এই ব্লগটি শুধুমাত্র নব্য চিকিৎসক এবং শিক্ষাথীদের
জন্য প্রযোজ্য।
Kali Sulphuricum - কেলি সালফিউরিকাম
সাধারণ নাম : সালফেট অব
পটাশ।
অপর নাম : পটাশিয়াম সালফেট,
কেলি সালফ, পটাশি সালফাস।
সংক্ষিপ্ত নাম : কেলি সালফ
(K.S)
রাসায়নিক সংকেত : K2 SO4 মলিকুলার ওয়েট ১৭৪।
প্রয়োগ ক্ষেত্র : শারীরিক দুর্বলতা,
ক্লান্তিবোধ, কোন বিশেষ অঙ্গের ভারবোধ, শিরোঘূর্ণন, শীত বা কম্পবোধ, মানসিক দুঃখ ও
বিকার, হৃদস্পন্দন, উদ্বেগ, ভয়, দাঁতের বেদনা, শিরঃপীড়ায় হাতে পায়ের বেদনা, চর্মপীড়ায়
ছালের মত বা খুস্কির মত উঠিতে থাকে। শ্বাসকাশ, সর্দ্দি, একজিমা, মাথার খুস্কি, গনোরিয়া,
পাঁচড়া, নখের পীড়া, ওজিনা, পলিপাস, রিউম্যটিক বাত, হুপিং কাশি, ম্যালেরিয়া, কলেরা প্রভৃতি
পীড়ায় ইহা ব্যবহৃত হয় ।
মানসিক লক্ষণ :
১. রোগী খিটখিটে এবং একগুয়ে।
২. সহজেই রোগী রাগাম্বিত হয়।
৩. ভয় এবং নিরানন্দভাব-সন্ধ্যাকালে বৃদ্ধি পায়।
৪. ঘুমের মধ্যে চমকাইয়া উঠে, চীৎকার করে ও কথা বলে।
৫. রোগী পড়িয়া যাওয়ার
ভয়।
চরিত্রগত লক্ষণ :
১. যে কোন স্রাব পিচ্ছিল হরিদ্রা বা সবুজবর্ণ, জিহ্বাতেও
পিচ্ছিল হরিদ্রাবর্ণ লেপ থাকে।
২. বক্ষে ঘড় ঘড় শব্দ হয়, কাশিতে কাশিতে অনেক কষ্টে হরিদ্রাবর্ণের
শ্লেম্মা গলায় আসিয়া আবার চলিয়া যায়। অনেক সময় পরিমাণে শ্লেম্মা উঠে।
৩. স্নায়ুশুল, বাত বা অন্য যে কোন প্রকার বেদনা স্থান পরিবর্তনশীল।
৪. বসন্ত ও হামে দানাসমূহ বসিয়া যায় বা উঠেতে চায় না।
৫. সর্বপ্রাকার জ্বর বিকালে, উত্তপ্ত গৃহে বৃদ্ধি পায়, মাঝরাতের
পর, শীতল ও উন্মুক্ত বায়ুতে হ্রাস হয়। চর্ম খসখসে ও শুষ্ক ।পুরাতন জ্বর বৈকালে হাত
পা চোখ মুখ জ্বালা করিয়া বেগ হয় ।
৬. কলেরায় প্রথমাবস্থায় রোগী অস্থির ও শীতল জল পান করে ।
৭. চর্মরোগ মলম ব্যবহার
করিয়া বসিয়া গিয়া কোন পীড়া ।
চোখ : চোখের পাতায় হলদে
বর্ণের মামড়ি। চোখ হইতে সবুজ জাত আঠাল হলদে বর্ণের রস নিঃসরণ। চোখের প্রদাহ, মামড়ি
পড়া, চোখের ছানি, কার্ণিয়ায় স্ফোটক, চোখের তারাকার অস্বচ্ছতা, এবং চোখের প্রদাহের তৃতীয়
অবস্থা।
কান : কান হইতে হলদে বর্ণের
স্রাব নির্গত হয়। কানে বেদনা ও যন্ত্রনা, বর্ণ শূল, বধিরতা, হরম ঘরে বৃদ্ধি। ঠান্ডায়
ও উম্মুক্ত বাতাসে উপশম বোধ। কানে চুলকানি।
নাক : সদ্দিসহ চর্ম শুষ্ক
ও খসখসে এবং হরিদ্রাবর্ণের সর্দ্দি। নাকের স্রাব সবুজ, স্রাবে দুর্গন্ধ, নাক বন্ধ সে
জন্য কোন কিছুর গন্ধ পায়না। নাক হইতে চটচটে অথবা পাতলা সদ্দি স্রাব।
মুখগহর : নীচের ঠোট স্ফীত,
শুষ্ক এবং ছাল উঠে। ঠোটের ডানদিকে এবং নাকের চারিদিকে স্ফীতি ভাব ও বেদনা। মুখের মধ্যে
জ্বালাপোড়া ভাব। মুখের ও ঠোটের উপর ইপিথিলিয়াল ক্যানসার।
জিহ্বা : রোগীর জিহ্বা হরিদ্রা
বর্ণের, পিচ্ছিল এবং ময়লার প্রলেপ যুক্ত। ঠোট, মাড়ি এবং জিহ্বার পাশ্বে সাদা থাকে।
জিহ্বার তেমন কোন স্বাদ পায়না। সব কিছুই যেন বিস্বাদ লাগে।
গল অভ্যন্তর : গলার অভ্যন্তর
ভাগ শুষ্ক এবং মনে হয় যেন সংকুচিত হয়ে আসছে। কাশি দিলে শ্লেষ্মা নির্গত হয়। কোন কিছু
গিলতে গেলে বা ঢোক গেলিতে গেলে বেশ অসুবিধা বোধ করে। গলায় মধ্যে ঘড় ঘড় শব্দ করে মনে
হয় প্রচুর শ্লেষ্মা গলার অভ্যন্তর ভাগে ছড়িয়ে আছে।
পরিপাক যন্ত্র : উদরে ভয়ংকর
জ্বালপোড়া ভাব। প্রচন্ড পিপাসা, ভয়ানক দুর্বলতা এবং বমি। পেটে ভারবোধ এবং হজম শক্তির
অভাব। মুখে জল উঠে। পেটের অসাড়তা বোধ।
দাঁত : দন্তশূল। দাঁতের
বেদনা সন্ধ্যাকালে এবং উষন ঘরে বৃদ্ধি পায়। শীতল উন্মুক্ত বাতাসে উপশম বোধ। মাড়ির পুরাতন
বেদনা।
পুংজননেন্দ্রিয় : প্রমেহ রোগ
তৎসহ হলদে বা সবুজ পিচ্ছিল স্রাব নির্গত হয়। পুরাতন প্রমেহ।
লিঙ্গমুন্ডের আবরণী পর্দার এবং সবুজ ও হলদে স্রাব নির্গত। উপসংষ জনিত পীড়া, বিকালে
বৃদ্ধি পায়। গনোরিয়া রোগে গঠাৎ প্রস্রাব বন্ধ হয়ে
অন্ডকোষের প্রদাহ। প্রস্রাবের সময় জ্বালা ফোড়া ভাব।
স্ত্রী জননেন্দ্রিয় : শ্বেত প্রদাহ, স্রাব হলদে বা সবুজ, পাতলা পুঁজের মত পিচ্ছিল
চটচটে। উক্ত স্রাব জ্বালাকর ও হাজাকার। জরায়ু
হতে যখন খুব বেশী রক্তস্রাব হতে থাকে তখন অতি রক্ত স্রাব সহ শির পীড়া থাকে। জিহ্বা
হরিদ্রা বর্ণের ময়লাবৃত।
মূত্রযন্ত্র : মূত্র স্থলীর প্রদাহ। মূত্রনালী হতে হলদে পিচ্ছিল শ্লেন্মা
নির্গত হয়। মূত্র গ্রন্থি এবং মূত্র স্থলীর প্রদাহের তৃতীয় অবস্থা। এ্যালবুমিনিয়া যখন
বেশিক্ষরণ হয়। প্রস্রাব যন্ত্রের পীড়ায় অন্ডকোষের স্ফীতি হয় এবং ব্যথা ও জ্বালা পোড়া
ভাবের সৃষ্টি হয়। মূত্র যন্ত্র প্রদাহের তৃতীয় অবস্থা।
স্নায়ু : নানা প্রকার আক্ষেপ, পুরাতন আক্ষেপ। স্নায়বিক বেদনা এক
স্থানে থাকে না, স্থান পরিবর্থন করে ইহার বিশেষ লক্ষণ।
ঘুম
: ঘুমের মধ্যে রোগী অতি স্পষ্ট ভাবে স্বপ্ন দেখে। নানা চিন্তার জন্য ঘুম আসে না। ভীতিজনক,
উৎকন্ঠা পূর্ণ স্বপ্ন দেখে। রাত্র থাকতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। সুনিদ্রার অভাব।
জ্বর : জ্বরের তাপমাত্রা সন্ধ্যার দিকে উঠতে থাকে এবং মধ্যরাত্র
পর্যন্ত উঠে তারপর আবার কমতে থাকে। এই ঔষধ প্রয়োগের করলে ঘাম হবে এবং জ্বরের তাপমাত্রা
ধীরে ধীরে কমে আসবে। অতএব ইহা বার বার প্রযোগ করা উচিত। সবিরাম জ্বরে জিহ্বা হলুদ,
পিচ্ছিল এবং ময়লাকৃত। টাইফয়েড় জ্বর, গ্যাসট্রিক জ্বরের ক্ষেত্রে ইহা প্রয়োগ করা উচিত।
ত্বক : ত্বকের উপর আঁইশের ন্যায় ছাল উঠে। চর্মরোগ বসে গিয়ে কোন কঠিন রোগের উৎপত্তি। চর্মরোগ
বসে গিয়ে সে স্থানে চর্ম শুষ্ক এবং খসখসে হয়ে যায়। ক্ষত হইতে পাতলা হলদে বর্ণের স্রাব
নির্গমন হয়। নখের রোগ, নখের বৃদ্ধি হয় না। একজিমা, ফোঁড়া, ক্যানসার ইত্যাদি চর্মরোগের
স্রাব যদি হলদে হয়।
টিসু : জীবনী শক্তির একান্ত অভাব। শরীরের যেন কোন পরিপুষ্টি নেই।
ভাল আহার করলেও শরীরের যেন কোন বলশক্তি পায় না। পুরাতন উপদংশ রোগ, কোমল পলি পাস রোগ।
সন্ধ্যার দিকে রোগের অত্যাধিক বাড়াবাড়ি আর ঠান্ডা উন্মুক্ত বাতাসে উপসম।
ক্যাল্কেরিয়া
সালফ ও কেলি সালফের পার্থক্য :
ক্যাল্কেরিয়া সালফ:
১. ইহার রোগী ঠান্ডা হাওয়ায় রোগের বৃদ্ধি
হয়।
২. ইহার ক্ষতের চারিপাশ্বে কাঠিন্য থাকে,
দীর্ঘকাল ধরিয়া পূঁজস্রাব চলার ইতিহাস আছে।
৩. ইহার স্রাব হরিদ্রাবর্ণের গাঢ় পূঁজ,
বা রক্তের ছিটযুক্ত পূঁজ।
৪. ইহার জিহ্বার মূলদেশে হরিদ্রাবর্ণের
ময়লা, জিহ্বা নরম ও শিথিল।
৫. ইহার রোগী ঘর্মপ্রবণ।
৬.
ঠান্ডা লাগিলে, জলে কাজ করিলে বা জল লাগিলে ইহার পীড়ার বৃদ্ধি ঘটে, শুষ্ক উত্তপ্ত বায়ুতে
উপশম।
কেলি
সালফের:
১. ইহার রোগী ঠান্ডা চায় এবং ঠান্ডা বাতাস
ভালবাসে। ঠান্ডা পীড়ার উপশম ।
২. ইহার এই রুপ ইতিহাস থাকেনা।
৩ ইহার স্রাব পিচ্ছিল হরিদ্রাবর্ণ বা
সবুজবর্ণ পাতলা।
৪. ইহার জিহ্বা হরিদ্রাবর্ণের পিচ্ছিল
লেপাবৃত। জিহ্বার পার্শ্বে সাদা লেপ। মুখ বিস্বাদ পানসে।
৫. ইহার রোগীর ঘর্ম থাকে না।
৬.
রুদ্ধগৃহে, উত্তপ্ত গৃহে, পীড়ার বৃদ্ধি ঘটে, শীতল বাতাসে; পানীয় ও শীতল স্থানে পীড়ার
উপশম।
ব্যবহার শক্তি : ৬X শক্তি ব্যবহৃত হয়। পুরাতন জ্বরে ১২X এবং উচ্চ শক্তি
ব্যবহৃত হয়।
ডাঃ মহি উদ্দিন
প্রভাষক :- ফেনী হোমিওপ্যাথিক
মেডিকেল কলেজ।
যোগাযোগ
:- ফরাজী হোমিও হল।
সদর হাসপাতাল, উত্তর বিরিঞ্চি রোড় - ফেনী
3 মন্তব্যসমূহ
ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনআসসালামুয়ালাইকুম, আলহামদুলিল্লাহ এইসব পোস্ট থেকে অনেক উপকৃত হচ্ছি। আশা করি আরও বাকী ঔষধগুলো সম্পর্কে পোস্ট দিবেন। আপনার পোস্ট গুলো ধারাবাহিক ভাবে সুন্দর করে সাজানো, সহজেই আয়ত্ত করা যায়।
উত্তরমুছুনঅনেক সুন্দর আলোচনা করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে
উত্তরমুছুন