ব্যারাইটা কার্ব - BARAYTA CARB
রাসায়নিক চিহ্ন:- Ba C03
প্রুভার:- ডাঃ হ্যানিম্যান ইহা প্রুভ করেন।
প্রতিশব্দ:-
ব্যারি কার্বনাস, ব্যারিয়াম কার্বনেট, ব্যারিয়াম কার্বনিকাম, কার্বনাস ব্যারাইটিকাস, কার্বনেট অব ব্যারিয়াম।
ব্যারি কার্বনাস, ব্যারিয়াম কার্বনেট, ব্যারিয়াম কার্বনিকাম, কার্বনাস ব্যারাইটিকাস, কার্বনেট অব ব্যারিয়াম।
উৎস, বর্ণনা:-
ব্যারিয়াম কার্বনেট নামে ইহা এক প্রকার কাঁকরমুক্ত সাদা ঘন কোমল গুঁড়াময় খনিজ পদার্থ। জল ও সুরাসারে ইহা দ্রবীভূত হয় না। তীব্র লাল উত্তাপে ইহা সাদা এনামেলের ন্যায় গলিয়া যায়। এলকালি কার্বনেটের দ্রবণের দ্বারা ইহা ব্যারিয়াম সল্টের তলানি আকারে প্রস্তুত হইয়া থাকে।
ক্রিয়াস্থান:-
পরিপোষণ যন্ত্র সমূহেই ব্যারাইটা কার্বের প্রধান ক্রিয়া দেখিতে পাওয়া যায়। ইহার ক্রিয়া দ্বারা পরিপোষণ ক্রিয়ার ব্যাঘাত হেতু বিধান তত্ত্বর অপকর্ষ ঘটায়। ইহা মস্তিষ্কের স্নায়ু মন্ডলীতে ক্রিয়া করিয়া স্নায়ুর উপদাহ ও অবসাদ জন্মাইয়া মানসিক ও শারীরিক অবনতি আনয়ন করে। গ্রন্থি সমূহ বিশেষতঃ গলা ও ঘাড়ের গ্রন্থিতে ক্রিয়া কবিয়া উহার কাঠিন্যও বৃদ্ধি করে। সোরা ও গুটিকা দোষ যুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে শৈশব ও বৃদ্ধাবস্থায় উপযোগী।
মানসিক লক্ষণ:-
প্রয়োগক্ষেত্র:-
খর্বতা, শীর্ণতা, স্মরণ শক্তির হ্রাস, গলগন্ড ও টিউমার, টনসিল প্রদাহ, টাক পড়া, চর্মপীড়া, শ্বাস যন্ত্রের পীড়া, উদরের পীড়া, মুখের পীড়া, পদতলে ঘর্ম, রাত্রিকালীন স্বপ্নদোষ, মস্তিষ্কের ক্রিয়ার দুর্বলতা হেতু পক্ষাঘাত, চক্ষুর ছানি, কোষময় অর্বুদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যারাইটা কার্ব প্রয়োগ হয়।
১। মনটি অপরিপুষ্ট তাই স্মৃতি শক্তি ও বুদ্ধি বিপর্যয় দেখা দেয়। কোন কিছুই মনে রাখিতে পারেনা।
২। আত্মবিশ্বাসের অভাব। শিশু লাজুক প্রকৃতির। শিশু রোগী কোন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখিলে পর্দা, বা আলমারীর আড়ালে লুকাইতে চায়।
৩। রোগী বিষণ্ণ, নৈরাশ্যপূর্ণ, খেয়ালী ও নির্জনতা প্রিয়।
৪। খেলা ধূলায় মন বসেনা, চুপচাপ বসিয়া থাকে। অন্য মনষ্ক এবং বোকাটে ভাব।
৫। পাঠ্যাভ্যাসে অক্ষমতা ও মানসিক পরিশ্রম হেতু বিদ্যালয়ে পড়াশুনার চাপ পড়িলে বা তিরস্কৃত হইলে সে অবশ্যই ক্রন্দন করিবে।
৬। স্ত্রীলোক অপেক্ষা পুরুষের সম্মুখে ইহার রোগীর লজ্জাবোধ বেশী।
চরিত্রগত লক্ষণ:-
১। শিশু ও বৃদ্ধদের পীড়া। কর্ণশূল ও গলার উপরিভাগের গ্রন্থি সমূহের স্ফীতি ও বেদনা, তাহাতে হস্ত স্থাপনেও কষ্ট বোধ হয়।
২। রোগী অতিশয় শীতকাতর। মাথার যাতনায় ও চর্ম পীড়ায়। ইহার লক্ষণ সমূহ আবদ্ধ ঘরে এবং শয্যায় বৃদ্ধি পায় এবং এই অবস্থায় সে মুক্ত বাতাস অভিলাষ করে, কিন্তু তাহা সহ্য হয় না।
৩। ঠান্ডা বাতাস, ঠান্ডা জল, স্নান ও ভিজা আবহাওয়া রোগীর অসহ্য। সামান্য ভিজা বাতাসে ইহার গাল গলার গ্লান্ড সমূহ ও টনসিল স্ফীত হইতে দেখা যায়। এই স্ফীতি ধীরে ধীরে আসে। টনসিল গ্রন্থির প্রদাহ, বিবৃদ্ধি ও পাকা।
৪। খর্বকায় স্ত্রীলোকদের স্বল্পরজঃ ও তৎসহ যোনীর উপরিভাগে ভারবোধ।
৫। বৃদ্ধদের ধ্বজভঙ্গ।
৬। যুবাকালে কোষ্ঠবদ্ধ ও জ্বালাযুক্ত অর্শ পীড়া।
৭। যুবকদের হস্ত মৈথুন কিম্বা অন্য উপায়ে বীর্য নষ্ট করিয়া অজীর্ণ রোগে আক্রান্ত তৎসহ বুক ধড়ফড়ানি
৮। অল্প বয়সে বৃদ্ধের ন্যায় চেহারা।
৯। মল শক্ত।
১০। সর্বদা পায়ের তলা ঘামে, পা ঠান্ডা থাকে, পায়ে যন্ত্রণাদায়ক কড়া।
১১। মাথার চুল উঠিয়া যায়। আঙ্গুলের অগ্রভাগ হইতে ছাল উঠে।
প্রয়োগক্ষেত্র:-
খর্বতা, শীর্ণতা, স্মরণ শক্তির হ্রাস, গলগন্ড ও টিউমার, টনসিল প্রদাহ, টাক পড়া, চর্মপীড়া, শ্বাস যন্ত্রের পীড়া, উদরের পীড়া, মুখের পীড়া, পদতলে ঘর্ম, রাত্রিকালীন স্বপ্নদোষ, মস্তিষ্কের ক্রিয়ার দুর্বলতা হেতু পক্ষাঘাত, চক্ষুর ছানি, কোষময় অর্বুদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যারাইটা কার্ব প্রয়োগ হয়।
শিশু ও বৃদ্ধের ঔষধ:-
শিশু বয়সে ও বৃদ্ধ বয়সে কার্যকারীতার সহিত ইহা ব্যবহৃত হয়। যে সকল শিশুর কোন নুতন লোকের নিকট উপস্থিত হইতে ইচ্ছা হয় না, উপস্থিত করিলেও হাত দিয়া মুখ ঢাকিয়া রাখে, শিশুর কোন কথাই মনে থাকে না, কিছু মাত্রও শিখিতে পারে না, খেলাধূলা করেনা, দেরীতে হাঁটিতে, কথা বলিতে ও পড়িতে শিখে, তাহাদের পীড়ায় ইহা উপযোগী। ব্যারাইটার রোগীর স্মরণ শক্তি অতি কম, বুদ্ধিহীন, বোকা ধরনের, শীঘ্র বাড়ে না, শরীর ও মন, দুর্বল, পেটটি মোটা ও অন্যন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শীর্ণ। ঠান্ডা সহ্য হয়না, ঠান্ডা লাগিলেই টনসিল, গলা, ঘাড় ও বগলের গ্রন্থি ফুলিয়া উঠে। বিশেষ করিয়া বেঁটে ও খর্বকায় বালক বালিকাদের পক্ষে ইহা বিশেষ উপযোগী।
আবার বার্ধক্যে যখন, শরীর ক্ষীণ হইয়া আসে ও মানসিক শক্তি নিস্তেজ হইয়া পড়ে, শরীরের দুর্বলতা কম্পন ইত্যাদি দেখিতে পাওয়া যায় তখনও ইহা দ্বারা ভাল ফল পাওয়া যায়। বৃদ্ধদিগের স্বাস্থ্যভঙ্গজনিত নানাবিধ পীড়ায় স্মৃতি শক্তি হীনতায় এই ঔষধ বিশেষ কার্যকরী। বৃদ্ধদের পক্ষাঘাত পীড়ায় ইহা ব্যবহৃত হয়। অকাল বার্ধক্য আসিয়া উপস্থিত হইলে এবং ম্যালেরিয়া, শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের জন্য কোনও অসুখ লাগিয়া থাকিলে ব্যারাইটা কার্ব ফলদায়ক ঔষধ।
দৈহিক ও মানসিক খর্বতা:-
খর্বতায় ব্যারাইটা কার্ব একটি উত্তম ঔষধ। দৈহিক ও মানসিক উভয়বিধ খর্বতা। দেহ ও মনের উৎকর্ষতার অভাব, মানসিক ও দৈহিক দুর্বলতা সে জন্য প্রায় জড়ভাবাপন্ন। গ্রন্থি সমূহ স্ফীত হওয়ার প্রবণতা, এইরূপ ব্যক্তি বিশেষ করিয়া বেঁটে ও খর্বকায় বালক বালিকাদের পক্ষে এই ঔষধটি বিশেষ উপযোগী। খর্বাকৃতি দেহের সহিত অপরিপক্ক মন ব্যারাইটার ক্ষেত্র হইতে পারে। মার্জিত বুদ্ধির অভাব। হাহা ছাড়া খর্বাকৃতি হিষ্টিরিয়া গ্রস্তা স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাব স্বল্প হইলে এবং গাত্র তাপের অভাবের ফলে সর্বদা শীত শীত ভাব থাকিলে ইহা কার্যকরী।
শিশু চিত্র অংকন:-
ব্যারাইটার শিশুর দৈহিক ও মানসিক উভয় বিধ দিক দিয়া খর্বতা। দেহ ও মনের উৎকর্ষতার অভাব। সে জন্য সে প্রায় জড়ভাবাপন্ন। শিশু কোন নুতন লোকের সামনে উপস্থিত হইতে পারেনা, হইলেও হাত দিয়া মুখ ঢাকিয়া রাখে। স্মরন শক্তি খুব কম, বুদ্ধিহীন, বোকাধরনের, পেট মোটা, অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শীর্ন, বেঁটে প্রকৃতির। ঠান্ডা সহ্য হয় না। ঠান্ডা লাগিলেই টনসিল, গলা, বগলের গ্রন্থি ফুলিয়া উঠে।
শীর্ণতায় লক্ষণ:-
শিশু বেশ খায়দায় তথাপি শরীর শুকাইয়া যায়। শরীর দুর্বল হইয়া পড়ে ও পেটটি মোটা হইতে থাকে। মাথাটা শরীর অপেক্ষা বড় হয়। অন্যান্য অঙ্গ বিশেষতঃ নীচের দিকটা পা হইতে বেশী শুকাইতে থাকে। সামান্য ঠান্ডা লাগিলেই সর্দি হওয়া ও বর্ষাকালে পীড়ার বৃদ্ধি ইত্যাদি লক্ষণে ব্যারাইটা উত্তম ঔষধ। ব্যারাইটা কার্ব শীর্ণতা লক্ষণে এব্রোটেনাম, নেট্রাম মিউর, আয়োডিয়াম ও ক্যালকেরিয়া কার্বের সমতুল্য ঔষধ।
টনসিল লক্ষণ:-
গিলিতে অক্ষমতা থাকে, কিন্তু সাইলিসিয়ার ন্যায় তরল খাদ্য ও পানীয় সে সহজেই গিলিতে পারে। রোগের প্রথমাবস্থায় যখন পুঁজ উৎপন্ন না হয় তখন ইহা প্রয়োগ করিলে আর পুঁজ হইতে পারে না। সামান্য মাত্র ঠান্ডা লাগিলেই যাহাদের টনসিল প্রদাহ হইয়া ফোলে, অত্যন্ত বেদনা হয় এমনকি ক্রমশ পাকিয়া পুঁজ নির্গত হয় তাহাদের পক্ষে ইহা অধিকতর উপযোগী। ধাতুগত গলক্ষত ও টনসিলাইটিসে ইহা অমোঘ। গলার বামদিক অপেক্ষা ডানদিকেই অধিক আক্রান্ত হয়। নতুন গলক্ষতে ইহা যেমন উপযোগী তেমনি যাহাদের এই রোগ সর্বদা হয় তাহাদের পক্ষেও ইহা সমান উপযোগী। যাহাদের মাঝে মাঝে এই পীড়া হয় তাহারা ৩০ শক্তির ঔষধ নিয়মিত রূপে সেবন করিলে ইহার হাত হইতে অব্যাহতি পাইবেন। পদঘর্ম নিঃসরণ বন্ধ হইয়া গলক্ষত বা টনসিলাইটিস হইলে ব্যারাইটা উপকারী। টনসিল পাকিয়া পুঁজ সঞ্চার হইলেও ইহা দ্বারা উপকার পাওয়া যায়।
পক্ষাঘাতে লক্ষণ:-
বৃদ্ধদিগের পক্ষাঘাত পীড়া। বৃদ্ধ বয়সে হাঁপানী ও পুরাতন কাশি, শ্বাসনালীতে পক্ষাঘাত অবস্থা জনিত ঘড় ঘড় শব্দ বিশিষ্ট তরল শ্লেষ্মাটি পর্যন্ত তুলিতে রোগীর অক্ষমতা। বৃদ্ধ বয়সে জিহ্বার পক্ষাঘাত। বিশেষতঃ সন্যাস রোগের পর পক্ষাঘাত। মস্তিস্কের পক্ষাঘাত, মুখ গহ্বরে ও তালুর পক্ষাঘাত লক্ষণ আসায় অনেক খাদ্য বস্তু নাসিকা পথে বহির্গত হইতেও দেখা যায়। মুখের মাংস পেশীর পক্ষাঘাতে, মুখ সামান্য খোলা থাকে ও লালা পড়ে। পক্ষাঘাতে কষ্টিকামও একটি উত্তম ঔষধ (কষ্টিকাম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)
উদর পীড়ার লক্ষণ:-
ব্যারাইটার রোগীর যথেষ্ট ক্ষুধা থাকে, তবে বিশিষ্টতা এই যে, আহারে বসিবা মাত্রই হঠাৎ ক্ষুধাটি চলিয়া যায় এবং তখন সে বেশ খানিকটা জল পান করিয়া ফেলে। এই অবস্থায় যদি অভ্যাস বশে বা কাহারও অনুরোধে জোর পূর্বক আহার করে, তাহা হইলে একটি মৃদু বেদনার আবির্ভাব হয়। প্রত্যেক আহারের পর উদর বেদনা ব্যারাইটা কার্বের একটি পরিচিত লক্ষণ। পাকস্থলীর গ্লান্ড সমূহের বৃদ্ধি ও বিশৃংখলা জনিতই এ অবস্থা দেখা দেয়। উদরে বায়ু সঞ্চয়, ফাঁপা এবং স্পর্শ কাতরতা। মিষ্টদ্রব্য ও ফলে বিতৃষ্ণা। ইহার আর একটি অদ্ভুত লক্ষণ এই যে, রোগী যে পার্শ্বে শয়ন করে অন্ত্রটি সেই দিকেই ঝুলিয়া পড়ে এই প্রকার একটি অনুভূতি দেখা যায়। ইহার মল শক্ত ও গুটলে।
পদতলের ঘর্মে লক্ষন:-
ব্যারাইটার ক্ষতকারী দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পদতলের ঘর্ম লক্ষণটি বিশেষ মূল্যবান। এই ঘর্ম চাপা পড়িয়া টনসিল, হাঁপানি বা ফুসফুস রোগ সহ শীর্ণতা গ্ল্যান্ড সমূহের স্ফীতি। পুনঃ পুনঃ সর্দি কাশির প্রবণতা প্রভৃতি আসিতে পারে। ঘর্ম চাপা পড়ার ফলে আবির্ভূত রোগ লক্ষণে ব্যারাইটা উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করিলে সর্ব প্রথমে ঘর্মটির পুনরাবির্ভাব ঘটে। তাহার পর অন্যান্য লক্ষণগুলি অপসারিত হয় ও পরিশেষে ঘর্মটিও চলিয়া যায়।
হ্রাস-বৃদ্ধি:-
বৃদ্ধি-রোগের বিষয় চিন্তা করিলে, আক্রান্ত অংশ চাপিয়া শয়নে, আহারের পর, ধৌত করিলে।
হ্রাস-মুক্ত বাতাসে ভ্রমণ কালে, শয়নে।
সম্বন্ধ যুক্ত ঔষধ:-
সোরিনাম, সালফার।
অনুপূরক ঔষধ:-
সাইলিসিয়া, ডালকামারা, সোরিনাম।
ক্রিয়া নাশক ঔষধ:-
ক্যাফর, জিঙ্কাম, ডালকামারা, এন্টিম টার্ট, বেলেডোনা।
পূর্ববর্তী ঔষধ:-
পালসেটিলা, সিপিয়া, রাসটক্স, ফসফোরাস।
পালসেটিলা, সিপিয়া, রাসটক্স, ফসফোরাস।
ক্রিয়াস্থিতিকাল:- ৪০ দিন।
ব্যাবহারের ক্রম:-
৬ হইতে ২০০। মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আরও উচ্চ শক্তি।
0 মন্তব্যসমূহ