চিহ্ন পাওয়া যায়। এই পরীক্ষার সময় রোগীনীকে আধা বসা অবস্থায় রাখা উচিত।
 




প্রশ্ন-  প্যালপেশন কি? উহা কত প্রকার ও কি কি?
বা, গর্ভিনীর পেটে হাত দিয়া কিভাবে পরীক্ষা করা হয়?

উত্তর: গর্ভবতীর পেটের উপর হাত দিয়া ভ্রুণের অবস্থিতি পরীক্ষার নাম প্যালপেশন বা গ্রীপ। এই গ্রীপ চার প্রকার।

১) ফান্ডাস গ্রীপ- গর্ভবতী চিৎ হইয়া বিছানায় শুইয়া পা দুইটি হাঁটুর কাছে মুড়িয়া রাখিবেন। পরীক্ষা করার সময় পরীক্ষক গর্ভবতীর মুখের দিকে ফিরিয়া দাঁড়াইবেন। এই পরীক্ষা দ্বারা জরায়ুর, সর্বোচ্চ অংশে শিশুদেহের কোন অংশ আছে তাহা নির্ণয় করা যায়। জরায়ুর উপরের দিকে দুই হাতের আঙ্গুলের মাথা দিয়া ছাপ দিলে একটা শক্ত মত জিনিষ হাতে ঠেকিবে- এই শক্ত জিনিষটি শিশুর মাথা বা পাছা হইতে পারে। মাথা হইলে এক হাত দিয়া ঠেলিলে অন্য হাতে ঠেকিবে। পাছা ঐ রকম ঠেলিলে ধড় শুদ্ধ নড়িবে। কারণ মাথার গলা আছে, পাছার নাই। পাছার চাইতে মাথা ছোট।

২) ল্যাটালার গ্রীপ পরীক্ষক গর্ভবতীর মুখের দিকে ফিরিয়া দাঁড়াইয়া হাত দুইটি উদরের দুই পার্শ্বে রাখিবেন। নাভির দুই ধারে দুইটি হাত রাখিয়া চাপ দিয়া শিশুর পিঠ বা হাত পা বুঝা যায়। হাতে শক্ত জিনিষ ঠেকিলে আর উঁচু ডেলা ডেলা জিনিষ ঠেকিলে শিশুর হাত বা পা হইবে তলতলে এবং উঁচু নিচু, চাপ দিলে সরিয়া যাইবে।

৩) পলিকের গ্রীব- গর্ভবতীর ডান দিকে দাঁড়াইয়া এবং তাহার দিকে মুখ রাখিয়া দাঁড়াইবার পর পরীক্ষক পিউবিক অস্থির সন্ধিস্থলের উপরে উদরের নিম্নাংশটুকুর যদি একদিকে এক হাতের বৃদ্ধাংগুষ্ঠ এবং অন্যদিকে সেই হাতের অন্যান্য আঙ্গুলগুলির মধ্যে চাপ দিয়া ধরেন তাহা হইলে মুঠার মধ্যে একটা শক্ত মত জিনিষ পাওয়া যাইবে। উহা সন্তানের মাথা না হয় পাছা।

৪) পেলভিক গ্রীপ- গর্ভবতীর পায়ের দিকে মুখ রাখিয়া দাঁড়াইবার পর কুচকীর নিচে পেলভিসের ভিতর যতদূর চাপ দিয়া ঢুকাইতে পারা যায় ঢুকাইতে হইবে। LAO হইলে বামদিকে অর্থাৎ অকসিপুটের দিকে সহজে নামিয়া যাইবে আর ডানদিকে শিশুর কপাল ঠেকিবে। ইংরেজীতে ইহাকে 'হেড এনগেজড' বলে। এই উপায়ে শিশুর মাথা ও পাছা বোঝা যায়। প্রসবের কি অবস্থা তাহা বেশ ভাল ভাবেই বুঝা যায়।
উপরোক্ত ভাবে হাতের পরীক্ষা দ্বারা বুঝা যায়-
 
১) গর্ভবতীর পেটের উপর হাত দিয়া পরীক্ষা করিলে শিশুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ টের পাওয়া যায়।
২) প্রসবের প্রকৃত অবস্থা।
৩) শিশুর মাথা ভাসমান বা বস্তিগর্ভে আঁটিয়া আছে।
৪) মাথা নিচে নামিলে কতটুকু নামিয়াছে।
৫) জরায়ুর আকার পরিবর্তিত হইয়াছে কিনা এবং আকারের পরিবর্তন ঘটিলে তাহা হইতে প্রসবের অবস্থা নিরূপণ করা।





প্রশ্ন- গর্ভঝিল্লী বা ডেসিডুয়ার ক্রমবিকাশ আলোচনা কর।

উত্তর: গর্ভঝিল্লী বা ডেসিডুয়ার ক্রমবিকাশ-ঋতু আরম্ভের সময় হইতেই প্রস্ফুটিত ডিম্বানুকে গ্রহণ করিবার জন্য জরায়ু নিজেকে প্রস্তুত করিয়া রাখে। গর্ভ হইলে এই প্রস্তুতির মাত্রা আরও বাড়িয়া যায়। এই সময়ে জরায়ুর ভিতরকার পর্দা বা এন্ডোমেট্রিয়াম পুরু ও নরম হয়। এই পুরু ও নরম অন্তঝিল্লীই গর্ভঝিল্লী বা ডেসিভুয়া নামে পরিচিত হয়। গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরোন এই হরমোন দুইটির কর্মতৎপরতা খুব বাড়িয়া যায়।

ইস্ট্রোজেনের জন্য-
১) গর্ভঝিল্লীর কাজ করিবার ক্ষমতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়,
২) জরায়ুর ভিতরকার পর্দার আকার গর্ভ পূর্ব আকারের চাইতে চারগুণ বাড়িয়া যায়।

প্রজেস্টেরোন হরমোনের জন্য-
১) অন্তঃরসবাহী গ্রন্থিগুলির রস নিঃসৃত হইবার ক্ষমতা বাড়িয়া যায়,
২) রক্তবাহী শিরা ও ধমনীগুলির আকারও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

ইহার ফলে ডিম্বাণু শয্যা আর্দ্র, নরম ও স্পঞ্জের মত হয় এবং ডিম্বাণু তাহার উপযুক্ত ক্ষেত্র পাইয়া এখানে স্থির হইয়া বসে এবং পুষ্টি লাভ করে।
জরায়ু গহ্বরের সবচেয়ে নিকটে থাকে গর্ভঝিল্লীর বহিঃস্তর। এই বহিঃস্তরের নিচে স্পঞ্জের লেয়ার নামে আর একটি আর্দ্র ও কোমল স্তর আছে। এই স্তরের মধ্যেই কোরিয়ন নামে ভ্রুণের বাহিরের পর্দা হইতে গোলাপী রঙ এর এক রকম পুরু জাল বা ভিলাই উৎপন্ন হইয়া সমগ্র ডিম্বাণুকে জড়াইয়া রাখে এবং এই জাল হইতেই গর্ভফুল হয়। ইহা ছাড়া গর্ভঝিল্লীর অন্য অংশ হইতেছে সাধারণ ঝিল্লী। ইহা জরায়ুর আভ্যন্তরীণ আবরণ হিসাবে থাকে। ইহাই হইল জরায়ুর প্রকৃত গর্ভঝিল্লী। ডিম্বাণু বা ওভাম যতই বড় হইতে থাকে, গর্ভঝিল্লীর আবরক ঝিল্লীও ততই স্ফীত হইতে থাকে এবং দ্বাদশ সপ্তাহে ইহা সাধারণ ঝিলীর সহিত সম্পূর্ণ মিলিয়া যায় এবং তখন আর ইহার আলাদা অস্তিত্ব থাকে না। দ্বাদশ সপ্তাহের শেষের দিকে গর্ভফুলের গঠন সম্পূর্ণ হয়, কিন্তু গর্ভের দিন যতই বেশী হইতে থাকে গর্ভফুলও তদনুযায়ী বৃদ্ধি পাইতে থাকে।







প্রশ্ন-  গর্ভবতী বা প্রসূতি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি? প্রসূতি পরীক্ষা সম্বন্ধে যাহা জান লিখ।

উত্তর : প্রসূতি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রসবের কাজ নির্বিঘ্নে সুসম্পন্ন করিতে হইলে কি কি কারণে কি কি ধরণের বিপদ হইতে পারে তাহা পূর্ব হইতেই জানিয়া সাবধান হওয়ার জন্য গর্ভবতী বা প্রসূতিকে পরীক্ষা করা হয়। গর্ভবতীর সাধারণ অবস্থা ও স্বাস্থ্য ভাল না থাকিলে বিশেষ পরীক্ষা করিয়া কোন রোগ দেখিতে পাইলে তৎক্ষণাৎ তদনুযায়ী ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে নতুবা প্রসবের সময় বিঘ্ন ঘটিবার সম্ভাবনা আছে। এই সময়ে শিশুর ভঙ্গী, শয়ান, উপস্থিতি, অবস্থিতি প্রভৃতি বিষয় জানিতে পারিলে যদি কোন বিচ্যুতি থাকে তবে তাহা সংশোধন করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। গর্ভবতীর বস্তি গহ্বরের মাপ এই সময়ে লওয়া অত্যাবশ্যক। বস্তি গহ্বরে ও ভিতরের মাপ নিলে বৃহৎ শিশুটি সহজ বস্তি গহ্বরের ভিতর দিয়া বাহিরে আসিতে পারিবে কিনা তাহা বুঝিতে পারা যায়। স্বাভাবিক হইতে বস্তি গহ্বরের মাপ ছোট হইলে এবং শিশুর আকার অপেক্ষাকৃত বড় হইলে পূর্ব হইতেই অন্য উপায়ে প্রসব করানোর ব্যবস্থা করা সম্ভবপর হয়। প্রথম গর্ভবতী নারীর শিশুর মস্তক যদি প্রসব ব্যথা উঠিবার তিন সপ্তাহ আগেও বস্তি গহ্বরের প্রবেশপথ অতিক্রম না করে তাহা হইলে বিপদের আশংকা করিতে হইবে। এই সব কারণে প্রসূতি পরীক্ষা অত্যাবশ্যক।






প্রশ্ন-  প্রসূতি পরীক্ষা সম্বন্ধে যাহা জান লিখ।

উত্তর : গর্ভস্থ শিশুর অবস্থা নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ- গর্ভস্থ শিশুর অবস্থা নির্ণয় করিতে হইলে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি জানিতে হইবে। যথা-

শয়ান- গর্ভস্থ শিশুর দৈর্ঘ্য বরাবর যে রেখা তাহার সহিত মায়ের দৈর্ঘ্য বরাবর যে রেখা তাহাদের পারস্পরিক অবস্থানকে শয়ান বলে। জরায়ুর ভিতর লম্বালম্বি শয়ান স্বাভাবিক এবং আড়াআড়ি শয়ান অস্বাভাবিক। শিশুর শয়ান লম্বালম্বি হইলে সহজে প্রসব হয়। আড়াআড়ি শয়ানে স্বাভাবিক প্রসব হয় না।

ভঙ্গী- গর্ভস্থ শিশুর বিভিন্ন অংশের প্রতিটির সহিত প্রতিটির সম্পর্ককে ভঙ্গী বা এটিচিউট বলে। শিশুর মাতৃগর্ভে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মুড়িয়া অবস্থান করে। মাথা বুকের উপর ঝুলিয়া থাকে, বাহুদ্বয় বুকের উপর আড়াআড়ি ভাবে থাকে, পা দুইটি মুড়িয়া পেটের মধ্যে গুটানো থাকে, সমস্ত শরীর কুঁকড়াইয়া একটি বড় ডিমের মত আকার ধারণ করে। এই ভঙ্গীতে শিশুর অবস্থান সুবিধাজনক।

উপস্থিতি- বস্তি গহ্বরের প্রবেশপথে প্রথমে শিশুর দেহের যে অংশটি দেখা দেয় তাহাকেই বলা হয় উপস্থিতি। জরায়ু গ্রীবার মুখের ভিতর অঙ্গুলি ঢুকাইলে যে অংশ সর্বাগ্রে অনুভব করা যায় সেই অঙ্গেরই উপস্থিতি বলা হয়।

অবস্থিতি- গর্ভস্থ শিশুর কোন অংশের সহিত মায়ের বস্তিদেশের সম্পর্ককে বলা হয় অবস্থিতি বা পজিশন। অর্থাৎ শিশুদেহের কোন বিশিষ্ট অংশ ধরিয়া লইয়া উহা মাতৃদেহের সহিত কিরূপ স্বম্বন্ধে (সম্মুখ না পশ্চাৎ দিকে) অবস্থিত তাহা দেখিয়া শিশুর অবস্থিতি নির্ণয় হয়।

প্রবেশ করিয়া আট হইয়া বসা- শিশুর মাথার সবচেয়ে বড় ব্যাস বস্তিদেশের প্রবেশ পথে প্রবেশ করিয়া আঁটিয়া বসিলে আমরা মাথা বা হেড এনগেজড হইয়াছে বলিয়া থাকি। এই অবস্থায় যোনিপথে আঙ্গুল দিয়া উপরের দিকে চাপ দিলে মস্তক আর উপর দিকে উঠে না।

স্থিরবিন্দু- গর্ভস্থ শিশুর উপস্থিতির যে অংশ মায়ের বস্তিদেশের চারিটি অংশের যে কোন একটি অংশের সংস্পর্শে আসে তাহাকেই স্থির বিন্দু বলা হয়। স্থিরবিন্দু দিয়াই গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান নির্ণয় করা হয়। অবস্থিতি বুঝাইতে হইলে তিনটি বিষয় নির্ণয় করিতে হয়-

১) শিশুদেহের কোন অংশের উপস্থিতি হইতেছে?
২) উহা বস্তি গহ্বরের কোনদিকে (ডান বা বাম) অবস্থিত?
৩) স্থিরবিন্দু বস্তিদেশের সামনে বা পিছন দিকে ফিরানো আছে?






প্রশ্ন- স্টেথোস্কেপ দ্বারা কিভাবে গর্ভবতী পরীক্ষা করা হয়?

উত্তর: গর্ভবতীর পেটের উপর স্টেথোস্কোপ বুসাইয়া শিশুর বুকের হৃৎস্পন্দন শোনা যায়। ইহাকে ইংরেজীতে অস্কালটেশন বলে। অকসিপুট যদি সম্মুখে ও বামদিকে থাকে তাহা হইলে সম্মুখ ইলিয়াক স্পাইন এবং নাভির মাঝখানে শব্দ যন্ত্র বসাইলে শিশুর হৃৎস্পন্দন ভালভাবে শোনা যায়।
অকসিপুট পিছন ফিরানো অবস্থায় থাকিলে এবং বস্তি উপস্থিতিতে ঐ স্থানে স্টেথোস্কোপ বসাইলে শিশুর হৃৎস্পন্দন শুনিতে পাওয়া যায় না।
মুখ উপস্থিতিতে যেদিকে শিশুর হাত পা থাকে, সেই দিকে ভাল শোনা যায়। অন্যান্য উপস্থিতিতে পিঠের দিকে হৃৎস্পন্দন স্পষ্টতর হয়।




প্রশ্ন- প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল বলিতে কি বুঝ?

উত্তর: প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল- ভ্রুণ জরায়ুতে রোপিত হইবার পর ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জরায়ুর অন্তস্তরের কিছু সংখ্যক কোষ, ভ্রূণ ও জরায়ুর ভিলাইগুলি ও ট্রোপোব্লাস্ট কোষের সমন্বয়ে যে একটি অস্থায়ী গ্রন্থিময় দেহাংশ সৃষ্টি হয় তাহাকে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল বলে। ইহা পুরু গোলাকার থালার আকৃতির স্পঞ্জের মত বস্তু। ইহা একটি দ্বৈত রক্তপ্রবাহযুক্ত যন্ত্র।





প্রশ্ন-  প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের গঠন বর্ণনা কর।

উত্তর: প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের গঠন- জরায়ুর অন্তর্দেশস্থ গর্ভঝিল্লী ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইয়া গর্ভফুল গঠন করে। কোরিয়নিক জালগুলির (Chorionic Villi) গঠনই হইল গর্ভফুলের ক্রমবিকাশের প্রথম স্তর। ভিলাই এর অনুকোষগুলি দুইটি স্ত রে সাজানো রহিয়াছে। প্রতিটি ভিলাসে একটি করিয়া ধমনী ও একটি করিয়া শিরা আছে।

যে দুইটি কোষস্তর কোরিয়নিক জালগুলিকে আবৃত করিয়া রাখিয়াছে তাহার ভিতরকার স্তরকে ল্যাংহ্যানসের স্তর বলে। বাহির দিককার স্তরকে সিনসিটিয়াম স্তর বলা হয়। শেষোক্ত স্তরটি গর্ভঝিল্লীর আর্দ্র ও কোমল স্তরে অনুপ্রবেশ করিয়া মায়ের রক্তনালীতে গিয়া প্রবেশ করে। প্রথম কয়েক সপ্তাহ ডিম্বাণুর সমস্ত অংশই জাল দ্বারা আবৃত থাকে। জরায়ুর অন্তর্দেশস্থ গর্ভঝিল্লীর সহিত যে জালগুলি যুক্ত থাকে তাহারা খুব আড়াআড়ি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং পরিশেষে গর্ভফুল গঠন করে এবং যে জালগুলি ডিম্বাণুর অবশিষ্ট অংশ আবৃত করিয়া রাখে তাহারা কৃশ হইতে থাকে এবং প্রায় দ্বাদশ সপ্তাহে একেবারে বিলীন হইয়া যায়।

গর্ভফুলের যে দিকটা জরায়ুতে সংযুক্ত থাকে তাহাকে মাতৃদিক বা মেটারনাল সারফেস বলে এবং যে দিকটা ভ্রুণের দিকে থাকে তাহাকে বলা হয় ভ্রুণ দিক বা ফিটাল সারফেস। গর্ভফুলের জালগুলির মধ্যে দিয়া এবং চতুর্দিক দিয়া মাতৃ রক্ত প্রবাহিত হয়। জালগুলির চতুর্দিকে যে অনুকোষগুলি থাকে সেগুলি হইলে ভ্রুণ-রক্ত অক্সিজেন এবং পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য শোষণ করিয়া লয় এবং অপ্রয়োজনীয় পদার্থগুলি মাতৃরক্তে নির্গত করিয়া দেয়। গর্ভস্থ ভ্রূণের রক্ত সঞ্চালন হয় নাভি রজ্জু দিয়া গর্ভফুলে, এবং মায়ের রক্ত সঞ্চালন হয় জরায়ু ধমনী হইতে গর্ভফুলের অবস্থিতির জায়গা পর্যন্ত। উভয় রক্ত প্রবাহ প্লাসেন্টায় গিয়া একত্রে মিলিত হয় না।





প্রশ্ন- প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের কার্যাবলী বর্ণনা কর।

উত্তর : প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের কার্যাবলী- প্লাসেন্টার কার্যাবলীকে প্রধানতঃ দুইভাগে ভাগ করা যায়। তথা- বিনিময়ধর্মী কার্য ও অন্তক্ষরাধর্মী।
১) প্লাসেন্টার বিনিময়ধর্মী কার্য-
ক) প্লাসেন্টা নাভিরজ্জুর মাধ্যমে ভ্রুণকে গাত্রে সংলগ্ন করিয়া রাখে।
খ) মাতৃদেহ হইতে রক্তের মাধ্যমে ভ্রুণ ইহার দ্বারা খাদ্যবস্তু: হণ করে।
গ) প্লাসেন্টার মাধ্যমে ভ্রুণদেহের রেচন পদার্থ মায়ের দেহে চলিয়া যায় এবং মায়ের রক্ত, ঘাম প্রভৃতির মাধ্যমে ইহা রেচন হইয়া থাকে।
ঘ) পাসেন্টা ভ্রুণের বহিঃশ্বসন অঙ্গের কাজ করে। ফুসফুসের বায়ুথলীর ঝিল্লী ও কোষ ঝিল্লীর ন্যায় অক্সিজেন প্লাসেন্টার মধ্য দিয়া ব্যাপন পদ্ধতিতে ভ্রুণ রক্তে প্রবেশ করে।
ঙ) পাসেন্টা বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণু হইতে ভ্রুণকে রক্ষা করিতে সাহায্য করে।
চ) প্লাসেন্টা গর্ভের প্রথম কয়েক মাসে গাইকোজেন, স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন এবং কিছু পরিমাণ অজৈব লবণ সঞ্চয় করিয়া রাখে।

২) প্লাসেন্টার অন্তক্ষরাধর্মী কার্য- প্লাসেন্টা হইতে নানাবিধ হরমোন সৃষ্টি হইয়া থাকে। গর্ভকালে এই সকল হরমোন ভ্রুণের পুষ্টি, বৃদ্ধি ও মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষা প্রভৃতি কাজ করিয়া থাকে।
ক) প্লাসেন্টা গোনাডোট্রোফিন নামে একটি হরমোন নিঃসরণ করে, যাহা মায়ের স্তনে দুগ্ধ সৃষ্টি হইতে জরায়ুর বৃদ্ধি ও ভ্রুণের পুষ্টি ও বৃদ্ধি প্রভৃতি কাজে সাহায্য করে।
খ) ইহা প্রোজেস্টারোন হরমোন সৃষ্টি করে। এই হরমোন জরায়ুর অন্তস্তরের বৃদ্ধি, নিষিক্ত ডিম্বাণু রোপন ও স্তনবৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করে।
গ) ইহা এসট্রোজেন হরমোন ক্ষরিত করে। এই হরমোন শ্রোণী বন্ধনীর শিথিলতা ও জরায়ুকণ্ঠের প্রসারতা বৃদ্ধি করে।
ঘ) এন্টিরিয়র পিটুইটারী হরমোন জাতীয় একটি হরমোন প্লাসেন্টা নিঃসরণ করে।




প্রশ্ন- প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের বিভিন্ন প্রকার অস্বাভাবিকতা আলোচনা কর।

উত্তর : প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের বিভিন্ন প্রকার অস্বাভাবিকতা- প্লাসেন্টার অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হইল। যথা-
১) প্লাসেন্টা সাকসেনচুরিয়াটা- ইহা মূল প্লাসেন্টার একটি অংশ বিশেষ। প্রসবের সময় মূল প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলটি বাহির হইয়া যাওয়ার পর সম্ভবতঃ এই অংশটি জরায়ুর ভিতর থাকিয়া যায়। তাহার ফলে পোস্ট মার্টেম হেমারেজ অর্থাৎ ফুল পড়িয়া যাওয়ার পর কল কল করিয়া বেশ কিছুটা রক্ত বাহির হওয়া বা পরিশ্রান্ত রক্তস্রাব হওয়া বা সেপসিস (পচন) হইয়া থাকে।
ভ্রুণ পর্দা পরীক্ষা করিলে যদি ইহার ভিতর গোল ফাঁক পাওয়া যায় এবং এই ফাঁকের দিকে গর্ভফুল হইতে যদি রক্তশিরা প্রবাহিত হইতে দেখা যায়, তাহা হইলে মনে করিতে হইবে, ঐ ফাঁকের আকারের একটি গর্ভফুলের অংশ উহার ভিতরে আছে। এইরূপ হইলে অজ্ঞান করিয়া এই অংশটি বাহির করিয়া ফেলিতে হয়।
২) প্লাসেন্টা বাইপারটিটা বা ট্রাইপারটিটা- একই কর্ডে দুইটি বা তিনটি প্লাসেন্টার অংশ থাকে।
৩) প্লাসেন্টা সার্কামভ্যালাটা- এই প্রকারের গর্ভফুলের কোরিয়ন পর্দা গর্ভফুলের কিনারায় লাগিয়া না থাকিয়া কিনারা হইতে কিছু দূরে ভিতরে ভ্রুণের গায়ে লাগিয়া থাকে।
৪) প্লাসেন্টা অ্যাক্রিটা- এই ধরণের গর্ভফুল অতি বিরণ। গর্ভফুল জরায়ু দেওয়ালের গায়ে আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে লাগিয়া থাকে। এই গর্ভফুল জরায়ু দেওয়ালের গায়ে আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে লাগিয়া থাকে। এই গর্ভফুল ছাড়াইতে গেলে প্রচুর রক্তস্রাব হয়। এস্থলে অপারেশনের সাহায্য লওয়া হয়।
৫) ইনফারক্টস- প্লাসেন্টার মাতৃদিকে কখন লাল বা সাদা তালির মত স্থান দেখিতে পাওয়া যায়। ইহাকে বলা হয় ইনফারক্টস। ঠিকমত রক্ত সরবরাহ না হওয়ায় কোন স্থানের প্লাসেন্টার টিসু অকেজো হইয়া যায় তাহার ফলে লাল ও সাদা দেখায়। এক্লাম্পশিয়া রোগের প্রথমে বা রোগাবস্থায় ইহা দেখিতে পাওয়া যায় সেজন্য সদ্যোজাত শিশুর ওজন স্বাভাবিক হইতে কম হয়। আবার যদি এই ইনফারইস প্লাসেন্টায় ৭৫% অংশ জুড়িয়া যায় তবে মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হয়।
৬) ক্যালসিফিকেশন- প্লাসেন্টার মাতৃদিকে অনেক সময় ছাই রঙের সাদাটে তালির মত দেখা যায়।
৭) প্লাসেন্টা প্রিভিয়া- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া জরায়ুর উপর দিকে না থাকিয়া নিচের দিকে থাকে।





প্রশ্ন- রিটেনশন অব প্লাসেন্টা কাহাকে বলে?

উত্তর: সন্তান প্রসব হওয়ার আধঘন্টা পরও যদি প্লাসেন্টা জরায়ু হইতে পৃথক না হয় বা বাহির না হয় তবে ঐ অবস্থাকে রিটেনশন অব প্লাসেন্টা বলে।




প্রশ্ন- লাইকার অ্যামনাই কি? ইহার কাজ কি কি?

উত্তর: লাইকার অ্যামনাই- লাইকার অ্যামনাই বা অ্যামনিয়নের পানি এক প্রকার তরল পদার্থ। ইহা অ্যামনিয়াটিক স্যাকের ভিতর থাকে। প্রথমে ইহা পরিস্কার ও নির্মল থাকে গর্ভকাল যতই অগ্রসর হয় ততই ইহা ঘোল ও ঘন ঘন হয়। ইহার স্বাভাবিক পরিমাণ ১ হইতে ২ লিটার। ইহার পরিমাণ বেশী হইলে বলা হয় হাইড্রামনিয়স এবং কম হইলে বলা হয় অলিগো হাইড্রামনিয়স।
লাইকার অ্যামনাই-এর কার্যাবলী:

ক) গর্ভাবস্থায়-
১) ভ্রণকে স্বচ্ছন্দভাবে চলাফেরা করিতে সাহায্য করে।
২) ইহা ভ্রুণকে আঘাতের হাত হইতে রক্ষা করে।
৩) ইহা ভ্রুণদেহের উপর চাপ-সাম্যের ব্যাপারে সাহায্য করে।
৪) ভ্রুণদেহে তাপের সমতা রক্ষা করে।
৫) ইহা নাভিরজ্জুকে চাপ হইতে রক্ষা করে।
৬) ইহা আছে বলিয়াই অস্বাভাবিক উপস্থিতিকে স্বাভাবিক উপস্থিতিতে আনা সম্ভব।

খ) প্রসব ব্যথার সময়-
১) জরায়ুর মুখ খুলিতে সাহায্য করে।
২) ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যাহাতে অ্যামনিয়ন জলের সহিত জুড়িয়া না যায় তাহাতে সাহায্য করে।
৩) জরায়ু সংকোচনের চাপ হইতে ভ্রণ ও গর্ভফুলকে রক্ষা করে।
৪) শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বে যোনিপথ ধৌত করিয়া জীবাণু নাশে সাহায্য করে।





প্রশ্ন- নাড়িরজ্জু বা আমবিলিক্যাল কর্ড কি?

উত্তর: নাভিরজ্জু বা আমবিলিক্যাল কর্ড- ইহা ভ্রূণ ও প্লাসেন্টাকে যুক্ত করিয়া রাখিয়াছে। ইহা দেখিতে পাকানো দাড়ির মত। ইহা একদিকে ভ্রূণের নাভির সহিত এবং অন্যদিকে গর্ভফুলের ভ্রুণের সহিত সংশিষ্ট দিকের সহিত সংযুক্ত রহিয়াছে। গর্ভফুল ও ভ্রূণের মধ্যে শিরা অর্থাৎ আমবিলিক্যাল ভেন রহিয়াছে তাহহ্বা ভ্রণকে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। নাভিরজ্জু প্রায় ২২ ইঞ্চি লম্বা এবং আধা ইঞ্চি পুরু। নাভিরজুর ভিতর একটি শিরা এবং দুইটি ধমনী আছে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ইহা গর্ভফুলের কেন্দ্রস্থলে থাকে এবং কিছু সংখ্যক ক্ষেত্রে গর্ভফুলের কেন্দ্র হইতে কিছুটা দূরে থাকে। নাভিরঞ্জুর মধ্যেই দুইটি ধমনী ভ্রুণের রক্ত হইতে দূষিত দ্রব্যাদি সরাইয়া নেয়।





প্রশ্ন- পরিবর্তন হয়? গর্ভাবস্থায় জরায়ুর কি কি

উত্তর: গর্ভাবস্থায় জরায়ুর কি কি পরিবর্তসমূহ গর্ভ শুরু হওয়া থেকে প্রসব না হওয়া পর্যন্ত জরায়ুর অনেক রকম পরিবর্তন হয়। গর্ভবস্থায় জরায়ুর ওজন দুই আউন্স হইতে বৃদ্ধি পাইয়া দুই পাউন্ড পর্যন্ত দাঁড়ায়। লম্বায় ১২ ইঞ্চি ও চওড়ায় ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। গর্ভস্থ সন্তানকে ধারণ এবং রক্ষার জন্যই জরায়ুর প্রয়োজন।
গর্ভের প্রথম মাসে জরায়ুর ওজন বৃদ্ধি হওয়ায় উহা পেলভিক ক্যাভিটির নিচে নামিয়া যায়। ইহার ফলে পেট অস্বাভাবিক অবস্থা হইতেও একটু নিচু দেখায়। তিন মাস পর্যন্ত জরায়ু পেলভিক ক্যাভিটির ভিতর থাকে এবং পেটটি ধীরে ধীরে উঁচু হইতে থাকে। চার মাসের শেষে জরায়ু পিউবিসের ২ ইঞ্চি উপরে উঠে। পাঁচ মাসের সময় জরায়ু এবডোমিন্যাল দেওয়ালের সংস্পর্শে আসার ফলে প্রসূতি গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া প্রথম অনুভব করে। পেটের ভিতর সন্তান নড়ার প্রথম অনুভূতিকেই 'কুইকনিং' বলে। জরায়ু যতই বড় হতেই থাকে ততই উহা ক্ষুদ্র অস্ত্রের কুন্ডলীগুলিকে এক পাশে ঠেলিয়া দেয়। প্রতি মাসে জরায়ু ১ ইঞ্চি করিয়া বড় হয়।
গর্ভবস্থায় জরায়ুতে বেশী মাত্রায় রক্ত পরিবেশিত হওয়ার ফলে ধমনী ও শিরাগুলি স্ফীত হয়।
সার্ভিক্সের পরিবর্তন খুব সামান্যই হয়। ইহা আকারে তেমন বড় হয় না তবে নরম হয় এবং একটু বেশী মাত্রায় মিউকাস বাহির হয়।
আপার ইউটারিন সেগমেন্ট- ইহা ফান্ডাস ও জরায়ুর উপর দিকের দুই
তৃতীয়াংশ স্থান লইয়া গঠিত হওয়ায় প্রসব ব্যথার সময় সংকুচিত এবং প্রসারিত হয়।
লেয়ার ইউটারিন সেগমেন্ট-সার্ভিক্স ও জরায়ুর নিচের দিকের দুই ইঞ্চি স্থান হইতে ইহার উদ্ভব। প্রসব ব্যথার সময় ইহা প্রসারিত হয় ও পাতলা হয়।
ভ্যাজাইনা- ইহার স্বাভাবিক রং গোলাপী কিন্তু গর্ভ সঞ্চার হইলে ইহার রং ঈষৎ বেগুনি বা নীল হয়।





প্রশ্ন-  গর্ভাবস্থায় স্তনের কিকি পরিবর্তন হয়?

উত্তর : গর্ভাবস্থায় স্তনের পরিবর্তনসমূহ গর্ভের প্রথম মাসে স্তনে ব্যথা হইতে পারে। দ্বিতীয় মাসে স্তন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং সেই সাথে স্তনের ব্যাথাও বাড়িতে থাকে। এই স্তনবৃদ্ধির সাথে সাথে স্তনে রক্ত পরিবেশনের মাত্রা বাড়িয়া যায় এবং স্তনের অভ্যন্তরস্থ শিরাগুলি এই সময়ে স্পষ্টতর হইয়া উঠে। এই সঙ্গেই স্ত নাগ্রের চক্রাকার পরিবেষ্টিত কাল রঙ যুক্ত স্থানটি এবং চর্বি নিঃসরণকারী গ্রন্থিগুলি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। স্তনের বোঁটার চারদিকে কাল রং যখন তৃতীয় মাসে গাঢ়তর হয় তাহাকে ভেলা (Areola) বলে। প্রায় চার মাসে এই ভেলার চারিধারে আর একটি ভেলা পড়ে এবং এই ভেলার রঙ আগের মত মোটেই গাঢ় হয় না। এই ভেলার উপর ১০ হইতে ২০ টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্ত দানা হয়। সন্তান সম্ভাবনার তৃতীয়-চতুর্থ মাসে দুই চারি ফোঁটা পাতলা রস গালিয়া ফেলা যাইতে পারে।





প্রশ্ন-  প্রাইমি গ্রাভিডা বা নালীপ্যারা ও মালটি গ্রাভিডা বা মালটি প্যারা কাহাকে বলে?

উত্তর: প্রাইমি গ্রাভিডা বা নালীপ্যারা- প্রথম গর্ভবতী নারীকে বা প্রথম সম্ভ ান হওয়ার পর হইতে দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নারীকে প্রাইমি গ্যাভিডা বা নালীপ্যারা বলে।
 মালাটি গ্রভিটা বা মালাটিপ্যারা- দ্বিতীয় গর্ভবতী নারী বা বহুপ্রসবিনী নারীকে মালটি গ্রাভিডা বা মালাটি প্যারা বলা হয়।





প্রশ্ন-  ইরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিক কাহাকে বলে?

উত্তর: ইরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিক-যদি কোন স্বামীর রক্ত রেসাস পজিটিভ (Rh+) এবং স্ত্রীর রক্ত রেসাস নেগেটিভ (Rh-) দ্বারা একটি গর্ভের সৃষ্টি হয় এবং গর্ভস্থ ভ্রুণ যদি রেসাস পজিটিভ (Rh+) রক্ত লইয়া বৃদ্ধি পাইতে থাকে, তাহা হইলে ফিটারেসর রেসাস ফ্যাক্টর একটি এন্টিজেন হিসাবে কাজ করে এবং মায়ের রক্তে রেসাস এন্টিবডি প্লাসেন্টার বাধা অতিক্রম করিয়া ফিটাসের শরীরে প্রবেশ করিলে ফিটাসের রেসাস ফ্যাক্টর নামক এন্টিজেন এবং এই এন্টিবডির মধ্যে রিএকশন হইয়ার জরায়ুর মধ্যেই ফিটাসের মৃত্যু ঘটে অথবা প্রসব হওয়া মাত্র মৃত্যু হয়। রিএকশনের দরুন ফিটাসের মৃত্যুর পূর্বে ইরিথ্রোব্লাস্ট নামক প্রাথমিক রক্ত কণিকা অগণিত সংখ্যায় তৈরী হয় এইজন্য এই রিএকশনকে ইরিথ্রোরাস্টোসিস ফিটালিস বলে।






প্রশ্ন-  হাইড্রামনিয়াস ও অলিগো হাইড্রামনিয়াস কাহাকে বলে?

উত্তর: হাইড্রামনিয়াস- গর্ভকালে অ্যামনিয়টিক স্যাকের মধ্যে একপ্রকারা তরল পদার্থ থাকে। ইহার স্বাভাবিক পরিমাণ ১ হইতে ২ লিটার। ইহার পরিমাণ যদি খুব বেশী হয় তখন ইহাকে জলাধিক্য বা হাইড্রামনিয়াস বলে।
অলিগো হাইড্রামনিয়াস- গর্ভকালে অ্যামনিয়টিক স্যাকের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে ১ হইতে ২ লিটার লাইকার অ্যামনিয়াই নামক এক প্রকার তরল পদার্থ থাকে। ইহার পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থা হইতে কম হইলে যে অবস্থার সৃষ্টি তাহাকে অলিগো হাইড্রামনিয়াস বলে।






প্রশ্ন- প্রসব পূর্বকালীল যত্ন সম্বন্ধে কিছু উপদেশ দাও।
বা, গর্ভনীর স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়মগুলি কি কি?

উত্তর: গর্ভনীর স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়মসমূহ- সন্তান গর্ভে আসিবার পর হইতে উপযুক্ত পরিচর্যার অভাবে মাতা এবং গর্ভস্থ শিশুর নানা প্রকার রোগ হইয়া থাকে এবং ইহার ফলে মাতা এবং শিশু মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং গর্ভবতী নারীদের প্রসব পূর্বকালীন যত্ন নেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
 
ক) গর্ভের প্রথম হতেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা বা হাসপাতালে যাওয়া একান্ত কর্তব্য। সাধারণতঃ গর্ভবতীকে ৮ মাস পর্যন্ত মাসে একবার করিয়া, নবম মাসে দুইবার এবং তাহার পর সন্তান প্রসব নানা হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে একবার করিয়া হাসপাতালে যাওয়া উচিত।
খ) সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকিতে হইবে। দাঁত, যোনি, বক্ষ প্রভৃতি নিয়মিত ভালভাবে পরিষ্কার করিতে হইবে।
গ) অতিরিক্ত পরিশ্রম করিতে নাই। কোন ভারী জিনিষ উঠানো বা নামানে উচিত নয়।
ঘ) নিয়মিত স্বাভাবিক কাজ কর্ম করা উচিত।
ঙ) সহজে হজম হয় এইরূপ পুষ্টিকর খাদ্য খাইতে হইবে। ফল, দুধ, মাছ, ডিম প্রভৃতি খাদ্য নিয়মিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, যাহাতে কোষ্ঠ পরিষ্কার থাকে সেজন্য শাক শবজি ও ফলমূল খাওয়া আবশ্যক।
চ) প্রত্যেক মাসে গর্ভবতীর রক্তচাপ, ওজন, প্রস্রাব ও ভ্রুণের অবস্থান প্রভৃতি পরীক্ষা করানো উচিত।
ছ) রক্তহীনতা থাকিলে তাহা দূর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।
জ) দিনে ৮-১০ ঘন্টা সুনিদ্রা প্রয়োজন।
ঝ) দৌড় ঝাপ, লাফানো এবং সিঁড়ি দিয়া বেশী উঠানামা করা উচিত নয়।
ঞ) মানসিক দুশ্চিন্তা সম্পূর্ণ পরিহার করিতে হইবে।
ট) গর্ভাবস্থায় যতটুকু সম্ভব কম ঔষধ সেবন করা উচিত।
ঠ) রক্ত পরীক্ষা- ব্লাড সুগার, ব্লাড গ্রুপিং-এ, বি, এবি, ও এবং Rh System করাইতে হইবে।
ড) গর্ভের ৫ হইতে ৬ মাসের মধ্যে একমাস ব্যবধানে দুইটি টি, টি, ইনজেকশান নিতে হইবে।






প্রশ্ন-  গর্ভবতীর পরিচর্যা ও যত্ন কেন প্রয়োজন?

উত্তর: গর্ভবতীর পরিচর্যা ও যত্নের প্রয়োজনীয়তা গর্ভবতীর চিকিৎসা ও যত্ন ঠিকভাবে করা একান্ত প্রয়োজন। যদি তাহা ঠিকভাবে করা হয়, তাহা হইলে পরবর্তীকালে অনেক উপসর্গ হইতে রেহাই পাওয়া সম্ভব হয়। ফলে গর্ভিনী এবং ভ্রুণের ক্ষতি হয় না। এবং তাহাদের বিপদও সহজে হইতে পারে না। নিম্নলিখিত কারণে গর্ভবতীর পরিচর্যা ও যত্ন প্রয়োজন।
১) গর্ভবতী নারীর দেহ ও মনের স্বাভাবিক ও সুস্থতা রক্ষা করে।
ক) পূর্ণ সময় পর্যন্ত গর্ভকে ঠিকমত রক্ষা করে।
খ) সুস্থ ও অক্ষত শিশুর স্বাভাবিক প্রসব হওয়ার জন্য ইহা একান্ত প্রয়োজন।
গ) মায়ের পক্ষে সন্তানের ঠিকমত যত্ন নেওয়ার সুবিধা হয় এবং বিনা কষ্টে মা তাহার শিশুর পরিচর্যা ঠিকভাবে করিতে সক্ষম হয়।
২) মায়ের মনে সামাজিক ও শিক্ষায় উপযুক্ত শিক্ষাদান এবং প্রসব ও সন্তান পালনের জন্য মায়ের মনকে ঠিকমত তৈরী করা। তাহা ছাড়া মাকে স্বাস্থ্যবিধি পালন, পরিচ্ছন্নতা, শিশুর স্বাস্থ্যকর পরিচর্যা শিক্ষাদান ও সম্ভব হয়।
৩) গর্ভবতী নারী তিন-চার মাসের সময়েই হাসপাতালে যাওয়া বা চিকিৎসককে দেখানো উচিত। তাহার দেহ পরীক্ষা করিয়া সুস্বাস্থ্য রক্ষা সম্পর্কে উপদেশ দিতে হইবে যাহাতে সে সঠিকভাবে সব কিছু লাভ করিতে পারে।
১) স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি সম্পর্কে মায়ের সচেতনতার জন্যও ইহা একান্ত আবশ্যক।




প্রশ্ন-  গর্ভাবস্তায় বা প্রসব পূর্বকালের ব্যায়মসমূহ কি কি?

উত্তর: শরীর সুস্থ রাখিবার জন্য এবং সহজ প্রসবের জন্য গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রত্যহ সকাল সন্ধ্যায় মুক্ত এবং শীতল বায়ুতে একঘন্টা করিয়া বেড়াইলে ঠিকমত রক্ত চলাচলের সহায়তা করে এবং পেশীগুলিও সুস্থ ও সবল থাকে। ভাবী মাতা নীরোগ হইলে এবং স্বাস্থ্য মোটামুটি ভাল হইলে গর্ভের দ্বিতীয় মাসের শেষের দিক হইতেই গর্ভিনীর নিচের ব্যায়ামগুলি অভ্যাস করিলে ফল ভালই হইবে। যথা-
১) দাঁড়ানো অবস্থায় পা জোড়া রাখিয়া একবার বাম হাত দিয়া একবার ডান হাত দিয়া কয়েক বার পায়ের আঙ্গুল স্পর্শ করিতে হইবে।
২) সোজা দাঁড়ানো অবস্থায় পা জোড়া রাখিয়া মাথার পিছনে দুই হাত দিয়া ডান পাশে ঝোঁকা।
৩) সোজাভাবে দাঁড়াইয়া কোমরে দুই হাত দিয়া ধীরে ধীরে হাঁটু ভাঙ্গা ও সোজা করা।
৪) সোজাভাবে দাঁড়াইয়া পা জোড়া রাখিয়া পাশের দিকে ও উপরের দিকে বাহু সম্প্রসারণ করা।
৫) চিৎ হইয়া শুইয়া হাঁটু ভাঙ্গিয়া একবার বাম পা আবার ডান পা তোলা।
৬) সোজাভাবে দাঁড়াইয়া একবার বাম পা একবার ডান পা উত্তোলন করা।
৭) সোজাভাবে পা জুড়িয়া দাঁড়াইয়া বাহু সামনে ও পিছনে সঞ্চালন করা।
৮) দুই পা ফাঁক করিয়া দাঁড়াইয়া দুই হাত দিয়া একবার ডান পায়ের আবার বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুল স্পর্শ করা।
৯) দুই পা লম্বা করিয়া মেলিয়া বসিয়া দুই হাতে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি স্পর্শ করা।
১০) চিৎ হইয়া শুইয়া দুই পা এক সঙ্গে লম্বা করা ও ভাঁজ করা।





প্রশ্ন- গর্তিনীর ব্যায়াম ও বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
বা, গর্ভাবস্থায় অঙ্গ শিথিলকারী ব্যায়ামের উপকারিতা কি?

উত্তর: গর্তিনীর ব্যায়াম ও বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা শরীর সুস্থ রাখার জন্য ও সহজ প্রসবের জন্য গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রত্যহ সকালে সন্ধ্যায় ও মুক্ত ও শীতল বায়ুতে এক ঘন্টা করিয়া বেড়াইলে ঠিতমত রক্ত চলাচলে সহায়তা করে এবং পেশীগুলিও সুস্থ ও সবল থাকে। এই সময় রাত্রিতে অন্তত নয় ঘন্টা ঘুমানো দরকার এবং দুপুরের দিকে ১ ঘন্টা শুইয়া বিশ্রাম প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় অঙ্গ শিথিলকারী ব্যায়ামের উপকারিতা নিম্নরূপ-

১) গর্ভকালে ও প্রসবকালে পেটের ও যোনিপথের চতুষ্পার্শস্থ ঢিলা পেশী সবল করে।
২) দেহের অতিরিক্ত মেদ কমাইয়া দেহের গঠন সুন্দর করে।
৩) অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জড়তা দূর করে।
৪) ভাবী মাতা ইচ্ছামত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচাড়া করিতে পারে।
৫) প্রসূতি নিঃশ্বাস প্রশ্বাস আয়ত্বে রাখিতে পারে।
৬) স্তনের গঠন ভাল হয় এবং সন্তান ও প্রচুর দুধ পায়।
৭) বসা, দাঁড়ানোর ও হাঁটার ভঙ্গি সহজ ও সুন্দর হয়।
৮) গর্ভবতীর মন প্রফুল থাকে, মনের সতেজ ভাব ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়।
৯) খাদ্য ভালভাবে হজম হয়, রুচি বৃদ্ধি পায়, কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে না।
১০) ইহাতে প্রসূতির প্রসব বেদনার লাঘব হয়, এমনকি সহজ প্রসবেও যথেষ্ট সাহায্য করে।




প্রশ্ন- গর্ভবতীর খাদ্যের একটি তালিকা প্রস্তুত কর।

উত্তর: গর্ভবতীর খাদ্যের একটি তালিকা- গর্ভকালে খাদ্যের প্রয়োজন কিরূপ তাহা দেখাইবার জন্য নিম্নে একটি তালিকা দেওয়া হইল। প্রত্যেক গর্ভবতীই নিজের সুবিধা, হজম শক্তি ও রুচি অনুযায়ী এই তালিকা রদবদল করিতে পারেন। প্রয়োজনবোধে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা বিধেয়। যথা-

গর্ভবতীর খাদ্য তালিকা





প্রশ্ন- গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতীর কি কি ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়?

উত্তর: গর্ত অবস্থায় গর্ভবতীর ডাক্তারী পরীক্ষা- গর্ভ অবস্থায় ভাল চিকিৎসকের দ্বারা ডাক্তারী পরীক্ষা করানো অবশ্য কর্তব্য। গর্ভাবস্থায় নিম্নলিখিত ডাক্তারী পরীক্ষাগুলো করানো হয়। যথা-

১) গর্ভিনীর চেহারা, সাধারণ স্বাস্থ্য, জরায়ু বা পেটের আকৃতি, তাহাকে স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক দেখাইতেছে বাহ্যত পরীক্ষা করিয়া দেকা অবশ্য কর্তব্য।
২) গর্ভিনীর রিকেট, পায়োরিয়া, দাঁতে কেরিজ প্রভৃতি আছে কিনা তাহা দেখিতে হইবে।
৩) গর্ভিনীর হার্টের অবস্থা দেখা উচিত। তাহার অন্য কোনও রোগ আছে কিনা তাহাও পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে।
৪) গর্ভিনীর স্তনদ্বয় ও নিপল দুইটি ঠিক আছে কিনা তাহা দেখা উচিত।
৫) পায়ে একজিমা, ভেরিকোজ প্রভৃতি আছে কিনা, পা দুইটি স্বাভাবিক ও সোজা আছে কিনা তাহা দেখিতে হইবে।
৬) গর্ভিনীর গনোরিয়া, সিফিলিস প্রভৃতি আছে কিনা বা পূর্বে ছিল কি না তাহা পরীক্ষা করা ও জানা আবশ্যক।
৭) গর্ভিনীর পেলভিস ঠিকমত আছে কিনা বা পেলভিসে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কিনা ভালভাবে পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে।
৮) যোনিনালী পরীক্ষা করিতে হইবে, যাহাতে টিউমার, প্রভৃতি আছে কিনা তাহা বুঝা যায়।
৯) গর্ভবতীর প্রস্রাব পরীক্ষা হইবে প্রস্রাবে এলবুমিন বা চিনি আছে কিনা তাহা পরীক্ষা করা উচিত।
১০) গর্ভবতীর ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করিতে হইবে। অবশ্য গর্ভকালে প্রেসার কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ১২ হইতে ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত সিস্টোলিক প্রেসার ১০৫ মি.মি. থাকে এবং ১১০ পর্যন্ত উঠিতে পারে। তারপর প্রেসার বাড়িয়া ১৩০ মি. মি অবধি হইতে পারে। ইহার বেশী হইলে অশুভ লক্ষণ।
১১) গর্ভবতীর রক্তশূন্যতা আছে কিনা তাহা ভালভাবে পরীক্ষা করিতে হইবে। পরীক্ষা করিয়া ব্লাড গ্রুপ জানা উচিত। সিফিলিস সন্দেহ হইলে W.R বা রক্ত পরীক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য।





প্রশ্ন- গর্ভবতীর পোষাক কেমন হওয়া উচিত?

উত্তর: গর্ভবতীর পোষাক- গর্ভবতীর হালকা, আরামদায়ক এবং সহজে পরিধান করা যায় সর্বদা এমন পোষাক পরিধান করিতে হইবে। পোষাক এমন ধরনের হইতে হইবে যাহাতে তাহা শরীরে এতটুকু বাধার সৃষ্টি না করে। সঠিক মাপের ভাল বক্ষ বন্ধনীর সাহায্যে স্তন এমনভাবে বাঁধা উচিত যাহাতে ঐ বন্ধনী কেবলমাত্র স্তনের অবলম্বন স্বরূপ হয় এবং কোনও চাপ না লাগে। জুতা নরম ও ঠিক মত হওয়া আবশ্যক। জুতা পরিয়া স্বচ্ছন্দভাবে চলাফেরা করিতে কোন প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য হইবে।


প্রশ্ন- গর্ভবতীর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা সম্পর্কে আলোচনা কর'।
বা, ভাবী মাতার স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর: গর্ভবতীর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা- গর্ভবতীকে নিম্নোক্ত স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মানিয়া চলা আবশ্যক। যথা-
১) হাল্কা, আরামদায়ক ও সহজে পরিধান করা যায় এমন পোষাক পরিতে - হইবে।
২) সন্তান সম্ভবা জননীর স্বাস্থ্যরক্ষা এবং গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টির জন্য সুসংবদ্ধ আহার একান্ত প্রয়োজন। দেহের পুষ্টির জন্য দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ভাত বা রুটির সাথে মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, তাজা ফল, শাক সবজি প্রভৃতি থাকা উচিত।
৩) প্রতিদিন কোষ্ঠ পরিষ্কার একান্ত প্রয়োজন। প্রচুর পরিমাণে পানি ও টাটকা ফলের রস কোষ্ঠ পরিষ্কারে সহায়তা করে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪) দুপুর ও রাত্রের আহারের পর ভাল করিয়া দিনে দুইবার দাঁত মাজিতে হইবে। দন্ত চিকিৎসককে দেখাইয়া দাঁত ও মাড়ির অবস্থা জানিতে হইবে। ক্ষয়প্রাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর দাঁতের বিষ শরীরে প্রবেশ করিলে মা ও শিশু উভয়ের ক্ষতি হইতে পারে।
৫) গর্ভের প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত স্তনের বিশেষ যত্ন লওয়া উচিত। সাবান ও গরম পানির সাহায্যে স্তন, স্তনাগ্র পরিষ্কার করিয়া ঠাণ্ডা পানিতে ভিজানো কাপড় দিয়া মুছিতে হয়। স্তনের বোঁটা যাহাতে ফাটিয়া না যায় সেজন্য আঙ্গুলে সামান্য তৈল নিয়া ধীরে ধীরে বোঁটা রগড়াইতে হয়।
৬) প্রতিদিন গোসলের পর তলপেটে আস্তে আস্তে গরম তৈল মালিশ করা বাঞ্ছনীয়। ইহাতে পেটের চাড়া সহজে বিস্তৃত হয়।
৭) সামান্য গরম পানিতে গোসল করিবার পর ঠাণ্ডা পানিতে ভিজানো কাপড় দিয়া সমস্ত শরীর মুছিয়া লওয়া উচিত। লোমকুপগুলি যাহাতে পরিষ্কার থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে।
৮) প্রত্যুষে এবং সন্ধ্যায় মুক্ত বাতাসে হাঁটিতে হইবে এবং ঘরে হালকা কাজকর্ম করিতে হইবে।
৯) দ্বিপ্রহরে একঘণ্টা এবং রাত্রিতে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুম ও পূর্ণ বিশ্রাম লইতে হইবে।
১০) যথেষ্ট আলোবাতাসযুক্ত ঘরে থাকিতে হইবে।
১১) ভাল বই পড়া, ধর্মকথা ও ধর্মগ্রন্থ পাঠ বা শোনা, লুডো খেলা, সেলাই এর কাজ করা অর্থাৎ এই ধরনের আমোদ প্রমোদের মধ্য দিয়া মানসিক স্বাস্থ্য অটুট রাখার ব্যবস্থা করিতে হইবে।



সমাপ্ত




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ