পডোফাইলাম ফিলটাম
Podophyllum Fieltum
প্রাকৃতিক অবস্থা:- বেরবেরিড্যাসিয়াই।
প্রতিশব্দ:- পডোফাইলাম, একোনিটিফলিয়াম, হিউমিলিসডাকস ফুট, মে আপেল, ইন্ডিয়ান আপেল, বন্য লেবু, হলুদ ফল।
উৎস:- পডোফাইলাম বা মে আপেল নামক গাছড়া হইতে এই ঔষধ প্রস্তুত হয়। ইহা অনুভূতিক নলাকৃতি মূল এবং আঁশময় শিকড় বিশিষ্ট একজাতীয় বহুবর্ষজীবী গাছড়া। কাণ্ড সোজা এবং গোলাকৃতি ৮ হইতে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হইয়া থাকে। ইহার মূল এক ফুট পর্যন্ত লম্বা ১/৪ ইঞ্চি পুরু। পাতাগুলি দেখিতে ছাতার ন্যায় গোলাকৃতি। এই সকল পাতা ৭ হইতে ৯ ভাগে বিভক্ত হইয়া থাকে। মে মাসে কাণ্ডের কাঁটার মধ্যে ডাঁটার অগ্রভাগে সাদা বর্ণের নিঃসঙ্গ ফুল ফুটিয়া থাকে। জুলাই ও আগষ্ট মাসে ১ হইতে ২ ইঞ্চি লম্বা হলুদ বর্ণের অণ্ডাকৃতি ফল এই সকল গাছড়ায় ফলিয়া থাকে। টাটকা মূল ঔষধে ব্যবহৃত হয়।
প্রাপ্তিস্থান:- সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের আর্দ্র ছায়াযুক্ত বনভূমি এবং পতিত ভূমিতে, পশ্চিম হিমাগয় এবং কাশ্মীর হইতে সিকিম পর্যন্ত ৯০০০ ফুট উঁচুতে ইহা জন্মিয়া থাকে। ইহার ভারতীয় নাম লঘুগেট্টা, পাপরা, পাপরি, গুলকাকরি প্রভৃতি।
প্রুভার:- ডাঃ হ্যানিমান ১৮৪৬ খৃঃ ইহা গ্রুভ করেন।
প্রস্তুত প্রণালী:- উক্ত গাছড়ার টাটকা মূল হইতে ইহার মূল অরিষ্ট প্রস্তুত হয়। ইহার ২x শক্তি প্রস্তুত করিতে ১ ভাগ অরিষ্ট ৩ ভাগ পরিশ্রুত জল এবং ৬ ভাগ সুরাসার ব্যবহৃত হয়। ৩x এবং উচ্চশক্তিতে পরিশ্রুত সুরাসার প্রয়োগ হয়।
প্রস্তুতের ফরমূলা:- এফ-৩।
ক্রিয়াস্থান:- যকৃত, পাকস্থলী, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ অস্ত্র এবং গুহ্য দ্বারের উপর প্রধান ক্রিয়া দেখিতে পাওয়া যায়।
ধাতুপ্রকৃতি:- পিত্ত প্রধান ধাতুর ব্যক্তি ও যাহারা প্রায়ই পরিপাক সম্বন্ধীয় পীড়ায় ভুগিয়া থাকে তাহাদের পক্ষে ইহা কার্যকরী। ইহা একটি এন্টিসোরিক ও গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ।
মানসিক লক্ষণ:-
১। রোগী সহজেই ক্লান্ত হইয়া পড়ে।
২। নিরোৎসাহ, রোগী মনে করে যে কোন সময় সে মরিয়া যাইতে পারে।
৩। মন পরিবর্তনশীল এবং জড়ভাবযুক্ত।
৪। মানসিক অবসাদ।
৫। অনেক সময় রোগী প্রফুল্ল থাকে।
চরিত্রগত লক্ষণ:-
১। প্রাতঃকালীন উদরাময়, বেদনাহীন।
২। নিরতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত ও প্রচুর মল, গ্রীষ্মের দিনে ও প্রাতঃকালে এবং আহারের পর ও দন্তোদামের সময় বৃদ্ধি।
৩। বেদনাশূন্য মল, তরল দমকা ভেদ, মল গরম ও মলদ্বারে গরম বোধ।
৪। প্রতিবার মলত্যাগকালে এক এক গামলা ভেদ হয়, তাহাতে শরীর চুপসাইয়া যায়, কিন্তু তাহার পরেই আবার যেন পেট পরিপূর্ণ এবং বাহ্যের পূর্বে পেট গড়গড় করিয়া ডাকে।
৫। শিশু অর্ধ নিমিলীতে থাকিয়া গো গো করে, মাথা চালে, মাথা এদিক ওদিক। করিয়া ক্রমাগত নাড়ে।
৬। শিশুদের দন্তোদামকালীন উদরাময়।
৭। মাথা ধরা ও উদরাময় পর্যায়ক্রমে।
৮। বেদনাহীন আমাশয়।
৯। প্রসবের পর জরায়ুর বহির্গমন।
১০। বাহ্য করিতে হারিস বাহির হয়, অথবা জরায়ু বাহির হইয়া পড়ে।
১১। জ্বরে এলোমেলো ভুল বকে।
১২। জিহ্বায় দাঁতের দাগ পড়ে।
১৩। বমন ব্যতীত ওয়াক উঠে।
প্রয়োগক্ষেত্র:- উদরাময়, কলেরা ও শিশু কলেরা, কোষ্ঠবদ্ধ, সরলাস্ত্র নির্গমন, যকৃতের পীড়া, বমন, স্ত্রী পীড়া, সবিরাম জ্বর, শিরঃপীড়া, ন্যাবা, অর্শ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা প্রয়োগ হয়।
পাকস্থলীর লক্ষণ:- পুরাতন উদরাময়ে পডোফাইলাম বিশেষ উপকারী। শিশু রোগীর সমগ্র উদরটিকে কেন্দ্র করিয়া ইহার লক্ষণসমূহ সর্বাধিক পরিস্ফুট হইতে দেখা যায়। সে জন্য পাকস্থলী যকৃৎ এবং অস্ত্র হইতে মলদ্বার পর্যন্ত যাবতীয় যন্ত্রে ইহার ক্রিয়াধিক্য পরিলক্ষিত হয়। শিশুদের দন্ত নির্গমণকালীন উদরাময়ে শিশুর নানা রঙের বাহ্য হয়। শিশুদের শরীর ঠাণ্ডা, কিন্তু মাথা গরম থাকে, মাথা চালে, গোঁগায়, ঘ্যান ঘ্যান করে, অনবরত দাঁতের মাড়ি কামড়ায়, কোনও কোনও শিশুর এই সময়ে তড়কা হয়। আবার দাঁত উঠিবার সময় কোন কোন শিশুর জ্বর হয়, দাঁত কড়মড় করে এবং উপরোক্ত লক্ষণগুলিও থাকে। রোগারম্ভের সূচনারূপে সর্বপ্রথম উদর মধ্যে প্রচুর বায়ু সঞ্চয় হয়। সেজন্য পেটে হুড়হুড় গুড়গুড় ইত্যাদি জাতীয় আওয়াজ এত বেশী হইতে থাকে যে নিকটের ব্যাক্তিও উহা শুনিতে পায়। এই অবস্থায় রোগী সম্মুখ দিকে বাঁকিতে বাধ্য হয় এবং যকৃত ও সমগ্র নিম্নোদরটি টাটানি বেদনায় স্পর্শ কাতর হইয়া উঠে। ইহার পর উদরাময় দেখা দেয়। এই উদরাময় সাধারণতঃ প্রাতঃকাল হইতেই আরম্ভ হয় এবং পরিমাণে উহা প্রচুর ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। শিশুদের দন্তনির্গমনকালীন পেটের দোষ, উদরাময়, যুবক ও বৃদ্ধদের উদরাময়ে ইহা সমানভাবে কার্যকরী। ইহার মল নিদারুণ দুর্গন্ধযুক্ত। 'প্রাতঃকালে (৪টা হইতে ৯টার মধ্যে), গ্রীষ্মকালে, পানাহারের পর উদরাময়ের বৃদ্ধি হয়। বাহ্যের রং হলদে কিম্বা সবুজ রং মিশ্রিত মটরের ঝোলের মত। মল পানির ন্যায় তরল, গরম, কখনও আম সংযুক্ত হড়হড়ে। রোগীর একবারে এক গামলা বাহ্য হয়। বাহ্যের পর শরীর যেন চুপসাইয়া যায়। মল নিঃসরণকালে শিশুদের কখনও সরলাস্ত্র বাহির হইয়া যায়। উদরাময়ের সঙ্গে আধ বোজা চক্ষু, 'মাথা চালা, গোঁগানি, কোঁথ পাড়া, কাট বমি, পায়ের তলায় পায়ের গোছে ও উরুতে খিল ধরা প্রভৃতি আনুষঙ্গিক লক্ষণাবলী থাকে। শিশু এবং বৃদ্ধ সকলের বেলায় এই সকল লক্ষণ দৃষ্ট হয়।
পডোফাইলামের বাহ্য প্রাতঃকাল হইতে আরম্ভ হয়। বৈকালের দিকে তত বেশী হয় না বরং ক্রমশঃ পরিমাণ কমিয়া আসে। যে সমস্ত স্থানে সর্বদাই অপরিষ্কার, যে স্থানে একত্রে অনেক লোক বাস করে, যাহারা অপরিষ্কার পানি পান করে, সেই স্থানের উদরাময়েও আমাশয়ে ইহা উপকারী। পর্যায়ক্রমে উদরাময় ও কোষ্ঠবদ্ধতা।
সালফার- শেষ রাত্রি হইতে বাহ্য আরম্ভ হইয়া বেলা প্রায় ১০টা পর্যন্ত থাকিয়া পরে বন্ধ হইলে সালফার উপযোগী। ইহাতে রোগীর বাহ্য পাইয়া তবে প্রাতে ঘুম ভাঙে এবং এত জোরে বাহ্যের বেগ আসে যে মুহূর্তে কালও দাঁড়াইতে বিলম্ব সহে না, দৌড়াইতে হয়। এখানে পডোর সহিত প্রভেদ এই যে, পডোর রোগী যেন ঘোড়ার দুলকি চালের মত চলিয়া পায়খানায় যায়। আর সালফারের রোগীকে ঘোড় দৌড়ের মত দৌড়াইয়া পায়খানায় ছুটিতে হয়। পডোতে ও নেট্রাম সালফে ঘুম ভাঙ্গিবার অনেক পরে বাহ্যে পায়।
কলেরায় লক্ষণ:- বেদনাহীন কলেরায় পডোফাইলামের মত উৎকৃষ্ট ঔষধ আর নাই। খুব বেগে প্রচুর পরিমাণে দাস্ত হয়। প্রত্যেকবার দাস্তের পর মনে হয় রোগীর পেটে আর কিছুমাত্র মল নাই কিন্তু পরক্ষণেই আবার পেট মলে ভরিয়া উঠে। কিছুই খাইতে ইচ্ছা থাকে না। দ্বিপ্রহর রাত্রির পরে ও প্রাতঃকালের দিকে দাস্ত হইতে আরম্ভ হয়। দাস্তের সঙ্গে কখন কখন ভয়ানক খিলধরা থাকে। দাস্তের পর বমি হয় বমি হওয়ার পরই কাট বমি ও উকি উঠে। পীড়ার প্রথমেই এই ঔষধ ভাল উপকার দর্শে।
কোষ্ঠবদ্ধে পড়ো, চেলিডো এবং লাইকোর তুলনা:- কোষ্ঠবদ্ধে পডোফাইলাম চেলিডোনিয়াম ও লাইকোপোডিয়াম এই তিনটি ঔষধই তুলনা যোগ্য। ইহাদের মধ্যে পডোফাইলাম ও চেলিডোনিয়ামের কোষ্ঠবদ্ধের কারণ যকৃতের নিষ্ক্রিয়তা। যথেষ্ট কোঁথ দিয়া পিত্তশূণ্য সাদা বর্ণের মলত্যাগ উভয় ঔষধের বিশেষত্ব। কোষ্ঠবদ্ধের সূচনাবস্থায় এই দুইটি ঔষধেই উদরে পূর্ণতা বোধ আসিয়া উপস্থিত হয় এবং মনে হয় পাকস্থলীটি বিশ্রাম চলিতেছে। এই অবস্থায় রোগী ২/৪ দিনের জন্য উপবাস দিলে বা লঘু খাদ্য গ্রহণ করিলে সূচনাতেই কোষ্ঠবদ্ধের সম্ভাবনাটি দূরীভূত হয়। কিন্তু কার্যতঃ রোগী স্বাভাবিক নিয়মে খাদ্য বস্তু গ্রহণ করিয়া চলে এবং উদরাময়ের সৃষ্টি হয় এবং পন্ডোর বমন সহ সাদা রং এর প্রচুর দুর্গন্ধযুক্ত উদরাময় বা চেলিডো সদৃশ উজ্জ্বল বর্ণের গোটা গোটা অজীর্ণ মল দেখা যায়। এই অবস্থায় পডোর রোগী তাহার যকৃত প্রদেশে অস্বস্থি বোধ করে এবং ধীরে ধীরে হাত বুলাইলে উপশম পায়। চেলিডোনিয়ামে রোগী সর্ব সময়ের জন্য তাহার দক্ষিণ স্ক্যাপুলা প্রদেশের নিম্নদেশে ত্রিভুজাকার স্থানের ঘিনঘিনে জাতীয় বেদনায় অতিষ্ট হইয়া পড়ে। পডোফাইলাম প্রাতে বৃদ্ধি, সার্বদৈহিক জ্বালা ও ঠাণ্ডা প্রিয়তার পরিস্ফুট হইয়া তাহার অনুপূরক সালফারের সাহায্য প্রার্থনা করে। আর চেলিডোনিয়াম ক্রমশঃ নিস্তেজ ও বিষণ্ণ হইয়া বৈকাল ৪টা হইতে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত বৃদ্ধির মধ্য দিয়া গরম খাদ্য বস্তুতে স্পৃহা সহ তাহার অনুপূরক লাইকোর সাহায্য প্রার্থনা করে। কোষ্ঠবদ্ধের ফলে আবির্ভূত যকৃত পীড়ায় যে ক্ষেত্রে চেলিডোনিয়াম আরোগ্য আনিতে সক্ষম হইয়া লাইকোর সদৃশ লক্ষণ বিকাশ করে, সে ক্ষেত্রে লাইকোই অনুপূরকের কাজ করে। যাহোক কোষ্ঠবদ্ধতা বা উদরাময়ে চেলিডো, পডো উভয়ই যকৃত প্রদেশে সুস্পষ্ট ভাবে স্পর্শ কাতরতা বোধ করে। তবে চেলিডোনিয়াম লাইকো অপেক্ষা অধিক গরম খাদ্য চায় আর পডোতে বিবমিষা ভাব বর্তমান থাকে। উপরোক্ত প্রত্যেক ঔষধেরই অবশ্য শেষ লক্ষ্য ন্যাবা উৎপাদন ইহা অবশ্যই মনে রাখিতে হইবে।
যকৃত পীড়া:- পাকস্থলীর বিশৃঙ্খলা হেতু উদরাময়ের সৃষ্টি হইয়া বা কোষ্ঠবদ্ধভাব বর্তমান থাকিয়া রোগী অবিরত তাহার উদরে বা যকৃত প্রদেশে অস্বস্তি বোধ করিতে থাকে। যকৃতে বেদনা, যকৃতে পিত্তের ক্রিয়া ভালভাবে হয় না। রোগী তাহার দক্ষিণ স্ক্যাপুলা প্রদেশের নিম্নদেশে ত্রিভুজাকার স্থানে ঘিনঘিনে জাতীয় বেদনায় অতিষ্ঠ হইয়া পড়ে। পাঁজরা ও পেটে হাত দিয়া ধীরে ধীরে ঘর্ষণে আরাম বোধ লক্ষণে পডোফাইলাম প্রযোজ্য। ইহাতে মুখ, চোখ শরীর ন্যাবার ন্যায় হলদে হয় এবং পিত্ত পাথরী রোগে যন্ত্রণায় ইহা উপকারী। মুখাস্বাদ পঁচা, যকৃতের পীড়া হইতেই রোগীর ন্যাবা রোগ উপস্থিত হয়। কোষ্ঠবদ্ধতা, বমি বমি ভাব এবং শিরঃপীড়াও ইহাতে দৃষ্ট হয়।
সরলাস্ত্র নির্গমনে:- কোষ্ঠবদ্ধ, উদরাময়, আমাশয় কিংবা অর্শ যে কোন পীড়ার সহিত হউক, গোগগুল বা সরলাস্ত্র বাহির হইতে থাকিলে পডোফাইলাম উপকারী। মল নিঃসরণকালেই সরলাস্ত্র অধিকাংশ স্থলে বাহির হয়। ইহাতে সরলাস্ত্র এত বেশী দুর্বল হইয়া পড়ে যে সামান্য মাত্র বেগে এমনকি চলিয়া ফিরিয়া বেড়াইবার সময়েও বাহির হইয়া থাকে। পাড়াতে প্রায়ই অগ্রে গোগগুল বাহির হইয়া পরে মল নির্গত হয়, মন নির্গমনের পর বাহির হয় না।
বমন:- গা বমি বমি অপেক্ষা এই ঔষধে কাঠ বমি ও ওয়াক তোলা অধিক। বমিতে ভুক্তদ্রব্য এবং পিত্ত বর্তমান থাকে। বমি গরম, সময়ে সময়ে ইহাতে টক বমি হয়, মুখে দুর্গন্ধ থাকে, বুকে জ্বলে, রোগী টকদ্রব্য টক পানীয় পান করিতে চায়। পিপাসা কখনও খুব থাকে, কখনও থাকে না, শিশুরা দুধ বমি করে। ইপিকাকে পডো অপেক্ষা বেশী।
স্ত্রীরোগ:- পডোর বিপর্যয় পূর্ণ একটি অদ্ভুত লক্ষণ এই যে, ইহার স্ত্রীরোগী গর্ভাবস্থায় সমগ্র উদরটিতে স্পর্শ কাতরতা থাকা সত্ত্বেও প্রথম ২/৩ মাস পর্যন্ত পেটের উপর ভর দিয়া উপুড় হইয়া শুইতে চায়। শরীরের বাম দিক অপেক্ষা ডানদিকেই পডোর ক্রিয়া অধিক। তজ্জন্য জরায়ুর বহির্গমণসহ ডান ডিম্বকোষে বেদনা। ডানদিকের ডিম্বাকোষের তরুণ ও পুরাতন প্রদাহ এবং ডান ডিম্বকোষে অর্বুদ প্রভৃতিতে ইহা দ্বারা প্রভুত উপকার সাধিত হয়। প্রসবের পর জরায়ুর বহির্গমন, গর্ভাবস্থায় সরলান্ত্রের বহির্গমণ, অর্শ, কোন ভারী দ্রব্য উত্তোলন করিয়া জরায়ুর বহির্গমণ প্রভৃতিতেও পডোফাইলাম উপকারী।
জ্বর:- সবিরাম বা অল্প বিরাম জাতীয় জ্বরে পডোফাইলাম অনেক সময় প্রয়োজন হয়। তবে সর্বক্ষেত্রেই ঐ জ্বর যকৃত বা উদর যন্ত্রকে কেন্দ্র করিয়া পরিস্ফুট হয়। ইহার জ্বরটি প্রায়শঃই অতিশয় প্রচুর ও দুর্গন্ধযুক্ত সাদা বর্ণের প্রাতঃকালীন উদরাময়সহ গ্রীষ্মের দিনে বা শিশুদের দন্তোদামের সহচর রূপে বিকাশ লাভ করে। বিকালের দিকে ইহর জ্বরটি সামান্য হ্রাস পায়। অনেক সময় আবার জ্বরোদয় হইবার ২/৪ দিন পূর্ব হইতেই উদরাময়ের আবির্ভাব হয় এবং তাহার পর জ্বরটি দেখা দেয়। প্রায়ই সকাল ৭টার সময় জ্বর আরম্ভ হয় এবং জ্বরের পূর্বে মেরুদণ্ডে বিশেষ করিয়া কোমরে একটি তীব্র বেদনাসহ শীত ভাব বর্তমান থাকে। জ্বরের পূর্বে কাট বমি, ওয়াক তোলা, গা বমি বমি প্রভৃতি থাকে। শীতাবস্থায় পিপাসা শূন্য, হাত পায়ের গাঁটে অত্যন্ত কামড়ানি বেদনা, রোগীর এলোমেলো বকা প্রভৃতি থাকে। উত্তাপাবস্থায় অত্যন্ত পিপাসা ও মাথা ব্যথা, শীত, ও কাপুনি থাকিতেই উত্তাপাবস্থা আসে। জ্বরের চরম বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত রোগী ক্রমাগত একভাবে বকিতে থাকে। এইভাবে আবোল তাবোল বকিতে রোগী নিদ্রাভিভূত হইয়া পড়ে এবং নিদ্রিতাবস্থায় বৈকালের দিকে প্রচুর ঘামসহ জ্বরটি ত্যাগ করে। ঘর্মাবস্থায় প্রচুর ঘর্ম হয়। ঘামের পর মাথা ব্যথা কমিয়া আসে। সবিরাম ও অবিরাম জ্বরে-লিভারের রক্তাধিক্য, পিত্তবমি ও উদরাময় থাকিলে পডোফাইলামই উপকারী।
বৃদ্ধি:- দন্তোদামকালে, প্রাতঃকালে, গ্রীষ্মের দিনে, আহার ও পানীয় গ্রহণের পর, পরিশ্রমের পর, সকাল ৭টায়, অম্লরসযুক্ত ফল বা দুগ্ধ পানে, সঞ্চালনে, পারদ ব্যবহারে, চিৎ হইয়া শয়নে (উদর শূল)।
উপশম:- যকৃত প্রদেশে সজোরে চাপড় দিলে, উপুড় হইয়া শুইলে, গরম প্রয়োগে (উদর শূল), সন্ধ্যাকালে, গরম আচ্ছাদনে।
সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ:- আমাশয়ে ইপিকাক ও নাক্সের পরে এবং যকৃত রোগে ক্যালকেরিয়া ও সালফারের পর ইহা ফলপ্রদ।
অনুপূরক ঔষধ:- সালফার, নাক্স ভম, ল্যাকটিক এসিড, কলোসিন্থ।
ক্রিয়ানাশক:- নাক্স ভম, কলোসিন্থ, লেপ্টান্ড্রা।
ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ৩০ দিন।
ব্যবহারের শক্তি বা ক্রম:- ৬ হইতে ২০০ শক্তি।
0 মন্তব্যসমূহ