হুপিং কাশি - Whooping Cough, প্রভাষক ডাঃ মহি উদ্দিন


 হুপিং কাশি কী?

হুপিং কাশি হলো একটি সংক্রামক শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যার প্রধান কারণ হলো Bordetella pertussis নামক ব্যাকটেরিয়া।
এটি সাধারণত শিশুদের বেশি হয়, তবে বড়দেরও হতে পারে।


কেন হয়?

  • ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি/হাঁচির মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায়।

  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে সহজে হয়।

  • টিকা (DPT/DTaP) না নেওয়া বা টিকা ঠিকভাবে না হলে হওয়ার ঝুঁকি বেশি।


হুপিং কাশির লক্ষণ

১. শুরুতে সাধারণ সর্দি-কাশির মতো হয় (১–২ সপ্তাহ):

  • হালকা জ্বর

  • নাক দিয়ে পানি পড়া

  • হালকা কাশি

২. পরে প্রধান উপসর্গ দেখা দেয় (২–৬ সপ্তাহ বা তার বেশি):

  • অবিরাম কাশি → একটানা অনেকবার কাশি উঠে শ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো লাগে।

  • কাশির শেষে “হুপ” শব্দে শ্বাস টানা (সেখান থেকেই নাম হয়েছে Whooping cough)।

  • কাশির সময় মুখ লাল হয়ে যায়, চোখ পানি পড়ে।

  • বমি হতে পারে।

  • দুর্বলতা, রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া।

৩. পরবর্তী পর্যায়ে (Recuperation stage):

  • ধীরে ধীরে কাশি কমে আসে, তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকতে পারে।


হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

হুপিং কাশিতে বেশ কিছু প্রসিদ্ধ হোমিও ঔষধ ব্যবহার হয়, উপসর্গ অনুযায়ী নির্বাচন করতে হয়ঃ

  1. Drosera rotundifolia 30 / 200

    1. অত্যন্ত শুষ্ক, ঘন ঘন কাশি

      • একবার শুরু হলে থামতে চায় না।

      • একটানা দীর্ঘ কাশি হয়।

    2. রাতে বেশি হয়

      • বিশেষ করে ঘুমানোর পর, অথবা মধ্যরাতে হঠাৎ কাশি উঠে যায়।

      • কাশির কারণে ঘুম ভেঙে যায়।

    3. কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট

      • কাশির সময় মনে হয় গলা বন্ধ হয়ে আসছে।

      • গলা দিয়ে কিছু আটকে আছে এমন অনুভূতি হয়।

    4. বমি হয়ে যায়

      • কাশতে কাশতে বমি হতে পারে।

      • শিশুদের ক্ষেত্রে দুধ খাওয়ার পর কাশির সাথে সব উগরে দেয়।

    5. হুপ শব্দ

      • কাশি শেষে যখন শ্বাস টানে তখন “হুপ” এর মতো শব্দ হয়।

    6. অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ

      • রাতে

      • ঠান্ডা বাতাসে

      • খাওয়ার পর

      • গরম ঘরে

  2. Cuprum metallicum 30

      1. তীব্র কাশির খিঁচুনি (Spasmodic cough)

        • হঠাৎ শুরু হয়, খুব জোরে জোরে কাশি ওঠে।

        • মনে হয় যেন কাশির সঙ্গে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

      2. কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট

        • শিশু বা রোগী কাশি করতে করতে নীলচে হয়ে যায়।

        • শ্বাস একেবারে বন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতি হয়।

      3. কাশির সময় খিঁচুনির মতো অবস্থা

        • পুরো শরীর কেঁপে ওঠে।

        • হাত-পা শক্ত হয়ে যেতে পারে (spasms)।

      4. কাশির পরে বমি

        • জোরে জোরে কাশির পর বমি হয়।

      5. অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ

        • রাতে

        • গরম ঘরে

        • হঠাৎ ভয়ের পর

        • ঠান্ডা বাতাসে

      6. অবস্থা ভালো হওয়ার কারণ

        • ঠান্ডা বাতাসে বাইরে গেলে কিছুটা আরাম লাগে।

  3. Belladonna 30

    • হঠাৎ শুরু হওয়া কাশি

      • হঠাৎ প্রচণ্ড কাশি ওঠে।

      • রোগী ভয় পায়, অস্থির হয়ে যায়।

    • কাশির সময় মুখ ও চোখ লাল হয়ে যায়

      • কাশতে কাশতে মুখ গরম ও লালচে হয়ে ওঠে।

      • চোখ লাল হয়ে পানি ঝরে।

    • কাশির সঙ্গে গলা শুকনো অনুভূতি

      • গলা ব্যথা, শুষ্কতা, জ্বালা।

      • কাশি গলার ভেতরে টান ধরার মতো ব্যথা সৃষ্টি করে।

    • কাশির ধরন

      • শুকনো, ঘন ঘন ও হঠাৎ আসে।

      • রাতে বেশি হয়।

    • অন্যান্য উপসর্গ

      • কাশি শুরু হলে মাথায় চাপ লাগে, মাথা ব্যথা বাড়ে।

      • উচ্চ জ্বর থাকতে পারে।

      • শরীর উত্তপ্ত হয়ে যায়।

    • অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ

      • রাতে

      • বেশি নড়াচড়া করলে

      • গরম ঘরে

  4. Ipecac 30

    • অবিরাম কাশি, কফ উঠছে না

      • বারবার কাশি হলেও কফ বের হতে চায় না।

      • রোগী বিরক্ত হয়ে যায়, দম বন্ধ হওয়ার মতো হয়।

    • কাশির সঙ্গে বমি

      • কাশি শুরু হলে প্রায়ই বমি হয়ে যায়।

      • শিশু দুধ খাওয়ার পর কাশির সাথে সব উগরে দেয়।

    • কাশির ধরন

      • একটানা, দম বন্ধ হওয়ার মতো শুকনো কাশি।

      • মাঝে মাঝে কফ জমে শ্বাস আটকে যায়।

    • শ্বাসকষ্ট

      • শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

      • শ্বাস নেবার সময় বুকের ভেতরে শোঁ-শোঁ শব্দ।

    • অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ

      • রাতে

      • গরম ঘরে

      • খাবারের পর

    • অবস্থা ভালো হওয়ার কারণ

      • খোলা বাতাসে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়।

  5. Antimonium tartaricum 30

      1. কাশির সঙ্গে প্রচুর কফ জমে যায়

        • বুক ভরে কফ থাকে, কিন্তু সহজে বের হতে চায় না।

        • কাশতে গিয়ে রোগী খুব কষ্ট পায়।

      2. কাশির সময় শ্বাসকষ্ট

        • কাশির সময় বুক থেকে শোঁ-শোঁ বা গড়গড় শব্দ শোনা যায় (rattling sound)।

        • শ্বাস আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।

      3. কাশির পর বমি হতে পারে

        • কফ না বের হয়ে বমি হয়ে যায়।

      4. রোগী খুব দুর্বল হয়ে পড়ে

        • ছোট শিশু বা বৃদ্ধদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী, যাদের শক্তি কম।

        • কাশি করার মতো শক্তি নেই, তাই কফ জমে থেকে যায়।

      5. অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণ

        • রাতে

        • গরম ঘরে

        • খাওয়ার পর

      6. অবস্থা ভালো হওয়ার কারণ

        • সামান্য কফ বের হলে রোগী অনেকটা আরাম পায়।


বায়োকেমিক সহায়তা

  • Ferrum Phos 6X – প্রথম অবস্থায় জ্বর ও দুর্বলতায়।

  • Kali Mur 6X – কফ জমে গেলে।

  • Mag Phos 6X – কাশির খিঁচুনিতে।




**গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:**
🔸 কোনো ঔষধ নিজে নিজে সেবন করবেন না
🔸 অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
🔸 নিয়মিত ফলোআপ করুন
🌿 ফরাজী হোমিও হল ফেনী।
📞 01814319033
🧪 হোমিওপ্যাথিতে স্বস্তি ও নিরাপদ চিকিৎসার নিশ্চয়তা।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ