তৃতীয় অধ্যায়
নিউরালজিয়া বা স্নায়ুশূল
Neuralgia
উত্তর : আমাদের শরীরের সর্বত্র স্নায়ু দ্বারা আবৃত। শরীরের যে সেনসরি নার্ভের ক্রিয়া বৈলক্ষণ্য জনিত অথবা তাহাদের কোন অংশ প্রদাহান্বিত হইয়া স্নায়ু শাখা মধ্যে তীক্ষ্ণ, খোঁচামারা, চিড়িকমারা বা জ্বালাবৎ বেদনা হইলে তাহাকে স্নায়ুশূল বা নিউরালজিয়া বলে।
প্রশ্ন- নিউরালজিয়া বা স্নায়ুশূলের প্রকারভেদ লিখ।
উত্তর : প্রকারভেদ ঃ স্নায়ুশূলকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা- ১) ত্বকের নিম্নস্থ স্নায়ুশূল ও ২) আভ্যন্তরীণ যন্ত্রস্থ স্নায়ুশূল।
১) ত্বকের নিম্নস্থ স্নায়শূল :
ক) ফেসিয়াল নিউরালজিয়া ।
খ) হেমিক্রেনিয়া ।
গ) ইন্টারকস্টাল নিউরালজিয়া বা পুরোডিনিয়া ।
ঘ) সায়েটিকা।
২) আভ্যন্তরীক যন্ত্রস্থ স্নায়ুশূল :
ক) গ্যাস্ট্রোডিনিয়া-পাকস্থলীর স্নায়ুশূল।
খ) এনজাইনা পেক্টোরিস-হৃদপিণ্ডের স্নায়ুশূল।
গ) হিপেটিক নিউরালজিয়া যকৃতের শূলপীড়া।
ঘ) ওভেরিয়ান নিউরালজিয়া ডিম্বকোষের স্নায়ুশূল। ঙ) টেস্টিকুলার নিউরালজিয়া অণ্ডকোষের স্নায়ুশূল।
উদ্ভবের উপর ভিত্তি করিয়া নিম্নলিখিত ভাগেও ইহাকে ভাগ করা যায়। যথা—
ক) প্রসোপ্যালজিয়া বা পঞ্চম স্নায়ুশূল। খ) সার্ভাইকো অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া ।
গ) ইন্টারকস্টাল নিউরালজিয়া ।
ঘ) সার্ভাইকো ব্রেকিয়াল নিউরালজিয়া ।
১) ত্বকের নিম্নস্থ স্নায়শূল :
ক) ফেসিয়াল নিউরালজিয়া ।
খ) হেমিক্রেনিয়া ।
গ) ইন্টারকস্টাল নিউরালজিয়া বা পুরোডিনিয়া ।
ঘ) সায়েটিকা।
২) আভ্যন্তরীক যন্ত্রস্থ স্নায়ুশূল :
ক) গ্যাস্ট্রোডিনিয়া-পাকস্থলীর স্নায়ুশূল।
খ) এনজাইনা পেক্টোরিস-হৃদপিণ্ডের স্নায়ুশূল।
গ) হিপেটিক নিউরালজিয়া যকৃতের শূলপীড়া।
ঘ) ওভেরিয়ান নিউরালজিয়া ডিম্বকোষের স্নায়ুশূল। ঙ) টেস্টিকুলার নিউরালজিয়া অণ্ডকোষের স্নায়ুশূল।
উদ্ভবের উপর ভিত্তি করিয়া নিম্নলিখিত ভাগেও ইহাকে ভাগ করা যায়। যথা—
ক) প্রসোপ্যালজিয়া বা পঞ্চম স্নায়ুশূল। খ) সার্ভাইকো অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া ।
গ) ইন্টারকস্টাল নিউরালজিয়া ।
ঘ) সার্ভাইকো ব্রেকিয়াল নিউরালজিয়া ।
প্রশ্ন- প্রসোপ্যালজিয়া বা পঞ্চম স্নায়ুশূলের বিবরণ দাও।
উত্তর : প্রসোপ্যালজিয়া এই জাতীয় স্নায়ুশূল মৃদু ও গুরু উভয়বিধ হইতে পারে। মৃদু জাতীয় স্নায়ুশূল অর্বুদের চাপ এবং দন্তক্ষয় পীড়ার উপসর্গ হিসাবে অথবা মুখমণ্ডলের কোন অস্থি বা নালীর মধ্যে পুঁজ সঞ্চয় প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। গুরু স্নায়ুশূল গ্যাংলিয়নের একটি প্রধান পীড়া। মুখমণ্ডলের ডানদিকে আক্রমণের হার বাম অংশের আক্রমনের হার অপেক্ষা দ্বিগুণ।
প্রশ্ন- ইন্টার কস্টাল নিউরালজিয়ার বিবরণ দাও।
উত্তর : ইন্টারকস্টাল নিউরালজিয়া : বক্ষ পঞ্জরের মধ্যে স্নায়ুশূল তাহা ইন্টারকস্টাল নিউরালজিয়া নামে পরিচিত। স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে ইহা বেশী দেখা যায়। হিস্টিরিয়া পীড়ায়, হার্পিস জোস্টার জাতীয় চর্মোদ্ভেদের সহিত অথবা উহার আগে পরে, মেরুদণ্ড মধ্যস্থ স্নায়ুর উপর অর্বুদের চাপ। পেরিকার্ডিয়াম, পুরা, এওটা প্রভৃতির পীড়াহেতু এই জাতীয় স্নায়ুশূল দেখা দেয়।
প্রশ্ন- সার্ভাইকো -অক্সিপিট্যাল নিউরালজিয়ার বিবরণ দাও।
উত্তর ঃ সার্ভাইকো- অক্সিপিট্যাল নিউরালজিয়া : এই জাতীয় স্নায়ুশূল গ্রীবাদেশের প্রথম চারিটি সার্ভাইক্যাল নার্ভের পশ্চাৎ শাখাসমূহ আক্রান্ত হইয়া সৃষ্টি হয়। ঠাণ্ডা লাগাহেতু বা গ্রীবা দেশীয় অস্থিসমূহের ক্ষয়পীড়ায় ইহা সৃষ্টি হয়। মাথার সামনে, পিছনে ও পার্শ্বে, নিম্ন চোয়ালে এবং গ্রীবার ঊর্ধে বেদনা অনুভূত হয়।
প্রশ্ন- সার্ভাইক্যাল-ব্রেকিয়্যাল নিউরালজিয়ার বিবরণ দাও।
উত্তর : সার্ভাইক্যাল-ব্রেকিয়্যাল নিউরালজিয়া : এই জাতীয় পীড়া ব্রেকিয়্যাল
স্নায়ুগুচ্ছের সেন্সরী নার্ভসমূহ আক্রান্ত হইয়া উৎপন্ন হয়। আঘাতাদির কারণে, সন্ধি প্রদাহ হইলে বা ঠাণ্ডা লাগিয়া এই পীড়া হইতে পারে। ইহার বেদনা গ্রীবা এবং স্কন্ধ
হইতে বাহু বাহিয়া হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
প্রশ্ন- নিউরালজিয়া বা স্নায়ুশূলের কারণতত্ত্ব লিখ ।
উত্তর ঃ কারণতত্ত্ব— নিম্নলিখিত কারণে স্নায়ুশূলের সৃষ্টি হইতে পারে।
১) বংশগত কারণ।
.২) দরিদ্র ব্যক্তিরা অত্যধিক পরিশ্রমজনিত কার্য করার ফলে।
৩) সাধারণ দুর্বলতা ও হিস্টিরিয়া পীড়া।
৪) স্নায়ুর ক্ষয় বা উহাতে চাপ পড়া ।
৫) স্নায়ুতে ফসফেট অব পটাশ এবং ফসফেট অব ম্যাগ্নেশিয়া এই দুইটির বা যে কোন একটির অভাব হইলে।
৬) শারীরিক দুর্বলতা, দৈহিক ও মানসিক অবসাদ, রাত্রিজাগরণ, অনিদ্রা,
উদ্বেগ, পুষ্টির অভাব প্রভৃতি হইলে ।
১) বংশগত কারণ।
.২) দরিদ্র ব্যক্তিরা অত্যধিক পরিশ্রমজনিত কার্য করার ফলে।
৩) সাধারণ দুর্বলতা ও হিস্টিরিয়া পীড়া।
৪) স্নায়ুর ক্ষয় বা উহাতে চাপ পড়া ।
৫) স্নায়ুতে ফসফেট অব পটাশ এবং ফসফেট অব ম্যাগ্নেশিয়া এই দুইটির বা যে কোন একটির অভাব হইলে।
৬) শারীরিক দুর্বলতা, দৈহিক ও মানসিক অবসাদ, রাত্রিজাগরণ, অনিদ্রা,
উদ্বেগ, পুষ্টির অভাব প্রভৃতি হইলে ।
৭) বাত, উপদংশ, ম্যালেরিয়া, দন্তক্ষয়, অস্ত্র বা মূত্রযন্ত্রাদির পীড়া, কোন প্রবল সংক্রামক ব্যাধি, টাইফয়েড প্রভৃতি পীড়ার ফলে।
৮) ঠাণ্ডা লাগা, এনিমিয়া প্রভৃতি কারণে।
৯) স্নায়ুতে অন্য দ্রব্য দ্বারা উত্তেজনা, ক্ষত, পেরেক বা গুলি কোন স্থানে লাগিয়া স্নায়ু আঘাত পাওয়া, ক্যান্সার প্রভৃতির দ্বারা স্নায়ুর উপর চাপ পড়িলে ।
৯) স্নায়ুতে অন্য দ্রব্য দ্বারা উত্তেজনা, ক্ষত, পেরেক বা গুলি কোন স্থানে লাগিয়া স্নায়ু আঘাত পাওয়া, ক্যান্সার প্রভৃতির দ্বারা স্নায়ুর উপর চাপ পড়িলে ।
প্রশ্ন- নিউরালজিয়া বা স্নায়ুশূলের লক্ষণাবলী বা উপসর্গ বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ ।
উত্তর : লক্ষণাবলী ঃ
১) পীড়া আক্রমণের পূর্বে আক্রান্ত স্থান অসাড় ও শীতলবোধ হয়, সড়সড় ঝিনঝিন করে, টানিয়া খেঁচিয়া ধরে।
২) পীড়িত স্নায়ুর গতি অনুযায়ী সেই সকল স্থানে তীক্ষ্ণ, খোঁচামারা, টানিয়া ধরা, ছিঁড়িয়া যাওয়ার মত বেদনা, ছুরি বেঁধার মত, বিদ্যুৎ গতির ন্যায়, জ্বালাকর, বিভিন্ন জাতীয় বেদনা ।
৩) বেদনা হঠাৎ আক্রমণ করে এবং তখনই কমিয়া যায় ও পুনরায় আক্রমণ করে। অনেক সময় সর্বদাই বেদনা থাকে।
৪) বেদনা স্নায়ুপথ দিয়া গমন করিলে বিদ্যুৎ গতিতে ও বিধাইয়া দেওয়ার মত হইয়া চলে, কিন্তু যখন স্নায়ুর ভাগে হয় তখন খোঁচামারা ও জ্বালাকর বেদনা হয়।
৫) আক্রমণকালে আক্রান্ত স্থানের পেশীকুঞ্চন বা আক্ষেপ হইতে পারে।
৬) বেদনার সাময়িক আবির্ভাব ও নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশ।
৭) আক্রান্ত স্নায়ুসমূহ অনেক সময় উত্তপ্ত ও লালবর্ণ ও জ্বালাময় এবং স্ফীত হইতে পারে ।
প্রশ্ন- নিউরালজিয়া বা স্নায়ুশূলের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা লিখ এবং পীড়ায় ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ লিখ ।
উত্তর : চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা- পীড়িত স্থানে উষ্ণ সেঁক এবং ফ্লানেল দ্বারা বাঁধিয়া রাখা উচিত। রোগীর যাহাতে ঠাণ্ডা না লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখিতে হইবে। দৈহিক ও মানসিক পরিশ্রম বর্জন করিতে হইবে। স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে বসবাস, অতিভোজন, সুরাপান, অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় চালান পরিত্যাজ্য। সুনিদ্রা ও বিশুদ্ধ বায়ু সেবন আবশ্যক। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি পালন ও কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করিতে হইবে। আমিষ জাতীয় খাদ্য বর্জন করিতে হইবে। সাত্ত্বিক আহার প্রশস্ত।
ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ :
১) একোনাইট- পীড়ার প্রথমাবস্থায় রোগী অতিশয় অস্থির, আক্রান্ত স্থান লালবর্ণ ও গরম, শীতল বায়ু প্রবাহে মুখমণ্ডলের স্নায়ুশূল। মুখের এক পার্শ্বে ঝিনঝিন ও অসাড়তাবোধ। স্ফীত, উত্তপ্ত ও আরক্ত। বেদনার প্রাবল্যে রোগী ছটফট করে।
২) বেলেডোনা- ইহার স্নায়ুশূলে বেদনা মুখমণ্ডল হইতে আরম্ভ হইয়া কর্ণের মধ্য দিয়া মস্তকের পার্শ্ব অতিক্রম করিয়া গ্রীবাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। মুখমণ্ডলের ডান পাশের স্নায়ুশূল, জরায়ু বা অন্য কোন স্থানের স্নায়ুশূল। অর্ধশিরশূল, সেই সাথে মুখমণ্ডল হঠাৎ রক্তবর্ণ। মুখমণ্ডলের স্নায়ুশূণে দাঁতে স্পর্শকাতর বেদনা। স্নায়ুশল হঠাৎ আক্রমণ এবং হঠাৎ অন্তর্ধান।
৩) স্পাইজেলিয়া- সূর্যোদয়ের বেদনা আরম্ভ হইয়া ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং মধ্যহ্ন হুইতে হ্রাস পাইয়। সূর্যাস্তে কমিয়া যায়। মস্তক ও মুখমণ্ডলে কাটিয়া ফেলার ন্যায় বেদনা। মাথার পশ্চাতে বেদনার সূত্রপাত হইয়া চক্ষুর উপর স্থায়ী হয়। মনে হয় চক্ষু গোলক বাহির হইয়া যাইবে। সে সাথে প্রবল হৃদস্পন্দন। আলোক অসহ্যতা ও ভীতি। ইহা সুপ্রা অর্বিটাল নিউরালজিয়ার শ্রেষ্ঠ ঔষধ।
৪) কলোসিন্থ— অর্ধশিরঃশূল, মাথা ও দত্ত বেদনাসহ মূর্খমণ্ডলের বাম পার্শ্বে ছিন্নকর বেদনা, উত্তাপে ও নড়াচড়ায় বেদনার বৃদ্ধি, মাথায় প্রবল যন্ত্রণা, মনে হয় কপাল ও চক্ষুর উপর কেহ সুঁচ ফোটাইতেছে। চক্ষু তারকায় জ্বালাকর কাটিয়া ফেলার ন্যায় বেদনা। ডান অণ্ডকোষের শূল। আক্রান্ত স্থান তপ্ত ও স্ফীত। ক্রোধজনিত স্নায়ুশূল। চাপে বেদনা কমে।
৫) জেলসিমিয়াম- স্নায়ুশূল বেদনা, মাথার পশ্চাৎভাগ হইতে আরম্ভ হইয়া
সমুদয় মাথায় বিস্তৃত হয়, শেষে চক্ষুতে অবস্থান করে। বেদনা কাঁধে ও মেরুদণ্ডে পরিচালিত হয়। কপালে ও চক্ষুতে বেদনা। অতিরিক্ত শিরঃপীড়ার জন্য বমন। পীড়া আক্রমণের পূর্বে দৃষ্টি শক্তির হ্রাস এবং শিরঃপীড়া বৃদ্ধি হইলে দৃষ্টি শক্তির পুনরাবির্ভাব। প্রচুর প্রস্রাব হইয়া শিরঃপীড়ার অবসান। মুখমণ্ডলের একপার্শ্বে তীব্র শায়ুশূল।-
ইহা ছাড়া এই পীড়ায় আর্সেনিক, স্যাঙ্গুনেরিয়া, সিমিসিফিউগা, আর্জেন্ট নাইট, কস্টিকাম, কেলি বাইক্রম, রাসটক্স, পালসেটিলা, চায়না, ক্যামোমিলা, ম্যাগ কার্ব, রডোডেন্ড্রন প্রভৃতি ঔষধ লক্ষণানুযায়ী ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন- নিউর্যালজিয়া বা স্নায়ুশূলের ভাবীফল লিখ।
উত্তর ঃ স্নায়ুশূলের ভাবীফল তত মারাত্মক নয়। তবে যদি সুচিকিৎসা না হয়। তাহা হইলে পক্ষাঘাত বা হিস্টিরিয়া হইতে পারে।
নিউরাইটিস বা স্নায়ুপ্রদাহ
Neuritis
প্রশ্ন- নিউরাইটিস বা স্নায়ুপ্রদাহের সংজ্ঞা লিখ।
উত্তর ঃ আমাদের মস্তক ও মেরুদণ্ডের মজ্জা হইতে উদ্ভুত মজ্জাপূর্ণ লম্বা রজ্জুর নাম স্নায়ু, এই স্নায়ুর কিয়দংশ বা সমস্ত অংশ স্ফীত, লালবর্ণ বা বেদনাযুক্ত হওয়ার নাম স্নায়ুপ্রদাহ। প্রদাহ ক্রিয়ায় স্নায়ুসমূহের গঠনতন্ত্র বা নার্ভ স্ট্রাকচার অতি অল্প ক্ষেত্রেই আক্রান্ত হয়। স্নায়ুসমূহের আবরণীর মধ্যেই সাধারণতঃ ইহা সীমাবদ্ধ থাকে।
প্রশ্ন- নিউরাইটিস বা স্নায়ুপ্রদাহের শ্রেণীবিভাগ লিখ ।
উত্তর : প্রকারভেদ- নিউরাইটিস বা স্নায়ুপ্রদাহ প্রধানতঃ ২ প্রকার ।
১) স্থানিক বা লোকালাইজড নিউরাইটিস-একটিমাত্র স্নায়ুর প্রদাহ হয়।
২) সর্বাঙ্গীন বা পলি নিউরাইটিস- বহু স্নায়ুর প্রদাহ উপস্থিত হইয়া থাকে ।
১) স্থানিক বা লোকালাইজড নিউরাইটিস-একটিমাত্র স্নায়ুর প্রদাহ হয়।
২) সর্বাঙ্গীন বা পলি নিউরাইটিস- বহু স্নায়ুর প্রদাহ উপস্থিত হইয়া থাকে ।
প্রশ্ন- নিউরাইটিস বা স্নায়ু প্রদাহের কারণ তত্ত্ব লিখ ।
উত্তর : কারণতত্ত্ব- স্থানিক স্নায়ু প্রদাহের কারণ-স্নায়ুতে আঘাত লাগা, আঘাত
লাগিয়া স্নায়ু থেঁতলাইয়া বা ছিঁড়িয়া যাওয়া, স্নায়ুতে কোনও যন্ত্রের চাপ, অতিশয় ঠাণ্ডা বা গরম লাগা, কোনও একস্থানে প্রদাহ হইয়া সেই প্রদাহ বিস্তৃত হইয়া আসা, সন্ধিবাত, মেনিনজাইটিস, সন্ধিমধ্যে পুঁজ সঞ্চয়, প্রভৃতি । সর্বাঙ্গীণ স্নায়ুপ্রদাহের কারণ- যক্ষ্মা, বহুমূত্র, রক্তহীনতা, বেরিবেরি, প্রভৃতি পীড়ার উপসর্গরূপে, টাইফয়েড, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, রক্তামশায়, প্রভৃতি পীড়া, গর্মীপীড়া, কুষ্ঠব্যাধি, সীসক, তাম্র, আর্সেনিক প্রভৃতি বিষাক্ত পদার্থের অপব্যবহার, মদ্যপান প্রভৃতি কারণে সর্বাঙ্গীণ স্নায়ু প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন- নিউরাইটিস বা স্নায়ু প্রদাহের লক্ষণাবলী বা উপসর্গ বা ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ ।
উত্তর ঃ লক্ষণাবলী-নিউরাইটিসের লক্ষণাবলী নিম্নরূপ-
১) আক্রান্ত স্নায়ুতে তীক্ষ্ণ, চিড়িকমারা বেদনা, কখনও বেশী কখনও কম,
কিন্তু রাত্রিকালে অধিক মাত্রা হইয়া নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটে।
২) প্রথমাবস্থায় প্রাদাহিক “জ্বর, শীত শীত ভাব, শিরঃপীড়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায় ।
৩) তরুণ পীড়ায় প্রদাহিত স্নায়ু যেদিকে চালিত হইয়াছে সেদিকের চর্মের উপর একটা লালবর্ণ দাগ পড়ে, চর্ম উত্তপ্ত ও ঘর্মাক্ত হইয়া থাকে।
৪) প্রথমাবস্থায় হাতের ও পায়ের তালুতে ঝিনঝিনে ও অসাড়তাবোধ হয়, ধীরে ধীরে তাহা বাহু ও পা অতিক্রম করিয়া বিস্তৃত হইয়া সহসা উর্ধাংগ ও নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত হইয়া থাকে।
৫) আক্রান্ত পেশী দুর্বল হইতে থাকে। ধীরে ধীরে পেশীসমূহ শীর্ণ ও শ্লথ হইয়া পড়ে ৷ অনুভূতি বিলুপ্ত হয় কিন্তু যন্ত্রণা থাকে না।
৬) প্রসারক পেশীসমূহ আক্রান্ত হয় বলিয়া হাতের ও পায়ের কব্জির পক্ষাঘাত দেখা দেয়।
৭) মদ্যাদি পানজনিত পীড়ায় স্মৃতিহীনতা, মানসিক বিভ্রম ও বিকার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই পীড়ায় নিম্নাঙ্গ বেশী আক্রান্ত হয়।
৮) আর্সেনিক সেবনজনিত পীড়া হইলে চর্ম কাল, মোটা এবং বিভিন্ন প্রকার উদ্ভেদ প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন- নিউরাইটিস বা স্নায়ু প্রদাহের রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস লিখ ।
উত্তর ঃ রোগ নির্ণয়- স্নায়ু প্রদাহে আক্রান্ত স্নায়ু স্পর্শ করিলে বেদনা বোধ হয়,
স্নায়ুর পরিচালন পথে সেন্সরী মোটর ও ট্রাফিক পরিবর্তনাদি লক্ষ্য করিলেই এই পীড়া নির্ণয় করা যায়। যখন বেদনা বেশী হয় তখন নিউরালজিয়া বলিয়া ইহা ভ্রম হইতে পারে। তবে নিউরাইটিসে পক্ষাঘাত বা অনুভূতি লোপ থাকে। আর নিউরালজিয়ায় পক্ষাঘাত বা অনুভূতি বিলুপ্তি দেখা যায় না ।
প্রশ্ন- নিউরাইটিস বা স্নায়ুপ্রদাহের ভাবীফল লিখ ।
উত্তর : ভাবীফল : এই পীড়ায় ভয়ের কোন কারণ নাই। পীড়ার মূল কারণ যদি দূরীভূত করা যায় তাহা হইলে কিছু দিনের মধ্যেই পীড়া আরোগ্য হয়। তবে পীড়ার আক্রমণসহ জ্বর এবং হৃদপিণ্ড বা শ্বাসযন্ত্রের পক্ষাঘাত হইলে মৃত্যুর আশংকা থাকে।
প্রশ্ন- নিউরাইটিস বা স্নায়ু প্রদাহের ভোগকাল লিখ ।
উত্তর : ভোগ কাল- এই পীড়ায় রোগী কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস যাবত ভোগ করিতে পারে। তবে সামান্য আঘাতজনিত প্রদাহ ২/১ দিন থাকে। গুরুতর ক্ষেত্রে কখনও কখনও আজীবন ভোগ করিতে হয়।
প্রশ্ন- নিউরাইটিস বা স্নায়ু প্রদাহের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা লিখ এবং পীড়ায় ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ লিখ ।
উত্তর : চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা- রোগীকে সর্বদা বিশ্রামে থাকিতে হইবে এবং
আক্রান্ত স্থান ম্যাসেজ করানো ভাল। নিয়মিত ভাবে ম্যাসেজ বা অঙ্গমর্দনে স্নায়ু ও পেশীসমূহ পুনরুজ্জীবিত হইতে পারে। পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ এবং উত্তেজক ও গুরুপাক দ্রব্যাদি বর্জন করা উচিত।
ব্যবহৃত ৫টি ঔষধের নির্দেশক লক্ষণ :
১) একোনাইট- শুষ্ক, শীতল বাতাসে পীড়ার উৎপত্তি হইয়া থাকে। রাত্রিকালে অসহ্য বেদনা এবং ঐ বেদনা গরমে ও চাপে বৃদ্ধি এবং ঠাণ্ডায় ও ভিজা দ্রব্যে উপশম হয়।
২) বেলেডোনা- ছিন্নকর বা খিলধরা মত, দপদপকর বেদনা, প্রবল জ্বর, প্রদাহিত স্থান স্পর্শ করিলে বেদনার বৃদ্ধি। বেদনা হাতের কব্জিতে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে। উরু এবং পায়ে বেদনা, বেদনা গোড়ালি হইতে উপর দিকে চালিত হয়। পায়ের তলা পক্ষাঘাতের ন্যায় দুর্বল হয়।
৩) কস্টিকাম— শুষ্ক ও তীব্র শীতল বায়ুতে একক স্নায়ুর পক্ষাঘাত, চোখের পাতা, ওষ্ঠ ও জিহ্বার পক্ষাঘাত। রোগী কিছু বলিতে বা গিলিতে পারে না। আক্রান্ত অঙ্গে বেদনাবোধ, ধীরে ধীরে পক্ষাঘাত আবির্ভাব হয়। কণ্ঠের হাড় হইতে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত মনে শীতল জল প্রবাহিত হইতেছে। পা, হাঁটু ও পায়ের তালুতে কাটিয়া ফেলামত বেদনা। হাতে ও পায়ে পিপড়া চলার ন্যায় অনুভব হয়। বিছানায় থাকিলে আরামবোধ ।
৪) ক্যাক্টাস- শিরঃপীড়া, মাথার চাঁদির উপর যেন একটি বোঝা চাপানো আছে এমন অনুভূতি। খোঁচামারা দপদপকর বেদনা। মাথার ডানপাশে ও চাঁদিতে বেদনা বেশী। কাঁধে, ঊর্ধ ও নিম্ন বাহুতে, উরু হইতে পায়ের তলায় বাতের ন্যায় বেদনা ।
৫) আর্ণিকা- আঘাত লাগিয়া পীড়া। স্নায়ুমধ্যে রক্তস্রাব, মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডের উপর আঘাত বশতঃ তন্মধ্যে রক্ত বা রসস্রাবজনিত পক্ষাঘাত। ডানদিকের পক্ষাঘাত । ভিজা আবহাওয়ায় পীড়ার বৃদ্ধি ।
ইহা ছাড়া লক্ষণানুসারে ক্যামোমিলা, রাসটক্স, ক্যালমিয়া, ল্যাক ক্যান, নাক্স ভম, মার্কসল, ফসফরাস, আর্সেনিক, কোনায়াম প্রভৃতি ঔষধগুলিও ব্যবহৃত হয়।
0 মন্তব্যসমূহ