রক্তে ইনফেকশন Sepsis বা Septicemia

 রক্তে ইনফেকশন 
Sepsis বা Septicemia


রক্তে ইনফেকশন (Sepsis বা Septicemia) একটি গুরুতর ও প্রাণঘাতী অবস্থা, যা তখন ঘটে যখন দেহে কোনো ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে পৌঁছে যায়। এটি পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল করতে পারে। নিচে রক্তে ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণগুলো দেওয়া হলো:

প্রাথমিক লক্ষণসমূহ:

  1. উচ্চ জ্বর বা কখনো অত্যন্ত কম তাপমাত্রা (হাইপোথার্মিয়া)
  2. ঠাণ্ডা লাগা বা কাঁপুনি
  3. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া (Tachycardia)
  4. শ্বাস দ্রুত হওয়া বা কষ্ট হওয়া
  5. অত্যন্ত দুর্বলতা বা ক্লান্তি
  6. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া

অগ্রসর লক্ষণসমূহ:

  1. বিভ্রান্তি বা মনোযোগের ঘাটতি (confusion/disorientation)
  2. প্রেশার কমে যাওয়া (Low blood pressure)
  3. অবচেতন হওয়া বা ঘুম ঘুম ভাব
  4. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যর্থতার লক্ষণ (যেমন প্রস্রাব কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট)
  5. ত্বক ঠাণ্ডা, সাদা বা নীলচে হয়ে যাওয়া
  6. চামড়ায় র‍্যাশ বা দাগ দেখা যাওয়া

বিশেষ লক্ষণ শিশু বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে:

  • খাওয়া না চাওয়া
  • অতিরিক্ত কান্না বা অস্বাভাবিক চুপচাপ
  • প্রস্রাব কমে যাওয়া
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

তবুও কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আছে, যেগুলো রক্তে ইনফেকশন বা সেপসিস জাতীয় অবস্থা দেখা দিলে রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী বিবেচনায় আনা যায়:

হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ (লক্ষণভিত্তিক):

  1. Pyrogenium

    • সেপটিক অবস্থায় অন্যতম প্রধান ওষুধ।
    • খুব বাজে গন্ধযুক্ত ঘাম, প্রস্রাব বা মল হলে।
    • শরীর গরম, কিন্তু তাপমাত্রা অস্বাভাবিক — থার্মোমিটারে যেমন দেখায়, শরীর তেমন গরম না।
    • Delirium বা সংজ্ঞাহীনতা থাকতে পারে।
  2. Arsenicum Album

    • দুর্বলতা খুব বেশি, অস্থিরতা, বারবার জায়গা বদলানো।
    • জ্বালাপোড়া ধরণের যন্ত্রণা।
    • রোগী ভীষণ ভীত ও মৃত্যুভয় গ্রস্ত থাকে।
  3. Lachesis

    • রক্তে টক্সিন জমে গেলে উপকারী।
    • গলায় বা মুখে নীলাভ ভাব, অবস্থা সকাল থেকে খারাপ হয়।
    • জ্বরের পর ঘামে স্বস্তি।
  4. Baptisia

    • টাইফয়েড বা অন্য ইনফেকশনের পর রক্তে ইনফেকশনের প্রবণতা হলে।
    • শরীর ভেঙে পড়া, চেতনা কমে আসা, মুখে বিষণ্ন ভাব।
  5. Carbo Vegetabilis

    • চরম দুর্বলতা, রক্তচাপ পড়ে গেলে।
    • রোগী ঠাণ্ডা, কিন্তু শ্বাস নিতে কষ্ট হয় ও হাওয়া চাই।
  6. China (Cinchona)

    • অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা ডায়রিয়ার কারণে দুর্বলতা।
    • ইনফেকশনের পর রক্তশূন্যতা দেখা দিলে।

কিছু পরামর্শ:

  • হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা উপসর্গনির্ভর, তাই সঠিক ওষুধ নির্বাচনের জন্য রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস দরকার।
  • জ্বর, ঘাম, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট বা বিভ্রান্তি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
  • হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নিজে না খেয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে নিন।


পরামর্শ:-

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রেও রুগীর উচিত একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। কারণ:

  1. ব্যক্তিভেদে রোগ ভিন্ন হতে পারে: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগ নয়, রুগীর সামগ্রিক লক্ষণ, মানসিক অবস্থা, শারীরিক গঠন, জীবনধারা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঔষধ নির্বাচন করা হয়।

  2. সঠিক ঔষধ নির্বাচন জরুরি: একই রোগের জন্য একাধিক হোমিও ঔষধ থাকতে পারে, কিন্তু কোনটি রুগীর উপযোগী তা নির্ধারণ করতে একজন বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।

  3. মাত্রা ও সময়জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ: কখন, কী পরিমাণে, কতদিন ঔষধ খেতে হবে—তা ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী হওয়া উচিত।

  4. নিজে নিজে ঔষধ গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে: ভুল ঔষধ বা মাত্রা রুগীর সমস্যাকে জটিল করে তুলতে পারে, কিংবা উপসর্গ লুকিয়ে রেখে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তাই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত। 


প্রভাষক, ডাঃ মহি উদ্দিন
ফরাজী হোমিও হল ফেনী। 
01814319033



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ