স্বাভাবিক প্রসব - Normal Labour, তৃতীয় বর্ষ - তৃতীয় অধ্যায়

তৃতীয় অধ্যায় 

স্বাভাবিক প্রসব 
Normal Labour








প্রশ্ন- গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ পরীক্ষার গুরুত্ব বর্ণনা কর।

উত্তর: গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ পরীক্ষার গুরুত্ব- গর্ভবতী নারীদের সঠিকভাবে প্রসব পূর্বকালীন পরিচর্যার জন্য রক্তচাপ পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। গর্ভবতী মহিলার প্রতিবার পর্যবেক্ষণের সময় সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ রেকর্ড করিতে হইবে। বিশ্রামের সময় রক্তস্রাব মাপা উচিত। স্বাভাবিক রক্তের চাপ সিস্টোলিক ১১০ হইতে ১৩৫ মি. মি. অব মার্কারি এবং ডায়াস্টোলিক ৭০ হইতে ৮০ মি. মি. অব মার্কারি। রক্তের চাপ সিস্টোলিক ১৪০ মি. মি. অব মার্কারি বা তার উপর হইলে হাইপারটেনশনের পূর্ব সংকেত বা প্রি এক্লামশিয়ার পূর্ব সংকেত মনে করিতে হইবে। যদি সিস্টোলিক চাপ আরও বৃদ্ধি পায় তবে প্রি এক্লামশিয়া দেখা দিবে এবং এলবুমিনুরিয়া হইবে। এই সকল ক্ষেত্রে প্রসূতি ও শিশুর ভাবীফল খুবই মারাত্মক। এই সকল ক্ষেত্রে অকাল প্রসব এবং জরায়ুর মধ্যে বাচ্চার মৃত্যু হইতে পারে। যে সকল ক্ষেত্রে সিস্টোলিক চাপ ১৬০ মি. মি. অব মার্কারি বা তাহার অধিক হয় এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ১০০ মি. মি. অব মার্কারি বা তার অধিক হয় সে সকল ক্ষেত্রে গর্ভবতীকে অতি সত্ত্বও হাসপাতালে পাঠাইতে হইবে।





প্রশ্ন-  গর্ভাবস্থায় প্রস্রাব পরীক্ষার গুরুত্ব বর্ণনা কর।

উত্তর : গর্ভাবস্থায় প্রস্রাব পরীক্ষার গুরুত্ব- গর্ভবতী নারীদের সঠিকভাবে প্রসব পূর্বকালীন পরিচর্যার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণভাবে প্রস্রাবে এলবুমিন বা প্রোটিন এবং সুগার দেখিবার জন্যই পরীক্ষা করা হয়। গর্ভবতী মহিলার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণের সময় প্রস্রাবের অলবুমিন ও সুগার পরীক্ষা করা উচিত। প্রস্রাবে এলবুমিন পাওয়া গেলে বুঝিতে হইবে যে গর্ভবতীর মূত্রগ্রন্থির কাজ ভাল হইতেছে না। জীবাণু সংক্রমণ, রিন্যাল ডিজিজ, প্রি-এক্লামশিয়া প্রভৃতি নির্দেশিত হয়। এই সকল ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে গর্ভবতীকে রোগযুক্ত করা যায়।
 গর্ভের শেষ তিন মাসে যদি প্রস্রাবে এলবুমিন থাকে এবং সেই সঙ্গে যদি রক্তচাপ ও ওজন বৃদ্ধি পায় তাহা হইলে রোগিনীর উপর দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। প্রস্রাব পরীক্ষায় প্রস্রাবের সাথে যদি সুগার পাওয়া যায় তাহা ডায়াবেটিস মেলিটাস ■ রোগের নির্দেশ প্রদান করে। এই রোগ হইলে ভ্রুণের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গর্ভের প্রথমদিকে মাসে একবার এবং শেষদিকে মাসে দুইবার প্রস্রাব পরীক্ষা করিতে হইবে।





প্রশ্ন- গর্ভাবস্থায় রক্ত পরীক্ষার গুরুত্ব বর্ণনা কর।

উত্তর: গর্ভাবস্থায় রক্ত পরীক্ষার গুরুত্ব- গর্ভবতী নারীদের সঠিকভাবে প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর কালীন পরিচর্যার জন্য রক্ত পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
গর্ভের প্রথমদিকে রক্তে ৮৫%-৯০% হিমোগ্লোবিন থাকা দরকার। রক্তে লৌহের পরিমাণ কম থাকিলে হিমোগোবিন ও লোহিত কণিকার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং রক্তাল্পতা দেখা দেয়। ইহাতে গর্ভবতীর রক্ত বৃদ্ধির জন্য লৌহযুক্ত ও প্রোটিনযুক্ত খাদ্য ও ঔষধের ব্যবস্থা করা দরকার। গর্ভাবস্থায় রক্তের কয়েকটি বিভিন্ন প্রকারের পরীক্ষার প্রয়োজন হয় এবং প্রত্যেকটি রোগ নির্ণয় সাহায্য করে।
রতিজ রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষা- যদি কেহ কখনও প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সিফিলিস রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হন তবে পূর্ণ চিকিৎসিত না হইলে শরীরে ঐ রোগের জীবাণু থাকিয়া যায়। গর্ভবতীর রক্তে সিফিলিস রোগ জীবাণু বর্তমান থাকিলে গর্ভকালে ভ্রুণকে এই রোগে আক্রান্ত করিয়া গর্ভপাত করায়। কাজেই গর্ভের প্রথমে রতিজ রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষার বিশেষ প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় মায়ের এই রোগ হইলে গর্ভের চতুর্থ মাস হইতে এই রোগের চিকিৎসা করা উচিত।
ব্লাডগ্রুপ ও রেসাস ফ্যাক্টর- গর্ভবতীকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হইতে পারে, সেজন্য গর্ভিনীর রক্তে একটা বিশেষ পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। রক্তকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হইয়াছে- এ, বি, এবি এবং ও ব্লাড গ্রুপ। এবি গ্রুপের রোগিনীকে যে কোন গ্রুপের রক্ত দেওয়া যাইতে পারে। এ এবং বি গ্রুপ রক্ত শুধু নিজের গ্রুপেই দেওয়া বা নেওয়া যায়। কিন্তু ও গ্রুপের রক্ত সকল গ্রুপের রোগিনীকে দেওয়া গেলেও রক্ত গ্রহণ করিবার সময় নিজের গ্রুপের নিকট হইতেই সংগ্রহ করিতে হইবে।
অধিকাংশ মাতার রক্তের লোহিত কণিকায় রেসাস ফ্যাক্টর নামক এক. ধরণের রাসায়নিক যৌগ সমষ্টি থাকে। সংক্ষেপে রেসাসকে Rh বলা হয়, রক্তে Rh ফ্যাক্টর স্বাভাবিক থাকিলে Rh পজিটিভ, Rh ফ্যাক্টর না থাকিলে Rh নেগেটিভ। গর্ভিনীকে রক্ত দিতে হইলে Rh পজিটিভ বা নেগেটিভ বিচার করিয়া রক্ত দিতে হইবে নতুবা গর্ভস্থ শিশুর বিপদের সম্ভাবনা থাকে। পূর্ব হইতেই রক্ত পরীক্ষা করিলে ভবিষ্যতে কোন বিপদের সম্ভাবনা থাকে না।





প্রশ্ন-  গর্ভকালে রতিজ রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষার গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তর: গর্ভকালে রতিজ রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষার গুরুত্ব- গর্ভবস্থায় রতিজ রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। গর্ভিনী যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সিফিলিস রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হন, তবে পূর্ণ চিকিৎসা না হইলে দেহে ঐ রোগের জীবাণু থাকিয়র যায়। রোগীকে বাহ্যত সুস্থ বলিয়াই মনে হইতে পারে। রোগ জীবাণু বর্তমান থাকিলে গর্ভকালে ভ্রুণকে এই রোগে আক্রান্ত করিয়া গর্ভপাত ঘটায়। রক্ত পরীক্ষায় রোগ ধরা পড়িলে সত্বর চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং গর্ভবতীকে চিকিৎসান্তে সুস্থ সতেজ ও নীরোগ সন্তান লাভ করিতে দেখা যায়।
মাতৃরক্তে সিফিলিস জীবাণু থাকিলে গর্ভফুলের মাধ্যমে উক্ত রোগজীবাণু গর্ভের তিন মাসের পর শিশুর রক্তে প্রবেশ করে। স্ত্রীর রতিজ রোগ ধরা পড়িলে স্বামীর রক্ত পরীক্ষা করিয়াও এই রোগের চিকিৎসা করা উচিত। ইহা না করিলে একজনের রোগ সরিয়া গেলেও অপরের দ্বারা আবার রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকিয়া যায়।





প্রশ্ন-  গর্ভকালে গর্ভবতীর ওজন পরীক্ষার গুরুত্ব আলোচনা কর। 

উত্তর: গর্ভকালে গর্ভবতীর ওজন পরীক্ষার গুরুত্ব- গর্ভকালে গর্ভবতীর ওজন পরীক্ষার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা আছে। সাধারণত প্রতিমাসে ৩ হইতে ৫ পাউন্ড ওজন বাড়ে। হঠাৎ কোনও কারণে মাসে ৫ পাউন্ড ওজন বাড়িলে বা দুই সপ্তাহে দ্রুত ওজন বাড়িলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এইরূপ ওজন বাড়িবার পর গর্ভবতীর হাত পা ফোলা, রক্তচাপ বৃদ্ধি ও প্রস্রাবের দোষ দেখা যাইতে পারে। এই উপসর্গগুলি গর্ভকালে একটি বিশেষ অসুখের সৃষ্টি করে।
গর্ভবতীর দেহে কোন কোন অন্তঃরসের আধিক্য হওয়াতে লবণ বেশী জমা হয় এবং ঐ লবণ জল ধরিয়া রাখিয়া শরীরের ওজন বৃদ্ধি করায়, তাই পূর্ণ বিশ্রামের সাথে কম লবণযুক্ত খাদ্য খাইলে শরীরে জল জমিয়া ওজন বাড়িবার সুযোগ পায় না। গর্ভের শেষ তিন মাস গর্ভবতী নারীর ওজন বাড়ে, কিন্তু প্রসবে প্রসবের ৩/৪ দিন পূর্বে ওজন ১ সের কমে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় সপ্তাহে ১পাউন্ড, মাসে ৫ পাউন্ড এবং দশ মাসে ২৫-৩০ পাউন্ড বৃদ্ধি পায়। কোন মাসে গর্ভাবস্থায় ২০-৩০ পাউন্ড ওজন বাড়িলে প্রি-এক্লামশিয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক হইতে হইবে।





প্রশ্ন-  প্রসব কাহাকে বলে?

উত্তর: প্রসব- জরায়ু হইতে যোনিপথ দিয়া একে একে গর্ভস্থ পূর্ণাঙ্গ শিশু গর্ভফুল, কোরিয়ান ও অ্যামনিয়ন পদার্থগুলির বাহির হইয়া আসাকে প্রসব বলে। শেষ মাসিকের প্রথম দিন হইতে প্রায় ২৮০ দিন পর পর্যন্ত গর্ভের পরিসমাপ্তি ঘটিয়া প্রসব হইয়া থাকে।





প্রশ্ন-  প্রসবকাল বলিতে কি বুঝ?

উত্তর: প্রসবকাল- যে সময়ের মধ্যে প্রসবের আরম্ভ ও শেষ হয় সেই সময়কে প্রসবকাল বলে।




প্রশ্ন-  প্রস্বের স্থায়িত্বকাল কত?

উত্তর: প্রসবের স্থায়িত্বকাল- স্বাভাবিক প্রসবে প্রথম প্রসবকারিনী ৮ হইতে ১৬ ঘণ্টা এবং বহু সন্তান প্রসবিনীর ক্ষেত্রে ৪ হইতে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে।





প্রশ্ন- কালপূর্ণ প্রসব ও কালপর প্রসব তাহাকে বলে?

উত্তর : কালপূর্ব প্রসব (Premature Labour): নির্ধারিত সময়ের পূর্বে (৩৬-৩৭ সপ্তাহ) বিশেষ কোন কারণ ছাড়াই প্রসব হইতে পারে। ইহাকে কালপূর্ব প্রসব বলে।
কালপর প্রসব (Post mature Labour): কোন কোন গর্ভবতীর ৪০ সপ্তাহ গর্ভকাল পার হওয়ার ১-২ সপ্তাহ পর প্রসব হইতে পারে। ইহাকে কালপর প্রসব বলে।




প্রশ্ন-  ট্রায়াল লেবার বলিতে কি বুঝ?

উত্তর : ট্রায়াল লেবার মধ্যম ও সামান্য পরিমাণ অসামঞ্জস্যের ক্ষেত্রে গর্ভপাত না ঘটাইয়া আপনা আপনি ডেলিভারী হওয়ার জন্য সুযোগ দেওয়া হয় ও প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়ার জন্য তৈয়ার থাকিতে হয়। ইহাকে ট্রায়াল লেবার বলে।




প্রশ্ন- স্বাভাবিক প্রসব ও অস্বাভাবিক প্রসব কাহাকে বলে?
 
উত্তর: স্বাভাবিক প্রসব- সন্তান প্রসবের সময় যদি ভারটেক্স (Vertex) নামক মাথার অংশ ডেলিভারীর জন্য প্রথম উপস্থিত হয় এবং কোন জটিলতা ছাড়া প্রসব সম্পন্ন হয় তাহাকে স্বাভাবিক প্রসব (Normal labour) বলে।
অস্বাভাবিক প্রসব- সন্তান প্রসবের সময় যদি ভারটেক্স (Vertex) নামক মাথার অংশ ছাড়া মাথার অন্যান্য অংশ যেমন- কপাল, মুখমণ্ডল, স্কন্ধ, নিতম্ব বা হাত পা প্রভৃতি ডেলিভারীর জন্য উপস্থিত হয় এবং জটিলতা ছাড়া প্রসব কার্য সমাধা হয় না তাহাকে অস্বাভাবিক প্রসব (Abnormal labour) বলে।





প্রশ্ন-   অস্বাভাবিক প্রসবগুলির নাম লিখ।

উত্তর: অস্বাভাবিক প্রসবগুলির নাম উলেখ করা গেল। যথা-
১) বস্তি উপস্থিতি (Brech Presentation)
২) অকসিপিটো পোষ্টিরিয়র প্রেজেন্টেশন (Occipito Posterior Presentaion)
৩) মুখ উপস্থিতি (Face Presentation)
৪) কপাল উপস্থিতি (Bro Presentation)



চিত্র: অস্বাভাবিক প্রসব

৫) স্কন্ধ উপস্থিতি (Shoulder Presentation)
৬) নাভীনাড়ীর উপস্থিতি (Cord Presentation)





প্রশ্ন-  প্রসব কৌশল বলিতে কি বুঝ? প্রসব কৌশলের বর্ণনা দাও।

উত্তর: প্রসবের সময়ে শিশু বস্তি গহ্বরের ভিতর দিয়া একটি উপায়ে বাহির হইয়া আসে। শিশুদেহের এই গতি ভঙ্গী নির্দেষ করিবার নামই প্রসব কৌশল (mechanism of labour)। বস্তি গহ্বর সরল পথ নহে। প্রবেশ পথে ইহার দৈর্ঘ্য কম। বহির্দ্বারে ইহার দৈর্ঘ্য বেশী। স্বাভাবিক প্রসবের সময়ে শিশুর মস্তককে সর্বদাই বস্তি গহ্বরের প্রশস্ততম অংশে গিয়া আসিতে হয় বলিয়া উহাকে সেই অনুযায়ী ঘুরিতে হয়। উপর হইতে নিচে নামিয়া আসিতে আসিতে বস্তি গহ্বরের মধ্যে শিশুরই ঘুরিয়া যাওয়ার উপায় না থাকিলে প্রসবকার্য নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হইত না।
শিশু সাধারণতঃ বস্তিগহ্বরের প্রবেশ পথ দিয়া ঢুকিয়া বস্তিগহ্বর অতিক্রম করিয়া বহির্দার দিয়া বাহিরে আসে। প্রসবের সময় সাধারণভাবে শিশুর মস্তক অগ্রে নানিয়া আসে। ইহা ছাড়া শিশুর বস্তিদেশও অগ্রমুখী হইতে পারে। মস্তক অগ্রমুখী হইলেও হয় মুখ, না হয় কপাল, এবং অধিকাংশ সময় মস্তকের শীর্ষদেশ অগ্রমুখী হয়। মস্তক প্রসবের রাস্তা দিয়া নামিয়া আসার সময় নিম্নরূপ পরিবর্তন ঘটিতে পারে।
১) এনগেজমেন্ট বা আঁট হইয়া বসা- প্রসবের সময় শিশুর মস্তক নমিত হইয়া মস্তকের ব্যাস দিয়া বস্তিগহ্বরের ভিতরে প্রবেশ করে। এই মস্তক নমনের ফলেই সাব অকসিপুট ফ্রন্ট ব্যাসে আঁটি হইয়া বসে।
২) ইমন- শিশুর মস্তক যখন সম্পূর্ণ নমিত হয় তখন উহা লম্বালম্বিভাবে ক্রমশঃ জননপথের অক্ষরেখা দিয়া অগ্রসর হইতে থাকে এবং উহার অনুপ্রস্থে শিশু মস্তকের ক্ষুদ্রতম ব্যাসে অধিষ্ঠান করে। মস্তক সম্পূর্ণ নমিত হইলে এই সুফল পাওয়া যায়। নমনের আগে শিশুর অক্সিপিটো ফ্রন্টাল ব্যাস (৪.৫ ইঞ্চি) অবলিক ব্যাসে (৩.৫ ইঞ্চি) আঁটিয়া ছিল সুতরাং আর আগাইয়া আসার উপায় ছিল না। কিন্তু নমনের ফলে অকসিপিটো ফ্রন্টাল ব্যাস (৪.৫ ইঞ্চি) সাব অক্সিপিটো ব্রেগম্যাটিক ব্যাসে (৩.৭৫
ইঞ্চি) পরিবর্তন হয় এবং উহার ফলে মাথা সহজে নামিয়া আসে। ৩) অন্তঘূর্ণন- শিশুর মস্তক যতই নিচে নামিতে থাকে ততই অক্সিপুট অধিকতর
নিচে নামিয়া পড়ে এবং ক্রমশঃ উহাই শিশু মস্তকের নিম্নতম অংশ হওয়ায় বস্তি প্রদেশের তলদেশে প্রথমে পৌঁছায়। উপরের চাপ পাইয়া এবং নামিবার পথে বাধা পাইয়া অক্সিপুট ঘুরিয়া বস্তিগহ্বরের তলদেশের বৃহত্তম ব্যাস অধিকার করে। ইহার জন্য উহাকে প্রায় ৪৫০ ডিগ্রী (বৃত্তের ৮ এর এক অংশ) ঘুরিতে হয়। ইহারই নাম অন্তঘূর্ণন।
৪) প্রসারণ- অন্তঘূর্ণনের ফলে শিশুর মস্তক ঘুরিয়া বস্তি গহ্বরের বহির্দারে আসিয়া উপস্থিত হয়। শিশুর অক্সিপুট ক্রমশঃ নামিতে নামিতে পিউবিক অস্থির সন্ধিস্থলের নিম্নে আটকাইয়া যায়। এখন যতই উপর হইতে নিচের দিকে চাপ আসে, বস্তিগহ্বরের তলদেশ হইতে সঙ্গে সঙ্গে উপরে এবং সম্মুখদিকে চাপ আসিয়া উভয়ের সম্মিলিত চাপে শিশুর মস্তককে সামনের দিকে অগ্রসর করাইয়া দেয়। কিন্তু সম্মুখ জননপথ প্রসারিত না থাকায় শিশুর মস্তক অক্সিপুটকে স্থিরবিন্দু করিয়া ঘুরিয়া যায়। ক্রমাগত উপর হইতে চাপ আসিয়া শিশু মস্তককে সম্মুখে ঠেলিয়া দিবার জন্য জননপথ ক্রমশঃ বড় হইয়া মস্তক বাহির হইবার উপযোগী হয়। প্রথমে অক্সিপুট তাহার পর যথাক্রমে মস্তকের শীর্ষদেশ, কপাল, মুখ ও চিবুক বাহির হয়। ইহার পর শিশু মস্তক সম্পূর্ণভাবে জননপথের বাহির চলিয়া আসে।
৫) প্রতিঘূর্ণন- অন্তঘূর্ণনের সময় মাথাটা ঈষৎ বাঁকিয়া যায় এবং গলাটা কিছুটা মুচড়াইয়া যায়। প্রতিঘূর্ণন দ্বারা গলা আবার আগেকার অবস্থায় আসিবার ফলে সোজা হইয়া যায়।
৬) স্কন্ধের অন্তঘূর্ণন ও মস্তকের বহিঘূর্ণন- ঠিক মাথার মত কাঁধের অন্তঘূর্ণন হয়। মাথা বাহিরে বাধাহীন অবস্থায় থাকায় উহা একই সঙ্গে ঘুরিতে থাকে। ইহার ফলে অক্সিপুট মায়ের বত্তিদেশের ঠিক একই দিকে ঘুরিয়া আসে। মস্তক বাহির হইবার পর স্বন্ধদ্বয় একই উপায়ে বাহির হয়। প্রথমে ডানদিকের তীর্যক ব্যাস অধিকার করিয়া পরে ৪৫০ ঘুরিয়া বহির্দারের দীর্ঘতম ব্যস অধিকার করে। স্কন্ধ ঘুরিবার সঙ্গে সঙ্গে মস্তকও বাহিরে ঘুরিয়া যায়।
৭) পার্শ্বদেশের নমন এবং দেহ নিষ্ক্রমণ- স্কন্ধদ্বয় যখন নামিয়া আসে তখন সম্মুখ দিকের দক্ষিণ স্কন্ধ অনিপুটের মত পিউবিক সন্ধির তলদেশে আটকাইয়া যায়। তাহার পর প্রসবকালীন পেশীসমূহ সঙ্কোচনের ফলে প্রথমে পিছনদিকের স্কন্ধ বাহিরে আসে। পরে সম্মুখের স্কন্ধ বাহির হয়। ইহার পর অতি সহজে শিশুর সমগ্র দেহ ভূমিষ্ঠ হয়।





প্রশ্ন-  অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ড (Umbilical Cord) কি?

উত্তর : অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ড গর্ভফুল ও ফিটাস বা গর্ভস্থ শিশুকে ইহা যুক্ত করে। ইহার দুইটি ধমনী ও একটি শিরা আছে। ইহার মাধ্যমে মা ও সন্তানের রক্ত পরস্পরের মধ্যে যাওয়া আসা করে যাহার ফলে শিশু মাতৃগর্ভে বাঁচিয়া থাকে।
 




প্রশ্ন-  শয়ান বা লাই (Lie) কাহাকে বলে?

উত্তর : শয়ান বা লাই- গর্ভস্থ শিশুর দৈর্ঘ্য বরাবর যে রেখা বা লাইন তাহার সহিত মায়ের দৈর্ঘ্য বরাবর যে রেখা তাহাদের পারস্পরিক অবস্থানকে শয়ান বা লাই বলে। জরায়ুর ভিতর শিশু লম্বালম্বি বা আড়াআড়ি কি অবস্থায় আছে তাহা জানিয়া শিশুর শয়ান নিরূপন করিতে হয়। লম্বালম্বি শয়ান স্বাভাবিক এবং আড়াআড়ি শয়ান অস্বাভাবিক। শিশুর শয়ান লম্বালম্বি হইলে সহজ প্রসব হয়।





প্রশ্ন- সো (Show) বা ডিসচার্জ কাহাকে বলে?

উত্তর : সো (Show) বা ডিসচার্জ প্রসবের দুইদিন পূর্ব হইতে জরায়ুর নিচের অংশ হইতে মেমব্রেন পৃথক হওয়ার ফলে জারায়ু গ্রীবা হইতে সাদা এবং অল্প গোলাপী রঙের এক প্রকার স্রাব বাহির হয়। এই স্রাবকে সো বা ডিসচার্জ বলে। এই স্রাব বাহির হইয়া প্রসবদ্বার পিচ্ছিল করিয়া দেয় ফলে গর্ভস্থ সন্তান সহজেই বাহির ইতে পারে।





প্রশ্ন-  ভঙ্গী বা এটিচিউড (Attitude) কাহাকে বলে?

উত্তর: ভঙ্গী বা এটিচিউড- গর্ভস্থ শিশুর বিভিন্ন অংশের সহিত প্রতিটির সম্পর্ককে ভঙ্গ বা এটিচিউড বলে। শিশু গর্ভে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মুড়িয়া অবস্থান করে। মাথা বুকের উপর ঝুলিয়া থাকে। বাহুদ্বয় বুকের উপর আড়াআড়িভাবে থাকে। পা দুইটি মুড়িয়া পেটের মধ্যে গুটানো থাকে। সমস্ত শরীর কুঁকড়াইয়া একটি বড় ডিমের আকার ধারন করে। এই ভঙ্গীতে শিশুর অবস্থান সুবিধাজনক বলিয়া জরায়ুর ভিতর এই ভঙ্গীতে শিশু অবস্থান করে।






প্রশ্ন- প্রেজেন্টেশন (Presentation) কাহাকে বলে?

উত্তর: প্রেজেন্টেশন- বস্তি গহব্বরের প্রবেশপথে (Brim) প্রথমে শিশুর দেহের যে অংশটি দেখা দেয় বা উপস্থিত হয় তাহাকে প্রেজেন্টেশন বলা হয়। জরায়ু গ্রীবার মুখের ভিতর আঙ্গুল ঢুকাইলে যে অংশ সর্বাগ্রে অনুভব করা যায় সেই অঙ্গেরই উপস্থিতি বা প্রেজেন্টেশন বলা হয়। যেমন মাথা আগে দেখা দিলে মস্তক উপস্থিতি, মুখ আগে দেখা দিলে মুখ উপস্থিতি প্রভৃতি।
 





প্রশ্ন- অবসটেট্রিক প্যালপেশন বা গ্রীপ কাহাকে বলে? ইহা কত প্রকার ও কি কি বর্ণনা দাও।

উত্তর: দুই হাতের তালু গর্ভবতীর পেটের উপর রাখিয়া ভ্রূণের প্রেজেন্টেশন, পজিশন প্রভৃতি পরীক্ষা করাকে অবসটেট্রিক প্যালপেশন বা গ্রীপ বলে। ইহা ৪ প্রকার। যথা-
১) ফান্ডাল গ্রীপ- গর্ভবতী চিৎ হইয়া বিছানার একধারে শুইয়া পা দুইটি হাঁটুর কাছে রাখিবেন। পরীক্ষা করার সময় পরীক্ষক গর্ভবতীর সুখের দিকে ফিরিয়া দাঁড়াইবেন এবং দুই হাত গর্ভবতীর পেটের উপর রাখিয়া ফান্ডাস পরীক্ষা করিবেন। ফান্ডাস জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশে যদি শিশুর মস্তক থাকে তাহা হইলে পরীক্ষার সময় শক্ত গোলাকার দ্রব্য পরীক্ষকের হাতে ঠেকিবে। শিশুর মাথার বদলে বস্তি থাকিলে কোন খাঁজ পাওয়া যাইবে না এবং আকারে মাথা হইতে বড় হইবে এবং হাত দিয়া নাড়া দিলে শিশু ধড়শুদ্ধ নড়িবে।
২) ল্যাটারাল বা আমবিলিক্যাল গ্রীপ পরীক্ষক গর্ভবতীর ডানপার্শ্বে দাঁড়াইয়া গর্ভবতীর মুখের দিকে তাকাইয়া হাত দুইটি উদরের দুই পার্শ্বে রাখিবেন। দুই হাত অল্প চাপ দিলেই এক হাতে ভ্রুণের হাত পা গুলি ঠেকিবে। পিঠ হইবে শক্ত ও লম্বা এবং যে পাশে হাত পা থাকে সেদিকে তলতলে ও উঁচুনিচু হইবে এবং চাপ দিলে সরিয়া যাইবে।
৩) পেলভিক গ্রীপ- গর্ভবতীর পায়ের দিকে মুখ রাখিয়া দাঁড়াইবার পর দুই হাতের আঙ্গুল কুঁচকীর নিচে বস্তিদেশের ভিতর যতদূর নিচে ঢোকান যায় ঢুকাইতে হইবে। শিশুর মাথার পিছনের হাড়ের উন্নত অংশ (অক্সিপুট) যদি সম্মুখে ও বামদিকে থাকে তাহা হইলে অকসিপুটের দিকে হাত সহজে ভিতরের দিকে চলিয়া যাইবে এবং ডানদিকে শিশুর কপাল অর্থাৎ সিলিপুট ঠেকিবে। শিশুর মস্তক যদি এনগেজড হয় তাহা হইলে আঙ্গুলে শক্ত জিনিষ ঠেকিবে এবং আর নিচে যাইবে না। শিশুর মাথা যদি এনগেজড না হয় এবং ভাসমান অবস্থায় থাকে তাহা হইলে বিনা বাধায় ভিতরে চলিয়া যাইবে। যে হাত উপরে আটকাইয়া যায় উহা শিশুর কপালে ঠেকে। এই হাত সচারাচর যেদিকে শিশুর হাত পা থাকে সেই হাত। এই পরীক্ষা দ্বারা শিশুর উপস্থিতকারী অংশ কতখানি নিচে নামিয়াছে তাহাও বেশ বুঝা যায়।
৪) পলিকের শ্রীপ- গর্ভবতীর ডান দিকে দাঁড়াইয়া এবং তাহার দিকে মুখ রাখিয়া দাঁড়াইবার পর পরীক্ষক পিউবিক অস্থির সন্ধিস্থলের উপর উদরের নিম্নাংশটুকুর যদি একদিকে এক হাতের বৃদ্ধাংগুষ্ঠ এবং অন্যদিকে সেই হাতের অন্যান্য আঙ্গুলিগুলির মধ্যে ধরেন, তাহা হইলে শিশুর উপস্থিতকারী অংশটুকু তাঁহার হাতের মধ্যে থাকিবে। একটু আশেপাশে পা উপরে নিচে ঐ অংশকে নাড়াচাড়া করিলেই বুঝা যাইবে যে এখনও উহা ভাসমান আছে, না বস্তি গহ্বরে এনগেজমেন্ট হইয়া আছে।




প্রশ্ন- পজিশন বা অবস্থিতি (চড়ংরঃরড়হ) কাহাকে বলে?

উত্তর: পজিশন বা অবস্থিতি গর্ভস্থ শিশুর কোন অংশের সহিত মায়ের বস্তিদেশের সম্পর্ককে অবস্থিতি বা পজিশন বলে। অর্থাৎ শিশুদেহের কোন বিশিষ্ট অংশ ধরিয়া (assume) উহা মাতৃ দেহের সহিত কিরূপ সম্বন্ধে (সম্মুখদিকে না পশ্চাৎদিকে) অবস্থিত তাহা দেখিয়া শিশুর পজিশন নির্ণয় করিতে হইবে।






প্রশ্ন-  ম্যাল প্রেজেন্টেশন কাহাকে বলে?

উত্তর : ম্যাল প্রেজেন্টেশন- প্রসবকালীন সময়ে যখন ভারটেক্স ব্যতীত ফিটাসের অন্যান্য অংশ (যেমন- কপাল, মুখমণ্ডল, স্কন্ধ, নিতম্ব বা হাত-পা প্রভৃতি) প্রসবের জন্য উপস্থিত হয় তখন তাহাকে ম্যাল প্রেজেন্টেশন বলে।




প্রশ্ন-  এনগেজমেন্ট (Engagement) কাহাকে বলে? 

উত্তর : এনগেজমেন্ট- শিশুর মাথার প্রেজেন্টিং অংশের অধিকাংশ ব্যাস বস্তিদেশের প্রবেশপথে প্রবেশ করিয়া আঁটিয়া বসাকে এনগেজমেন্ট বলা হয়। এই অবস্থায় যোনিপথে আঙ্গুল দিয়া উপরের দিকে চাপ দিলে মাথা আর উপরের দিকে উঠে না। বামদিকে স্যাজিট্যাল সুচারের সাথে অথবা পেলভিক ব্রিমের রাইট অবলিক ব্যাসে হেড এনগেজড করিয়াছে বলা হয়।




প্রশ্ন- প্রসবকাল উপস্থিত হইবার লক্ষণাবলী কি কি?

উত্তর : প্রসবকাল উপস্থিত হইবার লক্ষণাবলী- প্রসব হইবার প্রায় দুই - সপ্তাহ পূর্বে জরায়ু নিচে নামিয়া পড়ে। ইহার ফলে মূত্রাধারে চাপ পড়িয়া বার বার প্রস্রাব ত্যাগ করিবার ইচ্ছা হয়। প্রসবকাল উপস্থিত হইলেই প্রসব বেদনা আরম্ভ হয়। নিম্নলিখিত লক্ষণাবলী দ্বারা প্রসবকাল উপস্থিত হইয়াছে কি না তাহা বুঝিতে পারা যায়।
১) প্রসবকাল উপস্থিত হইলেই প্রসব বেদনা আরম্ভ হয়।
২) জরায়ু গ্রীবা বিলুপ্ত হওয়া ও জরায়ু গ্রীবার মুখ বড় হওয়া প্রসবকালের মৃমূখ্য পরিবর্তন। জরায়ুস্থিত মাংস পেশীগুলি জরায়ুর দুই পার্শ্ব হইতে জরায়ু গ্রীবার দুইধারে লাগানো থাকে। এই হেতু জরায়ু সংকোচনের ফলে উক্ত পেশীগুলি ছোট হইয়া যাওয়ায় জরায়ু গ্রীবার উপর হইতে টান লাগে, ফলে জরায়ু গ্রীবার মুখ (os) খুলিয়া যায়। ইহার উপর অ্যামনিয়নস্থ জল পর্দা ঠেলিয়া বাহিরে আসার চেষ্টা করায় যে জলপূর্ণ থলির সৃষ্টি হয় তাহাও ক্রমশঃ বড় হইয়া জরায়ু গ্রীবার মুখ আরও বড় করিয়া দেয়।
১) স্রাবের সহিত সামান্য রক্তমিশ্রিত মিউকাস বাহির হয়।






প্রশ্ন-  প্রসবের প্রত্যাশিত তারিখ কিভাবে নির্ণয় করিবে?
উত্তর: প্রসবের প্রত্যাশিত তারিখ নির্ণয়- শেষ ঋতুর প্রথম দিন হইতে ৯ মাস ৭ দিন অর্থাৎ ২৮০ দিন গণনা করিলে যে দিনটি পাওয়া যায় সেই দিনটিই হইতেছে প্রসব বেদনা শুরু হইবার দিন। যদিও আমরা দশমাস দশদিন বলিয়া থাকি । তবে অনেক প্রসূতির দি পিছাইতেও পারে বা আগাইতেও পারে। 




প্রশ্ন-  প্রসববেদনা শুরু হইবার পূর্বলক্ষণ কি লিখ।

উত্তর: প্রসববেদনা শুরু হইবার পূর্বলক্ষণ- প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার পূর্বে প্রধানত দুইটি লক্ষণ পাওয়া যায়। যথা-
১) প্রসব ব্যথা উঠিবার ২/৩ সপ্তাহ পূর্বে জরায়ু নিচে নামিয়া আসে। প্রসূতির শারীরিক কষ্ট, হাঁস ফাসানী, উঠিতে বসিতে কষ্ট একটু কমিয়া আসে। পায়খানার বেগ হইতে থাকে, প্রস্রাব বৃদ্ধি হয়, প্রসব দ্বার ফুলিয়া উঠে, ভারী হয় এবং পা দুইটি ভারী হয়। গর্ভাবস্থায় যে ওজন ছিল তাহা প্রায় ১ কিলোগ্রাম কমিয়া যায়- তখনই বুঝিতে হইবে যে প্রসব আসন্ন। ৩-৪ দিনের মধ্যেই সন্তান ভূমিষ্ট হইবে।
২) মিথ্যা ব্যাথায় ২/৩ সপ্তাপ পূর্ব হইতে একরকম ঘিনিঘিনে ব্যথা হয়। কোষ্ঠ পরিষ্কার না থাকিলে বা পেটে আমাশয় বা অজীর্ণ রোগ থাকিলেও এইরকম কষ্ট হইতে পারে। শিশুর গতির পরিবর্তনের সময় এই ব্যথা কখন কখন উপলব্দি করা যায়।





প্রশ্ন- প্রসব বেদনা বা প্রসব শুরু হওয়ার লক্ষণগুলি কি কি?
বা, প্রকৃত প্রসবের লক্ষণগুলি কি কি? 

উত্তর: প্রসব বা প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার লক্ষণাবলী নিম্নরূপ-
১) জরায়ুর সংকোচন ও ব্যথা অনুভব করা।
২) সামান্য রক্তমিশ্রিত মিউকাস বাহির হওয়া।
৩) জরায়ু গ্রীবার মুখ বা সার্ভিক্সের ইন্টারন্যাল অস খুলিতে শুরু করা।
৪) জরায়ুর নিচের অংশে লাইকার অ্যামনির ব্যাগ সৃষ্টি হওয়া।






প্রশ্ন-  মিথ্যা বা অপ্রকৃত প্রসব বেদনার লক্ষণ বর্ণনা কর।

উত্তর : মিথ্যা বা অপ্রকৃত প্রসব বেদনার লক্ষণএই বেদনায় নিয়মিতভাবে
জরায়ু সংকোচন হয় না।
১) পেট হইতে এই ব্যথার সৃষ্টি হয়।
২) এই ব্যথা উঠিবার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নাই।
৩) যেখানে ইচ্ছা এই ব্যথা সারিয়া যাইতে পারে।
৪) জরায়ু গ্রীবার উপর এই ব্যথার কোন ক্রিয়া নাই।
৫) এই ব্যথায় জরায়ু শক্ত হইয়া উঠে না।
৬) ডুস দিয়া পায়খানা করাইলে এই ব্যথা আর থাকে না।
 






প্রশ্ন-  প্রকৃত প্রসব বেদনা ও অপ্রকৃত প্রসব বেদনার পার্থক্য কি?

উত্তর: প্রকৃত প্রসব বেদনা ও অপ্রকৃত প্রসব বেদনার পার্থক্য নিম্নরূপ-
প্রকৃত প্রসব বেদনা:-
১। পাছার দিক হইতে শুরু করিয়া ধীরে ধীরে সামনের দিকে আসিয়া নিচের দিকে নামিয়া যায়।
২। প্রসব বেদনা নিয়মিত সময়ে আসে এবং চলিয়া যায়।
৩। প্রসব বেদনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাইতে থাকে।
৪। প্রকৃত প্রসব বেদনা সব সময় থাকে।
৫। অস খুলিয়া যায় এবং জরায়ু গলা ও সার্ভিক্স সংকুচিত হয়।
৬। ব্যাথার সাথে সাথে জরায়ু শক্ত হয়, একটু পরে ব্যথা থামিয়া গেলে পেট নরম হয়।

অপ্রকৃত প্রসব বেদনা:-
১। প্রায় সমস্ত পেটের সামনের দিকে বেদনা শুরু হয়।
২। কোন নিয়ম নাই, কখনো শীঘ্র আসে, কখনও দেরীতে আসে, আবার ব্যথতার স্থায়িত্ব খুব কম সময় হয়।
৩। ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হয় না।
৪। প্রকৃত প্রসব বেদনা ভুস দিয়া বা পিচকারী দিয়া পেটের মল বাহির করিয়া দিলে বেদনা কমিয়া যায়।
৫। ইহাতে অস খোলে না, জরায়ুর গলা ও সার্ভিক্স সংকুচিত হয় না।
৬। জরায়ু শক্ত হয় না, পেটটিও নরম হয় না।





প্রশ্ন-  প্রসবের সময়ের প্রকাশিত অস্বাভাবিক লক্ষণগুলি কি কি?

উত্তর: প্রসবের সময় কতগুলি অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পাইতে পারে। সেগুলি নিম্নরূপ-
১) সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বেই রক্তস্রাব।
২) সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বে মাথা বাহির না হইয়া হাত, পা বা অন্যান্য অংশ বাহির হওয়া।
৩) খেঁচুনি বা ফিট কিংবা অপেক্ষা শুরু হওয়া।
৪) প্রসব ব্যথা শুরু হইয়া চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে যে কোন রকম স্রাব না হওয়া।
৫) অধিকক্ষণ ব্যাপি ব্যথা থাকার ফলে প্রসূতির কষ্ট হওয়া, যেমন দুর্বল অবসন্ন, পরিশ্রান্ত হইয়া পড়া প্রভৃতি।
৬) বেশীক্ষণ ধরিয়া ব্যথা সত্বেও অস ডাইলেট না হওয়া।






প্রশ্ন- প্রসবের স্তর, ধাপ বা অবস্থানসমূহ কি কি?
বা, প্রসব ক্রিয়াকে কয়টি ধাপে ভাগ করা যায়?

উত্তর: প্রসব ক্রিয়াকে মোট ৩ টি স্তর বা ধাপে ভাগ করা যায়। যথা-
১) প্রথম স্তর বা ধাপ (First stage)
২) দ্বিতীয় স্তর বা ধাপ (Second stage)
৩) তৃতীয় স্তর বা ধাপ (Third stage)





প্রশ্ন-  প্রসব ক্রিয়ার প্রথম স্তর বা ধাপের বিবরণ দাও।

উত্তর: প্রথম স্তর বা ধাপ (First stage): প্রসব বেদনার আরম্ভ হইতে জরায়ু মুখ সম্পূর্ণ খুলিয়া যাওয়া পর্যন্ত প্রথম স্তর। প্রথমে বেদনা ঘিনঘিনে হয় ও দেরীতে দেরীতে আসে। তারপর ঐ বেদনা ক্রমশ বেশী বেশী এবং ঘন ঘন আসে। প্রস্রাব ঘন ঘন হইতে থাকে, নাড়ী দ্রুত চলিতে থাকে, অস ডাইলেট হয়। অসের মধ্যে আঙ্গুল প্রবেশ করাইলে বেশ বুঝা যায় যে মেমব্রেণ (পেরোর থলি) শক্ত হইয়া বাহির পথে ঠেলা দিতেছে এবং অস সম্পূর্ণ ডাইলেট হইলে মেমব্রেন বা পেরোর থলি ফাটিয়া যায় এবং পরিষ্কার ঘোলা জলের সাথে গর্ভস্থ সন্তানের দেহের ছাতলা বাহির হয়। এই সময় গর্ভস্থ সন্তানের মাথা আসিয়া অসের মুখ বন্ধ করিয়া দেয় ফলে আর জলীয় পদার্থ বাহির হয় না। মাথার চাপে অস মাথার উপর দিয়া গলিয়া উপরের দিকে চলিয়া যায় ফলে প্রসব দ্বার আরও প্রসারিত হইয়া প্রসবের কাজ সরল করিয়া দেয়। প্রথম প্রসূতির ক্ষেত্রে অস সম্পূর্ণ ডায়ালেট হইতে ১৫ হইতে ১৮ ঘন্টা সময় লাগে। বহু প্রসবিনীদের ক্ষেত্রে ১০ হইতে ১১ ঘন্টার মত সময় লাগে।







প্রশ্ন- প্রসব ক্রিয়ার দ্বিতীয় স্তর বা ধাপের বিবরণ দাও।

উত্তর: দ্বিতীয় স্তর বা ধাপ (Second stage): জরায়ু মুখ সম্পূর্ণভাবে খোলা হইতে শিশু ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় স্তর। জরায়ু মুখ খুলিয়া গেলেই প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থা শুরু হয়। প্রসূতিকে এই অবস্থায় বাম পাশ ফিরাইয়া শোয়াইয়া দিয়া প্রসবের ব্যবস্থা করিতে হইবে। এই অবস্থায় মেমব্রেণ বা পর্দা ফাটিয়া যায় ফলে ব্যথা কমে বটে কিন্তু তারপর ব্যথা তীব্রভাবে শুরু হয়। গর্ভস্থ সন্তান ক্রমে নিচে নামিতে থাকে এবং প্রসূতির ব্যথাও কমে বটে কিন্তু তারপর ব্যথা তীব্রভাবে শুরু হয়। গর্ভস্থ সন্তান ক্রমে নিচে নামিতে থাকে এবং প্রসূতির ব্যথাও তীব্রতর হয়। প্রবল ব্যথার ফলে প্রসূতি কোঁথ দেয়, কোঁথ দেওয়ার ফলে গর্ভস্থ সন্তানের মাথাটি আরও নামিয়া আসে এবং পেরিনিয়ম ফুলিয়া উঠে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মাথা নিচের দিকে নামিতে থাকিয়া প্রথমে ফ্লেক্সন, ইন্টারন্যাল রোটেশন, এক্সটেশন ও এক্সটারন্যাল রোটেশন দ্বারা ভূমিষ্ট হয়। প্রথমে সন্তানের মাথা ভূমিষ্ট হয়। মাথাটি বাহির হইবার সময় প্রায়ই প্রসূতির পায়খানার বেগ আসে। এই সময় পেরিনিয়াম রক্ষা করা প্রয়োজন, নতুবা উহা ছিঁড়িয়া যাইতে পরে। মাথার পর যথাক্রমে ঘাড়, স্কন্ধ, দেহ ও পা ভূমিষ্ট হয়। অনেক সময় দেখা যায় শিশুর গলায় নাড়ী জড়াইয়া থাকে। শীঘ্র সাবধানে নাড়ী খুলিয়া দেওয়া উচিত। প্রথম প্রসূতির দ্বিতীয় অবস্থায় প্রায় ২ ঘন্টার মত সময় লাগে। বহু প্রসবিনীদের ক্ষেত্রে ১ ঘন্টার কম সময় লাগে।






প্রশ্ন-  প্রসব ক্রিয়ার তৃতীয় স্তর বা ধাপের বিবরণ দাও।
উত্তর : তৃতীয় স্তর বা ধাপ (Third stage): গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর দ্বিতীয় অবস্থা শেষ হয়। এরপর তৃতীয় ধাপ- এই ধাপে প্রধান লক্ষণীয় বস্তু হইল প্লাসেন্টা বা ফুল বাহির হওয়া। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ায় জরায়ু সংকুচিত হইয়া একটা গোলাকার মাংসপিণ্ডের আকার ধারণ করে। ব্যথা কমিয়া যায় ও রক্তস্রাব হয়। ২০/২৫ মিনিট পরে পুনরায় ব্যথা হয়, সেই ব্যথাতে ফুল বা পাসেন্টা পৃথক হইয়া বাহিরে আসে।







প্রশ্ন-  প্রসূতির চেষ্টায় প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল বাহির না হইলে কি করা প্রয়োজন?

উত্তর: প্রসূতির চেষ্টায় প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল বাহির না হইলে করণীয়- প্রসূতির চেষ্টায় যদি গর্ভফুল বাহির না হয় তখন ধাত্রীর দেখা উচিত জরায়ু সংকুচিত এবং শক্ত হইয়াছে কিনা। যদি হয় তবে এই সংকুচিত জরায়ুর উপর চাপ দিয়া একটি নিচের দিকে অর্থাৎ আউট লেটের দিকে পেলভিস কার্ড বরাবর ঠেলিতে হইবে। এইভাবে যোনী হইতে গর্ভফুল বাহির করা হয়। ফুল ও মেমব্রেন যাহাতে সহজে বাহির হয় তার জন্য প্রসূতিকে হাঁ করিয়া নিঃশ্বাস নিতে বা কোঁথ দিতে বলা হয়। কখনও ফুল টানিয়া বাহির করা উচিত নয়। টানিয়া ফুল বাহির করার চেষ্টা না করিয়া উপরেলিখিত নিয়মে চাপ দিয়া আস্তে আস্তে চটকাইলে ফুল ও বাকী রক্তের ডেলা বাহির হইয়া যায়। বুকের নিচ হইতে পেটের উপর একটি পট্টি দিলেও ফুল বাহির হয়। তবে যদি আধ ঘন্টার মধ্যে ফুল না পড়ে তখন ঔষধ ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।







প্রশ্ন-  গর্ভস্থ শিশুর প্রথম মস্তক শীর্ষ (এল.ও.এ) এর অবস্থিতি নির্ধারণের উপায় (Diagnosis) কি?

উত্তর : গর্ভস্থ শিশুর প্রথম মস্তক শীর্ষ (এল.ও.এ) এর অবস্থিতি নির্ধারণের উপায়- গর্ভস্থ শিশুর প্রথম মস্তক শীর্ষের অবস্থা নির্ধারণের জন্য গর্ভবতীর উদর পরীক্ষা করিলে দেখা যায় যে শিশুর বস্তি প্রদেশ জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশ অবস্থিত। শিশুর পৃষ্ঠদেশ বাম দিকে থাকে এবং অল্পধিক সম্মুখদিকে ঘুরানো থাকে। উহার হাত পা ডানদিকে অনুভব করা যায়। বস্তি গহ্বরে হাত দিলে শিশুর মস্তক শক্ত গোলার মত অনুভূত হয়।
যোনিপথ পরীক্ষা করিলে দেখা যায় যে স্যাজিট্যাল সুচার বস্তিগহ্বরের ডানদিকে তীর্যক ব্যাসের সহিত সমরেখ হইয়াছে। উহার সম্মুখদিকে পশ্চাৎদিকে ফন্টানেল, পিছনে ডানদিকে এবং একটু উপরে অবস্থিত আছে বলিয়া অনুভূত হয়। ভ্রুণের হৃদস্পন্দন নাভিমূলের কিছু নিম্নে ও বামদিকে ভালভাবে শোনা যায়।
আরওপি অবস্থায় শিশুর বস্তি জরায়ুর সর্বোচ্চ অংশে এবং শিশু মস্তক বস্তি গহ্বরে থাকিলেও উহার পৃষ্ঠদেশ পিছনদিকে ঘুরানো থাকে। উহার হাত পা জরায়ুর সম্মুখভাগেই অনুভব করা যায়। শিশুর মস্তক ভাল করিয়া নিচে নামিতে পারে না বলিয়া অপেক্ষাকৃত উপরে থাকে। ভ্রূণের হৃৎস্পন্দন নাভিমূলের নিম্নে ও ডানদিকে ভাল শোনা যায়।
আরওএ এবং এলওপি অবস্থায় যথাক্রমে এলওএ এবং আরওপি অবস্থার বর্ণনায় কথিত বাম স্থানে এবং ডান স্থানে বাম কথাগুলি বসিবে।
মস্তকের শীর্ষদেশ উপস্থিতির বা ভার্টেক্স প্রেজেন্টেশনের প্রসব কৌশলে মাথার সাত প্রকারের গতি ভঙ্গি হইতে পারে। ১) এনগেজমেন্ট, ২) নিম্নাবতরণ ও নমন, ৩) অন্তঘূর্ণন, ৪) প্রসারণ, ৫) প্রতিঘূর্ণন, ৬) বহিঘূর্ণন, ৭) পার্শ্বদেশের নমন ও দেহ নিষ্ক্রমণ।






প্রশ্ন-  গর্ভস্থ শিশুর প্রথম মস্তক শীর্ষ এর প্রসব কৌশল বা অগ্রে মস্তক শীর্ষ (LOA) বহির্গমনের কৌশল বর্ণনা কর।

উত্তর: গর্ভস্থ শিশুর প্রথম মস্তক শীর্ষ এর প্রসব কৌশল বা অগ্রে মস্তক শীর্ষ (LOA) বহির্গমনের কৌশল- গর্ভস্থ শিশু মাথা হেট অবস্থায় না রাখিয়া যদি মাথা সোজা করিয়া রাখিত তাহা হইলে ভূমিষ্ট হওয়া কখনই সম্ভবপর হইত না। প্রবেশপথের বা ব্রিমের দক্ষিণ তীর্যক ব্যাসের ৪.৭৫ ইঞ্চি উপর শিশুর মাথার লম্বা দিক থাকে। নিচে তীর্যক ব্যাস বড় নয়, কিন্তু কখুগেট বড়। এই প্রসব কৌশলের উদ্দেশ্য হইল মাথার ছোট ব্যাস ঘুরিয়া ঘুরিয়া বস্তিদেশের বড় ব্যাসে আনিয়া ফেলা। মাথা প্রসবের রাস্তা দিয়া নামিয়া আসার সময় ৭টি পরিবর্তন হয়।

১) অটি হইয়া বসা (Engagement): মস্তক স্যাজিট্যাল সংযোজকের সঙ্গে বস্তিদেশের প্রবেশপথের দক্ষিণ তীর্যক ব্যাসে ৪.৭৫ ইঞ্চি প্রবেশ করে। সাব অকসিপুট ফ্রন্টব্যাসে (৪ ইঞ্চি) আঁট হইয়া বসে।
২) নমন (Flexion): নমন ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুর মস্তক যখন সম্পূর্ণ নমিত হয় তখন উহা লম্বালম্বিভাবে ক্রমশঃ জননপথের অক্ষরেখা দিয়া অগ্রসর হইতে থাকে এবং উহার অনুপ্রস্থে শিশুর মস্তকের ক্ষুদ্রতম ব্যাসে অধিষ্ঠান করে।
৩) অন্তঘূর্ণন (Internal Rotation): অগ্নিপুট প্রথমে বস্তিদেশের মেঝেতে যায়- সম্মুখদিকে বস্তিদেশের বাম ধরিয়া ১/৮ ভাগ ঘোরে।
৪) প্রসারণ (Extention): কপাল, মুখ ও চিবুকের অগ্রভাগ, পেরিনিয়াম পার হইয়া যায় এবং প্রসারণ গতিভঙ্গির সাহায্যে মস্তক বাহির হইয়া আসে।
৫) প্রতিঘূর্ণন (Restituttion): প্রতিঘূর্ণন হইবার ফলে অক্সিপুট বামদিকে ঘুরিয়া যায় এবং মাথা ও ঘাড় সোজা হইয়া যায়।
৬) স্কন্ধের অন্তঘূর্ণন (Internal Rotation of soulders) এবং মস্তকের বহিঘূর্ণন (External Rotation): ইহাতে স্কন্ধ দুইটি বাম তীর্যকে প্রবেশ করে। সম্মুখ স্বন্ধ প্রথমে বস্তিদেশের মেঝেতে যায় এবং সম্মুখভাগে বস্তিদেশের দক্ষিণ দিক ধরিয়া বৃত্তের ১/৮ ভাগ ঘোরে এবং স্কন্ধের অন্তঘূর্ণন হয় অর্থাৎ মস্তকের বহিঘূর্ণন হয়।
৭) পার্শ্বদেশের নমন (Lateral Flexion) এবং দেহ নিষ্ক্রমণ- সম্মুখ স্কন্ধ সিমফিসিস পিউবিসের নিচে চলিয়া যায়, পশ্চাৎ স্বন্ধ পেরিনিয়ম ছাড়াইয়া যায় এবং পার্শ্বদেশের নমনের সাহায্যে শিশুর দেহ বাহির হইয়া আসে।
 





প্রশ্ন-  গর্ভস্থ শিশুর মস্তক শীর্ষ উপস্থিতির অবস্থিতি বর্ণনা কর।

উত্তর: গর্ভস্থ শিশুর মস্তক শীর্ষ উপস্থিতির অবস্থিতি বর্ণনা- গর্ভস্থ শিশুর অক্সিপুট (মাথার পিছন দিকের উন্নত অংশ) যদি স্থির বিন্দু হয় তাহা হইলে মস্ত কশীর্ষ উপস্থিতির অবস্থিতি ৪ প্রকার হইতে হইতে পারে। যথা-
১) লেফট অক্সিপিটো এন্টিরিয়র (LOA): এই অবস্থায় শিশুর অগ্নিপুট বামে এবং সামনের দিকে থাকে।
২) রাইট অক্সিপিটো এন্টিরিয়র (ROA): শিশুর অক্সিপুট যখন ডানে এবং সামনে অবস্থান করে।
৩) রাইট অক্সিপিটো পোস্টিরিয়র (ROP): শিশুর অক্সিপুট যখন ডানে এবং পেছনদিকে অবস্থান করে।
৪) লেফট অক্সিপিটো পোস্টিরিয় (LOP): শিশুর অক্সিপুট যখন বামে এবং পেছনদিকে অবস্থান করে।


চিত্রঃ
মস্তক উপস্থিতির তৃতীয় অবস্থা (ROP)
মস্তক উপস্থিতির চতুর্থ অবস্থা (LOP)
মস্তক উপস্থিতির দ্বিতীয় অবস্থা (ROA)
মস্তক উপস্থিতির প্রথম অবস্থা (LOA)






প্রশ্ন- প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশ উপস্থিতির (vertex presentation) প্রসব কৌশলে মস্তকের এনগেজমেন্ট অবস্থার বা গতিভঙ্গির কারণ ও বিবরণ লিখ।

উত্তর: প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশ উপস্থিতির (vertex presentation) প্রসব কৌশলে মস্তকের এনগেজমেন্ট অবস্থার বা গতিভঙ্গির কারণ ও বিবরণ- প্রসবকার্য আরম্ভ হইবার পূর্ব হইতেই শিশুর চিবুক প্রায় বুকের সহিত লাগিয়া থাকে। প্রসবের সময় মস্তক আরও নমিত হইয়া অর্থাৎ শিশুর মাথা আরও হেট হইয়া মস্তকের ব্যাস দিয়া বস্তি গহ্বরের ভিতরে প্রবেশ করে। এই মস্তক নমনের ফলেই বস্তি গহ্বরে প্রবেশ করিয়া আঁট হইয়া বসা সম্ভবপর হয়।
প্রসবের সময় যতই আগাইয়া আসে ততই শিশুর মস্তক নিচের দিকে নামিতে থাকে। কখনও কখনও উহা বস্তি গহ্বরের মুখে নামিয়া পড়ে। কখনও বা উপরে উঠিয়া যায়। কিন্তু প্রথম গর্ভিনী হইলে প্রসবস্থার তিন সপ্তাহ পূর্ব হইতেই শিশুর মস্তি স্ক বস্তি গহ্বরের প্রবেশ পথে প্রবেশ করে এবং প্রসব আসন্ন হইলে উহার মধ্যে ঘন সন্নিবিষ্ট হয়। এখন আর উহা বস্তি গহব্বর ছাড়াইয়া উপরে যাইতে পারে না এবং শিশুর মাথার সবচেয়ে বড় ব্যাস বস্তিদেশের প্রবেশ পথ (brim) পার হইয়া গিয়া উহার মধ্যে ঘন সন্নিবিষ্ট বা আঁট হইয়া বসিলে আমরা হেড এনগেজমেন্ট হইয়াছে বলিয়া থাকি।






প্রশ্ন- প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশের উপস্থিতির প্রসব কৌশল নিম্নবতরণ ও নমন গতিভঙ্গীর (Desceent & Flexiion) কারণ ও বিবরণ লিখ।

উত্তর: প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশের উপস্থিতির প্রসব কৌশল নিম্নবতরণ ও নমন গতিভঙ্গীর (Desceent & Flexiion) কারণ ও বিবরণ- জরায়ু সংকোচনের চাপে শিশুর দেহটা লম্বা হইয়া যায়, সুতরাং মাথার উপরের অংশ নিচের দিকে নামে। এই নিম্নাবতরণের কারণ হইল- ক) জরায়ুর সংকোচন এবং জরায়ুর স্বস্থানে প্রত্যাবর্তন, খ) গর্ভস্থ শিশুর অক্ষ চাপ।
মেমব্রেন বা থলি ফাটিয়া যাইবার পর সংকোচনশীল জরায়ুর চাপ যখন শিশুর বস্তির উপর পড়ে, তখনই গর্ভস্থ শিশুর অক্ষ চাপের সূত্রপাত হয়। এই চাপ শিশুর স্পাইন এবং অক্সিপুট পর্যন্ত প্রসারিত হয়। ইহার ফলে শিশু ঘুরিয়া ফিরিয়া আগাইয়া আসিবার পথ প্রশস্ত হয় এবং স্বাভাবিক প্রসবের পথও সুগম হয়।
নমন অবস্থা দুইটি কারণে হইয়া থাকে। যথা- ক) মাথার এমন গড়ন যে মাথার পিছনের দিকটা (অক্সিপুট) যেমন সহজেই নামিয়া আসে, কপালের দিকটা তেমন নামিয়া আসে না, খ) শিশুর শিরদাঁড়ার যে স্থান শিশুর মাথার সহিত যুক্ত, সেই স্থান সিনসিপুটের অপেক্ষা অকসিপুটের বেশী নিকটে। ব্যথার চাপে শিরদাঁড়া যখন নিচের দিকে চাপ দেয়, তখন অক্সিপুটের উপরই বেশী চাপ পড়ে। এই হেতু অক্সিপুট আগে নিচে নামে এবং সিনসিপুট উপরের দিকে উঠে।








প্রশ্ন- প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশের উপস্থিতির প্রসব কৌশল অন্তঘূর্ণন (Internal Rotation) এর কারণ ও বিবরণ লিখ।

উত্তর: প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশের উপস্থিতির প্রসব কৌশল অন্তঘূর্ণন (Internal Rotation) এর কারণ ও বিবরণ- গর্ভিনীর বস্তিদেশের আয়তন হইতে বুঝিতে পারা যায় যে উহার প্রবেশ পথ প্রন্থে অধিকতম দীর্ঘ। কিন্তু বহির্দারের দৈর্ঘ্য বা সম্মুখ হইতে পশ্চাৎদিকের মাপ সর্বাপেক্ষা বৃহৎ। কাজেই যদি শিশুর মস্তককে বিনা বিপত্তিতে বস্তিগহ্বরের ভিতর দিয়া আসিতে হয় তাহা হইলে উহাকে প্রবেশ পথের প্রশস্ততম পরিধি দিয়া প্রবেশ করিয়া বহির্দ্ধারে প্রশস্ততম পরিধি দিয়া বাহির হইতে হইবে এবং ইহার জন্য ভ্রূণ মস্তককে বস্তি গহ্বরের মধ্যে ঘুরিয়া যাইতে হইবে। এই অন্তঘূর্ণন প্রসব কার্যের পক্ষে অতি আবশ্যকীয় ঘটন এবং - কার্যত তাহাই ঘটিয়া থাকে।
সহজ প্রসবের ক্ষেত্রে শিশুর মস্তকের ক্ষুদ্রতম পরিধি (৪.৭৫ ইঞ্চি) দিয়া বস্তি গহ্বরের ডানদিকে তীর্যক ব্যাসের মধ্যে প্রবেশ করিয়া থাকে। শিশুর মস্তক যতই নিচে নামিতে থাকে ততই অকসিপুট অধিকতর নিচে নামিয়া পড়ে এবং ক্রমশঃ উহাই শিশু মস্তকের নিম্নতম অংশ হওয়ায় বস্তি প্রদেশের তলদেশে প্রথম পৌঁছায়। উপরের চাপ পাইয়া এবং নামিবার পথে বাধা পাইয়া অক্সিপুট ঘুরিয়া বস্তি গহ্বরের তলদেশের বৃহত্তম ব্যাস অধিকার করে। ইহার জন্য উহাকে প্রায় ৪৫° (বৃত্তের ১/৮ অংশ) ঘুরিতে হয় এই ঘুরিবার নাম অন্তঘূর্ণন।






প্রশ্ন- প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশ উপস্থিতির প্রসব কৌশল প্রসারণ (Extension) গতিভঙ্গীর কারণ ও বিবরণ দাও।

উত্তর: প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশ উপস্থিতির প্রসব কৌশল প্রসারণ (Extension) গতিভঙ্গীর কারণ ও বিবরণ- এই অবস্থায় শিশুর মাথার পিছনদিক বা অক্সিপুট পিঠের দিকে বেশ নামিয়া যায়। চিবুক হইতে সারিয়া আসে এবং গলা প্রসারিত হয়। ঘাড় যখন পিউবিক খিলানে ঠেকিয়া থাকে তখন ব্যথার চাপের সঙ্গে অক্সিপুট আর নিচে নামিতে পারে না। এই সময়ে কপালের দিকটায় বা সিনসিপুটে সমস্ত চাপ গিয়া পড়ে। এই কারণে তখন কপালের দিকটা নিচে নামিতে থাকে এবং চিবুক বুক হইতে সরিয়া আসে এবং গলা প্রসারিত হয়। সিনসিপুটের চাপে নরম চক্ষু অস্থি পিছনের দিকে সরিয়া যায় এবং ইহার ফলে বহির্দারের কঞ্জুগেট ব্যাস খুব বড় হয়। ১.৫ ইঞ্চি বিটপ রবারের মত বড় হইয়া ৪.৫ ইঞ্চি হয়। ইহার পর ক্রমশ সম্মুখ সংযোজক মিলনী কপাল ও মুখ আসিয়া পড়ে। ওষ্ঠ যোজনী মুখের উপর দিয়া পিছনে চলিয়া যায় এবং অক্সিপুট আরও উপরের দিকে উঠিয়া যায়। ইহাতে খুব বেশী রকম প্রসারণ অবস্থায় মাথা বাহির হইয়া পড়ে।







প্রশ্ন- প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশের উপস্থিতির প্রসব কৌশল প্রতিঘূর্ণন (Restitution) গতিভঙ্গির কারণ ও বিবরণ দাও।

উত্তর: প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশের উপস্থিতির প্রসব কৌশল প্রতিঘূর্ণন (Restitution) গতিভঙ্গির কারণ ও বিবরণ- প্রসবকালে শিশুর অন্ত ঘূর্ণন সময় মাথাটি ঈষৎ বাঁকিয়া যায় এবং গলাটা কিছুটা সুচড়াইয়া যায়। প্রতিঘূর্ণনের দ্বারা গলা আবার আগেকার অবস্থায় আসিবার ফলে সোজা হইয়া যায়।
প্রতিঘূর্ণনের মূল কথা হইল জরায়ুর মধ্যে যখন শিশুর মস্তক অন্তঘুর্ণনের ফলে ঘুরিয়া যায় তখন জরায়ুর চাপের জন্য শিশুর স্কন্ধদেশ সঙ্গে সঙ্গে ঘুরিতে পারে না। কাজেই ঘাড় কুঁচকাইয়া থাকে। সেই হেতু যে মুহূর্তে মস্তক বাহিরে আসে তখন ঘাড় কুঁচকাইয়া থাকার আর প্রয়োজন না থাকায় মাথা পুনরায় উল্টাদিকে ঘুরিয়া স্কন্ধের সহিত সহজ অবস্থায় ফিরিয়া আসে।








প্রশ্ন-  প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশের উপস্থিতির প্রসব কৌশলে কাঁধের অন্ত ঘূর্ণন ও মস্তকের বহিঘূর্ণনের গতিভঙ্গির কারণ ও বিবরণ লিখ।

উত্তর : প্রসবকালে শিশুর মস্তকের শীর্ষদেশের উপস্থিতির প্রসব কৌশলে কাঁধের অন্তঘূর্ণন ও মস্তকের বহিঘূর্ণনের গতিভঙ্গির কারণ ও বিবরণ- মাতৃজঠরে শিশুর কাঁধের অন্তঘূর্ণন হইবার দরুণ মাথার বহিঘূর্ণন হয়। শিশুর কাঁধ বহির্দারে অবলিক ব্যাসে থাকে। ঠিক মাথার মতই কাঁধের অন্তঘূর্ণন হয় এবং বহির্ধারের সম্মুখ পশ্চাৎব্যাসে (৫ ইঞ্চি) আসে। মাথা বাহিরে বাধাহীন অবস্থায় থাকায় উহা একই সঙ্গে ঘুরিতে থাকে। ইহার ফলে অক্সিপুট মায়ের বস্তি দেশের ঠিক একই দিকে ঘুরিয়া আসে অর্থাৎ প্রসব ব্যথার আরম্ভে অক্সিপুট যে অবস্থায় ছিল ঠিক সেই অবস্থার আসিয়া পৌছায়।
মস্তক বাহির হইবার পর স্কন্ধদ্বয় একই উপায়ে বাহির হয়। প্রথমে দক্ষিণ দিকের তীর্যক ব্যাস অধিকার করিয়া ৪৫° ঘুরিয়া বহির্দারের দীর্ঘতম ব্যাস অধিকার করে। স্কন্ধ ঘুরিবার সঙ্গে সঙ্গে মস্তকও বাহিরে ঘুরিয়া যায়।








প্রশ্ন-  প্রসবের কোন অবস্থায় ভ্রুণদেহে কোন অংশ কোথা হইতে জোর পাইয়া প্রসব নির্দিষ্ট পথে অগ্রসর হয় বর্ণনা দাও।

উত্তর : প্রসব কার্য বিশ্লেষণ করিলে প্রসবের কোন অবস্থায়, ভ্রূণদেহের কোন অংশ কোথা হইতে জোর পাইয়া প্রসব পথের নির্দিষ্ট পথে অগ্রসর হয় তাহা নিম্নে দেওয়া হইল-

প্রথম অবস্থা-
শক্তি- যে শক্তি বলে ভ্রুণদেহ বাহিরে আসে। জরায়ুর উপরাংশ এই সময়ে সংকুচিত হয়। ইহার ফলে জরায়ু গ্রীবার মুখ খুলিয়া যায়।
প্রসব পথ- জরায়ুর নিম্নাংশ এবং জরায়ুর গ্রীবানালী একীভূত হইয়া যায়।
প্রসূত অংশ- পর্দা নির্মিত জলপূর্ণ থলি সম্মুখস্থিত অ্যমনিয়নের পানি এবং উপস্থিতকারী অংশ (সাধারণতঃ মস্তক)।

দ্বিতীয় অবস্থা-
শক্তি- জরায়ুর উপরাংশ, উদরের চাপ।
প্রসব পথ- বস্তি গহ্বরের তলদেশ উন্মুক্ত হইয়া পথ প্রস্তুত হয়।
প্রসূত অংশ- ভ্রূণ ও অ্যামনিয়নের পানি।

তৃতীয় অবস্থা-
শক্তি- প্রথমে জরায়ু সংকুচিত হইয়া গর্ভফুল ও পর্দাকে জরায়ু গাত্র হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া যোনিপথে ঠেলিয়া দেয়। পরে উপরের চাপ আসিয়া উহাদিগকে 'একেবারে দেহের বাহির করিয়া দেয়।
প্রসব পথ- জরায়ুর নিম্নাংশ, জরায়ুর গ্রীবা নালী এবং বস্তি গহ্বরের তলদেশ।
প্রসূত অংশ- গর্ভফুল ও পর্দা।





প্রশ্ন-  প্রসব ব্যথা প্রশমনের উপায়সমূহ কি কি?

উত্তর : প্রসব ব্যথা প্রশমনের উপায়- প্রসব ব্যথার সময় মাতা এবং শিশুর মঙ্গলের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখিয়া ব্যথাক্লিষ্ট মাতাকে সাধ্যমত ব্যথার হাত হইতে রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। প্রসব ব্যথা লাঘব করার জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করিতে হইবে।
১) উপদেশাবলী- ধাত্রীর ব্যক্তিত্ব প্রভাবে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসব ব্যথার সময় রোগিনীর মনের উপর ধাত্রীকে প্রভাব বিস্তার করিতে হইবে এবং রোগিনীর আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করিতে হইবে।
২) মানসিক চাপ ও উত্তেজনা দূরীকরণ- রোগিনীর ভয় হেত জরায়ুর নিম্নাংশের পিশীগুলি সংকুচিত হইবার ফলে উক্ত স্থানে চাপের সৃষ্টি হয় এবং উহা হইতে ব্যথার আবির্ভাব হয়। সুতরাং এই ভয় দূরীকরণের জন্য গর্ভাবস্থায় প্রতি সপ্তাহে নিম্নের বিষয়গুলি শিক্ষাদান প্রয়োজন।
ক) ব্যথার সময় কি করিলে পেশীগুলি সংকুচিত না হইয়া প্রসারিত হয়।
খ) ব্যথার কোন অবস্থায় কিভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিলে পেশীগুলি প্রসারিত হয়।
গ) কিভাবে পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম এবং পায়ের ব্যায়াম করিতে হয়।
ঘ) ব্যথার সময় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কি অবস্থায় রাখিতে হয়।

ব্যথার সময় শিক্ষনীয় বিষয়গুলি হইল-
ক) জরায়ুর মুখ দুই তিন আঙ্গুল খুলিলে এবং প্রতি পাঁচ বা সাত মিনিট পর পর নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী প্রসব বেদনায় জরায়ু সংকোচন হইতে থাকিলে রোগিনীকে বিছানায় শোয়াইয়া দিতে হইবে।
খ) রোগিনীর ঘরের আবহাওয়া শান্ত ও সংযত হইবে।
গ) শিশুর মাথা বাহির হইবার সময় মাতাকে শ্বাস বন্ধ করিয়া কোঁথ দিতে বলা হইবে এবং এই সময়ে মুখ বন্ধ করিয়া রাখিতে হইবে।
ঘ) প্রসব ব্যথার দ্বিতীয় অবস্থায় নিঃশ্বাসের জন্য বক্ষের পেশীগুলির সাহায্য লইতে হইবে। ইহাতে নিচের দিকে কোঁথ দিবার কাজে তলপেটের পেশীগুলি এবং ডায়াফ্রাম বিশেষভাবে কাজে আসিবে।
৩) ব্যথা কমাইবার ঔষধাদি- ব্যথা উপশমের জন্য যে সকল ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তাহা সম্বন্ধে সঠিক বিচারের বিশেষ প্রয়োজন। কারণ এই প্রয়োগ বিধির উপর মা ও শিশুর জীবন মরণ নির্ভর করে। নির্দিষ্ট সময়ের বহু পূর্বে এইগুলি প্রয়োগ করিলে জরায়ু সংকোচন বন্ধ হইয়া যায় এবং নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে প্রয়োগ করিলে মাকে অযথা যন্ত্রণা ভোগ করিয়া ক্লান্ত হইতে হয়। অবস্থার উপর নির্ভর করিয়া যন্ত্রণার হাত হইতে রেহাই পাইবার জন্য মাতার ঘুমের প্রয়োজন তখনই পেথিডিন জাতীয় ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয়, নতুবা নয়।
৪) অজ্ঞান করিবার ঔষধ- অনেক সময় অবস্থার উপর নির্ভর করিয়া অজ্ঞান করিবার ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয়।
৫) শ্বাস মাধ্যমে ব্যথা কমানোর ঔষধাদি-স্বাভাবিক প্রসব ব্যথার যন্ত্রণা লাঘবের জন্য স্বাস্থ্যবতী নারীদের উপর শ্বাস মাধ্যমে ব্যথা কমানোর (inhalation analgesies) ঔষধ গ্রহণের ব্যবস্থা দেওয়া হয়।







প্রশ্ন-  স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থাপনা লিখ।

উত্তর: স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থাপনা- হাসপাতাল বা গৃহ যেখানেই প্রসব হোক না কেন শিক্ষিত ধাত্রীকে রোগিনীর সহায়তার জন্য সব সময় কাছে থাকিতে হইবে। যে কোন অবস্থাতেই যত সত্বর ধাত্রীর প্রযত্নে প্রসব হয় ততই মঙ্গল।
স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থাপনার মূলনীতিগুলি হইল-
১) প্রসূতির মানসিক প্রয়োজন উপলব্ধি করিয়া তাহা মিটাইবার ব্যবস্থা করা।
২) প্রসূতিকে স্নেহপ্রীতি দরদের ছোঁয়ায় পূর্ণ করা।
৩) সর্বপ্রকার আরামের ব্যবস্থা করা। ব্যথার কষ্ট উপশম করা অথবা রক্তক্ষয় বা শরীরের কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা।
৪) প্রসূতির ব্যথার গতি প্রকৃতির উপর সজাগ দৃষ্টি রাখা।






প্রশ্ন-  স্বাভাবিক প্রসবের প্রথম অবস্থার ব্যবস্থাপনা লিখ।

উত্তর: স্বাভাবিক প্রসবের প্রথম স্তরের ব্যবস্থাপনা-
১) প্রসূতির ব্যথার গতি প্রকৃতির উপর লক্ষ্য রাখিয়া প্রকৃত পক্ষে এটা প্রসব শুরুর ব্যথা কিনা তাহা সঠিকভাবে অনুধাবন করা।
২) ধাত্রীকে রোগিনীর সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মিশিতে হইবে এবং তাহার মন জয় করিয়া তাহাকে সাহায্য করিতে হইবে।
৩) রোগিনীকে স্নান করাইয়া আলগাভাবে শাড়ী বা গাউন পরাইয়া দিতে হইবে।
৪) দেহের তাপ নির্ণয়, হাতে নাড়ী পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, পেটের উপর হাত দিয়া পরীক্ষা, ফিটাল হার্ট সাউন্ড পরীক্ষা, প্রভৃতি সম্পন্ন করিতে হইবে।
৫) যোনিপ্রদেশ প্রসাধন করিয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করিবার পর সেভ করিয়া দিতে হইবে।
৬) যোনি পরীক্ষার পর জানা উচিত প্রসব শুরু হইয়াছে কিনা, মেমব্রেণ ঠিকমত আছে কিনা। শিশুর প্রেজেন্টেশন ও পজিশন জানিতে হইবে। ঠিকমত শিশুর Vertex engaged হইয়াছে কিনা তাহা দেখিতে হইবে।
৭) এই স্তরে রোগিনীর জোর করিয়া চাপ দেওয়া বা চেষ্টা করা কখনও উচিত নয়। আপনা থেকেই সংকোচন হইবে।
৮) রোগিনীকে ভাল ঘুমাইবার চেষ্টা করানো উচিত।






প্রশ্ন- স্বাভাবিক প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থার ব্যবস্থাপনা লিখ।

উত্তর: স্বাভাবিক প্রসবের দ্বিতীয় স্তরের ব্যবস্থাপনা-
১) এই স্তরে প্রসূতি ও শিশু উভয়ের উপর বেশী চাপ পড়ে। তাই মা ও শিশু যাহাতে ক্লান্ত না হয় তার প্রতি লক্ষ্য রাখিতে হইবে।
২) রোগীর তলপেট উরু এবং বিটপ জীবাণুমুক্ত করিতে হইবে।
৩) মলদ্বারের উপরটা যখন ব্যথার চাপে ফুলিয়া উঠিতে থাকে তখন রোগিনীকে বামদিকে কাত করাইয়া শোয়াইয়া দিতে হইব এবং বালিশের উপর ডান পা তুলিয়া দিতে হইবে।
৪) দ্বিতীয় স্তর অস্বাভাবিক দীর্ঘায়িত করা উচিত নয়। প্রথম প্রসূতির ক্ষেত্রে দুই ঘণ্টা এবং সন্তানের জননীর পক্ষে এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করিতে হইবে।
৫) প্রসূতিকে এক স্থানে স্থির হইয়া থাকার ব্যবস্থা করিতে হইবে।
৬) ব্যথার সময় মুখ বন্ধ করিয়া কোঁথ দিলে ব্যথার জোর বাড়িবে।
৭) মলদ্বারের উপরটা ফুলিবার দরুন যখন শিশুর মাথা নামিতে বাধা পায় তখন কোঁথ না দিয়া বরং রোগিনীকে চীৎকার করিতে দিলে প্রসবের অসুবিধা হয়।
৮) হঠাৎ যাহাতে শিশুর মাথা বাহির হইয়া না যায় তাহা রোধ করিতে হইবে কারণ হঠাৎ বাহির হইয়া গেলে বিটপ ছিড়িয়া যাইতে পারে বা শিশুর মাথায় আঘাত লাগিতে পারে।
৯) ব্যথার বিরামের সময় বিটপে হাত দিয়া চাপ দিয়া ব্যথা বৃদ্ধি করানো উচিত নয়। তাহাতেও বিটপ ছিঁড়িয়া যাইতে পারে। এই সময় ডান হাতের আঙ্গুল দিয়া শিশুর মাথা খুব ধীরে ধীরে রোগিনীর সামনের দিকে ঠেলিবার ব্যবস্থা করা উচিত।
১০) শিশুর গলায় নাড়ী জড়ানো থাকিলে নাড়ী আলগা করিয়া দিতে হইবে যাহাতে শিশুর কাঁধ বাহির হইতে পারে।
১১) দ্বিতীয় স্তরের জন্য সব যন্ত্রপাতি, স্টেরিলাইজ করার ব্যবস্থা, গরম পানি, ডেটলপানি, কাঁচি, নাভিরজ্জু বাঁধার জন্য কর্ড, ফুল রাখার জন্য ডিস, শিশুর নাভিতে লাগানোর জন্য মারকিউরোক্রোম সলিউশন, শিশুকে পরিষ্কার করা ও মুখের আম প্রভৃতি পরিষ্কার করার জন্য ব্যবস্থা সব ঠিকভাবে রাখা কর্তব্য।







প্রশ্ন- স্বাভাবিক প্রসবের তৃতীয় অবস্থার ব্যবস্থাপনা লিখ।

উত্তর : স্বাভাবিক প্রসবের তৃতীয় স্তরের ব্যবস্থাপনা-
১) এই স্তরে Post Partum রক্তপাতের ভয় থাকে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য দেওয়া উচিত।
২) সন্তান প্রসব হওয়ার পর জরায়ু গাত্রে সংকোচন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকে। তখন গর্ভফুল জরায়ু আটকাইয়া থাকে। যতক্ষণ গর্ভফুল আপনা হইতে বাহির হইয়া না আসে ততক্ষণ অপেক্ষা করিতে হইবে।
৩) প্রসবের ২ ঘণ্টা পরও গর্ভফুল পৃথক হইয়া বাহির না হইলে জোর করিয়া গর্ভফুল বাহির করার চেষ্টা করা উচিত নয়। এই অবস্থায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।
৪) জরায়ু হইতে সব গর্ভফুল বাহির হইয়া গেলে তাহাকে সংকোচন অবস্থায় রাখিতে হইবে। সামান্য হালকা ম্যাসেজ এই কাজে সাহায্য করে।
৫) শিশুকে স্নান ও ড্রেস করাইয়া শোয়াইয়া রাখিতে হইবে।
৬) শিশুর নাভি ঠিকমত বাঁধিয়া দিতে হইবে।







প্রশ্ন-  প্রসবের প্রথম স্তরের বা ধাপের ব্যবস্থাপনা লিখ।

উত্তর: প্রসবের প্রথম স্তরের বা ধাপের ব্যবস্থাপনা- রোগিনীর স্বাস্থ্য, প্রসব বস্তি এবং উপস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকিবার উপরই প্রসবের প্রথম অবস্থায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা নির্ভর করে। প্রসূতি যদি প্রথম গর্ভবতী নারী হন তাহা হইলে ধাত্রীকে রোগির সহিত এমনভাবে ব্যবহার করিতে হইবে যে, রোগিনী তাহাকে আপনজন মনে করিয়া সম্পূর্ণরূপে ধাত্রীর উপর নির্ভর করিতে পারে। এই অবস্থায় রোগিনীর যোনিপ্রদেশ প্রসাধন বা ভালভা টয়লেট করিতে হয়। তৎপর কাঁচি দ্বারা পিউবিসের চুল ছাঁটিয়া দিতে হইবে। রোগিনীকে স্নান করাইয়া আলগাভাবে শাড়ী বা গাউন পরাইয়া দিতে হইবে।
প্রসূতির ব্যথার গতি প্রকৃতির উপর লক্ষ্য রাখিয়া প্রকৃত পক্ষে ইহা প্রসব শুরুর ব্যথা কিনা তাহা সঠিকভাবে অনুধাবন করিতে হইবে। রোগিনীর দেহের তাপ নির্ণয়, হাতের নাড়ী পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, পেটের উপর হাত দিয়া পরীক্ষা, ফিটাল হার্ট সাউন্ড পরীক্ষা প্রভৃতি সম্পন্ন করিতে হইবে। যোনি পরীক্ষার পর জানা উচিত প্রসব শুরু হইয়াছে কিনা, মেমব্রেন ঠিকমত আছে কিনা, শিশু প্রেজেন্টেশন ও পজিশনও জানিতে হইবে। ঠিকমত শিশুর Vertex engaged হইয়াছে কিনা তাহা দেখিতে হইবে। রোগিনীর যাহাতে ভাল ঘুম হয় তাহার চেষ্টা করা উচিত।









প্রশ্ন- প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থা বা ধাপের ব্যবস্থাপনা লিখ।

উত্তর: প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থা বা ধাপের ব্যবস্থাপনা- প্রসবের দ্বিতীয় অবস্থায় রোগিনীর মলদ্বারের উপরটা যখন ব্যথার চাপে ফুলিয়া উঠিতে থাকে তখন রোগিনীকে বামদিকে কাত করাইয়া শোয়াইয়া দিতে হইবে এবং বালিশের উপর ডান পা-তুলিয়া দিতে হইবে। রোগিনীর তলপেট, উরু ও বিটপ জীবাণুমুক্ত করিতে হইবে। এই স্তর অস্বাভাবিক দীর্ঘায়িত করা উচিত নয়। প্রথম প্রসূতির ক্ষেত্রে দুই ঘণ্টা এবং সন্তানের জননীর ক্ষেত্রে এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করিতে হইবে। প্রসূতি ও শিশু উভয়ের উপর এই স্তরে চাপ বেশী পড়ে। তাই লক্ষ্য রাখিতে হইবে যাহাতে মা ও শিশু ক্লান্ত না হয়, এই স্তরের জন্য সব যন্ত্রপাতি, স্টেরিলাইজড করার ব্যবস্থা, গরম পানি, ডেটল পানি, কাঁচি, নাভিরুচ্ছু বাঁধার জন্য কর্ড, ফুল রাখার ডিস, হাইপোডার্মিক সিরিঞ্জ, শিশুকে পরিষ্কার করা ও মুখের আম প্রভৃতি পরিষ্কার করার। জন্য ব্যবস্থা সব ঠিকমত হওয়া প্রয়োজন। জরায়ুর মাংসপেশী অধিক সংকোচনের ফলে ব্যথার সময় দম বন্ধ করিয়া কোঁথ দিলে ব্যথার জোর বাড়িবে এবং শিশুর মাথা নিচের দিকে নামিবে। মলদ্বারের উপরটা ফুলিবার দরুন যখন শিশুর মাথা নামিতে বাধা পায় তখন কোঁথ না দিয়া বরং রোগিনীকে চীৎকার করিতে দিলে প্রসবের সুবিধা হয়। তবে হঠাৎ যাহাতে শিশুর মাথা বাহির হইয়া না যায় তাহা রোধ করিতে হইবে কারণ মাথা হঠাৎ বাহির হইয়া গেলে বিটপ ছিঁড়িয়া যাইতে পারে বা শিশুর মাথায় আঘাত লাগিতে পারে। প্রথমে মাথা ভূমিষ্ট হয়, পরে যথাক্রমে ঘাড়, স্কন্ধ, দেহ ও পা ভূমিষ্ট হয়। শিশুর গলায় নাড়ী জড়ানো থাকিলে নাড়ী আলগা করিয়া দিতে হইবে যাহাতে শিশুর কাঁধ বাহির হইতে পারে। শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পরই তাহার নাক, মুখ ও শরীর মুছিয়া পরিস্কার করিয়া দিতে হইবে। শিশু যতক্ষণ কাঁদিয়া না উঠে ততক্ষণ নাভিরজ্জু কাটা উচিত নয়। নাভিরজ্জু কাটিবার পূর্বে শিশুর নাভী হইতে দেড় ইঞ্চি দূরে একটি বাঁধন দিতে হইবে এবং বাঁধনের এক ইঞ্চি দূরে আর একটি বাঁধন দিতে হইবে। এই দুই বাঁধনের মাঝামাঝি স্টেরিলাইজড কাঁচি দ্বারা এমনভাবে কাটিতে হইবে যাহাতে বাচ্চার নাভিতে টান না পড়ে।






প্রশ্ন- প্রসবের তৃতীয় স্তর বা ধাপের ব্যবস্থাপনা লিখ।

উত্তর: প্রসবের তৃতীয় স্তর বা ধাপের ব্যবস্থাপনা- প্রসবের তৃতীয় অবস্থায় অর্থাৎ শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর সাধারণতঃ জরায়ু সংকোচন খুব ভাল থাকে। মাঝে মাঝে সামান্য কয়েক সেকেন্ডের জন্য জরায়ুর শিথিল অবস্থায় হয় এবং কোন প্রকার রক্তপাত থাকে না। প্রসবের পর গর্ভফুল জরায়ু গাত্রে আটকাইয়া থাকে। যতক্ষণ গর্ভফুল আপনা হইতে বাহির হইয়া না আসে ততক্ষণ অপেক্ষা করিতে হইবে। গর্ভিনীর চেষ্টায় গর্ভফুল বাহির না হইলে সংকুচিত জরায়ুতে চাপ দিয়া একটু নিচের দিকে এবং পাছার দিকে অর্থাৎ প্রসব বস্তির বহির্দারের দিকে বস্তিদেশের বক্ররেখা বরাবর ঠেলিতে হইবে। এইভাবে যোনিপথ হইতে সাধারণতঃ গর্ভফুল বাহির করা হয়। গর্ভফুল তাড়াতাড়ি বাহির করিবার জন্য চেষ্টা করা উচিত নয়, গর্ভফুল বাহির হইয়া আসিলে উহাকে ডান হাতে নিয়া ধীরে ধীরে দুই হাত ঘুরাইতে হইবে। এইরূপ করিতে থাকিলে পর্দা দড়ি পাকানো মত বাহির হইবার পর বিটপ পরীক্ষা দেখিতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে বিটপ যদি জোড়া না লাগে তাহা হইলে বস্তিদেশের মেঝে অবলম্বনহীন হয়, ফলে জরায়ুর স্থানচ্যুতি ঘটিতে পারে। প্রসবের ২ ঘণ্টা পরও গর্ভফুল বাহির না হইলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত। ভূমিষ্ট শিশুকে স্নান ও ড্রেস করাইয়া শোয়াইয়া রাখিতে হইবে।






প্রশ্ন- প্রসবকালীন জটিলতাসমূহ কি কি?

উত্তর: প্রসবকালীন জটিলতাসমূহ-
১) সন্তান প্রসবে অস্বাভাবিক বিলম্ব হওয়া।
২) প্রসবের পূর্বে আকস্মিক রক্তস্রাব।
৩) প্রসবের পূর্বে ফুল বাহির হওয়া বা প্লাসেন্টা প্রিভিয়া ও তৎসহ অনিবার্য রক্তস্রাব।
৪) সন্তান ভূমিষ্ট হইবার পূর্বেই উহার হাত, পা, নাড়ী বাহির হইয়া যায়।

৫) প্রসব বেদনা আরম্ভ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্তান ভূমিষ্ট না হওয়া।
৬) জরায়ু ও যোনিদ্বার হইতে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব।
৭) পোয়াতির জ্বর বা ফিট হওয়া।
৮) ফুল পড়িবার পর অস্বাভাবিক রক্তস্রাব।
৯) সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর এক ঘণ্টার মধ্যে ফুল না পড়া।
১০) সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর ফুল পড়িবার পূর্বেই রক্তস্রাব।
১১) প্রসবদ্বার বিদারন।






প্রশ্ন-  প্রিসিপিটেট লেবার বা ত্বরিত প্রসব কাহাকে বলে? কি কারণে ইহা ঘটিয়া থাকে?

উত্তর: প্রিসিপিটেট লেবার বা ত্বরিত প্রসব- যখন প্রসব ব্যথা এত ত্বরিত গতিতে অগ্রসর হয় সে স্বাভাবিক প্রসব কৌশল ব্যাহত হয়, প্রসবের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থা একই সময়ে আসিয়া যায় অথবা পর পর এমনভাবে আসে যাহার সীমারেখা টানা সম্ভব নয়। জরায়ুর অত্যধিক ক্রিয়ার জন্য তিন ঘণ্টার মধ্যেই ত্বরিত প্রসব হইয়া থাকে।
যে অবস্থার জন্য ত্বরিত প্রসব হইয়া থাকে তাহা হইল-
১) জরায়ুর সংকোচনের তীব্রতা।
২) জননপথের ন্যূনতম ব্যথা।
৩) অস্বাভাবিক বড় বস্তিদেশ।
৪) একাধিক সন্তানের জননীর জরায়ু মুখের শিথিলতা বা ছেঁড়া জরায়ু মুখ এবং শিথিল বা ছেঁড়া বস্তিদেশের মেঝে।








প্রশ্ন-  প্রোলাংগড লেবার কাহাকে বলে?

উত্তর : প্রোলাংগড লেবার- প্রসব বেদনা ৪৮ ঘণ্টার অধিক স্থায়ী থাকিলে তাহাকে প্রোলাংগড লেবার বলে।






প্রশ্ন-  অবস্ট্রাকটেড লেবার বা প্রসবে বাধা বলিতে কি বুঝ? ইহার কারণ কি?

উত্তর : অবস্ট্রাকটেড লেবার বা প্রসবে বাধা- প্রসবের সকল লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া ও তীব্র জরায়ু সংকোচন থাকা সত্বেও সন্তানের উপস্থিতকারী বা প্রেজেন্টিং অংশের জননপথ দিয়া কোন প্রকার অগ্রগতি না হইলে মনে করিতে হইবে যে, উপস্থিতকারী অংশ বাধাপ্রাপ্ত হইয়াছে। এই অবস্থায় কোনরূপ সাহায্য ব্যতীত প্রসব ** সম্পূর্ণ হওয়া অসম্ভব। ইহাকে অবস্ট্রাকটেড লেবার বলে।

কারণ-
১) প্রসব পথ এবং প্রসূত অংশের ত্রুটি।
২) সংকুচিত বস্তিদেশ।
৩) বস্তিদেশে আব বা টিউমার।





প্রশ্ন- সন্তান প্রসবে অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণ কি কি?

উত্তর: সন্তান প্রসবে অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণ- সন্তান প্রসকে অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণসমূহ নিম্নরূপ-
১) বস্তি গহ্বরের বিকৃতি। নারীর তলপেটে যে হাড়ের দ্বারা বেষ্টিত গহ্বরটি আছে উহা জন্মাবধি অস্বাভাবিক ক্ষুদ্র কিংবা বাঁকা থাকিলে এইরূপ হয়।
২) প্রসব পথের অবরোধ।
৩) ভ্রুণের অস্বাভাবিক স্থিতি বা বহির্গমন। এজন্য সন্তানের মস্তকটি প্রথমে বহির্গত না হইয়া হাত, পা, বস্তিদেশ, কাঁধ বা অন্য কোন অঙ্গ প্রথমে বাহির হইতে পারে কিংবা মস্তকটি অস্বাভাবিক বড় হইতে পারে।
৪) জরায়ু গ্রীবার কাঠিন্য।
৫) বিটপী (পেরিনিয়ম) প্রদেশের কাঠিন্য।
৬) জরায়ুর অস্বাভাবিক অবস্থান।
৭) যোনির স্থানচ্যুতি।
৮) প্রসবপথের মধ্যে অর্বুদ বা টিউমার।
৯) জরায়ু বা যোনিতে কোন ক্ষত থাকিলে তাহা শুকাইয়া গিয়া প্রসবপথকে সংকীর্ণ করিয়া দিতে পারে বা অররোধ ঘটাইতে পারে।
১০) জরায়ুর কুঞ্চন শক্তির হ্রাস ও তজ্জনিত প্রসব বেদনা হ্রাস। নিম্নলিখিত কারণে ইহা হইতে পারে।
ক) অল্প বয়সে গর্ভ, খ) অধিক বয়সে গর্ভ, গ) পুনঃপুনঃ সন্তান হওয়ার জন্ম দুর্বলতা, ঘ) অসময়ে মেমব্রেন ছিন্ন হইয়া জলভাঙ্গা, ঙ) অধিক জলপূর্ণ জরায়ু, চ) গর্ভে জমজ সন্তান, ছ) কোষ্ঠবদ্ধতা, জ) মানসিক উদ্বেগ, ঝ) কোন প্রকার মাদকদ্রব্য সেবন, ঞ) সাধারণ দুর্বলতা।







প্রশ্ন-  জরায়ু মুখ খুলিতে দেরী হইলে কি করা প্রয়োজন?

উত্তর : জরায়ু মুখ খুলিতে দেরী হইলে করণীয়- প্রসবকালীন জরায়ু মুখ খুলিতে দেরী হইলে যাহাতে প্রসূতির বমি বমি ভাব হয় অর্থাৎ ওয়াক ওঠা তাহার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা গিয়াছে প্রসূতির গালের মধ্যে মাথার চুল পুরিয়া দিয়া ওয়াক উঠে বা বমির উদ্রেক হয় এবং ইহাতে জরায়ুর মুখ খুলিয়া যাইতে পারে। তৃতীয় অবস্থায় ফুল না পড়িলেও এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইতে পারে। কাঁঠালি কলা ও সাবু ভিজাইয়া খাওয়াইলে জরায়ুর মুখ খুলিয়া যায় ও বেদনা বৃদ্ধি হয়। আয়রনিক ম্যাসেজ করিলেও জরায়ু মুখ নরম হইয়া ধীরে ধীরে খুলিয়া যায়।






প্রশ্ন-  আয়রনিক ম্যাসেজ কি?

উত্তর: আয়রনিক ম্যাসেজ- ইহা একপ্রকার মালিশ। হাতের দুইটি আঙ্গুল যোনিপথে প্রবেশ করাইয়া এক ধার হইতে অন্য ধার পর্যন্ত ধীরে ধীরে মালিশ করার নামই আয়রনিক ম্যাসেজ। ইহাতে জরায়ু মুখ নরম হইয়া ধীরে ধীরে খুলিয়া যায় এবং শিশু সহজে বাহির হয়।






প্রশ্ন-  জরায়ুর হাইপোটনিক ক্রিয়া কি?

উত্তর: জরায়ুর হাইপোটনিক ক্রিয়া- মৃদু এবং অনিয়মিতভাবে জরায়ুর সংকোচনের ফলে প্রকৃত প্রসব বেদনা ঠিকভাবে বুঝিতে পারা যায় না, ইহাকেই হাইপোটনিক ক্রিয়া বা প্রাইমারী ইউটেরাইন ইনারশিয়া বলে। এই অবস্থায় জরায়ুর পেশীগুলি সংকুচিত হইবার ক্ষমতা হারায় না এবং শিশু ভূমিষ্ট হইবার পর স্থায়ীভাবে ছোট হইয়া যায়।







প্রশ্ন- ইউটেরাইন ইনকো-অর্ডিনেট ক্রিয়া কি? ইহার কারণ কি?

উত্তর: ইউটেরাইন ইনকো-অর্ডিনেট ক্রিয়া- প্রসব বেদনার বর্ধিত। স্থিতিকালের সহিত জরায়ুর সংকোচন যুক্ত থাকিলে তলপেটে এবং পিঠে খুব ব্যথা হয়। সংকোচন থাকা সত্বেও সারভিক্স ধীরে ধীরে ডাইলেট হয়। সংকোচনের মধ্যবর্তী অবস্থায় জরায়ু শক্ত বলিয়া মনে হয়। জরায়ুর এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী এবং হাই-টোন রক্ষিত হওয়ার দরুণ এই অবস্থাকে 'হাইপারটনিক' বলা যাইতে পারে এবং জরায়ুতে অত্যধিক ব্যথার জন্য জরায়ুকে 'কলিকি ইউটেরাস' বলা যাইতে পারে এবং সারভিক্সকে 'রিজিড সার্ভিক্স' বলা যাইতে পারে। এই পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্য ইহাকে 'ইনকো অর্ডিনেট' বলা হয়।
কারণ-
১) গর্ভস্থ শিশুর মাথা অক্সিপিটো পোস্টিরিয়র পজিশনে থাকার জন্য।
২) ম্যাল প্রেজেন্টেশন বর্তমান থাকার জন্য।
৩) মূত্রাশয় ডিসটেনডেট থাকার জন্য।







প্রশ্ন-  জরায়ুর টনিক কনট্রাকশন বা কন্ট্রাকশন রিং কাহাকে বলে? ইহার কারণ কি?

উত্তর: জরায়ুর টনিক কনট্রাকশন বা কন্ট্রাকশন রিং- জরায়ুর কিছু অংশ বা সমস্তটা অধিক সময় ধরিয়া সংকোচনের ফলে জরায়ুর আক্ষেপ হয়। মাসলের রিং এরও আক্ষেপ হয়, তাহাকে কনট্রাকশন রিং বলে। চিকিৎসক ফরসেপ দিয়া প্রসব করাইবার এবং হাতের সাহায্যে যখন ফুল বাহির করিবার চেষ্টা করেন তখন ইহা বুঝা যায়।
কারণ-
১) উত্তেজক ঔষধ প্রয়োগ করিয়া জরায়ুর অত্যধিক উত্তেজনা (কুইনাইন, আরগট প্রভৃতি)
২) জরায়ুর অত্যধিক উত্তেজিত হইবার প্রবণতা।
৩) বাই ম্যানুয়াল ইন্টারফিয়ারেন্স।






প্রশ্ন-  প্রসবের পর শিশু না কাঁদিলে কি করা উচিত?

উত্তর: প্রসবের পর শিশু না কাঁদিলে করণীয়- প্রসবের পর শিশু না কাঁদিলে শিশুর মুখের মধ্যে আঙ্গুল দিয়া দেখিতে হইবে গলা পরিষ্কার আছে কিনা, গলায় লাল ঝোল বা মিউকাস থাকিলে কাঁদিতে অসুবিধা হয়। আঙ্গুল দিয়া লালা বাহির করিয়া ২/১ টি ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা চোখ মুখে দিলে শিশু খাবি খাওয়ার মত হইয়া কাঁদিয়া উঠিবে।
ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিয়াও যদিও না কাঁদে তখন এক বালতি ঠাণ্ডা পানি ও এক বালতি গরম জল লইয়া শিশুর গলা পর্যন্ত একবার ঠাণ্ডা পানিতে ডুবাইতে হইবে। যদি কাঁদিয়া উঠে তা কথাই নাই, যদি না কাঁদে তবে গরম পানির বালতিতে ঐভাবে ডুবাইতে হইবে। এইরকম বার কয়েক করিলেই শিশু কাঁদিয়া উঠিবে। তবে গরম পানি গা সওয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে।
যদি দেখা যায় শিশু না কাঁদিয়া চোখ সুখ নীল বর্ণ হইয়া যাইতেছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হইতেছে তার নাভির তিন আঙ্গুল আন্দাজ নাড়ী কাটিয়া দিতে হইবে, কাটার পর না বাঁধিয়া কিছু রক্ত বাহির করিয়া দিলে অতটা নীল বর্ণ আর থাকিবে না, তারপর চোখ মুখে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিলেই কাঁদিয়া উঠিবে।








প্রশ্ন-  সদ্য প্রসূত শিশুর কোন অবস্থায় নাড়ী কাটা উচিত?

উত্তর : সদ্য প্রসূত শিশুর নাড়ী কাটিবার সময়- শিশু ভূমিষ্ট হইয়া যতক্ষণপর্যন্ত কাঁদিয়া না উঠে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না শ্বাস প্রশ্বাস সরল হল ততক্ষণ নাড়ী কাটা অনুচিত। শিশু ভূমিষ্ট হইতে যদি কষ্ট হয়, না কাঁদে, প্রস্রাব না করে বা না হাঁচে তবে নাভি কাটিলে মৃত্যু অনিবার্য। অ্যামাবিলিক্যাল কর্ডে হাত দিলে একটি স্পন্দন অনুভূত হয় এই স্পন্দন যতক্ষণ থাকিবে ততক্ষণ নাড়ী কাটা অনুচিত। তাহার কারণ ততক্ষণ পর্যন্ত মাতৃরক্ত শিশুর দেহে প্রবাহিত হইতেছে, স্পন্দন থামিয়া গেলে রক্ত আসাও বন্ধ হয়- তখনই নাড়ী কাটিবার উপযুক্ত সময়।








প্রশ্ন-  প্রসবের জন্য প্রসূতি বিভাগ বা আঁতুড় ঘরের ব্যবস্থা কিভাবে করিবে?

উত্তর: প্রসবের জন্য প্রসূতি বিভাগ বা আঁতুড় ঘরের ব্যবস্থাপনা- সময় থাকিতে থাকিতে নির্দিষ্ট এবং পছন্দমত প্রসূতি বিভাগে নিয়মিত পরিচর্যা ও প্রসবের ব্যবস্থা হইলে গর্ভবতী এবং শিশুর শারীরিক ক্ষতির আশংকা থাকে না। গর্ভবতী নিজ গৃহে পরিচিত পরিবেশে আত্মীয় পরিবেষ্টিত থাকিলে প্রসবকালে অনেক বেশী বল পায়। হাসপাতালের অপিরিচিত বা অল্প পরিচিত পরিবেশে কেহ কেহ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। সবদিক হইতে সুবিধা থাকিলে বাড়ীতে প্রসবের ব্যবস্থা করা যাইতে পারে।
যেখানেই প্রসবের ব্যবস্থা হোক না কেন গর্ভকালে ডাক্তার দেখানোর উপকারিতা অনেক। ভয় সংকোচ কাটিয়া গিয়া গর্ভবতীর ডাক্তারের প্রতি পূর্ণ নির্ভরতা আসে। প্রসবকালে এই নির্ভরতা ও ডাক্তারের কথা অনুযায়ী চলিলে কষ্টের অনেক লাঘব হয়। প্রকৃত প্রসব বেদনা আরম্ভ হইলে দেরী না করিয়া হাসপাতালে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহার্য বস্তু ও ভাবী শিশুর জন্য সাধারণ জিনিষপত্র ছাড়া কিছুই সঙ্গে লইতে হয় না। প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির তালিকা নিম্নে দেওয়া হইল।
দাঁতের ব্রাস, মাজন, চিরুনী, চুল বাঁধিবার সরঞ্জাম, মাথার তেল, একটি ছোট এবং একটি বড় তোয়ালে, হালকা ও নরম ধরণের শাড়ী, বাউজ, পেটিকোট, বক্ষবন্ধনী, শীতকাল হইলে গরম জামা, রাত্রিকালের গাউন, হাত পা ধোয়ার সাবান, নিত্য ব্যবহার্য ক্রীম, ফেস পাউডার, পরিষ্কার পুরনো কাপড়ে টুকরো, ব্যাণ্ডেজ ও ফিতা, ছোট এক প্যাকেট তুলা, পরিশুদ্ধ স্যানিটারী প্যাড প্রভৃতি।
শিশুর জন্য নরম ছোট কম্বল, টারকিস তোয়ালে দুইটি, ঢিলা ধরনের নরম ও হালকা পরিষ্কার জামা দুই তিনটি, মোজা, ভাল বেবী পাউডার, চিরুনী ও ছোট একটি রবার ক্লথ সঙ্গে নিতে হইবে।
বাড়ীতে প্রসবের ব্যবস্থা ঠিক হইলে আঁতুড় ঘরটি প্রসবের ঠিক এক সপ্তাহ পূর্বেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে। স্মরণ রাখা উচিত যে প্রসবকক্ষে ধুলিকণা, নাড়ী কাটা অনুচিত। শিশু ভূমিষ্ট হইতে যদি কষ্ট হয়, না কাঁদে, প্রস্রাব না করে বা না হাঁচে তবে নাভি কাটিলে মৃত্যু অনিবার্য। অ্যামাবিলিক্যাল কর্ডে হাত দিলে একটি স্পন্দন অনুভূত হয় এই স্পন্দন যতক্ষণ থাকিবে ততক্ষণ নাড়ী কাটা অনুচিত। তাহার কারণ ততক্ষণ পর্যন্ত মাতৃরক্ত শিশুর দেহে প্রবাহিত হইতেছে, স্পন্দন থামিয়া গেলে রক্ত আসাও বন্ধ হয়- তখনই নাড়ী কাটিবার উপযুক্ত সময়।







প্রশ্ন-  প্রসবের জন্য প্রসূতি বিভাগ বা আঁতুড় ঘরের ব্যবস্থা কিভাবে করিবে?

উত্তর: প্রসবের জন্য প্রসূতি বিভাগ বা আঁতুড় ঘরের ব্যবস্থাপনা- সময় থাকিতে থাকিতে নির্দিষ্ট এবং পছন্দমত প্রসূতি বিভাগে নিয়মিত পরিচর্যা ও প্রসবের ব্যবস্থা হইলে গর্ভবতী এবং শিশুর শারীরিক ক্ষতির আশংকা থাকে না। গর্ভবতী নিজ গৃহে পরিচিত পরিবেশে আত্মীয় পরিবেষ্টিত থাকিলে প্রসবকালে অনেক বেশী বল পায়। হাসপাতালের অপিরিচিত বা অল্প পরিচিত পরিবেশে কেহ কেহ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। সবদিক হইতে সুবিধা থাকিলে বাড়ীতে প্রসবের ব্যবস্থা করা যাইতে পারে।
যেখানেই প্রসবের ব্যবস্থা হোক না কেন গর্ভকালে ডাক্তার দেখানোর উপকারিতা অনেক। ভয় সংকোচ কাটিয়া গিয়া গর্ভবতীর ডাক্তারের প্রতি পূর্ণ নির্ভরতা আসে। প্রসবকালে এই নির্ভরতা ও ডাক্তারের কথা অনুযায়ী চলিলে কষ্টের অনেক লাঘব হয়। প্রকৃত প্রসব বেদনা আরম্ভ হইলে দেরী না করিয়া হাসপাতালে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহার্য বস্তু ও ভাবী শিশুর জন্য সাধারণ জিনিষপত্র ছাড়া কিছুই সঙ্গে লইতে হয় না। প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির তালিকা নিম্নে দেওয়া হইল।
দাঁতের ব্রাস, মাজন, চিরুনী, চুল বাঁধিবার সরঞ্জাম, মাথার তেল, একটি ছোট এবং একটি বড় তোয়ালে, হালকা ও নরম ধরণের শাড়ী, বাউজ, পেটিকোট, বক্ষবন্ধনী, শীতকাল হইলে গরম জামা, রাত্রিকালের গাউন, হাত পা ধোয়ার সাবান, নিত্য ব্যবহার্য ক্রীম, ফেস পাউডার, পরিষ্কার পুরনো কাপড়ে টুকরো, ব্যাণ্ডেজ ও ফিতা, ছোট এক প্যাকেট তুলা, পরিশুদ্ধ স্যানিটারী প্যাড প্রভৃতি।
শিশুর জন্য নরম ছোট কম্বল, টারকিস তোয়ালে দুইটি, ঢিলা ধরনের নরম ও হালকা পরিষ্কার জামা দুই তিনটি, মোজা, ভাল বেবী পাউডার, চিরুনী ও ছোট একটি রবার ক্লথ সঙ্গে নিতে হইবে।






প্রশ্ন-  আঁতুড়ে পল্লী গ্রামের দাই বা ধাত্রীদের বদ অভ্যাসগুলি কি কি?

উত্তর: আঁতুড়ে পল্লী গ্রামের দাই বা ধাত্রীদের বদ অভ্যাসসমূহ- আঁতুড়ে পল্লী গ্রামের ধাত্রীদের কতকগুলি বদ অভ্যাস আছে। বদ অভ্যাসগুলি নিম্নে আলোচনা করা হইল।
১) শিশুকে ধরিবার জন্য জীবাণুযুক্ত অপিরিষ্কার বস্ত্রাদি ব্যবহার করা।
২) পরিশুদ্ধ গ্লাভস না পরিয়া বার বার অশিক্ষিতা ধাত্রী কর্তৃক যোনিপথ পরীক্ষা করা। একবার পরীক্ষান্তে জীবাণুনাশক পানিতে হাত না ধুইয়া, তাহারা আবার যোনিপথ পরীক্ষা করিয়া থাকে।
৩) যোনিদ্বার বিস্তৃত করার জন্য অনেক রকম তৈলাদি ব্যবহার করা হয়। ইহাও বন্ধ করা উচিত।
৪) প্রসূতিকে অশুচি জ্ঞান করিবার জন্য বেশভূষা যতদূর সম্ভব অপরিষ্কার করিয়া রাখা হয়। ইহাও কু অভ্যাস।
৫) 'কাচা নাড়ী' ভাল করিয়া শুকাইবার জন্য অনেকে প্রসূতিকে পানি পান করিতে দেন না। ইহা ঠিক নহে। বরং পরিমিত পরিমাণে পানি পান করিলে প্রস্রাবের সহিত ক্লেদ নির্গত হইতে পারে।
৬) আঁতুড়ে ঘর গরম রাখিবার জন্য শিশুর নাভিতে সেঁক দিবার জন্য ঘর বন্ধ করিয়া ঘরে কাঠের বা কয়লার আগুন জ্বালা হয় এই অবস্থায় মা, শিশু ধাত্রী এবং এর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটিতে পারে।
৭) বহু প্রসূতিই ৯-১০ দিন বিশ্রাম লইয়াই 'স্নান করিয়া' গৃহকর্মে লাগিয়া যায়। উপযুক্ত বিশ্রামের অভাবে জরায়ু উপযুক্ত পরিমাণে শুকাইতে না পারায় নানা স্ত্রীরোধ সৃষ্টি হয়।
৮) ফেলিয়া দিতে হইবে বলিয়া দুর্গন্ধযুক্ত অপিরিষ্কার লেপ, তোষক, বালিশ এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে শুধু মাদুর বিছাইয়া প্রসূতিকে শয়ন করিতে দেওয়া হয়। এই অভ্যাস বর্জন করিয়া প্রসূতির জন্য ভাল বিছানার ব্যবস্থা করা উচিত।







প্রশ্ন- প্রসবকালে ধাত্রীর ব্যবহৃত সরঞ্জামের একটি তালিকা দাও।

উত্তর: প্রসবকালে ধাত্রীর ব্যবহৃত সরঞ্জামের তালিকা প্রসব করাইবার জন্য ধাত্রীর যন্ত্রপাতি রাখার ব্যাগে নিম্নলিখিত সরঞ্জাম থাকা একান্ত প্রয়োজন। যথা-
১) ডেটল, ২) মেথিলেটেড বা রেকটিফাইড স্পিরিট, ৩) বোরাসিক লোশন, ৪) রোরিক তুলা, ৫) বোরিক গজ, ৬) কর্ড পাউডার, ৭) বেবি পাউডার, ৮) টিংচার আয়োডিন, ৯) লাইফবয় সাবান, ১০) ক্যাস্টর অয়েল, ১১) ডুসের সরঞ্জাম, ১২) নেল ব্রাস, ১৩) গ্লাভস, ১৪) মাস্ক, ১৫) কাঁচি, ১৬) ফিতা, ১৭) অ্যাসপিরিন, ১৮) আর্গোমেট্রিক ট্যাবলেট ০.৫ মি. গ্রা. ১৯) ক্যাথিটার।





সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ