হোমিওপ্যাথিক ওষুধের উৎস : একটি বিস্তারিত আলোচনা
হোমিওপ্যাথি হচ্ছে “Like cures
like”—অর্থাৎ যে বস্তু সুস্থ মানুষকে একটি লক্ষণ সৃষ্টি করে, সেই বস্তুই
অতিসূক্ষ্ম শক্তিতে অসুস্থ মানুষকে একই ধরনের লক্ষণ সারাতে ব্যবহার হয়।
এই চিকিৎসা
পদ্ধতিতে ওষুধের উৎস অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। প্রধানত পাঁচটি উৎস থেকে ওষুধ তৈরি হয়:
1️⃣
উদ্ভিদজাত
উৎস (Plant Kingdom)
হোমিওপ্যাথির সবচেয়ে বড় উৎস হলো গাছপালা ও
তাদের বিভিন্ন অংশ।
মূল,
পাতা,
ফুল,
বাকল,
বীজ,
রস—সবই ওষুধ
হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ
- Belladonna – সুন্দরী
লতা
- Aconitum Napellus – আকোনাইট
গাছ
- Bryonia – ব্রায়োনিয়া মূল
- Arnica – আর্নিকা ফুল
- Nux Vomica – নটবল
বীজ
উদ্ভিদজাত ওষুধ সাধারণত জ্বর, ব্যথা, পাকস্থলীর সমস্যা,
মানসিক
উত্তেজনা, ইনফ্ল্যামেশন ইত্যাদিতে
ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
2️⃣
খনিজজাত উৎস
(Mineral Kingdom)
প্রাকৃতিক খনিজ ও রাসায়নিক যৌগ হোমিওপ্যাথির
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
উদাহরণ
- Calcarea Carbonica – কাঁকড়ার
খোল
- Natrum Muriaticum – সাধারণ
লবণ (NaCl)
- Ferrum Phosphoricum – লৌহ
- Sulphur – সালফার
- Magnesium Phos. – ম্যাগনেশিয়াম
এগুলো অ্যানিমিয়া,
হজম সমস্যা,
নার্ভ টান,
ত্বকের রোগ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
3️⃣
পশুজাত উৎস
(Animal Kingdom)
পশুর দুধ, বিষ, রস, পোকামাকড়—সবকিছু
থেকে ঔষধ তৈরি হয়, কিন্তু পোটেন্সি করার পর এগুলো ক্ষতিকর থাকে না।
উদাহরণ
- Apis Mellifica – মৌমাছির
বিষ
- Lac Caninum – কুকুরের
দুধ
- Sepia – মাছের কালি
- Theridion – মাকড়সা
- Tarentula – একটি প্রজাতির মাকড়সা
পশুজাত ওষুধ সাধারণত
অতিরিক্ত
সংবেদনশীলতা, মানসিক অস্থিরতা, নার্ভ টান, ত্বকের
সমস্যা ইত্যাদিতে দ্রুত কাজ করে।
4️⃣
রাসায়নিক ও
ল্যাবরেটরি প্রস্তুত উৎস (Chemicals & Synthetic Sources)
কিছু ওষুধ সম্পূর্ণভাবে ল্যাবে তৈরি রাসায়নিক
বা যৌগ থেকে প্রস্তুত হয়।
উদাহরণ
- Carbolic Acid
- Lithium Carbonicum
- Acid Muriaticum
- Phenol
- Urea
এগুলো বিশেষত অ্যাসিডিটি,
মূত্রনালি
সমস্যা, স্নায়বিক সমস্যা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
5️⃣
নোসোড ও
স্যাঙ্ক্রোটিন (Nosodes & Sarcodes)
এগুলো হোমিওপ্যাথির সবচেয়ে বিশেষ ওষুধ।
রোগ
নিরাময়ের জন্য রোগ থেকেই তৈরি ওষুধ।
Nosode — রোগের জীবাণু/রোগীর
শরীরের নিঃসৃত পদার্থ থেকে তৈরি
উদাহরণ:
- Psorinum – স্ক্যাবিস-এর নিঃসৃত পদার্থ
- Medorrhinum – গোণরিয়া
- Tuberculinum – টিবি
- Influenzinum – ইনফ্লুয়েঞ্জা
ভাইরাস
Sarcodes — সুস্থ প্রাণীর
টিস্যু/অঙ্গ থেকে তৈরি
উদাহরণ:
- Thyroidinum – থাইরয়েড
গ্রন্থি
- Adrenalinum – অ্যাড্রিনাল
গ্রন্থি
- Insulinum – সুস্থ অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন
এগুলো শরীরের অঙ্গের
কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে ব্যবহৃত হয় (যেমন
থাইরয়েড, কিডনি, লিভার)।
কিভাবে এই উৎসগুলো থেকে ওষুধ তৈরি হয়?
হোমিওপ্যাথিক ওষুধ তৈরি হয় দুই ধাপে—
1️⃣
Maceration / Trituration
উদ্ভিদ হলে রস বের করে অ্যালকোহলে সংরক্ষণ
খনিজ হলে
গুঁড়ো করে ল্যাকটোজের সাথে মেশানো
2️⃣
Potentization (Dilution + Succussion)
বারবার অতি-অল্প করে পাতলা করা ও জোরে
ঝাঁকানো (“Succussion”)—
এতে ওষুধের
ভৌত কণিকা কমে গিয়ে শক্তি (dynamic
energy) বাড়ে।
উপসংহার
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রকৃতি থেকে পাওয়া
বিভিন্ন উৎসকে ব্যবহার করে মানুষের স্বভাব, শরীর ও
মানসিক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করে।
উদ্ভিদ,
খনিজ,
পশু,
রাসায়নিক,
নোসোড—সব
মিলিয়ে এটি একটি বৈচিত্র্যময় ও অত্যন্ত গভীর চিকিৎসা পদ্ধতি।
0 মন্তব্যসমূহ