ভগন্দর - Fistula - ডাঃ মহি উদ্দিন

ভগন্দর  
Fistula


 ভগন্দর (Fistula-in-Ano) হলো মলদ্বারের চারপাশে বা তার সংলগ্ন টিস্যুতে অস্বাভাবিক সংযোগ (ফিস্টুলা) তৈরি হওয়া। এটি সাধারণত পায়ুপথের সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহ:

  • মলদ্বারের চারপাশে ব্যথা ও ফোলা

  • পুঁজ বা রক্তপাত

  • মলত্যাগের সময় অস্বস্তি

  • ত্বকের লালচে ভাব ও জ্বালাপোড়া

চিকিৎসা:

ভগন্দর (Fistula-in-Ano) এর জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বেশ জনপ্রিয়, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনার জন্য। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। 

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ:

 Silicea 

  1. পুঁজযুক্ত ভগন্দর – ক্ষত থেকে দীর্ঘদিন ধরে পাতলা বা ঘন পুঁজ বের হয়, যা ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে না।
    ক্ষতের সঠিকভাবে না শুকানো – যেকোনো কাটা-ছেঁড়া বা সংক্রমিত জায়গা ঠিকমতো শুকাতে চায় না।
    ফোঁড়া ও অবিরত পুঁজ হওয়া – শরীরের বিভিন্ন স্থানে বারবার ফোঁড়া হওয়া এবং পুঁজ জমা হওয়া।
    ঠান্ডা সংবেদনশীলতা – সামান্য ঠান্ডা লাগলেই সমস্যা বেড়ে যায়।

    অস্থিরতা ও দুর্বলতা – রোগী সবসময় ক্লান্ত বোধ করে, খিদে কমে যায়, এবং হাত-পা ঠান্ডা থাকে।    Myristica Sebifera – এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে এবং ভগন্দর দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।

Hepar Sulph 

  1. প্রচণ্ড ব্যথাযুক্ত ভগন্দর – পুঁজ জমে গেলে ব্যথা তীব্র হয় এবং ছুঁলে ব্যথা আরও বেড়ে যায়।
    তীব্র সংবেদনশীলতা – আক্রান্ত স্থানে সামান্য স্পর্শেই ব্যথা হয়।
    পুঁজযুক্ত সংক্রমণ – ক্ষত থেকে ঘন, দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হয়।
    ফোঁড়া বা ভগন্দর ফেটে পুঁজ বের হওয়া – পুঁজ বের হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়, তবে দ্রুত নতুন সংক্রমণ হয়।
    গরমে অবস্থার উন্নতি, ঠান্ডায় অবনতি – রোগী ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না, ঠান্ডা লাগলেই সমস্যা বাড়ে।
    রাতের দিকে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়

 Calcarea Sulph 

  1. দীর্ঘস্থায়ী পুঁজযুক্ত ভগন্দর – ক্ষত দীর্ঘদিন ধরে ভালো হয় না এবং বারবার পুঁজ বের হয়।
    হলুদাভ পুঁজ – ক্ষত থেকে ঘন, হলুদাভ বা সবুজাভ রঙের পুঁজ বের হয়।
    পুঁজ শুকিয়ে গেলেও আবার হয় – ভগন্দর কিছুদিন ভালো থাকে, কিন্তু কিছুদিন পর আবার সংক্রমিত হয়ে পুঁজ জমে যায়।
    ক্ষত শুকানোর প্রবণতা কম – সংক্রমণ বা কাটাছেড়া সহজে শুকাতে চায় না।
    ক্ষত থেকে রক্তমিশ্রিত পুঁজ বের হওয়া – ক্ষত থেকে সামান্য রক্তের সাথে পুঁজ বের হতে পারে।
    গরম আবহাওয়ায় সমস্যা বাড়ে – রোগীর অবস্থা গরম বা আর্দ্র আবহাওয়ায় খারাপ হতে পারে।

Thuja 

  1. বারবার ভগন্দর হওয়া – ভগন্দর একবার ভালো হলেও পুনরায় দেখা দেয়।
    দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ – ভগন্দর সহজে ভালো হয় না এবং দীর্ঘদিন ধরে পুঁজ বের হতে থাকে।
    চামড়ার ফোলা বা অতিরিক্ত মাংস বৃদ্ধি – ক্ষত শুকিয়ে গেলেও সেখানে বাড়তি মাংস বা ত্বক জমে যায়।
    ক্ষত থেকে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ – ঘন, দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হয়, যা ধীরে ধীরে শুকাতে থাকে।
    তৈলাক্ত, ঘামযুক্ত ত্বক – রোগীর ত্বক সাধারণত তৈলাক্ত ও আর্দ্র হয়, বিশেষ করে মুখে ও শরীরে।
    ঠান্ডায় ও আর্দ্র আবহাওয়ায় অবস্থা খারাপ হয় – রোগীর সমস্যা ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বেড়ে যায়।
    বিষাক্ত পদার্থ জমে থাকা (Toxin Build-up) – Thuja শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যদি রোগী অতিরিক্ত ওষুধ বা ভ্যাকসিন গ্রহণের পর সমস্যায় ভোগে।

Acid Nit 

  1. তীব্র ব্যথাযুক্ত ভগন্দর – ক্ষত বা সংক্রমণের স্থান ছুঁলেই ব্যথা তীব্রভাবে অনুভূত হয়।
    ক্ষত থেকে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বা রক্তপাত – ক্ষত থেকে পচা গন্ধযুক্ত রক্তমিশ্রিত পুঁজ বের হতে থাকে।
    ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আরও গভীর হয় – ভগন্দর বা সংক্রমণ ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে এবং ভালো হতে সময় নেয়।
    ছুরির মতো ধারালো ব্যথা (Splinter-like Pain) – রোগী অনুভব করে যে, ক্ষতস্থানে সুই বা ছুরি বিঁধছে।
    ক্ষতের চারপাশ শক্ত ও ফুলে যায় – সংক্রমিত অংশ ফোলা এবং শক্ত হয়ে যেতে পারে।
    ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় সমস্যা বাড়ে – শীত বা বর্ষার সময় লক্ষণগুলো বেড়ে যায়।
    মলদ্বার সংক্রান্ত সমস্যা – অনেক সময় ভগন্দর ছাড়াও পাইলস বা মলদ্বারের ফাটল (Anal Fissure) থাকতে পারে, যা তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার উপকারিতা:

ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
সংক্রমণ কমিয়ে ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
অস্ত্রোপচারের বিকল্প হিসেবে ধীরে ধীরে কার্যকর হতে পারে।

সতর্কতা:

  • রোগীভেদে ওষুধের কার্যকারিতা ভিন্ন হতে পারে।

  • হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণের আগে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।




প্রভাষক, ডাঃ মহি উদ্দিন
ফরাজী হোমিও হল ফেনী। 
01814319033

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ