ক্যান্থারিস - Cantharis - দ্বিতীয় বর্ষ

ক্যান্থারিস
Cantharis






প্রাকৃতিক অবস্থা:-  কলিওপেটরা।
 
প্রতিশব্দ:- স্পেনিশ ফ্লাই, ব্রিষ্টার ফ্লাই, ক্যান্থারিডস।

উৎস:- রিষ্টার ফ্লাই নামক এক প্রকার গোবরের পোকা ইহার উৎস। ইহা ব্রোঞ্জ সবুজ বর্ণের পোকা ২ ইঞ্চি হইতে ১ ইঞ্চি লম্বা এবং ইঞ্চি হইতে ইঞ্চি পুরু হইয়া থাকে। এই পোকা ছাই, লাইলাম জাতীয় সুগন্ধি ফুলের গাছ এবং অন্যান্য গাছ খাইয়া থাকে।

প্রাপ্তিস্থান:- মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপ এবং দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় এই পোকা পাওয়া যায়।

প্রস্তুত প্রণালী:- স্পেন দেশীয় মৌমাছি (শুকনা গোবরের পোকা) ফুটন্ত
ভিনিগারে সিদ্ধ করার পর শুকানো হয় এবং পরে চূর্ণে পরিণত করা হয়। উক্ত চূর্ণ দুগ্ধ শর্করার সাহায্যে বিচূর্ণাকারে প্রস্তুত হয়। মূল অরিষ্ট প্রস্তুতের সময় এই চূর্ণ তীব্র সুরাসারের সহিত ফার্মাকোপীয়ার নিয়মানুসারে মিশ্রণ করিতে হয়। ২০ এবং উচ্চ শক্তি পরিশ্রুত সুরাসারের সহিত প্রয়োগ হয়।

প্রস্তুতের ফরমুলা:- আমেরিকা ও জার্মেনী- এফ ৪ (অরিষ্ট) আমেরিকান- এফ ৭ (বিচূর্ণ)

প্রভার:- ডাঃ হ্যানিম্যান ইহা প্রুভ করেন।

ক্রিয়াস্থান:- জীবদেহে ক্যান্থারিস প্রচণ্ড বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। মূত্রযন্ত্র ও জননেন্দ্রিয়ে ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া ইহাতে তীব্র প্রদাহ উৎপন্ন হয়। চর্মের উপর, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ও রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়া প্রভৃতির উপর ক্রিয়া করিয়া থাকে।

মানসিক লক্ষণ:-
১। প্রচণ্ড প্রলাপ, ক্রন্দন এবং উচ্চ কণ্ঠে চীৎকার, তরুণ উম্মাদনা, সাধারণতঃ যৌন সংক্রান্ত ব্যাপারে।
২। রোগীর কাম ভাব বেশী।
৩। রোগী অতিশয় উদ্বেগ ও অস্থির হয় এবং ক্রোধে উহার পরিসমাপ্তি হয়।
৪। প্রণয় সংক্রান্ত বা কামোন্মত্ততা। পাগলের ন্যায় ব্যবহার করে।
৫। ভীতি ও ভ্রান্ত ধারণায় পূর্ণ। হঠাৎ সংজ্ঞাহীন হয়।

চরিত্রগত লক্ষণঃ-
১। কামোত্তেজনা, কাম ভাব চরিতার্থ করার ইচ্ছা।
২। আগুনে পোড়া হেতু জ্বালা, গলা, বুক, পাকস্থলী, ডিম্বকোষ, প্রস্রাব দ্বার প্রভৃতিতে ঠিক পুড়িয়া যাওয়ার মত জ্বালা।
৩। পানাহার এমনকি তামাকে পর্যন্ত বিরক্তি।
৪। অত্যন্ত দুর্বলতার সহিত শরীরের বহির্ভাগে ও অভ্যন্তরে অত্যন্ত জ্বালা ও টাটানি ব্যথা।
৫। প্রস্রাবের পূর্বে, সময়ে ও পরে প্রচণ্ড জ্বালা। প্রস্রাবে কোঁথানি ও বেগ।
৬। সর্বদা প্রস্রাবত্যাগের ইচ্ছা, অথচ ফোঁটা ফোঁটা করিয়া প্রতিবার নির্গত হয় এবং উহা রক্ত মিশ্রিত।
৭। নাক, মুখ, অন্ত্র, প্রস্রাব দ্বার দিয়া রক্ত নির্গমন, রক্ত প্রস্রাব।
৮। পানের পিকের ন্যায় লালবর্ণ বাহ্য।
৯। চর্মে পোড়া ফোস্কার ন্যায় উদ্ভেদ-উহা পাকে ও ঘা হয়।
১০। গাল, গলা, মস্তিষ্ক, ফুসফুস, পেট, গুহ্যদ্বার, চর্ম, মিউকাস মেমব্রেন ইত্যাদির প্রদাহে জ্বালা, কর্তনবৎ বেদনা।

প্রয়োগ ক্ষেত্র:- প্রমেহ ও প্রস্রাব যন্ত্রের পীড়া, কামোচ্ছাস, পোড়া ঘা, মূত্র পাথরী, জ্বর পীড়া, স্ত্রীপীড়া, বিসর্প, উদরাময় ও রক্তমশায় প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা প্রয়োগ হয়।

প্রমেহ ও প্রস্রাবের পীড়া:- পিচকারী প্রয়োগে প্রমেহ রোগ চিকিৎসার পর প্রমেহ স্রাব হ্রাস পাইয়া বা এককালে বন্ধ হইয়া সময়ে সময়ে ক্যান্থারিসের বিশেষ লক্ষণ-পুনঃ পুনঃ প্রস্রাবের বেগ, ফোঁটা ফোঁটা রক্ত মিশ্রিত সামান্য প্রস্রাব, প্রস্রাবের পূর্বে সময়ে ও পরে প্রচণ্ড বেগ এবং মূত্রথলীতে প্রবল যন্ত্রণা, লিঙ্গোচ্ছাস, প্রবল কামেচ্ছা প্রভৃতি থাকিলে ক্যান্থারিস উপকারী। প্রস্রাবের জন্য ঘন ঘন বেগ কিন্তু ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব নির্গত হয়। রক্ত প্রস্রাব ও প্রস্রাব অন্তে প্রস্রাবের সময়ে ও পূর্বে জ্বালা, প্রস্রাবের সঙ্গে সাদা সাদা টুকরার মত পদার্থ নির্গমন প্রভৃতি ক্যান্থারিসের লক্ষণ।

মূত্রযন্ত্রের বা, মূত্রপাথরী পীড়া:- মূত্রযন্ত্রের উপর ক্যান্থারিস প্রবল ক্রিয়া করিয়া থাকে। মূত্রযন্ত্রের প্রদাহ ও উপদাহ উৎপন্ন করিতে ক্যান্থারিসের মত অন্য কোন ঔষধে নাই। পুনঃ পুনঃ মূত্রত্যাগের ইচ্ছার সহিত মূত্রনালিতে জ্বালা যন্ত্রণা ও কোঁথানি থাকিলে, প্রস্রাব করার সময় অসহ্য যন্ত্রণা ও বেদনা হইলে এবং প্রস্রাব ফোঁটা ফোঁটা বাহির হইলে, প্রস্রাবের পূর্বে, সময়ে ও পরে জ্বালা বেশী হইলে ক্যান্থারিস কাল বিলম্ব না করিয়া প্রয়োগ করিতে হয়। মূত্র পাথরী পীড়ায় উপরোক্ত লক্ষণ বর্তমান থাকিলে ইহা চমৎকার কার্যকরী। ইউরেটরে পাথর আটকাইয়া যখন রোগীর প্রবল যন্ত্রণা হইতে থাকে, তখন ইহা ব্যবহার করার উপযুক্ত সময়।

মূত্রযন্ত্রের পীড়ায় ক্যান্থারিস ও ক্লিমেটিসের পার্থক্য:

ক্যান্থারিস- বারবার মূত্রত্যাগের ইচ্ছার সহিত মূত্রনালীতে জ্বালা যন্ত্রণা ও কোঁথানি, প্রস্রাব করার সময় অসহ্য যন্ত্রণা ও বেদনা। প্রস্রাব ফোঁটা ফোঁটা করিয়া বাহির হয়। প্রস্রাবের পূর্বে, সময়ে ও পরে জ্বালা অত্যাধিক। লিঙ্গোচ্ছাস ও কামেচ্ছা। প্রস্রাবের সঙ্গে সাদা সাদা টুকরার মত পদার্থ নির্গমন প্রভৃতি ক্যান্থারিসের লক্ষণ।

ক্লিমেটিস- প্রস্রাব থাকিয়া থাকিয়া হয় অর্থাৎ একটু হইল আবার বন্ধ হইল। অনেকক্ষণ বসিয়া না থাকিলে প্রস্রাব হয় না। পুরাতন প্রমেহ রোগে প্রস্রাবের সঙ্গে শ্লেষ্মার ন্যায় পদার্থ থাকে। কিন্তু উহা পূঁজ নয়। প্রস্রাবকালে মূত্রনালীর গোড়া হইতে লিঙ্গমুণ্ড পর্যন্ত প্রদাহযুক্ত স্ট্রিকচারের প্রথমাবস্থায় ক্লিমেটিস উপকারী। স্ট্রিকচার বর্ধিত েহইয়া যখন মূত্রছিদ্র সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হইয়া যায় তখন আর ইহাতে উপকার হয় না। মূত্রনালীতে ঝিনঝিন করে। মূত্রনালীর মুখে জ্বলন। প্রস্রাব ফোঁটা ফোঁটা করিয়া বাহির হয়।

মূত্রযন্ত্রের পীড়ায় এপিস ও ক্যান্থারিসের তুলনা:
এপিসে হুল ফোটানবৎ বেদনা থাকে, ক্যান্থারিসে তাহা নাই। তবে এপিস অপেক্ষা ক্যান্থারিসে জ্বালা ও কষ্টকর লক্ষণ বেশী। এপিসে পিপাসার অভাব, আর ক্যান্থারিসে পিপাসা আছে। ক্যান্থারিসে রোগী অস্থির, দুরন্ত এবং প্রবল লিঙ্গোচ্ছাস থাকে। কিন্তু এপিসে সামান্য তন্দ্রা ভাবের সহিত শুধুমাত্র স্নায়বিক চঞ্চলতা থাকে।

কামোচ্ছাস:- 
সুস্থ শরীরে সেবন করিলে ক্যান্থারিস স্ত্রী পুরুষ উভয়েরই উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
সেই উত্তেজনা হেতু রতি ক্রিয়ার এত ইচ্ছা হয় যে, নিদ্রা যাইতে পারে না। কাহারও রতিক্রিয়ার ইচ্ছা অত্যন্ত প্রবল ও তজ্জনিত স্বাস্থ্য ভঙ্গ হইতে থাকিলে ইহার দ্বারা উপকার হইবে।

পোড়া ঘায়ে ক্যান্থারিস:- 
আগুনে পুড়িয়া গেলে ক্যান্থরিস মহৌষধ। পুড়িয়া যাওয়ার পর যদি তখনই ক্যান্থারিস বাহিরে প্রয়োগ করা যায় ও সেবন করিতে দেওয়া হয় তবে চমৎকার ফল দর্শে। ফোস্কা পড়িবার পূর্বে প্রয়োগ করিলে জ্বালা যন্ত্রণা সত্বর দূর হইয়া যায়। বাহ্যিক প্রয়োগে ১ আউন্স পরিশ্রুত জলে ২৫/৩০ ফোঁটা মূল অরিষ্ট মিশাইয়া ন্যাকড়া ভিজাইয়া আহত স্থানে রাখিতে হয়। যদি ফোস্কা হইয়া পড়ে, ঘা হয় তবে ক্যান্থারিস ও কার্বলিক এসিড অয়েন্টমেন্ট উভয়ই উপকারী।

চর্মরোগ:- ক্যান্থারিস চর্মপীড়া তথা বিসর্পের উৎকৃষ্ট ঔষধ। চর্মে প্রদাহের সৃষ্টি হইলে মারাত্মক আকার ধারণ করে। চর্মে বিসর্পের ন্যায় প্রদাহ, আগুনে পোড়া ফোস্কার মত দেখায় ও ভয়ানক জ্বালা থাকে। চর্মোদ্ভেদের বর্ণ পরিবর্তনশীল, সেই সাথে জ্বলন ও চুলকানি। যদি চর্মোদ্ভেদগুলি বসিয়া যাইতে আরম্ভ হয় ও মস্তিষ্ক আবরক ঝিল্লীগুলি আক্রান্ত হইয়া থাকে তবে ক্যান্থারিস উত্তম ঔদ্ধ। ইহাতে আক্রান্ত স্থানটি শীঘ্রই কাল হইয়া যায় ও পঁচিতে আরম্ভ করে এবং হাত দিলে জ্বালা যন্ত্রণা হয়। ঠাণ্ডা প্রয়োগে উপশম।

স্ত্রীরোগ:- স্ত্রীলোকদের প্রবল সঙ্গমেচ্ছা। ঋতু অতি শীঘ্র আরম্ভ হয়। স্রাব অত্যধিক, যোনী কপাটে কৃষ্ণবর্ণ স্ফীতি, তৎসহ উত্তেজনা। জরায়ু হইতে নিরন্তর স্রাব নিঃসরণ। ডিম্বকোষে জ্বালাকর যন্ত্রণা সূঁচ ফোটান ব্যথা প্রদাহ। প্রসবের পর বা গর্ভস্রাব হওয়ার পর ফুল সম্পূর্ণরূপে নির্গত না হইয়া যদি তাহার কিছু অংশ আটকাইয়া থাকে তাহা হইলে ইহা প্রয়োগে ফুল নিষ্কাষিত হইয়া যায়। প্রসবান্তে জরায়ু প্রদাহ তৎসহ মূত্রাশয় প্রদাহ। বেদনাদায়ক প্রস্রাব এই ঔষধে জরায়ুতে অবস্থিত অপরিপুষ্ট বা ভ্রষ্ট বীজকোষ মৃত ভ্রুণ, ঝিল্লী প্রভৃতি বাহির করিয়া দেয়।

উদরাময় ও রক্তামশায়:- পেটে যেন ছুরি দিয়া কাটিতেছে এইরূপ তীব্র বেদনা হইলে, ছোট ছোট মাংসের টুকরার মত পদার্থসহ আম ও রক্ত মিশ্রিত মল নিঃসরণ হইলে এবং প্রস্রাব ত্যাগ কালেও বেগ ও কুন্থন না দিলে, প্রস্রাব না হইলে ক্যান্থারিস উপকারী। বাহ্যের সময় মলদ্বারে আগুনে পোড়ার মত জ্বালা ও কোঁথানি। বাহ্যের সময় রোগী শীত শীত বোধ করে। মনে হয় যেন কেহ তাহার গায়ে জল ঢালিয়া দিতেছে। ইহার উদরাময় অপেক্ষা আমাশয়ে কোঁথানি ও বেগ বেশী। পেটে কামড়ানি ব্যথা থাকে। মলদ্বারের জ্বালার সহিত কখনও কখনও গলায়, মুখে ও ঠোঁটে জ্বালা এবং অদম্য পিপাসা থাকে, হাত পা ঠাণ্ডা হইয়া যায়।

গলনালীর পীড়া:- মুখ, শ্বাসনালী ও গলার মধ্যে জ্বালা, মুখের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফোস্কা। তরল দ্রব্য গিলিতে কষ্ট। অত্যন্ত আঠাল শ্লেষ্মা। গলদেশ স্পর্শ করিলে ভয়ানক আক্ষেপ। গলগহ্বরে প্রদাহ, যেন আগুন জ্বলিতেছে। জাড়ি ঘায়ের ন্যায় উপক্ষত। ছড়িয়া যাওয়ার ন্যায় বোধ। গরম কিছু খাইলে গলা পুড়িয়া যায়।

বৃদ্ধি:- স্পর্শে, কেহ তাহার দিকে অগ্রসর হইলে, প্রস্রাবের সময়, শীতল জল পানে, কফি খাইলে, সুরাপানে।

হ্রাস:- মর্দনে, ঘর্ষণে, শয়নে, উত্তাপ প্রয়োগে।

অনুপূরক:- ক্যাক্ষর, বেলেডোনা, সালফার, সিপিয়া, পালসেটিলা, মার্ক-সল।

তুলনীয়:- পালসেটিলা, সিকেলি কর।

পরবর্তী ঔষধ:- কেলি আয়োড, সিপিয়া, পালসেটিলা, ফসফরাস, বেলেডোনা।

ক্রিয়ানাশক:- একোনাইট, পালসেটিলা, রিউম, এপিস, ক্যাম্ফর, লরোসি, কেলি, নাইটি।

ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ৩০ হইলে ৪০ দিন।

ক্রম:- ৪, ৩x হইতে ২০০ শক্তি।




প্রভাষক, ডাঃ মহি উদ্দিন
ফরাজী হোমিও হল ফেনী
০১৮১৪৩১৯০৩৩



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ