বোরাক্স - Borax, প্রথম বর্ষ

বোরাক্স 
Borax




রাসায়নিক চিহ্ন:-  Na₂ BO7+10H2O

প্রতিশব্দ:- সোহাগা হইতে ইহা প্রস্তুত হয়। ইহা বর্ণহীন ও গন্ধহীন স্বচ্ছ স্ফটিকবৎ পদার্থ অথবা সাদা গুঁড়া জাতীয় পদার্থ। মুখে রাখিলে ঠাণ্ডা অনুভূতিসহ লবণাক্ত ও ক্ষারজনিত স্বাদ অনুভূত হয়। সোডিয়াম কার্বনেটের দ্রবণের সহিত ক্যালসিয়াম বোরেট উত্তপ্ত করিয়াও ইহা পাওয়া যায়। শুষ্ক বাতাসে ইহা পুষ্পিত অর্থাৎ প্রসারিত হয়। উত্তাপ দিলে ইহার জলীয় অংশ বিদূরিত হয় এবং ফুলিয়া ফাঁপিয়া সাদা স্তূপাকার হইয়া যায়। জলে ইহা ২৫% ভাগ দ্রবীভূত হয় কিন্তু সুরাসারে দ্রবীভূত হয় না।

প্রস্তুত প্রণালী:- সোহাগা হইতে বিচূর্ণাকারে বা অরিষ্টাকারে ইহা প্রস্তুত হইয়া থাকে। খাঁটি বোরাক্সের সহিত দুগ্ধ শর্করা মিশ্রিত করিয়া হোমিও ফার্মাকোপীয়ার নিয়মানুসারে ইহা প্রস্তুত হয়। পরে ফার্মাকোপীয়ার নিয়মানুযায়ী শক্তিকৃত করিতে হয়।

প্রস্তুতের ফরমূলা:- এফ-৫বি (অরিষ্ট)। এফ-৭ (বিচূর্ণ)।

ক্রিয়াস্থান:- শৈষ্মিক ঝিল্লী, বিশেষত মুখ মধ্য, অস্ত্র, গর্ভাশয় ও যোনী পথের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে; শ্বাসপথে ও চর্মে বোরাক্সের ক্রিয়া দর্শে।

মানসিক লক্ষণ:- 
অতিশয় উৎকণ্ঠা ও নিদ্রালুতা, রাত্রি ১১টা পর্যন্ত উৎকণ্ঠার বৃদ্ধি। অলসতা, রোগী বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট থাকে। অসাধারণ শব্দে হঠাৎ চমকিয়া উঠে। অপরাহ্নে কাজ করিতে ভাল লাগে না। কোন কাজেই রোগী মনস্থির করিতে পারে না। নিম্নগতিতে ভয় ইহার প্রধান প্রয়োগ লক্ষণ। মাতা যখন শিশুকে জাগ্রত বা নিদ্রিত অবস্থায় শয্যায় শোয়াইতে যান, তখনই ঐ সামান্য নিম্নগতির জন্য নিদ্রিত শিশুও ভীত হইয়া জাগিয়া উঠে ও মাতাকে আঁকড়াইয়া ধরে। ইহার বয়স্ক রোগী এই ভীতির জন্য নাগর দোলায় উঠিতে পারে না এবং উচ্চ ছাদে উঠিয়া নিম্নদিকে চাহিতে পারে না।

চরিত্রগত লক্ষণ:- নিম্নাভিমুখী গতিতে ভীতি, ইহা এক প্রকার স্নায়বিক দুর্বলতার পরিচায়ক।
২। উৎকণ্ঠা এবং সামান্যতেই উত্তেজনা। নিদ্রিত অবস্থায় স্বপ্ন দেখিয়া বা কোনও প্রকার শব্দে (বজ্রের, বন্দুকের) রোগী অতিশয় ভীত হইয়া পড়ে এবং নিদ্রাদি পর্যন্ত ভঙ্গ হইয়া যায়।
৩। গ্রীষ্মকালে ইহার নিকট সুখপ্রদ নয়। ইহা একটি গরম কাতর ঔষধ।
৪। মুখ গহ্বরে, তালুতে ও জিহ্বায় ক্ষত, দুগ্ধপোষ্য শিশুদের জিহ্বার ক্ষত হইতে রক্ত ও মুখ হইতে যথেষ্ট লালা নির্গত হইতে থাকে।
৫। মাথার উপর, নাসারন্ধ্রে বা শরীরের যে কোন স্থানে মামড়ী পড়া বা চটাপড়া জাতীয় চর্মপীড়া উৎপন্ন হয়।
৬। মাথার চুল জটা বাঁধে, নাকের পিচুটি, নাকের ডগা চকচকে ও লাল বর্ণ, জলের মত তরল সর্দি নির্গমন সত্বেও মধ্যে মধ্যে নাক বন্ধ।
৭। প্রত্যেকবার প্রস্রাব ত্যাগের পূর্বে শিশুর ক্রন্দন।
৮। অধিক পরিমাণে সাদা চটচটে ডিমের লালার মত প্রদর স্রাব, স্রাব গরম।
৯। গাত্রচর্ম অপরিষ্কার, গায়ে একটু কিছু লাগিলেই ঘা হয়, নাকে পুঁজ পড়ে।
১০। স্ত্রীলোকদের ঋতুর পূর্বে পাকস্থলী হইতে কোমর পর্যন্ত বেদনা।
১১। পুরিসিজনিত খোঁচামারার ন্যায় বুকে বেদনা।
১২। ঘন ঘন হলদে চটচটে তরল মল।

প্রয়োগ ক্ষেত্র:- শিশুদের মুখক্ষত, চক্ষুরোগ, কর্ণের পীড়া, স্ত্রীলোকদের শ্বেত প্রদর, উদর শূল ও উদরাময়, প্রস্রাবের জ্বালা, কাশি, বিসর্প পুরিসি, চুলে জটা বাঁধা, চর্মপীড়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইহা ব্যবহৃত হয়।

শিশুচিত্র:- বোরাক্সের শিশু নিম্নগতিতে ভয় পায়। মাতা যখন কোল হইতে শিশুকে জাগ্রত বা নিদ্রিতাবস্থায় শয্যায় শোয়াইতে যান, তখনই ঐ সামান্য নিম্নগতির জন্য নিদ্রিত শিশুও ভীত হইয়া জাগিয়া উঠে ও ভয় পাইয়া মাতাকে আঁকড়াইয়া ধরে। শিশুদের মুখে ক্ষত, সাদা ছত্রাকের ন্যায় উদ্ভেদ। মুখের ভিতর জিভে প্রচুর ঘা। স্তনদুগ্ধ পানের সময় শিশু ক্রন্দন করে। শিশুস্তন ধরে কিন্তু পরক্ষণেই কষ্টে ও রাগে তাহা ছাড়িয়া দেয়। প্রত্যেকবার প্রস্রাব ত্যাগের পূর্বে শিশু ক্রন্দন করে। প্রস্রাব ঘন ঘন হয়। অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব এবং গরম। ইহাই বোরাক্সের শিশুচিত্র।

মুখক্ষত:- মুখে থকথকে ক্ষত, সাদা ছত্রাকের ন্যায় উদ্ভেদ। মুখের ভিতর গালের ভিতর ও জিবে এবং তালুর সর্বশেষ ভাগে গা, মুখের ভিতর গরম, ঐ সকল ক্ষত হইতে স্পর্শে এবং আহার করিবার সময় রক্তপাত হয়। মাড়ীর উপর বেদনাপূর্ণ স্ফোটক। স্তনদুগ্ধ পানের সময় শিশু ক্রন্দন করে। এই প্রকার মুখের ঘা ও জিহ্বার ক্ষতের সহিত যদি বোরাক্সের চরিত্রগত লক্ষণ নিম্ন গতিতে ভয় পাওয়া লক্ষণটি থাকে তাহা হইলে বোরাক্স অব্যর্থ ঔষধ। সোহাগার খই গ্লিসারিন মিশ্রিত করিয়া জিহ্বায় ২/৪ দিন বাহ্যিক প্রয়োগ করিলেও জিহ্বায় ক্ষত আরোগ্য হয়।

চক্ষু পীড়া:- চক্ষুর পাতার লোম বা ভোমা ভিতর দিকে বক্র হইয়া যায়। দীপ্ত তরঙ্গ মালার স্বপ্ন। চক্ষুর পাতাগুলি প্রদাহান্বিত হয়, চক্ষুর পাতাগুলি অক্ষিগোলকের উপর দিয়া কাটিয়া যাইতে থাকে। চক্ষুর পাতাগুলি পশ্চাৎ দিকে ঘুরিয়া যায়। পাতায় চটচটে আঠাযুক্ত পিচুটি তাহাতে চক্ষু জুড়িয়া যায়, চক্ষুর পাতার ধারে খুব বেদনা হয়।

কর্ণপীড়া:- আকস্মিক শব্দ শ্রবণে রোগী অভিভূত হইয়া পড়ে। কান ফোলে, কানে ব্যথা ও কান অত্যন্ত গরম হয় এবং যখনই কানের ব্যথা আসে শিশু চমকাইয়া উঠে ও কাঁদে। কর্ণস্রাব মিউকাসের সহিত পুঁজ মিশ্রিত হইয়া নির্গত হয়।

স্ত্রীপীড়া:- দুগ্ধবতী বোরাক্স জননীর স্তনদুগ্ধ গাঢ় আকার ধারণ করে এবং তাহা এত বিস্বাদ হইয়া উঠে যে, শিশু পান করিতে চায় না। বিকৃত মুখভঙ্গী করিয়া স্তন হইতে মুখ সরাইয়া লয়। ইহা ছাড়া শিশু একটি নির্দিষ্ট স্তন পান করিতে থাকিলে জননী সেই স্তনটিতে একটি অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করে এবং সঙ্গে সঙ্গে অপর স্তনে বেদনা অনুভব করে।
স্ত্রীলোকদের শ্বেত প্রদর স্রাব প্রচুর পরিমাণে নির্গত হয়। ঐ স্রাব সাদা হড়হড়ে কিংবা ডিমের লালার মত চটচটে। ইহার সকল স্রাবই গরম প্রদর স্রাব ও এত গরম যে, রোগিনী মনে করে পা বাহিয়া গরম জল পড়িতেছে। বোরাক্সে ঋতু খুব শীঘ্র শীঘ্র ও পরিমাণে অধিক স্রাব হয়। ঋতুস্রাবের পূর্বে ও পরে প্রদর স্রাব। ইহা পুরাতন যোনী প্রদাহের ও জরায়ু প্রদাহেরও ভাল ঔষধ।

উদর লক্ষণ:- কাশির সহিত খোঁচা মারা ব্যথা হয়। এই ব্যথা কাশির সহিত ডান দিকের বুকের উপরিভাগে অধিক হয়। ব্যথার সহিত নিশ্বাস বন্ধের ভাব, গলায় অত্যন্ত দুর্গন্ধ, এই সকল লক্ষণে সাধারণ কাশি হইতে যক্ষ্মা কাশি পর্যন্ত হইলেও বোরাক্স উপযোগী। রোগী সিঁড়ি দিয়া উঠিলে এত হাঁপাইয়া পড়ে যে, কথা পর্যন্ত বলিতে পারে না।

নাসিকা পীড়া:- নাসিকা রন্ধ্রে ক্ষত হয়। ঐ ক্ষতে অত্যন্ত ব্যথা, টাটানভাব এবং নাকের ডগায় অত্যন্ত ব্যথা ও ফোলা থাকে।

চুলের পীড়া:-  চুলের ডগাগুলি জড়াইয়া জটা বাঁধে এবং চুল কাটিয়া দিলেও পুনরায় ঐরূপ হয়।

চর্মপীড়া:- চর্ম যেন অস্বাস্থ্য জ্ঞাপক। সামান্য আঁচড় খাইলে বা কাটিয়া গেলেও তথায় পুঁজ হয়, না পাকিয়া সারিতে চায় না। গাত্র চর্ম প্রায়ই শুষ্ক থাকে। চর্মের উপর বিশেষতঃ আঙ্গুলের পশ্চাৎভাগে অধিক চুলকায়। আঙ্গুলের সন্ধিস্থানে ছোট ছোট ঘা ও দেখা দেয়।

বৃদ্ধি:-  নিম্নগতিতে, ধুমপানে, হঠাৎ কোনও প্রকার শব্দে, ভিজা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়, প্রস্রাব ত্যাগের পূর্বে ও গরমের দিনে।

উপশম:- সন্ধ্যার প্রাক্কালে, রাত্রি ১১টায়, চাপনে এবং শীতের দিনে।

অনুপূরক:- আর্সেনিক, ব্রায়োনিয়া, লাইকোপোডিয়াম, ক্যালকেরিয়া, ফসফরাস, নাক্সভম, সাইলিসিয়া।

ক্রিয়ানাশক:- কফিয়া, ক্যামোমিলা।

সম্বন্ধযুক্ত ঔষধ:- এসেটিক এসিড, ভিনিগার, মদ্য।

ক্রিয়া স্থিতিকাল:- ৩০ দিন।

শক্তি:-  ২০, ৩x, ৬ এবং ৩০ শক্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ