হুপিং কাশি কী?
হুপিং কাশি হলো একটি সংক্রামক শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যার প্রধান কারণ হলো Bordetella pertussis নামক ব্যাকটেরিয়া।
এটি সাধারণত শিশুদের বেশি হয়, তবে বড়দেরও হতে পারে।
কেন হয়?
-
ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি/হাঁচির মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায়।
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে সহজে হয়।
-
টিকা (DPT/DTaP) না নেওয়া বা টিকা ঠিকভাবে না হলে হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
হুপিং কাশির লক্ষণ
১. শুরুতে সাধারণ সর্দি-কাশির মতো হয় (১–২ সপ্তাহ):
-
হালকা জ্বর
-
নাক দিয়ে পানি পড়া
-
হালকা কাশি
২. পরে প্রধান উপসর্গ দেখা দেয় (২–৬ সপ্তাহ বা তার বেশি):
-
অবিরাম কাশি → একটানা অনেকবার কাশি উঠে শ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো লাগে।
-
কাশির শেষে “হুপ” শব্দে শ্বাস টানা (সেখান থেকেই নাম হয়েছে Whooping cough)।
-
কাশির সময় মুখ লাল হয়ে যায়, চোখ পানি পড়ে।
-
বমি হতে পারে।
-
দুর্বলতা, রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া।
৩. পরবর্তী পর্যায়ে (Recuperation stage):
-
ধীরে ধীরে কাশি কমে আসে, তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
হুপিং কাশিতে বেশ কিছু প্রসিদ্ধ হোমিও ঔষধ ব্যবহার হয়, উপসর্গ অনুযায়ী নির্বাচন করতে হয়ঃ
-
Drosera rotundifolia 30 / 200
-
অত্যন্ত শুষ্ক, ঘন ঘন কাশি
-
একবার শুরু হলে থামতে চায় না।
-
একটানা দীর্ঘ কাশি হয়।
-
-
রাতে বেশি হয়
-
বিশেষ করে ঘুমানোর পর, অথবা মধ্যরাতে হঠাৎ কাশি উঠে যায়।
-
কাশির কারণে ঘুম ভেঙে যায়।
-
-
কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট
-
কাশির সময় মনে হয় গলা বন্ধ হয়ে আসছে।
-
গলা দিয়ে কিছু আটকে আছে এমন অনুভূতি হয়।
-
-
বমি হয়ে যায়
-
কাশতে কাশতে বমি হতে পারে।
-
শিশুদের ক্ষেত্রে দুধ খাওয়ার পর কাশির সাথে সব উগরে দেয়।
-
-
হুপ শব্দ
-
কাশি শেষে যখন শ্বাস টানে তখন “হুপ” এর মতো শব্দ হয়।
-
-
অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ
-
রাতে
-
ঠান্ডা বাতাসে
-
খাওয়ার পর
-
গরম ঘরে
-
-
Cuprum metallicum 30
-
তীব্র কাশির খিঁচুনি (Spasmodic cough)
-
হঠাৎ শুরু হয়, খুব জোরে জোরে কাশি ওঠে।
-
মনে হয় যেন কাশির সঙ্গে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
-
-
কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট
-
শিশু বা রোগী কাশি করতে করতে নীলচে হয়ে যায়।
-
শ্বাস একেবারে বন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতি হয়।
-
-
কাশির সময় খিঁচুনির মতো অবস্থা
-
পুরো শরীর কেঁপে ওঠে।
-
হাত-পা শক্ত হয়ে যেতে পারে (spasms)।
-
-
কাশির পরে বমি
-
জোরে জোরে কাশির পর বমি হয়।
-
-
অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ
-
রাতে
-
গরম ঘরে
-
হঠাৎ ভয়ের পর
-
ঠান্ডা বাতাসে
-
-
অবস্থা ভালো হওয়ার কারণ
-
ঠান্ডা বাতাসে বাইরে গেলে কিছুটা আরাম লাগে।
-
-
-
Belladonna 30
হঠাৎ শুরু হওয়া কাশি
-
হঠাৎ প্রচণ্ড কাশি ওঠে।
-
রোগী ভয় পায়, অস্থির হয়ে যায়।
-
-
কাশির সময় মুখ ও চোখ লাল হয়ে যায়
-
কাশতে কাশতে মুখ গরম ও লালচে হয়ে ওঠে।
-
চোখ লাল হয়ে পানি ঝরে।
-
-
কাশির সঙ্গে গলা শুকনো অনুভূতি
-
গলা ব্যথা, শুষ্কতা, জ্বালা।
-
কাশি গলার ভেতরে টান ধরার মতো ব্যথা সৃষ্টি করে।
-
-
কাশির ধরন
-
শুকনো, ঘন ঘন ও হঠাৎ আসে।
-
রাতে বেশি হয়।
-
-
অন্যান্য উপসর্গ
-
কাশি শুরু হলে মাথায় চাপ লাগে, মাথা ব্যথা বাড়ে।
-
উচ্চ জ্বর থাকতে পারে।
-
শরীর উত্তপ্ত হয়ে যায়।
-
-
অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ
-
রাতে
-
বেশি নড়াচড়া করলে
-
গরম ঘরে
-
-
Ipecac 30
অবিরাম কাশি, কফ উঠছে না
-
বারবার কাশি হলেও কফ বের হতে চায় না।
-
রোগী বিরক্ত হয়ে যায়, দম বন্ধ হওয়ার মতো হয়।
-
-
কাশির সঙ্গে বমি
-
কাশি শুরু হলে প্রায়ই বমি হয়ে যায়।
-
শিশু দুধ খাওয়ার পর কাশির সাথে সব উগরে দেয়।
-
-
কাশির ধরন
-
একটানা, দম বন্ধ হওয়ার মতো শুকনো কাশি।
-
মাঝে মাঝে কফ জমে শ্বাস আটকে যায়।
-
-
শ্বাসকষ্ট
-
শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
-
শ্বাস নেবার সময় বুকের ভেতরে শোঁ-শোঁ শব্দ।
-
-
অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ
-
রাতে
-
গরম ঘরে
-
খাবারের পর
-
-
অবস্থা ভালো হওয়ার কারণ
-
খোলা বাতাসে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়।
-
-
Antimonium tartaricum 30
কাশির সঙ্গে প্রচুর কফ জমে যায়
-
বুক ভরে কফ থাকে, কিন্তু সহজে বের হতে চায় না।
-
কাশতে গিয়ে রোগী খুব কষ্ট পায়।
-
-
কাশির সময় শ্বাসকষ্ট
-
কাশির সময় বুক থেকে শোঁ-শোঁ বা গড়গড় শব্দ শোনা যায় (rattling sound)।
-
শ্বাস আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।
-
-
কাশির পর বমি হতে পারে
-
কফ না বের হয়ে বমি হয়ে যায়।
-
-
রোগী খুব দুর্বল হয়ে পড়ে
-
ছোট শিশু বা বৃদ্ধদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী, যাদের শক্তি কম।
-
কাশি করার মতো শক্তি নেই, তাই কফ জমে থেকে যায়।
-
-
অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ
-
রাতে
-
গরম ঘরে
-
খাওয়ার পর
-
-
অবস্থা ভালো হওয়ার কারণ
-
সামান্য কফ বের হলে রোগী অনেকটা আরাম পায়।
বায়োকেমিক সহায়তা
-
Ferrum Phos 6X – প্রথম অবস্থায় জ্বর ও দুর্বলতায়।
-
Kali Mur 6X – কফ জমে গেলে।
-
Mag Phos 6X – কাশির খিঁচুনিতে।

0 মন্তব্যসমূহ