রক্তে ইনফেকশন
Sepsis বা Septicemia
রক্তে ইনফেকশন (Sepsis বা Septicemia) একটি গুরুতর ও প্রাণঘাতী অবস্থা, যা তখন ঘটে যখন দেহে কোনো ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তে পৌঁছে যায়। এটি পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল করতে পারে। নিচে রক্তে ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণগুলো দেওয়া হলো:
প্রাথমিক লক্ষণসমূহ:
- উচ্চ জ্বর বা কখনো অত্যন্ত কম তাপমাত্রা (হাইপোথার্মিয়া)
- ঠাণ্ডা লাগা বা কাঁপুনি
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া (Tachycardia)
- শ্বাস দ্রুত হওয়া বা কষ্ট হওয়া
- অত্যন্ত দুর্বলতা বা ক্লান্তি
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
অগ্রসর লক্ষণসমূহ:
- বিভ্রান্তি বা মনোযোগের ঘাটতি (confusion/disorientation)
- প্রেশার কমে যাওয়া (Low blood pressure)
- অবচেতন হওয়া বা ঘুম ঘুম ভাব
- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যর্থতার লক্ষণ (যেমন প্রস্রাব কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট)
- ত্বক ঠাণ্ডা, সাদা বা নীলচে হয়ে যাওয়া
- চামড়ায় র্যাশ বা দাগ দেখা যাওয়া
বিশেষ লক্ষণ শিশু বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে:
- খাওয়া না চাওয়া
- অতিরিক্ত কান্না বা অস্বাভাবিক চুপচাপ
- প্রস্রাব কমে যাওয়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
তবুও কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আছে, যেগুলো রক্তে ইনফেকশন বা সেপসিস জাতীয় অবস্থা দেখা দিলে রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী বিবেচনায় আনা যায়:
হোমিওপ্যাথিক ওষুধসমূহ (লক্ষণভিত্তিক):
-
Pyrogenium
- সেপটিক অবস্থায় অন্যতম প্রধান ওষুধ।
- খুব বাজে গন্ধযুক্ত ঘাম, প্রস্রাব বা মল হলে।
- শরীর গরম, কিন্তু তাপমাত্রা অস্বাভাবিক — থার্মোমিটারে যেমন দেখায়, শরীর তেমন গরম না।
- Delirium বা সংজ্ঞাহীনতা থাকতে পারে।
-
Arsenicum Album
- দুর্বলতা খুব বেশি, অস্থিরতা, বারবার জায়গা বদলানো।
- জ্বালাপোড়া ধরণের যন্ত্রণা।
- রোগী ভীষণ ভীত ও মৃত্যুভয় গ্রস্ত থাকে।
-
Lachesis
- রক্তে টক্সিন জমে গেলে উপকারী।
- গলায় বা মুখে নীলাভ ভাব, অবস্থা সকাল থেকে খারাপ হয়।
- জ্বরের পর ঘামে স্বস্তি।
-
Baptisia
- টাইফয়েড বা অন্য ইনফেকশনের পর রক্তে ইনফেকশনের প্রবণতা হলে।
- শরীর ভেঙে পড়া, চেতনা কমে আসা, মুখে বিষণ্ন ভাব।
-
Carbo Vegetabilis
- চরম দুর্বলতা, রক্তচাপ পড়ে গেলে।
- রোগী ঠাণ্ডা, কিন্তু শ্বাস নিতে কষ্ট হয় ও হাওয়া চাই।
-
China (Cinchona)
- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা ডায়রিয়ার কারণে দুর্বলতা।
- ইনফেকশনের পর রক্তশূন্যতা দেখা দিলে।
কিছু পরামর্শ:
- হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা উপসর্গনির্ভর, তাই সঠিক ওষুধ নির্বাচনের জন্য রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস দরকার।
- জ্বর, ঘাম, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট বা বিভ্রান্তি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
- হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নিজে না খেয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে নিন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রেও রুগীর উচিত একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। কারণ:
ব্যক্তিভেদে রোগ ভিন্ন হতে পারে: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগ নয়, রুগীর সামগ্রিক লক্ষণ, মানসিক অবস্থা, শারীরিক গঠন, জীবনধারা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঔষধ নির্বাচন করা হয়।
সঠিক ঔষধ নির্বাচন জরুরি: একই রোগের জন্য একাধিক হোমিও ঔষধ থাকতে পারে, কিন্তু কোনটি রুগীর উপযোগী তা নির্ধারণ করতে একজন বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
মাত্রা ও সময়জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ: কখন, কী পরিমাণে, কতদিন ঔষধ খেতে হবে—তা ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী হওয়া উচিত।
নিজে নিজে ঔষধ গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে: ভুল ঔষধ বা মাত্রা রুগীর সমস্যাকে জটিল করে তুলতে পারে, কিংবা উপসর্গ লুকিয়ে রেখে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ