অর্শ (Piles / Hemorrhoids)
অর্শ (Piles / Hemorrhoids) হওয়ার কারণ ও কারণসমূহ
অর্শ বা পাইলস মূলত রক্তনালী ফুলে যাওয়া বা প্রদাহজনিত সমস্যা, যা মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরের দিকে হতে পারে। এটি হওয়ার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে—
🔹 প্রধান কারণসমূহ:
-
কোষ্ঠকাঠিন্য (Chronic Constipation) – দীর্ঘদিন ধরে মল শক্ত হয়ে গেলে চাপ দিয়ে পায়খানা করার কারণে মলদ্বারের শিরা ফুলে যায়।
-
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা – বারবার পাতলা পায়খানা হলে মলদ্বারের টিস্যু দুর্বল হয়ে যায় এবং অর্শ হতে পারে।
-
অতিরিক্ত মশলাদার ও ভাজা খাবার – ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার বেশি খেলে পেটে গরম তৈরি হয়, যা অর্শের অন্যতম কারণ।
-
অতিরিক্ত সময় ধরে টয়লেটে বসা – অনেকক্ষণ ধরে মলত্যাগের চেষ্টা করলে মলদ্বারের উপর চাপ পড়ে, যা অর্শের সৃষ্টি করতে পারে।
-
গর্ভাবস্থা (Pregnancy) – গর্ভাবস্থায় জরায়ুর চাপের কারণে মলদ্বারের রক্তনালী ফুলে যেতে পারে।
-
ওবেসিটি (মোটা হওয়া) – শরীরের অতিরিক্ত ওজন থাকলে মলদ্বারে বেশি চাপ পড়ে, যা অর্শের কারণ হতে পারে।
-
ব্যায়ামের অভাব ও দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা – শারীরিক পরিশ্রম কম হলে অন্ত্রের গতি কমে যায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে অর্শের ঝুঁকি বাড়ায়।
-
জেনেটিক (বংশগত) – যদি পরিবারের কারও অর্শ থাকে, তাহলে অন্য সদস্যদেরও এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
-
অ্যালকোহল বা ধূমপান – এগুলো পরিপাকতন্ত্র দুর্বল করে দেয়, ফলে অর্শের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
-
অতিরিক্ত মাংস ও ফাস্টফুড খাওয়া – এতে ফাইবার কম থাকে, ফলে পেট পরিষ্কার হয় না এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
🔹 অর্শের লক্ষণ:
✅ মলদ্বারের আশেপাশে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া
✅ রক্ত পড়া (বিশেষ করে শক্ত মল ত্যাগের সময়)
✅ ব্যথা হওয়া বা ফুলে যাওয়া
✅ মলদ্বার থেকে ছোট ছোট মাংসপিণ্ড বেরিয়ে আসা
🔹 প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
✔️ ফাইবারযুক্ত খাবার খান (সবজি, ফলমূল, ডাল)
✔️ প্রচুর পানি পান করুন (কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস)
✔️ টয়লেটে বেশি সময় বসে থাকবেন না
✔️ প্রচুর হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করুন
✔️ অতিরিক্ত ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
✔️ কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিন
হোমিওপ্যাথিতে কিছু কার্যকর ওষুধ রয়েছে
🔹 হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা (অর্শ / Piles) 📌
অর্শের ধরণ ও লক্ষণ অনুযায়ী বিভিন্ন হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। নিচে কিছু কার্যকর ওষুধের তালিকা দেওয়া হলো—
১. রক্তপাতসহ অর্শ (Bleeding Piles)
🔹 Hamamelis 30 / 200 – যদি মলত্যাগের সময় প্রচুর রক্তপাত হয় এবং রক্ত গাঢ় লাল হয়।
🔹 Phosphorus 30 – যদি সামান্য মলত্যাগের সময়ও রক্তপাত হয়।
🔹 Millefolium 30 – যদি রক্তপাত বেশি হয় এবং ব্যথা কম থাকে।
২. ব্যথাযুক্ত অর্শ (Painful Piles)
🔹 Aesculus Hippocastanum 30 – যদি মলদ্বারে ব্যথা ও ভারী অনুভূতি থাকে।
🔹 Ratanhia 30 – যদি মলত্যাগের সময় ও পরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয়।
🔹 Nitric Acid 30 – যদি মলদ্বারে ফেটে যাওয়ার মতো ব্যথা হয়।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত অর্শ (Piles due to Constipation)
🔹 Nux Vomica 30 – যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে এবং মলত্যাগের জন্য অনেক চেষ্টা করতে হয়।
🔹 Bryonia 30 – যদি মল খুব শক্ত হয় এবং কম পানি পান করার কারণে অর্শ হয়।
🔹 Silicea 30 – যদি মলদ্বারের ফোঁড়া বা ঘা হয়ে থাকে।
৪. মাংসপিণ্ড বেরিয়ে আসা (Protruding Piles)
🔹 Sulphur 200 – যদি দীর্ঘদিন ধরে অর্শ থাকে এবং পায়খানার পর মাংসপিণ্ড বেরিয়ে আসে।
🔹 Thuja 30 – যদি মাংসপিণ্ড ছোট ছোট হয় এবং খোসার মতো দেখায়।
🔹 Lycopodium 30 – যদি বিকেলের দিকে সমস্যাগুলো বেড়ে যায়।
🔹 বিশেষ পরামর্শ:
✅ ৩০ পাওয়ারের ওষুধ দিনে ২-৩ বার ৫-৬ ফোঁটা খেতে হবে।
✅ ২০০ পাওয়ারের ওষুধ সপ্তাহে ১-২ বার খেতে হবে।
✅ খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে বা পরে কিছু খাবেন না।
✅ যথেষ্ট পানি পান করুন এবং ফাইবারযুক্ত খাবার খান।
✅ অতিরিক্ত ঝাল ও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।
✅ সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাহাঁটি করুন ও ব্যায়াম করুন।
0 মন্তব্যসমূহ